আজকের পত্রিকা ডেস্ক

পশ্চিমা বিশ্বের ৯টি দেশে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, এসব দেশের মানুষের মধ্যে গণতন্ত্র নিয়ে গভীর অসন্তোষ বিরাজ করছে। জরিপে অংশ নেওয়া দেশগুলোর মধ্যে আটটিতে গণতন্ত্র নিয়ে সন্তুষ্টি ৫০ শতাংশের নিচে। মাত্র একটি দেশ ছাড়া সবটিতেই ভবিষ্যতে গণতন্ত্রের অবস্থা নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ইপসোস পরিচালিত এই জরিপে ক্রোয়েশিয়া, ফ্রান্স, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, স্পেন, সুইডেন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১০ হাজার মানুষের মতামত নেওয়া হয়।
জরিপে দেখা গেছে, ৯ দেশের মধ্যে শুধু সুইডেনে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ গণতান্ত্রিক কার্যক্রমে সন্তুষ্ট (প্রায় ৬৫ শতাংশ)। নেদারল্যান্ডসে মতামত বিভক্ত; ৩৬ শতাংশ সন্তুষ্ট, ৩৭ শতাংশ অসন্তুষ্ট। পোল্যান্ডে ৪০ শতাংশ সন্তুষ্ট, ৩১ শতাংশ অসন্তুষ্ট।
বাকি দেশগুলোতে পরিস্থিতি আরও খারাপ। ছয় দেশে গড় সন্তুষ্টির হার ২৪ শতাংশের কম। ক্রোয়েশিয়ায় ১৮ শতাংশ, ফ্রান্সে ১৯ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ২০ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ২৬ শতাংশ, স্পেনে ২৭ শতাংশ এবং ইতালিতে ২৯ শতাংশ।
জরিপে অংশ নেওয়া অধিকাংশ মানুষ মনে করেন, গত পাঁচ বছরে তাঁদের দেশে গণতন্ত্রের মান আরও খারাপ হয়েছে। বিশেষ করে ফ্রান্স (৮১ শতাংশ) ও নেদারল্যান্ডসে (৭৬ শতাংশ); যেখানে চলতি বছর সরকার পতনের ঘটনা ঘটে।
যুক্তরাষ্ট্রে ৬১ শতাংশ এবং স্পেন ও যুক্তরাজ্যে ৫৮ শতাংশ মানুষ একই মত প্রকাশ করেন। একমাত্র ব্যতিক্রম পোল্যান্ড; সেখানে ৪২ শতাংশ মনে করেন গণতন্ত্রের মান কিছুটা ভালো হয়েছে, ৩০ শতাংশ বলেছেন খারাপ হয়েছে।
সুইডেন বাদে বাকি সব দেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর দুশ্চিন্তা লক্ষ্য করা গেছে। ফ্রান্সে ৮৬ শতাংশ, স্পেনে ৮০ শতাংশ, যুক্তরাজ্য ও পোল্যান্ডে ৭৫ শতাংশ, নেদারল্যান্ডসে ৭৪ শতাংশ, ক্রোয়েশিয়ায় ৭৩ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ৬৯ শতাংশ এবং ইতালিতে ৬৪ শতাংশ মানুষ ভবিষ্যতের গণতন্ত্র নিয়ে উদ্বিগ্ন।
গণতন্ত্রের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতার পেছনে কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে; ভুয়া তথ্য (ডিসইনফরমেশন), রাজনৈতিক জবাবদিহির অভাব, চরমপন্থা ও দুর্নীতি।
ফ্রান্স (৫৬ শতাংশ), যুক্তরাজ্য (৬৪ শতাংশ), সুইডেন (৬৭ শতাংশ), নেদারল্যান্ডস (৭৫ শতাংশ) ও পোল্যান্ডে (৭৬ শতাংশ) সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে দেখা হয়েছে ভুয়া তথ্যকে। অন্যদিকে, দুর্নীতিকে সর্বোচ্চ হুমকি হিসেবে দেখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ৬৩ শতাংশ, স্পেনের ৭৩ শতাংশ, ক্রোয়েশিয়ার ৮০ শতাংশ ও ইতালির ৪৭ শতাংশ মানুষ। তবে ইতালিতে অর্থনৈতিক বৈষম্যকেও সমান বড় সমস্যা হিসেবে দেখা হয়েছে।
গণতন্ত্র শক্তিশালী করতে জরিপে অংশগ্রহণকারীরা যেসব সমাধানের কথা বলেছেন, তা হলো—কঠোর দুর্নীতিবিরোধী আইন ও এর বাস্তবায়ন, সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর আরও কার্যকর নিয়ন্ত্রণ, নাগরিক শিক্ষা উন্নয়ন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা।
জরিপে দেখা গেছে, গণতন্ত্রের প্রতি মোটের ওপর জোরালো সমর্থন রয়েছে। অধিকাংশ মানুষ মনে করেন, এটি সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও রক্ষাযোগ্য। তবে ক্রোয়েশিয়ায় অনেকে মনে করেন, কোনো দেশে গণতন্ত্র বজায় রাখা উচিত কি না—তা সেই দেশের মানুষের জীবনের মানের ওপর নির্ভর করে।
এদিকে, বেশির ভাগ দেশে বেড়েছে মৌলিক বা ‘র্যাডিক্যাল’ পরিবর্তনের দাবি। অনেকে মনে করেন বর্তমান ব্যবস্থাটি ধনীদের স্বার্থে, এটি সবার জন্য সমানভাবে কাজ করে না। স্পেনে ৫২ শতাংশ, ইতালিতে ৫৫ শতাংশ, পোল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যে ৬০ শতাংশ, ফ্রান্সে ৬৬ শতাংশ এবং ক্রোয়েশিয়ায় ৬৯ শতাংশ মানুষ র্যাডিক্যাল পরিবর্তনের দাবি করেন।
তবে পরিবর্তনের ইচ্ছা প্রবল হলেও, প্রায় সব দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সমঝোতায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক নেতৃত্বকে অগ্রাধিকার দেন।

পশ্চিমা বিশ্বের ৯টি দেশে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, এসব দেশের মানুষের মধ্যে গণতন্ত্র নিয়ে গভীর অসন্তোষ বিরাজ করছে। জরিপে অংশ নেওয়া দেশগুলোর মধ্যে আটটিতে গণতন্ত্র নিয়ে সন্তুষ্টি ৫০ শতাংশের নিচে। মাত্র একটি দেশ ছাড়া সবটিতেই ভবিষ্যতে গণতন্ত্রের অবস্থা নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ইপসোস পরিচালিত এই জরিপে ক্রোয়েশিয়া, ফ্রান্স, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, স্পেন, সুইডেন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১০ হাজার মানুষের মতামত নেওয়া হয়।
জরিপে দেখা গেছে, ৯ দেশের মধ্যে শুধু সুইডেনে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ গণতান্ত্রিক কার্যক্রমে সন্তুষ্ট (প্রায় ৬৫ শতাংশ)। নেদারল্যান্ডসে মতামত বিভক্ত; ৩৬ শতাংশ সন্তুষ্ট, ৩৭ শতাংশ অসন্তুষ্ট। পোল্যান্ডে ৪০ শতাংশ সন্তুষ্ট, ৩১ শতাংশ অসন্তুষ্ট।
বাকি দেশগুলোতে পরিস্থিতি আরও খারাপ। ছয় দেশে গড় সন্তুষ্টির হার ২৪ শতাংশের কম। ক্রোয়েশিয়ায় ১৮ শতাংশ, ফ্রান্সে ১৯ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ২০ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ২৬ শতাংশ, স্পেনে ২৭ শতাংশ এবং ইতালিতে ২৯ শতাংশ।
জরিপে অংশ নেওয়া অধিকাংশ মানুষ মনে করেন, গত পাঁচ বছরে তাঁদের দেশে গণতন্ত্রের মান আরও খারাপ হয়েছে। বিশেষ করে ফ্রান্স (৮১ শতাংশ) ও নেদারল্যান্ডসে (৭৬ শতাংশ); যেখানে চলতি বছর সরকার পতনের ঘটনা ঘটে।
যুক্তরাষ্ট্রে ৬১ শতাংশ এবং স্পেন ও যুক্তরাজ্যে ৫৮ শতাংশ মানুষ একই মত প্রকাশ করেন। একমাত্র ব্যতিক্রম পোল্যান্ড; সেখানে ৪২ শতাংশ মনে করেন গণতন্ত্রের মান কিছুটা ভালো হয়েছে, ৩০ শতাংশ বলেছেন খারাপ হয়েছে।
সুইডেন বাদে বাকি সব দেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর দুশ্চিন্তা লক্ষ্য করা গেছে। ফ্রান্সে ৮৬ শতাংশ, স্পেনে ৮০ শতাংশ, যুক্তরাজ্য ও পোল্যান্ডে ৭৫ শতাংশ, নেদারল্যান্ডসে ৭৪ শতাংশ, ক্রোয়েশিয়ায় ৭৩ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ৬৯ শতাংশ এবং ইতালিতে ৬৪ শতাংশ মানুষ ভবিষ্যতের গণতন্ত্র নিয়ে উদ্বিগ্ন।
গণতন্ত্রের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতার পেছনে কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে; ভুয়া তথ্য (ডিসইনফরমেশন), রাজনৈতিক জবাবদিহির অভাব, চরমপন্থা ও দুর্নীতি।
ফ্রান্স (৫৬ শতাংশ), যুক্তরাজ্য (৬৪ শতাংশ), সুইডেন (৬৭ শতাংশ), নেদারল্যান্ডস (৭৫ শতাংশ) ও পোল্যান্ডে (৭৬ শতাংশ) সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে দেখা হয়েছে ভুয়া তথ্যকে। অন্যদিকে, দুর্নীতিকে সর্বোচ্চ হুমকি হিসেবে দেখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ৬৩ শতাংশ, স্পেনের ৭৩ শতাংশ, ক্রোয়েশিয়ার ৮০ শতাংশ ও ইতালির ৪৭ শতাংশ মানুষ। তবে ইতালিতে অর্থনৈতিক বৈষম্যকেও সমান বড় সমস্যা হিসেবে দেখা হয়েছে।
গণতন্ত্র শক্তিশালী করতে জরিপে অংশগ্রহণকারীরা যেসব সমাধানের কথা বলেছেন, তা হলো—কঠোর দুর্নীতিবিরোধী আইন ও এর বাস্তবায়ন, সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর আরও কার্যকর নিয়ন্ত্রণ, নাগরিক শিক্ষা উন্নয়ন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা।
জরিপে দেখা গেছে, গণতন্ত্রের প্রতি মোটের ওপর জোরালো সমর্থন রয়েছে। অধিকাংশ মানুষ মনে করেন, এটি সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও রক্ষাযোগ্য। তবে ক্রোয়েশিয়ায় অনেকে মনে করেন, কোনো দেশে গণতন্ত্র বজায় রাখা উচিত কি না—তা সেই দেশের মানুষের জীবনের মানের ওপর নির্ভর করে।
এদিকে, বেশির ভাগ দেশে বেড়েছে মৌলিক বা ‘র্যাডিক্যাল’ পরিবর্তনের দাবি। অনেকে মনে করেন বর্তমান ব্যবস্থাটি ধনীদের স্বার্থে, এটি সবার জন্য সমানভাবে কাজ করে না। স্পেনে ৫২ শতাংশ, ইতালিতে ৫৫ শতাংশ, পোল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যে ৬০ শতাংশ, ফ্রান্সে ৬৬ শতাংশ এবং ক্রোয়েশিয়ায় ৬৯ শতাংশ মানুষ র্যাডিক্যাল পরিবর্তনের দাবি করেন।
তবে পরিবর্তনের ইচ্ছা প্রবল হলেও, প্রায় সব দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সমঝোতায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক নেতৃত্বকে অগ্রাধিকার দেন।
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

পশ্চিমা বিশ্বের ৯টি দেশে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, এসব দেশের মানুষের মধ্যে গণতন্ত্র নিয়ে গভীর অসন্তোষ বিরাজ করছে। জরিপে অংশ নেওয়া দেশগুলোর মধ্যে আটটিতে গণতন্ত্র নিয়ে সন্তুষ্টি ৫০ শতাংশের নিচে। মাত্র একটি দেশ ছাড়া সবটিতেই ভবিষ্যতে গণতন্ত্রের অবস্থা নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ইপসোস পরিচালিত এই জরিপে ক্রোয়েশিয়া, ফ্রান্স, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, স্পেন, সুইডেন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১০ হাজার মানুষের মতামত নেওয়া হয়।
জরিপে দেখা গেছে, ৯ দেশের মধ্যে শুধু সুইডেনে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ গণতান্ত্রিক কার্যক্রমে সন্তুষ্ট (প্রায় ৬৫ শতাংশ)। নেদারল্যান্ডসে মতামত বিভক্ত; ৩৬ শতাংশ সন্তুষ্ট, ৩৭ শতাংশ অসন্তুষ্ট। পোল্যান্ডে ৪০ শতাংশ সন্তুষ্ট, ৩১ শতাংশ অসন্তুষ্ট।
বাকি দেশগুলোতে পরিস্থিতি আরও খারাপ। ছয় দেশে গড় সন্তুষ্টির হার ২৪ শতাংশের কম। ক্রোয়েশিয়ায় ১৮ শতাংশ, ফ্রান্সে ১৯ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ২০ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ২৬ শতাংশ, স্পেনে ২৭ শতাংশ এবং ইতালিতে ২৯ শতাংশ।
জরিপে অংশ নেওয়া অধিকাংশ মানুষ মনে করেন, গত পাঁচ বছরে তাঁদের দেশে গণতন্ত্রের মান আরও খারাপ হয়েছে। বিশেষ করে ফ্রান্স (৮১ শতাংশ) ও নেদারল্যান্ডসে (৭৬ শতাংশ); যেখানে চলতি বছর সরকার পতনের ঘটনা ঘটে।
যুক্তরাষ্ট্রে ৬১ শতাংশ এবং স্পেন ও যুক্তরাজ্যে ৫৮ শতাংশ মানুষ একই মত প্রকাশ করেন। একমাত্র ব্যতিক্রম পোল্যান্ড; সেখানে ৪২ শতাংশ মনে করেন গণতন্ত্রের মান কিছুটা ভালো হয়েছে, ৩০ শতাংশ বলেছেন খারাপ হয়েছে।
সুইডেন বাদে বাকি সব দেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর দুশ্চিন্তা লক্ষ্য করা গেছে। ফ্রান্সে ৮৬ শতাংশ, স্পেনে ৮০ শতাংশ, যুক্তরাজ্য ও পোল্যান্ডে ৭৫ শতাংশ, নেদারল্যান্ডসে ৭৪ শতাংশ, ক্রোয়েশিয়ায় ৭৩ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ৬৯ শতাংশ এবং ইতালিতে ৬৪ শতাংশ মানুষ ভবিষ্যতের গণতন্ত্র নিয়ে উদ্বিগ্ন।
গণতন্ত্রের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতার পেছনে কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে; ভুয়া তথ্য (ডিসইনফরমেশন), রাজনৈতিক জবাবদিহির অভাব, চরমপন্থা ও দুর্নীতি।
ফ্রান্স (৫৬ শতাংশ), যুক্তরাজ্য (৬৪ শতাংশ), সুইডেন (৬৭ শতাংশ), নেদারল্যান্ডস (৭৫ শতাংশ) ও পোল্যান্ডে (৭৬ শতাংশ) সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে দেখা হয়েছে ভুয়া তথ্যকে। অন্যদিকে, দুর্নীতিকে সর্বোচ্চ হুমকি হিসেবে দেখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ৬৩ শতাংশ, স্পেনের ৭৩ শতাংশ, ক্রোয়েশিয়ার ৮০ শতাংশ ও ইতালির ৪৭ শতাংশ মানুষ। তবে ইতালিতে অর্থনৈতিক বৈষম্যকেও সমান বড় সমস্যা হিসেবে দেখা হয়েছে।
গণতন্ত্র শক্তিশালী করতে জরিপে অংশগ্রহণকারীরা যেসব সমাধানের কথা বলেছেন, তা হলো—কঠোর দুর্নীতিবিরোধী আইন ও এর বাস্তবায়ন, সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর আরও কার্যকর নিয়ন্ত্রণ, নাগরিক শিক্ষা উন্নয়ন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা।
জরিপে দেখা গেছে, গণতন্ত্রের প্রতি মোটের ওপর জোরালো সমর্থন রয়েছে। অধিকাংশ মানুষ মনে করেন, এটি সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও রক্ষাযোগ্য। তবে ক্রোয়েশিয়ায় অনেকে মনে করেন, কোনো দেশে গণতন্ত্র বজায় রাখা উচিত কি না—তা সেই দেশের মানুষের জীবনের মানের ওপর নির্ভর করে।
এদিকে, বেশির ভাগ দেশে বেড়েছে মৌলিক বা ‘র্যাডিক্যাল’ পরিবর্তনের দাবি। অনেকে মনে করেন বর্তমান ব্যবস্থাটি ধনীদের স্বার্থে, এটি সবার জন্য সমানভাবে কাজ করে না। স্পেনে ৫২ শতাংশ, ইতালিতে ৫৫ শতাংশ, পোল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যে ৬০ শতাংশ, ফ্রান্সে ৬৬ শতাংশ এবং ক্রোয়েশিয়ায় ৬৯ শতাংশ মানুষ র্যাডিক্যাল পরিবর্তনের দাবি করেন।
তবে পরিবর্তনের ইচ্ছা প্রবল হলেও, প্রায় সব দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সমঝোতায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক নেতৃত্বকে অগ্রাধিকার দেন।

পশ্চিমা বিশ্বের ৯টি দেশে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, এসব দেশের মানুষের মধ্যে গণতন্ত্র নিয়ে গভীর অসন্তোষ বিরাজ করছে। জরিপে অংশ নেওয়া দেশগুলোর মধ্যে আটটিতে গণতন্ত্র নিয়ে সন্তুষ্টি ৫০ শতাংশের নিচে। মাত্র একটি দেশ ছাড়া সবটিতেই ভবিষ্যতে গণতন্ত্রের অবস্থা নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ইপসোস পরিচালিত এই জরিপে ক্রোয়েশিয়া, ফ্রান্স, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, স্পেন, সুইডেন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১০ হাজার মানুষের মতামত নেওয়া হয়।
জরিপে দেখা গেছে, ৯ দেশের মধ্যে শুধু সুইডেনে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ গণতান্ত্রিক কার্যক্রমে সন্তুষ্ট (প্রায় ৬৫ শতাংশ)। নেদারল্যান্ডসে মতামত বিভক্ত; ৩৬ শতাংশ সন্তুষ্ট, ৩৭ শতাংশ অসন্তুষ্ট। পোল্যান্ডে ৪০ শতাংশ সন্তুষ্ট, ৩১ শতাংশ অসন্তুষ্ট।
বাকি দেশগুলোতে পরিস্থিতি আরও খারাপ। ছয় দেশে গড় সন্তুষ্টির হার ২৪ শতাংশের কম। ক্রোয়েশিয়ায় ১৮ শতাংশ, ফ্রান্সে ১৯ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ২০ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ২৬ শতাংশ, স্পেনে ২৭ শতাংশ এবং ইতালিতে ২৯ শতাংশ।
জরিপে অংশ নেওয়া অধিকাংশ মানুষ মনে করেন, গত পাঁচ বছরে তাঁদের দেশে গণতন্ত্রের মান আরও খারাপ হয়েছে। বিশেষ করে ফ্রান্স (৮১ শতাংশ) ও নেদারল্যান্ডসে (৭৬ শতাংশ); যেখানে চলতি বছর সরকার পতনের ঘটনা ঘটে।
যুক্তরাষ্ট্রে ৬১ শতাংশ এবং স্পেন ও যুক্তরাজ্যে ৫৮ শতাংশ মানুষ একই মত প্রকাশ করেন। একমাত্র ব্যতিক্রম পোল্যান্ড; সেখানে ৪২ শতাংশ মনে করেন গণতন্ত্রের মান কিছুটা ভালো হয়েছে, ৩০ শতাংশ বলেছেন খারাপ হয়েছে।
সুইডেন বাদে বাকি সব দেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর দুশ্চিন্তা লক্ষ্য করা গেছে। ফ্রান্সে ৮৬ শতাংশ, স্পেনে ৮০ শতাংশ, যুক্তরাজ্য ও পোল্যান্ডে ৭৫ শতাংশ, নেদারল্যান্ডসে ৭৪ শতাংশ, ক্রোয়েশিয়ায় ৭৩ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ৬৯ শতাংশ এবং ইতালিতে ৬৪ শতাংশ মানুষ ভবিষ্যতের গণতন্ত্র নিয়ে উদ্বিগ্ন।
গণতন্ত্রের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতার পেছনে কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে; ভুয়া তথ্য (ডিসইনফরমেশন), রাজনৈতিক জবাবদিহির অভাব, চরমপন্থা ও দুর্নীতি।
ফ্রান্স (৫৬ শতাংশ), যুক্তরাজ্য (৬৪ শতাংশ), সুইডেন (৬৭ শতাংশ), নেদারল্যান্ডস (৭৫ শতাংশ) ও পোল্যান্ডে (৭৬ শতাংশ) সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে দেখা হয়েছে ভুয়া তথ্যকে। অন্যদিকে, দুর্নীতিকে সর্বোচ্চ হুমকি হিসেবে দেখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ৬৩ শতাংশ, স্পেনের ৭৩ শতাংশ, ক্রোয়েশিয়ার ৮০ শতাংশ ও ইতালির ৪৭ শতাংশ মানুষ। তবে ইতালিতে অর্থনৈতিক বৈষম্যকেও সমান বড় সমস্যা হিসেবে দেখা হয়েছে।
গণতন্ত্র শক্তিশালী করতে জরিপে অংশগ্রহণকারীরা যেসব সমাধানের কথা বলেছেন, তা হলো—কঠোর দুর্নীতিবিরোধী আইন ও এর বাস্তবায়ন, সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর আরও কার্যকর নিয়ন্ত্রণ, নাগরিক শিক্ষা উন্নয়ন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা।
জরিপে দেখা গেছে, গণতন্ত্রের প্রতি মোটের ওপর জোরালো সমর্থন রয়েছে। অধিকাংশ মানুষ মনে করেন, এটি সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও রক্ষাযোগ্য। তবে ক্রোয়েশিয়ায় অনেকে মনে করেন, কোনো দেশে গণতন্ত্র বজায় রাখা উচিত কি না—তা সেই দেশের মানুষের জীবনের মানের ওপর নির্ভর করে।
এদিকে, বেশির ভাগ দেশে বেড়েছে মৌলিক বা ‘র্যাডিক্যাল’ পরিবর্তনের দাবি। অনেকে মনে করেন বর্তমান ব্যবস্থাটি ধনীদের স্বার্থে, এটি সবার জন্য সমানভাবে কাজ করে না। স্পেনে ৫২ শতাংশ, ইতালিতে ৫৫ শতাংশ, পোল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যে ৬০ শতাংশ, ফ্রান্সে ৬৬ শতাংশ এবং ক্রোয়েশিয়ায় ৬৯ শতাংশ মানুষ র্যাডিক্যাল পরিবর্তনের দাবি করেন।
তবে পরিবর্তনের ইচ্ছা প্রবল হলেও, প্রায় সব দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সমঝোতায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক নেতৃত্বকে অগ্রাধিকার দেন।

ভেনেজুয়েলায় রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরাসরি নির্দেশে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ড-এর নেতৃত্বে একটি বিশাল সামরিক বহর ক্যারিবীয় সাগরে মোতায়েন করা হয়েছে। এই রণতরী বহর যে কোনো মুহূর্তে ভেনেজুয়েলায় সামরিক পদক্ষেপ নিতে
১৯ ঘণ্টা আগে
পাকিস্তানের সংবিধানের ২৭ তম সংশোধনীর প্রস্তাব গত সোমবার দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে পাস হয়। এরপর, গতকাল বুধবার তা নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদেও পাস হয়। এখন শুধু উচ্চকক্ষে সামান্য পরিবর্তিত হয়ে তা প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির স্বাক্ষরের মাধ্যমে সংবিধানের অংশ হয়ে যাবে।
৩ দিন আগে
মোদি ভুটানে এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘এই হামলায় জড়িতরা কেউই রেহাই পাবে না। সব অপরাধীকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।’ তবে বিস্ফোরণের দুই দিন পরও ভারতের রাজনৈতিক নেতা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিকভাবে এটিকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে ঘোষণা করেননি। এর মধ্যেই আবার গত মঙ্গলবার ইসলামাবাদে এক প্রাণঘাতী বিস্ফোরণ
৩ দিন আগে
ভেনেজুয়েলায় মার্কিন আক্রমণ আসন্ন বলেই মনে হচ্ছে। ১৯৯৪ সালের পর দেশটির উপকূলে যুক্তরাষ্ট্র এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়েছে। ভেনেজুয়েলার সঙ্গে মার্কিন শত্রুতার শুরু ২০০২ সালে, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজ দায়িত্ব গ্রহণের পর। এখন প্রশ্ন হলো—ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এই শত্রুতা ‘কী
৪ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলায় রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরাসরি নির্দেশে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ড-এর নেতৃত্বে একটি বিশাল সামরিক বহর ক্যারিবীয় সাগরে মোতায়েন করা হয়েছে। এই রণতরী বহর যে কোনো মুহূর্তে ভেনেজুয়েলায় সামরিক পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত রয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসন ভেনেজুয়েলায় সক্রিয় মাদক কার্টেলগুলোকে ‘ধ্বংস’ করার লক্ষ্য স্পষ্ট জানালেও, প্রশ্ন উঠেছে সামরিক আঘাত কি কেবল মাদক দমন অভিযানে সীমাবদ্ধ থাকবে, নাকি তা সরাসরি নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে উৎখাত করার পূর্ণাঙ্গ সামরিক উদ্যোগে রূপ নেবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা সীমিত করতে কংগ্রেসের ‘ওয়ার পাওয়ারস রেজোলিউশন’ প্রয়োগের প্রচেষ্টা গত বৃহস্পতিবার নিম্নকক্ষে ব্যর্থ হওয়ায়, ট্রাম্পের হাতে এখন সব ধরনের সামরিক পদক্ষেপের পূর্ণ ক্ষমতা রয়েছে। যদিও ট্রাম্প বলেছেন, ভেনেজুয়েলায় সামরিক অভিযানের সম্ভাবনা কম।
সামরিক বিশেষজ্ঞরাও মনে করছেন, পূর্ণাঙ্গ স্থল আক্রমণের সম্ভাবনা কম। তবে মার্কিন নৌ ও বিমান শক্তি দেশটির অভ্যন্তরীণ বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে মাদুরোর সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসনের এই কৌশলগত অবস্থান মাদুরো সরকারের ওপর চূড়ান্ত চাপ সৃষ্টি করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নিকোলাস মাদুরোর শাসনাধীন ভেনেজুয়েলার জনগণ দীর্ঘকাল ধরে অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে। এই পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে চান ভেনেজুয়েলার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ। এবারের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মারিয়া করিনা মাচাদো মাদুরো শাসনের বিরুদ্ধে পরিবর্তন আনার জন্য নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অবশ্য সর্বশেষ নির্বাচনের পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। তবে মাচাদো ট্রাম্প প্রশাসনের সামরিক উদ্যোগকে প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছেন। মাদুরো-বিরোধীরা আশা করছেন, মার্কিন বিমান ও নৌবাহিনী, সম্ভবত কিছু গোপন স্থল বাহিনীর সহায়তায়, অভ্যন্তরীণ বিরোধীদের সঙ্গে মিলে মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করবে। তখন মাচাদোর নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠানের দুয়ার খুলে যাবে।
ভেনেজুয়েলা সংকটের কেন্দ্রে রয়েছে বিশ্বের জ্বালানি মানচিত্র পাল্টে দেওয়ার মতো তেলসম্পদ। যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তথ্য প্রশাসন (ইআইএ)-এর তথ্য অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার প্রমাণিত তেলের মজুত ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল, যা বিশ্বের মধ্যে সর্ববৃহৎ। দেশটির মজুত সৌদি আরবের (২৬৭ বিলিয়ন ব্যারেল) এবং ইরানের (২০৮ বিলিয়ন ব্যারেল)-এর থেকেও বেশি।
কিন্তু সমাজতান্ত্রিক শাসনের অধীনে সাবেক প্রেসিডেন্ট হুগো শাভেজ-এর সময়ে শুরু হওয়া আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও সরকারি কিছু অদক্ষতার কারণে দেশটির একসময়কার বিশ্বের অন্যতম লাভজনক তেল শিল্প প্রায় ধ্বংসের মুখে। বর্তমানে ভেনেজুয়েলা তেল উৎপাদন প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে এবং রপ্তানি করে বছরে মাত্র ৪ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। অথচ সৌদি আরব বছরে প্রায় ১৮০ বিলিয়ন ডলার এবং রাশিয়া ১২০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের তেল রপ্তানি করে থাকে। এই বিপুল সম্পদ যদি সমাজতান্ত্রিক সরকারের নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে আসে, তাহলে তা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এক নতুন ঢেউ আনবে।
যদি মাদুরোর শাসনের পতন হয় এবং মার্কিন সরকারের পূর্ণ সমর্থন থাকে (নিশ্চিতভাবে তা থাকবে), তবে তেল শিল্প দ্রুত পুনরুদ্ধার এবং একই সঙ্গে ধসের মুখেও পড়তে পারে। ২০ বছর আগেও ভেনেজুয়েলা দৈনিক ৩ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উৎপাদন করত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদুরোর পতন হলে খুব দ্রুতই দেশটি সেই স্তরে ফিরে যেতে পারে।
এই বিপুল পরিমাণ তেল যদি বাজারে আসে এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি ভেনেজুয়েলাকে ওপেক-এর বাইরে রাখতে চান (অতি অবশ্যই রাখবেন), তাহলে তেলের দাম মারাত্মকভাবে কমবে। বিশ্লেষকদের ধারণা, ব্যারেলপ্রতি তেলের দাম ৫০ ডলারের নিচে নেমে যেতে পারে, এমনকি ৩০ ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। এই মূল্যপতন বৈশ্বিক অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় যে তিনটি পরিণতি নিয়ে আসবে সেগুলো হলো:
সংকটে পড়বে ভ্লাদিমির পুতিনের রাশিয়া: তেলের দাম কমলে রাশিয়ার তেল বিক্রি থেকে রাজস্ব মারাত্মকভাবে কমে যাবে। ব্যারেলপ্রতি ৩০ ডলারে বিক্রি হলে, রাশিয়া তাদের ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যয় নির্বাহ করার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ উপার্জন করতে পারবে না। বিশ্ববাজারে ভেনেজুয়েলার সস্তা তেল সহজলভ্য হলে, নিষেধাজ্ঞার মুখে থাকা রাশিয়ার তেল কেনার আগ্রহ আরও কমে যাবে।
সৌদি আরবের ওপর চরম আর্থিক চাপ: কম তেলের দামের কারণে সৌদি আরবও বিশাল আর্থিক চাপের মুখে পড়বে। এখনই দেশটির বাজেট ঘাটতি বাড়ছে; তেলের রাজস্ব কমে গেলে এই সংকট আরও গভীর হবে এবং যুবরাজ তাঁর স্বপ্নের প্রকল্পে ব্যয় কমাতে বাধ্য হবে।
বিশ্ব অর্থনীতির গতি বৃদ্ধি: তেল রপ্তানিকারকদের ক্ষতি হলেও, বিশ্বের বাকি অর্থনীতির জন্য ক্রমহ্রাসমান তেলের দাম অত্যন্ত সহায়ক। এর ফলে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি হ্রাস পাবে, মানুষের হাতে অন্যান্য জিনিসের জন্য বেশি অর্থ থাকবে এবং তা বিশ্ব অর্থনীতিকে সামগ্রিকভাবে উদ্দীপিত করবে।
তবে এই সামরিক পদক্ষেপ শেষ পর্যন্ত কোন দিকে যায়, বা হোয়াইট হাউস হস্তক্ষেপের ঝুঁকি নেবে কিনা, তা এখনো অনিশ্চিত। কিন্তু যদি এই অভিযান সফল হয়, তবে এটি ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের সবচেয়ে নাটকীয় রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত হবে।

ভেনেজুয়েলায় রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরাসরি নির্দেশে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ড-এর নেতৃত্বে একটি বিশাল সামরিক বহর ক্যারিবীয় সাগরে মোতায়েন করা হয়েছে। এই রণতরী বহর যে কোনো মুহূর্তে ভেনেজুয়েলায় সামরিক পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত রয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসন ভেনেজুয়েলায় সক্রিয় মাদক কার্টেলগুলোকে ‘ধ্বংস’ করার লক্ষ্য স্পষ্ট জানালেও, প্রশ্ন উঠেছে সামরিক আঘাত কি কেবল মাদক দমন অভিযানে সীমাবদ্ধ থাকবে, নাকি তা সরাসরি নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে উৎখাত করার পূর্ণাঙ্গ সামরিক উদ্যোগে রূপ নেবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা সীমিত করতে কংগ্রেসের ‘ওয়ার পাওয়ারস রেজোলিউশন’ প্রয়োগের প্রচেষ্টা গত বৃহস্পতিবার নিম্নকক্ষে ব্যর্থ হওয়ায়, ট্রাম্পের হাতে এখন সব ধরনের সামরিক পদক্ষেপের পূর্ণ ক্ষমতা রয়েছে। যদিও ট্রাম্প বলেছেন, ভেনেজুয়েলায় সামরিক অভিযানের সম্ভাবনা কম।
সামরিক বিশেষজ্ঞরাও মনে করছেন, পূর্ণাঙ্গ স্থল আক্রমণের সম্ভাবনা কম। তবে মার্কিন নৌ ও বিমান শক্তি দেশটির অভ্যন্তরীণ বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে মাদুরোর সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসনের এই কৌশলগত অবস্থান মাদুরো সরকারের ওপর চূড়ান্ত চাপ সৃষ্টি করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নিকোলাস মাদুরোর শাসনাধীন ভেনেজুয়েলার জনগণ দীর্ঘকাল ধরে অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে। এই পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে চান ভেনেজুয়েলার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ। এবারের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মারিয়া করিনা মাচাদো মাদুরো শাসনের বিরুদ্ধে পরিবর্তন আনার জন্য নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অবশ্য সর্বশেষ নির্বাচনের পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। তবে মাচাদো ট্রাম্প প্রশাসনের সামরিক উদ্যোগকে প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছেন। মাদুরো-বিরোধীরা আশা করছেন, মার্কিন বিমান ও নৌবাহিনী, সম্ভবত কিছু গোপন স্থল বাহিনীর সহায়তায়, অভ্যন্তরীণ বিরোধীদের সঙ্গে মিলে মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করবে। তখন মাচাদোর নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠানের দুয়ার খুলে যাবে।
ভেনেজুয়েলা সংকটের কেন্দ্রে রয়েছে বিশ্বের জ্বালানি মানচিত্র পাল্টে দেওয়ার মতো তেলসম্পদ। যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তথ্য প্রশাসন (ইআইএ)-এর তথ্য অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার প্রমাণিত তেলের মজুত ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল, যা বিশ্বের মধ্যে সর্ববৃহৎ। দেশটির মজুত সৌদি আরবের (২৬৭ বিলিয়ন ব্যারেল) এবং ইরানের (২০৮ বিলিয়ন ব্যারেল)-এর থেকেও বেশি।
কিন্তু সমাজতান্ত্রিক শাসনের অধীনে সাবেক প্রেসিডেন্ট হুগো শাভেজ-এর সময়ে শুরু হওয়া আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও সরকারি কিছু অদক্ষতার কারণে দেশটির একসময়কার বিশ্বের অন্যতম লাভজনক তেল শিল্প প্রায় ধ্বংসের মুখে। বর্তমানে ভেনেজুয়েলা তেল উৎপাদন প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে এবং রপ্তানি করে বছরে মাত্র ৪ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। অথচ সৌদি আরব বছরে প্রায় ১৮০ বিলিয়ন ডলার এবং রাশিয়া ১২০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের তেল রপ্তানি করে থাকে। এই বিপুল সম্পদ যদি সমাজতান্ত্রিক সরকারের নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে আসে, তাহলে তা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এক নতুন ঢেউ আনবে।
যদি মাদুরোর শাসনের পতন হয় এবং মার্কিন সরকারের পূর্ণ সমর্থন থাকে (নিশ্চিতভাবে তা থাকবে), তবে তেল শিল্প দ্রুত পুনরুদ্ধার এবং একই সঙ্গে ধসের মুখেও পড়তে পারে। ২০ বছর আগেও ভেনেজুয়েলা দৈনিক ৩ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উৎপাদন করত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদুরোর পতন হলে খুব দ্রুতই দেশটি সেই স্তরে ফিরে যেতে পারে।
এই বিপুল পরিমাণ তেল যদি বাজারে আসে এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি ভেনেজুয়েলাকে ওপেক-এর বাইরে রাখতে চান (অতি অবশ্যই রাখবেন), তাহলে তেলের দাম মারাত্মকভাবে কমবে। বিশ্লেষকদের ধারণা, ব্যারেলপ্রতি তেলের দাম ৫০ ডলারের নিচে নেমে যেতে পারে, এমনকি ৩০ ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। এই মূল্যপতন বৈশ্বিক অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় যে তিনটি পরিণতি নিয়ে আসবে সেগুলো হলো:
সংকটে পড়বে ভ্লাদিমির পুতিনের রাশিয়া: তেলের দাম কমলে রাশিয়ার তেল বিক্রি থেকে রাজস্ব মারাত্মকভাবে কমে যাবে। ব্যারেলপ্রতি ৩০ ডলারে বিক্রি হলে, রাশিয়া তাদের ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যয় নির্বাহ করার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ উপার্জন করতে পারবে না। বিশ্ববাজারে ভেনেজুয়েলার সস্তা তেল সহজলভ্য হলে, নিষেধাজ্ঞার মুখে থাকা রাশিয়ার তেল কেনার আগ্রহ আরও কমে যাবে।
সৌদি আরবের ওপর চরম আর্থিক চাপ: কম তেলের দামের কারণে সৌদি আরবও বিশাল আর্থিক চাপের মুখে পড়বে। এখনই দেশটির বাজেট ঘাটতি বাড়ছে; তেলের রাজস্ব কমে গেলে এই সংকট আরও গভীর হবে এবং যুবরাজ তাঁর স্বপ্নের প্রকল্পে ব্যয় কমাতে বাধ্য হবে।
বিশ্ব অর্থনীতির গতি বৃদ্ধি: তেল রপ্তানিকারকদের ক্ষতি হলেও, বিশ্বের বাকি অর্থনীতির জন্য ক্রমহ্রাসমান তেলের দাম অত্যন্ত সহায়ক। এর ফলে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি হ্রাস পাবে, মানুষের হাতে অন্যান্য জিনিসের জন্য বেশি অর্থ থাকবে এবং তা বিশ্ব অর্থনীতিকে সামগ্রিকভাবে উদ্দীপিত করবে।
তবে এই সামরিক পদক্ষেপ শেষ পর্যন্ত কোন দিকে যায়, বা হোয়াইট হাউস হস্তক্ষেপের ঝুঁকি নেবে কিনা, তা এখনো অনিশ্চিত। কিন্তু যদি এই অভিযান সফল হয়, তবে এটি ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের সবচেয়ে নাটকীয় রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত হবে।

পশ্চিমা বিশ্বের ৯টি দেশে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, এসব দেশের মানুষের মধ্যে গণতন্ত্র নিয়ে গভীর অসন্তোষ বিরাজ করছে। জরিপে অংশ নেওয়া দেশগুলোর মধ্যে আটটিতে গণতন্ত্র নিয়ে সন্তুষ্টি ৫০ শতাংশের নিচে। মাত্র একটি দেশ ছাড়া সবটিতেই ভবিষ্যতে গণতন্ত্রের অবস্থা নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
১২ ঘণ্টা আগে
পাকিস্তানের সংবিধানের ২৭ তম সংশোধনীর প্রস্তাব গত সোমবার দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে পাস হয়। এরপর, গতকাল বুধবার তা নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদেও পাস হয়। এখন শুধু উচ্চকক্ষে সামান্য পরিবর্তিত হয়ে তা প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির স্বাক্ষরের মাধ্যমে সংবিধানের অংশ হয়ে যাবে।
৩ দিন আগে
মোদি ভুটানে এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘এই হামলায় জড়িতরা কেউই রেহাই পাবে না। সব অপরাধীকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।’ তবে বিস্ফোরণের দুই দিন পরও ভারতের রাজনৈতিক নেতা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিকভাবে এটিকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে ঘোষণা করেননি। এর মধ্যেই আবার গত মঙ্গলবার ইসলামাবাদে এক প্রাণঘাতী বিস্ফোরণ
৩ দিন আগে
ভেনেজুয়েলায় মার্কিন আক্রমণ আসন্ন বলেই মনে হচ্ছে। ১৯৯৪ সালের পর দেশটির উপকূলে যুক্তরাষ্ট্র এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়েছে। ভেনেজুয়েলার সঙ্গে মার্কিন শত্রুতার শুরু ২০০২ সালে, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজ দায়িত্ব গ্রহণের পর। এখন প্রশ্ন হলো—ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এই শত্রুতা ‘কী
৪ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

পাকিস্তানের সংবিধানের ২৭ তম সংশোধনীর প্রস্তাব গত সোমবার দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে পাস হয়। এরপর, গতকাল বুধবার তা নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদেও পাস হয়। এখন শুধু উচ্চকক্ষে সামান্য পরিবর্তিত হয়ে তা প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির স্বাক্ষরের মাধ্যমে সংবিধানের অংশ হয়ে যাবে। এই সংশোধনী দেশটির বিচারব্যবস্থা এবং সামরিক বাহিনীর কাঠামোয় ব্যাপক পরিবর্তন আনবে।
সমালোচনা আছে যে, সংশোধনীটির মূল উদ্দেশ্য সরকার এবং বিপুল ক্ষমতাধর সেনাবাহিনীর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের ওপর তদারকি দুর্বল করা। প্রধান বিরোধী দল, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক–ই–ইনসাফ (পিটিআই) উভয় কক্ষেই এই বিলের বিরোধিতা করে অধিবেশন বয়কট করেছে। উচ্চ আদালতের বিচারকেরাও এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। যদিও কিছু বিশেষজ্ঞ বলছেন, কিছু পরিবর্তন যুক্তিসংগত।
২৭তম সংশোধনী সংবিধানের অংশ হয়ে গেলে মূলত এটি দেশটির শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের যেকোনো ধরনের ফৌজদারি মামলায় দায়মুক্তি দেবে এবং সামরিক কমান্ড কাঠামো পুনর্গঠন করবে। এই পরিবর্তনগুলো পাকিস্তানের সংবিধানের ধারা ২৪৩-এর মাধ্যমে করা হবে। সংশোধনীর অন্য ধারা ফেডারেল সংবিধানিক কোর্ট (এফসিসি) স্থাপনের মতো বিভিন্ন আইনি সংস্কারের ব্যবস্থা করবে।
অনেক সংবিধান সংশোধনীই বিতর্কিত হয়, কিন্তু সমালোচকেরা প্রশ্ন তুলেছেন—বর্তমান সংশোধনী এত দ্রুত কেন আনা হয়েছে। আইনমন্ত্রী আজম নাজির তারার এটি গত শনিবার সিনেটে উপস্থাপন করেন, সেই দিনই মন্ত্রিপরিষদ অনুমোদন করে। আজারবাইজান সফরে থাকা প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে অনুমোদন দেন। তাঁর সফরে সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরও ছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে শাহবাজ শরিফের সব রাষ্ট্রীয় সফরে সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে দেখা গেছে। গত রোববার ইসলামাবাদে ফেরার পর শাহবাজ আনুষ্ঠানিকভাবে পার্লামেন্টে হাজির হন।
সংবিধানের ধারা–২৪৩ পাকিস্তানের বেসামরিক সরকার এবং সামরিক বাহিনীর সম্পর্ক সংজ্ঞায়িত করে। পরিবর্তিত বিধান অনুসারে, ধারা ২৪৩-এ সেনাপ্রধানের অধীনে চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস (সিডিএফ) নামে নতুন পদ সৃষ্টি করা হবে। এর অর্থ, সেনাপ্রধান বিমান ও নৌবাহিনীর ওপরও নিয়ন্ত্রণ রাখবেন। সংশোধনী আইনে পরিণত হলে, জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটি চলতি মাসের শেষে বাতিল হবে। বর্তমানে জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটি দায়িত্ব পালন করছেন চার-তারকা জেনারেল সাহির শামশাদ আছেন। তিনি ২৭ নভেম্বর অবসর নেবেন।
১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী, দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত। চারটি অভ্যুত্থান এবং দশকব্যাপী সরাসরি ও অপ্রত্যক্ষ সামরিক শাসন এই প্রভাবকে ক্রমেই দৃঢ় করেছে। সেনাপ্রধান দীর্ঘদিন ধরে দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত।
বর্তমান সেনাপ্রধান আসিম মুনির ২০২২ সালের নভেম্বরে সেনাপ্রধান হন এবং ভারতের সঙ্গে চার দিনের সংঘাতের ১০ দিন পর, গত ২০ মে পাঁচ তারকা র্যাঙ্কে ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত হন। ২৭ তম সংশোধনী পাঁচ তারকা জেনারেলদের আজীবন দায়মুক্তি দেবে এবং তাঁদের ‘র্যাঙ্ক, সুবিধা এবং ইউনিফর্ম জীবনভর বজায় রাখার’ বিধান থাকবে।
পাকিস্তানের দ্বিতীয় সেনা কর্মকর্তা হিসেবে পাঁচ-তারকা র্যাঙ্ক অর্জন করেছেন আসিম মুনির। এর আগে ১৯৬০-এর দশকে ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানই একমাত্র ছিলেন। সামরিক বাহিনীর অন্য কোনো শাখার—যেমন বিমান বা নৌবাহিনীর কোনো কর্মকর্তা পাঁচ তারকা পাননি।
প্রস্তাবিত সংশোধনী জাতীয় কৌশলগত কমান্ড (এনএসসি) কমান্ডারের পদও সৃষ্টি করছে। এই পদধারী ব্যক্তি পারমাণবিক কমান্ডের দায়িত্ব গ্রহণ করবে। সংশোধনী অনুসারে এনএসসি প্রধান কেবল সেনাবাহিনী থেকে সেনাপ্রধান বা চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেসের পরামর্শে নিযুক্ত করা হবে।
পাকিস্তানের বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী, ধারা–২৪৮ বলে ‘প্রেসিডেন্ট বা কোনো প্রদেশের গভর্নরের বিরুদ্ধে মেয়াদকাল চলাকালে কোনো ফৌজদারি মামলার বিচার শুরু বা চালিয়ে যাওয়া যাবে না।’ কিন্তু পদত্যাগের পর তাঁদের এমন সুবিধা নেই। বর্তমান জেনারেলদের কোনো আইনি সুরক্ষা নেই। ২৭ তম সংশোধনীর আগে ফিল্ড মার্শালের পদকে শুধু গৌরবসূচক ধরা হতো, কোনো অতিরিক্ত ক্ষমতা বা সুবিধা ছিল না। তবে প্রস্তাবিত পরিবর্তন মূলত এই পদটিকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেবে।
সংশোধনীটি আইনে পরিণত হওয়ার পর পাঁচ-তারকা কোনো কর্মকর্তাকে অপসারণ করতে পার্লামেন্টে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন হবে। অথচ, কোনো প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনতে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের ভোট পেলেই হয়। এ ছাড়া, পাঁচ তারকা কর্মকর্তা আজীবন যাবতীয় ফৌজদারি মামলা থেকে দায়মুক্তি পাবেন।
লাহোরভিত্তিক সংবিধানবিদ রিদা হোসাইন বলেন, ‘যেখানে অবাধ ক্ষমতা সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়, সেখানে গণতন্ত্র টিকে থাকে না। এই সংশোধনী অনির্বাচিত সেনা কর্মকর্তাকে এমন বিশেষাধিকার ও ক্ষমতা দেবে, যা কিনা দেশের কোনো নির্বাচিত নেতাও পান না।’
খসড়া সংশোধনীতে একটি স্থায়ী ফেডারেল সংবিধানিক আদালত (এফসিসি) গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই আদালতের নেতৃত্ব দেবেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রধান বিচারপতি এবং এতে চার প্রদেশ থেকে সমান সংখ্যক বিচারকসহ ইসলামাবাদ থেকেও বিচারক থাকবেন। এটি ফেডারেল ও প্রাদেশিক সরকারের বিভিন্ন বিরোধ নিষ্পত্তি করবে।
এফসিসি-এর বিচারকের বয়সসীমা ৬৮ বছর, যদিও সুপ্রিম কোর্টের বিচারকের বয়স হতে পারে সর্বোচ্চ ৬৫ বছর। এফসিসির প্রধান বিচারপতির মেয়াদ সর্বোচ্চ তিন বছর। এই সংশোধনী প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাও বাড়াচ্ছে। এর ফলে, তিনি পাকিস্তানের জুডিশিয়াল কমিশনের (জেসিপি) প্রস্তাবের ভিত্তিতে একজন বিচারককে এক হাইকোর্ট থেকে অন্য হাইকোর্টে স্থানান্তর করতে পারবেন।
গত বছর ২৬তম সংশোধনী পাস হওয়ার পর, হাইকোর্ট থেকে হাইকোর্টে বিচারক স্থানান্তর কেবল রাষ্ট্রপতির আদেশের মাধ্যমে হতে পারত। কিন্তু বিচারকের ব্যক্তিগত সম্মতি আবশ্যক ছিল, পাশাপাশি পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি এবং সংশ্লিষ্ট দুই হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শও জরুরি ছিল।
নতুন সংশোধনীর অধীনে এটি বদলে যাবে। প্রেসিডেন্ট সেজিপির প্রস্তাব অনুযায়ী বিচারককে স্থানান্তর করতে পারবেন, সংশ্লিষ্ট বিচারকের সম্মতি ছাড়াই। একই সঙ্গে, যদি কোনো বিচারক স্থানান্তর অস্বীকার করেন, তবে তিনি জেসিপির সামনে তার কারণ উপস্থাপন করার সুযোগ পাবেন এবং যদি জেসিপি কারণগুলো আইন বহির্ভূত মনে করে, তাহলে বিচারককে অবসর গ্রহণ করতে হবে।
রিদা হোসাইন বলেন, সংশোধনী অনুযায়ী বিচারকদের সম্মতি ছাড়াই অন্য অঞ্চলে স্থানান্তর করা যাবে এবং অস্বীকৃতি দিলে তাদের বিরুদ্ধে জেসিপি পদক্ষেপ নিতে পারবে। তিনি বলেন, ‘অস্বীকৃতির ফলে দায়বদ্ধতার প্রক্রিয়া শুরু হয়, এটি প্রশাসনিক ক্ষমতাকে ভীতি প্রদর্শনের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার সূক্ষ্ম হুমকি। এটি স্বাধীন বিচারিক পদকে এমন একটি অবস্থায় নিয়ে এল, যেখানে সর্বদা শাস্তিমূলক বা প্রতিশোধমূলক স্থানান্তরের ভয়ে কাজ করতে হবে।’
জেনেভাভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জাস্টিসের আইন উপদেষ্টা রীমা ওমর বলেন, নতুন সংশোধনীটি স্বল্প ও মধ্য মেয়াদে উদ্বেগজনক প্রভাব ফেলতে পারে। তিনি বলেন, এর ফলে ‘সরকারের নির্বাহী বিভাগই সেই বিচারকদের নিয়োগ করবে, যাদের একমাত্র এখতিয়ারই হলো নির্বাহী বিভাগকে দায়বদ্ধ করা।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটি স্পষ্টতই বিদ্যমান সেট-আপকে বিচারিক তদারকি ও দায়বদ্ধতা থেকে রক্ষা করার জন্য করা হচ্ছে। প্রয়োজনে এফসিসির মাধ্যমে এই সিদ্ধান্তগুলোকে সংবিধানিক বৈধতা দেওয়া সম্ভব হবে।’
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারকেরাও সংশোধনীর সমালোচনা করছেন। জ্যেষ্ঠ বিচারক মানসুর আলি শাহ সোমবার প্রধান বিচারপতি ইয়াহিয়া আফ্রিদিকে খোলা চিঠিতে লিখেছেন, এফসিসি কোনো ‘সত্যিকারের সংস্কার এজেন্ডা’ নয়, বরং এটি বিচার বিভাগকে দুর্বল ও নিয়ন্ত্রণ করার একটি ‘রাজনৈতিক কল’। তিনি বলেন, ‘বিচার প্রক্রিয়ায় এ ধরনের প্ররোচনা ইতিহাসে ক্ষমতার অপব্যবহার হিসেবে চিহ্নিত হয়; এটি সংবিধানিক অভিভাবকের ব্যর্থতা হিসেবে রেকর্ড হয় এবং যখন এমন মুহূর্তগুলোতে প্রতিষ্ঠানগুলো নীরব থাকে, তখন তারা নিজেদের রক্ষার চেষ্টা করা কাঠামোকেই দুর্বল করে।’
সরকারের যুক্তি—এই প্রস্তাব সুপ্রিম কোর্টে দায়ের হওয়া সংবিধানিক মামলার সংখ্যা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে নেওয়া হয়েছে। কারণ, এসব মামলার জট ‘নিয়মিত দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার সময়মতো নিষ্পত্তিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলছে।’ সরকার জানিয়েছে, ধারা–২৪৩-এ পরিবর্তন প্রস্তাব করা হয়েছে ‘সশস্ত্র বাহিনী সম্পর্কিত প্রক্রিয়াগত স্বচ্ছতা এবং প্রশাসনিক কাঠামো উন্নত করার’ জন্য।
কিছু বিশেষজ্ঞ এ বিষয়ে একমত হয়েছেন। ইসলামাবাদভিত্তিক সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হাফিজ আহসান আহমদ খোকার বলেছেন, একটি স্থায়ী কেন্দ্রীয় সাংবিধানিক আদালত বা এফসিসি ‘সমন্বিত দক্ষতা এবং সময়মতো বিচার’ নিশ্চিত করবে। তিনি বলেন, ‘এটি সংবিধান ব্যাখ্যা করার, কেন্দ্র-প্রদেশ সম্পর্কিত বিতর্ক সমাধান করার, আইনের বৈধতা নির্ধারণ করার এবং পরামর্শমূলক মতামত প্রদানের ক্ষমতা রাখে। এটি দক্ষতা এবং সময়মতো বিচার নিশ্চিত করে।’
খোকারের যুক্তি, এফসিসি গঠনের ফলে সংবিধানিক বিচার প্রক্রিয়ায় সামঞ্জস্য, দ্রুততা এবং শৃঙ্খলা আসবে। এ ছাড়া, কমান্ডার অব ডিফেন্স ফোর্সেস অফিসের সূচনা কৌশলগত কমান্ডকে একীভূত করবে এবং সমন্বয় বাড়াবে, কিন্তু বিদ্যমান বাহিনীর স্বায়ত্তশাসন ক্ষুণ্ন করবে না। তিনি বলেন, ‘উভয় সংস্কার পাকিস্তানের শাসন ব্যবস্থার বাস্তবতা এবং রাষ্ট্রের কার্যাবলির জটিলতা বৃদ্ধির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। এই পদক্ষেপগুলো পাকিস্তানকে একটি পরিপক্ব, নিয়মতান্ত্রিক গণতন্ত্রে রূপান্তরিত হতে সাহায্য করবে, যেখানে বিচারিক, নাগরিক ও প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বিশেষায়িত ভূমিকায় সামঞ্জস্যের সঙ্গে কাজ করবে।’
তবে এই ব্যাখ্যাগুলো অনেককে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। পাকিস্তান হিউম্যান রাইটস কমিশন সংশোধনী বিলের তাগিদ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তারা বলেছে, সরকারের তাড়াহুড়ো, রাজনৈতিক বিরোধী দলের সঙ্গে কোনো অর্থবহ শলা-পরামর্শের অভাব, আইনজীবী সমাজ এবং নাগরিক সমাজের সঙ্গে আলোচনা না করা—এসবই সংশোধনী বিল আনার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করেছে।
আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের (আইসিজে) রীমা ওমর সতর্ক করেছেন, এই সংশোধনী বিচারব্যবস্থার জন্য একটি ‘মূলগত পরিবর্তন’ চিহ্নিত করছে। তিনি বলেন, ‘২৭ তম সংশোধনী পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টকে শুধু আপিল আদালত হিসেবে সীমিত করে। এটি আর পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট নয়, নিছক সুপ্রিম কোর্ট এবং এর প্রধান বিচারপতি হবে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি, পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি নয়।’
ওমর আরও বলেন, অন্তত স্বল্প ও মধ্য মেয়াদে, বিচারব্যবস্থা প্রধানত নির্বাহী বিভাগের ওপর নির্ভরশীল থাকবে। তিনি বলেন, ‘নির্বাহী ও সংসদের বাস্তব কোনো জবাবদিহি বা পর্যালোচনার সুযোগ এখন সম্ভবত অল্প এবং পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) পক্ষে আর কোনো সহায়তা পাওয়া সম্ভব নয়।’
রিদা হোসাইন সতর্ক করেছেন, সংশোধনীর অধীনে প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক তদারকি এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ইচ্ছার মুখাপেক্ষী থাকলেও অনির্বাচিত কর্মকর্তাদের জন্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এটি ব্যালটের পরিবর্তে উর্দির প্রাধান্যকে প্রতিস্থাপন করেছে।’
ওমের বলেন, পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলো—যার মধ্যে বর্তমান শাসক পাকিস্তান মুসলিম লীগ–নওয়াজ ও জোটসঙ্গী পাকিস্তান পিপলস পার্টি রয়েছে—অতীতে সামরিক বাহিনীর জন্য সংবিধানিক সুরক্ষার বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু এখন তা পরিবর্তিত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘২৭ তম সংশোধনী হলো সাংবিধানিক আত্মসমর্পণ।’
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

পাকিস্তানের সংবিধানের ২৭ তম সংশোধনীর প্রস্তাব গত সোমবার দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে পাস হয়। এরপর, গতকাল বুধবার তা নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদেও পাস হয়। এখন শুধু উচ্চকক্ষে সামান্য পরিবর্তিত হয়ে তা প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির স্বাক্ষরের মাধ্যমে সংবিধানের অংশ হয়ে যাবে। এই সংশোধনী দেশটির বিচারব্যবস্থা এবং সামরিক বাহিনীর কাঠামোয় ব্যাপক পরিবর্তন আনবে।
সমালোচনা আছে যে, সংশোধনীটির মূল উদ্দেশ্য সরকার এবং বিপুল ক্ষমতাধর সেনাবাহিনীর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের ওপর তদারকি দুর্বল করা। প্রধান বিরোধী দল, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক–ই–ইনসাফ (পিটিআই) উভয় কক্ষেই এই বিলের বিরোধিতা করে অধিবেশন বয়কট করেছে। উচ্চ আদালতের বিচারকেরাও এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। যদিও কিছু বিশেষজ্ঞ বলছেন, কিছু পরিবর্তন যুক্তিসংগত।
২৭তম সংশোধনী সংবিধানের অংশ হয়ে গেলে মূলত এটি দেশটির শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের যেকোনো ধরনের ফৌজদারি মামলায় দায়মুক্তি দেবে এবং সামরিক কমান্ড কাঠামো পুনর্গঠন করবে। এই পরিবর্তনগুলো পাকিস্তানের সংবিধানের ধারা ২৪৩-এর মাধ্যমে করা হবে। সংশোধনীর অন্য ধারা ফেডারেল সংবিধানিক কোর্ট (এফসিসি) স্থাপনের মতো বিভিন্ন আইনি সংস্কারের ব্যবস্থা করবে।
অনেক সংবিধান সংশোধনীই বিতর্কিত হয়, কিন্তু সমালোচকেরা প্রশ্ন তুলেছেন—বর্তমান সংশোধনী এত দ্রুত কেন আনা হয়েছে। আইনমন্ত্রী আজম নাজির তারার এটি গত শনিবার সিনেটে উপস্থাপন করেন, সেই দিনই মন্ত্রিপরিষদ অনুমোদন করে। আজারবাইজান সফরে থাকা প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে অনুমোদন দেন। তাঁর সফরে সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরও ছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে শাহবাজ শরিফের সব রাষ্ট্রীয় সফরে সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে দেখা গেছে। গত রোববার ইসলামাবাদে ফেরার পর শাহবাজ আনুষ্ঠানিকভাবে পার্লামেন্টে হাজির হন।
সংবিধানের ধারা–২৪৩ পাকিস্তানের বেসামরিক সরকার এবং সামরিক বাহিনীর সম্পর্ক সংজ্ঞায়িত করে। পরিবর্তিত বিধান অনুসারে, ধারা ২৪৩-এ সেনাপ্রধানের অধীনে চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস (সিডিএফ) নামে নতুন পদ সৃষ্টি করা হবে। এর অর্থ, সেনাপ্রধান বিমান ও নৌবাহিনীর ওপরও নিয়ন্ত্রণ রাখবেন। সংশোধনী আইনে পরিণত হলে, জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটি চলতি মাসের শেষে বাতিল হবে। বর্তমানে জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটি দায়িত্ব পালন করছেন চার-তারকা জেনারেল সাহির শামশাদ আছেন। তিনি ২৭ নভেম্বর অবসর নেবেন।
১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী, দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত। চারটি অভ্যুত্থান এবং দশকব্যাপী সরাসরি ও অপ্রত্যক্ষ সামরিক শাসন এই প্রভাবকে ক্রমেই দৃঢ় করেছে। সেনাপ্রধান দীর্ঘদিন ধরে দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত।
বর্তমান সেনাপ্রধান আসিম মুনির ২০২২ সালের নভেম্বরে সেনাপ্রধান হন এবং ভারতের সঙ্গে চার দিনের সংঘাতের ১০ দিন পর, গত ২০ মে পাঁচ তারকা র্যাঙ্কে ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত হন। ২৭ তম সংশোধনী পাঁচ তারকা জেনারেলদের আজীবন দায়মুক্তি দেবে এবং তাঁদের ‘র্যাঙ্ক, সুবিধা এবং ইউনিফর্ম জীবনভর বজায় রাখার’ বিধান থাকবে।
পাকিস্তানের দ্বিতীয় সেনা কর্মকর্তা হিসেবে পাঁচ-তারকা র্যাঙ্ক অর্জন করেছেন আসিম মুনির। এর আগে ১৯৬০-এর দশকে ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানই একমাত্র ছিলেন। সামরিক বাহিনীর অন্য কোনো শাখার—যেমন বিমান বা নৌবাহিনীর কোনো কর্মকর্তা পাঁচ তারকা পাননি।
প্রস্তাবিত সংশোধনী জাতীয় কৌশলগত কমান্ড (এনএসসি) কমান্ডারের পদও সৃষ্টি করছে। এই পদধারী ব্যক্তি পারমাণবিক কমান্ডের দায়িত্ব গ্রহণ করবে। সংশোধনী অনুসারে এনএসসি প্রধান কেবল সেনাবাহিনী থেকে সেনাপ্রধান বা চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেসের পরামর্শে নিযুক্ত করা হবে।
পাকিস্তানের বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী, ধারা–২৪৮ বলে ‘প্রেসিডেন্ট বা কোনো প্রদেশের গভর্নরের বিরুদ্ধে মেয়াদকাল চলাকালে কোনো ফৌজদারি মামলার বিচার শুরু বা চালিয়ে যাওয়া যাবে না।’ কিন্তু পদত্যাগের পর তাঁদের এমন সুবিধা নেই। বর্তমান জেনারেলদের কোনো আইনি সুরক্ষা নেই। ২৭ তম সংশোধনীর আগে ফিল্ড মার্শালের পদকে শুধু গৌরবসূচক ধরা হতো, কোনো অতিরিক্ত ক্ষমতা বা সুবিধা ছিল না। তবে প্রস্তাবিত পরিবর্তন মূলত এই পদটিকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেবে।
সংশোধনীটি আইনে পরিণত হওয়ার পর পাঁচ-তারকা কোনো কর্মকর্তাকে অপসারণ করতে পার্লামেন্টে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন হবে। অথচ, কোনো প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনতে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের ভোট পেলেই হয়। এ ছাড়া, পাঁচ তারকা কর্মকর্তা আজীবন যাবতীয় ফৌজদারি মামলা থেকে দায়মুক্তি পাবেন।
লাহোরভিত্তিক সংবিধানবিদ রিদা হোসাইন বলেন, ‘যেখানে অবাধ ক্ষমতা সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়, সেখানে গণতন্ত্র টিকে থাকে না। এই সংশোধনী অনির্বাচিত সেনা কর্মকর্তাকে এমন বিশেষাধিকার ও ক্ষমতা দেবে, যা কিনা দেশের কোনো নির্বাচিত নেতাও পান না।’
খসড়া সংশোধনীতে একটি স্থায়ী ফেডারেল সংবিধানিক আদালত (এফসিসি) গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই আদালতের নেতৃত্ব দেবেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রধান বিচারপতি এবং এতে চার প্রদেশ থেকে সমান সংখ্যক বিচারকসহ ইসলামাবাদ থেকেও বিচারক থাকবেন। এটি ফেডারেল ও প্রাদেশিক সরকারের বিভিন্ন বিরোধ নিষ্পত্তি করবে।
এফসিসি-এর বিচারকের বয়সসীমা ৬৮ বছর, যদিও সুপ্রিম কোর্টের বিচারকের বয়স হতে পারে সর্বোচ্চ ৬৫ বছর। এফসিসির প্রধান বিচারপতির মেয়াদ সর্বোচ্চ তিন বছর। এই সংশোধনী প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাও বাড়াচ্ছে। এর ফলে, তিনি পাকিস্তানের জুডিশিয়াল কমিশনের (জেসিপি) প্রস্তাবের ভিত্তিতে একজন বিচারককে এক হাইকোর্ট থেকে অন্য হাইকোর্টে স্থানান্তর করতে পারবেন।
গত বছর ২৬তম সংশোধনী পাস হওয়ার পর, হাইকোর্ট থেকে হাইকোর্টে বিচারক স্থানান্তর কেবল রাষ্ট্রপতির আদেশের মাধ্যমে হতে পারত। কিন্তু বিচারকের ব্যক্তিগত সম্মতি আবশ্যক ছিল, পাশাপাশি পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি এবং সংশ্লিষ্ট দুই হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শও জরুরি ছিল।
নতুন সংশোধনীর অধীনে এটি বদলে যাবে। প্রেসিডেন্ট সেজিপির প্রস্তাব অনুযায়ী বিচারককে স্থানান্তর করতে পারবেন, সংশ্লিষ্ট বিচারকের সম্মতি ছাড়াই। একই সঙ্গে, যদি কোনো বিচারক স্থানান্তর অস্বীকার করেন, তবে তিনি জেসিপির সামনে তার কারণ উপস্থাপন করার সুযোগ পাবেন এবং যদি জেসিপি কারণগুলো আইন বহির্ভূত মনে করে, তাহলে বিচারককে অবসর গ্রহণ করতে হবে।
রিদা হোসাইন বলেন, সংশোধনী অনুযায়ী বিচারকদের সম্মতি ছাড়াই অন্য অঞ্চলে স্থানান্তর করা যাবে এবং অস্বীকৃতি দিলে তাদের বিরুদ্ধে জেসিপি পদক্ষেপ নিতে পারবে। তিনি বলেন, ‘অস্বীকৃতির ফলে দায়বদ্ধতার প্রক্রিয়া শুরু হয়, এটি প্রশাসনিক ক্ষমতাকে ভীতি প্রদর্শনের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার সূক্ষ্ম হুমকি। এটি স্বাধীন বিচারিক পদকে এমন একটি অবস্থায় নিয়ে এল, যেখানে সর্বদা শাস্তিমূলক বা প্রতিশোধমূলক স্থানান্তরের ভয়ে কাজ করতে হবে।’
জেনেভাভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জাস্টিসের আইন উপদেষ্টা রীমা ওমর বলেন, নতুন সংশোধনীটি স্বল্প ও মধ্য মেয়াদে উদ্বেগজনক প্রভাব ফেলতে পারে। তিনি বলেন, এর ফলে ‘সরকারের নির্বাহী বিভাগই সেই বিচারকদের নিয়োগ করবে, যাদের একমাত্র এখতিয়ারই হলো নির্বাহী বিভাগকে দায়বদ্ধ করা।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটি স্পষ্টতই বিদ্যমান সেট-আপকে বিচারিক তদারকি ও দায়বদ্ধতা থেকে রক্ষা করার জন্য করা হচ্ছে। প্রয়োজনে এফসিসির মাধ্যমে এই সিদ্ধান্তগুলোকে সংবিধানিক বৈধতা দেওয়া সম্ভব হবে।’
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারকেরাও সংশোধনীর সমালোচনা করছেন। জ্যেষ্ঠ বিচারক মানসুর আলি শাহ সোমবার প্রধান বিচারপতি ইয়াহিয়া আফ্রিদিকে খোলা চিঠিতে লিখেছেন, এফসিসি কোনো ‘সত্যিকারের সংস্কার এজেন্ডা’ নয়, বরং এটি বিচার বিভাগকে দুর্বল ও নিয়ন্ত্রণ করার একটি ‘রাজনৈতিক কল’। তিনি বলেন, ‘বিচার প্রক্রিয়ায় এ ধরনের প্ররোচনা ইতিহাসে ক্ষমতার অপব্যবহার হিসেবে চিহ্নিত হয়; এটি সংবিধানিক অভিভাবকের ব্যর্থতা হিসেবে রেকর্ড হয় এবং যখন এমন মুহূর্তগুলোতে প্রতিষ্ঠানগুলো নীরব থাকে, তখন তারা নিজেদের রক্ষার চেষ্টা করা কাঠামোকেই দুর্বল করে।’
সরকারের যুক্তি—এই প্রস্তাব সুপ্রিম কোর্টে দায়ের হওয়া সংবিধানিক মামলার সংখ্যা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে নেওয়া হয়েছে। কারণ, এসব মামলার জট ‘নিয়মিত দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার সময়মতো নিষ্পত্তিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলছে।’ সরকার জানিয়েছে, ধারা–২৪৩-এ পরিবর্তন প্রস্তাব করা হয়েছে ‘সশস্ত্র বাহিনী সম্পর্কিত প্রক্রিয়াগত স্বচ্ছতা এবং প্রশাসনিক কাঠামো উন্নত করার’ জন্য।
কিছু বিশেষজ্ঞ এ বিষয়ে একমত হয়েছেন। ইসলামাবাদভিত্তিক সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হাফিজ আহসান আহমদ খোকার বলেছেন, একটি স্থায়ী কেন্দ্রীয় সাংবিধানিক আদালত বা এফসিসি ‘সমন্বিত দক্ষতা এবং সময়মতো বিচার’ নিশ্চিত করবে। তিনি বলেন, ‘এটি সংবিধান ব্যাখ্যা করার, কেন্দ্র-প্রদেশ সম্পর্কিত বিতর্ক সমাধান করার, আইনের বৈধতা নির্ধারণ করার এবং পরামর্শমূলক মতামত প্রদানের ক্ষমতা রাখে। এটি দক্ষতা এবং সময়মতো বিচার নিশ্চিত করে।’
খোকারের যুক্তি, এফসিসি গঠনের ফলে সংবিধানিক বিচার প্রক্রিয়ায় সামঞ্জস্য, দ্রুততা এবং শৃঙ্খলা আসবে। এ ছাড়া, কমান্ডার অব ডিফেন্স ফোর্সেস অফিসের সূচনা কৌশলগত কমান্ডকে একীভূত করবে এবং সমন্বয় বাড়াবে, কিন্তু বিদ্যমান বাহিনীর স্বায়ত্তশাসন ক্ষুণ্ন করবে না। তিনি বলেন, ‘উভয় সংস্কার পাকিস্তানের শাসন ব্যবস্থার বাস্তবতা এবং রাষ্ট্রের কার্যাবলির জটিলতা বৃদ্ধির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। এই পদক্ষেপগুলো পাকিস্তানকে একটি পরিপক্ব, নিয়মতান্ত্রিক গণতন্ত্রে রূপান্তরিত হতে সাহায্য করবে, যেখানে বিচারিক, নাগরিক ও প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বিশেষায়িত ভূমিকায় সামঞ্জস্যের সঙ্গে কাজ করবে।’
তবে এই ব্যাখ্যাগুলো অনেককে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। পাকিস্তান হিউম্যান রাইটস কমিশন সংশোধনী বিলের তাগিদ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তারা বলেছে, সরকারের তাড়াহুড়ো, রাজনৈতিক বিরোধী দলের সঙ্গে কোনো অর্থবহ শলা-পরামর্শের অভাব, আইনজীবী সমাজ এবং নাগরিক সমাজের সঙ্গে আলোচনা না করা—এসবই সংশোধনী বিল আনার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করেছে।
আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের (আইসিজে) রীমা ওমর সতর্ক করেছেন, এই সংশোধনী বিচারব্যবস্থার জন্য একটি ‘মূলগত পরিবর্তন’ চিহ্নিত করছে। তিনি বলেন, ‘২৭ তম সংশোধনী পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টকে শুধু আপিল আদালত হিসেবে সীমিত করে। এটি আর পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট নয়, নিছক সুপ্রিম কোর্ট এবং এর প্রধান বিচারপতি হবে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি, পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি নয়।’
ওমর আরও বলেন, অন্তত স্বল্প ও মধ্য মেয়াদে, বিচারব্যবস্থা প্রধানত নির্বাহী বিভাগের ওপর নির্ভরশীল থাকবে। তিনি বলেন, ‘নির্বাহী ও সংসদের বাস্তব কোনো জবাবদিহি বা পর্যালোচনার সুযোগ এখন সম্ভবত অল্প এবং পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) পক্ষে আর কোনো সহায়তা পাওয়া সম্ভব নয়।’
রিদা হোসাইন সতর্ক করেছেন, সংশোধনীর অধীনে প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক তদারকি এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ইচ্ছার মুখাপেক্ষী থাকলেও অনির্বাচিত কর্মকর্তাদের জন্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এটি ব্যালটের পরিবর্তে উর্দির প্রাধান্যকে প্রতিস্থাপন করেছে।’
ওমের বলেন, পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলো—যার মধ্যে বর্তমান শাসক পাকিস্তান মুসলিম লীগ–নওয়াজ ও জোটসঙ্গী পাকিস্তান পিপলস পার্টি রয়েছে—অতীতে সামরিক বাহিনীর জন্য সংবিধানিক সুরক্ষার বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু এখন তা পরিবর্তিত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘২৭ তম সংশোধনী হলো সাংবিধানিক আত্মসমর্পণ।’
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

পশ্চিমা বিশ্বের ৯টি দেশে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, এসব দেশের মানুষের মধ্যে গণতন্ত্র নিয়ে গভীর অসন্তোষ বিরাজ করছে। জরিপে অংশ নেওয়া দেশগুলোর মধ্যে আটটিতে গণতন্ত্র নিয়ে সন্তুষ্টি ৫০ শতাংশের নিচে। মাত্র একটি দেশ ছাড়া সবটিতেই ভবিষ্যতে গণতন্ত্রের অবস্থা নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
১২ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলায় রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরাসরি নির্দেশে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ড-এর নেতৃত্বে একটি বিশাল সামরিক বহর ক্যারিবীয় সাগরে মোতায়েন করা হয়েছে। এই রণতরী বহর যে কোনো মুহূর্তে ভেনেজুয়েলায় সামরিক পদক্ষেপ নিতে
১৯ ঘণ্টা আগে
মোদি ভুটানে এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘এই হামলায় জড়িতরা কেউই রেহাই পাবে না। সব অপরাধীকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।’ তবে বিস্ফোরণের দুই দিন পরও ভারতের রাজনৈতিক নেতা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিকভাবে এটিকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে ঘোষণা করেননি। এর মধ্যেই আবার গত মঙ্গলবার ইসলামাবাদে এক প্রাণঘাতী বিস্ফোরণ
৩ দিন আগে
ভেনেজুয়েলায় মার্কিন আক্রমণ আসন্ন বলেই মনে হচ্ছে। ১৯৯৪ সালের পর দেশটির উপকূলে যুক্তরাষ্ট্র এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়েছে। ভেনেজুয়েলার সঙ্গে মার্কিন শত্রুতার শুরু ২০০২ সালে, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজ দায়িত্ব গ্রহণের পর। এখন প্রশ্ন হলো—ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এই শত্রুতা ‘কী
৪ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চলতি বছরের মে মাসে পাকিস্তানের সঙ্গে চার দিনের যুদ্ধ শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা দেন, ভবিষ্যতে যেকোনো সন্ত্রাসী কার্যক্রমকে ‘যুদ্ধ ঘোষণার শামিল’ বলে গণ্য করবে তাঁর সরকার। তার আগে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে এপ্রিলে পর্যটকদের ওপর হামলায় ২৫ জন নিহত হওয়ার পর ভারত দোষ চাপিয়েছিল পাকিস্তানের ওপর। ইসলামাবাদ সেই অভিযোগ অস্বীকার করলেও মে মাসের গোড়ার দিকে ভারত পাকিস্তানে বিমান হামলা চালায়। এতে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে এক সংক্ষিপ্ত কিন্তু তীব্র আকাশযুদ্ধ শুরু হয়। সে সময় দুই দেশই একে অপরের সামরিক ঘাঁটিতে বোমাবর্ষণ করে।
চার দিন পর দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। তবে নরেন্দ্র মোদির মন্তব্য তখন নয়া এক ‘রেড লাইন বা চূড়ান্ত সীমারেখা’ টেনে দেয়। তাঁর বক্তব্য ভবিষ্যতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের ক্ষেত্রে একেবারে ন্যূনতম সীমা নির্ধারণ করে দেয়।
এরপর গত সোমবার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি কেঁপে ওঠে এক বড় বিস্ফোরণে। ঐতিহাসিক লালকেল্লার কাছেই ওই বিস্ফোরণে অন্তত ১৩ জন নিহত ও দুই ডজনের মতো আহত হয়। ভারত সরকার এই ‘সন্ত্রাসী হামলার’ তদন্ত করছে। এর নেতৃত্ব দিচ্ছে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ)। যাদের দায়িত্বই হলো সন্ত্রাসবিরোধী মামলার অনুসন্ধান করা। হামলার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করতে কঠোর সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হয়েছে।
হামলার পরদিন মঙ্গলবার মোদি ভুটানে এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘এই হামলায় জড়িতরা কেউই রেহাই পাবে না। সব অপরাধীকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।’ তবে বিস্ফোরণের দুই দিন পরও ভারতের রাজনৈতিক নেতা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিকভাবে এটিকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে ঘোষণা করেননি। এর মধ্যেই আবার গত মঙ্গলবার ইসলামাবাদে এক প্রাণঘাতী বিস্ফোরণের জন্য পাকিস্তান ভারতকে দায়ী করেছে। কিন্তু ভারত এখন পর্যন্ত নিজেদের রাজধানীতে আগের দিন ঘটে যাওয়া বিস্ফোরণের জন্য পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করা থেকে বিরত রয়েছে।
এমন প্রতিক্রিয়া অস্বাভাবিক। কারণ, অতীতে ভারতের তদন্ত সংস্থাগুলো হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাকিস্তানের দিকে আঙুল তুলেছে। কিন্তু এবার বিস্ফোরণের ক্ষেত্রে নয়াদিল্লির সাবধানী নীরবতা অনেকের নজর কেড়েছে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তদন্তকারীরা হামলাকারীদের সূত্র খুঁজে পেয়েছেন কাশ্মীরের দিক থেকে, আর সেখানে পাকিস্তানভিত্তিক জইশ-ই-মোহাম্মদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণও মিলেছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, মে মাসের বিমানযুদ্ধের পর ভারত যেভাবে উচ্চকণ্ঠে যুদ্ধংদেহী অবস্থান নিয়েছিল, এখন সেই অবস্থানই ভারতের নিজস্ব কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক জটিলতা তৈরি করেছে। মোদি যেভাবে ঘোষণা করেছিলেন যে ভবিষ্যতে যেকোনো ‘সন্ত্রাসী হামলাকে’ সরাসরি যুদ্ধ হিসেবে দেখা হবে—সেই ‘চূড়ান্ত সীমা’ এখন সরকারের হাত-পা বেঁধে দিয়েছে। কারণ, যদি তারা প্রকাশ্যে পাকিস্তানকে নয়াদিল্লির বিস্ফোরণের জন্য দায়ী করে, তাহলে জনগণের মধ্যে সঙ্গে সঙ্গেই পাকিস্তানে সামরিক পাল্টা আঘাতের দাবি উঠবে।
সাউথ এশিয়া টেররিজম পোর্টালের নির্বাহী পরিচালক অজয় সাহনি বলেন, ‘ভারত সরকার নিজেই নিজের জন্য ফাঁদ তৈরি করেছে—নিজের বানানো ফাঁদে নিজেই আটকা পড়েছে। তারা বলেছে, সন্ত্রাস মানেই যুদ্ধ, কিন্তু এর কোনো স্পষ্ট নীতি তৈরি করেনি। এখন সেই কথারই ফল ভুগছে তারা। এটা কোনো নীতি নয়, বরং স্বল্পমেয়াদি রাজনৈতিক লাভের জন্য নেওয়া একেবারে বোকামিতে পূর্ণ অবস্থান।’
লালকেল্লার জনাকীর্ণ বাজারে বিস্ফোরণ ঘটার কয়েক ঘণ্টা আগে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলিশ নয়াদিল্লি ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় অভিযান চালায়। তাদের দাবি, একটি ‘আন্তরাজ্য ও আন্তসীমান্ত সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক’ ধ্বংস করেছে। পুলিশের ভাষ্য, ওই নেটওয়ার্ক নিষিদ্ধ সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ (জেইএম) ও আনসার গাজওয়াতুল-হিন্দের (এজিইউএইচ) সঙ্গে যুক্ত। জেইএম পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী। মে মাসে পাকিস্তানে ভারতীয় বাহিনীর বিমান হামলায় এই গোষ্ঠীর কয়েকটি ঘাঁটিও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল।
অন্যদিকে এজিইউএইচ হলো আল-কায়েদা ঘনিষ্ঠ কাশ্মীরি সংগঠন, যা হিজবুল মুজাহিদীন থেকে আলাদা হয়ে গঠিত হয়েছে। একসময় কাশ্মীরি বিদ্রোহী নেতা জাকির মুসার নেতৃত্বে সংগঠনটি সক্রিয় ছিল। কিন্তু ২০১৯ সালের মে মাসে মুসা নিহত হওয়ার পর থেকে গোষ্ঠীটি তুলনামূলকভাবে নিস্তেজ হয়ে গেছে।
উত্তর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে অভিযানের পর কাশ্মীর পুলিশ জানায়, তারা বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক সামগ্রী উদ্ধার করেছে। উদ্ধারকৃত সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে প্রায় ২ হাজার ৯০০ কেজি আইইডি বা তাৎক্ষণিকভাবে তৈরি বিস্ফোরক যন্ত্র তৈরির উপকরণ যেমন, রাসায়নিক পদার্থ, ইলেকট্রনিক সার্কিট এবং রিমোট কন্ট্রোল ইত্যাদি।
পুলিশ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করেছে, যার মধ্যে দুই কাশ্মীরি চিকিৎসক রয়েছেন। অপর চিকিৎসক দক্ষিণ কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলার উমর নবী—প্রথম দফায় গ্রেপ্তারের পর পালিয়ে গেছেন বলে জানা গেছে। নয়াদিল্লির কর্মকর্তারা এখন ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফলের অপেক্ষায় আছেন, যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে লালকেল্লার বাইরে বিস্ফোরিত গাড়িটি উমর নবী চালাচ্ছিলেন কি না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ধারণা পাওয়া গেছে যে দিল্লি বিস্ফোরণের পেছনে পাকিস্তানভিত্তিক কিছু গোষ্ঠীর লজিস্টিক সহায়তা ছিল। তবে যাঁরা বাস্তবে হামলার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করেছেন তাঁরা স্থানীয় এবং নিজেরাই চরমপন্থায় জড়িয়েছিলেন। ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা এখনো খতিয়ে দেখছি তারা কীভাবে এর জন্য অর্থ জোগাড় করেছিল।’
বিশ্লেষকদের মতে, তদন্তে যা-ই বেরিয়ে আসুক না কেন, এপ্রিলের হামলার পর ভারত যে ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলে সেটাই এবার কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা নীতিতে নয়াদিল্লিকে জটিল অবস্থায় ফেলবে। ওয়াশিংটনভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, নয়াদিল্লি এখন নিজস্ব নতুন নীতিগত মতাদর্শের ফাঁদে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘যদি সরকার প্রকাশ্যে এটিকে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে ঘোষণা করে, তাহলে কৌশলগত ও রাজনৈতিকভাবে সামরিক প্রতিক্রিয়া দেখানোর মতো বড় কিছু করে দেখানোর চাপ পড়বে।’
বিশ্লেষক অজয় সাহনি বলেন, মোদির সরকার এখনো স্পষ্টভাবে বলেনি তাদের ধারণায় কোন ধরনের হামলাকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে ধরা হবে, বিশেষ করে পেহেলগাম-পরবর্তী নীতির প্রেক্ষাপটে। সাহনির প্রশ্ন, ‘যদি কোনো সন্ত্রাসী মাত্র একজন সাধারণ মানুষকেও গুলি করে হত্যা করে, সেটিও কি সন্ত্রাস নয়?’ তিনি আরও বলেন, ‘এসব কেবল রাজনৈতিক বক্তব্য, দেশের ভেতরের নির্দিষ্ট শ্রোতাদের সন্তুষ্ট করার জন্য।’ সাহনি বলেন, এখন দিল্লির বিস্ফোরণের পর সরকারকে এই বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
কুগেলম্যান জানান, পেহেলগাম হামলার পর মে মাসে পাকিস্তানে বিমান হামলা করায় ভারতকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ‘ব্যাপক সমালোচনার মুখে’ পড়তে হয়। কারণ, ভারত ইসলামাবাদের জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি। তিনি বলেন, ‘এর ফলে সংঘাত চালকালীন পুরো সময়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন ধরে রাখা ভারতের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।’
তিনি বলেন, পেহেলগামের ঘটনায় পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ উপস্থাপন করতে ভারতের অস্বীকৃতি বা ব্যর্থতা ইসলামাবাদের অবস্থানকেই শক্তিশালী করেছে। কারণ, পাকিস্তান নিজেকে আক্রমণের শিকার হিসেবে উপস্থাপন করেছে।
যা হোক, লালকেল্লা বিস্ফোরণের পর এখন পর্যন্ত তদন্ত ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ঘিরেই চলছে। সোমবারের বিস্ফোরণের পর থেকে কাশ্মীরে আরও কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যার মধ্যে সন্দেহভাজনদের পরিবারের সদস্যরাও রয়েছেন।
কাশ্মীরভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক শেখ শওকত বলেন, অঞ্চলটিতে কঠোর অভিযান চললেও ভারত পেহেলগাম হামলার পর নিজেদের প্রতিক্রিয়া থেকে কিছুটা শিক্ষা নিয়েছে বলেই মনে হয়। তিনি বলেন, ‘ভারতের প্রশাসনিক কাঠামোতে এখন এক ধরনের পরিণত উপলব্ধি তৈরি হয়েছে যে, যুদ্ধ শেষ পর্যন্ত সবার জন্য ক্ষতির কারণ হয়।’
গত মে মাসের যুদ্ধ ভারতের ও পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণ রেখা সংলগ্ন এলাকায় বসবাসকারী লাখ লাখ কাশ্মীরির জীবন ধ্বংস করে দেয়। সীমান্তবর্তী বহু গ্রাম খালি করতে হয়, দুই পক্ষেই সাধারণ নাগরিক নিহত হয়। শওকত বলেন, পাকিস্তানকে তাৎক্ষণিকভাবে দোষারোপ না করে অপেক্ষা করা ভারতীয় সংস্থাগুলোকে নিজেদের পরিস্থিতি ও প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ করার সুযোগ দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘অন্যথায়, পাকিস্তানকে দোষারোপ করা মানে নিজের দায় এড়ানোর একটা পুরোনো কৌশল।’
ভারতের এই দায় না চাপানোর বিষয়টির সঙ্গে জড়িয়ে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও। তিনি বারবার দাবি করেছেন যে তিনিই মে মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি করিয়ে দিয়েছেন। আর ভারত বারবার এটি অস্বীকার করেছে। ট্রাম্প বলেছেন, তিনি দুই দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্ক ভেঙে দেওয়ার হুমকি ব্যবহার করেছিলেন। আর তাতেই ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধ থামাতে বাধ্য হয়।
বর্তমানে ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। দীর্ঘ আলোচনার পর দুই দেশ এখন একটি বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের কাছাকাছি বলে জানা গেছে। অন্যদিকে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন দেশটির সামরিক ও রাজনৈতিক নেতাদের একাধিক পর্যায়ে একাধিকবার হোয়াইট হাউসে আতিথেয়তা দিয়েছে।
কুগেলম্যান বলেন, ট্রাম্প এই সমীকরণে উভয় দেশের জন্যই একটি জটিল উপাদান হয়ে দাঁড়িয়েছেন। বিশ্লেষকদের মতে, কোনো দেশই তাঁকে বিরক্ত করতে চায় না। কারণ, এতে তিনি যে যুদ্ধবিরতিকে নিজের বড় কূটনৈতিক সাফল্য বলে দাবি করেছেন, তা ভঙ্গ হয়েছে বলে মনে হতে পারে।
তবে বিষয়টা শুধু ট্রাম্পকে ঘিরে নয়। নয়াদিল্লিভিত্তিক থিংকট্যাংক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (ওআরএফ) ভূরাজনীতি বিশ্লেষক হর্ষ পন্ত বলেছেন, ভারতের কৌশল সব সময় ‘সংঘাত এড়িয়ে চলা।’ তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় অর্থনীতি হিসেবে ভারত এখন নিজের উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দিতে চায়।’
হর্ষ পন্তর ভাষায়, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে লাগাতার সংঘাতে জড়িয়ে থাকা ভারতের পক্ষে কোনোভাবেই সুবিধাজনক নয়। যুদ্ধাবস্থার মতো অবস্থানে থাকতে হলে অর্থনৈতিকভাবে এবং কৌশলগতভাবেও ভারত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ, যেসব সম্পদ উন্নয়নে ব্যবহার করা যেত, সেগুলো তখন পাকিস্তানকে কেন্দ্র করেই ব্যয় করতে হয়।’
তবে মে মাসের সংঘাতের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘোষিত নতুন সীমারেখাগুলো দিল্লি বিস্ফোরণের পেছনে দায়ীদের নাম প্রকাশে ভারতের সতর্কতার মূল কারণ—এই মতের সঙ্গে একমত নন পন্ত। তিনি বলেন, ‘বিস্ফোরণের আগেই গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বেশ কিছু মানুষকে আটক করেছিল, যাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছিল। ফলে তারা বলতে পারে যে একটি বড় ষড়যন্ত্র উন্মোচন এবং ব্যর্থ করে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনা পেহেলগামের ঘটনার মতো ছিল না।’
পন্ত আরও বলেন, ‘এই বিস্ফোরণ সম্ভবত পরিকল্পিত ছিল না। এটি একধরনের দুর্ঘটনা বলেই মনে হচ্ছে।’ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের প্রাথমিক তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি ইঙ্গিত করেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের একজন পালানোর চেষ্টা করার সময় গাড়িটি বিস্ফোরিত হতে পারে। তিনি বলেন, ‘তাই আমি মনে করি, দিল্লি সরকার এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাতে চাইবে না।’
এই মনোভাব ভারতের অতীতের বিভিন্ন প্রাণঘাতী শহুরে হামলার প্রতিক্রিয়ার তুলনায় অনেকটা ভিন্ন এবং একই ধরনের ঘটনার পর পাকিস্তানের আচরণের সঙ্গেও এর তীব্র পার্থক্য রয়েছে। ভারত সরকার যখন জানায় যে, দিল্লি বিস্ফোরণের ষড়যন্ত্রকারীদের বিচারের আওতায় আনা হবে, তার কয়েক ঘণ্টা পরই পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে আত্মঘাতী বোমা হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত এবং ৩০ জন আহত হয়।
ইসলামাবাদের আদালত কমপ্লেক্সের বাইরে এই বিস্ফোরণটি ঘটে এমন সময়ে, যখন পাকিস্তান সেনাবাহিনী ওয়ানায় একটি ক্যাডেট কলেজে জঙ্গিদের হাতে আটক শতাধিক শিক্ষার্থীকে উদ্ধারে ব্যস্ত। ওয়ানা শহরটি আফগান সীমান্তবর্তী খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে অবস্থিত।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ কোনো প্রমাণ না দিয়েই ইসলামাবাদ ও ওয়ানার উভয় ঘটনার জন্য ভারতকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘উভয় হামলাই অঞ্চলে ভারতীয় রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদের সবচেয়ে নিকৃষ্ট উদাহরণ। এখনই বিশ্বের উচিত ভারতের এমন নোংরা ষড়যন্ত্রের নিন্দা জানানো।’ ভারত এসব অভিযোগ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে।
এই হামলাগুলো এমন সময় ঘটছে, যখন পাকিস্তান ও তালেবানশাসিত আফগানিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। গত মাসে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সীমান্তে একাধিক সংঘর্ষ হয়েছে। সেই সংঘর্ষের সময়ই আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রথমবারের মতো ভারত সফরে ছিলেন, যা নয়াদিল্লি ও কাবুলের মধ্যে এক নতুন জোট গঠনের ইঙ্গিত দেয়।
দশকের পর দশক ধরে পাকিস্তান ছিল তালেবানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক, আর ভারত সেই গোষ্ঠীকে ইসলামাবাদের প্রভাবাধীন একটি প্রক্সি হিসেবে দেখত। কিন্তু এখন পরিস্থিতি উল্টে গেছে। পাকিস্তান এখন অভিযোগ করছে, তালেবান ভারতের স্বার্থে ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে কাজ করছে। পাকিস্তানের অভিযোগ, তালেবান পাকিস্তানবিরোধী জঙ্গি গোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানকে (টিটিপি) আশ্রয় দিচ্ছে। যারা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানের ভেতরে ঘটে যাওয়া বেশির ভাগ বড় হামলার দায় স্বীকার করেছে, যদিও মঙ্গলবারের আত্মঘাতী হামলার দায় এখনো তারা নেয়নি।
ভারতের বিরুদ্ধে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থনের অভিযোগ তুললেও, ইসলামাবাদ এখনো স্পষ্ট করে জানায়নি, তারা কীভাবে নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেবে। বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘আমার মনে হয়, এই অনিশ্চয়তাই পাকিস্তানকে তার কাঙ্ক্ষিত কৌশলগত নমনীয়তা দিয়েছে।’
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

চলতি বছরের মে মাসে পাকিস্তানের সঙ্গে চার দিনের যুদ্ধ শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা দেন, ভবিষ্যতে যেকোনো সন্ত্রাসী কার্যক্রমকে ‘যুদ্ধ ঘোষণার শামিল’ বলে গণ্য করবে তাঁর সরকার। তার আগে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে এপ্রিলে পর্যটকদের ওপর হামলায় ২৫ জন নিহত হওয়ার পর ভারত দোষ চাপিয়েছিল পাকিস্তানের ওপর। ইসলামাবাদ সেই অভিযোগ অস্বীকার করলেও মে মাসের গোড়ার দিকে ভারত পাকিস্তানে বিমান হামলা চালায়। এতে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে এক সংক্ষিপ্ত কিন্তু তীব্র আকাশযুদ্ধ শুরু হয়। সে সময় দুই দেশই একে অপরের সামরিক ঘাঁটিতে বোমাবর্ষণ করে।
চার দিন পর দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। তবে নরেন্দ্র মোদির মন্তব্য তখন নয়া এক ‘রেড লাইন বা চূড়ান্ত সীমারেখা’ টেনে দেয়। তাঁর বক্তব্য ভবিষ্যতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের ক্ষেত্রে একেবারে ন্যূনতম সীমা নির্ধারণ করে দেয়।
এরপর গত সোমবার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি কেঁপে ওঠে এক বড় বিস্ফোরণে। ঐতিহাসিক লালকেল্লার কাছেই ওই বিস্ফোরণে অন্তত ১৩ জন নিহত ও দুই ডজনের মতো আহত হয়। ভারত সরকার এই ‘সন্ত্রাসী হামলার’ তদন্ত করছে। এর নেতৃত্ব দিচ্ছে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ)। যাদের দায়িত্বই হলো সন্ত্রাসবিরোধী মামলার অনুসন্ধান করা। হামলার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করতে কঠোর সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হয়েছে।
হামলার পরদিন মঙ্গলবার মোদি ভুটানে এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘এই হামলায় জড়িতরা কেউই রেহাই পাবে না। সব অপরাধীকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।’ তবে বিস্ফোরণের দুই দিন পরও ভারতের রাজনৈতিক নেতা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিকভাবে এটিকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে ঘোষণা করেননি। এর মধ্যেই আবার গত মঙ্গলবার ইসলামাবাদে এক প্রাণঘাতী বিস্ফোরণের জন্য পাকিস্তান ভারতকে দায়ী করেছে। কিন্তু ভারত এখন পর্যন্ত নিজেদের রাজধানীতে আগের দিন ঘটে যাওয়া বিস্ফোরণের জন্য পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করা থেকে বিরত রয়েছে।
এমন প্রতিক্রিয়া অস্বাভাবিক। কারণ, অতীতে ভারতের তদন্ত সংস্থাগুলো হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাকিস্তানের দিকে আঙুল তুলেছে। কিন্তু এবার বিস্ফোরণের ক্ষেত্রে নয়াদিল্লির সাবধানী নীরবতা অনেকের নজর কেড়েছে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তদন্তকারীরা হামলাকারীদের সূত্র খুঁজে পেয়েছেন কাশ্মীরের দিক থেকে, আর সেখানে পাকিস্তানভিত্তিক জইশ-ই-মোহাম্মদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণও মিলেছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, মে মাসের বিমানযুদ্ধের পর ভারত যেভাবে উচ্চকণ্ঠে যুদ্ধংদেহী অবস্থান নিয়েছিল, এখন সেই অবস্থানই ভারতের নিজস্ব কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক জটিলতা তৈরি করেছে। মোদি যেভাবে ঘোষণা করেছিলেন যে ভবিষ্যতে যেকোনো ‘সন্ত্রাসী হামলাকে’ সরাসরি যুদ্ধ হিসেবে দেখা হবে—সেই ‘চূড়ান্ত সীমা’ এখন সরকারের হাত-পা বেঁধে দিয়েছে। কারণ, যদি তারা প্রকাশ্যে পাকিস্তানকে নয়াদিল্লির বিস্ফোরণের জন্য দায়ী করে, তাহলে জনগণের মধ্যে সঙ্গে সঙ্গেই পাকিস্তানে সামরিক পাল্টা আঘাতের দাবি উঠবে।
সাউথ এশিয়া টেররিজম পোর্টালের নির্বাহী পরিচালক অজয় সাহনি বলেন, ‘ভারত সরকার নিজেই নিজের জন্য ফাঁদ তৈরি করেছে—নিজের বানানো ফাঁদে নিজেই আটকা পড়েছে। তারা বলেছে, সন্ত্রাস মানেই যুদ্ধ, কিন্তু এর কোনো স্পষ্ট নীতি তৈরি করেনি। এখন সেই কথারই ফল ভুগছে তারা। এটা কোনো নীতি নয়, বরং স্বল্পমেয়াদি রাজনৈতিক লাভের জন্য নেওয়া একেবারে বোকামিতে পূর্ণ অবস্থান।’
লালকেল্লার জনাকীর্ণ বাজারে বিস্ফোরণ ঘটার কয়েক ঘণ্টা আগে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলিশ নয়াদিল্লি ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় অভিযান চালায়। তাদের দাবি, একটি ‘আন্তরাজ্য ও আন্তসীমান্ত সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক’ ধ্বংস করেছে। পুলিশের ভাষ্য, ওই নেটওয়ার্ক নিষিদ্ধ সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ (জেইএম) ও আনসার গাজওয়াতুল-হিন্দের (এজিইউএইচ) সঙ্গে যুক্ত। জেইএম পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী। মে মাসে পাকিস্তানে ভারতীয় বাহিনীর বিমান হামলায় এই গোষ্ঠীর কয়েকটি ঘাঁটিও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল।
অন্যদিকে এজিইউএইচ হলো আল-কায়েদা ঘনিষ্ঠ কাশ্মীরি সংগঠন, যা হিজবুল মুজাহিদীন থেকে আলাদা হয়ে গঠিত হয়েছে। একসময় কাশ্মীরি বিদ্রোহী নেতা জাকির মুসার নেতৃত্বে সংগঠনটি সক্রিয় ছিল। কিন্তু ২০১৯ সালের মে মাসে মুসা নিহত হওয়ার পর থেকে গোষ্ঠীটি তুলনামূলকভাবে নিস্তেজ হয়ে গেছে।
উত্তর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে অভিযানের পর কাশ্মীর পুলিশ জানায়, তারা বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক সামগ্রী উদ্ধার করেছে। উদ্ধারকৃত সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে প্রায় ২ হাজার ৯০০ কেজি আইইডি বা তাৎক্ষণিকভাবে তৈরি বিস্ফোরক যন্ত্র তৈরির উপকরণ যেমন, রাসায়নিক পদার্থ, ইলেকট্রনিক সার্কিট এবং রিমোট কন্ট্রোল ইত্যাদি।
পুলিশ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করেছে, যার মধ্যে দুই কাশ্মীরি চিকিৎসক রয়েছেন। অপর চিকিৎসক দক্ষিণ কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলার উমর নবী—প্রথম দফায় গ্রেপ্তারের পর পালিয়ে গেছেন বলে জানা গেছে। নয়াদিল্লির কর্মকর্তারা এখন ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফলের অপেক্ষায় আছেন, যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে লালকেল্লার বাইরে বিস্ফোরিত গাড়িটি উমর নবী চালাচ্ছিলেন কি না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ধারণা পাওয়া গেছে যে দিল্লি বিস্ফোরণের পেছনে পাকিস্তানভিত্তিক কিছু গোষ্ঠীর লজিস্টিক সহায়তা ছিল। তবে যাঁরা বাস্তবে হামলার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করেছেন তাঁরা স্থানীয় এবং নিজেরাই চরমপন্থায় জড়িয়েছিলেন। ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা এখনো খতিয়ে দেখছি তারা কীভাবে এর জন্য অর্থ জোগাড় করেছিল।’
বিশ্লেষকদের মতে, তদন্তে যা-ই বেরিয়ে আসুক না কেন, এপ্রিলের হামলার পর ভারত যে ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলে সেটাই এবার কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা নীতিতে নয়াদিল্লিকে জটিল অবস্থায় ফেলবে। ওয়াশিংটনভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, নয়াদিল্লি এখন নিজস্ব নতুন নীতিগত মতাদর্শের ফাঁদে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘যদি সরকার প্রকাশ্যে এটিকে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে ঘোষণা করে, তাহলে কৌশলগত ও রাজনৈতিকভাবে সামরিক প্রতিক্রিয়া দেখানোর মতো বড় কিছু করে দেখানোর চাপ পড়বে।’
বিশ্লেষক অজয় সাহনি বলেন, মোদির সরকার এখনো স্পষ্টভাবে বলেনি তাদের ধারণায় কোন ধরনের হামলাকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে ধরা হবে, বিশেষ করে পেহেলগাম-পরবর্তী নীতির প্রেক্ষাপটে। সাহনির প্রশ্ন, ‘যদি কোনো সন্ত্রাসী মাত্র একজন সাধারণ মানুষকেও গুলি করে হত্যা করে, সেটিও কি সন্ত্রাস নয়?’ তিনি আরও বলেন, ‘এসব কেবল রাজনৈতিক বক্তব্য, দেশের ভেতরের নির্দিষ্ট শ্রোতাদের সন্তুষ্ট করার জন্য।’ সাহনি বলেন, এখন দিল্লির বিস্ফোরণের পর সরকারকে এই বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
কুগেলম্যান জানান, পেহেলগাম হামলার পর মে মাসে পাকিস্তানে বিমান হামলা করায় ভারতকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ‘ব্যাপক সমালোচনার মুখে’ পড়তে হয়। কারণ, ভারত ইসলামাবাদের জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি। তিনি বলেন, ‘এর ফলে সংঘাত চালকালীন পুরো সময়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন ধরে রাখা ভারতের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।’
তিনি বলেন, পেহেলগামের ঘটনায় পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ উপস্থাপন করতে ভারতের অস্বীকৃতি বা ব্যর্থতা ইসলামাবাদের অবস্থানকেই শক্তিশালী করেছে। কারণ, পাকিস্তান নিজেকে আক্রমণের শিকার হিসেবে উপস্থাপন করেছে।
যা হোক, লালকেল্লা বিস্ফোরণের পর এখন পর্যন্ত তদন্ত ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ঘিরেই চলছে। সোমবারের বিস্ফোরণের পর থেকে কাশ্মীরে আরও কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যার মধ্যে সন্দেহভাজনদের পরিবারের সদস্যরাও রয়েছেন।
কাশ্মীরভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক শেখ শওকত বলেন, অঞ্চলটিতে কঠোর অভিযান চললেও ভারত পেহেলগাম হামলার পর নিজেদের প্রতিক্রিয়া থেকে কিছুটা শিক্ষা নিয়েছে বলেই মনে হয়। তিনি বলেন, ‘ভারতের প্রশাসনিক কাঠামোতে এখন এক ধরনের পরিণত উপলব্ধি তৈরি হয়েছে যে, যুদ্ধ শেষ পর্যন্ত সবার জন্য ক্ষতির কারণ হয়।’
গত মে মাসের যুদ্ধ ভারতের ও পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণ রেখা সংলগ্ন এলাকায় বসবাসকারী লাখ লাখ কাশ্মীরির জীবন ধ্বংস করে দেয়। সীমান্তবর্তী বহু গ্রাম খালি করতে হয়, দুই পক্ষেই সাধারণ নাগরিক নিহত হয়। শওকত বলেন, পাকিস্তানকে তাৎক্ষণিকভাবে দোষারোপ না করে অপেক্ষা করা ভারতীয় সংস্থাগুলোকে নিজেদের পরিস্থিতি ও প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ করার সুযোগ দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘অন্যথায়, পাকিস্তানকে দোষারোপ করা মানে নিজের দায় এড়ানোর একটা পুরোনো কৌশল।’
ভারতের এই দায় না চাপানোর বিষয়টির সঙ্গে জড়িয়ে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও। তিনি বারবার দাবি করেছেন যে তিনিই মে মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি করিয়ে দিয়েছেন। আর ভারত বারবার এটি অস্বীকার করেছে। ট্রাম্প বলেছেন, তিনি দুই দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্ক ভেঙে দেওয়ার হুমকি ব্যবহার করেছিলেন। আর তাতেই ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধ থামাতে বাধ্য হয়।
বর্তমানে ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। দীর্ঘ আলোচনার পর দুই দেশ এখন একটি বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের কাছাকাছি বলে জানা গেছে। অন্যদিকে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন দেশটির সামরিক ও রাজনৈতিক নেতাদের একাধিক পর্যায়ে একাধিকবার হোয়াইট হাউসে আতিথেয়তা দিয়েছে।
কুগেলম্যান বলেন, ট্রাম্প এই সমীকরণে উভয় দেশের জন্যই একটি জটিল উপাদান হয়ে দাঁড়িয়েছেন। বিশ্লেষকদের মতে, কোনো দেশই তাঁকে বিরক্ত করতে চায় না। কারণ, এতে তিনি যে যুদ্ধবিরতিকে নিজের বড় কূটনৈতিক সাফল্য বলে দাবি করেছেন, তা ভঙ্গ হয়েছে বলে মনে হতে পারে।
তবে বিষয়টা শুধু ট্রাম্পকে ঘিরে নয়। নয়াদিল্লিভিত্তিক থিংকট্যাংক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (ওআরএফ) ভূরাজনীতি বিশ্লেষক হর্ষ পন্ত বলেছেন, ভারতের কৌশল সব সময় ‘সংঘাত এড়িয়ে চলা।’ তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় অর্থনীতি হিসেবে ভারত এখন নিজের উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দিতে চায়।’
হর্ষ পন্তর ভাষায়, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে লাগাতার সংঘাতে জড়িয়ে থাকা ভারতের পক্ষে কোনোভাবেই সুবিধাজনক নয়। যুদ্ধাবস্থার মতো অবস্থানে থাকতে হলে অর্থনৈতিকভাবে এবং কৌশলগতভাবেও ভারত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ, যেসব সম্পদ উন্নয়নে ব্যবহার করা যেত, সেগুলো তখন পাকিস্তানকে কেন্দ্র করেই ব্যয় করতে হয়।’
তবে মে মাসের সংঘাতের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘোষিত নতুন সীমারেখাগুলো দিল্লি বিস্ফোরণের পেছনে দায়ীদের নাম প্রকাশে ভারতের সতর্কতার মূল কারণ—এই মতের সঙ্গে একমত নন পন্ত। তিনি বলেন, ‘বিস্ফোরণের আগেই গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বেশ কিছু মানুষকে আটক করেছিল, যাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছিল। ফলে তারা বলতে পারে যে একটি বড় ষড়যন্ত্র উন্মোচন এবং ব্যর্থ করে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনা পেহেলগামের ঘটনার মতো ছিল না।’
পন্ত আরও বলেন, ‘এই বিস্ফোরণ সম্ভবত পরিকল্পিত ছিল না। এটি একধরনের দুর্ঘটনা বলেই মনে হচ্ছে।’ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের প্রাথমিক তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি ইঙ্গিত করেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের একজন পালানোর চেষ্টা করার সময় গাড়িটি বিস্ফোরিত হতে পারে। তিনি বলেন, ‘তাই আমি মনে করি, দিল্লি সরকার এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাতে চাইবে না।’
এই মনোভাব ভারতের অতীতের বিভিন্ন প্রাণঘাতী শহুরে হামলার প্রতিক্রিয়ার তুলনায় অনেকটা ভিন্ন এবং একই ধরনের ঘটনার পর পাকিস্তানের আচরণের সঙ্গেও এর তীব্র পার্থক্য রয়েছে। ভারত সরকার যখন জানায় যে, দিল্লি বিস্ফোরণের ষড়যন্ত্রকারীদের বিচারের আওতায় আনা হবে, তার কয়েক ঘণ্টা পরই পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে আত্মঘাতী বোমা হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত এবং ৩০ জন আহত হয়।
ইসলামাবাদের আদালত কমপ্লেক্সের বাইরে এই বিস্ফোরণটি ঘটে এমন সময়ে, যখন পাকিস্তান সেনাবাহিনী ওয়ানায় একটি ক্যাডেট কলেজে জঙ্গিদের হাতে আটক শতাধিক শিক্ষার্থীকে উদ্ধারে ব্যস্ত। ওয়ানা শহরটি আফগান সীমান্তবর্তী খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে অবস্থিত।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ কোনো প্রমাণ না দিয়েই ইসলামাবাদ ও ওয়ানার উভয় ঘটনার জন্য ভারতকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘উভয় হামলাই অঞ্চলে ভারতীয় রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদের সবচেয়ে নিকৃষ্ট উদাহরণ। এখনই বিশ্বের উচিত ভারতের এমন নোংরা ষড়যন্ত্রের নিন্দা জানানো।’ ভারত এসব অভিযোগ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে।
এই হামলাগুলো এমন সময় ঘটছে, যখন পাকিস্তান ও তালেবানশাসিত আফগানিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। গত মাসে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সীমান্তে একাধিক সংঘর্ষ হয়েছে। সেই সংঘর্ষের সময়ই আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রথমবারের মতো ভারত সফরে ছিলেন, যা নয়াদিল্লি ও কাবুলের মধ্যে এক নতুন জোট গঠনের ইঙ্গিত দেয়।
দশকের পর দশক ধরে পাকিস্তান ছিল তালেবানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক, আর ভারত সেই গোষ্ঠীকে ইসলামাবাদের প্রভাবাধীন একটি প্রক্সি হিসেবে দেখত। কিন্তু এখন পরিস্থিতি উল্টে গেছে। পাকিস্তান এখন অভিযোগ করছে, তালেবান ভারতের স্বার্থে ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে কাজ করছে। পাকিস্তানের অভিযোগ, তালেবান পাকিস্তানবিরোধী জঙ্গি গোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানকে (টিটিপি) আশ্রয় দিচ্ছে। যারা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানের ভেতরে ঘটে যাওয়া বেশির ভাগ বড় হামলার দায় স্বীকার করেছে, যদিও মঙ্গলবারের আত্মঘাতী হামলার দায় এখনো তারা নেয়নি।
ভারতের বিরুদ্ধে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থনের অভিযোগ তুললেও, ইসলামাবাদ এখনো স্পষ্ট করে জানায়নি, তারা কীভাবে নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেবে। বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘আমার মনে হয়, এই অনিশ্চয়তাই পাকিস্তানকে তার কাঙ্ক্ষিত কৌশলগত নমনীয়তা দিয়েছে।’
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

পশ্চিমা বিশ্বের ৯টি দেশে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, এসব দেশের মানুষের মধ্যে গণতন্ত্র নিয়ে গভীর অসন্তোষ বিরাজ করছে। জরিপে অংশ নেওয়া দেশগুলোর মধ্যে আটটিতে গণতন্ত্র নিয়ে সন্তুষ্টি ৫০ শতাংশের নিচে। মাত্র একটি দেশ ছাড়া সবটিতেই ভবিষ্যতে গণতন্ত্রের অবস্থা নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
১২ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলায় রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরাসরি নির্দেশে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ড-এর নেতৃত্বে একটি বিশাল সামরিক বহর ক্যারিবীয় সাগরে মোতায়েন করা হয়েছে। এই রণতরী বহর যে কোনো মুহূর্তে ভেনেজুয়েলায় সামরিক পদক্ষেপ নিতে
১৯ ঘণ্টা আগে
পাকিস্তানের সংবিধানের ২৭ তম সংশোধনীর প্রস্তাব গত সোমবার দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে পাস হয়। এরপর, গতকাল বুধবার তা নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদেও পাস হয়। এখন শুধু উচ্চকক্ষে সামান্য পরিবর্তিত হয়ে তা প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির স্বাক্ষরের মাধ্যমে সংবিধানের অংশ হয়ে যাবে।
৩ দিন আগে
ভেনেজুয়েলায় মার্কিন আক্রমণ আসন্ন বলেই মনে হচ্ছে। ১৯৯৪ সালের পর দেশটির উপকূলে যুক্তরাষ্ট্র এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়েছে। ভেনেজুয়েলার সঙ্গে মার্কিন শত্রুতার শুরু ২০০২ সালে, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজ দায়িত্ব গ্রহণের পর। এখন প্রশ্ন হলো—ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এই শত্রুতা ‘কী
৪ দিন আগেএকুশ শতকের শুরু থেকেই বৈশ্বিক রাজনীতির পট দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। এই পরিবর্তনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ক্রমেই বহু মেরু বিশ্বের ধারণা জোরালো হওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের একাধিপত্য খর্ব হওয়া। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, বৈশ্বিক আধিপত্যের পাট চুকিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আপাতত ‘নিজ আঙিনা’ বলে পরিচিত পশ্চিম গোলার্ধ অর্থাৎ দুই আমেরিকা মহাদেশে নিজের আধিপত্য বিস্তার করতে চাইছে। আর সেই চাওয়ার পথে নাকের ডগায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে ভেনেজুয়েলা। ভেনেজুয়েলা উপকূলে মার্কিন রণ সাজ কেন এবং কী কারণে সেই প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক পররাষ্ট্রনীতির পরিবর্তন নিয়ে দ্য ক্রেডলে লিখেছেন এইডেন জে. সিমার্ডোন। আজকের পত্রিকার পাঠকদের জন্য লেখাটি অনুবাদ করেছেন পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান।
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলায় মার্কিন আক্রমণ আসন্ন বলেই মনে হচ্ছে। ১৯৯৪ সালের পর দেশটির উপকূলে যুক্তরাষ্ট্র এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়েছে। ভেনেজুয়েলার সঙ্গে মার্কিন শত্রুতার শুরু ২০০২ সালে, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজ দায়িত্ব গ্রহণের পর। এখন প্রশ্ন হলো—ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এই শত্রুতা ‘কী কারণে’ এবং ‘এখনই কেন।’
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন এক মেরু বিশ্ব ক্ষয়ে যাওয়ায় এবং ইউরেশিয়ার ডিটারেন্ট বা বাইরের শক্তিকে প্রতিরোধ করার সক্ষমতায় বেড়ে যাওয়ায় ওয়াশিংটনের শেষ কার্যকর প্রকল্প হলো—নিজেদের তথাকথিত ‘পেছনের আঙিনা’ কাবু করা। দেশটির নীতিনির্ধারণী মহল বুঝতে পেরেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র এখন চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি মোকাবিলা করে পারবে না। বিশ্বব্যাপী মার্কিন আধিপত্য বিস্তার ব্যর্থ হলে তাই বিকল্প পরিকল্পনা হলো—অন্তত পশ্চিম গোলার্ধ নিয়ন্ত্রণে রাখা। এই কৌশলটি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে আরও দ্রুত এগিয়ে চলছে।
পশ্চিম গোলার্ধে নিজ নিয়ন্ত্রণ দৃঢ় করার জন্য, ভেনেজুয়েলার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। কারণ, দেশটির আছে বিশ্বের সর্বোচ্চ তেলের মজুত। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের এই আকাঙ্ক্ষার পথে বাধা ভেনেজুয়েলার সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সরকার। অর্থনৈতিক চাপ দিয়ে সরকার পতনে ব্যর্থ হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের এখন একমাত্র বিকল্প সামরিক শক্তি। কিন্তু এটি বিপরীত ফল দিতে পারে। বিশেষ করে, আঞ্চলিক মিত্ররা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যেতে পারে এবং ভেনেজুয়েলাকে সাহায্য দিতে পারে বেইজিং, মস্কো এবং তেহরান। তখন ট্রাম্পকে অন্য কোথাও পালানোর পথ খুঁজতে হবে।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন যুক্তরাষ্ট্রকে অনন্য অসাধারণ বৈশ্বিক আধিপত্য এনে দিয়েছিল। শক্তির শীর্ষে থাকা অবস্থায় ওয়াশিংটন বিভিন্ন দেশে সামরিক অভিযান চালিয়েছে। কুয়েত থেকে ইরাককে বের করে দিয়েছে, যুগোস্লাভিয়া ভেঙেছে এবং হাইতির শাসন পরিবর্তন করেছে। এসবই করা হয়েছে মার্কিন আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য।
অতীতের ঘটনা থেকে আত্মবিশ্বাসী হয়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’ শুরু করেন পশ্চিম ও মধ্য এশিয়ায় নিয়ন্ত্রণ দৃঢ় করার জন্য। দ্রুত বিজয় না পাওয়ায় এবং স্থানীয় প্রতিরোধের মুখে ইরাক ও আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রায় দুই দশক আটকে পড়েছিল। কিন্তু ২০১৮ সালের মার্কিনরা বুঝে যায়, বিশ্বের জ্বালানি ভান্ডার নিয়ন্ত্রণের স্বপ্ন ব্যর্থ হয়েছে।
একই সময়ে, চীন মার্কিন করপোরেট সিস্টেম আউটসোর্স করে তার অর্থনীতি দ্রুত শক্তিশালী করেছে। এই সময়েই রাশিয়া চেচেন বিদ্রোহ দমন করেছে, প্রতিবেশী অঞ্চলে প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে এবং জর্জিয়া, মলদোভা ও ইউক্রেনে ন্যাটোর সম্প্রসারণ বাধা দিয়েছে। এই অবস্থায় মাল্টিপোলার বা বহু মেরু বিশ্বের বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর পরিবর্তে, ওয়াশিংটন আরও ইউনিপোলার ব্যবস্থায় জোর দিয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় তারা রুশ সীমান্তের দিকে ন্যাটো সম্প্রসারণ, পূর্ব ইউরোপ ও ককেশিয়ায় কালার রেভোলিউশনকে সমর্থন, দক্ষিণ চীন সাগরে যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন, প্রতিদ্বন্দ্বীদের ওপর ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং পশ্চিম এশিয়ায় মিত্রদের সাহায্য করেছে। এসব মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিপোলার ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার কোশেশ।
এসব প্রচেষ্টা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। রাশিয়া ইউক্রেনে নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়েছে এবং পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে উঠেছে। চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ তেমন প্রভাব ফেলেনি। বরং, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশগুলো ডলারের ব্যবহার কমিয়েছে। সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতন হয়েছে, কিন্তু গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে হামাসের প্রতিরোধের প্রতি সমর্থন বাড়িয়েছে।
ইউরোপীয় পুনর্গঠন ও উন্নয়ন ব্যাংকের আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা ফাদি লামা ২০২২ সালে লিখেছিলেন, ‘রাশিয়া, ইরান, চীনের (আরআইসি) ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক প্রভাব বিবেচনা করে পশ্চিমের একমাত্র কার্যকর কৌশল হলো—বিশ্বকে (বিভিন্ন প্রভাব বলয়ে) বিভক্ত করে প্রতিযোগিতা সমাপ্ত করা।’
এরপর থেকে, ট্রাম্পের সময়ে পশ্চিম গোলার্ধে মার্কিন আধিপত্য বিস্তারের নীতি আরও দ্রুত এগিয়েছে। ইউরোপের নিরাপত্তা আমেরিকা নিশ্চিত করার পরিবর্তে ট্রাম্প এটিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ন্যাটো সদস্যদের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন এবং সম্প্রতি রোমানিয়া থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন।
নিশ্চয়ই, ট্রাম্প প্রশাসনে এখনো নব্য–রক্ষণশীল ঘরানার তীক্ষ্ণ নীতির লোক রয়েছে। ট্রাম্প ইসরায়েল ও ইউক্রেনে বিলিয়ন ডলারের সামরিক সাহায্য পাঠিয়েছেন, রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন এবং সোমালিয়ায় ড্রোন হামলাসহ লোহিত সাগর এলাকায় কার্যক্রম বাড়িয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্প নিজে কখনো প্রচলিত নব্য–রক্ষণশীল পরিকল্পনা অনুসরণ করেননি।
দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে প্রবেশের পরপরই ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির দৃষ্টি ঘুরিয়ে নেন এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে। তিনি আশা করেছিলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হলে রাশিয়া আবার পশ্চিমা জোটে ফিরবে, আর এতে চীনের সঙ্গে মস্কোর সম্পর্ক দুর্বল হবে। কিন্তু রাশিয়া যেভাবে ইউক্রেনে অগ্রসর হচ্ছে, তাতে যুদ্ধ থামানোর কোনো যৌক্তিকতা তারা দেখছে না। বরং, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে রাশিয়া আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে বেইজিংয়ের সঙ্গে।
এই সময়ে ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধও বেড়ে গেছে। চীনা পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। জবাবে চীন গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রপ্তানিতে কড়াকড়ি আরোপ করে। শেষে যুক্তরাষ্ট্র নীরবে সেই শুল্ক কমিয়ে ৪৭ শতাংশে নামায়। এমনকি তাইওয়ানও এখন কার্যত ট্রাম্প প্রশাসনের আলোচ্যসূচি থেকে হারিয়ে গেছে। অথচ, এক সময় তাইওয়ান মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম মূল আলোচ্য বিষয় ছিল।
ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি অনেকেই ভুলভাবে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ বা ‘শান্তিপ্রিয়’ বলে ব্যাখ্যা করেন। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। চীন ও রাশিয়াকে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে ট্রাম্প এখন আমেরিকা মহাদেশকে—পাতাগোনিয়া থেকে গ্রিনল্যান্ড পর্যন্ত—ওয়াশিংটনের প্রভাববলয়ে আনতে চাইছেন।
এটি আসলে মনরো নীতিরই নতুন সংস্করণ। প্রায় ২০০ বছর ধরে এই নীতিই বলছে, পশ্চিম গোলার্ধ যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বভুক্ত এলাকা। তবে এবার ট্রাম্প তা প্রকাশ্যে বলছেন এবং হুমকি দিয়েছেন—প্রয়োজনে সামরিক শক্তি বাড়িয়ে সংযুক্তিকরণ নিশ্চিত করবেন। দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুতেই তিনি কানাডা, গ্রিনল্যান্ড ও পানামাকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত করার আহ্বান জানান। উদারপন্থী বিশ্লেষকেরা একে পাগলামি বললেও এতে বাস্তব ফল এসেছে।
কানাডা সীমান্তে সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ডেনমার্ক যুক্তরাষ্ট্রের চাপে গ্রিনল্যান্ডে সেনা মোতায়েন বাড়িয়েছে, যাতে চীন ওই অঞ্চলের খনিজসম্পদে প্রবেশাধিকার না পায়। পানামা চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্প বাতিল করেছে এবং হংকংভিত্তিক সিকে হাচিনসনের সঙ্গে খাল ব্যবস্থাপনার চুক্তি বাতিল করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে মেক্সিকো চীনা পণ্যে শুল্ক বাড়াতে সম্মত হয়েছে। আর্জেন্টিনা ৪০ বিলিয়ন ডলার মার্কিন সহায়তা পেয়েছে, যা তাদের মার্কিনপন্থী সরকারকে জাতীয় নির্বাচনে জিততে সাহায্য করেছে। কোস্টারিকা ও গুয়াতেমালা যুক্তরাষ্ট্রে থাকা অভিবাসীদের ফেরত নিতে রাজি হয়েছে, বিনিময়ে তারা কম শুল্ক সুবিধা পেয়েছে। এভাবে ঘুষ, হুমকি ও সামরিক ভয়ের মুখে একে একে অঞ্চলটির দেশগুলো আবারও ওয়াশিংটনের প্রভাব বলয়ে ফিরছে।
তবে এক ব্যতিক্রম ভেনেজুয়েলা। ২০০২ সাল থেকে দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের শাসন পরিবর্তনের চেষ্টার, নিষেধাজ্ঞা আর অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে টিকে আছে। শুরুতে মনে হয়েছিল, ওয়াশিংটনের চাপে দেশটি ভেঙে পড়বে। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভেনেজুয়েলার সঙ্গে লেনদেন বন্ধ করে দেয়। এর ফলে দেশটির জিডিপি ৭৪ শতাংশ কমে যায়, মুদ্রাস্ফীতি দুই মিলিয়ন শতাংশ ছাড়িয়ে যায়, আর প্রায় ৭৯ লাখ মানুষ দেশ ছেড়ে পালায়। তখন মনে হয়েছিল, সরকার ভেঙে পড়া শুধু সময়ের ব্যাপার। কিন্তু তা হয়নি।
এখন ভেনেজুয়েলার অর্থনীতি দ্রুত বাড়ছে, মানুষ দেশে ফিরছে, মুদ্রাস্ফীতিও অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। এ সাফল্যের পেছনে আছে ভেনেজুয়েলার জনগণের স্থিতিশীলতা। তবে এর বড় অংশের কৃতিত্ব চীনেরও। বেইজিং দেশটিতে ৬০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে, যা ভেনেজুয়েলার মোট অর্থনীতির অর্ধেকের বেশি। এই বিনিয়োগের মাধ্যমে চীন দেশটিকে সাহায্য করছে নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে পণ্য রপ্তানি করতে। রাশিয়াও সামরিক সহযোগিতা ও গোয়েন্দা সহায়তায় ভেনেজুয়েলাকে সহায়তা দিচ্ছে। ইরানও পাশে আছে, তারা দেশটিতে কয়েক মিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত তেল পাঠিয়েছে।
এতে যুক্তরাষ্ট্রের সামনে দুটি বড় সমস্যা তৈরি হয়েছে। প্রথমত, ভেনেজুয়েলার টিকে থাকা অন্য দেশগুলোকে অনুপ্রাণিত করতে পারে। ইতিমধ্যে ব্রাজিল, চিলি, কলম্বিয়া, হন্ডুরাস, মেক্সিকো ও নিকারাগুয়ায় বামপন্থী সরকার ক্ষমতায় এসেছে। ইকুয়েডর ও পেরুর গণবিক্ষোভও ইঙ্গিত দিচ্ছে—তারা শিগগিরই নির্বাচনের মাধ্যমে বা লড়াইয়ের পথ ধরে এই ধারায় যোগ দিতে পারে। দ্বিতীয়ত, ভেনেজুয়েলার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা উল্টো ফল দিয়েছে। এই পদক্ষেপ চীন ও রাশিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘পেছনের উঠোনে’ প্রবেশের সুযোগ করে দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ভেনেজুয়েলাকে দুর্বল করা অর্থনৈতিক যুদ্ধের সব অস্ত্র এখন প্রায় শেষ। তাই এবার সামরিক বিকল্পের পালা। যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে ক্যারিবীয় অঞ্চলে বিশাল নৌবহর পাঠিয়েছে—১৯৯৪ সালের পর এটিই সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি। নতুন কৌশল অনুযায়ী, মধ্যপ্রাচ্য ও প্রশান্ত মহাসাগর থেকে কিছু সামরিক সরঞ্জাম সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ভেনেজুয়েলার উপকূলে। ভয় দেখানোর অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র মাদক পাচারের অভিযোগে কয়েকটি নৌকা লক্ষ্য করে হামলাও চালিয়েছে।
কিন্তু ভেনেজুয়েলা এই উসকানিতে পা দিচ্ছে না। তারা রাশিয়াকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্থাপন করতে ও ভাগনার বাহিনীর সামরিক প্রশিক্ষক পাঠাতে। এমনকি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে আলোচনার খবরও শোনা যাচ্ছে। লাতিন আমেরিকায় প্রতিরোধও বাড়ছে। ব্রাজিলের ১৫ লাখ সদস্যের ভূমিহীন কৃষক আন্দোলন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে সংহতির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মেক্সিকো ও কলম্বিয়া যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে। কারাকাস শহুরে যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে স্থানীয় মিলিশিয়াদের অস্ত্র দিয়েছে।
ভেনেজুয়েলার সেনাবাহিনী পরাজিত হলেও নাগরিক মিলিশিয়াদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হয়েছে, যেন লড়াই চালিয়ে যাওয়া যায়। এই হস্তক্ষেপ, সর্বোচ্চ, ইরাক যুদ্ধের মতোই হবে—দীর্ঘ, অজনপ্রিয় ও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ।
ট্রাম্প আমেরিকার কৌশল ছোট করে আনছেন। আগে ছিল বৈশ্বিক আধিপত্য, তারপর ছিল এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ‘পিভট’, এখন লক্ষ্য পশ্চিম গোলার্ধ। কিন্তু ভেনেজুয়েলা সেই পথে বড় বাধা। যদি ভেনেজুয়েলা সামরিক ও অর্থনৈতিকভাবে টিকে যায়, তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবের শেষ ভ্রমও ভেঙে পড়বে। তখন হয়তো সাম্রাজ্য আংশিক নিয়ন্ত্রণেই সন্তুষ্ট হবে—কেবল উপকূলীয় কিছু সম্পদপূর্ণ অঞ্চলে আধিপত্য বজায় রেখে, ক্রমাগত যুদ্ধ চালিয়ে যাবে কাঁচামাল আহরণের জন্য।
এরই মধ্যে ইঙ্গিত মিলছে, যুক্তরাষ্ট্র দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিতে চাইছে। ট্রাম্প নাইজেরিয়াকে ‘খ্রিষ্টানদের ওপর গণহত্যা’ চালানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন। বিদেশে হস্তক্ষেপের অজুহাত হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রায়ই এ ধরনের অভিযোগ ব্যবহার করে। জাতিগত ও ধর্মীয় বিভাজনে জর্জরিত নাইজেরিয়া ভেঙে যেতে পারে। তেলসমৃদ্ধ দক্ষিণাঞ্চল আলাদা হয়ে যেতে পারে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ উত্তরাঞ্চল থেকে। কিন্তু নাইজেরিয়াও সহজ লক্ষ্য নয়। সেখানে হস্তক্ষেপ করতে গেলে বিপুল খরচ ও মানবিক বিপর্যয় ঘটবে। তবু এক মরিয়া সাম্রাজ্যের চোখে হয়তো ঝুঁকিটা নেওয়ার মতোই মূল্যবান মনে হতে পারে।
বর্তমান যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক কৌশল এখন রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নব্য রক্ষণশীলরা পুরোনো আধিপত্য ধরে রাখতে চায়—তারা চায় ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থান বজায় রাখুক, রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউরোপকে সমর্থন দিক, আর চীনকে ঠেকিয়ে রাখুক। পুরোপুরি পশ্চাদপসরণে সময় লাগবে, কিন্তু ট্রাম্প তার প্রথম ইঙ্গিত দিয়েছেন। এই ধারা ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির সঙ্গেই শেষ হবে না। বৃহত্তর মার্কিন অভিজাত মহল ধীরে ধীরে বুঝতে পারছে, একক আধিপত্যের যুগ শেষ। তাই তারা ভাবছে, যদি বিশ্বকে শাসন করা না যায়, তবে অন্তত নিজের অঞ্চলটাকেই শাসন করা হোক।
কিন্তু সেটাও হয়তো ব্যর্থ হবে। যদি ভেনেজুয়েলা টিকে থাকে, যদি গ্লোবাল সাউথ একত্র হয়, আর যদি লাতিন আমেরিকার জনগণ পরাধীনতার বদলে সার্বভৌমত্বে এক হয়—তাহলে আমেরিকার জন্য পশ্চিম গোলার্ধও আর নিরাপদ থাকবে না। তাই যুক্তরাষ্ট্র প্রভাবের পরবর্তী অধ্যায় হয়তো ‘বিচ্ছিন্নতা’ নয়—বরং এক প্রকার পশ্চাদপসরণ। সেটি ছদ্মবেশে, আক্রমণাত্মক রূপে, তবুও বিপজ্জনক হবে। তবে সেটি আর ‘আধিপত্য’ নয়।
লেখক: এইডেন জে. সিমার্ডোন কানাডিয়ান অভিবাসন আইনজীবী। এ ছাড়া, টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁর মাস্টার অফ গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স ডিগ্রি রয়েছে। তিনি ন্যাটোর বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন, উইলসন সেন্টার এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন সংগঠনে কাজ করেছেন।

ভেনেজুয়েলায় মার্কিন আক্রমণ আসন্ন বলেই মনে হচ্ছে। ১৯৯৪ সালের পর দেশটির উপকূলে যুক্তরাষ্ট্র এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়েছে। ভেনেজুয়েলার সঙ্গে মার্কিন শত্রুতার শুরু ২০০২ সালে, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজ দায়িত্ব গ্রহণের পর। এখন প্রশ্ন হলো—ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এই শত্রুতা ‘কী কারণে’ এবং ‘এখনই কেন।’
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন এক মেরু বিশ্ব ক্ষয়ে যাওয়ায় এবং ইউরেশিয়ার ডিটারেন্ট বা বাইরের শক্তিকে প্রতিরোধ করার সক্ষমতায় বেড়ে যাওয়ায় ওয়াশিংটনের শেষ কার্যকর প্রকল্প হলো—নিজেদের তথাকথিত ‘পেছনের আঙিনা’ কাবু করা। দেশটির নীতিনির্ধারণী মহল বুঝতে পেরেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র এখন চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি মোকাবিলা করে পারবে না। বিশ্বব্যাপী মার্কিন আধিপত্য বিস্তার ব্যর্থ হলে তাই বিকল্প পরিকল্পনা হলো—অন্তত পশ্চিম গোলার্ধ নিয়ন্ত্রণে রাখা। এই কৌশলটি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে আরও দ্রুত এগিয়ে চলছে।
পশ্চিম গোলার্ধে নিজ নিয়ন্ত্রণ দৃঢ় করার জন্য, ভেনেজুয়েলার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। কারণ, দেশটির আছে বিশ্বের সর্বোচ্চ তেলের মজুত। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের এই আকাঙ্ক্ষার পথে বাধা ভেনেজুয়েলার সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সরকার। অর্থনৈতিক চাপ দিয়ে সরকার পতনে ব্যর্থ হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের এখন একমাত্র বিকল্প সামরিক শক্তি। কিন্তু এটি বিপরীত ফল দিতে পারে। বিশেষ করে, আঞ্চলিক মিত্ররা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যেতে পারে এবং ভেনেজুয়েলাকে সাহায্য দিতে পারে বেইজিং, মস্কো এবং তেহরান। তখন ট্রাম্পকে অন্য কোথাও পালানোর পথ খুঁজতে হবে।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন যুক্তরাষ্ট্রকে অনন্য অসাধারণ বৈশ্বিক আধিপত্য এনে দিয়েছিল। শক্তির শীর্ষে থাকা অবস্থায় ওয়াশিংটন বিভিন্ন দেশে সামরিক অভিযান চালিয়েছে। কুয়েত থেকে ইরাককে বের করে দিয়েছে, যুগোস্লাভিয়া ভেঙেছে এবং হাইতির শাসন পরিবর্তন করেছে। এসবই করা হয়েছে মার্কিন আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য।
অতীতের ঘটনা থেকে আত্মবিশ্বাসী হয়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’ শুরু করেন পশ্চিম ও মধ্য এশিয়ায় নিয়ন্ত্রণ দৃঢ় করার জন্য। দ্রুত বিজয় না পাওয়ায় এবং স্থানীয় প্রতিরোধের মুখে ইরাক ও আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রায় দুই দশক আটকে পড়েছিল। কিন্তু ২০১৮ সালের মার্কিনরা বুঝে যায়, বিশ্বের জ্বালানি ভান্ডার নিয়ন্ত্রণের স্বপ্ন ব্যর্থ হয়েছে।
একই সময়ে, চীন মার্কিন করপোরেট সিস্টেম আউটসোর্স করে তার অর্থনীতি দ্রুত শক্তিশালী করেছে। এই সময়েই রাশিয়া চেচেন বিদ্রোহ দমন করেছে, প্রতিবেশী অঞ্চলে প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে এবং জর্জিয়া, মলদোভা ও ইউক্রেনে ন্যাটোর সম্প্রসারণ বাধা দিয়েছে। এই অবস্থায় মাল্টিপোলার বা বহু মেরু বিশ্বের বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর পরিবর্তে, ওয়াশিংটন আরও ইউনিপোলার ব্যবস্থায় জোর দিয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় তারা রুশ সীমান্তের দিকে ন্যাটো সম্প্রসারণ, পূর্ব ইউরোপ ও ককেশিয়ায় কালার রেভোলিউশনকে সমর্থন, দক্ষিণ চীন সাগরে যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন, প্রতিদ্বন্দ্বীদের ওপর ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং পশ্চিম এশিয়ায় মিত্রদের সাহায্য করেছে। এসব মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিপোলার ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার কোশেশ।
এসব প্রচেষ্টা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। রাশিয়া ইউক্রেনে নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়েছে এবং পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে উঠেছে। চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ তেমন প্রভাব ফেলেনি। বরং, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশগুলো ডলারের ব্যবহার কমিয়েছে। সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতন হয়েছে, কিন্তু গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে হামাসের প্রতিরোধের প্রতি সমর্থন বাড়িয়েছে।
ইউরোপীয় পুনর্গঠন ও উন্নয়ন ব্যাংকের আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা ফাদি লামা ২০২২ সালে লিখেছিলেন, ‘রাশিয়া, ইরান, চীনের (আরআইসি) ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক প্রভাব বিবেচনা করে পশ্চিমের একমাত্র কার্যকর কৌশল হলো—বিশ্বকে (বিভিন্ন প্রভাব বলয়ে) বিভক্ত করে প্রতিযোগিতা সমাপ্ত করা।’
এরপর থেকে, ট্রাম্পের সময়ে পশ্চিম গোলার্ধে মার্কিন আধিপত্য বিস্তারের নীতি আরও দ্রুত এগিয়েছে। ইউরোপের নিরাপত্তা আমেরিকা নিশ্চিত করার পরিবর্তে ট্রাম্প এটিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ন্যাটো সদস্যদের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন এবং সম্প্রতি রোমানিয়া থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন।
নিশ্চয়ই, ট্রাম্প প্রশাসনে এখনো নব্য–রক্ষণশীল ঘরানার তীক্ষ্ণ নীতির লোক রয়েছে। ট্রাম্প ইসরায়েল ও ইউক্রেনে বিলিয়ন ডলারের সামরিক সাহায্য পাঠিয়েছেন, রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন এবং সোমালিয়ায় ড্রোন হামলাসহ লোহিত সাগর এলাকায় কার্যক্রম বাড়িয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্প নিজে কখনো প্রচলিত নব্য–রক্ষণশীল পরিকল্পনা অনুসরণ করেননি।
দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে প্রবেশের পরপরই ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির দৃষ্টি ঘুরিয়ে নেন এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে। তিনি আশা করেছিলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হলে রাশিয়া আবার পশ্চিমা জোটে ফিরবে, আর এতে চীনের সঙ্গে মস্কোর সম্পর্ক দুর্বল হবে। কিন্তু রাশিয়া যেভাবে ইউক্রেনে অগ্রসর হচ্ছে, তাতে যুদ্ধ থামানোর কোনো যৌক্তিকতা তারা দেখছে না। বরং, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে রাশিয়া আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে বেইজিংয়ের সঙ্গে।
এই সময়ে ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধও বেড়ে গেছে। চীনা পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। জবাবে চীন গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রপ্তানিতে কড়াকড়ি আরোপ করে। শেষে যুক্তরাষ্ট্র নীরবে সেই শুল্ক কমিয়ে ৪৭ শতাংশে নামায়। এমনকি তাইওয়ানও এখন কার্যত ট্রাম্প প্রশাসনের আলোচ্যসূচি থেকে হারিয়ে গেছে। অথচ, এক সময় তাইওয়ান মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম মূল আলোচ্য বিষয় ছিল।
ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি অনেকেই ভুলভাবে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ বা ‘শান্তিপ্রিয়’ বলে ব্যাখ্যা করেন। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। চীন ও রাশিয়াকে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে ট্রাম্প এখন আমেরিকা মহাদেশকে—পাতাগোনিয়া থেকে গ্রিনল্যান্ড পর্যন্ত—ওয়াশিংটনের প্রভাববলয়ে আনতে চাইছেন।
এটি আসলে মনরো নীতিরই নতুন সংস্করণ। প্রায় ২০০ বছর ধরে এই নীতিই বলছে, পশ্চিম গোলার্ধ যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বভুক্ত এলাকা। তবে এবার ট্রাম্প তা প্রকাশ্যে বলছেন এবং হুমকি দিয়েছেন—প্রয়োজনে সামরিক শক্তি বাড়িয়ে সংযুক্তিকরণ নিশ্চিত করবেন। দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুতেই তিনি কানাডা, গ্রিনল্যান্ড ও পানামাকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত করার আহ্বান জানান। উদারপন্থী বিশ্লেষকেরা একে পাগলামি বললেও এতে বাস্তব ফল এসেছে।
কানাডা সীমান্তে সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ডেনমার্ক যুক্তরাষ্ট্রের চাপে গ্রিনল্যান্ডে সেনা মোতায়েন বাড়িয়েছে, যাতে চীন ওই অঞ্চলের খনিজসম্পদে প্রবেশাধিকার না পায়। পানামা চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্প বাতিল করেছে এবং হংকংভিত্তিক সিকে হাচিনসনের সঙ্গে খাল ব্যবস্থাপনার চুক্তি বাতিল করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে মেক্সিকো চীনা পণ্যে শুল্ক বাড়াতে সম্মত হয়েছে। আর্জেন্টিনা ৪০ বিলিয়ন ডলার মার্কিন সহায়তা পেয়েছে, যা তাদের মার্কিনপন্থী সরকারকে জাতীয় নির্বাচনে জিততে সাহায্য করেছে। কোস্টারিকা ও গুয়াতেমালা যুক্তরাষ্ট্রে থাকা অভিবাসীদের ফেরত নিতে রাজি হয়েছে, বিনিময়ে তারা কম শুল্ক সুবিধা পেয়েছে। এভাবে ঘুষ, হুমকি ও সামরিক ভয়ের মুখে একে একে অঞ্চলটির দেশগুলো আবারও ওয়াশিংটনের প্রভাব বলয়ে ফিরছে।
তবে এক ব্যতিক্রম ভেনেজুয়েলা। ২০০২ সাল থেকে দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের শাসন পরিবর্তনের চেষ্টার, নিষেধাজ্ঞা আর অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে টিকে আছে। শুরুতে মনে হয়েছিল, ওয়াশিংটনের চাপে দেশটি ভেঙে পড়বে। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভেনেজুয়েলার সঙ্গে লেনদেন বন্ধ করে দেয়। এর ফলে দেশটির জিডিপি ৭৪ শতাংশ কমে যায়, মুদ্রাস্ফীতি দুই মিলিয়ন শতাংশ ছাড়িয়ে যায়, আর প্রায় ৭৯ লাখ মানুষ দেশ ছেড়ে পালায়। তখন মনে হয়েছিল, সরকার ভেঙে পড়া শুধু সময়ের ব্যাপার। কিন্তু তা হয়নি।
এখন ভেনেজুয়েলার অর্থনীতি দ্রুত বাড়ছে, মানুষ দেশে ফিরছে, মুদ্রাস্ফীতিও অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। এ সাফল্যের পেছনে আছে ভেনেজুয়েলার জনগণের স্থিতিশীলতা। তবে এর বড় অংশের কৃতিত্ব চীনেরও। বেইজিং দেশটিতে ৬০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে, যা ভেনেজুয়েলার মোট অর্থনীতির অর্ধেকের বেশি। এই বিনিয়োগের মাধ্যমে চীন দেশটিকে সাহায্য করছে নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে পণ্য রপ্তানি করতে। রাশিয়াও সামরিক সহযোগিতা ও গোয়েন্দা সহায়তায় ভেনেজুয়েলাকে সহায়তা দিচ্ছে। ইরানও পাশে আছে, তারা দেশটিতে কয়েক মিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত তেল পাঠিয়েছে।
এতে যুক্তরাষ্ট্রের সামনে দুটি বড় সমস্যা তৈরি হয়েছে। প্রথমত, ভেনেজুয়েলার টিকে থাকা অন্য দেশগুলোকে অনুপ্রাণিত করতে পারে। ইতিমধ্যে ব্রাজিল, চিলি, কলম্বিয়া, হন্ডুরাস, মেক্সিকো ও নিকারাগুয়ায় বামপন্থী সরকার ক্ষমতায় এসেছে। ইকুয়েডর ও পেরুর গণবিক্ষোভও ইঙ্গিত দিচ্ছে—তারা শিগগিরই নির্বাচনের মাধ্যমে বা লড়াইয়ের পথ ধরে এই ধারায় যোগ দিতে পারে। দ্বিতীয়ত, ভেনেজুয়েলার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা উল্টো ফল দিয়েছে। এই পদক্ষেপ চীন ও রাশিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘পেছনের উঠোনে’ প্রবেশের সুযোগ করে দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ভেনেজুয়েলাকে দুর্বল করা অর্থনৈতিক যুদ্ধের সব অস্ত্র এখন প্রায় শেষ। তাই এবার সামরিক বিকল্পের পালা। যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে ক্যারিবীয় অঞ্চলে বিশাল নৌবহর পাঠিয়েছে—১৯৯৪ সালের পর এটিই সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি। নতুন কৌশল অনুযায়ী, মধ্যপ্রাচ্য ও প্রশান্ত মহাসাগর থেকে কিছু সামরিক সরঞ্জাম সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ভেনেজুয়েলার উপকূলে। ভয় দেখানোর অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র মাদক পাচারের অভিযোগে কয়েকটি নৌকা লক্ষ্য করে হামলাও চালিয়েছে।
কিন্তু ভেনেজুয়েলা এই উসকানিতে পা দিচ্ছে না। তারা রাশিয়াকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্থাপন করতে ও ভাগনার বাহিনীর সামরিক প্রশিক্ষক পাঠাতে। এমনকি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে আলোচনার খবরও শোনা যাচ্ছে। লাতিন আমেরিকায় প্রতিরোধও বাড়ছে। ব্রাজিলের ১৫ লাখ সদস্যের ভূমিহীন কৃষক আন্দোলন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে সংহতির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মেক্সিকো ও কলম্বিয়া যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে। কারাকাস শহুরে যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে স্থানীয় মিলিশিয়াদের অস্ত্র দিয়েছে।
ভেনেজুয়েলার সেনাবাহিনী পরাজিত হলেও নাগরিক মিলিশিয়াদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হয়েছে, যেন লড়াই চালিয়ে যাওয়া যায়। এই হস্তক্ষেপ, সর্বোচ্চ, ইরাক যুদ্ধের মতোই হবে—দীর্ঘ, অজনপ্রিয় ও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ।
ট্রাম্প আমেরিকার কৌশল ছোট করে আনছেন। আগে ছিল বৈশ্বিক আধিপত্য, তারপর ছিল এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ‘পিভট’, এখন লক্ষ্য পশ্চিম গোলার্ধ। কিন্তু ভেনেজুয়েলা সেই পথে বড় বাধা। যদি ভেনেজুয়েলা সামরিক ও অর্থনৈতিকভাবে টিকে যায়, তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবের শেষ ভ্রমও ভেঙে পড়বে। তখন হয়তো সাম্রাজ্য আংশিক নিয়ন্ত্রণেই সন্তুষ্ট হবে—কেবল উপকূলীয় কিছু সম্পদপূর্ণ অঞ্চলে আধিপত্য বজায় রেখে, ক্রমাগত যুদ্ধ চালিয়ে যাবে কাঁচামাল আহরণের জন্য।
এরই মধ্যে ইঙ্গিত মিলছে, যুক্তরাষ্ট্র দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিতে চাইছে। ট্রাম্প নাইজেরিয়াকে ‘খ্রিষ্টানদের ওপর গণহত্যা’ চালানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন। বিদেশে হস্তক্ষেপের অজুহাত হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রায়ই এ ধরনের অভিযোগ ব্যবহার করে। জাতিগত ও ধর্মীয় বিভাজনে জর্জরিত নাইজেরিয়া ভেঙে যেতে পারে। তেলসমৃদ্ধ দক্ষিণাঞ্চল আলাদা হয়ে যেতে পারে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ উত্তরাঞ্চল থেকে। কিন্তু নাইজেরিয়াও সহজ লক্ষ্য নয়। সেখানে হস্তক্ষেপ করতে গেলে বিপুল খরচ ও মানবিক বিপর্যয় ঘটবে। তবু এক মরিয়া সাম্রাজ্যের চোখে হয়তো ঝুঁকিটা নেওয়ার মতোই মূল্যবান মনে হতে পারে।
বর্তমান যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক কৌশল এখন রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নব্য রক্ষণশীলরা পুরোনো আধিপত্য ধরে রাখতে চায়—তারা চায় ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থান বজায় রাখুক, রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউরোপকে সমর্থন দিক, আর চীনকে ঠেকিয়ে রাখুক। পুরোপুরি পশ্চাদপসরণে সময় লাগবে, কিন্তু ট্রাম্প তার প্রথম ইঙ্গিত দিয়েছেন। এই ধারা ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির সঙ্গেই শেষ হবে না। বৃহত্তর মার্কিন অভিজাত মহল ধীরে ধীরে বুঝতে পারছে, একক আধিপত্যের যুগ শেষ। তাই তারা ভাবছে, যদি বিশ্বকে শাসন করা না যায়, তবে অন্তত নিজের অঞ্চলটাকেই শাসন করা হোক।
কিন্তু সেটাও হয়তো ব্যর্থ হবে। যদি ভেনেজুয়েলা টিকে থাকে, যদি গ্লোবাল সাউথ একত্র হয়, আর যদি লাতিন আমেরিকার জনগণ পরাধীনতার বদলে সার্বভৌমত্বে এক হয়—তাহলে আমেরিকার জন্য পশ্চিম গোলার্ধও আর নিরাপদ থাকবে না। তাই যুক্তরাষ্ট্র প্রভাবের পরবর্তী অধ্যায় হয়তো ‘বিচ্ছিন্নতা’ নয়—বরং এক প্রকার পশ্চাদপসরণ। সেটি ছদ্মবেশে, আক্রমণাত্মক রূপে, তবুও বিপজ্জনক হবে। তবে সেটি আর ‘আধিপত্য’ নয়।
লেখক: এইডেন জে. সিমার্ডোন কানাডিয়ান অভিবাসন আইনজীবী। এ ছাড়া, টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁর মাস্টার অফ গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স ডিগ্রি রয়েছে। তিনি ন্যাটোর বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন, উইলসন সেন্টার এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন সংগঠনে কাজ করেছেন।

পশ্চিমা বিশ্বের ৯টি দেশে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, এসব দেশের মানুষের মধ্যে গণতন্ত্র নিয়ে গভীর অসন্তোষ বিরাজ করছে। জরিপে অংশ নেওয়া দেশগুলোর মধ্যে আটটিতে গণতন্ত্র নিয়ে সন্তুষ্টি ৫০ শতাংশের নিচে। মাত্র একটি দেশ ছাড়া সবটিতেই ভবিষ্যতে গণতন্ত্রের অবস্থা নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
১২ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলায় রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরাসরি নির্দেশে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ড-এর নেতৃত্বে একটি বিশাল সামরিক বহর ক্যারিবীয় সাগরে মোতায়েন করা হয়েছে। এই রণতরী বহর যে কোনো মুহূর্তে ভেনেজুয়েলায় সামরিক পদক্ষেপ নিতে
১৯ ঘণ্টা আগে
পাকিস্তানের সংবিধানের ২৭ তম সংশোধনীর প্রস্তাব গত সোমবার দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে পাস হয়। এরপর, গতকাল বুধবার তা নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদেও পাস হয়। এখন শুধু উচ্চকক্ষে সামান্য পরিবর্তিত হয়ে তা প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির স্বাক্ষরের মাধ্যমে সংবিধানের অংশ হয়ে যাবে।
৩ দিন আগে
মোদি ভুটানে এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘এই হামলায় জড়িতরা কেউই রেহাই পাবে না। সব অপরাধীকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।’ তবে বিস্ফোরণের দুই দিন পরও ভারতের রাজনৈতিক নেতা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিকভাবে এটিকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে ঘোষণা করেননি। এর মধ্যেই আবার গত মঙ্গলবার ইসলামাবাদে এক প্রাণঘাতী বিস্ফোরণ
৩ দিন আগে