মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনাময় সময়ের মধ্যে সংঘাতে জড়িয়েছে ইরান ও পাকিস্তান। দেশ দুটির মধ্যে ৯০০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। একাংশে পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশ, অন্যদিকে ইরানের সিস্তান ও বেলুচিস্তান প্রদেশ।
সীমান্তের অশান্ত বেলুচ অঞ্চলে উভয় দেশই দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গিদের সঙ্গে লড়াই করে আসছে। কিন্তু দুই দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী একই হলেও তাদের নির্মূলে একে অপরের ভূখণ্ডে আক্রমণ করা অত্যন্ত অস্বাভাবিক।
মধ্যপ্রাচ্যে প্রতিরোধী অক্ষ নামে পরিচিত ইরানের মিত্র ও প্রক্সিরা গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী এবং মিত্রদের সঙ্গে যুদ্ধরত অবস্থায় এই হামলার সূত্রপাত হলো। তবে কেন এই সময়েই দেশ দুটি সীমান্ত সংঘাতে জড়াল?
কেন এই সংঘাত?
গতকাল মঙ্গলবার পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে প্রথম হামলা চালায় ইরান। এতে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের দাবি অনুযায়ী—দুই শিশু নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়।
ইরান দাবি করেছে, তারা শুধু পাকিস্তানের মাটিতে ইরানি সন্ত্রাসীদের লক্ষ্যবস্তু করেছে এবং কোনো পাকিস্তানি নাগরিককে লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি।
কিন্তু হামলাটি পাকিস্তানে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। দেশটিতে একে আন্তর্জাতিক আইন এবং পাকিস্তান ও ইরানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের চেতনার লঙ্ঘন বলে অভিহিত করা হচ্ছে।
ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা তাসনিম বলেছে, ইরান সুন্নি জঙ্গি গোষ্ঠী জইশ আল-আদলের শক্ত ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করছে, যা ইরানে জইশ আল-ধুলম বা আর্মি অব জাস্টিস নামে পরিচিত।
বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গি গোষ্ঠীটি ইরান-পাকিস্তান সীমান্তের উভয় দিকে কাজ করে এবং এর আগে ইরানের লক্ষ্যবস্তুতে হামলার দায় স্বীকার করেছে। গোষ্ঠীটির চূড়ান্ত লক্ষ্য ইরানের সিস্তান ও বেলুচিস্তান প্রদেশের স্বাধীনতা।
পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তান সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নি মুসলমানদের দেশ, যেখানে ইরান এবং তার ‘প্রতিরোধী অক্ষ’ মূলত শিয়া গোষ্ঠী।
এর দুই দিন পরে ইরানের সিস্তান এবং বেলুচিস্তানে বেশ কয়েকটি ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ আস্তানায় পাকিস্তান হামলা চালিয়ে একে ‘অত্যন্ত সমন্বিত এবং লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুল সামরিক হামলার সিরিজ’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার হামলার ঘোষণায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বেশ কয়েকজন জঙ্গি নিহত হয়েছে। ইরানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ধারাবাহিক বিস্ফোরণে অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে তিনজন নারী ও চার শিশু রয়েছে।
পাকিস্তান বলেছে, তারা বছরের পর বছর ধরে অভিযোগ করে আসছে যে ইরানে বিচ্ছিন্নতাবাদী যোদ্ধাদের ‘নিরাপদ আশ্রয়স্থল’ রয়েছে এবং আজ হামলার মাধ্যমে বিষয়টি নিজের হাতে নিতে বাধ্য হয়েছে।
এখনই কেন এই হামলা?
সীমান্তে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান ও ইরানের লড়াই নতুন নয়। অশান্ত সীমান্তে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ কয়েক বছর ধরে প্রায়ই হয়েছে। গত মাসে ইরান সিস্তান ও বেলুচিস্তানে একটি পুলিশ স্টেশনে হামলা চালানোর জন্য জইশ আল-আদল জঙ্গিদের অভিযুক্ত করেছে। তাসনিমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই হামলায় ১১ জন ইরানি পুলিশ কর্মকর্তা মারা যান।
একে-অপরকে না জানিয়েই সীমান্তের অপারের গোষ্ঠীর লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করাটা অস্বাভাবিক বিষয়। আর এটি শুরু হলো গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচারে বোমাবর্ষণের সময়, যা এই অঞ্চলজুড়ে প্রভাব ছড়িয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৃহত্তর আঞ্চলিক সংঘাত ইরানকে সীমানার বাইরে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার সুযোগ দেবে, এটি ইরানকে উৎসাহিত করতে পারে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র একদিকে ইরানের সঙ্গে বৈরিতা কমাতে চায়; অন্যদিকে ইরানকে ঠেকাতে নিজের সামরিক শক্তি বাড়াতেও চায়। এ নিয়ে দেশটি দোদুল্যমান অবস্থায় রয়েছে।
এদিকে স্থানীয় সময় ১২ জানুয়ারি ইয়েমেনের রাজধানী সানার উত্তরে সাদা প্রদেশের একটি ভিডিওতে একাধিক বিস্ফোরণ দেখা গেছে।
পাকিস্তানে হামলার আগের দিন ইরাক ও সিরিয়ায় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। দেশটির দাবি—তারা ইসরায়েলি বাহিনী ও ইরানবিরোধী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর একটি গুপ্তচর ঘাঁটি লক্ষ্য করে ওই হামলা চালায়।
একদিকে লেবানন সীমান্তে ইরান-সমর্থিত গ্রুপ হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলের লড়াই চলছে। অপর দিকে ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে যুক্তরাষ্ট্র। হুতি বিদ্রোহীরা গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিশোধের জন্য লোহিত সাগরে পশ্চিমা বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা করে আসছে।
কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনালের সিনিয়র ফেলো করিম সাদজাদপুর বলেছেন, ‘যদি আপনি ইরান এবং এর প্রক্সিদের নিন্দা না করেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে এই কার্যক্রম (লড়াই) চালিয়ে যাওয়া অর্থহীন।’
মধ্যপ্রাচ্যে ইয়েমেন ও সিরিয়ার মতো সংঘাতগ্রস্ত দেশগুলোতে ইরানের প্রভাবশালী অবস্থানের অর্থ—এটি নিজের ক্ষমতার শূন্যতা পূরণ করতে আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা থেকে লাভবান হবে বলেও জানান করিম।
ইরানের এখন বেশ কয়েকটি প্রধান লক্ষ্যে কাজ করে, যার মধ্যে রয়েছে ফিলিস্তিনিদের ক্ষমতায়ন এবং মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকান প্রভাব প্রতিহত করা।
যুক্তরাষ্ট্রের অবসরপ্রাপ্ত আর্মি জেনারেল ও সাবেক ন্যাটো সুপ্রিম মিত্র কমান্ডার ওয়েসলি ক্লার্ক সিএনএনকে বলেছেন, এসব হামলা ও সংঘাতের মধ্যে দিয়ে ইরান এ অঞ্চলে নেতা হিসেবে আবির্ভূত হতে নিজের ভূমিকাকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে।
ক্লার্ক আরও বলেন, ‘দেশটি আঞ্চলিক আধিপত্য খুঁজছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সেখানে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ায় নিজেকে জাহির করতে একে মোক্ষম সুযোগ হিসেবে দেখছে ইরান।’
সীমান্ত সংঘাতের পেছনে কী?
পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ইরান সীমান্তের ত্রিমোহিনীতে বেলুচ জনগোষ্ঠীর (বালুচ নামেও পরিচিত) বসবাস। তারা দীর্ঘকাল ধরে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে আসছে। তবে ইসলামাবাদ ও তেহরানের জাঁতাকলে তারা সর্বদাই পিষ্ট হয়ে এসেছে। এতে দশকের পর দশক ধরে সীমান্তজুড়ে বিদ্রোহ চলছে।
অঞ্চলটি প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। কিন্তু বেলুচ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অভিযোগ, তাঁদের লোকেরা এই অঞ্চলের সবচেয়ে দরিদ্র মানুষ, তাদের সম্প্রদায়ের বরাবরই বঞ্চিত হয়ে আসছে।
অপর দিকে পাকিস্তানের বৃহত্তম প্রদেশ বেলুচিস্তানে গত কয়েক বছরে মারাত্মক সব হামলা হয়েছে। স্বাধীনতার দাবিকারী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এসব হামলায় ইন্ধন দিয়েছে বলে জানা গেছে। তাদেরও অভিযোগ, এই অঞ্চলের খনিজ সম্পদ কেন্দ্রীয় সরকার একচেটিয়াভাবে শোষণ করে।
ইরানও দীর্ঘকাল ধরে কুর্দি, আরব ও বেলুচ সংখ্যালঘুদের বিদ্রোহের মোকাবিলা করে আসছে।
মার্কিন সরকারের ন্যাশনাল কাউন্টার টেররিজম সেন্টার অনুসারে, জইশ আল-আদল ইরানের অভ্যন্তরে সক্রিয় অনেক বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর মধ্যে একটি। এটি মূলত জুনদাল্লাহ নামক একটি বৃহত্তর সুন্নি জঙ্গি গোষ্ঠীর অংশ ছিল। ২০১০ সালে এর নেতাকে ইরান মৃত্যুদণ্ড দিলে গোষ্ঠীটি ভেঙে যায়। এরপর জইশ আল-আদল নামে আত্মপ্রকাশ করে এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর গোষ্ঠীটিকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকাভুক্ত করেছে।
ন্যাশনাল কাউন্টার টেররিজম সেন্টারের মতে, এই দলটি প্রায়ই ইরানের নিরাপত্তাকর্মী, সরকারি কর্মকর্তা এবং শিয়া বেসামরিক ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে হামলা চালায়।
২০১৫ সালে এক হামলায় আট ইরানি সীমান্তরক্ষীকে হত্যার দায় স্বীকার করে গোষ্ঠীটি। ওই সময় তাদের জঙ্গিরা পাকিস্তান থেকে ইরানে প্রবেশ করে বলেও জানায় গোষ্ঠীটি। এরপর ২০১৯ সালে ইরানি সামরিক সদস্যদের বহনকারী একটি বাসে আত্মঘাতী বোমা হামলার দায় স্বীকার করে। ওই হামলায় সিস্তান-বেলুচিস্তানে কমপক্ষে ২৩ জন নিহত হয়েছিল।
গতকাল বুধবার পাকিস্তানে ইরানের হামলার এক দিন পর জইশ আল-আদল সিস্তান ও বেলুচিস্তানে ইরানের সামরিক গাড়িতে হামলার দায় স্বীকার করেছে। এতে হোসেইন আলী জাওয়ানফার নামে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) এক কর্নেল নিহত হয়েছেন।
এরপর কী হবে?
গতকাল ইরানের হামলা কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের জন্ম দিয়েছে। পাকিস্তান ইরান থেকে রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে এবং প্রতিবেশী দেশটিতে সমস্ত উচ্চপর্যায়ের সফর স্থগিত করেছে। একই সঙ্গে পাকিস্তানে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করেছে।
তাসনিম রিপোর্ট বলেছে, এদিকে পাকিস্তানের হামলার পরে ইরানও আজ প্রতিবেশীর কাছে ‘অবিলম্বে ঘটনার ব্যাখ্যা’ চেয়েছে।
নিকটবর্তী দেশগুলোও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। ভারত বলেছে, সন্ত্রাসবাদের প্রতি ভারতের নীতি জিরো টলারেন্স এবং আক্রমণটি ইরান-পাকিস্তানের বিষয়। চীন উভয় দেশকে সংযম অবলম্বন এবং উত্তেজনা এড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে।
গতকাল মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাট মিলার বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্য যাতে পূর্ণমাত্রায় সংঘাত শুরু না হয়—সে জন্য ওয়াশিংটন কাজ করছে।
পাকিস্তান, ইরাক ও সিরিয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি ইরান গত কয়েক দিনে তিনটি প্রতিবেশী দেশের সার্বভৌম সীমান্ত লঙ্ঘন করেছে।’
পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের মিত্র হিসেবে ইরানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভাবছে কি না—জিজ্ঞাসা করা হলে মিলার বলেন, ‘আমরা আশা করি, এই সমস্যা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা যেতে পারে।’
ইরান বা পাকিস্তান উভয়েই যে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোকে শত্রু হিসেবে বিবেচনা করে—তাদের বিরুদ্ধে পূর্ণমাত্রার অভিযানে নামবে কি না তা স্পষ্ট নয়।
উভয় পক্ষই নিজ নিজ হামলার পরে বিবৃতি জারি করেছে, যা উত্তেজনার বৃদ্ধির নয়, বরং হ্রাসের ইঙ্গিত।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইরানকে ‘ভ্রাতৃত্বপূর্ণ দেশ’ বলে অভিহিত করেছে এবং ‘সম্মিলিত সমাধান খুঁজে বের করার’ প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে।
এটি ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যর প্রতিধ্বনি। যিনি এই সপ্তাহের শুরুতে পাকিস্তানকে একটি ‘বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ’ বলে অভিহিত করে বলেছিলেন, তাঁদের হামলা আনুপাতিক এবং শুধু জঙ্গিদের লক্ষ্য করেই।
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনাময় সময়ের মধ্যে সংঘাতে জড়িয়েছে ইরান ও পাকিস্তান। দেশ দুটির মধ্যে ৯০০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। একাংশে পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশ, অন্যদিকে ইরানের সিস্তান ও বেলুচিস্তান প্রদেশ।
সীমান্তের অশান্ত বেলুচ অঞ্চলে উভয় দেশই দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গিদের সঙ্গে লড়াই করে আসছে। কিন্তু দুই দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী একই হলেও তাদের নির্মূলে একে অপরের ভূখণ্ডে আক্রমণ করা অত্যন্ত অস্বাভাবিক।
মধ্যপ্রাচ্যে প্রতিরোধী অক্ষ নামে পরিচিত ইরানের মিত্র ও প্রক্সিরা গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী এবং মিত্রদের সঙ্গে যুদ্ধরত অবস্থায় এই হামলার সূত্রপাত হলো। তবে কেন এই সময়েই দেশ দুটি সীমান্ত সংঘাতে জড়াল?
কেন এই সংঘাত?
গতকাল মঙ্গলবার পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে প্রথম হামলা চালায় ইরান। এতে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের দাবি অনুযায়ী—দুই শিশু নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়।
ইরান দাবি করেছে, তারা শুধু পাকিস্তানের মাটিতে ইরানি সন্ত্রাসীদের লক্ষ্যবস্তু করেছে এবং কোনো পাকিস্তানি নাগরিককে লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি।
কিন্তু হামলাটি পাকিস্তানে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। দেশটিতে একে আন্তর্জাতিক আইন এবং পাকিস্তান ও ইরানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের চেতনার লঙ্ঘন বলে অভিহিত করা হচ্ছে।
ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা তাসনিম বলেছে, ইরান সুন্নি জঙ্গি গোষ্ঠী জইশ আল-আদলের শক্ত ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করছে, যা ইরানে জইশ আল-ধুলম বা আর্মি অব জাস্টিস নামে পরিচিত।
বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গি গোষ্ঠীটি ইরান-পাকিস্তান সীমান্তের উভয় দিকে কাজ করে এবং এর আগে ইরানের লক্ষ্যবস্তুতে হামলার দায় স্বীকার করেছে। গোষ্ঠীটির চূড়ান্ত লক্ষ্য ইরানের সিস্তান ও বেলুচিস্তান প্রদেশের স্বাধীনতা।
পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তান সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নি মুসলমানদের দেশ, যেখানে ইরান এবং তার ‘প্রতিরোধী অক্ষ’ মূলত শিয়া গোষ্ঠী।
এর দুই দিন পরে ইরানের সিস্তান এবং বেলুচিস্তানে বেশ কয়েকটি ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ আস্তানায় পাকিস্তান হামলা চালিয়ে একে ‘অত্যন্ত সমন্বিত এবং লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুল সামরিক হামলার সিরিজ’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার হামলার ঘোষণায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বেশ কয়েকজন জঙ্গি নিহত হয়েছে। ইরানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ধারাবাহিক বিস্ফোরণে অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে তিনজন নারী ও চার শিশু রয়েছে।
পাকিস্তান বলেছে, তারা বছরের পর বছর ধরে অভিযোগ করে আসছে যে ইরানে বিচ্ছিন্নতাবাদী যোদ্ধাদের ‘নিরাপদ আশ্রয়স্থল’ রয়েছে এবং আজ হামলার মাধ্যমে বিষয়টি নিজের হাতে নিতে বাধ্য হয়েছে।
এখনই কেন এই হামলা?
সীমান্তে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান ও ইরানের লড়াই নতুন নয়। অশান্ত সীমান্তে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ কয়েক বছর ধরে প্রায়ই হয়েছে। গত মাসে ইরান সিস্তান ও বেলুচিস্তানে একটি পুলিশ স্টেশনে হামলা চালানোর জন্য জইশ আল-আদল জঙ্গিদের অভিযুক্ত করেছে। তাসনিমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই হামলায় ১১ জন ইরানি পুলিশ কর্মকর্তা মারা যান।
একে-অপরকে না জানিয়েই সীমান্তের অপারের গোষ্ঠীর লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করাটা অস্বাভাবিক বিষয়। আর এটি শুরু হলো গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচারে বোমাবর্ষণের সময়, যা এই অঞ্চলজুড়ে প্রভাব ছড়িয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৃহত্তর আঞ্চলিক সংঘাত ইরানকে সীমানার বাইরে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার সুযোগ দেবে, এটি ইরানকে উৎসাহিত করতে পারে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র একদিকে ইরানের সঙ্গে বৈরিতা কমাতে চায়; অন্যদিকে ইরানকে ঠেকাতে নিজের সামরিক শক্তি বাড়াতেও চায়। এ নিয়ে দেশটি দোদুল্যমান অবস্থায় রয়েছে।
এদিকে স্থানীয় সময় ১২ জানুয়ারি ইয়েমেনের রাজধানী সানার উত্তরে সাদা প্রদেশের একটি ভিডিওতে একাধিক বিস্ফোরণ দেখা গেছে।
পাকিস্তানে হামলার আগের দিন ইরাক ও সিরিয়ায় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। দেশটির দাবি—তারা ইসরায়েলি বাহিনী ও ইরানবিরোধী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর একটি গুপ্তচর ঘাঁটি লক্ষ্য করে ওই হামলা চালায়।
একদিকে লেবানন সীমান্তে ইরান-সমর্থিত গ্রুপ হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলের লড়াই চলছে। অপর দিকে ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে যুক্তরাষ্ট্র। হুতি বিদ্রোহীরা গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিশোধের জন্য লোহিত সাগরে পশ্চিমা বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা করে আসছে।
কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনালের সিনিয়র ফেলো করিম সাদজাদপুর বলেছেন, ‘যদি আপনি ইরান এবং এর প্রক্সিদের নিন্দা না করেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে এই কার্যক্রম (লড়াই) চালিয়ে যাওয়া অর্থহীন।’
মধ্যপ্রাচ্যে ইয়েমেন ও সিরিয়ার মতো সংঘাতগ্রস্ত দেশগুলোতে ইরানের প্রভাবশালী অবস্থানের অর্থ—এটি নিজের ক্ষমতার শূন্যতা পূরণ করতে আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা থেকে লাভবান হবে বলেও জানান করিম।
ইরানের এখন বেশ কয়েকটি প্রধান লক্ষ্যে কাজ করে, যার মধ্যে রয়েছে ফিলিস্তিনিদের ক্ষমতায়ন এবং মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকান প্রভাব প্রতিহত করা।
যুক্তরাষ্ট্রের অবসরপ্রাপ্ত আর্মি জেনারেল ও সাবেক ন্যাটো সুপ্রিম মিত্র কমান্ডার ওয়েসলি ক্লার্ক সিএনএনকে বলেছেন, এসব হামলা ও সংঘাতের মধ্যে দিয়ে ইরান এ অঞ্চলে নেতা হিসেবে আবির্ভূত হতে নিজের ভূমিকাকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে।
ক্লার্ক আরও বলেন, ‘দেশটি আঞ্চলিক আধিপত্য খুঁজছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সেখানে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ায় নিজেকে জাহির করতে একে মোক্ষম সুযোগ হিসেবে দেখছে ইরান।’
সীমান্ত সংঘাতের পেছনে কী?
পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ইরান সীমান্তের ত্রিমোহিনীতে বেলুচ জনগোষ্ঠীর (বালুচ নামেও পরিচিত) বসবাস। তারা দীর্ঘকাল ধরে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে আসছে। তবে ইসলামাবাদ ও তেহরানের জাঁতাকলে তারা সর্বদাই পিষ্ট হয়ে এসেছে। এতে দশকের পর দশক ধরে সীমান্তজুড়ে বিদ্রোহ চলছে।
অঞ্চলটি প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। কিন্তু বেলুচ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অভিযোগ, তাঁদের লোকেরা এই অঞ্চলের সবচেয়ে দরিদ্র মানুষ, তাদের সম্প্রদায়ের বরাবরই বঞ্চিত হয়ে আসছে।
অপর দিকে পাকিস্তানের বৃহত্তম প্রদেশ বেলুচিস্তানে গত কয়েক বছরে মারাত্মক সব হামলা হয়েছে। স্বাধীনতার দাবিকারী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এসব হামলায় ইন্ধন দিয়েছে বলে জানা গেছে। তাদেরও অভিযোগ, এই অঞ্চলের খনিজ সম্পদ কেন্দ্রীয় সরকার একচেটিয়াভাবে শোষণ করে।
ইরানও দীর্ঘকাল ধরে কুর্দি, আরব ও বেলুচ সংখ্যালঘুদের বিদ্রোহের মোকাবিলা করে আসছে।
মার্কিন সরকারের ন্যাশনাল কাউন্টার টেররিজম সেন্টার অনুসারে, জইশ আল-আদল ইরানের অভ্যন্তরে সক্রিয় অনেক বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর মধ্যে একটি। এটি মূলত জুনদাল্লাহ নামক একটি বৃহত্তর সুন্নি জঙ্গি গোষ্ঠীর অংশ ছিল। ২০১০ সালে এর নেতাকে ইরান মৃত্যুদণ্ড দিলে গোষ্ঠীটি ভেঙে যায়। এরপর জইশ আল-আদল নামে আত্মপ্রকাশ করে এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর গোষ্ঠীটিকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকাভুক্ত করেছে।
ন্যাশনাল কাউন্টার টেররিজম সেন্টারের মতে, এই দলটি প্রায়ই ইরানের নিরাপত্তাকর্মী, সরকারি কর্মকর্তা এবং শিয়া বেসামরিক ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে হামলা চালায়।
২০১৫ সালে এক হামলায় আট ইরানি সীমান্তরক্ষীকে হত্যার দায় স্বীকার করে গোষ্ঠীটি। ওই সময় তাদের জঙ্গিরা পাকিস্তান থেকে ইরানে প্রবেশ করে বলেও জানায় গোষ্ঠীটি। এরপর ২০১৯ সালে ইরানি সামরিক সদস্যদের বহনকারী একটি বাসে আত্মঘাতী বোমা হামলার দায় স্বীকার করে। ওই হামলায় সিস্তান-বেলুচিস্তানে কমপক্ষে ২৩ জন নিহত হয়েছিল।
গতকাল বুধবার পাকিস্তানে ইরানের হামলার এক দিন পর জইশ আল-আদল সিস্তান ও বেলুচিস্তানে ইরানের সামরিক গাড়িতে হামলার দায় স্বীকার করেছে। এতে হোসেইন আলী জাওয়ানফার নামে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) এক কর্নেল নিহত হয়েছেন।
এরপর কী হবে?
গতকাল ইরানের হামলা কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের জন্ম দিয়েছে। পাকিস্তান ইরান থেকে রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে এবং প্রতিবেশী দেশটিতে সমস্ত উচ্চপর্যায়ের সফর স্থগিত করেছে। একই সঙ্গে পাকিস্তানে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করেছে।
তাসনিম রিপোর্ট বলেছে, এদিকে পাকিস্তানের হামলার পরে ইরানও আজ প্রতিবেশীর কাছে ‘অবিলম্বে ঘটনার ব্যাখ্যা’ চেয়েছে।
নিকটবর্তী দেশগুলোও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। ভারত বলেছে, সন্ত্রাসবাদের প্রতি ভারতের নীতি জিরো টলারেন্স এবং আক্রমণটি ইরান-পাকিস্তানের বিষয়। চীন উভয় দেশকে সংযম অবলম্বন এবং উত্তেজনা এড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে।
গতকাল মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাট মিলার বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্য যাতে পূর্ণমাত্রায় সংঘাত শুরু না হয়—সে জন্য ওয়াশিংটন কাজ করছে।
পাকিস্তান, ইরাক ও সিরিয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি ইরান গত কয়েক দিনে তিনটি প্রতিবেশী দেশের সার্বভৌম সীমান্ত লঙ্ঘন করেছে।’
পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের মিত্র হিসেবে ইরানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভাবছে কি না—জিজ্ঞাসা করা হলে মিলার বলেন, ‘আমরা আশা করি, এই সমস্যা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা যেতে পারে।’
ইরান বা পাকিস্তান উভয়েই যে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোকে শত্রু হিসেবে বিবেচনা করে—তাদের বিরুদ্ধে পূর্ণমাত্রার অভিযানে নামবে কি না তা স্পষ্ট নয়।
উভয় পক্ষই নিজ নিজ হামলার পরে বিবৃতি জারি করেছে, যা উত্তেজনার বৃদ্ধির নয়, বরং হ্রাসের ইঙ্গিত।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইরানকে ‘ভ্রাতৃত্বপূর্ণ দেশ’ বলে অভিহিত করেছে এবং ‘সম্মিলিত সমাধান খুঁজে বের করার’ প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে।
এটি ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যর প্রতিধ্বনি। যিনি এই সপ্তাহের শুরুতে পাকিস্তানকে একটি ‘বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ’ বলে অভিহিত করে বলেছিলেন, তাঁদের হামলা আনুপাতিক এবং শুধু জঙ্গিদের লক্ষ্য করেই।
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনাময় সময়ের মধ্যে সংঘাতে জড়িয়েছে ইরান ও পাকিস্তান। দেশ দুটির মধ্যে ৯০০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। একাংশে পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশ, অন্যদিকে ইরানের সিস্তান ও বেলুচিস্তান প্রদেশ।
সীমান্তের অশান্ত বেলুচ অঞ্চলে উভয় দেশই দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গিদের সঙ্গে লড়াই করে আসছে। কিন্তু দুই দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী একই হলেও তাদের নির্মূলে একে অপরের ভূখণ্ডে আক্রমণ করা অত্যন্ত অস্বাভাবিক।
মধ্যপ্রাচ্যে প্রতিরোধী অক্ষ নামে পরিচিত ইরানের মিত্র ও প্রক্সিরা গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী এবং মিত্রদের সঙ্গে যুদ্ধরত অবস্থায় এই হামলার সূত্রপাত হলো। তবে কেন এই সময়েই দেশ দুটি সীমান্ত সংঘাতে জড়াল?
কেন এই সংঘাত?
গতকাল মঙ্গলবার পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে প্রথম হামলা চালায় ইরান। এতে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের দাবি অনুযায়ী—দুই শিশু নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়।
ইরান দাবি করেছে, তারা শুধু পাকিস্তানের মাটিতে ইরানি সন্ত্রাসীদের লক্ষ্যবস্তু করেছে এবং কোনো পাকিস্তানি নাগরিককে লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি।
কিন্তু হামলাটি পাকিস্তানে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। দেশটিতে একে আন্তর্জাতিক আইন এবং পাকিস্তান ও ইরানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের চেতনার লঙ্ঘন বলে অভিহিত করা হচ্ছে।
ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা তাসনিম বলেছে, ইরান সুন্নি জঙ্গি গোষ্ঠী জইশ আল-আদলের শক্ত ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করছে, যা ইরানে জইশ আল-ধুলম বা আর্মি অব জাস্টিস নামে পরিচিত।
বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গি গোষ্ঠীটি ইরান-পাকিস্তান সীমান্তের উভয় দিকে কাজ করে এবং এর আগে ইরানের লক্ষ্যবস্তুতে হামলার দায় স্বীকার করেছে। গোষ্ঠীটির চূড়ান্ত লক্ষ্য ইরানের সিস্তান ও বেলুচিস্তান প্রদেশের স্বাধীনতা।
পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তান সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নি মুসলমানদের দেশ, যেখানে ইরান এবং তার ‘প্রতিরোধী অক্ষ’ মূলত শিয়া গোষ্ঠী।
এর দুই দিন পরে ইরানের সিস্তান এবং বেলুচিস্তানে বেশ কয়েকটি ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ আস্তানায় পাকিস্তান হামলা চালিয়ে একে ‘অত্যন্ত সমন্বিত এবং লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুল সামরিক হামলার সিরিজ’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার হামলার ঘোষণায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বেশ কয়েকজন জঙ্গি নিহত হয়েছে। ইরানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ধারাবাহিক বিস্ফোরণে অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে তিনজন নারী ও চার শিশু রয়েছে।
পাকিস্তান বলেছে, তারা বছরের পর বছর ধরে অভিযোগ করে আসছে যে ইরানে বিচ্ছিন্নতাবাদী যোদ্ধাদের ‘নিরাপদ আশ্রয়স্থল’ রয়েছে এবং আজ হামলার মাধ্যমে বিষয়টি নিজের হাতে নিতে বাধ্য হয়েছে।
এখনই কেন এই হামলা?
সীমান্তে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান ও ইরানের লড়াই নতুন নয়। অশান্ত সীমান্তে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ কয়েক বছর ধরে প্রায়ই হয়েছে। গত মাসে ইরান সিস্তান ও বেলুচিস্তানে একটি পুলিশ স্টেশনে হামলা চালানোর জন্য জইশ আল-আদল জঙ্গিদের অভিযুক্ত করেছে। তাসনিমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই হামলায় ১১ জন ইরানি পুলিশ কর্মকর্তা মারা যান।
একে-অপরকে না জানিয়েই সীমান্তের অপারের গোষ্ঠীর লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করাটা অস্বাভাবিক বিষয়। আর এটি শুরু হলো গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচারে বোমাবর্ষণের সময়, যা এই অঞ্চলজুড়ে প্রভাব ছড়িয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৃহত্তর আঞ্চলিক সংঘাত ইরানকে সীমানার বাইরে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার সুযোগ দেবে, এটি ইরানকে উৎসাহিত করতে পারে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র একদিকে ইরানের সঙ্গে বৈরিতা কমাতে চায়; অন্যদিকে ইরানকে ঠেকাতে নিজের সামরিক শক্তি বাড়াতেও চায়। এ নিয়ে দেশটি দোদুল্যমান অবস্থায় রয়েছে।
এদিকে স্থানীয় সময় ১২ জানুয়ারি ইয়েমেনের রাজধানী সানার উত্তরে সাদা প্রদেশের একটি ভিডিওতে একাধিক বিস্ফোরণ দেখা গেছে।
পাকিস্তানে হামলার আগের দিন ইরাক ও সিরিয়ায় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। দেশটির দাবি—তারা ইসরায়েলি বাহিনী ও ইরানবিরোধী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর একটি গুপ্তচর ঘাঁটি লক্ষ্য করে ওই হামলা চালায়।
একদিকে লেবানন সীমান্তে ইরান-সমর্থিত গ্রুপ হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলের লড়াই চলছে। অপর দিকে ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে যুক্তরাষ্ট্র। হুতি বিদ্রোহীরা গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিশোধের জন্য লোহিত সাগরে পশ্চিমা বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা করে আসছে।
কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনালের সিনিয়র ফেলো করিম সাদজাদপুর বলেছেন, ‘যদি আপনি ইরান এবং এর প্রক্সিদের নিন্দা না করেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে এই কার্যক্রম (লড়াই) চালিয়ে যাওয়া অর্থহীন।’
মধ্যপ্রাচ্যে ইয়েমেন ও সিরিয়ার মতো সংঘাতগ্রস্ত দেশগুলোতে ইরানের প্রভাবশালী অবস্থানের অর্থ—এটি নিজের ক্ষমতার শূন্যতা পূরণ করতে আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা থেকে লাভবান হবে বলেও জানান করিম।
ইরানের এখন বেশ কয়েকটি প্রধান লক্ষ্যে কাজ করে, যার মধ্যে রয়েছে ফিলিস্তিনিদের ক্ষমতায়ন এবং মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকান প্রভাব প্রতিহত করা।
যুক্তরাষ্ট্রের অবসরপ্রাপ্ত আর্মি জেনারেল ও সাবেক ন্যাটো সুপ্রিম মিত্র কমান্ডার ওয়েসলি ক্লার্ক সিএনএনকে বলেছেন, এসব হামলা ও সংঘাতের মধ্যে দিয়ে ইরান এ অঞ্চলে নেতা হিসেবে আবির্ভূত হতে নিজের ভূমিকাকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে।
ক্লার্ক আরও বলেন, ‘দেশটি আঞ্চলিক আধিপত্য খুঁজছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সেখানে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ায় নিজেকে জাহির করতে একে মোক্ষম সুযোগ হিসেবে দেখছে ইরান।’
সীমান্ত সংঘাতের পেছনে কী?
পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ইরান সীমান্তের ত্রিমোহিনীতে বেলুচ জনগোষ্ঠীর (বালুচ নামেও পরিচিত) বসবাস। তারা দীর্ঘকাল ধরে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে আসছে। তবে ইসলামাবাদ ও তেহরানের জাঁতাকলে তারা সর্বদাই পিষ্ট হয়ে এসেছে। এতে দশকের পর দশক ধরে সীমান্তজুড়ে বিদ্রোহ চলছে।
অঞ্চলটি প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। কিন্তু বেলুচ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অভিযোগ, তাঁদের লোকেরা এই অঞ্চলের সবচেয়ে দরিদ্র মানুষ, তাদের সম্প্রদায়ের বরাবরই বঞ্চিত হয়ে আসছে।
অপর দিকে পাকিস্তানের বৃহত্তম প্রদেশ বেলুচিস্তানে গত কয়েক বছরে মারাত্মক সব হামলা হয়েছে। স্বাধীনতার দাবিকারী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এসব হামলায় ইন্ধন দিয়েছে বলে জানা গেছে। তাদেরও অভিযোগ, এই অঞ্চলের খনিজ সম্পদ কেন্দ্রীয় সরকার একচেটিয়াভাবে শোষণ করে।
ইরানও দীর্ঘকাল ধরে কুর্দি, আরব ও বেলুচ সংখ্যালঘুদের বিদ্রোহের মোকাবিলা করে আসছে।
মার্কিন সরকারের ন্যাশনাল কাউন্টার টেররিজম সেন্টার অনুসারে, জইশ আল-আদল ইরানের অভ্যন্তরে সক্রিয় অনেক বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর মধ্যে একটি। এটি মূলত জুনদাল্লাহ নামক একটি বৃহত্তর সুন্নি জঙ্গি গোষ্ঠীর অংশ ছিল। ২০১০ সালে এর নেতাকে ইরান মৃত্যুদণ্ড দিলে গোষ্ঠীটি ভেঙে যায়। এরপর জইশ আল-আদল নামে আত্মপ্রকাশ করে এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর গোষ্ঠীটিকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকাভুক্ত করেছে।
ন্যাশনাল কাউন্টার টেররিজম সেন্টারের মতে, এই দলটি প্রায়ই ইরানের নিরাপত্তাকর্মী, সরকারি কর্মকর্তা এবং শিয়া বেসামরিক ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে হামলা চালায়।
২০১৫ সালে এক হামলায় আট ইরানি সীমান্তরক্ষীকে হত্যার দায় স্বীকার করে গোষ্ঠীটি। ওই সময় তাদের জঙ্গিরা পাকিস্তান থেকে ইরানে প্রবেশ করে বলেও জানায় গোষ্ঠীটি। এরপর ২০১৯ সালে ইরানি সামরিক সদস্যদের বহনকারী একটি বাসে আত্মঘাতী বোমা হামলার দায় স্বীকার করে। ওই হামলায় সিস্তান-বেলুচিস্তানে কমপক্ষে ২৩ জন নিহত হয়েছিল।
গতকাল বুধবার পাকিস্তানে ইরানের হামলার এক দিন পর জইশ আল-আদল সিস্তান ও বেলুচিস্তানে ইরানের সামরিক গাড়িতে হামলার দায় স্বীকার করেছে। এতে হোসেইন আলী জাওয়ানফার নামে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) এক কর্নেল নিহত হয়েছেন।
এরপর কী হবে?
গতকাল ইরানের হামলা কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের জন্ম দিয়েছে। পাকিস্তান ইরান থেকে রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে এবং প্রতিবেশী দেশটিতে সমস্ত উচ্চপর্যায়ের সফর স্থগিত করেছে। একই সঙ্গে পাকিস্তানে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করেছে।
তাসনিম রিপোর্ট বলেছে, এদিকে পাকিস্তানের হামলার পরে ইরানও আজ প্রতিবেশীর কাছে ‘অবিলম্বে ঘটনার ব্যাখ্যা’ চেয়েছে।
নিকটবর্তী দেশগুলোও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। ভারত বলেছে, সন্ত্রাসবাদের প্রতি ভারতের নীতি জিরো টলারেন্স এবং আক্রমণটি ইরান-পাকিস্তানের বিষয়। চীন উভয় দেশকে সংযম অবলম্বন এবং উত্তেজনা এড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে।
গতকাল মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাট মিলার বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্য যাতে পূর্ণমাত্রায় সংঘাত শুরু না হয়—সে জন্য ওয়াশিংটন কাজ করছে।
পাকিস্তান, ইরাক ও সিরিয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি ইরান গত কয়েক দিনে তিনটি প্রতিবেশী দেশের সার্বভৌম সীমান্ত লঙ্ঘন করেছে।’
পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের মিত্র হিসেবে ইরানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভাবছে কি না—জিজ্ঞাসা করা হলে মিলার বলেন, ‘আমরা আশা করি, এই সমস্যা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা যেতে পারে।’
ইরান বা পাকিস্তান উভয়েই যে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোকে শত্রু হিসেবে বিবেচনা করে—তাদের বিরুদ্ধে পূর্ণমাত্রার অভিযানে নামবে কি না তা স্পষ্ট নয়।
উভয় পক্ষই নিজ নিজ হামলার পরে বিবৃতি জারি করেছে, যা উত্তেজনার বৃদ্ধির নয়, বরং হ্রাসের ইঙ্গিত।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইরানকে ‘ভ্রাতৃত্বপূর্ণ দেশ’ বলে অভিহিত করেছে এবং ‘সম্মিলিত সমাধান খুঁজে বের করার’ প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে।
এটি ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যর প্রতিধ্বনি। যিনি এই সপ্তাহের শুরুতে পাকিস্তানকে একটি ‘বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ’ বলে অভিহিত করে বলেছিলেন, তাঁদের হামলা আনুপাতিক এবং শুধু জঙ্গিদের লক্ষ্য করেই।
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনাময় সময়ের মধ্যে সংঘাতে জড়িয়েছে ইরান ও পাকিস্তান। দেশ দুটির মধ্যে ৯০০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। একাংশে পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশ, অন্যদিকে ইরানের সিস্তান ও বেলুচিস্তান প্রদেশ।
সীমান্তের অশান্ত বেলুচ অঞ্চলে উভয় দেশই দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গিদের সঙ্গে লড়াই করে আসছে। কিন্তু দুই দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী একই হলেও তাদের নির্মূলে একে অপরের ভূখণ্ডে আক্রমণ করা অত্যন্ত অস্বাভাবিক।
মধ্যপ্রাচ্যে প্রতিরোধী অক্ষ নামে পরিচিত ইরানের মিত্র ও প্রক্সিরা গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী এবং মিত্রদের সঙ্গে যুদ্ধরত অবস্থায় এই হামলার সূত্রপাত হলো। তবে কেন এই সময়েই দেশ দুটি সীমান্ত সংঘাতে জড়াল?
কেন এই সংঘাত?
গতকাল মঙ্গলবার পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে প্রথম হামলা চালায় ইরান। এতে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের দাবি অনুযায়ী—দুই শিশু নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়।
ইরান দাবি করেছে, তারা শুধু পাকিস্তানের মাটিতে ইরানি সন্ত্রাসীদের লক্ষ্যবস্তু করেছে এবং কোনো পাকিস্তানি নাগরিককে লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি।
কিন্তু হামলাটি পাকিস্তানে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। দেশটিতে একে আন্তর্জাতিক আইন এবং পাকিস্তান ও ইরানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের চেতনার লঙ্ঘন বলে অভিহিত করা হচ্ছে।
ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা তাসনিম বলেছে, ইরান সুন্নি জঙ্গি গোষ্ঠী জইশ আল-আদলের শক্ত ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করছে, যা ইরানে জইশ আল-ধুলম বা আর্মি অব জাস্টিস নামে পরিচিত।
বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গি গোষ্ঠীটি ইরান-পাকিস্তান সীমান্তের উভয় দিকে কাজ করে এবং এর আগে ইরানের লক্ষ্যবস্তুতে হামলার দায় স্বীকার করেছে। গোষ্ঠীটির চূড়ান্ত লক্ষ্য ইরানের সিস্তান ও বেলুচিস্তান প্রদেশের স্বাধীনতা।
পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তান সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নি মুসলমানদের দেশ, যেখানে ইরান এবং তার ‘প্রতিরোধী অক্ষ’ মূলত শিয়া গোষ্ঠী।
এর দুই দিন পরে ইরানের সিস্তান এবং বেলুচিস্তানে বেশ কয়েকটি ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ আস্তানায় পাকিস্তান হামলা চালিয়ে একে ‘অত্যন্ত সমন্বিত এবং লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুল সামরিক হামলার সিরিজ’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার হামলার ঘোষণায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বেশ কয়েকজন জঙ্গি নিহত হয়েছে। ইরানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ধারাবাহিক বিস্ফোরণে অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে তিনজন নারী ও চার শিশু রয়েছে।
পাকিস্তান বলেছে, তারা বছরের পর বছর ধরে অভিযোগ করে আসছে যে ইরানে বিচ্ছিন্নতাবাদী যোদ্ধাদের ‘নিরাপদ আশ্রয়স্থল’ রয়েছে এবং আজ হামলার মাধ্যমে বিষয়টি নিজের হাতে নিতে বাধ্য হয়েছে।
এখনই কেন এই হামলা?
সীমান্তে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান ও ইরানের লড়াই নতুন নয়। অশান্ত সীমান্তে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ কয়েক বছর ধরে প্রায়ই হয়েছে। গত মাসে ইরান সিস্তান ও বেলুচিস্তানে একটি পুলিশ স্টেশনে হামলা চালানোর জন্য জইশ আল-আদল জঙ্গিদের অভিযুক্ত করেছে। তাসনিমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই হামলায় ১১ জন ইরানি পুলিশ কর্মকর্তা মারা যান।
একে-অপরকে না জানিয়েই সীমান্তের অপারের গোষ্ঠীর লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করাটা অস্বাভাবিক বিষয়। আর এটি শুরু হলো গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচারে বোমাবর্ষণের সময়, যা এই অঞ্চলজুড়ে প্রভাব ছড়িয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৃহত্তর আঞ্চলিক সংঘাত ইরানকে সীমানার বাইরে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার সুযোগ দেবে, এটি ইরানকে উৎসাহিত করতে পারে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র একদিকে ইরানের সঙ্গে বৈরিতা কমাতে চায়; অন্যদিকে ইরানকে ঠেকাতে নিজের সামরিক শক্তি বাড়াতেও চায়। এ নিয়ে দেশটি দোদুল্যমান অবস্থায় রয়েছে।
এদিকে স্থানীয় সময় ১২ জানুয়ারি ইয়েমেনের রাজধানী সানার উত্তরে সাদা প্রদেশের একটি ভিডিওতে একাধিক বিস্ফোরণ দেখা গেছে।
পাকিস্তানে হামলার আগের দিন ইরাক ও সিরিয়ায় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। দেশটির দাবি—তারা ইসরায়েলি বাহিনী ও ইরানবিরোধী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর একটি গুপ্তচর ঘাঁটি লক্ষ্য করে ওই হামলা চালায়।
একদিকে লেবানন সীমান্তে ইরান-সমর্থিত গ্রুপ হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলের লড়াই চলছে। অপর দিকে ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে যুক্তরাষ্ট্র। হুতি বিদ্রোহীরা গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিশোধের জন্য লোহিত সাগরে পশ্চিমা বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা করে আসছে।
কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনালের সিনিয়র ফেলো করিম সাদজাদপুর বলেছেন, ‘যদি আপনি ইরান এবং এর প্রক্সিদের নিন্দা না করেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে এই কার্যক্রম (লড়াই) চালিয়ে যাওয়া অর্থহীন।’
মধ্যপ্রাচ্যে ইয়েমেন ও সিরিয়ার মতো সংঘাতগ্রস্ত দেশগুলোতে ইরানের প্রভাবশালী অবস্থানের অর্থ—এটি নিজের ক্ষমতার শূন্যতা পূরণ করতে আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা থেকে লাভবান হবে বলেও জানান করিম।
ইরানের এখন বেশ কয়েকটি প্রধান লক্ষ্যে কাজ করে, যার মধ্যে রয়েছে ফিলিস্তিনিদের ক্ষমতায়ন এবং মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকান প্রভাব প্রতিহত করা।
যুক্তরাষ্ট্রের অবসরপ্রাপ্ত আর্মি জেনারেল ও সাবেক ন্যাটো সুপ্রিম মিত্র কমান্ডার ওয়েসলি ক্লার্ক সিএনএনকে বলেছেন, এসব হামলা ও সংঘাতের মধ্যে দিয়ে ইরান এ অঞ্চলে নেতা হিসেবে আবির্ভূত হতে নিজের ভূমিকাকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে।
ক্লার্ক আরও বলেন, ‘দেশটি আঞ্চলিক আধিপত্য খুঁজছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সেখানে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ায় নিজেকে জাহির করতে একে মোক্ষম সুযোগ হিসেবে দেখছে ইরান।’
সীমান্ত সংঘাতের পেছনে কী?
পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ইরান সীমান্তের ত্রিমোহিনীতে বেলুচ জনগোষ্ঠীর (বালুচ নামেও পরিচিত) বসবাস। তারা দীর্ঘকাল ধরে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে আসছে। তবে ইসলামাবাদ ও তেহরানের জাঁতাকলে তারা সর্বদাই পিষ্ট হয়ে এসেছে। এতে দশকের পর দশক ধরে সীমান্তজুড়ে বিদ্রোহ চলছে।
অঞ্চলটি প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। কিন্তু বেলুচ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অভিযোগ, তাঁদের লোকেরা এই অঞ্চলের সবচেয়ে দরিদ্র মানুষ, তাদের সম্প্রদায়ের বরাবরই বঞ্চিত হয়ে আসছে।
অপর দিকে পাকিস্তানের বৃহত্তম প্রদেশ বেলুচিস্তানে গত কয়েক বছরে মারাত্মক সব হামলা হয়েছে। স্বাধীনতার দাবিকারী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এসব হামলায় ইন্ধন দিয়েছে বলে জানা গেছে। তাদেরও অভিযোগ, এই অঞ্চলের খনিজ সম্পদ কেন্দ্রীয় সরকার একচেটিয়াভাবে শোষণ করে।
ইরানও দীর্ঘকাল ধরে কুর্দি, আরব ও বেলুচ সংখ্যালঘুদের বিদ্রোহের মোকাবিলা করে আসছে।
মার্কিন সরকারের ন্যাশনাল কাউন্টার টেররিজম সেন্টার অনুসারে, জইশ আল-আদল ইরানের অভ্যন্তরে সক্রিয় অনেক বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর মধ্যে একটি। এটি মূলত জুনদাল্লাহ নামক একটি বৃহত্তর সুন্নি জঙ্গি গোষ্ঠীর অংশ ছিল। ২০১০ সালে এর নেতাকে ইরান মৃত্যুদণ্ড দিলে গোষ্ঠীটি ভেঙে যায়। এরপর জইশ আল-আদল নামে আত্মপ্রকাশ করে এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর গোষ্ঠীটিকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকাভুক্ত করেছে।
ন্যাশনাল কাউন্টার টেররিজম সেন্টারের মতে, এই দলটি প্রায়ই ইরানের নিরাপত্তাকর্মী, সরকারি কর্মকর্তা এবং শিয়া বেসামরিক ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে হামলা চালায়।
২০১৫ সালে এক হামলায় আট ইরানি সীমান্তরক্ষীকে হত্যার দায় স্বীকার করে গোষ্ঠীটি। ওই সময় তাদের জঙ্গিরা পাকিস্তান থেকে ইরানে প্রবেশ করে বলেও জানায় গোষ্ঠীটি। এরপর ২০১৯ সালে ইরানি সামরিক সদস্যদের বহনকারী একটি বাসে আত্মঘাতী বোমা হামলার দায় স্বীকার করে। ওই হামলায় সিস্তান-বেলুচিস্তানে কমপক্ষে ২৩ জন নিহত হয়েছিল।
গতকাল বুধবার পাকিস্তানে ইরানের হামলার এক দিন পর জইশ আল-আদল সিস্তান ও বেলুচিস্তানে ইরানের সামরিক গাড়িতে হামলার দায় স্বীকার করেছে। এতে হোসেইন আলী জাওয়ানফার নামে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) এক কর্নেল নিহত হয়েছেন।
এরপর কী হবে?
গতকাল ইরানের হামলা কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের জন্ম দিয়েছে। পাকিস্তান ইরান থেকে রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে এবং প্রতিবেশী দেশটিতে সমস্ত উচ্চপর্যায়ের সফর স্থগিত করেছে। একই সঙ্গে পাকিস্তানে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করেছে।
তাসনিম রিপোর্ট বলেছে, এদিকে পাকিস্তানের হামলার পরে ইরানও আজ প্রতিবেশীর কাছে ‘অবিলম্বে ঘটনার ব্যাখ্যা’ চেয়েছে।
নিকটবর্তী দেশগুলোও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। ভারত বলেছে, সন্ত্রাসবাদের প্রতি ভারতের নীতি জিরো টলারেন্স এবং আক্রমণটি ইরান-পাকিস্তানের বিষয়। চীন উভয় দেশকে সংযম অবলম্বন এবং উত্তেজনা এড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে।
গতকাল মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাট মিলার বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্য যাতে পূর্ণমাত্রায় সংঘাত শুরু না হয়—সে জন্য ওয়াশিংটন কাজ করছে।
পাকিস্তান, ইরাক ও সিরিয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি ইরান গত কয়েক দিনে তিনটি প্রতিবেশী দেশের সার্বভৌম সীমান্ত লঙ্ঘন করেছে।’
পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের মিত্র হিসেবে ইরানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভাবছে কি না—জিজ্ঞাসা করা হলে মিলার বলেন, ‘আমরা আশা করি, এই সমস্যা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা যেতে পারে।’
ইরান বা পাকিস্তান উভয়েই যে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোকে শত্রু হিসেবে বিবেচনা করে—তাদের বিরুদ্ধে পূর্ণমাত্রার অভিযানে নামবে কি না তা স্পষ্ট নয়।
উভয় পক্ষই নিজ নিজ হামলার পরে বিবৃতি জারি করেছে, যা উত্তেজনার বৃদ্ধির নয়, বরং হ্রাসের ইঙ্গিত।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইরানকে ‘ভ্রাতৃত্বপূর্ণ দেশ’ বলে অভিহিত করেছে এবং ‘সম্মিলিত সমাধান খুঁজে বের করার’ প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে।
এটি ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যর প্রতিধ্বনি। যিনি এই সপ্তাহের শুরুতে পাকিস্তানকে একটি ‘বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ’ বলে অভিহিত করে বলেছিলেন, তাঁদের হামলা আনুপাতিক এবং শুধু জঙ্গিদের লক্ষ্য করেই।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অগ্রগতি ডেটা সেন্টারের চাহিদা ক্রমশ বাড়াচ্ছে। কিন্তু তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণের জন্য কম্পিউটার থাকা এই গুদামের মতো জায়গাগুলোর জন্য প্রচুর জমি প্রয়োজন এবং এরা বিপুল পরিমাণ শক্তি ব্যবহার করে, যার ফলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) নিঃসরণ হয়।
১ ঘণ্টা আগেবেইজিংয়ে এ সপ্তাহে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেছেন চীনের শীর্ষ নেতারা। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে উত্তাল বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দেশটির ক্ষমতা ধরে রাখা এবং ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু এই বৈঠকের আনুষ্ঠানিক আলোচ্যসূচির বাইরে রয়েছে এমন দুটি প্রশ্ন, যা চীনের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তা তৈরি করছে...
১৪ ঘণ্টা আগেবিশ্বের তিন মহাদেশে এখন এক জটিল ভূরাজনৈতিক খেলা চলছে। এ খেলায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হাতে রেখেছেন সবচেয়ে শক্তিশালী কার্ড। তুলনামূলক দুর্বল অবস্থানে থেকেও খেলার মধ্যে টিকে আছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অন্যদিকে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চাইছেন পুরো বাজি জিততে।
২ দিন আগেগাজায় স্থল অভিযানের শুরু থেকে ইসরায়েল জোর দিয়ে বলেছে, তারা ‘চূড়ান্ত বিজয় অর্জনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ’। টানা এক বছরের বেশি সময় ধরে অবিরাম বিমান হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর সময়ও একই অবস্থান ছিল নেতানিয়াহুর সরকারের। এমনকি গত সপ্তাহে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষরের পরও একই কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে।
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অগ্রগতি ডেটা সেন্টারের চাহিদা ক্রমশ বাড়াচ্ছে। কিন্তু তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণের জন্য কম্পিউটার থাকা এই গুদামের মতো জায়গাগুলোর জন্য প্রচুর জমি প্রয়োজন এবং এরা বিপুল পরিমাণ শক্তি ব্যবহার করে, যার ফলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) নিঃসরণ হয়।
গোল্ডম্যান স্যাকসের তথ্য অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে ডেটা সেন্টারের শক্তি চাহিদা ১৬৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। কিছু ডেটা সেন্টার নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করে, আবার কিছু সেন্টার নির্মাণ করা হচ্ছে সাইটের নিজস্ব নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদন সুবিধাসহ। তবে সোলার বা উইন্ড ফার্মের মতো ক্লিন এনার্জির উৎসগুলোর জন্যও যথেষ্ট জমি প্রয়োজন।
আর তাই এখন কিছু প্রতিষ্ঠান ডেটা সেন্টারকে মহাকাশে স্থাপনের কথা ভাবছে, যাতে ব্যবহারের জন্য জমি খুঁজে পাওয়ার সমস্যা এড়ানো যায়। মহাকাশ আরও ভালো সূর্যালোক পাওয়ার সুযোগ দেয়। এ ছাড়া সেখানে মেঘের কোনো আনাগোনা নেই, রাতের অন্ধকার নেই, নেই ঋতুবৈচিত্র্যের কারণে সৃষ্টি বিড়ম্বনা।
ইউরোপে এএসসিইএনডি (ASCEND) প্রকল্প মহাকাশভিত্তিক ডেটা সেন্টার স্থাপনের মাধ্যমে কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ কমানোর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। গত বছর ফ্রান্সের থ্যালিস অ্যালেনিয়া স্পেস—যা ইউরোপীয় কমিশনের তহবিলে ASCEND-এর সম্ভাব্যতা নিয়ে একটি গবেষণা পরিচালনা করেছিল—দেখিয়েছে যে, ডেটা সেন্টারকে মহাকাশে পাঠিয়ে নিরবচ্ছিন্ন সৌর শক্তি ব্যবহার করা সম্ভব হলে ‘তথ্য হোস্টিং ও প্রক্রিয়াকরণের জন্য আরও পরিবেশবান্ধব এবং সার্বভৌম সমাধান’ হতে পারে। এই বিষয়ে থ্যালিস অ্যালেনিয়া মহাকাশের হাভিয়ের রোশে বলেন, ‘তবে এটি বেশ কয়েকটি প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ওপর নির্ভর করবে।’
যদিও রকেট উৎক্ষেপণের সময় মোট নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইড বর্তমানে বিমান শিল্পের তুলনায় খুব কম, কিন্তু রকেট বায়ুমণ্ডলের অনেক উঁচুতে দূষক পদার্থ ছাড়ে। কারণ, এই রকেটগুলো দীর্ঘ সময় সেখানে অবস্থানে থাকে। ASCEND—এর গবেষণায় অনুমান করা হয়েছে, মহাকাশভিত্তিক ডেটা সেন্টারগুলো যদি কার্যকরভাবে কার্বন নির্গমন কমাতে চায়, তবে এমন একটি লঞ্চারের বিকাশ প্রয়োজন হবে যা বর্তমান লঞ্চারের তুলনায় তার জীবদ্দশায় ১০ গুণ কম কার্বন নির্গমন করে। কখন এমন রকেট তৈরি হবে, তা এখন স্পষ্ট নয়। স্পেসএক্স, যা ফ্যালকন লঞ্চ ভেহিক্যালের ফ্লিটের মাধ্যমে রকেটের ব্যয় কমানো হয়েছে, কিন্তু এখনো পরিবেশবান্ধব নতুন রকেট ডিজাইন প্রকাশের কোনো পরিকল্পনা ঘোষণা করেনি।
আবুধাবিভিত্তিক স্টার্টআপ মাদারি স্পেস থ্যালিস অ্যালেনিয়া স্পেস পরিচালিত একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাক্সিলারেটর প্রোগ্রামে সহযোগিতা করেছে। মাদারি এমন কয়েকটি কোম্পানির মধ্যে একটি যারা প্রযুক্তিগত প্রদর্শনের জন্য ছোট কম্পিউটিং উপাদান মহাকাশে পাঠাচ্ছে।
মাদারির প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও শারিফ আল রোমাইসি—যিনি ইতিহাদ এয়ারওয়েজের পাইলটও—বলেছেন যে মহাকাশভিত্তিক ডেটা সেন্টার বিভিন্ন গ্রাহকের জন্য উপকারী হতে পারে, বিশেষ করে যারা পৃথিবী পর্যবেক্ষণ স্যাটেলাইট ব্যবহার করে। তিনি বলেছেন, ‘তাদের অপ্রক্রিয়াজাত পর্যবেক্ষণ তথ্য মহাকাশে সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণ করলে বিশ্লেষণে বিলম্ব কমবে এবং তারা সময়মতো সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।’
তিনি আশা করছেন, ভবিষ্যতে একগাদা ডেটা স্যাটেলাইট কক্ষপথে স্থাপন করা হবে। যদিও সেই লক্ষ্য এখনো দূরে, তবে মাদারির প্রথম মিশন ২০২৬ সালের জন্য নির্ধারিত। তারা একটি টোস্টার ওভেনের মতো আকারের পেলোড—ডেটা স্টোরেজ ও প্রক্রিয়াকরণ উপাদান নিয়ে একটি স্যাটেলাইট পাঠাবে। এটি জাতিসংঘের আউটার স্পেস অফিসের ‘UNOOSA— Access to Space for All Initiative’—এর অংশ।
অন্যরা এরই মধ্যে উৎক্ষেপণ সম্পন্ন করেছে। গত মে মাসে, চীন মহাকাশভিত্তিক কম্পিউটিং কন্সটেলেশনের জন্য ১২টি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে। দেশটি অন্তত ২ হাজা ৮০০টি স্যাটেলাইট পাঠাতে চায়। সেটারই প্রথম ধাপ ছিল এটি। রোমাইসি বলেন, এটি মহাকাশকে ডেটা সেন্টারের সম্ভাব্য অবস্থান হিসেবে বিবেচনা করার জন্য একটি জাগরণের ডাক। তিনি বলেন, ‘এটি এমন এক বাস্তবতা যা ইতিমধ্যেই ঘটতে শুরু করেছে।’
ফ্লোরিডাভিত্তিক কোম্পানি লোনস্টার ডেটা হোল্ডিংস মার্চে জানিয়েছিল, তারা সফলভাবে চাঁদে একটি ছোট ডেটা সেন্টারের পরীক্ষা চালিয়েছে। তবে সিস্টেমটি চাঁদের আলোকিত পার্শ্বে ল্যান্ড করার পর অল্প সময়ের জন্য চালু ছিল। নভেম্বরে ওয়াশিংটনভিত্তিক স্টারক্লাউড একটি স্যাটেলাইট চালু করবে, যা এনভিডিয়ার এইচ–১০০ গ্রাফিকস প্রসেসিং ইউনিট (জিপিইউ) দ্বারা সজ্জিত থাকবে। কোম্পানিটি সিএনএন–কে জানিয়েছে, এই স্যাটেলাইট কক্ষপথে সবচেয়ে শক্তিশালী কম্পিউটিং ক্ষমতার রেকর্ড গড়বে।
স্টারক্লাউডের সিইও ফিলিপ জনস্টন বলেন, ‘আমার ধারণা, ১০ বছরের মধ্যে প্রায় সব নতুন ডেটা সেন্টার মহাকাশে তৈরি করা হবে। কারণ স্থলভিত্তিক নতুন এনার্জি প্রজেক্ট তৈরি করার ক্ষেত্রে আমরা সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি হচ্ছি।’ তিনি যোগ করেন, এর প্রধান চ্যালেঞ্জ হল শূন্যে বিশাল পরিমাণ তাপ বিতরণ করা এবং উচ্চ বিকিরণ পরিবেশে চিপগুলোকে সচল রাখা।
তবুও, এই খাতের জন্য এখনো খুব প্রাথমিক পর্যায় এবং এমন ডেটা সেন্টার চালু করা যা পৃথিবীতে থাকা ডেটা সেন্টারগুলোর বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে খরচও একটি বড় বিষয়। কারণ পাঠানোর খরচ নির্ভর করে পেলোডের ওজনের ওপর।
লোনস্টার স্যাটেলাইট নির্মাতা সিডাসের সঙ্গে ১২০ মিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি করেছে, যাতে তারা ছয়টি ডেটা স্টোরেজ স্যাটেলাইট তৈরি ও কক্ষপথে স্থাপন এবং এর পরবর্তী সেবা দেয়। তারা পরিকল্পনা করছে, প্রথমটি ২০২৭ সালে লঞ্চ করবে। এটি হবে একটি ১৫-পেটাবাইটের সিস্টেম। চাঁদ থেকে প্রায় ৬০ হাজার কিলোমিটার দূরে থাকবে এটি। পরের পাঁচটি স্যাটেলাইটের প্রতিটি স্টোরেজ ক্ষমতা দ্বিগুণ হবে, একই ওজন ও শক্তি চাহিদা বজায় রাখা হবে। প্রতি লঞ্চে প্রায় ১০ মিলিয়ন ডলার খরচ হতে পারে, যা অনেক স্থলভিত্তিক ডেটা সেন্টারের স্টোরেজের সামগ্রিক ব্যয়ের তুলনায় খুব কম।
তবে কিছু বিশেষজ্ঞ মহাশূন্যে ডেটা সেন্টারের অর্থনীতিক দিক নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি ফর স্পেস রিসার্চের পরিচালক কুয়েন্টিন এ পার্কার বলেন, ‘কার্যকরভাবে ব্যয় বিশ্লেষণ করলে সত্যিই ঠিক বলা যায় না যে, এই ধরনের প্রকল্প দাঁড়াবে। পৃথিবীকেন্দ্রিক এখনো অনেক সমাধান আছে এবং এগুলো সম্ভবত মহাকাশে কিছু রাখার তুলনায় অনেক সস্তা। মহাকাশে রাখার সঙ্গে অনেক সমস্যা জড়িত।’
বিপরীতে মহাকাশে ডেটা সেন্টার স্থাপনের সমর্থকেরা দাবি করেন যে, মহাকাশে ডেটা রাখা ডেটা সেন্টার আক্রমণ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে সুরক্ষা পাবে। তবে পার্কার বলেছেন, মহাকাশের নিজস্ব কিছু ঝুঁকি আছে—রেডিয়েশন, ভ্রাম্যমাণ মহাকাশীয় আবর্জনা এবং মানবসৃষ্ট বস্তু মহাকাশে পাঠানোর পর সেগুলো পরিষ্কার করার কোনো সমাধান না থাকা অন্যতম।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, মহাকাশে মানুষের তৈরি আবর্জনার পরিমাণ বেড়ে চলেছে। তারা আশঙ্কা করছেন, কোনো সংঘর্ষ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রযুক্তি নষ্ট করতে পারে। আরও কিছু মানুষ বলছেন, মহাকাশে ডেটা সেন্টারের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত করা বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে, এবং সোলার ফ্লেয়ারের মতো স্পেস ওয়েদার সার্ভিসকে ব্যাহত করতে পারে। এ ছাড়া বেশ কিছু দেশ ‘কাউন্টারস্পেস প্রযুক্তি’ যেমন স্যাটেলাইট জ্যামিং সিস্টেম তৈরি করছে।
পার্কারের মতে, মহাকাশভিত্তিক ডেটা সেন্টারের সমর্থকেরা হয়তো ‘সুবিধাগুলো অতিরঞ্জিত করে বলছেন এবং বড় অসুবিধাগুলো উল্লেখ করছেন না।’ তবে আল রোমাইসির মতে, আমাদের পৃথিবীর বাইরে তাকানো অপরিহার্য। তিনি বলেন, ‘এই চ্যালেঞ্জগুলো অতিক্রম করা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এর বিপরীত বিষয় হলো প্রযুক্তিগত স্থবিরতা। আমরা এমন একপর্যায়ে পৌঁছাব যেখানে শুধুমাত্র ডেটা সেন্টার চালানোর জন্য আমাদের সম্পদ শেষ হয়ে যাবে।’
সিএনএন থেকে অনূদিত
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অগ্রগতি ডেটা সেন্টারের চাহিদা ক্রমশ বাড়াচ্ছে। কিন্তু তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণের জন্য কম্পিউটার থাকা এই গুদামের মতো জায়গাগুলোর জন্য প্রচুর জমি প্রয়োজন এবং এরা বিপুল পরিমাণ শক্তি ব্যবহার করে, যার ফলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) নিঃসরণ হয়।
গোল্ডম্যান স্যাকসের তথ্য অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে ডেটা সেন্টারের শক্তি চাহিদা ১৬৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। কিছু ডেটা সেন্টার নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করে, আবার কিছু সেন্টার নির্মাণ করা হচ্ছে সাইটের নিজস্ব নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদন সুবিধাসহ। তবে সোলার বা উইন্ড ফার্মের মতো ক্লিন এনার্জির উৎসগুলোর জন্যও যথেষ্ট জমি প্রয়োজন।
আর তাই এখন কিছু প্রতিষ্ঠান ডেটা সেন্টারকে মহাকাশে স্থাপনের কথা ভাবছে, যাতে ব্যবহারের জন্য জমি খুঁজে পাওয়ার সমস্যা এড়ানো যায়। মহাকাশ আরও ভালো সূর্যালোক পাওয়ার সুযোগ দেয়। এ ছাড়া সেখানে মেঘের কোনো আনাগোনা নেই, রাতের অন্ধকার নেই, নেই ঋতুবৈচিত্র্যের কারণে সৃষ্টি বিড়ম্বনা।
ইউরোপে এএসসিইএনডি (ASCEND) প্রকল্প মহাকাশভিত্তিক ডেটা সেন্টার স্থাপনের মাধ্যমে কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ কমানোর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। গত বছর ফ্রান্সের থ্যালিস অ্যালেনিয়া স্পেস—যা ইউরোপীয় কমিশনের তহবিলে ASCEND-এর সম্ভাব্যতা নিয়ে একটি গবেষণা পরিচালনা করেছিল—দেখিয়েছে যে, ডেটা সেন্টারকে মহাকাশে পাঠিয়ে নিরবচ্ছিন্ন সৌর শক্তি ব্যবহার করা সম্ভব হলে ‘তথ্য হোস্টিং ও প্রক্রিয়াকরণের জন্য আরও পরিবেশবান্ধব এবং সার্বভৌম সমাধান’ হতে পারে। এই বিষয়ে থ্যালিস অ্যালেনিয়া মহাকাশের হাভিয়ের রোশে বলেন, ‘তবে এটি বেশ কয়েকটি প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ওপর নির্ভর করবে।’
যদিও রকেট উৎক্ষেপণের সময় মোট নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইড বর্তমানে বিমান শিল্পের তুলনায় খুব কম, কিন্তু রকেট বায়ুমণ্ডলের অনেক উঁচুতে দূষক পদার্থ ছাড়ে। কারণ, এই রকেটগুলো দীর্ঘ সময় সেখানে অবস্থানে থাকে। ASCEND—এর গবেষণায় অনুমান করা হয়েছে, মহাকাশভিত্তিক ডেটা সেন্টারগুলো যদি কার্যকরভাবে কার্বন নির্গমন কমাতে চায়, তবে এমন একটি লঞ্চারের বিকাশ প্রয়োজন হবে যা বর্তমান লঞ্চারের তুলনায় তার জীবদ্দশায় ১০ গুণ কম কার্বন নির্গমন করে। কখন এমন রকেট তৈরি হবে, তা এখন স্পষ্ট নয়। স্পেসএক্স, যা ফ্যালকন লঞ্চ ভেহিক্যালের ফ্লিটের মাধ্যমে রকেটের ব্যয় কমানো হয়েছে, কিন্তু এখনো পরিবেশবান্ধব নতুন রকেট ডিজাইন প্রকাশের কোনো পরিকল্পনা ঘোষণা করেনি।
আবুধাবিভিত্তিক স্টার্টআপ মাদারি স্পেস থ্যালিস অ্যালেনিয়া স্পেস পরিচালিত একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাক্সিলারেটর প্রোগ্রামে সহযোগিতা করেছে। মাদারি এমন কয়েকটি কোম্পানির মধ্যে একটি যারা প্রযুক্তিগত প্রদর্শনের জন্য ছোট কম্পিউটিং উপাদান মহাকাশে পাঠাচ্ছে।
মাদারির প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও শারিফ আল রোমাইসি—যিনি ইতিহাদ এয়ারওয়েজের পাইলটও—বলেছেন যে মহাকাশভিত্তিক ডেটা সেন্টার বিভিন্ন গ্রাহকের জন্য উপকারী হতে পারে, বিশেষ করে যারা পৃথিবী পর্যবেক্ষণ স্যাটেলাইট ব্যবহার করে। তিনি বলেছেন, ‘তাদের অপ্রক্রিয়াজাত পর্যবেক্ষণ তথ্য মহাকাশে সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণ করলে বিশ্লেষণে বিলম্ব কমবে এবং তারা সময়মতো সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।’
তিনি আশা করছেন, ভবিষ্যতে একগাদা ডেটা স্যাটেলাইট কক্ষপথে স্থাপন করা হবে। যদিও সেই লক্ষ্য এখনো দূরে, তবে মাদারির প্রথম মিশন ২০২৬ সালের জন্য নির্ধারিত। তারা একটি টোস্টার ওভেনের মতো আকারের পেলোড—ডেটা স্টোরেজ ও প্রক্রিয়াকরণ উপাদান নিয়ে একটি স্যাটেলাইট পাঠাবে। এটি জাতিসংঘের আউটার স্পেস অফিসের ‘UNOOSA— Access to Space for All Initiative’—এর অংশ।
অন্যরা এরই মধ্যে উৎক্ষেপণ সম্পন্ন করেছে। গত মে মাসে, চীন মহাকাশভিত্তিক কম্পিউটিং কন্সটেলেশনের জন্য ১২টি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে। দেশটি অন্তত ২ হাজা ৮০০টি স্যাটেলাইট পাঠাতে চায়। সেটারই প্রথম ধাপ ছিল এটি। রোমাইসি বলেন, এটি মহাকাশকে ডেটা সেন্টারের সম্ভাব্য অবস্থান হিসেবে বিবেচনা করার জন্য একটি জাগরণের ডাক। তিনি বলেন, ‘এটি এমন এক বাস্তবতা যা ইতিমধ্যেই ঘটতে শুরু করেছে।’
ফ্লোরিডাভিত্তিক কোম্পানি লোনস্টার ডেটা হোল্ডিংস মার্চে জানিয়েছিল, তারা সফলভাবে চাঁদে একটি ছোট ডেটা সেন্টারের পরীক্ষা চালিয়েছে। তবে সিস্টেমটি চাঁদের আলোকিত পার্শ্বে ল্যান্ড করার পর অল্প সময়ের জন্য চালু ছিল। নভেম্বরে ওয়াশিংটনভিত্তিক স্টারক্লাউড একটি স্যাটেলাইট চালু করবে, যা এনভিডিয়ার এইচ–১০০ গ্রাফিকস প্রসেসিং ইউনিট (জিপিইউ) দ্বারা সজ্জিত থাকবে। কোম্পানিটি সিএনএন–কে জানিয়েছে, এই স্যাটেলাইট কক্ষপথে সবচেয়ে শক্তিশালী কম্পিউটিং ক্ষমতার রেকর্ড গড়বে।
স্টারক্লাউডের সিইও ফিলিপ জনস্টন বলেন, ‘আমার ধারণা, ১০ বছরের মধ্যে প্রায় সব নতুন ডেটা সেন্টার মহাকাশে তৈরি করা হবে। কারণ স্থলভিত্তিক নতুন এনার্জি প্রজেক্ট তৈরি করার ক্ষেত্রে আমরা সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি হচ্ছি।’ তিনি যোগ করেন, এর প্রধান চ্যালেঞ্জ হল শূন্যে বিশাল পরিমাণ তাপ বিতরণ করা এবং উচ্চ বিকিরণ পরিবেশে চিপগুলোকে সচল রাখা।
তবুও, এই খাতের জন্য এখনো খুব প্রাথমিক পর্যায় এবং এমন ডেটা সেন্টার চালু করা যা পৃথিবীতে থাকা ডেটা সেন্টারগুলোর বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে খরচও একটি বড় বিষয়। কারণ পাঠানোর খরচ নির্ভর করে পেলোডের ওজনের ওপর।
লোনস্টার স্যাটেলাইট নির্মাতা সিডাসের সঙ্গে ১২০ মিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি করেছে, যাতে তারা ছয়টি ডেটা স্টোরেজ স্যাটেলাইট তৈরি ও কক্ষপথে স্থাপন এবং এর পরবর্তী সেবা দেয়। তারা পরিকল্পনা করছে, প্রথমটি ২০২৭ সালে লঞ্চ করবে। এটি হবে একটি ১৫-পেটাবাইটের সিস্টেম। চাঁদ থেকে প্রায় ৬০ হাজার কিলোমিটার দূরে থাকবে এটি। পরের পাঁচটি স্যাটেলাইটের প্রতিটি স্টোরেজ ক্ষমতা দ্বিগুণ হবে, একই ওজন ও শক্তি চাহিদা বজায় রাখা হবে। প্রতি লঞ্চে প্রায় ১০ মিলিয়ন ডলার খরচ হতে পারে, যা অনেক স্থলভিত্তিক ডেটা সেন্টারের স্টোরেজের সামগ্রিক ব্যয়ের তুলনায় খুব কম।
তবে কিছু বিশেষজ্ঞ মহাশূন্যে ডেটা সেন্টারের অর্থনীতিক দিক নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি ফর স্পেস রিসার্চের পরিচালক কুয়েন্টিন এ পার্কার বলেন, ‘কার্যকরভাবে ব্যয় বিশ্লেষণ করলে সত্যিই ঠিক বলা যায় না যে, এই ধরনের প্রকল্প দাঁড়াবে। পৃথিবীকেন্দ্রিক এখনো অনেক সমাধান আছে এবং এগুলো সম্ভবত মহাকাশে কিছু রাখার তুলনায় অনেক সস্তা। মহাকাশে রাখার সঙ্গে অনেক সমস্যা জড়িত।’
বিপরীতে মহাকাশে ডেটা সেন্টার স্থাপনের সমর্থকেরা দাবি করেন যে, মহাকাশে ডেটা রাখা ডেটা সেন্টার আক্রমণ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে সুরক্ষা পাবে। তবে পার্কার বলেছেন, মহাকাশের নিজস্ব কিছু ঝুঁকি আছে—রেডিয়েশন, ভ্রাম্যমাণ মহাকাশীয় আবর্জনা এবং মানবসৃষ্ট বস্তু মহাকাশে পাঠানোর পর সেগুলো পরিষ্কার করার কোনো সমাধান না থাকা অন্যতম।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, মহাকাশে মানুষের তৈরি আবর্জনার পরিমাণ বেড়ে চলেছে। তারা আশঙ্কা করছেন, কোনো সংঘর্ষ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রযুক্তি নষ্ট করতে পারে। আরও কিছু মানুষ বলছেন, মহাকাশে ডেটা সেন্টারের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত করা বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে, এবং সোলার ফ্লেয়ারের মতো স্পেস ওয়েদার সার্ভিসকে ব্যাহত করতে পারে। এ ছাড়া বেশ কিছু দেশ ‘কাউন্টারস্পেস প্রযুক্তি’ যেমন স্যাটেলাইট জ্যামিং সিস্টেম তৈরি করছে।
পার্কারের মতে, মহাকাশভিত্তিক ডেটা সেন্টারের সমর্থকেরা হয়তো ‘সুবিধাগুলো অতিরঞ্জিত করে বলছেন এবং বড় অসুবিধাগুলো উল্লেখ করছেন না।’ তবে আল রোমাইসির মতে, আমাদের পৃথিবীর বাইরে তাকানো অপরিহার্য। তিনি বলেন, ‘এই চ্যালেঞ্জগুলো অতিক্রম করা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এর বিপরীত বিষয় হলো প্রযুক্তিগত স্থবিরতা। আমরা এমন একপর্যায়ে পৌঁছাব যেখানে শুধুমাত্র ডেটা সেন্টার চালানোর জন্য আমাদের সম্পদ শেষ হয়ে যাবে।’
সিএনএন থেকে অনূদিত
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনাময় সময়ের মধ্যে সংঘাতে জড়িয়েছে ইরান ও পাকিস্তান। দেশ দুটির মধ্যে ৯০০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। একাংশে পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশ, অন্যদিকে ইরানের সিস্তান ও বেলুচিস্তান প্রদেশ।
১৮ জানুয়ারি ২০২৪বেইজিংয়ে এ সপ্তাহে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেছেন চীনের শীর্ষ নেতারা। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে উত্তাল বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দেশটির ক্ষমতা ধরে রাখা এবং ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু এই বৈঠকের আনুষ্ঠানিক আলোচ্যসূচির বাইরে রয়েছে এমন দুটি প্রশ্ন, যা চীনের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তা তৈরি করছে...
১৪ ঘণ্টা আগেবিশ্বের তিন মহাদেশে এখন এক জটিল ভূরাজনৈতিক খেলা চলছে। এ খেলায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হাতে রেখেছেন সবচেয়ে শক্তিশালী কার্ড। তুলনামূলক দুর্বল অবস্থানে থেকেও খেলার মধ্যে টিকে আছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অন্যদিকে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চাইছেন পুরো বাজি জিততে।
২ দিন আগেগাজায় স্থল অভিযানের শুরু থেকে ইসরায়েল জোর দিয়ে বলেছে, তারা ‘চূড়ান্ত বিজয় অর্জনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ’। টানা এক বছরের বেশি সময় ধরে অবিরাম বিমান হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর সময়ও একই অবস্থান ছিল নেতানিয়াহুর সরকারের। এমনকি গত সপ্তাহে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষরের পরও একই কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে।
২ দিন আগেদ্য নিউইয়র্ক টাইমসের নিবন্ধ
আজকের পত্রিকা ডেস্ক
বেইজিংয়ে এ সপ্তাহে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেছেন চীনের শীর্ষ নেতারা। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে উত্তাল বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দেশটির ক্ষমতা ধরে রাখা এবং ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু এই বৈঠকের আনুষ্ঠানিক আলোচ্যসূচির বাইরে রয়েছে এমন দুটি প্রশ্ন, যা চীনের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তা তৈরি করছে, অথচ কেউ উচ্চারণ করতেও সাহস পাচ্ছে না। প্রশ্নটি হলো, সি চিন পিং আর কত দিন ক্ষমতায় থাকবেন? আর তিনি না থাকলে চীনকে নেতৃত্ব দেবেন কে?
টানা ১৩ বছর ধরে চীনের ক্ষমতা সি চিন পিংয়ের হাতে। এই সময়ে তিনি এমন এক প্রভাব প্রতিষ্ঠা করেছেন, যা মাও সে-তুংয়ের পর আর কেউ পারেননি। এখনো তাঁর পদত্যাগের কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। তবে তাঁর এই ক্ষমতা যদি সঠিকভাবে পরিচালিত না হয়, তবে তা রাজনৈতিক অস্থিরতার বীজ বপন করতে পারে। কারণ, সির হাতে এখনো কোনো উত্তরসূরি নেই, এমনকি নেই কাউকে মনোনীত করার স্পষ্ট সময়সূচিও।
প্রতিটি বছর পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সির অনুপস্থিতিতে চীনের ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে অনিশ্চয়তা আরও গভীর হচ্ছে। যদি তাঁর শারীরিক অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে নেতৃত্বে শূন্যতা দেখা দেয়, তবে নতুন নেতা কি সির কঠোর নীতিতেই অবিচল থাকবেন, নাকি কিছুটা নমনীয় পথে হাঁটবেন; এই প্রশ্ন এখনই ভাবাচ্ছে চীনের নীতিনির্ধারকদের।
সি চিন পিং আসলে সেই পরিচিত দোটানার মুখে; যা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা অনেক কর্তৃত্ববাদী নেতার ক্ষেত্রেই দেখা যায়। উত্তরসূরি মনোনয়ন মানে এক প্রতিদ্বন্দ্বী ক্ষমতাকেন্দ্র তৈরি করা, যা নিজের প্রভাব দুর্বল করতে পারে। আবার উত্তরসূরি নির্ধারণে বিলম্ব করলে তার উত্তরাধিকার ও দলীয় ঐক্য দুটিই বিপদের মুখে পড়তে পারে। সির বয়স এখন ৭২, অর্থাৎ সম্ভাব্য উত্তরসূরি খুঁজতে হলে তাকাতে হবে আরও তরুণ প্রজন্মের দিকে; যাদের এখনো নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে এবং সির আস্থা অর্জন করতে হবে।
যদি শেষ পর্যন্ত সি কোনো উত্তরসূরি বেছে নেন, তবে একটি বিষয় প্রায় নিশ্চিত। আর তা হলো তাঁর প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্য। কারণ, সি একাধিকবার বলেছেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মূল কারণ ছিল ‘ভুল উত্তরসূরি বাছাই’। তাঁর মতে, সংস্কারপন্থী মিখাইল গর্বাচেভকে মনোনয়ন দিয়েই সোভিয়েত নেতৃত্ব নিজের অস্তিত্ব ধ্বংসের পথে ঠেলে দিয়েছিল।
গত শুক্রবারও সেই বার্তাই যেন নতুন করে উচ্চারণ করলেন সি, যখন চীনের সেনাবাহিনী ৯ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে বহিষ্কারের ঘোষণা দেয়। স্পষ্টত এটি ছিল আনুগত্যহীনতার প্রতি সির ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিরই বহিঃপ্রকাশ।
এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের চায়না অ্যানালাইসিস সেন্টারের ফেলো নিল থমাস বলেন, ‘সি নিশ্চয়ই উত্তরাধিকার নির্ধারণের গুরুত্ব জানেন, কিন্তু তিনিও বোঝেন যে এটি এমন একটি প্রক্রিয়া, যা ইঙ্গিত দিলেই নিজের ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। তাঁকে ঘিরে এখনকার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটগুলো হয়তো এতটাই অগ্রাধিকার পাচ্ছে যে উত্তরসূরি নির্ধারণের মতো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ক্রমেই পিছিয়ে যাচ্ছে।’
চীনে সি চিন পিংয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো ধরনের আলোচনা খুবই স্পর্শকাতর এবং সেন্সরশিপের আওতাভুক্ত। শুধু হাতে গোনা কিছু শীর্ষ কর্মকর্তা হয়তো জানেন, তিনি নিজে এই বিষয়ে কী ভাবছেন।
কিন্তু বিদেশি কূটনীতিক, বিশ্লেষক ও বিনিয়োগকারীরা এখন চেয়ে আছেন বেইজিংয়ের চলমান চার দিনের এই বৈঠকের দিকে। উল্লেখ্য, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির এই অধিবেশন শুরু হয়েছে সোমবার থেকে, যেখানে শত শত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা অংশ নিচ্ছেন।
বৈঠকটি সাধারণত বেইজিংয়ে জিংসি হোটেলে গোপনে অনুষ্ঠিত হয়। এবারও সেখানে আগামী পাঁচ বছরের জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা অনুমোদনের আশা করা হচ্ছে। প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও উন্নত উৎপাদনে বৈশ্বিক নেতৃত্ব অর্জনকে সি চিন পিং তাঁর প্রধান লক্ষ্য হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ নীতিকে পরাস্ত করার বিষয়ে সি ও তাঁর সহযোগীরা এখনো দৃঢ় আত্মবিশ্বাসী।
গত মাসে প্রস্তাবিত পরিকল্পনাটির ওপর পার্লামেন্ট সদস্যদের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ‘পরাশক্তিগুলোর মধ্যে কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মূল বিষয় হলো সামগ্রিক সক্ষমতার প্রতিযোগিতা। শুধু নিজেদের অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও সামগ্রিক জাতীয় শক্তি দ্রুত বৃদ্ধি করেই আমরা কৌশলগত সুবিধা অর্জন করতে পারি।’
তাত্ত্বিকভাবে বলতে গেলে, এই সপ্তাহের বৈঠকটি হতে পারত চীনের পরবর্তী প্রজন্মের নেতৃত্বের ইঙ্গিত পাওয়ার একটি সুযোগ; যদি সি তরুণ কর্মকর্তাদের মধ্যে কাউকে আরও দৃশ্যমান ভূমিকায় আনতে চাইতেন। তবে বেশির ভাগ বিশ্লেষকের ধারণা, তিনি এখনই কোনো বড় পদক্ষেপ নেবেন না। অন্তত ২০২৭ সালে তাঁর সম্ভাব্য চতুর্থ পঞ্চবার্ষিকী মেয়াদ শুরু হওয়ার আগে তেমন কিছু ঘটার সম্ভাবনা খুবই কম।
সি চিন পিং ভালোভাবেই জানেন, নেতৃত্বের উত্তরাধিকারের দ্বন্দ্ব কীভাবে কমিউনিস্ট পার্টিকে নাড়িয়ে দিতে পারে। কারণ, এই অভিজ্ঞতা তাঁর পারিবারিক ইতিহাসেই আছে। তাঁর বাবা, একসময়কার জ্যেষ্ঠ নেতা, মাও সে-তুংয়ের হাতে অপসারিত হয়েছিলেন। আর ১৯৮৯ সালের গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের সময় স্থানীয় কর্মকর্তা হিসেবে সি প্রত্যক্ষ করেছেন, কীভাবে শীর্ষ পর্যায়ের মতবিরোধ দেশকে অস্থিরতার দিকে টেনে নিয়েছিল। সেই সময় দেং সিয়াওপিং দল থেকে সাধারণ সম্পাদক ঝাও জিয়াংকে সরিয়ে দিয়ে নতুন উত্তরসূরি হিসেবে জিয়াং জেমিনকে বেছে নেন।
চায়না স্ট্র্যাটেজিস গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ও সাবেক মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা ক্রিস্টোফার কে. জনসন বলেন, ‘চীনের রাজবংশীয় ইতিহাস আর সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির উত্থান-পতনের পাঠে যিনি এতটা নিমগ্ন, তাঁর কাছে উত্তরাধিকার প্রশ্নটা নিঃসন্দেহে এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সি জানেন, নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা নিয়ে ভাবা তাঁর জন্য অপরিহার্য।’
তবে আপাতত সি চিন পিং নিজেই বিশ্বাস করেন, চীনের উত্থান অব্যাহত রাখতে হলে নেতৃত্ব তাঁর হাতে থাকাটাই সবচেয়ে জরুরি। তিনি আগের নেতা হু জিনতাওয়ের স্বেচ্ছা অবসরের নজির ভেঙে দিয়েছেন। বরং ২০১৮ সালে তিনি সংবিধান পরিবর্তন করে প্রেসিডেন্ট পদে দুই মেয়াদের সীমা বাতিল করেছেন। ফলে এখন তিনি অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত রাষ্ট্র, দল ও সেনাবাহিনীর শীর্ষে থাকতে পারেন।
কিন্তু সি যত বছর ক্ষমতায় থাকবেন, ততই এমন একজন উত্তরাধিকারী খুঁজে বের করা কঠিন হয়ে পড়বে, যিনি একই সঙ্গে কয়েক দশক ধরে শাসন করার মতো যথেষ্ট তরুণ হবেন এবং সির ছায়ায় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার মতো পর্যাপ্ত অভিজ্ঞ।
সি তাঁর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের নিয়োগ দিয়েছেন পার্টির সর্বোচ্চ ক্ষমতাকেন্দ্র; সাত সদস্যবিশিষ্ট পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটিতে। বিশেষজ্ঞদের মতে, তাঁদের সবার বয়স এখন ৬০-এর ওপরে, ফলে তাঁরা নিজেরাই উত্তরসূরি হওয়ার পথে বার্ধক্যে পড়েছেন। সি নিজে ২০০৭ সালে ৫৪ বছর বয়সে এই কমিটিতে যোগ দিয়েছিলেন, যা তাঁকে পরবর্তী নেতা হওয়ার অন্যতম প্রধান ইঙ্গিত দিয়েছিল।
ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি সান ডিয়েগোর অধ্যাপক ও চীনের অভিজাত রাজনীতি-বিশেষজ্ঞ ভিক্টর সি বলেন, ‘এমনকি ২০২৭ সালের পরবর্তী কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেসে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে উন্নীত হওয়ার অপেক্ষায় থাকা কর্মকর্তারাও সির উত্তরসূরি হওয়ার জন্য বয়সে অনেকটাই এগিয়ে। অর্থাৎ, সির পরবর্তী উত্তরসূরি হওয়ার মতো তরুণ নন।’
ভিক্টর সির মতে, যদি সি আরও একটি মেয়াদ বা তারও বেশি সময় ক্ষমতায় থাকেন, তবে পরবর্তী নেতা হতে পারেন ১৯৭০-এর দশকে জন্ম নেওয়া কেউ; যিনি এখন প্রাদেশিক প্রশাসনে বা কোনো কেন্দ্রীয় দপ্তরে কাজ করছেন। তাইওয়ানের ন্যাশনাল চেংচি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও কমিউনিস্ট পার্টি-বিশ্লেষক ওয়াং হসিন-হসিয়েন বলেন, ‘পার্টি ইতিমধ্যে এমন কিছু তরুণ কর্মকর্তাকে উন্নীত করছে, যাদের সঙ্গে এই প্রোফাইল মেলে।’
তবে সি তরুণ কর্মকর্তাদের নিয়েও সতর্ক। তিনি বারবার বলেছেন, কর্মকর্তাদের সামান্য দুর্বলতাও সংকটের মুহূর্তে ভয়াবহ বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। তাঁর ভাষায়, ‘একটি বাঁধে ছোট ফাটলই শেষ পর্যন্ত ভয়াবহ ধস নামাতে পারে।’
অধ্যাপক ওয়াং বলেন, ‘সি অন্যদের প্রতি অত্যন্ত অবিশ্বাসী, বিশেষ করে যেসব কর্মকর্তার সঙ্গে তাঁর প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নেই। বয়স যত বাড়ছে, সম্ভাব্য উত্তরসূরিদের প্রজন্মের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ততই কমে আসছে। আর বিষয়টি ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী বছরগুলোতে পার্টির শীর্ষ পর্যায় আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। কারণ সি সম্ভাব্য উত্তরসূরিদের পরীক্ষা করবেন, আবার অনেককে বাদও দেবেন। আর এর ফাঁকে তাঁর আশপাশের কর্মকর্তারা নিজেদের প্রভাব ও টিকে থাকার জন্য আরও তীব্র প্রতিযোগিতায় নামতে পারেন।
অধ্যাপক ভিক্টর সি বলেন, ‘এই পরিস্থিতি উত্তরসূরি নির্ধারণ প্রক্রিয়াকে আরও খণ্ডিত করে তুলবে। কারণ সি একক কাউকে মনোনীত করতে পারবেন না। বরং একদল সম্ভাব্য উত্তরসূরিকে বেছে নিতে হবে, আর সেটি মানেই তাঁদের মধ্যে নিচু মানের ক্ষমতার লড়াই অনিবার্য।’
বেইজিংয়ে এ সপ্তাহে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেছেন চীনের শীর্ষ নেতারা। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে উত্তাল বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দেশটির ক্ষমতা ধরে রাখা এবং ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু এই বৈঠকের আনুষ্ঠানিক আলোচ্যসূচির বাইরে রয়েছে এমন দুটি প্রশ্ন, যা চীনের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তা তৈরি করছে, অথচ কেউ উচ্চারণ করতেও সাহস পাচ্ছে না। প্রশ্নটি হলো, সি চিন পিং আর কত দিন ক্ষমতায় থাকবেন? আর তিনি না থাকলে চীনকে নেতৃত্ব দেবেন কে?
টানা ১৩ বছর ধরে চীনের ক্ষমতা সি চিন পিংয়ের হাতে। এই সময়ে তিনি এমন এক প্রভাব প্রতিষ্ঠা করেছেন, যা মাও সে-তুংয়ের পর আর কেউ পারেননি। এখনো তাঁর পদত্যাগের কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। তবে তাঁর এই ক্ষমতা যদি সঠিকভাবে পরিচালিত না হয়, তবে তা রাজনৈতিক অস্থিরতার বীজ বপন করতে পারে। কারণ, সির হাতে এখনো কোনো উত্তরসূরি নেই, এমনকি নেই কাউকে মনোনীত করার স্পষ্ট সময়সূচিও।
প্রতিটি বছর পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সির অনুপস্থিতিতে চীনের ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে অনিশ্চয়তা আরও গভীর হচ্ছে। যদি তাঁর শারীরিক অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে নেতৃত্বে শূন্যতা দেখা দেয়, তবে নতুন নেতা কি সির কঠোর নীতিতেই অবিচল থাকবেন, নাকি কিছুটা নমনীয় পথে হাঁটবেন; এই প্রশ্ন এখনই ভাবাচ্ছে চীনের নীতিনির্ধারকদের।
সি চিন পিং আসলে সেই পরিচিত দোটানার মুখে; যা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা অনেক কর্তৃত্ববাদী নেতার ক্ষেত্রেই দেখা যায়। উত্তরসূরি মনোনয়ন মানে এক প্রতিদ্বন্দ্বী ক্ষমতাকেন্দ্র তৈরি করা, যা নিজের প্রভাব দুর্বল করতে পারে। আবার উত্তরসূরি নির্ধারণে বিলম্ব করলে তার উত্তরাধিকার ও দলীয় ঐক্য দুটিই বিপদের মুখে পড়তে পারে। সির বয়স এখন ৭২, অর্থাৎ সম্ভাব্য উত্তরসূরি খুঁজতে হলে তাকাতে হবে আরও তরুণ প্রজন্মের দিকে; যাদের এখনো নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে এবং সির আস্থা অর্জন করতে হবে।
যদি শেষ পর্যন্ত সি কোনো উত্তরসূরি বেছে নেন, তবে একটি বিষয় প্রায় নিশ্চিত। আর তা হলো তাঁর প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্য। কারণ, সি একাধিকবার বলেছেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মূল কারণ ছিল ‘ভুল উত্তরসূরি বাছাই’। তাঁর মতে, সংস্কারপন্থী মিখাইল গর্বাচেভকে মনোনয়ন দিয়েই সোভিয়েত নেতৃত্ব নিজের অস্তিত্ব ধ্বংসের পথে ঠেলে দিয়েছিল।
গত শুক্রবারও সেই বার্তাই যেন নতুন করে উচ্চারণ করলেন সি, যখন চীনের সেনাবাহিনী ৯ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে বহিষ্কারের ঘোষণা দেয়। স্পষ্টত এটি ছিল আনুগত্যহীনতার প্রতি সির ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিরই বহিঃপ্রকাশ।
এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের চায়না অ্যানালাইসিস সেন্টারের ফেলো নিল থমাস বলেন, ‘সি নিশ্চয়ই উত্তরাধিকার নির্ধারণের গুরুত্ব জানেন, কিন্তু তিনিও বোঝেন যে এটি এমন একটি প্রক্রিয়া, যা ইঙ্গিত দিলেই নিজের ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। তাঁকে ঘিরে এখনকার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটগুলো হয়তো এতটাই অগ্রাধিকার পাচ্ছে যে উত্তরসূরি নির্ধারণের মতো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ক্রমেই পিছিয়ে যাচ্ছে।’
চীনে সি চিন পিংয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো ধরনের আলোচনা খুবই স্পর্শকাতর এবং সেন্সরশিপের আওতাভুক্ত। শুধু হাতে গোনা কিছু শীর্ষ কর্মকর্তা হয়তো জানেন, তিনি নিজে এই বিষয়ে কী ভাবছেন।
কিন্তু বিদেশি কূটনীতিক, বিশ্লেষক ও বিনিয়োগকারীরা এখন চেয়ে আছেন বেইজিংয়ের চলমান চার দিনের এই বৈঠকের দিকে। উল্লেখ্য, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির এই অধিবেশন শুরু হয়েছে সোমবার থেকে, যেখানে শত শত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা অংশ নিচ্ছেন।
বৈঠকটি সাধারণত বেইজিংয়ে জিংসি হোটেলে গোপনে অনুষ্ঠিত হয়। এবারও সেখানে আগামী পাঁচ বছরের জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা অনুমোদনের আশা করা হচ্ছে। প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও উন্নত উৎপাদনে বৈশ্বিক নেতৃত্ব অর্জনকে সি চিন পিং তাঁর প্রধান লক্ষ্য হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ নীতিকে পরাস্ত করার বিষয়ে সি ও তাঁর সহযোগীরা এখনো দৃঢ় আত্মবিশ্বাসী।
গত মাসে প্রস্তাবিত পরিকল্পনাটির ওপর পার্লামেন্ট সদস্যদের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ‘পরাশক্তিগুলোর মধ্যে কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মূল বিষয় হলো সামগ্রিক সক্ষমতার প্রতিযোগিতা। শুধু নিজেদের অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও সামগ্রিক জাতীয় শক্তি দ্রুত বৃদ্ধি করেই আমরা কৌশলগত সুবিধা অর্জন করতে পারি।’
তাত্ত্বিকভাবে বলতে গেলে, এই সপ্তাহের বৈঠকটি হতে পারত চীনের পরবর্তী প্রজন্মের নেতৃত্বের ইঙ্গিত পাওয়ার একটি সুযোগ; যদি সি তরুণ কর্মকর্তাদের মধ্যে কাউকে আরও দৃশ্যমান ভূমিকায় আনতে চাইতেন। তবে বেশির ভাগ বিশ্লেষকের ধারণা, তিনি এখনই কোনো বড় পদক্ষেপ নেবেন না। অন্তত ২০২৭ সালে তাঁর সম্ভাব্য চতুর্থ পঞ্চবার্ষিকী মেয়াদ শুরু হওয়ার আগে তেমন কিছু ঘটার সম্ভাবনা খুবই কম।
সি চিন পিং ভালোভাবেই জানেন, নেতৃত্বের উত্তরাধিকারের দ্বন্দ্ব কীভাবে কমিউনিস্ট পার্টিকে নাড়িয়ে দিতে পারে। কারণ, এই অভিজ্ঞতা তাঁর পারিবারিক ইতিহাসেই আছে। তাঁর বাবা, একসময়কার জ্যেষ্ঠ নেতা, মাও সে-তুংয়ের হাতে অপসারিত হয়েছিলেন। আর ১৯৮৯ সালের গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের সময় স্থানীয় কর্মকর্তা হিসেবে সি প্রত্যক্ষ করেছেন, কীভাবে শীর্ষ পর্যায়ের মতবিরোধ দেশকে অস্থিরতার দিকে টেনে নিয়েছিল। সেই সময় দেং সিয়াওপিং দল থেকে সাধারণ সম্পাদক ঝাও জিয়াংকে সরিয়ে দিয়ে নতুন উত্তরসূরি হিসেবে জিয়াং জেমিনকে বেছে নেন।
চায়না স্ট্র্যাটেজিস গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ও সাবেক মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা ক্রিস্টোফার কে. জনসন বলেন, ‘চীনের রাজবংশীয় ইতিহাস আর সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির উত্থান-পতনের পাঠে যিনি এতটা নিমগ্ন, তাঁর কাছে উত্তরাধিকার প্রশ্নটা নিঃসন্দেহে এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সি জানেন, নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা নিয়ে ভাবা তাঁর জন্য অপরিহার্য।’
তবে আপাতত সি চিন পিং নিজেই বিশ্বাস করেন, চীনের উত্থান অব্যাহত রাখতে হলে নেতৃত্ব তাঁর হাতে থাকাটাই সবচেয়ে জরুরি। তিনি আগের নেতা হু জিনতাওয়ের স্বেচ্ছা অবসরের নজির ভেঙে দিয়েছেন। বরং ২০১৮ সালে তিনি সংবিধান পরিবর্তন করে প্রেসিডেন্ট পদে দুই মেয়াদের সীমা বাতিল করেছেন। ফলে এখন তিনি অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত রাষ্ট্র, দল ও সেনাবাহিনীর শীর্ষে থাকতে পারেন।
কিন্তু সি যত বছর ক্ষমতায় থাকবেন, ততই এমন একজন উত্তরাধিকারী খুঁজে বের করা কঠিন হয়ে পড়বে, যিনি একই সঙ্গে কয়েক দশক ধরে শাসন করার মতো যথেষ্ট তরুণ হবেন এবং সির ছায়ায় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার মতো পর্যাপ্ত অভিজ্ঞ।
সি তাঁর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের নিয়োগ দিয়েছেন পার্টির সর্বোচ্চ ক্ষমতাকেন্দ্র; সাত সদস্যবিশিষ্ট পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটিতে। বিশেষজ্ঞদের মতে, তাঁদের সবার বয়স এখন ৬০-এর ওপরে, ফলে তাঁরা নিজেরাই উত্তরসূরি হওয়ার পথে বার্ধক্যে পড়েছেন। সি নিজে ২০০৭ সালে ৫৪ বছর বয়সে এই কমিটিতে যোগ দিয়েছিলেন, যা তাঁকে পরবর্তী নেতা হওয়ার অন্যতম প্রধান ইঙ্গিত দিয়েছিল।
ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি সান ডিয়েগোর অধ্যাপক ও চীনের অভিজাত রাজনীতি-বিশেষজ্ঞ ভিক্টর সি বলেন, ‘এমনকি ২০২৭ সালের পরবর্তী কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেসে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে উন্নীত হওয়ার অপেক্ষায় থাকা কর্মকর্তারাও সির উত্তরসূরি হওয়ার জন্য বয়সে অনেকটাই এগিয়ে। অর্থাৎ, সির পরবর্তী উত্তরসূরি হওয়ার মতো তরুণ নন।’
ভিক্টর সির মতে, যদি সি আরও একটি মেয়াদ বা তারও বেশি সময় ক্ষমতায় থাকেন, তবে পরবর্তী নেতা হতে পারেন ১৯৭০-এর দশকে জন্ম নেওয়া কেউ; যিনি এখন প্রাদেশিক প্রশাসনে বা কোনো কেন্দ্রীয় দপ্তরে কাজ করছেন। তাইওয়ানের ন্যাশনাল চেংচি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও কমিউনিস্ট পার্টি-বিশ্লেষক ওয়াং হসিন-হসিয়েন বলেন, ‘পার্টি ইতিমধ্যে এমন কিছু তরুণ কর্মকর্তাকে উন্নীত করছে, যাদের সঙ্গে এই প্রোফাইল মেলে।’
তবে সি তরুণ কর্মকর্তাদের নিয়েও সতর্ক। তিনি বারবার বলেছেন, কর্মকর্তাদের সামান্য দুর্বলতাও সংকটের মুহূর্তে ভয়াবহ বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। তাঁর ভাষায়, ‘একটি বাঁধে ছোট ফাটলই শেষ পর্যন্ত ভয়াবহ ধস নামাতে পারে।’
অধ্যাপক ওয়াং বলেন, ‘সি অন্যদের প্রতি অত্যন্ত অবিশ্বাসী, বিশেষ করে যেসব কর্মকর্তার সঙ্গে তাঁর প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নেই। বয়স যত বাড়ছে, সম্ভাব্য উত্তরসূরিদের প্রজন্মের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ততই কমে আসছে। আর বিষয়টি ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী বছরগুলোতে পার্টির শীর্ষ পর্যায় আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। কারণ সি সম্ভাব্য উত্তরসূরিদের পরীক্ষা করবেন, আবার অনেককে বাদও দেবেন। আর এর ফাঁকে তাঁর আশপাশের কর্মকর্তারা নিজেদের প্রভাব ও টিকে থাকার জন্য আরও তীব্র প্রতিযোগিতায় নামতে পারেন।
অধ্যাপক ভিক্টর সি বলেন, ‘এই পরিস্থিতি উত্তরসূরি নির্ধারণ প্রক্রিয়াকে আরও খণ্ডিত করে তুলবে। কারণ সি একক কাউকে মনোনীত করতে পারবেন না। বরং একদল সম্ভাব্য উত্তরসূরিকে বেছে নিতে হবে, আর সেটি মানেই তাঁদের মধ্যে নিচু মানের ক্ষমতার লড়াই অনিবার্য।’
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনাময় সময়ের মধ্যে সংঘাতে জড়িয়েছে ইরান ও পাকিস্তান। দেশ দুটির মধ্যে ৯০০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। একাংশে পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশ, অন্যদিকে ইরানের সিস্তান ও বেলুচিস্তান প্রদেশ।
১৮ জানুয়ারি ২০২৪কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অগ্রগতি ডেটা সেন্টারের চাহিদা ক্রমশ বাড়াচ্ছে। কিন্তু তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণের জন্য কম্পিউটার থাকা এই গুদামের মতো জায়গাগুলোর জন্য প্রচুর জমি প্রয়োজন এবং এরা বিপুল পরিমাণ শক্তি ব্যবহার করে, যার ফলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) নিঃসরণ হয়।
১ ঘণ্টা আগেবিশ্বের তিন মহাদেশে এখন এক জটিল ভূরাজনৈতিক খেলা চলছে। এ খেলায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হাতে রেখেছেন সবচেয়ে শক্তিশালী কার্ড। তুলনামূলক দুর্বল অবস্থানে থেকেও খেলার মধ্যে টিকে আছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অন্যদিকে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চাইছেন পুরো বাজি জিততে।
২ দিন আগেগাজায় স্থল অভিযানের শুরু থেকে ইসরায়েল জোর দিয়ে বলেছে, তারা ‘চূড়ান্ত বিজয় অর্জনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ’। টানা এক বছরের বেশি সময় ধরে অবিরাম বিমান হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর সময়ও একই অবস্থান ছিল নেতানিয়াহুর সরকারের। এমনকি গত সপ্তাহে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষরের পরও একই কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে।
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
বিশ্বের তিন মহাদেশে এখন এক জটিল ভূরাজনৈতিক খেলা চলছে। এ খেলায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হাতে রেখেছেন সবচেয়ে শক্তিশালী কার্ড। তুলনামূলক দুর্বল অবস্থানে থেকেও খেলার মধ্যে টিকে আছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অন্যদিকে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চাইছেন পুরো বাজি জিততে। আর রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন সতর্ক দৃষ্টিতে দেখছেন সবার চালচলন।
এ খেলার মূল বাজি রুশ অপরিশোধিত তেল। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও এ তেল যাচ্ছে ভারত ও চীনে। ট্রাম্প এখন সেটা বন্ধ করতে চান এবং বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে ওয়াশিংটনের প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চান।
ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পরে থেকে তেলের বাজারে ভারত মস্কোর অন্যতম বড় ক্রেতায় পরিণত হয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলো এড়িয়ে গেলেও ভারত সস্তা দামে রুশ তেল কিনছে—যা ঘরোয়া জ্বালানির দাম স্থিতিশীল রাখতে ও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক হয়েছে। বাইডেন প্রশাসন এ নিয়ে মাঝেমধ্যে সমালোচনা করলেও বৈশ্বিক জ্বালানি স্থিতিশীলতার স্বার্থে বিষয়টি মেনে নিয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ট্রাম্প প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে বেশ নড়েচড়ে বসেছে। রুশ তেল কেনার অপরাধে তারা ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বেশ উত্তেজনাও চলছে। অনেকে বলছেন, এতে ট্রাম্প-মোদির বন্ধুত্ব হয়তো শেষ হয়ে গেছে।
অবশ্য ট্রাম্প দাবি করেছেন, ভারত আর রুশ তেল কিনবে না। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—ট্রাম্প কি ‘ব্লাফ’ দিচ্ছেন, না সত্যিই মোদির কাছ থেকে আশ্বাস পেয়েছেন যে, ভারত রুশ তেল কেনা বন্ধ করবে? ট্রাম্প দাবি করেছেন, ‘ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনছে, এটার জন্য আমি অসন্তুষ্ট ছিলাম। কিন্তু মোদি আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন, তাঁরা আর রুশ তেল কিনবেন না। এটা বড় পদক্ষেপ। এখন আমরা চীনকেও একই কাজ করাতে যাচ্ছি।’
তবে প্রশ্ন দুটি থেকেই যায়—প্রথমত, মোদি কি সত্যিই এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন? দ্বিতীয়ত, বিশ্বের সবচেয়ে বড় রুশ তেল আমদানিকারক চীন কি যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশ মেনে চলবে?
চীন প্রতিদিন প্রায় ১ কোটি ব্যারেল তেল আমদানি করে, যার বড় অংশই আসে রাশিয়া থেকে। ২০২৩ সালে রাশিয়া সৌদি আরবকে ছাড়িয়ে চীনের সবচেয়ে বড় জ্বালানি সরবরাহকারী হয়। এটিই প্রমাণ করে, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা মস্কো-বেইজিং সম্পর্ককে আরও শক্ত করেছে। চীন ট্রাম্পের বক্তব্যকে ‘একতরফা ও অর্থনৈতিক জবরদস্তি’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে পাল্টাব্যবস্থার হুমকি দিয়েছে।
ভারতের প্রতিক্রিয়া ছিল অনেকটা সতর্ক। দিল্লি জানিয়েছে, রুশ তেল আমদানি দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ও দামের ভারসাম্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে ট্রাম্প ও মোদির মধ্যে সত্যিই ফোনালাপ হয়েছিল কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই গেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘জ্বালানির দাম স্থিতিশীল রাখা ও সরবরাহ নিশ্চিত করাই আমাদের নীতির মূল লক্ষ্য। এ জন্য আমরা উৎস বৈচিত্র্য বজায় রেখে বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী তেল আমদানি করি।’
এই অস্পষ্ট মন্তব্যের পর অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন—ফোনালাপ আদৌ হয়েছিল কি না এবং হয়ে থাকলে মোদি সত্যিই কোনো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কি না।
মস্কো অবশ্য স্পষ্ট জানিয়েছে, ভারত তাদের জ্বালানি নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। রুশ সরকার বলেছে, ‘ভারতের অর্থনীতির জন্য রুশ তেল অপরিহার্য। আমরা ভারত সরকারের নীতিকে সম্মান করি এবং তেল ও গ্যাস খাতে সহযোগিতা চালিয়ে যাব।’
উল্লেখ্য, একসময় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ নিজেরাই চেয়েছিল ভারত রুশ তেল কিনুক, যাতে বৈশ্বিক তেলের দাম বেড়ে না যায়। ভারতে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমরা রুশ তেল কেনা নিষিদ্ধ করিনি, বরং মূল্যসীমা নির্ধারণে ভারতকে সহায়তা করতে বলেছিলাম। ভারত ঠিক তা-ই করেছে। এখন এই প্রশাসন বলছে, ভারত নাকি রাশিয়ার যুদ্ধ যন্ত্রে অর্থ জোগাচ্ছে। এটা একধরনের নীতিগত দ্বিচারিতা।’
পশ্চিমা বাজার হারানোর ক্ষতি পোষাতে রাশিয়া ইতিমধ্যে এশীয় ক্রেতাদের আকৃষ্ট করেছে। ভারত ও চীন এখন রাশিয়ার জন্য প্রধান বৈদেশিক মুদ্রার উৎস। একই সঙ্গে ইউরোপও রাশিয়া থেকে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কিনছে।
ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক বহু পুরোনো। সেই স্নায়ুযুদ্ধের সময় থেকে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় মস্কো ছিল ভারতের কূটনৈতিক ও সামরিক মিত্র। এখনো প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, পারমাণবিক প্রকল্প, জ্বালানি বিনিয়োগ ও যৌথ উদ্যোগ—সব ক্ষেত্রে এ সম্পর্ক অটুট।
এ দীর্ঘ সম্পর্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ সত্ত্বেও ভারত সহজে রুশ তেল থেকে সরে আসবে না। তবে দিল্লির জন্য ওয়াশিংটনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত বাণিজ্য ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে। অনেকের মতে, ওয়াশিংটন হয়তো কৃষিপণ্য ও শুল্কে ছাড় দিয়ে ভারতকে রুশ তেল আমদানি কমানোর প্রস্তাব দেবে।
তবে বর্তমানে ভারতের রুশ তেল আমদানি কমার কোনো ইঙ্গিত নেই। সেপ্টেম্বর মাসে ভারত দৈনিক ১৬ লাখ ব্যারেল তেল কিনেছে, যা অক্টোবরে বেড়ে ১৮ লাখ ব্যারেল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব তেল পরিবহন হচ্ছে পশ্চিমাদের নজরদারির বাইরে থাকা ‘শ্যাডো ফ্লিট’ বা তেলবাহী গোপন জাহাজের মাধ্যমে।
বিশ্লেষকেরা সতর্ক করছেন, ভারত হঠাৎ রুশ তেল কেনা কমালে বিশ্ববাজারে সরবরাহ ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে, দাম পড়ে যেতে পারে এবং রাশিয়া আরও বেশি চীনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে।
২০২২ সালে যখন রাশিয়ার কারণে বিশ্বে তেলের দাম বেড়ে যায়, তখন বাইডেন প্রশাসন ভারতকে ছাড় দিয়েছিল, যেন বিশ্বে ঘাটতি না হয়। সে সময় ক্রুড অয়েলের দাম ছিল ব্যারেলপ্রতি ৮০–৯০ ডলার। এখন তা নেমে এসেছে প্রায় ৬১ ডলারে, যা মার্কিন শেল তেল উৎপাদকদের জন্য উদ্বেগের কারণ।
ট্রাম্প হয়তো ভাবছেন, ভারত ও চীনকে রুশ তেল কেনা কমাতে বাধ্য করলে সরবরাহ কমে যাবে, ফলে দাম কিছুটা বাড়বে। কিন্তু তাঁকে খেয়াল রাখতে হবে, এতে যেন তাঁর নিজ দেশের ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত না হন।
তবে এই ‘গেম’ অত্যন্ত সূক্ষ্ম। কারণ, বেশি চাপ দিলে দাম উল্টো বেড়ে যেতে পারে আর কম চাপ দিলে রাশিয়া বিপুল অর্থ উপার্জন চালিয়ে যাবে। যেকোনো ভুল হিসাব মার্কিন কৌশলকে দুর্বল করতে পারে বা মস্কোর অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে পারে। তাই এ মুহূর্তে ট্রাম্পের বাজি সফল হবে কি না, তা সময়ই বলে দেবে। আর মোদির জন্য এটি নিঃসন্দেহে সূক্ষ্ম ভারসাম্যের খেলা। তবে ভারসাম্য রক্ষা করা এত সহজ নয়। রাশিয়া থেকে সরে আসা মানে পুরোনো জোট দুর্বল করা; আবার যুক্তরাষ্ট্রকে উপেক্ষা করা মানে নতুন বাণিজ্য সম্পর্ককে ঝুঁকিতে ফেলা। তাই অর্থনৈতিক বাস্তবতা, ঐতিহাসিক বন্ধুত্ব ও অনিশ্চিত মার্কিন রাজনীতির দাবার বোর্ডে মোদিকে একসঙ্গে চাল দিতে হবে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে।
টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া থেকে অনূদিত
বিশ্বের তিন মহাদেশে এখন এক জটিল ভূরাজনৈতিক খেলা চলছে। এ খেলায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হাতে রেখেছেন সবচেয়ে শক্তিশালী কার্ড। তুলনামূলক দুর্বল অবস্থানে থেকেও খেলার মধ্যে টিকে আছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অন্যদিকে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চাইছেন পুরো বাজি জিততে। আর রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন সতর্ক দৃষ্টিতে দেখছেন সবার চালচলন।
এ খেলার মূল বাজি রুশ অপরিশোধিত তেল। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও এ তেল যাচ্ছে ভারত ও চীনে। ট্রাম্প এখন সেটা বন্ধ করতে চান এবং বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে ওয়াশিংটনের প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চান।
ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পরে থেকে তেলের বাজারে ভারত মস্কোর অন্যতম বড় ক্রেতায় পরিণত হয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলো এড়িয়ে গেলেও ভারত সস্তা দামে রুশ তেল কিনছে—যা ঘরোয়া জ্বালানির দাম স্থিতিশীল রাখতে ও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক হয়েছে। বাইডেন প্রশাসন এ নিয়ে মাঝেমধ্যে সমালোচনা করলেও বৈশ্বিক জ্বালানি স্থিতিশীলতার স্বার্থে বিষয়টি মেনে নিয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ট্রাম্প প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে বেশ নড়েচড়ে বসেছে। রুশ তেল কেনার অপরাধে তারা ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বেশ উত্তেজনাও চলছে। অনেকে বলছেন, এতে ট্রাম্প-মোদির বন্ধুত্ব হয়তো শেষ হয়ে গেছে।
অবশ্য ট্রাম্প দাবি করেছেন, ভারত আর রুশ তেল কিনবে না। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—ট্রাম্প কি ‘ব্লাফ’ দিচ্ছেন, না সত্যিই মোদির কাছ থেকে আশ্বাস পেয়েছেন যে, ভারত রুশ তেল কেনা বন্ধ করবে? ট্রাম্প দাবি করেছেন, ‘ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনছে, এটার জন্য আমি অসন্তুষ্ট ছিলাম। কিন্তু মোদি আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন, তাঁরা আর রুশ তেল কিনবেন না। এটা বড় পদক্ষেপ। এখন আমরা চীনকেও একই কাজ করাতে যাচ্ছি।’
তবে প্রশ্ন দুটি থেকেই যায়—প্রথমত, মোদি কি সত্যিই এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন? দ্বিতীয়ত, বিশ্বের সবচেয়ে বড় রুশ তেল আমদানিকারক চীন কি যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশ মেনে চলবে?
চীন প্রতিদিন প্রায় ১ কোটি ব্যারেল তেল আমদানি করে, যার বড় অংশই আসে রাশিয়া থেকে। ২০২৩ সালে রাশিয়া সৌদি আরবকে ছাড়িয়ে চীনের সবচেয়ে বড় জ্বালানি সরবরাহকারী হয়। এটিই প্রমাণ করে, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা মস্কো-বেইজিং সম্পর্ককে আরও শক্ত করেছে। চীন ট্রাম্পের বক্তব্যকে ‘একতরফা ও অর্থনৈতিক জবরদস্তি’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে পাল্টাব্যবস্থার হুমকি দিয়েছে।
ভারতের প্রতিক্রিয়া ছিল অনেকটা সতর্ক। দিল্লি জানিয়েছে, রুশ তেল আমদানি দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ও দামের ভারসাম্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে ট্রাম্প ও মোদির মধ্যে সত্যিই ফোনালাপ হয়েছিল কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই গেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘জ্বালানির দাম স্থিতিশীল রাখা ও সরবরাহ নিশ্চিত করাই আমাদের নীতির মূল লক্ষ্য। এ জন্য আমরা উৎস বৈচিত্র্য বজায় রেখে বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী তেল আমদানি করি।’
এই অস্পষ্ট মন্তব্যের পর অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন—ফোনালাপ আদৌ হয়েছিল কি না এবং হয়ে থাকলে মোদি সত্যিই কোনো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কি না।
মস্কো অবশ্য স্পষ্ট জানিয়েছে, ভারত তাদের জ্বালানি নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। রুশ সরকার বলেছে, ‘ভারতের অর্থনীতির জন্য রুশ তেল অপরিহার্য। আমরা ভারত সরকারের নীতিকে সম্মান করি এবং তেল ও গ্যাস খাতে সহযোগিতা চালিয়ে যাব।’
উল্লেখ্য, একসময় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ নিজেরাই চেয়েছিল ভারত রুশ তেল কিনুক, যাতে বৈশ্বিক তেলের দাম বেড়ে না যায়। ভারতে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমরা রুশ তেল কেনা নিষিদ্ধ করিনি, বরং মূল্যসীমা নির্ধারণে ভারতকে সহায়তা করতে বলেছিলাম। ভারত ঠিক তা-ই করেছে। এখন এই প্রশাসন বলছে, ভারত নাকি রাশিয়ার যুদ্ধ যন্ত্রে অর্থ জোগাচ্ছে। এটা একধরনের নীতিগত দ্বিচারিতা।’
পশ্চিমা বাজার হারানোর ক্ষতি পোষাতে রাশিয়া ইতিমধ্যে এশীয় ক্রেতাদের আকৃষ্ট করেছে। ভারত ও চীন এখন রাশিয়ার জন্য প্রধান বৈদেশিক মুদ্রার উৎস। একই সঙ্গে ইউরোপও রাশিয়া থেকে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কিনছে।
ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক বহু পুরোনো। সেই স্নায়ুযুদ্ধের সময় থেকে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় মস্কো ছিল ভারতের কূটনৈতিক ও সামরিক মিত্র। এখনো প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, পারমাণবিক প্রকল্প, জ্বালানি বিনিয়োগ ও যৌথ উদ্যোগ—সব ক্ষেত্রে এ সম্পর্ক অটুট।
এ দীর্ঘ সম্পর্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ সত্ত্বেও ভারত সহজে রুশ তেল থেকে সরে আসবে না। তবে দিল্লির জন্য ওয়াশিংটনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত বাণিজ্য ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে। অনেকের মতে, ওয়াশিংটন হয়তো কৃষিপণ্য ও শুল্কে ছাড় দিয়ে ভারতকে রুশ তেল আমদানি কমানোর প্রস্তাব দেবে।
তবে বর্তমানে ভারতের রুশ তেল আমদানি কমার কোনো ইঙ্গিত নেই। সেপ্টেম্বর মাসে ভারত দৈনিক ১৬ লাখ ব্যারেল তেল কিনেছে, যা অক্টোবরে বেড়ে ১৮ লাখ ব্যারেল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব তেল পরিবহন হচ্ছে পশ্চিমাদের নজরদারির বাইরে থাকা ‘শ্যাডো ফ্লিট’ বা তেলবাহী গোপন জাহাজের মাধ্যমে।
বিশ্লেষকেরা সতর্ক করছেন, ভারত হঠাৎ রুশ তেল কেনা কমালে বিশ্ববাজারে সরবরাহ ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে, দাম পড়ে যেতে পারে এবং রাশিয়া আরও বেশি চীনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে।
২০২২ সালে যখন রাশিয়ার কারণে বিশ্বে তেলের দাম বেড়ে যায়, তখন বাইডেন প্রশাসন ভারতকে ছাড় দিয়েছিল, যেন বিশ্বে ঘাটতি না হয়। সে সময় ক্রুড অয়েলের দাম ছিল ব্যারেলপ্রতি ৮০–৯০ ডলার। এখন তা নেমে এসেছে প্রায় ৬১ ডলারে, যা মার্কিন শেল তেল উৎপাদকদের জন্য উদ্বেগের কারণ।
ট্রাম্প হয়তো ভাবছেন, ভারত ও চীনকে রুশ তেল কেনা কমাতে বাধ্য করলে সরবরাহ কমে যাবে, ফলে দাম কিছুটা বাড়বে। কিন্তু তাঁকে খেয়াল রাখতে হবে, এতে যেন তাঁর নিজ দেশের ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত না হন।
তবে এই ‘গেম’ অত্যন্ত সূক্ষ্ম। কারণ, বেশি চাপ দিলে দাম উল্টো বেড়ে যেতে পারে আর কম চাপ দিলে রাশিয়া বিপুল অর্থ উপার্জন চালিয়ে যাবে। যেকোনো ভুল হিসাব মার্কিন কৌশলকে দুর্বল করতে পারে বা মস্কোর অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে পারে। তাই এ মুহূর্তে ট্রাম্পের বাজি সফল হবে কি না, তা সময়ই বলে দেবে। আর মোদির জন্য এটি নিঃসন্দেহে সূক্ষ্ম ভারসাম্যের খেলা। তবে ভারসাম্য রক্ষা করা এত সহজ নয়। রাশিয়া থেকে সরে আসা মানে পুরোনো জোট দুর্বল করা; আবার যুক্তরাষ্ট্রকে উপেক্ষা করা মানে নতুন বাণিজ্য সম্পর্ককে ঝুঁকিতে ফেলা। তাই অর্থনৈতিক বাস্তবতা, ঐতিহাসিক বন্ধুত্ব ও অনিশ্চিত মার্কিন রাজনীতির দাবার বোর্ডে মোদিকে একসঙ্গে চাল দিতে হবে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে।
টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া থেকে অনূদিত
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনাময় সময়ের মধ্যে সংঘাতে জড়িয়েছে ইরান ও পাকিস্তান। দেশ দুটির মধ্যে ৯০০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। একাংশে পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশ, অন্যদিকে ইরানের সিস্তান ও বেলুচিস্তান প্রদেশ।
১৮ জানুয়ারি ২০২৪কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অগ্রগতি ডেটা সেন্টারের চাহিদা ক্রমশ বাড়াচ্ছে। কিন্তু তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণের জন্য কম্পিউটার থাকা এই গুদামের মতো জায়গাগুলোর জন্য প্রচুর জমি প্রয়োজন এবং এরা বিপুল পরিমাণ শক্তি ব্যবহার করে, যার ফলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) নিঃসরণ হয়।
১ ঘণ্টা আগেবেইজিংয়ে এ সপ্তাহে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেছেন চীনের শীর্ষ নেতারা। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে উত্তাল বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দেশটির ক্ষমতা ধরে রাখা এবং ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু এই বৈঠকের আনুষ্ঠানিক আলোচ্যসূচির বাইরে রয়েছে এমন দুটি প্রশ্ন, যা চীনের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তা তৈরি করছে...
১৪ ঘণ্টা আগেগাজায় স্থল অভিযানের শুরু থেকে ইসরায়েল জোর দিয়ে বলেছে, তারা ‘চূড়ান্ত বিজয় অর্জনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ’। টানা এক বছরের বেশি সময় ধরে অবিরাম বিমান হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর সময়ও একই অবস্থান ছিল নেতানিয়াহুর সরকারের। এমনকি গত সপ্তাহে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষরের পরও একই কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে।
২ দিন আগেদ্য ন্যাশনাল ইন্টারেস্টের নিবন্ধ
আজকের পত্রিকা ডেস্ক
গাজায় স্থল অভিযানের শুরু থেকে ইসরায়েল জোর দিয়ে বলেছে, তারা ‘চূড়ান্ত বিজয় অর্জনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ’। টানা এক বছরের বেশি সময় ধরে অবিরাম বিমান হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর সময়ও একই অবস্থান ছিল নেতানিয়াহুর সরকারের। এমনকি গত সপ্তাহে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষরের পরও একই কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র দেখাচ্ছে। গাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে আনুমানিক ১৫ হাজার হামাস যোদ্ধা আবারও সংগঠিত হয়ে উঠে এসেছে। তাদের অনেকে পূর্ণ সশস্ত্র এবং এরই মধ্যে গাজায় প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা শুরু করেছে। গাজা থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদন বলছে, তারা সন্দেহভাজন সহযোগীদের খুঁজে বের করে প্রকাশ্যে হত্যা করছে। অর্থাৎ হামাস ধ্বংস হয়নি, রক্তাক্ত ও বিভক্ত হলেও সংগঠনটি টিকে গেছে।
এ ফলাফল আসলে অপ্রত্যাশিত নয়। বিশ্বের সব প্রভাবশালী সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষজ্ঞ বহু আগে সতর্ক করেছিলেন, হামাসকে কেবল সামরিক শক্তি দিয়ে ধ্বংস করা সম্ভব নয়। হামাস শুধু একটি সশস্ত্র নেটওয়ার্ক বা সুড়ঙ্গ ব্যবস্থা নয়, এটি ফিলিস্তিনি সমাজের গভীরে শিকড় গেড়ে বসা একটি রাজনৈতিক ও আদর্শিক আন্দোলন। যেমনটা যুক্তরাষ্ট্র আল-কায়েদা বা ইসলামিক স্টেটের (আইএস) ক্ষেত্রে দেখেছে, নেতা হত্যা করা যায়, অবকাঠামো গুঁড়িয়ে দেওয়া যায়, এলাকা দখল করা যায়, কিন্তু কোনো আদর্শকে বোমা মেরে ধ্বংস করা যায় না।
ইসরায়েলের ঘোষিত ‘সম্পূর্ণ বিজয়’ শুরু থেকে ছিল এক মরীচিকা। হামাসের নেতৃত্বকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সংগঠনটি এখনো স্থানীয় সেল ও মিলিশিয়া আকারে সক্রিয়। ইসরায়েলি অভিযানে গাজার অসংখ্য সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে, লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত, আবাসিক এলাকা ধ্বংস হয়ে গেছে। কিন্তু যেসব মূল কারণ হামাসের উত্থান ঘটিয়েছিল (বঞ্চনা, রাষ্ট্রহীনতা ও হতাশা), সেগুলো আজও বহাল ও আরও তীব্র।
২০০০-এর দশকের শুরুতে ফাতাহ নেতৃত্বাধীন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অদক্ষতার প্রতীকে পরিণত হয়। কয়েক বছরের ব্যর্থ শান্তি আলোচনা, অর্থনৈতিক পতন ও ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণে সাধারণ ফিলিস্তিনিরা পিএর প্রতি আস্থা হারায়। হামাস এ ক্ষোভকে রাজনৈতিক পুঁজি বানায়, নিজেদের পরিচয় দেয় দুর্নীতিমুক্ত, শৃঙ্খলাবদ্ধ, ন্যায় ও প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে।
২০০৬ সালে গাজায় হামাস নির্বাচনে জয় পায় মূলত ফাতাহর স্থবিরতার কারণে; উগ্র ইসলামপন্থার প্রতি সমর্থন হিসেবে নয়। কিন্তু বিজয়ী হয়ে হামাস ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখার চিরাচরিত একনায়কতান্ত্রিক পথ অনুসরণ করে। প্রতিদ্বন্দ্বীদের গাজা থেকে উৎখাত করে, নির্বাচন বাতিল করে আর জনগণের কল্যাণে ব্যয় না করে বিপুল অর্থ ব্যয় করে সুড়ঙ্গ, রকেট তৈরি ও সশস্ত্র বাহিনীর পেছনে।
তবে এখানে ইসরায়েলের নীতির ভূমিকাও উপেক্ষা করা যায় না। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর ও গাজাকে বিভক্ত রাখার নীতি হাতে নেয়। নেতানিয়াহু জানতেন, একটি ঐক্যবদ্ধ ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব দ্বিরাষ্ট্র বাস্তবায়নের প্রস্তাবকে শক্তিশালী করত আর বিভক্ত নেতৃত্ব সেই সম্ভাবনাকে দুর্বল করেছে। এ কৌশলের অর্থ দাঁড়ায়, পশ্চিম তীর পিএকে দুর্বল করার পাশাপাশি গাজায় হামাসের শাসনকে পরোক্ষভাবে মেনে নেওয়া।
এ স্বল্পমেয়াদি রাজনৈতিক হিসাবনিকাশ দীর্ঘ মেয়াদে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে এনেছে। হামাসকে শক্তিশালী হতে দিয়ে নেতানিয়াহু কার্যত দ্বিরাষ্ট্র সমাধানকে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত রেখেছেন। হামাসের অস্তিত্ব ইসরায়েলের জন্য রাজনৈতিক আপসে না গিয়ে বসতি সম্প্রসারণ ও দখল চালিয়ে যাওয়ার পথে এক সহজ অজুহাত ছিল।
কিন্তু এ নীতি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলায় ভয়াবহভাবে উল্টো ফল দিয়েছে। হামাসের হামলা ইসরায়েলের নিরাপত্তাবোধ ভেঙে দিয়েছে, ভয়াবহ এক যুদ্ধের সূচনা করেছে এবং শান্তিপ্রক্রিয়াকে পুরো এক প্রজন্ম পিছিয়ে দিয়েছে।
গাজার জনগণের মধ্যে হামাসের প্রতি গভীর ভালোবাসা নেই। অনেক ফিলিস্তিনি হামাসকেই দোষারোপ করছে ধ্বংস ও রক্তপাত ডেকে আনার জন্য। কিন্তু বিকল্প রাজনৈতিক নেতৃত্ব বা বিশ্বাসযোগ্য শান্তির রূপরেখা না থাকায় হামাসের বয়ান টিকে আছে। চরমপন্থা বাঁচে হতাশার ওপর আর গাজায় এখন হতাশার প্রাচুর্য।
হামাসকে প্রকৃত অর্থে পরাজিত করার একমাত্র উপায় অস্ত্র নয়, বরং আদর্শিক লড়াই। হামাস যে বক্তব্যের ওপর টিকে আছে—তা হলো, রাষ্ট্রহীন মানুষের জন্য সম্মানের একমাত্র পথ হচ্ছে সহিংসতা। এ বক্তব্য ভেঙে দেওয়ার একমাত্র উপায় হলো ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি বাস্তব, আন্তর্জাতিকভাবে সমর্থিত ও বিশ্বাসযোগ্য দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের পথ তৈরি করা।
এর অর্থ হলো, ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বৈধতা ফিরিয়ে আনা ও একটি নতুন প্রযুক্তিগত বা বহুপক্ষীয় প্রশাসনের মাধ্যমে গাজাকে পুনর্গঠন করা। শহীদ হওয়ার বাসন নয়, শাসন ও উন্নয়নের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নেতৃত্বকে ক্ষমতায় আনা। গাজার রাজনৈতিক সংস্কার ও নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমার শর্তে যুক্তরাষ্ট্র ও আরব বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোকে তহবিল পুনর্গঠনের সুযোগ দেওয়া। ইসরায়েলকেও বুঝতে হবে, স্থায়ী অবরোধ ও দখলদারত্ব নিরাপত্তা বাড়ায় না; প্রকৃত নিরাপত্তা আসে সহাবস্থান থেকে।
ইসরায়েলের অভিযান প্রমাণ করেছে, যেমনটা বিশেষজ্ঞরা বহু আগে বলেছেন, আপনি একটি সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে পারেন, কিন্তু একটি আদর্শকে নয়। হামাসকে সত্যিকার অর্থে পরাজিত করতে হলে ফিলিস্তিনের নতুন প্রজন্মের হৃদয়ে ও চিন্তায় বিশ্বাসযোগ্য শান্তি ও সমৃদ্ধির ভবিষ্যৎ দেখাতে হবে।
ন্যাশনাল ইন্টারেস্টে বিশ্লেষণটি লিখেছেন ড. আজিম ইব্রাহিম। তিনি নিউ লাইনস ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড পলিসির সিনিয়র ডিরেক্টর এবং ‘অথরিটেরিয়ান সেঞ্চুরি: উইমেনস অব আ পোস্ট-লিবারাল ফিউচার’ বইটির লেখক। অনুবাদ করেছেন আবদুল বাছেদ।
গাজায় স্থল অভিযানের শুরু থেকে ইসরায়েল জোর দিয়ে বলেছে, তারা ‘চূড়ান্ত বিজয় অর্জনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ’। টানা এক বছরের বেশি সময় ধরে অবিরাম বিমান হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর সময়ও একই অবস্থান ছিল নেতানিয়াহুর সরকারের। এমনকি গত সপ্তাহে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষরের পরও একই কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র দেখাচ্ছে। গাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে আনুমানিক ১৫ হাজার হামাস যোদ্ধা আবারও সংগঠিত হয়ে উঠে এসেছে। তাদের অনেকে পূর্ণ সশস্ত্র এবং এরই মধ্যে গাজায় প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা শুরু করেছে। গাজা থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদন বলছে, তারা সন্দেহভাজন সহযোগীদের খুঁজে বের করে প্রকাশ্যে হত্যা করছে। অর্থাৎ হামাস ধ্বংস হয়নি, রক্তাক্ত ও বিভক্ত হলেও সংগঠনটি টিকে গেছে।
এ ফলাফল আসলে অপ্রত্যাশিত নয়। বিশ্বের সব প্রভাবশালী সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষজ্ঞ বহু আগে সতর্ক করেছিলেন, হামাসকে কেবল সামরিক শক্তি দিয়ে ধ্বংস করা সম্ভব নয়। হামাস শুধু একটি সশস্ত্র নেটওয়ার্ক বা সুড়ঙ্গ ব্যবস্থা নয়, এটি ফিলিস্তিনি সমাজের গভীরে শিকড় গেড়ে বসা একটি রাজনৈতিক ও আদর্শিক আন্দোলন। যেমনটা যুক্তরাষ্ট্র আল-কায়েদা বা ইসলামিক স্টেটের (আইএস) ক্ষেত্রে দেখেছে, নেতা হত্যা করা যায়, অবকাঠামো গুঁড়িয়ে দেওয়া যায়, এলাকা দখল করা যায়, কিন্তু কোনো আদর্শকে বোমা মেরে ধ্বংস করা যায় না।
ইসরায়েলের ঘোষিত ‘সম্পূর্ণ বিজয়’ শুরু থেকে ছিল এক মরীচিকা। হামাসের নেতৃত্বকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সংগঠনটি এখনো স্থানীয় সেল ও মিলিশিয়া আকারে সক্রিয়। ইসরায়েলি অভিযানে গাজার অসংখ্য সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে, লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত, আবাসিক এলাকা ধ্বংস হয়ে গেছে। কিন্তু যেসব মূল কারণ হামাসের উত্থান ঘটিয়েছিল (বঞ্চনা, রাষ্ট্রহীনতা ও হতাশা), সেগুলো আজও বহাল ও আরও তীব্র।
২০০০-এর দশকের শুরুতে ফাতাহ নেতৃত্বাধীন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অদক্ষতার প্রতীকে পরিণত হয়। কয়েক বছরের ব্যর্থ শান্তি আলোচনা, অর্থনৈতিক পতন ও ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণে সাধারণ ফিলিস্তিনিরা পিএর প্রতি আস্থা হারায়। হামাস এ ক্ষোভকে রাজনৈতিক পুঁজি বানায়, নিজেদের পরিচয় দেয় দুর্নীতিমুক্ত, শৃঙ্খলাবদ্ধ, ন্যায় ও প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে।
২০০৬ সালে গাজায় হামাস নির্বাচনে জয় পায় মূলত ফাতাহর স্থবিরতার কারণে; উগ্র ইসলামপন্থার প্রতি সমর্থন হিসেবে নয়। কিন্তু বিজয়ী হয়ে হামাস ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখার চিরাচরিত একনায়কতান্ত্রিক পথ অনুসরণ করে। প্রতিদ্বন্দ্বীদের গাজা থেকে উৎখাত করে, নির্বাচন বাতিল করে আর জনগণের কল্যাণে ব্যয় না করে বিপুল অর্থ ব্যয় করে সুড়ঙ্গ, রকেট তৈরি ও সশস্ত্র বাহিনীর পেছনে।
তবে এখানে ইসরায়েলের নীতির ভূমিকাও উপেক্ষা করা যায় না। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর ও গাজাকে বিভক্ত রাখার নীতি হাতে নেয়। নেতানিয়াহু জানতেন, একটি ঐক্যবদ্ধ ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব দ্বিরাষ্ট্র বাস্তবায়নের প্রস্তাবকে শক্তিশালী করত আর বিভক্ত নেতৃত্ব সেই সম্ভাবনাকে দুর্বল করেছে। এ কৌশলের অর্থ দাঁড়ায়, পশ্চিম তীর পিএকে দুর্বল করার পাশাপাশি গাজায় হামাসের শাসনকে পরোক্ষভাবে মেনে নেওয়া।
এ স্বল্পমেয়াদি রাজনৈতিক হিসাবনিকাশ দীর্ঘ মেয়াদে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে এনেছে। হামাসকে শক্তিশালী হতে দিয়ে নেতানিয়াহু কার্যত দ্বিরাষ্ট্র সমাধানকে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত রেখেছেন। হামাসের অস্তিত্ব ইসরায়েলের জন্য রাজনৈতিক আপসে না গিয়ে বসতি সম্প্রসারণ ও দখল চালিয়ে যাওয়ার পথে এক সহজ অজুহাত ছিল।
কিন্তু এ নীতি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলায় ভয়াবহভাবে উল্টো ফল দিয়েছে। হামাসের হামলা ইসরায়েলের নিরাপত্তাবোধ ভেঙে দিয়েছে, ভয়াবহ এক যুদ্ধের সূচনা করেছে এবং শান্তিপ্রক্রিয়াকে পুরো এক প্রজন্ম পিছিয়ে দিয়েছে।
গাজার জনগণের মধ্যে হামাসের প্রতি গভীর ভালোবাসা নেই। অনেক ফিলিস্তিনি হামাসকেই দোষারোপ করছে ধ্বংস ও রক্তপাত ডেকে আনার জন্য। কিন্তু বিকল্প রাজনৈতিক নেতৃত্ব বা বিশ্বাসযোগ্য শান্তির রূপরেখা না থাকায় হামাসের বয়ান টিকে আছে। চরমপন্থা বাঁচে হতাশার ওপর আর গাজায় এখন হতাশার প্রাচুর্য।
হামাসকে প্রকৃত অর্থে পরাজিত করার একমাত্র উপায় অস্ত্র নয়, বরং আদর্শিক লড়াই। হামাস যে বক্তব্যের ওপর টিকে আছে—তা হলো, রাষ্ট্রহীন মানুষের জন্য সম্মানের একমাত্র পথ হচ্ছে সহিংসতা। এ বক্তব্য ভেঙে দেওয়ার একমাত্র উপায় হলো ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি বাস্তব, আন্তর্জাতিকভাবে সমর্থিত ও বিশ্বাসযোগ্য দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের পথ তৈরি করা।
এর অর্থ হলো, ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বৈধতা ফিরিয়ে আনা ও একটি নতুন প্রযুক্তিগত বা বহুপক্ষীয় প্রশাসনের মাধ্যমে গাজাকে পুনর্গঠন করা। শহীদ হওয়ার বাসন নয়, শাসন ও উন্নয়নের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নেতৃত্বকে ক্ষমতায় আনা। গাজার রাজনৈতিক সংস্কার ও নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমার শর্তে যুক্তরাষ্ট্র ও আরব বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোকে তহবিল পুনর্গঠনের সুযোগ দেওয়া। ইসরায়েলকেও বুঝতে হবে, স্থায়ী অবরোধ ও দখলদারত্ব নিরাপত্তা বাড়ায় না; প্রকৃত নিরাপত্তা আসে সহাবস্থান থেকে।
ইসরায়েলের অভিযান প্রমাণ করেছে, যেমনটা বিশেষজ্ঞরা বহু আগে বলেছেন, আপনি একটি সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে পারেন, কিন্তু একটি আদর্শকে নয়। হামাসকে সত্যিকার অর্থে পরাজিত করতে হলে ফিলিস্তিনের নতুন প্রজন্মের হৃদয়ে ও চিন্তায় বিশ্বাসযোগ্য শান্তি ও সমৃদ্ধির ভবিষ্যৎ দেখাতে হবে।
ন্যাশনাল ইন্টারেস্টে বিশ্লেষণটি লিখেছেন ড. আজিম ইব্রাহিম। তিনি নিউ লাইনস ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড পলিসির সিনিয়র ডিরেক্টর এবং ‘অথরিটেরিয়ান সেঞ্চুরি: উইমেনস অব আ পোস্ট-লিবারাল ফিউচার’ বইটির লেখক। অনুবাদ করেছেন আবদুল বাছেদ।
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনাময় সময়ের মধ্যে সংঘাতে জড়িয়েছে ইরান ও পাকিস্তান। দেশ দুটির মধ্যে ৯০০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। একাংশে পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশ, অন্যদিকে ইরানের সিস্তান ও বেলুচিস্তান প্রদেশ।
১৮ জানুয়ারি ২০২৪কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অগ্রগতি ডেটা সেন্টারের চাহিদা ক্রমশ বাড়াচ্ছে। কিন্তু তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণের জন্য কম্পিউটার থাকা এই গুদামের মতো জায়গাগুলোর জন্য প্রচুর জমি প্রয়োজন এবং এরা বিপুল পরিমাণ শক্তি ব্যবহার করে, যার ফলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) নিঃসরণ হয়।
১ ঘণ্টা আগেবেইজিংয়ে এ সপ্তাহে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেছেন চীনের শীর্ষ নেতারা। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে উত্তাল বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দেশটির ক্ষমতা ধরে রাখা এবং ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু এই বৈঠকের আনুষ্ঠানিক আলোচ্যসূচির বাইরে রয়েছে এমন দুটি প্রশ্ন, যা চীনের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তা তৈরি করছে...
১৪ ঘণ্টা আগেবিশ্বের তিন মহাদেশে এখন এক জটিল ভূরাজনৈতিক খেলা চলছে। এ খেলায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হাতে রেখেছেন সবচেয়ে শক্তিশালী কার্ড। তুলনামূলক দুর্বল অবস্থানে থেকেও খেলার মধ্যে টিকে আছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অন্যদিকে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চাইছেন পুরো বাজি জিততে।
২ দিন আগে