Ajker Patrika

বিহারে ভবিষ্যদ্বাণীর উল্টো ফল, রাজনীতি ছাড়বেন কি প্রশান্ত কিশোর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রশান্ত কিশোর। ছবি: সংগৃহীত
প্রশান্ত কিশোর। ছবি: সংগৃহীত

প্রথম ভবিষ্যদ্বাণীটি ছিল পাঁচ বছর আগে, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির রাজনীতি নিয়ে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ভারতের রাজনৈতিক কৌশলী প্রশান্ত কিশোর বলেছিলেন, বিজেপি দুই অঙ্ক পার করতেই হিমশিম খাবে এবং ১০০-এর কম আসন পাবে। যদি এর বেশি পায়, আমি কাজ ছেড়ে দেব।’

শেষ পর্যন্ত বিজেপি তা পারেনি। দলটির চূড়ান্ত আসনসংখ্যা ছিল ৭৭। তবে ২০২৫ সালে বিহার নির্বাচন ঘিরে তিনি আরেকটি ভবিষ্যদ্বাণী করেন। এ বছরের জুনে তিনি বলেন, ‘এটা লিখে রাখুন। জেডিইউ নিজ শক্তিতে ২৫টির বেশি আসন পাবে না। এটা ভুল হলে আমি রাজনীতি ছেড়ে দেব। এই নির্বাচনের পর জেডিইউর অস্তিত্বই প্রশ্নের মুখে পড়বে।’

কিন্তু এবার নিজের কথাই তাঁকে ফেলেছে এক মুখলজ্জায়। তাঁর নিজের দল প্রথমবার নির্বাচনে নামলেও আলোচনার কেন্দ্রে নিতীশ কুমার নেতৃত্বাধীন জনতা দল (ইউনাইটেড)। প্রশান্ত কিশোর ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন ২৫-এর নিচে আসন, কিন্তু জেডিইউ পেয়েছে তার তিন গুণের বেশি ৮৫টি আসন।

২০১২ সালে নরেন্দ্র মোদির তৃতীয়বার গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার প্রচারণা সফল করার পর তিনি ‘ইলেকশন জিনিয়াস’ হিসেবে পরিচিতি পান। এরপর ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে মোদিকে দিল্লিতে নিয়ে আসার সেই ঐতিহাসিক প্রচারণাও তাঁরই নকশা।

তারপর থেকে কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া তাঁর সফলতাই বেশি ছিল। এর মধ্যে ২০১৭ সালে উত্তর প্রদেশে কংগ্রেসের ব্যর্থ প্রচারণা ছিল অন্যতম ব্যর্থতা। সর্বশেষ বিহার নির্বাচনের প্রচারণার সময় তিনি যেখানেই গেছেন, বলেছেন জেডিইউ ২৫-এর বেশি আসন পাবে না, আর এটিই হবে নিতীশ কুমারের শেষ নির্বাচন। এসব কথা কখনো তিনি লিখেও দিয়েছেন।

এক সাক্ষাৎকারে এনডিটিভিকে তিনি বলেন, ‘বিহারের সবাই জানে নিতীশ কুমারের মানসিক ও শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। তিনি কাজ করতে পারবেন না। যে ব্যক্তি মঞ্চে বসে পাশে বসা প্রধানমন্ত্রীকেই ভুলে যান; জাতীয় সংগীত বাজলে বুঝতে পারেন না, সেটা জাতীয় সংগীত না কি কাওয়ালি... যিনি এক বছরে একবারও সাংবাদিকদের সামনে আসেননি... যে নিজেকে সামলাতে পারেন না, তিনি বিহারকে কীভাবে সামলাবেন? আপনি-আমি জানি, মোদি-শাহ জানেন না?’

প্রশান্ত কিশোরের আত্মবিশ্বাসের আরেক ভিত্তি ছিল দলীয় এক সমীক্ষা, যেখানে নাকি দেখা যায়, বিহারের ৬২ শতাংশ মানুষ পরিবর্তন চান। কিন্তু নির্বাচনের ফল বলছে, ভোটাররা আগেরটাই আরও জোরালোভাবে চাইছেন। এতে প্রশান্ত কিশোরের দলের ঠাঁই হয়েছে ভোটপ্রাপ্তির একদম তলানিতে।

নিজ দলের সম্ভাব্য আসনসংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলতেন, আর্শ পে বা ফার্শ পে (একেবারে শীর্ষে বা একেবারে তলানিতে)। আরেক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠতা শুধু ১২২ আসন হলেও তিনি সেটিকে ‘পরাজয়’ মনে করবেন, কারণ তিনি শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সন্তুষ্ট হতে পারেন না। তাঁর লক্ষ্য আরও বড়। তিনি ঝাঁপিয়েও পড়েছিলেন পুরো শক্তি নিয়ে।

পরাজিত হলে কী করবেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, তিনি বিহারেই থাকবেন, অন্তত ১০ বছর এবং ম্যালকম গ্ল্যাডওয়েলের ১০ হাজার ঘণ্টার নিয়মের মতোই অনুশীলন চালিয়ে যাবেন। তিনি বিহারের জন্য সবকিছু দিতে প্রস্তুত বলেও জানান।

প্রশান্ত কিশোরের হাতে নীলনকশা প্রস্তুত ছিল। স্কুল তৈরি, অভিবাসন রোধ, সক্ষমতা বৃদ্ধি, দুর্নীতি দমন, নতুন ধরনের রাজনীতি তৈরি করা। তিনি প্রকাশ্যে এসবের বিস্তারিত ব্যাখ্যাও দিয়েছিলেন।

কিন্তু একটি সমস্যা হয়ে গেছে। জেডিইউ ২৫-এর বেশি আসন পেলে তিনি রাজনীতি ছাড়বেন—এ কথা তিনি নিজেই বারবার বলেছেন। এবং সেটাই এখন হয়েছে। তা হলে যিনি নিজেকে রাজনীতির অন্যতম দূরদর্শী হিসেবে তুলে ধরেন, তিনি এখন কোন পথে হাঁটবেন?

পশ্চিমবঙ্গের ভবিষ্যদ্বাণীতেও তিনি বলেছিলেন, তিনি রাজনীতি ছাড়বেন; কারণ এটা তিনি সারা জীবন করতে চান না। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘আই-প্যাকে আমার চেয়ে যোগ্য মানুষ আছে, আমি বিরতি নিয়ে অন্য কিছু করতে চাই।’

২০২১-এ ভোট গণনার বুথফেরত ফলাফলে যখন বিজেপি ১২০-এর বেশি আসনে এগিয়ে, তখন কটাক্ষ শুরু হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী ঠিকই প্রমাণিত হয়। তিনি তখন বলেছিলেন, ‘আমি তো এমনিতেই চলে যেতাম, তবে ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হওয়ার পর যেতে ভালো লাগছে।’

সেবার প্রশান্ত কিশোর বলেছিলেন, ‘আপনারা আমার কথা প্রথমে বিশ্বাস করেননি। কিন্তু আজ আমার কথাই সত্যি হলো। তবু আমি বিদায় নিচ্ছি।’ ঠিক একই পরিস্থিতির মুখোমুখি তিনি আজ।

প্রশান্ত কিশোরের এক্স বায়োতে নিজেকে বর্ণনা করেছেন, ‘গান্ধীভক্ত। প্রথাবিরোধী। সমতাবাদী। মানবতাবাদী। জনগণের প্রজ্ঞায় বিশ্বাসী।’

বিহার নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর থেকে তিনি নীরব। তাই তাঁর পরবর্তী পদক্ষেপ দেখতে সবাই মুখিয়ে। অথবা বিগত কয়েক মাসের অভ্যাস অনুযায়ী বললে, তাঁর পরবর্তী সাক্ষাৎকারের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...