অনলাইন ডেস্ক
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনাময় সময়ের মধ্যে সংঘাতে জড়িয়েছে ইরান ও পাকিস্তান। দেশ দুটির মধ্যে ৯০০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। একাংশে পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশ, অন্যদিকে ইরানের সিস্তান ও বেলুচিস্তান প্রদেশ।
সীমান্তের অশান্ত বেলুচ অঞ্চলে উভয় দেশই দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গিদের সঙ্গে লড়াই করে আসছে। কিন্তু দুই দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী একই হলেও তাদের নির্মূলে একে অপরের ভূখণ্ডে আক্রমণ করা অত্যন্ত অস্বাভাবিক।
মধ্যপ্রাচ্যে প্রতিরোধী অক্ষ নামে পরিচিত ইরানের মিত্র ও প্রক্সিরা গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী এবং মিত্রদের সঙ্গে যুদ্ধরত অবস্থায় এই হামলার সূত্রপাত হলো। তবে কেন এই সময়েই দেশ দুটি সীমান্ত সংঘাতে জড়াল?
কেন এই সংঘাত?
গতকাল মঙ্গলবার পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে প্রথম হামলা চালায় ইরান। এতে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের দাবি অনুযায়ী—দুই শিশু নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়।
ইরান দাবি করেছে, তারা শুধু পাকিস্তানের মাটিতে ইরানি সন্ত্রাসীদের লক্ষ্যবস্তু করেছে এবং কোনো পাকিস্তানি নাগরিককে লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি।
কিন্তু হামলাটি পাকিস্তানে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। দেশটিতে একে আন্তর্জাতিক আইন এবং পাকিস্তান ও ইরানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের চেতনার লঙ্ঘন বলে অভিহিত করা হচ্ছে।
ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা তাসনিম বলেছে, ইরান সুন্নি জঙ্গি গোষ্ঠী জইশ আল-আদলের শক্ত ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করছে, যা ইরানে জইশ আল-ধুলম বা আর্মি অব জাস্টিস নামে পরিচিত।
বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গি গোষ্ঠীটি ইরান-পাকিস্তান সীমান্তের উভয় দিকে কাজ করে এবং এর আগে ইরানের লক্ষ্যবস্তুতে হামলার দায় স্বীকার করেছে। গোষ্ঠীটির চূড়ান্ত লক্ষ্য ইরানের সিস্তান ও বেলুচিস্তান প্রদেশের স্বাধীনতা।
পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তান সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নি মুসলমানদের দেশ, যেখানে ইরান এবং তার ‘প্রতিরোধী অক্ষ’ মূলত শিয়া গোষ্ঠী।
এর দুই দিন পরে ইরানের সিস্তান এবং বেলুচিস্তানে বেশ কয়েকটি ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ আস্তানায় পাকিস্তান হামলা চালিয়ে একে ‘অত্যন্ত সমন্বিত এবং লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুল সামরিক হামলার সিরিজ’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার হামলার ঘোষণায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বেশ কয়েকজন জঙ্গি নিহত হয়েছে। ইরানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ধারাবাহিক বিস্ফোরণে অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে তিনজন নারী ও চার শিশু রয়েছে।
পাকিস্তান বলেছে, তারা বছরের পর বছর ধরে অভিযোগ করে আসছে যে ইরানে বিচ্ছিন্নতাবাদী যোদ্ধাদের ‘নিরাপদ আশ্রয়স্থল’ রয়েছে এবং আজ হামলার মাধ্যমে বিষয়টি নিজের হাতে নিতে বাধ্য হয়েছে।
এখনই কেন এই হামলা?
সীমান্তে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান ও ইরানের লড়াই নতুন নয়। অশান্ত সীমান্তে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ কয়েক বছর ধরে প্রায়ই হয়েছে। গত মাসে ইরান সিস্তান ও বেলুচিস্তানে একটি পুলিশ স্টেশনে হামলা চালানোর জন্য জইশ আল-আদল জঙ্গিদের অভিযুক্ত করেছে। তাসনিমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই হামলায় ১১ জন ইরানি পুলিশ কর্মকর্তা মারা যান।
একে-অপরকে না জানিয়েই সীমান্তের অপারের গোষ্ঠীর লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করাটা অস্বাভাবিক বিষয়। আর এটি শুরু হলো গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচারে বোমাবর্ষণের সময়, যা এই অঞ্চলজুড়ে প্রভাব ছড়িয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৃহত্তর আঞ্চলিক সংঘাত ইরানকে সীমানার বাইরে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার সুযোগ দেবে, এটি ইরানকে উৎসাহিত করতে পারে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র একদিকে ইরানের সঙ্গে বৈরিতা কমাতে চায়; অন্যদিকে ইরানকে ঠেকাতে নিজের সামরিক শক্তি বাড়াতেও চায়। এ নিয়ে দেশটি দোদুল্যমান অবস্থায় রয়েছে।
এদিকে স্থানীয় সময় ১২ জানুয়ারি ইয়েমেনের রাজধানী সানার উত্তরে সাদা প্রদেশের একটি ভিডিওতে একাধিক বিস্ফোরণ দেখা গেছে।
পাকিস্তানে হামলার আগের দিন ইরাক ও সিরিয়ায় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। দেশটির দাবি—তারা ইসরায়েলি বাহিনী ও ইরানবিরোধী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর একটি গুপ্তচর ঘাঁটি লক্ষ্য করে ওই হামলা চালায়।
একদিকে লেবানন সীমান্তে ইরান-সমর্থিত গ্রুপ হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলের লড়াই চলছে। অপর দিকে ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে যুক্তরাষ্ট্র। হুতি বিদ্রোহীরা গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিশোধের জন্য লোহিত সাগরে পশ্চিমা বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা করে আসছে।
কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনালের সিনিয়র ফেলো করিম সাদজাদপুর বলেছেন, ‘যদি আপনি ইরান এবং এর প্রক্সিদের নিন্দা না করেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে এই কার্যক্রম (লড়াই) চালিয়ে যাওয়া অর্থহীন।’
মধ্যপ্রাচ্যে ইয়েমেন ও সিরিয়ার মতো সংঘাতগ্রস্ত দেশগুলোতে ইরানের প্রভাবশালী অবস্থানের অর্থ—এটি নিজের ক্ষমতার শূন্যতা পূরণ করতে আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা থেকে লাভবান হবে বলেও জানান করিম।
ইরানের এখন বেশ কয়েকটি প্রধান লক্ষ্যে কাজ করে, যার মধ্যে রয়েছে ফিলিস্তিনিদের ক্ষমতায়ন এবং মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকান প্রভাব প্রতিহত করা।
যুক্তরাষ্ট্রের অবসরপ্রাপ্ত আর্মি জেনারেল ও সাবেক ন্যাটো সুপ্রিম মিত্র কমান্ডার ওয়েসলি ক্লার্ক সিএনএনকে বলেছেন, এসব হামলা ও সংঘাতের মধ্যে দিয়ে ইরান এ অঞ্চলে নেতা হিসেবে আবির্ভূত হতে নিজের ভূমিকাকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে।
ক্লার্ক আরও বলেন, ‘দেশটি আঞ্চলিক আধিপত্য খুঁজছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সেখানে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ায় নিজেকে জাহির করতে একে মোক্ষম সুযোগ হিসেবে দেখছে ইরান।’
সীমান্ত সংঘাতের পেছনে কী?
পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ইরান সীমান্তের ত্রিমোহিনীতে বেলুচ জনগোষ্ঠীর (বালুচ নামেও পরিচিত) বসবাস। তারা দীর্ঘকাল ধরে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে আসছে। তবে ইসলামাবাদ ও তেহরানের জাঁতাকলে তারা সর্বদাই পিষ্ট হয়ে এসেছে। এতে দশকের পর দশক ধরে সীমান্তজুড়ে বিদ্রোহ চলছে।
অঞ্চলটি প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। কিন্তু বেলুচ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অভিযোগ, তাঁদের লোকেরা এই অঞ্চলের সবচেয়ে দরিদ্র মানুষ, তাদের সম্প্রদায়ের বরাবরই বঞ্চিত হয়ে আসছে।
অপর দিকে পাকিস্তানের বৃহত্তম প্রদেশ বেলুচিস্তানে গত কয়েক বছরে মারাত্মক সব হামলা হয়েছে। স্বাধীনতার দাবিকারী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এসব হামলায় ইন্ধন দিয়েছে বলে জানা গেছে। তাদেরও অভিযোগ, এই অঞ্চলের খনিজ সম্পদ কেন্দ্রীয় সরকার একচেটিয়াভাবে শোষণ করে।
ইরানও দীর্ঘকাল ধরে কুর্দি, আরব ও বেলুচ সংখ্যালঘুদের বিদ্রোহের মোকাবিলা করে আসছে।
মার্কিন সরকারের ন্যাশনাল কাউন্টার টেররিজম সেন্টার অনুসারে, জইশ আল-আদল ইরানের অভ্যন্তরে সক্রিয় অনেক বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর মধ্যে একটি। এটি মূলত জুনদাল্লাহ নামক একটি বৃহত্তর সুন্নি জঙ্গি গোষ্ঠীর অংশ ছিল। ২০১০ সালে এর নেতাকে ইরান মৃত্যুদণ্ড দিলে গোষ্ঠীটি ভেঙে যায়। এরপর জইশ আল-আদল নামে আত্মপ্রকাশ করে এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর গোষ্ঠীটিকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকাভুক্ত করেছে।
ন্যাশনাল কাউন্টার টেররিজম সেন্টারের মতে, এই দলটি প্রায়ই ইরানের নিরাপত্তাকর্মী, সরকারি কর্মকর্তা এবং শিয়া বেসামরিক ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে হামলা চালায়।
২০১৫ সালে এক হামলায় আট ইরানি সীমান্তরক্ষীকে হত্যার দায় স্বীকার করে গোষ্ঠীটি। ওই সময় তাদের জঙ্গিরা পাকিস্তান থেকে ইরানে প্রবেশ করে বলেও জানায় গোষ্ঠীটি। এরপর ২০১৯ সালে ইরানি সামরিক সদস্যদের বহনকারী একটি বাসে আত্মঘাতী বোমা হামলার দায় স্বীকার করে। ওই হামলায় সিস্তান-বেলুচিস্তানে কমপক্ষে ২৩ জন নিহত হয়েছিল।
গতকাল বুধবার পাকিস্তানে ইরানের হামলার এক দিন পর জইশ আল-আদল সিস্তান ও বেলুচিস্তানে ইরানের সামরিক গাড়িতে হামলার দায় স্বীকার করেছে। এতে হোসেইন আলী জাওয়ানফার নামে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) এক কর্নেল নিহত হয়েছেন।
এরপর কী হবে?
গতকাল ইরানের হামলা কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের জন্ম দিয়েছে। পাকিস্তান ইরান থেকে রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে এবং প্রতিবেশী দেশটিতে সমস্ত উচ্চপর্যায়ের সফর স্থগিত করেছে। একই সঙ্গে পাকিস্তানে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করেছে।
তাসনিম রিপোর্ট বলেছে, এদিকে পাকিস্তানের হামলার পরে ইরানও আজ প্রতিবেশীর কাছে ‘অবিলম্বে ঘটনার ব্যাখ্যা’ চেয়েছে।
নিকটবর্তী দেশগুলোও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। ভারত বলেছে, সন্ত্রাসবাদের প্রতি ভারতের নীতি জিরো টলারেন্স এবং আক্রমণটি ইরান-পাকিস্তানের বিষয়। চীন উভয় দেশকে সংযম অবলম্বন এবং উত্তেজনা এড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে।
গতকাল মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাট মিলার বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্য যাতে পূর্ণমাত্রায় সংঘাত শুরু না হয়—সে জন্য ওয়াশিংটন কাজ করছে।
পাকিস্তান, ইরাক ও সিরিয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি ইরান গত কয়েক দিনে তিনটি প্রতিবেশী দেশের সার্বভৌম সীমান্ত লঙ্ঘন করেছে।’
পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের মিত্র হিসেবে ইরানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভাবছে কি না—জিজ্ঞাসা করা হলে মিলার বলেন, ‘আমরা আশা করি, এই সমস্যা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা যেতে পারে।’
ইরান বা পাকিস্তান উভয়েই যে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোকে শত্রু হিসেবে বিবেচনা করে—তাদের বিরুদ্ধে পূর্ণমাত্রার অভিযানে নামবে কি না তা স্পষ্ট নয়।
উভয় পক্ষই নিজ নিজ হামলার পরে বিবৃতি জারি করেছে, যা উত্তেজনার বৃদ্ধির নয়, বরং হ্রাসের ইঙ্গিত।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইরানকে ‘ভ্রাতৃত্বপূর্ণ দেশ’ বলে অভিহিত করেছে এবং ‘সম্মিলিত সমাধান খুঁজে বের করার’ প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে।
এটি ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যর প্রতিধ্বনি। যিনি এই সপ্তাহের শুরুতে পাকিস্তানকে একটি ‘বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ’ বলে অভিহিত করে বলেছিলেন, তাঁদের হামলা আনুপাতিক এবং শুধু জঙ্গিদের লক্ষ্য করেই।
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনাময় সময়ের মধ্যে সংঘাতে জড়িয়েছে ইরান ও পাকিস্তান। দেশ দুটির মধ্যে ৯০০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। একাংশে পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশ, অন্যদিকে ইরানের সিস্তান ও বেলুচিস্তান প্রদেশ।
সীমান্তের অশান্ত বেলুচ অঞ্চলে উভয় দেশই দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গিদের সঙ্গে লড়াই করে আসছে। কিন্তু দুই দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী একই হলেও তাদের নির্মূলে একে অপরের ভূখণ্ডে আক্রমণ করা অত্যন্ত অস্বাভাবিক।
মধ্যপ্রাচ্যে প্রতিরোধী অক্ষ নামে পরিচিত ইরানের মিত্র ও প্রক্সিরা গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী এবং মিত্রদের সঙ্গে যুদ্ধরত অবস্থায় এই হামলার সূত্রপাত হলো। তবে কেন এই সময়েই দেশ দুটি সীমান্ত সংঘাতে জড়াল?
কেন এই সংঘাত?
গতকাল মঙ্গলবার পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে প্রথম হামলা চালায় ইরান। এতে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের দাবি অনুযায়ী—দুই শিশু নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়।
ইরান দাবি করেছে, তারা শুধু পাকিস্তানের মাটিতে ইরানি সন্ত্রাসীদের লক্ষ্যবস্তু করেছে এবং কোনো পাকিস্তানি নাগরিককে লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি।
কিন্তু হামলাটি পাকিস্তানে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। দেশটিতে একে আন্তর্জাতিক আইন এবং পাকিস্তান ও ইরানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের চেতনার লঙ্ঘন বলে অভিহিত করা হচ্ছে।
ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা তাসনিম বলেছে, ইরান সুন্নি জঙ্গি গোষ্ঠী জইশ আল-আদলের শক্ত ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করছে, যা ইরানে জইশ আল-ধুলম বা আর্মি অব জাস্টিস নামে পরিচিত।
বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গি গোষ্ঠীটি ইরান-পাকিস্তান সীমান্তের উভয় দিকে কাজ করে এবং এর আগে ইরানের লক্ষ্যবস্তুতে হামলার দায় স্বীকার করেছে। গোষ্ঠীটির চূড়ান্ত লক্ষ্য ইরানের সিস্তান ও বেলুচিস্তান প্রদেশের স্বাধীনতা।
পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তান সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নি মুসলমানদের দেশ, যেখানে ইরান এবং তার ‘প্রতিরোধী অক্ষ’ মূলত শিয়া গোষ্ঠী।
এর দুই দিন পরে ইরানের সিস্তান এবং বেলুচিস্তানে বেশ কয়েকটি ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ আস্তানায় পাকিস্তান হামলা চালিয়ে একে ‘অত্যন্ত সমন্বিত এবং লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুল সামরিক হামলার সিরিজ’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার হামলার ঘোষণায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বেশ কয়েকজন জঙ্গি নিহত হয়েছে। ইরানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ধারাবাহিক বিস্ফোরণে অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে তিনজন নারী ও চার শিশু রয়েছে।
পাকিস্তান বলেছে, তারা বছরের পর বছর ধরে অভিযোগ করে আসছে যে ইরানে বিচ্ছিন্নতাবাদী যোদ্ধাদের ‘নিরাপদ আশ্রয়স্থল’ রয়েছে এবং আজ হামলার মাধ্যমে বিষয়টি নিজের হাতে নিতে বাধ্য হয়েছে।
এখনই কেন এই হামলা?
সীমান্তে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান ও ইরানের লড়াই নতুন নয়। অশান্ত সীমান্তে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ কয়েক বছর ধরে প্রায়ই হয়েছে। গত মাসে ইরান সিস্তান ও বেলুচিস্তানে একটি পুলিশ স্টেশনে হামলা চালানোর জন্য জইশ আল-আদল জঙ্গিদের অভিযুক্ত করেছে। তাসনিমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই হামলায় ১১ জন ইরানি পুলিশ কর্মকর্তা মারা যান।
একে-অপরকে না জানিয়েই সীমান্তের অপারের গোষ্ঠীর লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করাটা অস্বাভাবিক বিষয়। আর এটি শুরু হলো গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচারে বোমাবর্ষণের সময়, যা এই অঞ্চলজুড়ে প্রভাব ছড়িয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৃহত্তর আঞ্চলিক সংঘাত ইরানকে সীমানার বাইরে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার সুযোগ দেবে, এটি ইরানকে উৎসাহিত করতে পারে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র একদিকে ইরানের সঙ্গে বৈরিতা কমাতে চায়; অন্যদিকে ইরানকে ঠেকাতে নিজের সামরিক শক্তি বাড়াতেও চায়। এ নিয়ে দেশটি দোদুল্যমান অবস্থায় রয়েছে।
এদিকে স্থানীয় সময় ১২ জানুয়ারি ইয়েমেনের রাজধানী সানার উত্তরে সাদা প্রদেশের একটি ভিডিওতে একাধিক বিস্ফোরণ দেখা গেছে।
পাকিস্তানে হামলার আগের দিন ইরাক ও সিরিয়ায় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। দেশটির দাবি—তারা ইসরায়েলি বাহিনী ও ইরানবিরোধী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর একটি গুপ্তচর ঘাঁটি লক্ষ্য করে ওই হামলা চালায়।
একদিকে লেবানন সীমান্তে ইরান-সমর্থিত গ্রুপ হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলের লড়াই চলছে। অপর দিকে ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে যুক্তরাষ্ট্র। হুতি বিদ্রোহীরা গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিশোধের জন্য লোহিত সাগরে পশ্চিমা বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা করে আসছে।
কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনালের সিনিয়র ফেলো করিম সাদজাদপুর বলেছেন, ‘যদি আপনি ইরান এবং এর প্রক্সিদের নিন্দা না করেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে এই কার্যক্রম (লড়াই) চালিয়ে যাওয়া অর্থহীন।’
মধ্যপ্রাচ্যে ইয়েমেন ও সিরিয়ার মতো সংঘাতগ্রস্ত দেশগুলোতে ইরানের প্রভাবশালী অবস্থানের অর্থ—এটি নিজের ক্ষমতার শূন্যতা পূরণ করতে আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা থেকে লাভবান হবে বলেও জানান করিম।
ইরানের এখন বেশ কয়েকটি প্রধান লক্ষ্যে কাজ করে, যার মধ্যে রয়েছে ফিলিস্তিনিদের ক্ষমতায়ন এবং মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকান প্রভাব প্রতিহত করা।
যুক্তরাষ্ট্রের অবসরপ্রাপ্ত আর্মি জেনারেল ও সাবেক ন্যাটো সুপ্রিম মিত্র কমান্ডার ওয়েসলি ক্লার্ক সিএনএনকে বলেছেন, এসব হামলা ও সংঘাতের মধ্যে দিয়ে ইরান এ অঞ্চলে নেতা হিসেবে আবির্ভূত হতে নিজের ভূমিকাকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে।
ক্লার্ক আরও বলেন, ‘দেশটি আঞ্চলিক আধিপত্য খুঁজছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সেখানে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ায় নিজেকে জাহির করতে একে মোক্ষম সুযোগ হিসেবে দেখছে ইরান।’
সীমান্ত সংঘাতের পেছনে কী?
পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ইরান সীমান্তের ত্রিমোহিনীতে বেলুচ জনগোষ্ঠীর (বালুচ নামেও পরিচিত) বসবাস। তারা দীর্ঘকাল ধরে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে আসছে। তবে ইসলামাবাদ ও তেহরানের জাঁতাকলে তারা সর্বদাই পিষ্ট হয়ে এসেছে। এতে দশকের পর দশক ধরে সীমান্তজুড়ে বিদ্রোহ চলছে।
অঞ্চলটি প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। কিন্তু বেলুচ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অভিযোগ, তাঁদের লোকেরা এই অঞ্চলের সবচেয়ে দরিদ্র মানুষ, তাদের সম্প্রদায়ের বরাবরই বঞ্চিত হয়ে আসছে।
অপর দিকে পাকিস্তানের বৃহত্তম প্রদেশ বেলুচিস্তানে গত কয়েক বছরে মারাত্মক সব হামলা হয়েছে। স্বাধীনতার দাবিকারী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এসব হামলায় ইন্ধন দিয়েছে বলে জানা গেছে। তাদেরও অভিযোগ, এই অঞ্চলের খনিজ সম্পদ কেন্দ্রীয় সরকার একচেটিয়াভাবে শোষণ করে।
ইরানও দীর্ঘকাল ধরে কুর্দি, আরব ও বেলুচ সংখ্যালঘুদের বিদ্রোহের মোকাবিলা করে আসছে।
মার্কিন সরকারের ন্যাশনাল কাউন্টার টেররিজম সেন্টার অনুসারে, জইশ আল-আদল ইরানের অভ্যন্তরে সক্রিয় অনেক বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর মধ্যে একটি। এটি মূলত জুনদাল্লাহ নামক একটি বৃহত্তর সুন্নি জঙ্গি গোষ্ঠীর অংশ ছিল। ২০১০ সালে এর নেতাকে ইরান মৃত্যুদণ্ড দিলে গোষ্ঠীটি ভেঙে যায়। এরপর জইশ আল-আদল নামে আত্মপ্রকাশ করে এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর গোষ্ঠীটিকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকাভুক্ত করেছে।
ন্যাশনাল কাউন্টার টেররিজম সেন্টারের মতে, এই দলটি প্রায়ই ইরানের নিরাপত্তাকর্মী, সরকারি কর্মকর্তা এবং শিয়া বেসামরিক ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে হামলা চালায়।
২০১৫ সালে এক হামলায় আট ইরানি সীমান্তরক্ষীকে হত্যার দায় স্বীকার করে গোষ্ঠীটি। ওই সময় তাদের জঙ্গিরা পাকিস্তান থেকে ইরানে প্রবেশ করে বলেও জানায় গোষ্ঠীটি। এরপর ২০১৯ সালে ইরানি সামরিক সদস্যদের বহনকারী একটি বাসে আত্মঘাতী বোমা হামলার দায় স্বীকার করে। ওই হামলায় সিস্তান-বেলুচিস্তানে কমপক্ষে ২৩ জন নিহত হয়েছিল।
গতকাল বুধবার পাকিস্তানে ইরানের হামলার এক দিন পর জইশ আল-আদল সিস্তান ও বেলুচিস্তানে ইরানের সামরিক গাড়িতে হামলার দায় স্বীকার করেছে। এতে হোসেইন আলী জাওয়ানফার নামে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) এক কর্নেল নিহত হয়েছেন।
এরপর কী হবে?
গতকাল ইরানের হামলা কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের জন্ম দিয়েছে। পাকিস্তান ইরান থেকে রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে এবং প্রতিবেশী দেশটিতে সমস্ত উচ্চপর্যায়ের সফর স্থগিত করেছে। একই সঙ্গে পাকিস্তানে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করেছে।
তাসনিম রিপোর্ট বলেছে, এদিকে পাকিস্তানের হামলার পরে ইরানও আজ প্রতিবেশীর কাছে ‘অবিলম্বে ঘটনার ব্যাখ্যা’ চেয়েছে।
নিকটবর্তী দেশগুলোও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। ভারত বলেছে, সন্ত্রাসবাদের প্রতি ভারতের নীতি জিরো টলারেন্স এবং আক্রমণটি ইরান-পাকিস্তানের বিষয়। চীন উভয় দেশকে সংযম অবলম্বন এবং উত্তেজনা এড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে।
গতকাল মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাট মিলার বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্য যাতে পূর্ণমাত্রায় সংঘাত শুরু না হয়—সে জন্য ওয়াশিংটন কাজ করছে।
পাকিস্তান, ইরাক ও সিরিয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি ইরান গত কয়েক দিনে তিনটি প্রতিবেশী দেশের সার্বভৌম সীমান্ত লঙ্ঘন করেছে।’
পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের মিত্র হিসেবে ইরানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভাবছে কি না—জিজ্ঞাসা করা হলে মিলার বলেন, ‘আমরা আশা করি, এই সমস্যা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা যেতে পারে।’
ইরান বা পাকিস্তান উভয়েই যে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোকে শত্রু হিসেবে বিবেচনা করে—তাদের বিরুদ্ধে পূর্ণমাত্রার অভিযানে নামবে কি না তা স্পষ্ট নয়।
উভয় পক্ষই নিজ নিজ হামলার পরে বিবৃতি জারি করেছে, যা উত্তেজনার বৃদ্ধির নয়, বরং হ্রাসের ইঙ্গিত।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইরানকে ‘ভ্রাতৃত্বপূর্ণ দেশ’ বলে অভিহিত করেছে এবং ‘সম্মিলিত সমাধান খুঁজে বের করার’ প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে।
এটি ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যর প্রতিধ্বনি। যিনি এই সপ্তাহের শুরুতে পাকিস্তানকে একটি ‘বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ’ বলে অভিহিত করে বলেছিলেন, তাঁদের হামলা আনুপাতিক এবং শুধু জঙ্গিদের লক্ষ্য করেই।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকায় অনিশ্চয়তার কারণে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের ওপর চীনের প্রভাব বাড়তে পারে কি না, তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। মার্কিন সমর্থন কমে গেলে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের কার্যকারিতা দুর্বল হতে পারে এবং চীনসহ অন্যান্য দেশ এ সুযোগ নেবে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।
৭ ঘণ্টা আগেরাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পরিকল্পনা করছে ইউরোপের দেশগুলো। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র যে এটি করবে না, তা স্পষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ইউরোপ কি আসলেই এটি নিশ্চিত করতে পারবে?
১০ ঘণ্টা আগেহোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে রীতিমতো তুলোধুনো করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। ট্রাম্প ও তাঁর দলের বক্তব্য থেকে এটি স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র আর ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যয়ভারের বড় অংশ বহনে রাজি নয়।
১৫ ঘণ্টা আগেসামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে শেয়ার করা এক পোস্টে রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের উপপ্রধান ও সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ ওই ঘটনাকে ‘ওভাল অফিসে জেলেনস্কির ওপর নির্মম তিরস্কার’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘ট্রাম্প ওই কোকেনসেবী ভাঁড়ের মুখের ওপর সত্যিটা বলে দিয়েছেন যে, কিয়েভ সরকার তৃতীয়...
২ দিন আগে