Ajker Patrika

ভারত-পাকিস্তান সংকটের ৭৫ বছর

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৬ আগস্ট ২০২২, ১০: ২৮
ভারত-পাকিস্তান সংকটের ৭৫ বছর

রক্তক্ষয়ী দেশভাগের মাধ্যমে ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি আলাদা রাষ্ট্র তৈরি হয়। লাখো মানুষের প্রাণের বিনিময়ে জন্ম হয় দেশ দুটির। তাই তো স্বাধীনতা দিবসের গৌরবের পাশাপাশি আছে আক্ষেপ আর হাহাকারও। দেশ ভাগের পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। বিভিন্ন সময় ঘটেছে বড় ধরনের সংঘাত। ভারত ও পাকিস্তানের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তিতে দুই দেশের মধ্যকার চলমান উত্তেজনার গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটনার দিকে ফিরে দেখা যাক। 

সংঘাতের শুরু (১৯৪৭ সাল) 
১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট, ভারতীয় উপমহাদেশ ভাগ হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি দেশের জন্ম হয়। ইংরেজদের শাসন থেকে মুক্তির আনন্দের পাশাপাশি এক নির্মম সাম্প্রদায়িক হিংসারও সাক্ষী হয় উপমহাদেশ। এক লাখের বেশি মানুষের প্রাণহানির পাশাপাশি বাস্তুচ্যুত হয় প্রায় ১৫ লাখ। এর পর থেকে আজ অবধি দুই দেশের মধ্যে বৈরিতা বিদ্যমান। একাধিকবার যুদ্ধেও জড়িয়েছে দেশ দুটি। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রথম যুদ্ধ হয় দেশভাগের কিছু পরেই। যুদ্ধের কারণ ছিল কাশ্মীর। 

কাশ্মীর সংকট (১৯৪৯) 
১৯৪৭ সালের শেষ দিকে হিমালয়ের একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল ‘কাশ্মীর’ নিয়ে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। ১৯৪৯ সালের জানুয়ারিতে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি হয়। সে সময়ে জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিভক্ত করে দেওয়া হয়। ভারত জম্মু-কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ লাভ করে, পাকিস্তান আজাদ কাশ্মীর ও গিলগিত-বালতিস্তান অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ পায়। তবে উভয় দেশই উপত্যকার পুরো মালিকানা দাবি করে আসছে। 

কাশ্মীর ইস্যুতে বড় যুদ্ধ (১৯৬৫) 
কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বড় ধরনের যুদ্ধ হয় এবার। ১৯৬৫ সালে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে দুই দেশ সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। প্রথমে উভয় দেশের সীমান্ত বাহিনী সংঘর্ষে জড়িত হয়। পরে উভয় দেশের সশস্ত্রবাহিনীও জড়িয়ে পড়ে সংঘাতে। তবে সাত সপ্তাহ পরই ওই যুদ্ধ শেষ হয়। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় দুই দেশ। 

পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের স্বাধীন হওয়ার যুদ্ধে সহায়তা করতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধে অংশ নেয় ভারতবাংলাদেশের স্বাধীনতা (১৯৭১) 
দুই দেশ ১৯৭১ সালে তৃতীয়বার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের স্বাধীন হওয়ার যুদ্ধে সহায়তা করতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধে অংশ নেয় ভারত। পাকিস্তানের ভেতরে হামলা করে ভারতীয় বিমানবাহিনী। বাংলাদেশের স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে ৯ মাসের যুদ্ধ শেষ হয়। যুদ্ধে প্রাণ হারান ৩০ লাখ মানুষ। 

১৯৬৫ সালে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে দুই দেশ সংঘাতে জড়িয়ে পড়েপরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা (১৯৭৪) 
১৯৭৪ সালে ভারত প্রথমবার পরমাণু অস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালায়। তবে আন্তর্জাতিক মহলে এই ঘটনা তখন জানাজানি হয়নি। ১৯৯৮ সালের আগ পর্যন্ত পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা জনসম্মুখে আসেনি। ভারত সেই বছর পাঁচটি এবং পাকিস্তান ছয়টি পরীক্ষা চালায়। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বে পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে ঢুকে পড়ে ভারত ও পাকিস্তান। 

কারগিলে অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে পাল্টা লড়াইয়ে নামে ভারতউপত্যকায় লড়াই (১৯৮৯) 
ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে কাশ্মীর উপত্যকায় সশস্ত্র লড়াই শুরু হয় ১৯৮৯ সালে। অঞ্চলটিতে নিরাপত্তা বাহিনী এবং কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে যুদ্ধের ফলে পরবর্তী কয়েক বছরে হাজার হাজার বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং বেসামরিক লোক নিহত হয়। 

কারগিল যুদ্ধ (১৯৯৯) 
পাকিস্তানের সেনারা কারগিল পর্বতে ভারতের একটি সামরিক চৌকি দখল করে নেয়। অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে পাল্টা লড়াইয়ে নামে ভারত। শুরু হয় যুদ্ধ। ১০ সপ্তাহব্যাপী ওই লড়াইয়ে দুই পক্ষের হাজারখানেক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। যুক্তরাষ্ট্রের চাপে কারগিল যুদ্ধের ইতি টানতে বাধ্য হয় ভারত-পাকিস্তান। 

২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালায় ভারতমুম্বাইয়ে হামলা (২০০৮) 
মুম্বাইয়ের প্রধান রেলওয়ে স্টেশন, বিলাসবহুল একটি হোটেল এবং একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে জঙ্গি হামলায় ১৬৬ জন নিহত হন। ভারতের অভিযোগ, ওই হামলার পেছনে রয়েছে পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তইয়েবা। 

সার্জিক্যাল স্ট্রাইক (২০১৬) 
কাশ্মীরকে ঘিরে চিরবৈরী ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে লড়াই হয়েছে। তবে সীমান্ত পেরিয়ে অন্য দেশের ভেতরে গিয়ে হামলা সেবারই প্রথম। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালায় ভারত। এর সপ্তাহ দু-এক আগে সীমান্তে ভারতীয় সেনা ফাঁড়িতে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলায় ১৯ জওয়ান নিহত হন। ভারত জানায়, পাকিস্তানের কাশ্মীরের জঙ্গিদের ওপর ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালিয়েছে তারা। যদিও এ রকম কোনো হামলার কথা অস্বীকার করে ইসলামাবাদ। 

২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি কাশ্মীরের পুলওয়ামায় এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় ভারতীয় একটি আধাসামরিক বাহিনীর ৪১ জওয়ান নিহত হনপুলওয়ামা সংকট (২০১৯) 
২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি কাশ্মীরের পুলওয়ামায় এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় ভারতীয় একটি আধাসামরিক বাহিনীর ৪১ জওয়ান নিহত হন। পাকিস্তানভিত্তিক জইশ-ই-মোহাম্মদ হামলার দায় স্বীকার করে। পরে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে পাকিস্তান অংশে বিমান হামলায় চালায় ভারতীয় বিমানবাহিনী। এতে ভারত হতাহতের দাবি করলেও পাকিস্তান তা অস্বীকার করে।

মাউন্টব্যাটেনের পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্রিটিশ আইনজীবী স্যার শেরিল র‍্যাডক্লিফ ‘র‍্যাডক্লিফ লাইন’ নামক ভারত বিভক্তের যে সীমান্তরেখা এঁকেছিলেন, তার জন্য তাঁকে মাত্র পাঁচ সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছিল। পর্যাপ্ত সময়ের অভাবে কাশ্মীর অঞ্চলের সীমান্তরেখা নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে তিনি যে ভুলটি করে ফেলেন, তার খেসারত আজও দিয়ে চলেছে ভারত ও পাকিস্তানের বাসিন্দারা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত