আব্দুর রহমান
ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা আজকের নয়। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ফিলিস্তিনিরা অগণিত বার উচ্ছেদ, নির্যাতন, জাতিগত নিধন এবং নিপীড়নের শিকার হয়েছে। সর্বশেষ এতে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে গাজার কসাইখ্যাত ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। আর তাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে উগ্র ইহুদি জাতীয়তাবাদ বা জায়োনিজম।
গাজায় সর্বশেষ আগ্রাসন শুরু হয় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর। এরপর মাঝে দুই দফায় অল্প কিছু সময়ের জন্য বিরতি থাকলেও ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৪৯ হাজার মানুষ। আহত হয়েছেন ১ লাখ ১২ হাজারের বেশি এবং নিখোঁজ প্রায় ১৪ হাজার। এই নিখোঁজদের বেশিরভাগই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন। তাঁদের পচা-গলা লাশের দুর্গন্ধে ভারী হয়ে উঠেছে গাজার বাতাস। সেই সঙ্গে বাড়তি ভীতি যোগ করেছে টনকে টন বারুদের গন্ধ।
কিন্তু গাজায় ইসরায়েলি এই বর্বরতার কারণ কী? মোটা দাগে দুটি লাইনে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা যায়। এক. ইসরায়েলি জায়নবাদের আকাঙ্ক্ষা। যেখানে, পুরো ফিলিস্তিন (১৯৪৮ সালের আগের) ভূখণ্ডকে ইসরায়েলিদের ‘প্রতিশ্রুত ভূমি’ মনে করা হয় এবং এখানে ফিলিস্তিনিদের দেখা হয় দখলদার হিসেবে। অথচ, এই ভূখণ্ডে এখন যেসব ইসরায়েলি বসবাস করছে, তাদের বেশির ভাগই ইউরোপসহ দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা অভিবাসী। আরব ইহুদি সেখানে খুব সামান্যই।
জায়নবাদ অনুসারে, ইহুদিরা প্রতিশ্রুত ইসরায়েল ভূখণ্ড প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যেখানে কোনো মুসলমান থাকবে না। আর তাই অখণ্ড ইসরায়েল প্রতিষ্ঠায় বাধা ফিলিস্তিনি মুসলমানেরা। কাজেই, তাদের উচ্ছেদ করতে হবে কিংবা যেকোনো মূল্যে নিকেশ করতে হবে। প্রয়োজনে চালাতে হবে ‘জাতিগত নিধন’। ঠিক সেই কাজটিই গাজায় করছে ইসরায়েল।
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা এরই মধ্যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের ওপর ক্রমবর্ধমান যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা চালানোর এবং মাতৃ ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা সুবিধাগুলোর পদ্ধতিগত ধ্বংসের মাধ্যমে ‘গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড’ চালানোর অভিযোগ তুলেছেন।
ইসরায়েল তো সরাসরি হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছেই, পাশাপাশি দেশটি পদ্ধতিগতভাবেও গণহত্যামূলক কাজ করে যাচ্ছে। যেমন, দেশটি ফিলিস্তিনিরা যাতে সন্তান জন্ম দিতে না পারে সে ব্যবস্থাও করছে ইসরায়েল। জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘রোম সংবিধি (স্ট্যাটিউট) এবং গণহত্যা কনভেনশন অনুসারে গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ডকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায় এবং এই দুটিই ইসরায়েল চালিয়ে যাচ্ছে ফিলিস্তিনে।’ এতে আরও বলা হয়েছে, ‘ফিলিস্তিনিদের ধ্বংস সাধনের উদ্দেশ্যে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রার পরিস্থিতি চাপিয়ে দেওয়া এবং সন্তান জন্মদান ঠেকাতে পদক্ষেপ আরোপ করা হচ্ছে।’
এখানেই থেমে নেই ইসরায়েল। দেশটি গাজাবাসীদের আফ্রিকার দেশগুলোতে স্থানান্তর করতে চায়। জায়নিবাদের এই আকাঙ্ক্ষাই যেন প্রতিফলিত হচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখ থেকে। তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে দিয়ে নতুন করে নির্মাণের কথা বলছেন। ট্রাম্পের সেই প্রস্তাব সমর্থন করেছেন নেতানিয়াহু।
কিছুদিন আগেই, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল গাজার লোকদের আফ্রিকার দেশ সুদান, সোমালিয়া এবং এর বিচ্ছিন্ন অঞ্চল সোমালিল্যান্ডে স্থানান্তরের কথা বলেছে। তারও আগে, খবর বেরিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল গাজাবাসীদের মরোক্কো ও সোমালিয়ায় স্থানান্তর করতে চায়। যদিও মরক্কো এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু সোমালিয়া বা সুদান এ বিষয়ে এখনো কিছু বলেনি। আরব বিশ্বের দেশগুলো গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের নিন্দা করেছে, এমনকি গাজার বিকল্প পুনর্গঠন পরিকল্পনাও গ্রহণ করেছে। কিন্তু যেটি আসলে করা প্রয়োজন—যুদ্ধ বন্ধ—সেটিই তারা করেনি।
যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনি অভিবাসী আহমেদ ইবসাইস বলেন, ‘গাজা এবং অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে আজ যে বর্ণবাদ, উগ্রবাদ এবং গণহত্যার অভিপ্রায় দেখা যাচ্ছে, তার জন্য শুধু নেতানিয়াহুকে দায়ী করা যায় না এবং করা উচিতও নয়।’ তাঁর মতে, এসবের পেছনে মূল কারণ হলো, ইসরায়েল রাষ্ট্র এবং এর জায়নবাদ। তাঁর মতে, ‘কেবল নেতানিয়াহুকে ফিলিস্তিনি জনগণের অতীত ও বর্তমানের দুঃখ-দুর্দশা এবং নিপীড়নের জন্য দোষারোপ করার মাধ্যমে, তারা এই মিথ্যাটিকে বাঁচিয়ে রাখে যে—ইসরায়েল জাতিগত নির্মূলের পরিবর্তে প্রগতিশীল আদর্শের ওপর নির্মিত হয়েছিল। কিন্তু আসলে তা নয়।’
শুরু থেকেই ইসরায়েল রাষ্ট্র তার দীর্ঘমেয়াদি অস্তিত্বকে ফিলিস্তিনের জাতিগত নির্মূল, ফিলিস্তিনি পরিচয়কে সম্পূর্ণ মুছে ফেলা এবং নিজেদের ভূমিতে টিকে থাকা ফিলিস্তিনিদের দমন-পীড়নের শর্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ১৯৬৯ সালে ইসরায়েলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী গোল্ডা মেয়ার মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টে এক নিবন্ধে লিখেছিলেন, ‘There is no such thing as Palestinians’, অর্থাৎ, ‘ফিলিস্তিনি বলে কিছু নেই।’ অর্থাৎ, খোদ ইসরায়েল রাষ্ট্রই ফিলিস্তিনের অস্তিত্ব স্বীকার করে না।
গাজা আগ্রাসনে ইসরায়েল রাষ্ট্রের জায়নবাদী নীতি এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক স্বার্থ এক বিন্দুতে মিলেছে। ফলে, তার জন্য গাজায় আগ্রাসন চালানোর রাজনৈতিক সমর্থন জোগাড় করা তুলনামূলক সহজই হয়েছে। যদিও অনেক ইসরায়েলিই গাজায় আগ্রাসনের বিপক্ষে এবং তাঁরা চান, ইসরায়েল গাজা থেকে হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের ফিরিয়ে আনুক এবং যুদ্ধ শেষ করুক। কিন্তু নেতানিয়াহু তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বাঁচাতে এসব জনআকাঙ্ক্ষা উপেক্ষা করছেন।
নেতানিয়াহু তাঁর ক্ষমতা ধরে রাখতে কট্টর জায়নবাদী নেতা ও সরকারের জোটসঙ্গী বেজালেল স্মটরিচ, ইসরায়েল কাৎজসহ অনেকের রাজনৈতিক সমর্থন লাভের আশায় যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। বলা ভালো, প্রায় দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে তিনি আবারও গাজায় আগ্রাসন শুরু করেছেন। এতে তাঁর নগদ লাভ হয়েছে দুটি: প্রথমত, তাঁর বিরুদ্ধে চলমান দুর্নীতির মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের আইনি প্রক্রিয়া থেকে আপাতত বিরতি পেয়েছেন। দ্বিতীয়ত, তাঁর সরকারের জোটসঙ্গী দলগুলোর নেতারা আগ্রাসন পুনরায় শুরু করায় তাঁর পিঠ চাপড়ে দিয়েছেন।
নেতানিয়াহু চলতি মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন ২০২২ সালে। সেই হিসাবে তাঁর মেয়াদের তৃতীয় বছর চলে। তিনি চাইবেন মেয়াদ পূর্ণ করতে এবং আগামী মেয়াদে নির্বাচিত হতে। তবে এ জন্য, তাঁর রাজনৈতিক জোটসঙ্গীদের সমর্থন দরকার। নইলে যেকোনো সময় তাঁর সরকারের পতন হতে পারে।
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন নেতানিয়াহুকে রাজনৈতিক পুঁজি দিয়েছে। গাজায় গণহত্যা শুরুর আগে, ইসরায়েলিরা কয়েক মাস ধরে নেতানিয়াহুর হাতে ‘দেশের আইনি ব্যবস্থা এবং গণতন্ত্রের ওপর আক্রমণ’ বলে মনে করা পদক্ষেপগুলোর বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ করেছে। কিন্তু তারা কখনোই তাদের রাষ্ট্র ও সামরিক বাহিনীর হাতে ফিলিস্তিনিদের ভূমি দখল, হত্যা এবং নৃশংসতার বিরুদ্ধে এত সংখ্যায় এবং এত জোরালোভাবে প্রতিবাদ করেনি।
গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা শুরুর ঠিক এক মাস পর, ২০২৩ সালের নভেম্বরে মাত্র ১ দশমিক ৮ শতাংশ ইসরায়েলি বলেছিল, তারা বিশ্বাস করে—ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজায় অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করছে। আর গণহত্যার পাঁচ মাস পর গিয়ে প্রায় ৪০ শতাংশ ইসরায়েলি বলেছে, তারা গাজায় ইহুদি বসতি স্থাপন প্রকল্প পুনরায় চালু করার পক্ষে।
হাজার হাজার মৃত ও পঙ্গু ফিলিস্তিনির ছবি ইসরায়েলিদের কাছে তেমন অর্থ বহন করে না বলেই মনে হয়। প্লাস্টিকের ব্যাগে সন্তানের দেহাবশেষ বহনকারী বাবার আহাজারির ভিডিও বা নিহত শিশুদের রক্তাক্ত দেহের ওপর মায়েদের কান্নার ভিডিও তাদের মনে দাগ কাটে না। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া ক্ষুধার্ত শিশু বা মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষের মধ্যে অখাদ্য গ্রহণে বাধ্য হওয়া শিশুদের বিষক্রিয়ার ঘটনা তাদের স্পর্শ করে না। তাদের সামরিক বাহিনী নিরীহদের ওপর যে নির্যাতন চালাচ্ছে, সে বিষয়ে তারা কেবল উদাসীনই নয়—তাদের মধ্যে হাজার হাজার মানুষ ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের কাছে কোনো সাহায্য যাতে পৌঁছাতে না পারে তা নিশ্চিত করতে সীমান্তে বিক্ষোভও করেছে। আর এসব বিষয়ই নেতানিয়াহুর হারানো রাজনৈতিক পুঁজি ফিরে পাওয়ার হাতিয়ার। ফলে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া তাঁর জন্য লাভজনক ব্যবসায়।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, জানুয়ারিতেই স্পষ্ট ছিল যে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে হওয়া তিন পর্যায়ের চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে অগ্রসর হওয়া অত্যন্ত কঠিন হবে। আজ তা প্রায় অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে। এই চুক্তি নিয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রকাশ্য সংশয় ছিল। সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে রাজি হলেও তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন, বাইডেন ও ট্রাম্প প্রশাসন উভয়ই আলোচনা ব্যর্থ হলে যুদ্ধ ফের শুরু করার অনুমতি দিয়েছে।
নেতানিয়াহু মধ্যস্থতাকারী মিসর ও কাতারের নির্ধারিত সময়সীমাকে উপেক্ষা করে আলোচনার পথে না গিয়ে, ওয়াশিংটনে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করাকে অগ্রাধিকার দেন। এতে শুধু যুদ্ধবিরতির মূল চুক্তির মৃত্যুঘণ্টাই বাজেনি, বরং নেতানিয়াহু যুদ্ধ ফের শুরুর মাধ্যমে তাঁর মন্ত্রিসভার কট্টর ডানপন্থী অংশের সমর্থনও দৃঢ় করেছেন, যাদের সমর্থনের ওপর তাঁর রাজনৈতিক নির্ভর করছে। এই গোষ্ঠীগুলো যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া এবং হামাসকে সম্পূর্ণ বিনাশ করার পক্ষে, যদিও ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তারাই বলেছেন, এটি অসম্ভব।
নেতানিয়াহু বরাবর নিরাপত্তা ও গোয়েন্দাপ্রধানদের পাশ কাটানোর চেষ্টা করেন। এরই মধ্যে তিনি সেদিক থেকে নজর সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন এবং সাময়িকভাবে হলেও তাঁর দুর্নীতি মামলার শুনানি পেছানোর সুযোগ পেয়েছেন। বিরোধী রাজনীতিক, ইয়াইর গোলান বলেন, ‘সীমান্তে লড়াইরত সেনা ও গাজায় আটক বন্দীরা কেবল তাঁর (নেতানিয়াহুর) টিকে থাকার খেলায় দাবার ঘুঁটি।’
ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ের লাপিদ বলেছেন, ‘গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শেষ করতে হলে নেতানিয়াহুকে রাজনৈতিক মূল্য দিতে হবে এবং তিনি সেই মূল্য দিতে ইচ্ছুক নন।’ তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল সরকার কিছুই করতে চায় না, বা গাজায় বন্দী ব্যক্তিদের উদ্ধারের জন্য তাদের সমস্ত শক্তি বা ক্ষমতা দিয়ে কাজ করছে না।’
হামাসের হাতে বন্দীদের পরিবারগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী একটি সংগঠন জানিয়েছে, তাদের সবচেয়ে বড় আশঙ্কা সত্যি হয়েছে। তারা বলেছে, ‘ইসরায়েল সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে বন্দীদের ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
ইসরায়েলি জিম্মিদের পরিবার, বিরোধী রাজনীতিকদের কথা থেকে এটি স্পষ্ট যে, নেতানিয়াহু তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ বাঁচাতেই হাজারো মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে যাচ্ছেন।
এত কিছুর পরও, গাজাবাসী মনোবল হারায়নি। কিন্তু শোক তাদের পাথর বানিয়ে দিয়েছে। তাদের শোকগাঁথা লিপিবদ্ধ করার জন্য কোনো শব্দই যেন যথেষ্ট নয়! প্রতিনিয়ত তারা ইসরায়েলের যে বর্বরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, প্রতিদিন যে পরিমাণ মানুষ তাদের স্বজন হারাচ্ছে, সেই শোক, ব্যথা এবং হাহাকার আসলে কোনো শব্দ দিয়ে বর্ণনা করা সম্ভব নয়।
কিন্তু গাজাবাসীর আর্তনাদ, হাহাকার ‘গাজার কসাই’—যেমনটা বলেছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান—নেতানিয়াহুর হৃদয়ে পৌঁছায় না। তাঁর কাছে এবং ইসরায়েলের কাছে, স্বার্থটাই বড়। সর্বাগ্রে জায়নবাদ এবং নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার। এখানে গাজাবাসীর কোনো স্থান নেই। গোল্ডা মেয়ারের ভাষায় বললে, গাজা (ফিলিস্তিন) বলে কিছু নেই!
লেখক: আজকের পত্রিকার সহ–সম্পাদক
তথ্যসূত্র: আনাদোলু এজেন্সি, এক্সিওস, টাইমস অব ইসরায়েল, আল-জাজিরা, এপি, ডেইলি সাবাহ ও এএফপি
ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা আজকের নয়। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ফিলিস্তিনিরা অগণিত বার উচ্ছেদ, নির্যাতন, জাতিগত নিধন এবং নিপীড়নের শিকার হয়েছে। সর্বশেষ এতে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে গাজার কসাইখ্যাত ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। আর তাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে উগ্র ইহুদি জাতীয়তাবাদ বা জায়োনিজম।
গাজায় সর্বশেষ আগ্রাসন শুরু হয় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর। এরপর মাঝে দুই দফায় অল্প কিছু সময়ের জন্য বিরতি থাকলেও ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৪৯ হাজার মানুষ। আহত হয়েছেন ১ লাখ ১২ হাজারের বেশি এবং নিখোঁজ প্রায় ১৪ হাজার। এই নিখোঁজদের বেশিরভাগই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন। তাঁদের পচা-গলা লাশের দুর্গন্ধে ভারী হয়ে উঠেছে গাজার বাতাস। সেই সঙ্গে বাড়তি ভীতি যোগ করেছে টনকে টন বারুদের গন্ধ।
কিন্তু গাজায় ইসরায়েলি এই বর্বরতার কারণ কী? মোটা দাগে দুটি লাইনে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা যায়। এক. ইসরায়েলি জায়নবাদের আকাঙ্ক্ষা। যেখানে, পুরো ফিলিস্তিন (১৯৪৮ সালের আগের) ভূখণ্ডকে ইসরায়েলিদের ‘প্রতিশ্রুত ভূমি’ মনে করা হয় এবং এখানে ফিলিস্তিনিদের দেখা হয় দখলদার হিসেবে। অথচ, এই ভূখণ্ডে এখন যেসব ইসরায়েলি বসবাস করছে, তাদের বেশির ভাগই ইউরোপসহ দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা অভিবাসী। আরব ইহুদি সেখানে খুব সামান্যই।
জায়নবাদ অনুসারে, ইহুদিরা প্রতিশ্রুত ইসরায়েল ভূখণ্ড প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যেখানে কোনো মুসলমান থাকবে না। আর তাই অখণ্ড ইসরায়েল প্রতিষ্ঠায় বাধা ফিলিস্তিনি মুসলমানেরা। কাজেই, তাদের উচ্ছেদ করতে হবে কিংবা যেকোনো মূল্যে নিকেশ করতে হবে। প্রয়োজনে চালাতে হবে ‘জাতিগত নিধন’। ঠিক সেই কাজটিই গাজায় করছে ইসরায়েল।
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা এরই মধ্যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের ওপর ক্রমবর্ধমান যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা চালানোর এবং মাতৃ ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা সুবিধাগুলোর পদ্ধতিগত ধ্বংসের মাধ্যমে ‘গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড’ চালানোর অভিযোগ তুলেছেন।
ইসরায়েল তো সরাসরি হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছেই, পাশাপাশি দেশটি পদ্ধতিগতভাবেও গণহত্যামূলক কাজ করে যাচ্ছে। যেমন, দেশটি ফিলিস্তিনিরা যাতে সন্তান জন্ম দিতে না পারে সে ব্যবস্থাও করছে ইসরায়েল। জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘রোম সংবিধি (স্ট্যাটিউট) এবং গণহত্যা কনভেনশন অনুসারে গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ডকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায় এবং এই দুটিই ইসরায়েল চালিয়ে যাচ্ছে ফিলিস্তিনে।’ এতে আরও বলা হয়েছে, ‘ফিলিস্তিনিদের ধ্বংস সাধনের উদ্দেশ্যে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রার পরিস্থিতি চাপিয়ে দেওয়া এবং সন্তান জন্মদান ঠেকাতে পদক্ষেপ আরোপ করা হচ্ছে।’
এখানেই থেমে নেই ইসরায়েল। দেশটি গাজাবাসীদের আফ্রিকার দেশগুলোতে স্থানান্তর করতে চায়। জায়নিবাদের এই আকাঙ্ক্ষাই যেন প্রতিফলিত হচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখ থেকে। তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে দিয়ে নতুন করে নির্মাণের কথা বলছেন। ট্রাম্পের সেই প্রস্তাব সমর্থন করেছেন নেতানিয়াহু।
কিছুদিন আগেই, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল গাজার লোকদের আফ্রিকার দেশ সুদান, সোমালিয়া এবং এর বিচ্ছিন্ন অঞ্চল সোমালিল্যান্ডে স্থানান্তরের কথা বলেছে। তারও আগে, খবর বেরিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল গাজাবাসীদের মরোক্কো ও সোমালিয়ায় স্থানান্তর করতে চায়। যদিও মরক্কো এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু সোমালিয়া বা সুদান এ বিষয়ে এখনো কিছু বলেনি। আরব বিশ্বের দেশগুলো গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের নিন্দা করেছে, এমনকি গাজার বিকল্প পুনর্গঠন পরিকল্পনাও গ্রহণ করেছে। কিন্তু যেটি আসলে করা প্রয়োজন—যুদ্ধ বন্ধ—সেটিই তারা করেনি।
যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনি অভিবাসী আহমেদ ইবসাইস বলেন, ‘গাজা এবং অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে আজ যে বর্ণবাদ, উগ্রবাদ এবং গণহত্যার অভিপ্রায় দেখা যাচ্ছে, তার জন্য শুধু নেতানিয়াহুকে দায়ী করা যায় না এবং করা উচিতও নয়।’ তাঁর মতে, এসবের পেছনে মূল কারণ হলো, ইসরায়েল রাষ্ট্র এবং এর জায়নবাদ। তাঁর মতে, ‘কেবল নেতানিয়াহুকে ফিলিস্তিনি জনগণের অতীত ও বর্তমানের দুঃখ-দুর্দশা এবং নিপীড়নের জন্য দোষারোপ করার মাধ্যমে, তারা এই মিথ্যাটিকে বাঁচিয়ে রাখে যে—ইসরায়েল জাতিগত নির্মূলের পরিবর্তে প্রগতিশীল আদর্শের ওপর নির্মিত হয়েছিল। কিন্তু আসলে তা নয়।’
শুরু থেকেই ইসরায়েল রাষ্ট্র তার দীর্ঘমেয়াদি অস্তিত্বকে ফিলিস্তিনের জাতিগত নির্মূল, ফিলিস্তিনি পরিচয়কে সম্পূর্ণ মুছে ফেলা এবং নিজেদের ভূমিতে টিকে থাকা ফিলিস্তিনিদের দমন-পীড়নের শর্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ১৯৬৯ সালে ইসরায়েলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী গোল্ডা মেয়ার মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টে এক নিবন্ধে লিখেছিলেন, ‘There is no such thing as Palestinians’, অর্থাৎ, ‘ফিলিস্তিনি বলে কিছু নেই।’ অর্থাৎ, খোদ ইসরায়েল রাষ্ট্রই ফিলিস্তিনের অস্তিত্ব স্বীকার করে না।
গাজা আগ্রাসনে ইসরায়েল রাষ্ট্রের জায়নবাদী নীতি এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক স্বার্থ এক বিন্দুতে মিলেছে। ফলে, তার জন্য গাজায় আগ্রাসন চালানোর রাজনৈতিক সমর্থন জোগাড় করা তুলনামূলক সহজই হয়েছে। যদিও অনেক ইসরায়েলিই গাজায় আগ্রাসনের বিপক্ষে এবং তাঁরা চান, ইসরায়েল গাজা থেকে হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের ফিরিয়ে আনুক এবং যুদ্ধ শেষ করুক। কিন্তু নেতানিয়াহু তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বাঁচাতে এসব জনআকাঙ্ক্ষা উপেক্ষা করছেন।
নেতানিয়াহু তাঁর ক্ষমতা ধরে রাখতে কট্টর জায়নবাদী নেতা ও সরকারের জোটসঙ্গী বেজালেল স্মটরিচ, ইসরায়েল কাৎজসহ অনেকের রাজনৈতিক সমর্থন লাভের আশায় যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। বলা ভালো, প্রায় দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে তিনি আবারও গাজায় আগ্রাসন শুরু করেছেন। এতে তাঁর নগদ লাভ হয়েছে দুটি: প্রথমত, তাঁর বিরুদ্ধে চলমান দুর্নীতির মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের আইনি প্রক্রিয়া থেকে আপাতত বিরতি পেয়েছেন। দ্বিতীয়ত, তাঁর সরকারের জোটসঙ্গী দলগুলোর নেতারা আগ্রাসন পুনরায় শুরু করায় তাঁর পিঠ চাপড়ে দিয়েছেন।
নেতানিয়াহু চলতি মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন ২০২২ সালে। সেই হিসাবে তাঁর মেয়াদের তৃতীয় বছর চলে। তিনি চাইবেন মেয়াদ পূর্ণ করতে এবং আগামী মেয়াদে নির্বাচিত হতে। তবে এ জন্য, তাঁর রাজনৈতিক জোটসঙ্গীদের সমর্থন দরকার। নইলে যেকোনো সময় তাঁর সরকারের পতন হতে পারে।
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন নেতানিয়াহুকে রাজনৈতিক পুঁজি দিয়েছে। গাজায় গণহত্যা শুরুর আগে, ইসরায়েলিরা কয়েক মাস ধরে নেতানিয়াহুর হাতে ‘দেশের আইনি ব্যবস্থা এবং গণতন্ত্রের ওপর আক্রমণ’ বলে মনে করা পদক্ষেপগুলোর বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ করেছে। কিন্তু তারা কখনোই তাদের রাষ্ট্র ও সামরিক বাহিনীর হাতে ফিলিস্তিনিদের ভূমি দখল, হত্যা এবং নৃশংসতার বিরুদ্ধে এত সংখ্যায় এবং এত জোরালোভাবে প্রতিবাদ করেনি।
গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা শুরুর ঠিক এক মাস পর, ২০২৩ সালের নভেম্বরে মাত্র ১ দশমিক ৮ শতাংশ ইসরায়েলি বলেছিল, তারা বিশ্বাস করে—ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজায় অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করছে। আর গণহত্যার পাঁচ মাস পর গিয়ে প্রায় ৪০ শতাংশ ইসরায়েলি বলেছে, তারা গাজায় ইহুদি বসতি স্থাপন প্রকল্প পুনরায় চালু করার পক্ষে।
হাজার হাজার মৃত ও পঙ্গু ফিলিস্তিনির ছবি ইসরায়েলিদের কাছে তেমন অর্থ বহন করে না বলেই মনে হয়। প্লাস্টিকের ব্যাগে সন্তানের দেহাবশেষ বহনকারী বাবার আহাজারির ভিডিও বা নিহত শিশুদের রক্তাক্ত দেহের ওপর মায়েদের কান্নার ভিডিও তাদের মনে দাগ কাটে না। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া ক্ষুধার্ত শিশু বা মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষের মধ্যে অখাদ্য গ্রহণে বাধ্য হওয়া শিশুদের বিষক্রিয়ার ঘটনা তাদের স্পর্শ করে না। তাদের সামরিক বাহিনী নিরীহদের ওপর যে নির্যাতন চালাচ্ছে, সে বিষয়ে তারা কেবল উদাসীনই নয়—তাদের মধ্যে হাজার হাজার মানুষ ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের কাছে কোনো সাহায্য যাতে পৌঁছাতে না পারে তা নিশ্চিত করতে সীমান্তে বিক্ষোভও করেছে। আর এসব বিষয়ই নেতানিয়াহুর হারানো রাজনৈতিক পুঁজি ফিরে পাওয়ার হাতিয়ার। ফলে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া তাঁর জন্য লাভজনক ব্যবসায়।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, জানুয়ারিতেই স্পষ্ট ছিল যে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে হওয়া তিন পর্যায়ের চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে অগ্রসর হওয়া অত্যন্ত কঠিন হবে। আজ তা প্রায় অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে। এই চুক্তি নিয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রকাশ্য সংশয় ছিল। সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে রাজি হলেও তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন, বাইডেন ও ট্রাম্প প্রশাসন উভয়ই আলোচনা ব্যর্থ হলে যুদ্ধ ফের শুরু করার অনুমতি দিয়েছে।
নেতানিয়াহু মধ্যস্থতাকারী মিসর ও কাতারের নির্ধারিত সময়সীমাকে উপেক্ষা করে আলোচনার পথে না গিয়ে, ওয়াশিংটনে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করাকে অগ্রাধিকার দেন। এতে শুধু যুদ্ধবিরতির মূল চুক্তির মৃত্যুঘণ্টাই বাজেনি, বরং নেতানিয়াহু যুদ্ধ ফের শুরুর মাধ্যমে তাঁর মন্ত্রিসভার কট্টর ডানপন্থী অংশের সমর্থনও দৃঢ় করেছেন, যাদের সমর্থনের ওপর তাঁর রাজনৈতিক নির্ভর করছে। এই গোষ্ঠীগুলো যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া এবং হামাসকে সম্পূর্ণ বিনাশ করার পক্ষে, যদিও ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তারাই বলেছেন, এটি অসম্ভব।
নেতানিয়াহু বরাবর নিরাপত্তা ও গোয়েন্দাপ্রধানদের পাশ কাটানোর চেষ্টা করেন। এরই মধ্যে তিনি সেদিক থেকে নজর সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন এবং সাময়িকভাবে হলেও তাঁর দুর্নীতি মামলার শুনানি পেছানোর সুযোগ পেয়েছেন। বিরোধী রাজনীতিক, ইয়াইর গোলান বলেন, ‘সীমান্তে লড়াইরত সেনা ও গাজায় আটক বন্দীরা কেবল তাঁর (নেতানিয়াহুর) টিকে থাকার খেলায় দাবার ঘুঁটি।’
ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ের লাপিদ বলেছেন, ‘গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শেষ করতে হলে নেতানিয়াহুকে রাজনৈতিক মূল্য দিতে হবে এবং তিনি সেই মূল্য দিতে ইচ্ছুক নন।’ তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল সরকার কিছুই করতে চায় না, বা গাজায় বন্দী ব্যক্তিদের উদ্ধারের জন্য তাদের সমস্ত শক্তি বা ক্ষমতা দিয়ে কাজ করছে না।’
হামাসের হাতে বন্দীদের পরিবারগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী একটি সংগঠন জানিয়েছে, তাদের সবচেয়ে বড় আশঙ্কা সত্যি হয়েছে। তারা বলেছে, ‘ইসরায়েল সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে বন্দীদের ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
ইসরায়েলি জিম্মিদের পরিবার, বিরোধী রাজনীতিকদের কথা থেকে এটি স্পষ্ট যে, নেতানিয়াহু তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ বাঁচাতেই হাজারো মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে যাচ্ছেন।
এত কিছুর পরও, গাজাবাসী মনোবল হারায়নি। কিন্তু শোক তাদের পাথর বানিয়ে দিয়েছে। তাদের শোকগাঁথা লিপিবদ্ধ করার জন্য কোনো শব্দই যেন যথেষ্ট নয়! প্রতিনিয়ত তারা ইসরায়েলের যে বর্বরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, প্রতিদিন যে পরিমাণ মানুষ তাদের স্বজন হারাচ্ছে, সেই শোক, ব্যথা এবং হাহাকার আসলে কোনো শব্দ দিয়ে বর্ণনা করা সম্ভব নয়।
কিন্তু গাজাবাসীর আর্তনাদ, হাহাকার ‘গাজার কসাই’—যেমনটা বলেছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান—নেতানিয়াহুর হৃদয়ে পৌঁছায় না। তাঁর কাছে এবং ইসরায়েলের কাছে, স্বার্থটাই বড়। সর্বাগ্রে জায়নবাদ এবং নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার। এখানে গাজাবাসীর কোনো স্থান নেই। গোল্ডা মেয়ারের ভাষায় বললে, গাজা (ফিলিস্তিন) বলে কিছু নেই!
লেখক: আজকের পত্রিকার সহ–সম্পাদক
তথ্যসূত্র: আনাদোলু এজেন্সি, এক্সিওস, টাইমস অব ইসরায়েল, আল-জাজিরা, এপি, ডেইলি সাবাহ ও এএফপি
কর্মী সংকটের অজুহাত দেখিয়ে বাংলাদেশের অনুরোধ সত্ত্বেও স্বাভাবিক পরিমাণে চিকিৎসা ভিসা ইস্যু করতে অনীহা দেখাচ্ছে ভারত। এই বিষয়টি মূলত, ক্রমশ অবনতি হওয়া দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কেরই প্রতিফলন। ছয়টি সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে, এই পরিস্থিতি চীনের জন্য বিরল সুযোগ এনে দিয়েছে। দেশটি চিকিৎসা ভ্রমণের...
১০ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী সপ্তাহে চীন সফরে যাবেন। সফরে তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা দেওয়ার আয়োজন করতে যাচ্ছে। এটি মূলত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে চীনের কূটনৈতিক স্বীকৃতি ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের প্রচেষ্টার অংশ। এটি এমন এক সময়ে ঘটতে যাচ্ছে যখন ভারতের...
১৩ ঘণ্টা আগেশেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্কে উন্নতি হয়েছে। কয়েক দশকের বৈরী সম্পর্কের অবসান ঘটিয়ে দুই দেশ সরাসরি বাণিজ্য শুরু করেছে। গত মাসে পাকিস্তান থেকে চাল আমদানি শুরু করেছে বাংলাদেশ।
২ দিন আগেট্রাম্প কি মিয়ানমারের জান্তার সঙ্গে যোগাযোগের পদক্ষেপ নেবেন এবং ‘এসএসি’–এর সঙ্গে মিত্রতার সূত্র খুঁজতে শুরু করবেন? এ ক্ষেত্রে তাঁর যুক্তি হতে পারে, এসএসি–কে আলাদা করা এবং এর নিন্দা করা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে কেবল চীনের দিকে আরও ঠেলে দেবে। মিয়ানমারের আগের জান্তা সরকারের সময়ও মার্কিন নীতি নির্ধারকদে
৪ দিন আগে