
ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রে ‘স্টেট ভিজিট’ বা রাষ্ট্রীয় সফরে রয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। এই সফরেও তিনি যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। উইনস্টন চার্চিল, নেলসন ম্যান্ডেলার মতো অল্প কয়েকজন রাষ্ট্রনেতা এই সম্মান পেয়েছেন। জো ও জিল বাইডেন বুধবার রাতে মোদীকে হোয়াইট হাউসে নৈশভোজে আপ্যায়ন করেছেন। বোঝা যাচ্ছে, এই সফরকে যুক্তরাষ্ট্র যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে। মোদীর সফরকে এত গুরুত্ব কেন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র? তা নিয়ে ভারতের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছেন ডয়চে ভেলের গৌতম হোড়।
দিল্লির কূটনীতি বিশেষজ্ঞ প্রবীণ সাংবাদিক প্রণয় শর্মা ডয়েচে ভেলেকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র রেড কার্পেট বিছিয়ে দিয়েছে মোদির জন্য। নানা ধরনের সফর হয়, ওয়ার্কিং ভিজিট হয়। অল্প সময়ের জন্য এসে কিছু বিষয়ে আলোচনা করে রাষ্ট্রনেতা চলে যান। মধ্যাহ্নভোজ বা এ ধরনের একটা অনুষ্ঠান থাকে সেখানে।
তিনি বলেন, ‘কিন্তু স্টেট ভিজিটে যিনি আসবেন, তাঁকে ২১টি তোপধ্বনি দিয়ে হোয়াইট হাউসে স্বাগত জানানো হয়। সাউথ লনে সবার সঙ্গে আলাপ করানো হয়। নৈশভোজ বা ব্যাংকোয়েট দেন প্রেসিডেন্ট। সেখানে অ্যামেরিকার বিভিন্ন ক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বরা থাকেন।’
প্রণয়ের মতে, মোদির প্রতি কংগ্রেসের উভয় পক্ষের সমর্থন আছে। শুধু বাইডেন বা তার দল নয়, বিরোধী রিপাবলিকানরাও তাঁকে স্বাগত জানাচ্ছেন। ভারতের সঙ্গে তাঁরাও সুসম্পর্ক চান। মোদিকে যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দিতে ডেকেছেন হাউসের স্পিকার ম্য়াকার্থি। ফলে বাইডেন ও রিপাবলিকান দুই পক্ষই চাইছে দুই দেশের সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হোক।
মার্কিন কর্তৃপক্ষ যেন প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে ভারতের মানবাধিকারের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে, তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক ডজন কংগ্রেস সদস্য চিঠি লিখে অনুরোধ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে প্রণয় শর্মা বলেন, ‘গণতন্ত্রে বিভিন্ন ধরনের মত থাকবে। সবার মত এক হবে তা নয়। অ্যামেরিকা ভাইব্র্যান্ট গণতন্ত্র। তাদের নিজেদের প্রেসিডেন্টকে নিয়েও কত মত রয়েছে। তাই নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে সরকারি একটা মত থাকতে পারে, কিছু প্রতিনিধির অন্য মত থাকতে পারে। তাঁরা সেটা তুলতে পারেন। কিন্তু সরকারিভাবে এমন কোনো প্রশ্ন তোলার চেষ্টা হচ্ছে না, যাতে তিক্ততা বাড়ে। ইতিবাচক দিকটা তুলে ধরার চেষ্টা চলছে।’
সামরিক কৌশলগত সম্পর্ক
সামরিক দিক থেকে এই সফরকে ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ মনে করছেন অবসরপ্রাপ্ত লেফটোন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য। 
ডয়েচে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন শুধু ওয়ারশ চুক্তিভুক্ত দেশ থেকে কেনা অস্ত্র দিয়ে লড়েছি। যখন সোভিয়েত ভেঙে যায়, আমাদের খুব অসুবিধা হয়েছিল। এখন আমরা ন্যাটো গোষ্ঠীভুক্ত দেশ থেকে অস্ত্র পাচ্ছি। অ্য়ামেরিকা থেকে প্রচুর অস্ত্র পাচ্ছি বা পেতে পারি। যেমন ড্রোনের কথা হচ্ছে, সাবমেরিনের কথা হচ্ছে, জেট ইঞ্জিনের কথা হচ্ছে।’
উৎপল ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘২০০০ সালের পর থেকে যখন আমরা অ্যামেরিকা থেকে বেশি করে অস্ত্র কেনা শুরু করলাম, তখন ওরা সর্বশেষ প্রযুক্তির অস্ত্র দিত না, কিছুটা পুরোনো অস্ত্র দিত। এখন অবস্থা পাল্টেছে। আমরাও আশা করব, সর্বশেষ অস্ত্র, প্রযুক্তি আমাদের দেবে অ্যামেরিকা। পাকিস্তানকে ওরা সর্বশেষ প্রযুক্তির এফ-১৬ দিয়েছে।’
ভারত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এত আগ্রহ কেন
সাংবাদিক প্রণয় শর্মার মতে, শুধু অস্ত্র বিক্রির জন্য নয়, ভারতের বিশাল মধ্যবিত্ত শ্রেণির বাজারও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আকর্ষণীয়। তাছাড়া ভারতের ‘নলেজ পুল’ও আছে।
তিনি বলেন, ‘একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে, ভারতসহ এশিয়ার দেশগুলোতে উৎপাদন খরচ অনেক কম ইউরোপ বা অ্য়ামেরিকার তুলনায়। তারা আগে চীনে বিনিয়োগ করেছে, দক্ষিণ কোরিয়ায় করেছে। কিন্তু চীনের পর ভারতের মতো এত বড় বাজার নেই।’
প্রণয়ের মতে, কোভিডের পর অনেকের মনে হচ্ছে, একটামাত্র বাজারের ওপর নির্ভর করা উচিত নয়, ছড়িয়ে থাকতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র কিছু দেশ বেছে নিয়েছে, ভারত তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
মাথায় চীন
উৎপল ভট্টাচার্য মনে করছেন, ‘আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হলো প্রশান্ত মহাসাগর। চীন এটাকে দক্ষিণ চীন সাগরের সঙ্গে মিলিয়ে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্রাধান্য় বিস্তার করতে চাইছে। তার মোকাবিলায় কোয়াড হয়েছে। অ্যামেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও ভারত মিলে কোয়াড তৈরি করেছে—এটা চীনের প্রতি বার্তা। সেই দিক থেকে ভারতের গুরুত্ব অ্যামেরিকার কাছে বাড়ছে।’
প্রণয় শর্মাও মনে করেন, চীনের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভারত বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে। বাইডেন দেখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যকে কোনো দেশ যদি চ্যালেঞ্জ করতে পারে, সেটা চীন। তাই চীনকে তারা সবচেয়ে বড় বিপদ মনে করে। এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এমন অনেক দেশ আছে, যারা চীনের এই উত্থানের ফলে ‘ব্যাপক সমস্যায়’ আছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, ভারতের সঙ্গে চীনের সীমান্তে ২০২০ থেকে সংঘাতের পরিস্থিতি রয়েছে। চীন একতরফা চুক্তি ভেঙে সীমানা বদলাতে চেয়েছে। অ্যামেরিকা অন্য দেগুলো সঙ্গে নিয়ে চীনকে মোকাবিলা করতে চাইছে। তবে অ্যামেরিকা যেভাবে চীনকে দেখবে, ভারত সেভাবে দেখতে পারে না। চীন ভারতের প্রতিবেশী দেশ। আমাদের সমস্যার মোকাবিলা অন্যভাবে করতে হবে।’
রাশিয়া ও অ্যামেরিকার মধ্যে ব্যালেন্স
প্রণয় শর্মা বলেন, ‘ভারতের নীতি, যা এখন অনেক দেশ নিচ্ছে, তা হলো, আমি কোনো দেশের সঙ্গে এমন শত্রুতা রাখব না যাতে ক্ষতি হয়। গায়ে পড়ে ঝগড়া করলে অন্য কথা। তাছাড়া যত বেশি দেশের সঙ্গে সম্ভব সুসম্পর্ক রাখব। অনেক বিষয়ে একমত না হলেও রাখব। অ্যামেরিকার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখা মানে রাশিয়ার সঙ্গে রাখতে পারব না, এমন নয়। আরো অনেক দেশের সঙ্গে ভারত সম্পর্ক মজবুত করতে চাইছে। তাতে ভারতের লাভ। কোনো দেশের প্রাথমিকতা তো তার নিজের স্বার্থ দেখা। সবাই এটা করে।’
উৎপল ভট্টাচার্যের মতে, ‘আমরা রাশিয়া বা ইউক্রেন কারো পক্ষে নেই। আমরা রাশিয়া থেকে তেল নিয়ে অন্য দেশে বিক্রি পর্যন্ত করছি। কারণ, আমরা নিজেদের স্বার্থ দেখছি। আমরা বলছি, যুদ্ধ কোনো বিকল্প নয়।’
তিনি বলেছেন, ‘অ্য়ামেরিকা ও রাশিয়া দুই দেশের সঙ্গেই সুসম্পর্ক চায় ভারত। এটা একটা ব্যালেন্সিং অ্যাক্ট, যা এখনো পর্যন্ত ভারত ঠিকভাবেই করে চলেছে।’

ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রে ‘স্টেট ভিজিট’ বা রাষ্ট্রীয় সফরে রয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। এই সফরেও তিনি যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। উইনস্টন চার্চিল, নেলসন ম্যান্ডেলার মতো অল্প কয়েকজন রাষ্ট্রনেতা এই সম্মান পেয়েছেন। জো ও জিল বাইডেন বুধবার রাতে মোদীকে হোয়াইট হাউসে নৈশভোজে আপ্যায়ন করেছেন। বোঝা যাচ্ছে, এই সফরকে যুক্তরাষ্ট্র যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে। মোদীর সফরকে এত গুরুত্ব কেন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র? তা নিয়ে ভারতের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছেন ডয়চে ভেলের গৌতম হোড়।
দিল্লির কূটনীতি বিশেষজ্ঞ প্রবীণ সাংবাদিক প্রণয় শর্মা ডয়েচে ভেলেকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র রেড কার্পেট বিছিয়ে দিয়েছে মোদির জন্য। নানা ধরনের সফর হয়, ওয়ার্কিং ভিজিট হয়। অল্প সময়ের জন্য এসে কিছু বিষয়ে আলোচনা করে রাষ্ট্রনেতা চলে যান। মধ্যাহ্নভোজ বা এ ধরনের একটা অনুষ্ঠান থাকে সেখানে।
তিনি বলেন, ‘কিন্তু স্টেট ভিজিটে যিনি আসবেন, তাঁকে ২১টি তোপধ্বনি দিয়ে হোয়াইট হাউসে স্বাগত জানানো হয়। সাউথ লনে সবার সঙ্গে আলাপ করানো হয়। নৈশভোজ বা ব্যাংকোয়েট দেন প্রেসিডেন্ট। সেখানে অ্যামেরিকার বিভিন্ন ক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বরা থাকেন।’
প্রণয়ের মতে, মোদির প্রতি কংগ্রেসের উভয় পক্ষের সমর্থন আছে। শুধু বাইডেন বা তার দল নয়, বিরোধী রিপাবলিকানরাও তাঁকে স্বাগত জানাচ্ছেন। ভারতের সঙ্গে তাঁরাও সুসম্পর্ক চান। মোদিকে যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দিতে ডেকেছেন হাউসের স্পিকার ম্য়াকার্থি। ফলে বাইডেন ও রিপাবলিকান দুই পক্ষই চাইছে দুই দেশের সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হোক।
মার্কিন কর্তৃপক্ষ যেন প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে ভারতের মানবাধিকারের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে, তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক ডজন কংগ্রেস সদস্য চিঠি লিখে অনুরোধ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে প্রণয় শর্মা বলেন, ‘গণতন্ত্রে বিভিন্ন ধরনের মত থাকবে। সবার মত এক হবে তা নয়। অ্যামেরিকা ভাইব্র্যান্ট গণতন্ত্র। তাদের নিজেদের প্রেসিডেন্টকে নিয়েও কত মত রয়েছে। তাই নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে সরকারি একটা মত থাকতে পারে, কিছু প্রতিনিধির অন্য মত থাকতে পারে। তাঁরা সেটা তুলতে পারেন। কিন্তু সরকারিভাবে এমন কোনো প্রশ্ন তোলার চেষ্টা হচ্ছে না, যাতে তিক্ততা বাড়ে। ইতিবাচক দিকটা তুলে ধরার চেষ্টা চলছে।’
সামরিক কৌশলগত সম্পর্ক
সামরিক দিক থেকে এই সফরকে ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ মনে করছেন অবসরপ্রাপ্ত লেফটোন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য। 
ডয়েচে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন শুধু ওয়ারশ চুক্তিভুক্ত দেশ থেকে কেনা অস্ত্র দিয়ে লড়েছি। যখন সোভিয়েত ভেঙে যায়, আমাদের খুব অসুবিধা হয়েছিল। এখন আমরা ন্যাটো গোষ্ঠীভুক্ত দেশ থেকে অস্ত্র পাচ্ছি। অ্য়ামেরিকা থেকে প্রচুর অস্ত্র পাচ্ছি বা পেতে পারি। যেমন ড্রোনের কথা হচ্ছে, সাবমেরিনের কথা হচ্ছে, জেট ইঞ্জিনের কথা হচ্ছে।’
উৎপল ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘২০০০ সালের পর থেকে যখন আমরা অ্যামেরিকা থেকে বেশি করে অস্ত্র কেনা শুরু করলাম, তখন ওরা সর্বশেষ প্রযুক্তির অস্ত্র দিত না, কিছুটা পুরোনো অস্ত্র দিত। এখন অবস্থা পাল্টেছে। আমরাও আশা করব, সর্বশেষ অস্ত্র, প্রযুক্তি আমাদের দেবে অ্যামেরিকা। পাকিস্তানকে ওরা সর্বশেষ প্রযুক্তির এফ-১৬ দিয়েছে।’
ভারত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এত আগ্রহ কেন
সাংবাদিক প্রণয় শর্মার মতে, শুধু অস্ত্র বিক্রির জন্য নয়, ভারতের বিশাল মধ্যবিত্ত শ্রেণির বাজারও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আকর্ষণীয়। তাছাড়া ভারতের ‘নলেজ পুল’ও আছে।
তিনি বলেন, ‘একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে, ভারতসহ এশিয়ার দেশগুলোতে উৎপাদন খরচ অনেক কম ইউরোপ বা অ্য়ামেরিকার তুলনায়। তারা আগে চীনে বিনিয়োগ করেছে, দক্ষিণ কোরিয়ায় করেছে। কিন্তু চীনের পর ভারতের মতো এত বড় বাজার নেই।’
প্রণয়ের মতে, কোভিডের পর অনেকের মনে হচ্ছে, একটামাত্র বাজারের ওপর নির্ভর করা উচিত নয়, ছড়িয়ে থাকতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র কিছু দেশ বেছে নিয়েছে, ভারত তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
মাথায় চীন
উৎপল ভট্টাচার্য মনে করছেন, ‘আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হলো প্রশান্ত মহাসাগর। চীন এটাকে দক্ষিণ চীন সাগরের সঙ্গে মিলিয়ে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্রাধান্য় বিস্তার করতে চাইছে। তার মোকাবিলায় কোয়াড হয়েছে। অ্যামেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও ভারত মিলে কোয়াড তৈরি করেছে—এটা চীনের প্রতি বার্তা। সেই দিক থেকে ভারতের গুরুত্ব অ্যামেরিকার কাছে বাড়ছে।’
প্রণয় শর্মাও মনে করেন, চীনের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভারত বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে। বাইডেন দেখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যকে কোনো দেশ যদি চ্যালেঞ্জ করতে পারে, সেটা চীন। তাই চীনকে তারা সবচেয়ে বড় বিপদ মনে করে। এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এমন অনেক দেশ আছে, যারা চীনের এই উত্থানের ফলে ‘ব্যাপক সমস্যায়’ আছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, ভারতের সঙ্গে চীনের সীমান্তে ২০২০ থেকে সংঘাতের পরিস্থিতি রয়েছে। চীন একতরফা চুক্তি ভেঙে সীমানা বদলাতে চেয়েছে। অ্যামেরিকা অন্য দেগুলো সঙ্গে নিয়ে চীনকে মোকাবিলা করতে চাইছে। তবে অ্যামেরিকা যেভাবে চীনকে দেখবে, ভারত সেভাবে দেখতে পারে না। চীন ভারতের প্রতিবেশী দেশ। আমাদের সমস্যার মোকাবিলা অন্যভাবে করতে হবে।’
রাশিয়া ও অ্যামেরিকার মধ্যে ব্যালেন্স
প্রণয় শর্মা বলেন, ‘ভারতের নীতি, যা এখন অনেক দেশ নিচ্ছে, তা হলো, আমি কোনো দেশের সঙ্গে এমন শত্রুতা রাখব না যাতে ক্ষতি হয়। গায়ে পড়ে ঝগড়া করলে অন্য কথা। তাছাড়া যত বেশি দেশের সঙ্গে সম্ভব সুসম্পর্ক রাখব। অনেক বিষয়ে একমত না হলেও রাখব। অ্যামেরিকার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখা মানে রাশিয়ার সঙ্গে রাখতে পারব না, এমন নয়। আরো অনেক দেশের সঙ্গে ভারত সম্পর্ক মজবুত করতে চাইছে। তাতে ভারতের লাভ। কোনো দেশের প্রাথমিকতা তো তার নিজের স্বার্থ দেখা। সবাই এটা করে।’
উৎপল ভট্টাচার্যের মতে, ‘আমরা রাশিয়া বা ইউক্রেন কারো পক্ষে নেই। আমরা রাশিয়া থেকে তেল নিয়ে অন্য দেশে বিক্রি পর্যন্ত করছি। কারণ, আমরা নিজেদের স্বার্থ দেখছি। আমরা বলছি, যুদ্ধ কোনো বিকল্প নয়।’
তিনি বলেছেন, ‘অ্য়ামেরিকা ও রাশিয়া দুই দেশের সঙ্গেই সুসম্পর্ক চায় ভারত। এটা একটা ব্যালেন্সিং অ্যাক্ট, যা এখনো পর্যন্ত ভারত ঠিকভাবেই করে চলেছে।’


ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রে ‘স্টেট ভিজিট’ বা রাষ্ট্রীয় সফরে রয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। এই সফরেও তিনি যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। উইনস্টন চার্চিল, নেলসন ম্যান্ডেলার মতো অল্প কয়েকজন রাষ্ট্রনেতা এই সম্মান পেয়েছেন। জো ও জিল বাইডেন বুধবার রাতে মোদীকে হোয়াইট হাউসে নৈশভোজে আপ্যায়ন করেছেন। বোঝা যাচ্ছে, এই সফরকে যুক্তরাষ্ট্র যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে। মোদীর সফরকে এত গুরুত্ব কেন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র? তা নিয়ে ভারতের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছেন ডয়চে ভেলের গৌতম হোড়।
দিল্লির কূটনীতি বিশেষজ্ঞ প্রবীণ সাংবাদিক প্রণয় শর্মা ডয়েচে ভেলেকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র রেড কার্পেট বিছিয়ে দিয়েছে মোদির জন্য। নানা ধরনের সফর হয়, ওয়ার্কিং ভিজিট হয়। অল্প সময়ের জন্য এসে কিছু বিষয়ে আলোচনা করে রাষ্ট্রনেতা চলে যান। মধ্যাহ্নভোজ বা এ ধরনের একটা অনুষ্ঠান থাকে সেখানে।
তিনি বলেন, ‘কিন্তু স্টেট ভিজিটে যিনি আসবেন, তাঁকে ২১টি তোপধ্বনি দিয়ে হোয়াইট হাউসে স্বাগত জানানো হয়। সাউথ লনে সবার সঙ্গে আলাপ করানো হয়। নৈশভোজ বা ব্যাংকোয়েট দেন প্রেসিডেন্ট। সেখানে অ্যামেরিকার বিভিন্ন ক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বরা থাকেন।’
প্রণয়ের মতে, মোদির প্রতি কংগ্রেসের উভয় পক্ষের সমর্থন আছে। শুধু বাইডেন বা তার দল নয়, বিরোধী রিপাবলিকানরাও তাঁকে স্বাগত জানাচ্ছেন। ভারতের সঙ্গে তাঁরাও সুসম্পর্ক চান। মোদিকে যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দিতে ডেকেছেন হাউসের স্পিকার ম্য়াকার্থি। ফলে বাইডেন ও রিপাবলিকান দুই পক্ষই চাইছে দুই দেশের সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হোক।
মার্কিন কর্তৃপক্ষ যেন প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে ভারতের মানবাধিকারের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে, তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক ডজন কংগ্রেস সদস্য চিঠি লিখে অনুরোধ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে প্রণয় শর্মা বলেন, ‘গণতন্ত্রে বিভিন্ন ধরনের মত থাকবে। সবার মত এক হবে তা নয়। অ্যামেরিকা ভাইব্র্যান্ট গণতন্ত্র। তাদের নিজেদের প্রেসিডেন্টকে নিয়েও কত মত রয়েছে। তাই নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে সরকারি একটা মত থাকতে পারে, কিছু প্রতিনিধির অন্য মত থাকতে পারে। তাঁরা সেটা তুলতে পারেন। কিন্তু সরকারিভাবে এমন কোনো প্রশ্ন তোলার চেষ্টা হচ্ছে না, যাতে তিক্ততা বাড়ে। ইতিবাচক দিকটা তুলে ধরার চেষ্টা চলছে।’
সামরিক কৌশলগত সম্পর্ক
সামরিক দিক থেকে এই সফরকে ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ মনে করছেন অবসরপ্রাপ্ত লেফটোন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য। 
ডয়েচে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন শুধু ওয়ারশ চুক্তিভুক্ত দেশ থেকে কেনা অস্ত্র দিয়ে লড়েছি। যখন সোভিয়েত ভেঙে যায়, আমাদের খুব অসুবিধা হয়েছিল। এখন আমরা ন্যাটো গোষ্ঠীভুক্ত দেশ থেকে অস্ত্র পাচ্ছি। অ্য়ামেরিকা থেকে প্রচুর অস্ত্র পাচ্ছি বা পেতে পারি। যেমন ড্রোনের কথা হচ্ছে, সাবমেরিনের কথা হচ্ছে, জেট ইঞ্জিনের কথা হচ্ছে।’
উৎপল ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘২০০০ সালের পর থেকে যখন আমরা অ্যামেরিকা থেকে বেশি করে অস্ত্র কেনা শুরু করলাম, তখন ওরা সর্বশেষ প্রযুক্তির অস্ত্র দিত না, কিছুটা পুরোনো অস্ত্র দিত। এখন অবস্থা পাল্টেছে। আমরাও আশা করব, সর্বশেষ অস্ত্র, প্রযুক্তি আমাদের দেবে অ্যামেরিকা। পাকিস্তানকে ওরা সর্বশেষ প্রযুক্তির এফ-১৬ দিয়েছে।’
ভারত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এত আগ্রহ কেন
সাংবাদিক প্রণয় শর্মার মতে, শুধু অস্ত্র বিক্রির জন্য নয়, ভারতের বিশাল মধ্যবিত্ত শ্রেণির বাজারও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আকর্ষণীয়। তাছাড়া ভারতের ‘নলেজ পুল’ও আছে।
তিনি বলেন, ‘একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে, ভারতসহ এশিয়ার দেশগুলোতে উৎপাদন খরচ অনেক কম ইউরোপ বা অ্য়ামেরিকার তুলনায়। তারা আগে চীনে বিনিয়োগ করেছে, দক্ষিণ কোরিয়ায় করেছে। কিন্তু চীনের পর ভারতের মতো এত বড় বাজার নেই।’
প্রণয়ের মতে, কোভিডের পর অনেকের মনে হচ্ছে, একটামাত্র বাজারের ওপর নির্ভর করা উচিত নয়, ছড়িয়ে থাকতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র কিছু দেশ বেছে নিয়েছে, ভারত তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
মাথায় চীন
উৎপল ভট্টাচার্য মনে করছেন, ‘আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হলো প্রশান্ত মহাসাগর। চীন এটাকে দক্ষিণ চীন সাগরের সঙ্গে মিলিয়ে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্রাধান্য় বিস্তার করতে চাইছে। তার মোকাবিলায় কোয়াড হয়েছে। অ্যামেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও ভারত মিলে কোয়াড তৈরি করেছে—এটা চীনের প্রতি বার্তা। সেই দিক থেকে ভারতের গুরুত্ব অ্যামেরিকার কাছে বাড়ছে।’
প্রণয় শর্মাও মনে করেন, চীনের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভারত বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে। বাইডেন দেখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যকে কোনো দেশ যদি চ্যালেঞ্জ করতে পারে, সেটা চীন। তাই চীনকে তারা সবচেয়ে বড় বিপদ মনে করে। এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এমন অনেক দেশ আছে, যারা চীনের এই উত্থানের ফলে ‘ব্যাপক সমস্যায়’ আছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, ভারতের সঙ্গে চীনের সীমান্তে ২০২০ থেকে সংঘাতের পরিস্থিতি রয়েছে। চীন একতরফা চুক্তি ভেঙে সীমানা বদলাতে চেয়েছে। অ্যামেরিকা অন্য দেগুলো সঙ্গে নিয়ে চীনকে মোকাবিলা করতে চাইছে। তবে অ্যামেরিকা যেভাবে চীনকে দেখবে, ভারত সেভাবে দেখতে পারে না। চীন ভারতের প্রতিবেশী দেশ। আমাদের সমস্যার মোকাবিলা অন্যভাবে করতে হবে।’
রাশিয়া ও অ্যামেরিকার মধ্যে ব্যালেন্স
প্রণয় শর্মা বলেন, ‘ভারতের নীতি, যা এখন অনেক দেশ নিচ্ছে, তা হলো, আমি কোনো দেশের সঙ্গে এমন শত্রুতা রাখব না যাতে ক্ষতি হয়। গায়ে পড়ে ঝগড়া করলে অন্য কথা। তাছাড়া যত বেশি দেশের সঙ্গে সম্ভব সুসম্পর্ক রাখব। অনেক বিষয়ে একমত না হলেও রাখব। অ্যামেরিকার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখা মানে রাশিয়ার সঙ্গে রাখতে পারব না, এমন নয়। আরো অনেক দেশের সঙ্গে ভারত সম্পর্ক মজবুত করতে চাইছে। তাতে ভারতের লাভ। কোনো দেশের প্রাথমিকতা তো তার নিজের স্বার্থ দেখা। সবাই এটা করে।’
উৎপল ভট্টাচার্যের মতে, ‘আমরা রাশিয়া বা ইউক্রেন কারো পক্ষে নেই। আমরা রাশিয়া থেকে তেল নিয়ে অন্য দেশে বিক্রি পর্যন্ত করছি। কারণ, আমরা নিজেদের স্বার্থ দেখছি। আমরা বলছি, যুদ্ধ কোনো বিকল্প নয়।’
তিনি বলেছেন, ‘অ্য়ামেরিকা ও রাশিয়া দুই দেশের সঙ্গেই সুসম্পর্ক চায় ভারত। এটা একটা ব্যালেন্সিং অ্যাক্ট, যা এখনো পর্যন্ত ভারত ঠিকভাবেই করে চলেছে।’

ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রে ‘স্টেট ভিজিট’ বা রাষ্ট্রীয় সফরে রয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। এই সফরেও তিনি যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। উইনস্টন চার্চিল, নেলসন ম্যান্ডেলার মতো অল্প কয়েকজন রাষ্ট্রনেতা এই সম্মান পেয়েছেন। জো ও জিল বাইডেন বুধবার রাতে মোদীকে হোয়াইট হাউসে নৈশভোজে আপ্যায়ন করেছেন। বোঝা যাচ্ছে, এই সফরকে যুক্তরাষ্ট্র যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে। মোদীর সফরকে এত গুরুত্ব কেন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র? তা নিয়ে ভারতের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছেন ডয়চে ভেলের গৌতম হোড়।
দিল্লির কূটনীতি বিশেষজ্ঞ প্রবীণ সাংবাদিক প্রণয় শর্মা ডয়েচে ভেলেকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র রেড কার্পেট বিছিয়ে দিয়েছে মোদির জন্য। নানা ধরনের সফর হয়, ওয়ার্কিং ভিজিট হয়। অল্প সময়ের জন্য এসে কিছু বিষয়ে আলোচনা করে রাষ্ট্রনেতা চলে যান। মধ্যাহ্নভোজ বা এ ধরনের একটা অনুষ্ঠান থাকে সেখানে।
তিনি বলেন, ‘কিন্তু স্টেট ভিজিটে যিনি আসবেন, তাঁকে ২১টি তোপধ্বনি দিয়ে হোয়াইট হাউসে স্বাগত জানানো হয়। সাউথ লনে সবার সঙ্গে আলাপ করানো হয়। নৈশভোজ বা ব্যাংকোয়েট দেন প্রেসিডেন্ট। সেখানে অ্যামেরিকার বিভিন্ন ক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বরা থাকেন।’
প্রণয়ের মতে, মোদির প্রতি কংগ্রেসের উভয় পক্ষের সমর্থন আছে। শুধু বাইডেন বা তার দল নয়, বিরোধী রিপাবলিকানরাও তাঁকে স্বাগত জানাচ্ছেন। ভারতের সঙ্গে তাঁরাও সুসম্পর্ক চান। মোদিকে যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দিতে ডেকেছেন হাউসের স্পিকার ম্য়াকার্থি। ফলে বাইডেন ও রিপাবলিকান দুই পক্ষই চাইছে দুই দেশের সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হোক।
মার্কিন কর্তৃপক্ষ যেন প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে ভারতের মানবাধিকারের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে, তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক ডজন কংগ্রেস সদস্য চিঠি লিখে অনুরোধ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে প্রণয় শর্মা বলেন, ‘গণতন্ত্রে বিভিন্ন ধরনের মত থাকবে। সবার মত এক হবে তা নয়। অ্যামেরিকা ভাইব্র্যান্ট গণতন্ত্র। তাদের নিজেদের প্রেসিডেন্টকে নিয়েও কত মত রয়েছে। তাই নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে সরকারি একটা মত থাকতে পারে, কিছু প্রতিনিধির অন্য মত থাকতে পারে। তাঁরা সেটা তুলতে পারেন। কিন্তু সরকারিভাবে এমন কোনো প্রশ্ন তোলার চেষ্টা হচ্ছে না, যাতে তিক্ততা বাড়ে। ইতিবাচক দিকটা তুলে ধরার চেষ্টা চলছে।’
সামরিক কৌশলগত সম্পর্ক
সামরিক দিক থেকে এই সফরকে ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ মনে করছেন অবসরপ্রাপ্ত লেফটোন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য। 
ডয়েচে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন শুধু ওয়ারশ চুক্তিভুক্ত দেশ থেকে কেনা অস্ত্র দিয়ে লড়েছি। যখন সোভিয়েত ভেঙে যায়, আমাদের খুব অসুবিধা হয়েছিল। এখন আমরা ন্যাটো গোষ্ঠীভুক্ত দেশ থেকে অস্ত্র পাচ্ছি। অ্য়ামেরিকা থেকে প্রচুর অস্ত্র পাচ্ছি বা পেতে পারি। যেমন ড্রোনের কথা হচ্ছে, সাবমেরিনের কথা হচ্ছে, জেট ইঞ্জিনের কথা হচ্ছে।’
উৎপল ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘২০০০ সালের পর থেকে যখন আমরা অ্যামেরিকা থেকে বেশি করে অস্ত্র কেনা শুরু করলাম, তখন ওরা সর্বশেষ প্রযুক্তির অস্ত্র দিত না, কিছুটা পুরোনো অস্ত্র দিত। এখন অবস্থা পাল্টেছে। আমরাও আশা করব, সর্বশেষ অস্ত্র, প্রযুক্তি আমাদের দেবে অ্যামেরিকা। পাকিস্তানকে ওরা সর্বশেষ প্রযুক্তির এফ-১৬ দিয়েছে।’
ভারত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এত আগ্রহ কেন
সাংবাদিক প্রণয় শর্মার মতে, শুধু অস্ত্র বিক্রির জন্য নয়, ভারতের বিশাল মধ্যবিত্ত শ্রেণির বাজারও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আকর্ষণীয়। তাছাড়া ভারতের ‘নলেজ পুল’ও আছে।
তিনি বলেন, ‘একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে, ভারতসহ এশিয়ার দেশগুলোতে উৎপাদন খরচ অনেক কম ইউরোপ বা অ্য়ামেরিকার তুলনায়। তারা আগে চীনে বিনিয়োগ করেছে, দক্ষিণ কোরিয়ায় করেছে। কিন্তু চীনের পর ভারতের মতো এত বড় বাজার নেই।’
প্রণয়ের মতে, কোভিডের পর অনেকের মনে হচ্ছে, একটামাত্র বাজারের ওপর নির্ভর করা উচিত নয়, ছড়িয়ে থাকতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র কিছু দেশ বেছে নিয়েছে, ভারত তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
মাথায় চীন
উৎপল ভট্টাচার্য মনে করছেন, ‘আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হলো প্রশান্ত মহাসাগর। চীন এটাকে দক্ষিণ চীন সাগরের সঙ্গে মিলিয়ে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্রাধান্য় বিস্তার করতে চাইছে। তার মোকাবিলায় কোয়াড হয়েছে। অ্যামেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও ভারত মিলে কোয়াড তৈরি করেছে—এটা চীনের প্রতি বার্তা। সেই দিক থেকে ভারতের গুরুত্ব অ্যামেরিকার কাছে বাড়ছে।’
প্রণয় শর্মাও মনে করেন, চীনের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভারত বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে। বাইডেন দেখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যকে কোনো দেশ যদি চ্যালেঞ্জ করতে পারে, সেটা চীন। তাই চীনকে তারা সবচেয়ে বড় বিপদ মনে করে। এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এমন অনেক দেশ আছে, যারা চীনের এই উত্থানের ফলে ‘ব্যাপক সমস্যায়’ আছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, ভারতের সঙ্গে চীনের সীমান্তে ২০২০ থেকে সংঘাতের পরিস্থিতি রয়েছে। চীন একতরফা চুক্তি ভেঙে সীমানা বদলাতে চেয়েছে। অ্যামেরিকা অন্য দেগুলো সঙ্গে নিয়ে চীনকে মোকাবিলা করতে চাইছে। তবে অ্যামেরিকা যেভাবে চীনকে দেখবে, ভারত সেভাবে দেখতে পারে না। চীন ভারতের প্রতিবেশী দেশ। আমাদের সমস্যার মোকাবিলা অন্যভাবে করতে হবে।’
রাশিয়া ও অ্যামেরিকার মধ্যে ব্যালেন্স
প্রণয় শর্মা বলেন, ‘ভারতের নীতি, যা এখন অনেক দেশ নিচ্ছে, তা হলো, আমি কোনো দেশের সঙ্গে এমন শত্রুতা রাখব না যাতে ক্ষতি হয়। গায়ে পড়ে ঝগড়া করলে অন্য কথা। তাছাড়া যত বেশি দেশের সঙ্গে সম্ভব সুসম্পর্ক রাখব। অনেক বিষয়ে একমত না হলেও রাখব। অ্যামেরিকার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখা মানে রাশিয়ার সঙ্গে রাখতে পারব না, এমন নয়। আরো অনেক দেশের সঙ্গে ভারত সম্পর্ক মজবুত করতে চাইছে। তাতে ভারতের লাভ। কোনো দেশের প্রাথমিকতা তো তার নিজের স্বার্থ দেখা। সবাই এটা করে।’
উৎপল ভট্টাচার্যের মতে, ‘আমরা রাশিয়া বা ইউক্রেন কারো পক্ষে নেই। আমরা রাশিয়া থেকে তেল নিয়ে অন্য দেশে বিক্রি পর্যন্ত করছি। কারণ, আমরা নিজেদের স্বার্থ দেখছি। আমরা বলছি, যুদ্ধ কোনো বিকল্প নয়।’
তিনি বলেছেন, ‘অ্য়ামেরিকা ও রাশিয়া দুই দেশের সঙ্গেই সুসম্পর্ক চায় ভারত। এটা একটা ব্যালেন্সিং অ্যাক্ট, যা এখনো পর্যন্ত ভারত ঠিকভাবেই করে চলেছে।’


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁর দেশ আবারও পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষায় ফিরবে। তাঁর এই ঘোষণা দেশটির দীর্ঘদিনের নীতিতে এক বিশাল পরিবর্তন। ট্রাম্প নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘যেহেতু অন্যান্য দেশগুলোও পরীক্ষা চালাচ্ছে, তাই আমিও অন্যদের সঙ্গে সমানতাল
৪ ঘণ্টা আগে
বিশ্ব রাজনীতিতে আবারও পারমাণবিক যুদ্ধের আতঙ্ক ঘনীভূত হচ্ছে। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র—দুই পরাশক্তির শীর্ষ নেতার সাম্প্রতিক ঘোষণায় এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, শীতল যুদ্ধের পর বিশ্বে যে পারমাণবিক ভারসাম্য তৈরি হয়েছিল, তা এখন ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে।
১৬ ঘণ্টা আগে
বিরল খনিজ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের এই টানাপোড়েন আগেও ছিল। চীন বহু বছর ধরে তার বৃহত্তর শিল্পনীতির অংশ হিসেবে এই খনিজগুলোর ওপর প্রায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। তাই বিরল খনিজকে কেন্দ্র করে চীনের কৌশলগত বৈশ্বিক প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টার বিপরীতে ট্রাম্প প্রশাসনও পাল্টা খেলায় নেমেছে।
২১ ঘণ্টা আগে
পশ্চিম সুদানের এল-ফাশের শহরে গণহত্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, হাজারো মানুষকে এরই মধ্যে হত্যা করা হয়েছে। শহরটি সুদানের দারফুর অঞ্চলের উত্তর প্রদেশের রাজধানী। সম্প্রতি এটি আধাসামরিক বাহিনী ‘র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস’ (আরএসএফ) দখল করেছে। এটি মূলত সুদানের গৃহযুদ্ধের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী বহিঃপ্রকা
১ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁর দেশ আবারও পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষায় ফিরবে। তাঁর এই ঘোষণা দেশটির দীর্ঘদিনের নীতিতে এক বিশাল পরিবর্তন। ট্রাম্প নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘যেহেতু অন্যান্য দেশগুলোও পরীক্ষা চালাচ্ছে, তাই আমিও অন্যদের সঙ্গে সমানতালে পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালাতে আমাদের যুদ্ধ দপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই প্রক্রিয়া খুব শিগগির শুরু হয়ে যাবে।’
বিশ্বে বেশ কয়েকটি দেশ আছে পারমাণবিক শক্তিধর। এই দেশগুলোকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ‘নিউক্লিয়ার ক্লাবের’ সদস্য বলে বিবেচনা করা হয়। তবে এই ক্লাবের সদস্য সংখ্যা স্পষ্ট নয়। এসব দেশ নিয়মিতভাবে তাদের পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করে থাকে। তবে ১৯৯০-এর দশকের পর থেকে এখন পর্যন্ত একমাত্র উত্তর কোরিয়াই প্রকাশ্যে পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে, সেটাও হয়েছে ২০১৭ সালে।
হোয়াইট হাউস এখনো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষণার বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। তাই এটি স্পষ্ট নয় যে, তিনি ‘পারমাণবিক পরীক্ষা’ বলতে পারমাণবিক অস্ত্রবাহী ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা বোঝাচ্ছেন, নাকি অস্ত্রগুলোরই ধ্বংসাত্মক বিস্ফোরণ পরীক্ষা বোঝাচ্ছেন। ট্রাম্প পরে বলেছেন, পারমাণবিক পরীক্ষার স্থান পরে নির্ধারণ করা হবে।
বিবিসি এই বিষয়ে ছয়জন নীতি বিশ্লেষকের সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের বেশির ভাগই বলেছেন, পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা এখনকার উত্তেজনাপূর্ণ সময়কে আরও বিপজ্জনক করে তুলবে। তাদের মতে, বিশ্ব এমন এক অবস্থার দিকে এগোচ্ছে, যেখানে পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু না হলেও, আশঙ্কা প্রবল। তবে এক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ট্রাম্পের বক্তব্য বড় কোনো প্রভাব ফেলবে না। আরেকজন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ইচ্ছে করে প্রতিযোগিতা উসকে দিচ্ছে না।’ তবে সবাই একমত যে, বিশ্বে পারমাণবিক ঝুঁকি বেড়েই চলেছে।
মার্কিন থিংক ট্যাংক কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের নিউক্লিয়ার পলিসি প্রোগ্রামের ফেলো জেমি কুয়াং বলেন, ‘বিগত কয়েক দশকে উত্তর কোরিয়া ছাড়া পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলো আসল পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়নি। তাই এখন কেউ যদি শুরু করে, সেটি অন্যদেরও উসকে দিতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এমন এক সময়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন হয়তো নতুন এক অস্ত্র প্রতিযোগিতার দ্বারপ্রান্তে।’
লন্ডনভিত্তিক প্রতিরক্ষা গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের (রুসি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো দারিয়া দলজিকোভা বলেন, ট্রাম্পের মন্তব্যে পরিস্থিতিতে বড় কোনো পরিবর্তন আসবে বলে তিনি মনে করেন না। তবে তাঁর মতে, ‘বিশ্বজুড়ে এমন অনেক ঘটনা ঘটছে যা পারমাণবিক সংঘাত ও অস্ত্র বিস্তারের ঝুঁকি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাত্রায় নিয়ে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ট্রাম্পের বার্তা বিশাল এক সমস্যার সমুদ্রে এক ফোঁটা মাত্র, কিন্তু সমুদ্রটা এরই মধ্যে উপচে পড়ার উপক্রম।’
বিশেষজ্ঞরা উদাহরণ হিসেবে বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের মতো সংঘাতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একাধিকবার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিয়েছেন। তা ছাড়া, ভারত-পাকিস্তানের এ বছরের সংঘাত, কিংবা ইসরায়েলের ইরান হামলার ঘটনা বৈশ্বিক অস্থিরতা বাড়িয়েছে। যদিও ইসরায়েল কখনো প্রকাশ্যে তার পারমাণবিক অস্ত্রের কথা স্বীকার করেনি। পশ্চিমা দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে ইরানের বিরুদ্ধে গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টার অভিযোগ করে আসছে। তবে তেহরান তা বারবার অস্বীকার করেছে।
কোরীয় উপদ্বীপে উত্তেজনা ও তাইওয়ান নিয়ে চীনের উচ্চাকাঙ্ক্ষাও বৈশ্বিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে বিদ্যমান শেষ পারমাণবিক অস্ত্র সীমিতকরণ চুক্তিটি আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে মেয়াদোত্তীর্ণ হবে।
ট্রাম্প যে ঘোষণা দিয়েছেন, সেখানে বলেছেন—যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা অন্য সব দেশের চেয়ে বেশি। তবে স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (সিপ্রি) হালনাগাদ তথ্য এর সঙ্গে মেলে না। সিপ্রির তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ার পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে ৫ হাজার ৪৫৯টি। এর পরেই যুক্তরাষ্ট্র, যার ওয়ারহেড ৫ হাজার ১৭৭টি। চীন অনেক পিছিয়ে, তাদের রয়েছে ৬০০টি ওয়ারহেড। অন্য গবেষণা সংস্থাগুলোর তথ্যও প্রায় একই।
সম্প্রতি রাশিয়া জানিয়েছে, তারা নতুন পারমাণবিক অস্ত্রবাহী ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে। ক্রেমলিন দাবি করেছে, এগুলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করতে সক্ষম। এ ছাড়া, তাদের এমন এক ক্ষেপণাস্ত্র আছে, যা পানির নিচ দিয়ে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উপকূলে আঘাত হানতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাশিয়ার এই ঘোষণাই ট্রাম্পের বক্তব্যের কারণ হতে পারে। যদিও রাশিয়া বলেছে, এসব পরীক্ষা ‘পারমাণবিক নয়।’ অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর গভীর নজর রাখছে।
তাদের আশঙ্কা, চীনও দ্রুত ‘সমমানের পারমাণবিক শক্তি’ অর্জনের পথে। এতে তৈরি হচ্ছে ‘দুই-প্রতিদ্বন্দ্বী পারমাণবিক ঝুঁকি।’ বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র যদি আবার পারমাণবিক পরীক্ষা শুরু করে, তাহলে রাশিয়া ও চীনও একই পথে যেতে পারে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র সতর্ক করে বলেছেন, ‘কেউ যদি পরীক্ষার নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে, রাশিয়া তার জবাব দেবে।’ চীন জানিয়েছে, তারা আশা করে যুক্তরাষ্ট্র ‘কমপ্রিহেনসিভ নিউক্লিয়ার টেস্ট–ব্যান ট্রিটি’র প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশই চুক্তিতে সই করেছে, কিন্তু অনুমোদন দেয়নি।
ওয়াশিংটনভিত্তিক আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিচালক ড্যারিল কিমবলের মতে, যুক্তরাষ্ট্র যদি আবার পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়, তা হবে ‘আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার ইতিহাসে ভয়াবহ ভুল।’ তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছরে পারমাণবিক সংঘাতের ঝুঁকি ক্রমেই বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া যদি নতুন চুক্তিতে না পৌঁছায়, তাহলে তিন দিক থেকে—যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন—এক বিপজ্জনক অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হবে।’
ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টসের পারমাণবিক তথ্য প্রকল্পের পরিচালক হান্স ক্রিস্টেনসেন বলেন, গত পাঁচ বছরে প্রথমবারের মতো ওয়ারহেড সংখ্যা বেড়েছে—শীতল যুদ্ধের পর এমনটা হয়নি। তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষেরও উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত, ” বলেন তিনি।’
যুক্তরাষ্ট্র সর্বশেষ পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছিল ১৯৯২ সালে, নেভাদায়। কিমবলের মতে, সেই কেন্দ্র আবার চালু করতে কমপক্ষে ৩৬ মাস লাগবে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র কম্পিউটার সিমুলেশন ও অন্যান্য অ-বিস্ফোরক পদ্ধতিতে অস্ত্র পরীক্ষা করে। তাই নতুন বিস্ফোরণমূলক পরীক্ষার বাস্তব প্রয়োজন নেই বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এই বিষয়ে কুয়াং বলেন, ভূগর্ভস্থ পরীক্ষাতেও ঝুঁকি থাকে—বিকিরণ যেন মাটির ওপর বা ভূগর্ভস্থ পানিতে ছড়ায় না, তা নিশ্চিত করতে হয়।
ট্রাম্পের এমন ঘোষণার পেছনে রাশিয়া ও চীনকে দায়ী করে হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের গবেষক রবার্ট পিটার্স বলেন, বৈজ্ঞানিক কারণ না থাকলেও, ‘রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার জন্য’ এমন পরীক্ষা দরকার হতে পারে। তাঁর ভাষায়, ‘বিশ্বাসযোগ্যতা দেখাতে কোনো প্রেসিডেন্টের—ট্রাম্প, বা অন্য যে কেউ—পারমাণবিক পরীক্ষা চালানো প্রয়োজন হতে পারে।’ তাঁর মতে, ‘এটি অযৌক্তিক অবস্থান নয়।’
তবে অনেক বিশেষজ্ঞই এতে একমত নন। তাদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক রিস ক্রিলি বলেন, ‘নতুন এক পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা যদি ইতিমধ্যেই শুরু না হয়ে থাকে, তবে আমরা তার একদম দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিদিনই আমি এই আশঙ্কায় থাকি যে, যেকোনো সময় পৃথিবী আবার পারমাণবিক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে।’
যুক্তরাষ্ট্র প্রথম পারমাণবিক বোমা পরীক্ষা করে ১৯৪৫ সালের জুলাইয়ে, নিউ মেক্সিকোর আলমাগোর্ডো মরুভূমিতে। তারপর আগস্টে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে তারা জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে দুটি পারমাণবিক বোমা ফেলেছিল, যা মানব ইতিহাসে এখনো একমাত্র পারমাণবিক হামলা।
বিবিসি থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁর দেশ আবারও পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষায় ফিরবে। তাঁর এই ঘোষণা দেশটির দীর্ঘদিনের নীতিতে এক বিশাল পরিবর্তন। ট্রাম্প নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘যেহেতু অন্যান্য দেশগুলোও পরীক্ষা চালাচ্ছে, তাই আমিও অন্যদের সঙ্গে সমানতালে পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালাতে আমাদের যুদ্ধ দপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই প্রক্রিয়া খুব শিগগির শুরু হয়ে যাবে।’
বিশ্বে বেশ কয়েকটি দেশ আছে পারমাণবিক শক্তিধর। এই দেশগুলোকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ‘নিউক্লিয়ার ক্লাবের’ সদস্য বলে বিবেচনা করা হয়। তবে এই ক্লাবের সদস্য সংখ্যা স্পষ্ট নয়। এসব দেশ নিয়মিতভাবে তাদের পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করে থাকে। তবে ১৯৯০-এর দশকের পর থেকে এখন পর্যন্ত একমাত্র উত্তর কোরিয়াই প্রকাশ্যে পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে, সেটাও হয়েছে ২০১৭ সালে।
হোয়াইট হাউস এখনো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষণার বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। তাই এটি স্পষ্ট নয় যে, তিনি ‘পারমাণবিক পরীক্ষা’ বলতে পারমাণবিক অস্ত্রবাহী ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা বোঝাচ্ছেন, নাকি অস্ত্রগুলোরই ধ্বংসাত্মক বিস্ফোরণ পরীক্ষা বোঝাচ্ছেন। ট্রাম্প পরে বলেছেন, পারমাণবিক পরীক্ষার স্থান পরে নির্ধারণ করা হবে।
বিবিসি এই বিষয়ে ছয়জন নীতি বিশ্লেষকের সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের বেশির ভাগই বলেছেন, পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা এখনকার উত্তেজনাপূর্ণ সময়কে আরও বিপজ্জনক করে তুলবে। তাদের মতে, বিশ্ব এমন এক অবস্থার দিকে এগোচ্ছে, যেখানে পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু না হলেও, আশঙ্কা প্রবল। তবে এক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ট্রাম্পের বক্তব্য বড় কোনো প্রভাব ফেলবে না। আরেকজন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ইচ্ছে করে প্রতিযোগিতা উসকে দিচ্ছে না।’ তবে সবাই একমত যে, বিশ্বে পারমাণবিক ঝুঁকি বেড়েই চলেছে।
মার্কিন থিংক ট্যাংক কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের নিউক্লিয়ার পলিসি প্রোগ্রামের ফেলো জেমি কুয়াং বলেন, ‘বিগত কয়েক দশকে উত্তর কোরিয়া ছাড়া পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলো আসল পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়নি। তাই এখন কেউ যদি শুরু করে, সেটি অন্যদেরও উসকে দিতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এমন এক সময়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন হয়তো নতুন এক অস্ত্র প্রতিযোগিতার দ্বারপ্রান্তে।’
লন্ডনভিত্তিক প্রতিরক্ষা গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের (রুসি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো দারিয়া দলজিকোভা বলেন, ট্রাম্পের মন্তব্যে পরিস্থিতিতে বড় কোনো পরিবর্তন আসবে বলে তিনি মনে করেন না। তবে তাঁর মতে, ‘বিশ্বজুড়ে এমন অনেক ঘটনা ঘটছে যা পারমাণবিক সংঘাত ও অস্ত্র বিস্তারের ঝুঁকি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাত্রায় নিয়ে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ট্রাম্পের বার্তা বিশাল এক সমস্যার সমুদ্রে এক ফোঁটা মাত্র, কিন্তু সমুদ্রটা এরই মধ্যে উপচে পড়ার উপক্রম।’
বিশেষজ্ঞরা উদাহরণ হিসেবে বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের মতো সংঘাতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একাধিকবার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিয়েছেন। তা ছাড়া, ভারত-পাকিস্তানের এ বছরের সংঘাত, কিংবা ইসরায়েলের ইরান হামলার ঘটনা বৈশ্বিক অস্থিরতা বাড়িয়েছে। যদিও ইসরায়েল কখনো প্রকাশ্যে তার পারমাণবিক অস্ত্রের কথা স্বীকার করেনি। পশ্চিমা দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে ইরানের বিরুদ্ধে গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টার অভিযোগ করে আসছে। তবে তেহরান তা বারবার অস্বীকার করেছে।
কোরীয় উপদ্বীপে উত্তেজনা ও তাইওয়ান নিয়ে চীনের উচ্চাকাঙ্ক্ষাও বৈশ্বিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে বিদ্যমান শেষ পারমাণবিক অস্ত্র সীমিতকরণ চুক্তিটি আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে মেয়াদোত্তীর্ণ হবে।
ট্রাম্প যে ঘোষণা দিয়েছেন, সেখানে বলেছেন—যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা অন্য সব দেশের চেয়ে বেশি। তবে স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (সিপ্রি) হালনাগাদ তথ্য এর সঙ্গে মেলে না। সিপ্রির তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ার পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে ৫ হাজার ৪৫৯টি। এর পরেই যুক্তরাষ্ট্র, যার ওয়ারহেড ৫ হাজার ১৭৭টি। চীন অনেক পিছিয়ে, তাদের রয়েছে ৬০০টি ওয়ারহেড। অন্য গবেষণা সংস্থাগুলোর তথ্যও প্রায় একই।
সম্প্রতি রাশিয়া জানিয়েছে, তারা নতুন পারমাণবিক অস্ত্রবাহী ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে। ক্রেমলিন দাবি করেছে, এগুলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করতে সক্ষম। এ ছাড়া, তাদের এমন এক ক্ষেপণাস্ত্র আছে, যা পানির নিচ দিয়ে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উপকূলে আঘাত হানতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাশিয়ার এই ঘোষণাই ট্রাম্পের বক্তব্যের কারণ হতে পারে। যদিও রাশিয়া বলেছে, এসব পরীক্ষা ‘পারমাণবিক নয়।’ অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর গভীর নজর রাখছে।
তাদের আশঙ্কা, চীনও দ্রুত ‘সমমানের পারমাণবিক শক্তি’ অর্জনের পথে। এতে তৈরি হচ্ছে ‘দুই-প্রতিদ্বন্দ্বী পারমাণবিক ঝুঁকি।’ বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র যদি আবার পারমাণবিক পরীক্ষা শুরু করে, তাহলে রাশিয়া ও চীনও একই পথে যেতে পারে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র সতর্ক করে বলেছেন, ‘কেউ যদি পরীক্ষার নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে, রাশিয়া তার জবাব দেবে।’ চীন জানিয়েছে, তারা আশা করে যুক্তরাষ্ট্র ‘কমপ্রিহেনসিভ নিউক্লিয়ার টেস্ট–ব্যান ট্রিটি’র প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশই চুক্তিতে সই করেছে, কিন্তু অনুমোদন দেয়নি।
ওয়াশিংটনভিত্তিক আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিচালক ড্যারিল কিমবলের মতে, যুক্তরাষ্ট্র যদি আবার পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়, তা হবে ‘আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার ইতিহাসে ভয়াবহ ভুল।’ তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছরে পারমাণবিক সংঘাতের ঝুঁকি ক্রমেই বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া যদি নতুন চুক্তিতে না পৌঁছায়, তাহলে তিন দিক থেকে—যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন—এক বিপজ্জনক অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হবে।’
ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টসের পারমাণবিক তথ্য প্রকল্পের পরিচালক হান্স ক্রিস্টেনসেন বলেন, গত পাঁচ বছরে প্রথমবারের মতো ওয়ারহেড সংখ্যা বেড়েছে—শীতল যুদ্ধের পর এমনটা হয়নি। তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষেরও উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত, ” বলেন তিনি।’
যুক্তরাষ্ট্র সর্বশেষ পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছিল ১৯৯২ সালে, নেভাদায়। কিমবলের মতে, সেই কেন্দ্র আবার চালু করতে কমপক্ষে ৩৬ মাস লাগবে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র কম্পিউটার সিমুলেশন ও অন্যান্য অ-বিস্ফোরক পদ্ধতিতে অস্ত্র পরীক্ষা করে। তাই নতুন বিস্ফোরণমূলক পরীক্ষার বাস্তব প্রয়োজন নেই বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এই বিষয়ে কুয়াং বলেন, ভূগর্ভস্থ পরীক্ষাতেও ঝুঁকি থাকে—বিকিরণ যেন মাটির ওপর বা ভূগর্ভস্থ পানিতে ছড়ায় না, তা নিশ্চিত করতে হয়।
ট্রাম্পের এমন ঘোষণার পেছনে রাশিয়া ও চীনকে দায়ী করে হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের গবেষক রবার্ট পিটার্স বলেন, বৈজ্ঞানিক কারণ না থাকলেও, ‘রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার জন্য’ এমন পরীক্ষা দরকার হতে পারে। তাঁর ভাষায়, ‘বিশ্বাসযোগ্যতা দেখাতে কোনো প্রেসিডেন্টের—ট্রাম্প, বা অন্য যে কেউ—পারমাণবিক পরীক্ষা চালানো প্রয়োজন হতে পারে।’ তাঁর মতে, ‘এটি অযৌক্তিক অবস্থান নয়।’
তবে অনেক বিশেষজ্ঞই এতে একমত নন। তাদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক রিস ক্রিলি বলেন, ‘নতুন এক পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা যদি ইতিমধ্যেই শুরু না হয়ে থাকে, তবে আমরা তার একদম দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিদিনই আমি এই আশঙ্কায় থাকি যে, যেকোনো সময় পৃথিবী আবার পারমাণবিক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে।’
যুক্তরাষ্ট্র প্রথম পারমাণবিক বোমা পরীক্ষা করে ১৯৪৫ সালের জুলাইয়ে, নিউ মেক্সিকোর আলমাগোর্ডো মরুভূমিতে। তারপর আগস্টে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে তারা জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে দুটি পারমাণবিক বোমা ফেলেছিল, যা মানব ইতিহাসে এখনো একমাত্র পারমাণবিক হামলা।
বিবিসি থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান


ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রে ‘স্টেট ভিজিট’ বা রাষ্ট্রীয় সফরে রয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। এই সফরেও তিনি যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। উইনস্টন চার্চিল, নেলসন ম্যান্ডেলার মতো অল্প কয়েকজন রাষ্ট্রনেতা এই সম্মান পেয়েছেন।
২২ জুন ২০২৩
বিশ্ব রাজনীতিতে আবারও পারমাণবিক যুদ্ধের আতঙ্ক ঘনীভূত হচ্ছে। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র—দুই পরাশক্তির শীর্ষ নেতার সাম্প্রতিক ঘোষণায় এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, শীতল যুদ্ধের পর বিশ্বে যে পারমাণবিক ভারসাম্য তৈরি হয়েছিল, তা এখন ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে।
১৬ ঘণ্টা আগে
বিরল খনিজ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের এই টানাপোড়েন আগেও ছিল। চীন বহু বছর ধরে তার বৃহত্তর শিল্পনীতির অংশ হিসেবে এই খনিজগুলোর ওপর প্রায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। তাই বিরল খনিজকে কেন্দ্র করে চীনের কৌশলগত বৈশ্বিক প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টার বিপরীতে ট্রাম্প প্রশাসনও পাল্টা খেলায় নেমেছে।
২১ ঘণ্টা আগে
পশ্চিম সুদানের এল-ফাশের শহরে গণহত্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, হাজারো মানুষকে এরই মধ্যে হত্যা করা হয়েছে। শহরটি সুদানের দারফুর অঞ্চলের উত্তর প্রদেশের রাজধানী। সম্প্রতি এটি আধাসামরিক বাহিনী ‘র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস’ (আরএসএফ) দখল করেছে। এটি মূলত সুদানের গৃহযুদ্ধের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী বহিঃপ্রকা
১ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বিশ্ব রাজনীতিতে আবারও পারমাণবিক যুদ্ধের আতঙ্ক ঘনীভূত হচ্ছে। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র—দুই পরাশক্তির শীর্ষ নেতার সাম্প্রতিক ঘোষণায় এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, শীতল যুদ্ধের পর বিশ্বে যে পারমাণবিক ভারসাম্য তৈরি হয়েছিল, তা এখন ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হঠাৎ ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার কর্মসূচি আবারও শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘অন্য দেশগুলো যেহেতু পরীক্ষায় ব্যস্ত, আমরাও সমানভাবে আমাদের পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করব।’ তবে ট্রাম্পের এই বক্তব্যে স্পষ্ট নয়—তিনি সরাসরি পারমাণবিক বোমা পরীক্ষার কথা বলেছেন, নাকি পরমাণু সক্ষম অস্ত্রের মহড়ার কথা বলেছেন।
এই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগেই মস্কোর এক সামরিক হাসপাতালে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আরেকটি ‘অজেয়’ অস্ত্র পরীক্ষার দাবি করেন। তিনি জানান, রাশিয়া সফলভাবে ‘পোসাইডন’ নামের পরমাণু-চালিত টর্পেডো পরীক্ষায় সফল হয়েছে। ধারণা করা হয়, এই টর্পেডো প্রায় ৯ হাজার ৬৫০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত যেতে পারে এবং তা কোনোভাবেই প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। পুতিনের ভাষায়, ‘পোসাইডন’ পৃথিবীর যে কোনো আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের চেয়েও শক্তিশালী।’
তিনি আরও জানান, বহু প্রতীক্ষিত ‘সারমাত’ বা ‘স্যাটান ২’ ক্ষেপণাস্ত্রও শিগগিরই রুশ সেনাবাহিনীতে যুক্ত হবে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর পারমাণবিক অস্ত্রবাহী ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা হতে পারে।
২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে ‘নিউ স্টার্ট’ চুক্তি অনুযায়ী উভয় দেশ পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা সীমিত রাখার অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু ২০২৬ সালে এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। আর তার আগেই দুই দেশই নতুন অস্ত্র প্রদর্শনের প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
সপ্তাহখানেক আগে পুতিন ঘোষণা দিয়েছিলেন, রাশিয়া সফলভাবে ‘বুরেভেস্টনিক’ নামের পরমাণু-চালিত ক্রুজ মিসাইলের পরীক্ষাও সম্পন্ন করেছে। এই মিসাইল দীর্ঘ সময় ধরে সাবসনিক গতিতে উড়তে পারে বলে দাবি রুশ সামরিক বাহিনীর। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব পরমাণু-চালিত অস্ত্র প্রযুক্তিগতভাবে জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ, বাস্তবে ব্যবহারের জন্য এখনো অপ্রস্তুত।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, রাশিয়ার এই ‘পারমাণবিক ঝনঝনানি’ মূলত সামরিক নয়, কূটনৈতিক চাপের কৌশল। ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় ও পশ্চিমা বিশ্বের কঠোর অবস্থানের কারণে মস্কো চায়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ তার দাবিগুলোর প্রতি মনোযোগী হোক।
কিন্তু পুতিনের এই প্রদর্শনের জবাবে ট্রাম্পের নির্দেশ বিশ্বকে নতুন এক অনিশ্চিত পথে ঠেলে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, দুই শক্তিধর দেশের এই পাল্টাপাল্টি হুমকি পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতাকে আবারও উসকে দেবে। এর ফলে বিশ্বে শীতল-যুদ্ধ পরবর্তী সবচেয়ে ভয়ংকর অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে, যেখানে সামান্য ভুল বোঝাবুঝি বা অসতর্ক কোনো পদক্ষেপ মানবসভ্যতাকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেবে।

বিশ্ব রাজনীতিতে আবারও পারমাণবিক যুদ্ধের আতঙ্ক ঘনীভূত হচ্ছে। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র—দুই পরাশক্তির শীর্ষ নেতার সাম্প্রতিক ঘোষণায় এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, শীতল যুদ্ধের পর বিশ্বে যে পারমাণবিক ভারসাম্য তৈরি হয়েছিল, তা এখন ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হঠাৎ ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার কর্মসূচি আবারও শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘অন্য দেশগুলো যেহেতু পরীক্ষায় ব্যস্ত, আমরাও সমানভাবে আমাদের পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করব।’ তবে ট্রাম্পের এই বক্তব্যে স্পষ্ট নয়—তিনি সরাসরি পারমাণবিক বোমা পরীক্ষার কথা বলেছেন, নাকি পরমাণু সক্ষম অস্ত্রের মহড়ার কথা বলেছেন।
এই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগেই মস্কোর এক সামরিক হাসপাতালে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আরেকটি ‘অজেয়’ অস্ত্র পরীক্ষার দাবি করেন। তিনি জানান, রাশিয়া সফলভাবে ‘পোসাইডন’ নামের পরমাণু-চালিত টর্পেডো পরীক্ষায় সফল হয়েছে। ধারণা করা হয়, এই টর্পেডো প্রায় ৯ হাজার ৬৫০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত যেতে পারে এবং তা কোনোভাবেই প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। পুতিনের ভাষায়, ‘পোসাইডন’ পৃথিবীর যে কোনো আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের চেয়েও শক্তিশালী।’
তিনি আরও জানান, বহু প্রতীক্ষিত ‘সারমাত’ বা ‘স্যাটান ২’ ক্ষেপণাস্ত্রও শিগগিরই রুশ সেনাবাহিনীতে যুক্ত হবে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর পারমাণবিক অস্ত্রবাহী ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা হতে পারে।
২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে ‘নিউ স্টার্ট’ চুক্তি অনুযায়ী উভয় দেশ পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা সীমিত রাখার অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু ২০২৬ সালে এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। আর তার আগেই দুই দেশই নতুন অস্ত্র প্রদর্শনের প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
সপ্তাহখানেক আগে পুতিন ঘোষণা দিয়েছিলেন, রাশিয়া সফলভাবে ‘বুরেভেস্টনিক’ নামের পরমাণু-চালিত ক্রুজ মিসাইলের পরীক্ষাও সম্পন্ন করেছে। এই মিসাইল দীর্ঘ সময় ধরে সাবসনিক গতিতে উড়তে পারে বলে দাবি রুশ সামরিক বাহিনীর। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব পরমাণু-চালিত অস্ত্র প্রযুক্তিগতভাবে জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ, বাস্তবে ব্যবহারের জন্য এখনো অপ্রস্তুত।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, রাশিয়ার এই ‘পারমাণবিক ঝনঝনানি’ মূলত সামরিক নয়, কূটনৈতিক চাপের কৌশল। ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় ও পশ্চিমা বিশ্বের কঠোর অবস্থানের কারণে মস্কো চায়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ তার দাবিগুলোর প্রতি মনোযোগী হোক।
কিন্তু পুতিনের এই প্রদর্শনের জবাবে ট্রাম্পের নির্দেশ বিশ্বকে নতুন এক অনিশ্চিত পথে ঠেলে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, দুই শক্তিধর দেশের এই পাল্টাপাল্টি হুমকি পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতাকে আবারও উসকে দেবে। এর ফলে বিশ্বে শীতল-যুদ্ধ পরবর্তী সবচেয়ে ভয়ংকর অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে, যেখানে সামান্য ভুল বোঝাবুঝি বা অসতর্ক কোনো পদক্ষেপ মানবসভ্যতাকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেবে।


ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রে ‘স্টেট ভিজিট’ বা রাষ্ট্রীয় সফরে রয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। এই সফরেও তিনি যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। উইনস্টন চার্চিল, নেলসন ম্যান্ডেলার মতো অল্প কয়েকজন রাষ্ট্রনেতা এই সম্মান পেয়েছেন।
২২ জুন ২০২৩
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁর দেশ আবারও পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষায় ফিরবে। তাঁর এই ঘোষণা দেশটির দীর্ঘদিনের নীতিতে এক বিশাল পরিবর্তন। ট্রাম্প নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘যেহেতু অন্যান্য দেশগুলোও পরীক্ষা চালাচ্ছে, তাই আমিও অন্যদের সঙ্গে সমানতাল
৪ ঘণ্টা আগে
বিরল খনিজ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের এই টানাপোড়েন আগেও ছিল। চীন বহু বছর ধরে তার বৃহত্তর শিল্পনীতির অংশ হিসেবে এই খনিজগুলোর ওপর প্রায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। তাই বিরল খনিজকে কেন্দ্র করে চীনের কৌশলগত বৈশ্বিক প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টার বিপরীতে ট্রাম্প প্রশাসনও পাল্টা খেলায় নেমেছে।
২১ ঘণ্টা আগে
পশ্চিম সুদানের এল-ফাশের শহরে গণহত্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, হাজারো মানুষকে এরই মধ্যে হত্যা করা হয়েছে। শহরটি সুদানের দারফুর অঞ্চলের উত্তর প্রদেশের রাজধানী। সম্প্রতি এটি আধাসামরিক বাহিনী ‘র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস’ (আরএসএফ) দখল করেছে। এটি মূলত সুদানের গৃহযুদ্ধের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী বহিঃপ্রকা
১ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের একটি বড় বিতর্কিত বিষয় হলো বিরল খনিজ উপাদান। এই সমস্যার সমাধান করতেই দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করার আলোচনা চলছে।
কয়েক মাস ধরে মার্কিন বাণিজ্য আলোচকদের সঙ্গে বিভিন্ন দফায় আলোচনা হলেও চীন গুরুত্বপূর্ণ বিরল খনিজ উপাদান সরবরাহের বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে গড়িমসি করে যাচ্ছিল। এমনকি, মার্কিন কোম্পানিগুলোকে দ্রুত বিরল খনিজ লাইসেন্স দেওয়ার আগের নিশ্চয়তাও বাস্তবায়ন করেনি। উল্টো বেইজিং এই মাসের শুরুতে বিরল খনিজ রপ্তানিতে নতুন করে বিধিনিষেধ দেয়, যার ফলে নিষেধাজ্ঞার পরিধি ব্যাপক হারে বাড়ে।
আজ বৃহস্পতিবারের চুক্তির আওতায় চীন নতুন করে চাপানো এসব নিয়ম শিথিল করতে সম্মত হয়েছে। তবে এপ্রিলে ঘোষিত প্রাথমিক নিষেধাজ্ঞাগুলো সম্ভবত এখনো বহাল আছে।
বিরল খনিজ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের এই টানাপোড়েন আগেও ছিল। চীন বহু বছর ধরে তার বৃহত্তর শিল্পনীতির অংশ হিসেবে এই খনিজগুলোর ওপর প্রায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। তাই বিরল খনিজকে কেন্দ্র করে চীনের কৌশলগত বৈশ্বিক প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টার বিপরীতে ট্রাম্প প্রশাসনও পাল্টা খেলায় নেমেছে।
বিরল খনিজ আসলে কী?
রেয়ার আর্থ মিনারেলস বা বিরল মৃত্তিকা খনিজ বলতে পর্যায় সারণির ১৭টি ধাতব উপাদানকে বোঝায়, যার মধ্যে স্ক্যান্ডিয়াম, ইট্রিয়াম এবং ল্যান্থানাইডস অন্তর্ভুক্ত। এগুলো রকেট, যুদ্ধবিমান, স্মার্টফোন, ইলেকট্রিক গাড়ির মোটর, উইন্ড টারবাইন, সোলার প্যানেল, স্যাটেলাইট যোগাযোগব্যবস্থা, এমনকি মিসাইল গাইডেন্স সিস্টেমসহ নানা যন্ত্র তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। একুশ শতকের শিল্প ও সামরিক শক্তির ভিত্তি হিসেবে এই খনিজগুলো পুরোপুরি নির্ভরশীল।
‘বিরল খনিজ’ নামটি কিছুটা ভুল। কারণ, এই উপাদানগুলো পৃথিবীর ভূত্বকের প্রায় সর্বত্র পাওয়া যায়। এগুলো সোনার চেয়েও বেশি পরিমাণে রয়েছে, কিন্তু এগুলোর নিষ্কাশন ও প্রক্রিয়াকরণ করা কঠিন, ব্যয়বহুল এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মধ্যে খনন করা বিরল খনিজ উৎপাদনের ৬১ শতাংশই আসে চীন থেকে। এ ছাড়া বিশ্বজুড়ে প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে ৯২ শতাংশ আউটপুট নিয়ন্ত্রণ করে দেশটি।
বিরল খনিজের ব্যবহার
বিরল খনিজ দৈনন্দিন প্রযুক্তিতে সব জায়গায় ব্যবহৃত হয়—স্মার্টফোন থেকে শুরু করে উইন্ড টারবাইন, এলইডি লাইট এবং ফ্ল্যাট-স্ক্রিন টিভি পর্যন্ত। বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি, সেই সঙ্গে এমআরআই স্ক্যানার এবং ক্যানসার চিকিৎসার জন্যও এগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর জন্যও বিরল খনিজ অপরিহার্য। সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) ২০২৫ সালের এক গবেষণা অনুসারে, এগুলো এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান, সাবমেরিন, লেজার, স্যাটেলাইট, টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র এবং আরও অনেক কিছুতে ব্যবহৃত হয়।
উৎস ও বৈশ্বিক নিয়ন্ত্রণ
ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির তথ্য অনুযায়ী, খনন করা বিরল খনিজ উৎপাদনের ৬১ শতাংশ আসে চীন থেকে। এর পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে বিরল খনিজ প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে ৯২ শতাংশ আউটপুট নিয়ন্ত্রণ করে দেশটি।
আণবিক ওজন অনুসারে বিরল খনিজ দুই প্রকার—ভারী ও হালকা। ভারী বিরল খনিজগুলো আরও দুর্লভ। নিষ্কাশনের পর এই বিরল খনিজগুলো আলাদা করার সক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের নেই।
সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের ক্রিটিক্যাল মিনারেলস সিকিউরিটি প্রোগ্রামের পরিচালক গ্রেসলিন ভাস্করান সিএনএনকে বলেন, ‘বছরের শুরু পর্যন্ত, ক্যালিফোর্নিয়ায় আমরা যে ভারী বিরল খনিজগুলো উত্তোলন করেছি, সেগুলোকে আলাদা করার জন্য চীনে পাঠাতে হতো।’
তবে, এপ্রিলে ট্রাম্প প্রশাসন চীন থেকে আমদানি পণ্যের ওপর চড়া শুল্ক ঘোষণার পর এই প্রক্রিয়াটি বন্ধ হয়ে যায়। তিনি বলেন, চীন বিরল খনিজ আলাদা করার ক্ষেত্রে আমেরিকার নির্ভরতাকে ‘অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে’।
ভাস্করান জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় বিরল খনিজের মাত্র একটি খনি চালু আছে। অর্থাৎ চীন এই বিরল খনিজে যতটা স্বয়ংসম্পূর্ণ, যুক্তরাষ্ট্র তার ধারেকাছে নেই।
বাণিজ্যযুদ্ধে এর গুরুত্ব কেন
বাণিজ্যযুদ্ধে বেইজিং বিরল খনিজকে দর-কষাকষির প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। আজ বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত অ্যাপেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে সি চিন পিং ও ট্রাম্পের বৈঠকের প্রধান আলোচ্য বিষয় এই বিরল খনিজ।
এই মাসের শুরুতে চীন আরও পাঁচটি বিরল খনিজ উপাদান—হোলমিয়াম, এরবিয়াম, থুলিয়াম, ইউরোপিয়াম, ইটারবিয়াম এবং সম্পর্কিত ম্যাগনেট ও উপকরণগুলোকে বিদ্যমান নিয়ন্ত্রণ তালিকায় যুক্ত করে, যার জন্য রপ্তানি লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে নিয়ন্ত্রিত বিরল খনিজের মোট সংখ্যা ১২-তে পৌঁছায়। চীন বিরল খনিজ উৎপাদন প্রযুক্তিও দেশের বাইরে রপ্তানির জন্য লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করেছে।
তবে বিরল খনিজ নিয়ন্ত্রণে চীনা বিধিনিষেধের বিষয়ে এবারই প্রথম ক্ষুব্ধ হননি ট্রাম্প। গত জুনে ট্রুথ সোশ্যালে তিনি বলেছিলেন, চীন সাতটি বিরল খনিজ এবং সংশ্লিষ্ট পণ্যের ওপর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখে বাণিজ্য যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। এরপর তিনি চীনের ওপর আরও শুল্ক আরোপের হুমকি দেন।
বাণিজ্য বিশ্লেষকদের ধারণা, বিরল খনিজের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে চীনের বিধিনিষেধ বিশ্ববাণিজ্যে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ এই বস্তুটির জন্য যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা বিরল খনিজ যৌগ ও ধাতুর ৭০ শতাংশই এসেছিল চীন থেকে। তাই বিরল খনিজ নিয়ে বৃহৎ দুই অর্থনীতির দ্বন্দ্ব পুরো বিশ্বে বাণিজ্যযুদ্ধ বাধিয়ে দিতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের একটি বড় বিতর্কিত বিষয় হলো বিরল খনিজ উপাদান। এই সমস্যার সমাধান করতেই দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করার আলোচনা চলছে।
কয়েক মাস ধরে মার্কিন বাণিজ্য আলোচকদের সঙ্গে বিভিন্ন দফায় আলোচনা হলেও চীন গুরুত্বপূর্ণ বিরল খনিজ উপাদান সরবরাহের বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে গড়িমসি করে যাচ্ছিল। এমনকি, মার্কিন কোম্পানিগুলোকে দ্রুত বিরল খনিজ লাইসেন্স দেওয়ার আগের নিশ্চয়তাও বাস্তবায়ন করেনি। উল্টো বেইজিং এই মাসের শুরুতে বিরল খনিজ রপ্তানিতে নতুন করে বিধিনিষেধ দেয়, যার ফলে নিষেধাজ্ঞার পরিধি ব্যাপক হারে বাড়ে।
আজ বৃহস্পতিবারের চুক্তির আওতায় চীন নতুন করে চাপানো এসব নিয়ম শিথিল করতে সম্মত হয়েছে। তবে এপ্রিলে ঘোষিত প্রাথমিক নিষেধাজ্ঞাগুলো সম্ভবত এখনো বহাল আছে।
বিরল খনিজ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের এই টানাপোড়েন আগেও ছিল। চীন বহু বছর ধরে তার বৃহত্তর শিল্পনীতির অংশ হিসেবে এই খনিজগুলোর ওপর প্রায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। তাই বিরল খনিজকে কেন্দ্র করে চীনের কৌশলগত বৈশ্বিক প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টার বিপরীতে ট্রাম্প প্রশাসনও পাল্টা খেলায় নেমেছে।
বিরল খনিজ আসলে কী?
রেয়ার আর্থ মিনারেলস বা বিরল মৃত্তিকা খনিজ বলতে পর্যায় সারণির ১৭টি ধাতব উপাদানকে বোঝায়, যার মধ্যে স্ক্যান্ডিয়াম, ইট্রিয়াম এবং ল্যান্থানাইডস অন্তর্ভুক্ত। এগুলো রকেট, যুদ্ধবিমান, স্মার্টফোন, ইলেকট্রিক গাড়ির মোটর, উইন্ড টারবাইন, সোলার প্যানেল, স্যাটেলাইট যোগাযোগব্যবস্থা, এমনকি মিসাইল গাইডেন্স সিস্টেমসহ নানা যন্ত্র তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। একুশ শতকের শিল্প ও সামরিক শক্তির ভিত্তি হিসেবে এই খনিজগুলো পুরোপুরি নির্ভরশীল।
‘বিরল খনিজ’ নামটি কিছুটা ভুল। কারণ, এই উপাদানগুলো পৃথিবীর ভূত্বকের প্রায় সর্বত্র পাওয়া যায়। এগুলো সোনার চেয়েও বেশি পরিমাণে রয়েছে, কিন্তু এগুলোর নিষ্কাশন ও প্রক্রিয়াকরণ করা কঠিন, ব্যয়বহুল এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মধ্যে খনন করা বিরল খনিজ উৎপাদনের ৬১ শতাংশই আসে চীন থেকে। এ ছাড়া বিশ্বজুড়ে প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে ৯২ শতাংশ আউটপুট নিয়ন্ত্রণ করে দেশটি।
বিরল খনিজের ব্যবহার
বিরল খনিজ দৈনন্দিন প্রযুক্তিতে সব জায়গায় ব্যবহৃত হয়—স্মার্টফোন থেকে শুরু করে উইন্ড টারবাইন, এলইডি লাইট এবং ফ্ল্যাট-স্ক্রিন টিভি পর্যন্ত। বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি, সেই সঙ্গে এমআরআই স্ক্যানার এবং ক্যানসার চিকিৎসার জন্যও এগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর জন্যও বিরল খনিজ অপরিহার্য। সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) ২০২৫ সালের এক গবেষণা অনুসারে, এগুলো এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান, সাবমেরিন, লেজার, স্যাটেলাইট, টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র এবং আরও অনেক কিছুতে ব্যবহৃত হয়।
উৎস ও বৈশ্বিক নিয়ন্ত্রণ
ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির তথ্য অনুযায়ী, খনন করা বিরল খনিজ উৎপাদনের ৬১ শতাংশ আসে চীন থেকে। এর পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে বিরল খনিজ প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে ৯২ শতাংশ আউটপুট নিয়ন্ত্রণ করে দেশটি।
আণবিক ওজন অনুসারে বিরল খনিজ দুই প্রকার—ভারী ও হালকা। ভারী বিরল খনিজগুলো আরও দুর্লভ। নিষ্কাশনের পর এই বিরল খনিজগুলো আলাদা করার সক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের নেই।
সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের ক্রিটিক্যাল মিনারেলস সিকিউরিটি প্রোগ্রামের পরিচালক গ্রেসলিন ভাস্করান সিএনএনকে বলেন, ‘বছরের শুরু পর্যন্ত, ক্যালিফোর্নিয়ায় আমরা যে ভারী বিরল খনিজগুলো উত্তোলন করেছি, সেগুলোকে আলাদা করার জন্য চীনে পাঠাতে হতো।’
তবে, এপ্রিলে ট্রাম্প প্রশাসন চীন থেকে আমদানি পণ্যের ওপর চড়া শুল্ক ঘোষণার পর এই প্রক্রিয়াটি বন্ধ হয়ে যায়। তিনি বলেন, চীন বিরল খনিজ আলাদা করার ক্ষেত্রে আমেরিকার নির্ভরতাকে ‘অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে’।
ভাস্করান জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় বিরল খনিজের মাত্র একটি খনি চালু আছে। অর্থাৎ চীন এই বিরল খনিজে যতটা স্বয়ংসম্পূর্ণ, যুক্তরাষ্ট্র তার ধারেকাছে নেই।
বাণিজ্যযুদ্ধে এর গুরুত্ব কেন
বাণিজ্যযুদ্ধে বেইজিং বিরল খনিজকে দর-কষাকষির প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। আজ বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত অ্যাপেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে সি চিন পিং ও ট্রাম্পের বৈঠকের প্রধান আলোচ্য বিষয় এই বিরল খনিজ।
এই মাসের শুরুতে চীন আরও পাঁচটি বিরল খনিজ উপাদান—হোলমিয়াম, এরবিয়াম, থুলিয়াম, ইউরোপিয়াম, ইটারবিয়াম এবং সম্পর্কিত ম্যাগনেট ও উপকরণগুলোকে বিদ্যমান নিয়ন্ত্রণ তালিকায় যুক্ত করে, যার জন্য রপ্তানি লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে নিয়ন্ত্রিত বিরল খনিজের মোট সংখ্যা ১২-তে পৌঁছায়। চীন বিরল খনিজ উৎপাদন প্রযুক্তিও দেশের বাইরে রপ্তানির জন্য লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করেছে।
তবে বিরল খনিজ নিয়ন্ত্রণে চীনা বিধিনিষেধের বিষয়ে এবারই প্রথম ক্ষুব্ধ হননি ট্রাম্প। গত জুনে ট্রুথ সোশ্যালে তিনি বলেছিলেন, চীন সাতটি বিরল খনিজ এবং সংশ্লিষ্ট পণ্যের ওপর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখে বাণিজ্য যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। এরপর তিনি চীনের ওপর আরও শুল্ক আরোপের হুমকি দেন।
বাণিজ্য বিশ্লেষকদের ধারণা, বিরল খনিজের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে চীনের বিধিনিষেধ বিশ্ববাণিজ্যে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ এই বস্তুটির জন্য যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা বিরল খনিজ যৌগ ও ধাতুর ৭০ শতাংশই এসেছিল চীন থেকে। তাই বিরল খনিজ নিয়ে বৃহৎ দুই অর্থনীতির দ্বন্দ্ব পুরো বিশ্বে বাণিজ্যযুদ্ধ বাধিয়ে দিতে পারে।


ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রে ‘স্টেট ভিজিট’ বা রাষ্ট্রীয় সফরে রয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। এই সফরেও তিনি যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। উইনস্টন চার্চিল, নেলসন ম্যান্ডেলার মতো অল্প কয়েকজন রাষ্ট্রনেতা এই সম্মান পেয়েছেন।
২২ জুন ২০২৩
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁর দেশ আবারও পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষায় ফিরবে। তাঁর এই ঘোষণা দেশটির দীর্ঘদিনের নীতিতে এক বিশাল পরিবর্তন। ট্রাম্প নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘যেহেতু অন্যান্য দেশগুলোও পরীক্ষা চালাচ্ছে, তাই আমিও অন্যদের সঙ্গে সমানতাল
৪ ঘণ্টা আগে
বিশ্ব রাজনীতিতে আবারও পারমাণবিক যুদ্ধের আতঙ্ক ঘনীভূত হচ্ছে। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র—দুই পরাশক্তির শীর্ষ নেতার সাম্প্রতিক ঘোষণায় এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, শীতল যুদ্ধের পর বিশ্বে যে পারমাণবিক ভারসাম্য তৈরি হয়েছিল, তা এখন ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে।
১৬ ঘণ্টা আগে
পশ্চিম সুদানের এল-ফাশের শহরে গণহত্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, হাজারো মানুষকে এরই মধ্যে হত্যা করা হয়েছে। শহরটি সুদানের দারফুর অঞ্চলের উত্তর প্রদেশের রাজধানী। সম্প্রতি এটি আধাসামরিক বাহিনী ‘র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস’ (আরএসএফ) দখল করেছে। এটি মূলত সুদানের গৃহযুদ্ধের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী বহিঃপ্রকা
১ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

পশ্চিম সুদানের এল-ফাশের শহরে গণহত্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, হাজারো মানুষকে এরই মধ্যে হত্যা করা হয়েছে। শহরটি সুদানের দারফুর অঞ্চলের উত্তর প্রদেশের রাজধানী। সম্প্রতি এটি আধাসামরিক বাহিনী ‘র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস’ (আরএসএফ) দখল করেছে। এটি মূলত সুদানের গৃহযুদ্ধের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী বহিঃপ্রকাশ।
গত রোববার এল-ফাশের আরএসএফ দখল করে নেয়। এর আগে তারা ১৮ মাস ধরে শহরটি ঘিরে রেখেছিল। এই সময়ে খাবার, ওষুধ ও জরুরি পণ্য প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। শহরের ভেতরে আটকা পড়া লাখো মানুষ ক্ষুধা ও রোগে ভুগছিল। সুদান আড়াই বছর ধরে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত অন্তত ৪০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে।
এল-ফাশেরে কী ঘটেছে
রোববার আরএসএফ পুরো শহর দখল করে। তারা অঞ্চলটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর (এসএএফ) শেষ ঘাঁটিটিও দখল করে নেয়। সেনাবাহিনীর হিসেবে বুধবার পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। সুদান ডক্টরস নেটওয়ার্কের হিসাব অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা কমপক্ষে ১ হাজার ৫০০।
প্রায় ১৮ মাস ধরে অবরুদ্ধ শহরে প্রায় ১২ লাখ মানুষ টিকে ছিল স্রেফ পশুখাদ্য খেয়ে। আরএসএফ ৫৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্যারিকেড তৈরি করে খাবার ও ওষুধের প্রবেশ বন্ধ করে দেয় এবং মানুষের পালানোর পথও রুদ্ধ করে রাখে। আল–জাজিরার যাচাইকৃত ভিডিওতে দেখা গেছে, আরএসএফ সদস্যরা মানুষকে গুলি করছে, নির্যাতন করছে। আগেও তারা নিজেদের এমন নৃশংসতা ভিডিও করে ছড়িয়েছে।
সুদানি চিকিৎসক ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে, আরএসএফ গণহত্যা চালাচ্ছে, মানুষকে আটক করছে এবং হাসপাতালগুলোয় হামলা করছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর জানিয়েছে, পালিয়ে যাওয়া মানুষদেরও হত্যা করা হচ্ছে। এসব হত্যার পেছনে জাতিগত উদ্দেশ্যের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাব উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণ করে বলেছে, মাটির রং পরিবর্তন ও ছোট ছোট বস্তুসমষ্টি দেখা গেছে, যা মৃতদেহ ও রক্তের চিহ্ন হতে পারে। এই দাগগুলো আরএসএফ দখলের আগে দেখা যায়নি। জাতিসংঘ জানিয়েছে, মাত্র দুই দিনে ২৬ হাজার মানুষ শহর থেকে পালিয়েছে। তারা বেশির ভাগই পায়ে হেঁটে পশ্চিমে টাওয়িলা শহরের দিকে গেছে, যা ৭০ কিলোমিটার দূরে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মতে, এখনো প্রায় ১ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ এল-ফাশেরে আটকা পড়ে আছে।
এদিকে পাশের উত্তর কোরদোফান প্রদেশের বারা শহরেও হত্যাকাণ্ডের খবর এসেছে। ২৫ অক্টোবর আরএসএফ শহরটি দখলের ঘোষণা দেয়। সেখানে সাধারণ মানুষ ও ত্রাণকর্মীদের ওপরও হামলা চালানো হয়েছে। রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্টের আন্তর্জাতিক ফেডারেশন জানিয়েছে, বারায় তাদের পাঁচজন স্বেচ্ছাসেবক নিহত হয়েছেন, তিনজন নিখোঁজ। বারা শহরটি এল-ওবেইদের কাছে, যা এখনো সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে আরএসএফ সেখানে অগ্রসর হচ্ছে।
এল-ফাশের ও এল-ওবেইদ কেন গুরুত্বপূর্ণ
দুই শহরই পশ্চিম সুদানের প্রধান শহর এবং এখন যুদ্ধক্ষেত্র। আরএসএফ ইতিমধ্যে দেশের পশ্চিমাংশে দৃঢ় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। তারা পুরো অঞ্চল দখল করতে চায়। সেনাবাহিনী পূর্ব দিক থেকে আরএসএফের নিয়ন্ত্রণে ঢোকার চেষ্টা করছে। এল-ফাশের ছিল উত্তর দারফুরের রাজধানী এবং দারফুর অঞ্চলে সেনাবাহিনীর শেষ বড় ঘাঁটি। এটি হারানোর পর দেশ কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে—পূর্বে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ, পশ্চিমে আরএসএফের শাসন।
আরএসএফ এখন দারফুরে নিজেদের সমান্তরাল সরকার গঠন করেছে। সেনাবাহিনী অবস্থান করছে পূর্ব, মধ্য ও উত্তরাঞ্চলে। এল-ওবেইদ উত্তর কোরদোফান প্রদেশের রাজধানী এবং তেলসমৃদ্ধ শহর। এটি দারফুর ও রাজধানী খার্তুমের মধ্যে কৌশলগত সংযোগস্থল। বর্তমানে এটি সেনাবাহিনীর হাতে, কিন্তু আরএসএফ শহরটির দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
গত ২৫ অক্টোবর আরএসএফ ঘোষণা দেয় যে তারা বারা শহর পুনর্দখল করেছে, যা এল-ওবেইদ থেকে মাত্র ৫৯ কিলোমিটার দূরে। গত সেপ্টেম্বরে সেনাবাহিনী ওই শহরটি আরএসএফের কাছ থেকে পুনরায় নিয়েছিল। এখন আরএসএফ বারা থেকে এল-ওবেইদে হামলা চালাচ্ছে। জুলাই পর্যন্ত সেখানে অন্তত ১ লাখ ৩৭ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল।
দুই পক্ষের বক্তব্য
সোমবার সেনাপ্রধান ও কার্যত রাষ্ট্রপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান বলেন, জনগণকে বাঁচাতে তার বাহিনী এল-ফাশের থেকে সরে গেছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের জনগণের ওপর যা ঘটেছে, তার প্রতিশোধ নেওয়া হবে।’ বুধবার সুদান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুসেইন আল-আমিন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করেন।
আরএসএফের নেতা মুহাম্মদ হামদান দাগালো—যিনি হেমেদতি নামেও পরিচিত—দাবি করেন, তারা সুদানকে ‘সত্যিকারের গণতন্ত্রে ঐক্যবদ্ধ’ করতে চান। তিনি বলেন, যারা বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে, তাদের জবাবদিহির মুখোমুখি করা হবে।
আরএসএফ কারা
আরএসএফের যাত্রা শুরু ২০০৩ সালে, দারফুর যুদ্ধের সময়। তখন তাদের নাম ছিল ‘জানজাওয়িদ।’ তারা ছিল এক যাযাবর সশস্ত্র দল। সে সময় তারা প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরের পক্ষে লড়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ—তারা স্থানীয় জাতিগোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালিয়েছিল। মানবাধিকার সংগঠনগুলো একে গণহত্যা হিসেবে বর্ণনা করেছে। এতে ১ লাখ থেকে ৩ লাখ মানুষ নিহত হয় এবং ২৫ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়।
এরপর, ২০১৩ সালে আল-বশির জানজাওয়িদ বাহিনীকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস’ নামে প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৭ সালে আইন করে এই বাহিনীকে স্বাধীন নিরাপত্তা সংস্থার মর্যাদা দেওয়া হয়। ২০১৯ সালে আরএসএফ গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেয় এবং ওমর আল-বশিরকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সহায়তা করে। পরে ২০২১ সালে তারা সেনাবাহিনীর সঙ্গে মিলে বেসামরিক প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লাহ হামদককে উৎখাত করে। এতে দেশটির বেসামরিক-সামরিক যৌথ শাসনব্যবস্থা শেষ হয়ে যায়।
সংঘাতের শুরু যেভাবে
আরএসএফ নেতা হেমেদতি ও সেনাপ্রধান আল-বুরহানের মধ্যে মতবিরোধ বাড়তে থাকে। মূল প্রশ্ন ছিল—আরএসএফ কবে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত হবে এবং কে দেশের নেতৃত্ব দেবে। ২০২৩ সালে ১৫ এপ্রিল এই বিরোধ পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে রূপ নেয়। সেনাবাহিনী চায়, আরএসএফ পুরোপুরি তাদের অধীনে আসুক। কিন্তু আরএসএফ স্বাধীন থাকতে চায়।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, দুই পক্ষই যুদ্ধাপরাধ ও নৃশংসতা চালিয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দেয়, দারফুরে আরএসএফ ও তাদের মিত্ররা গণহত্যা চালাচ্ছে। এতে সবচেয়ে বড় বিপদে পড়েছে সাধারণ মানুষ। সুদানি মানবাধিকার সংগঠনগুলো আগে থেকেই সতর্ক করেছিল, আরএসএফ যদি এল-ফাশের দখল করে, তাহলে তা সাধারণ মানুষের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে।
আল–জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পালিয়ে আসা মানুষজন জানিয়েছে—আরএসএফ সদস্যরা ঘরে ঘরে গিয়ে জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে মানুষ হত্যা করছে। এল–ফাশের শহরে সৌদি হাসপাতালেই প্রায় ৫০০ মানুষ নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সেখানে রোগী, স্বাস্থ্যকর্মী ও আশ্রয়প্রার্থী সাধারণ মানুষ ছিল।
আরএসএফ শত শত মানুষকে আটক করেছে। বহু নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, আরএসএফ যেসব শহর দখল করবে, সেখানেও গণহত্যার আশঙ্কা রয়েছে।
এল-ফাশের দখলের ফলে আরএসএফ এখন পুরো দারফুর অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণে। অঞ্চলটি কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি চাদ, লিবিয়া ও দক্ষিণ সুদানের সীমান্তে অবস্থিত এবং সোনার প্রধান উৎসগুলোর একটি। ইতালির আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক গবেষণা সংস্থা আইএসপিআই ২০২৪ সালের প্রতিবেদনে বলেছে, দারফুরের সোনার জন্য লড়াইই এই যুদ্ধের অন্যতম কারণ।
সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র ও আফ্রিকান ইউনিয়নের মধ্যস্থতায় বহুবার আলোচনার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু কোনো ফল মেলেনি। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, মিশর ও সংযুক্ত আরব আমিরাত মিলে ‘কোয়াড’ নামে একটি জোট গঠন করেছে। তারা ১২ সেপ্টেম্বর যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনা ঘোষণা করে।
তাদের পরিকল্পনায় বলা হয়েছিল, তিন মাসের মানবিক বিরতি দেওয়া হবে যাতে ত্রাণ সহায়তা প্রবেশ করতে পারে। এরপর স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং নয় মাসের মধ্যে বেসামরিক সরকারে ফেরার প্রক্রিয়া শুরু হবে। প্রথমে সেনাপ্রধান আল-বুরহান এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি চান, আরএসএফ ভেঙে দেওয়া হোক। কিন্তু ১৫ অক্টোবর মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ এল-সিসির সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি কিছুটা নমনীয় হন।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে দুই পক্ষের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা হয়। অক্টোবরের শেষে আরও বৈঠকের কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই আরএসএফ এল-ফাশের দখল করে নেয়। এখন আলোচনা কোন পথে যাবে, তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ফলে, এই অবস্থায় আশঙ্কা বাড়ছে যে, যেহেতু দারফুর অঞ্চল প্রায় পুরোটাই আরএসএফের হাতে চলে গেছে, তাহলে কি সুদান আরও একবার ভাঙতে চলেছে। এর আগে, সুদান ভেঙে দক্ষিণ সুদান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়।

পশ্চিম সুদানের এল-ফাশের শহরে গণহত্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, হাজারো মানুষকে এরই মধ্যে হত্যা করা হয়েছে। শহরটি সুদানের দারফুর অঞ্চলের উত্তর প্রদেশের রাজধানী। সম্প্রতি এটি আধাসামরিক বাহিনী ‘র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস’ (আরএসএফ) দখল করেছে। এটি মূলত সুদানের গৃহযুদ্ধের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী বহিঃপ্রকাশ।
গত রোববার এল-ফাশের আরএসএফ দখল করে নেয়। এর আগে তারা ১৮ মাস ধরে শহরটি ঘিরে রেখেছিল। এই সময়ে খাবার, ওষুধ ও জরুরি পণ্য প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। শহরের ভেতরে আটকা পড়া লাখো মানুষ ক্ষুধা ও রোগে ভুগছিল। সুদান আড়াই বছর ধরে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত অন্তত ৪০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে।
এল-ফাশেরে কী ঘটেছে
রোববার আরএসএফ পুরো শহর দখল করে। তারা অঞ্চলটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর (এসএএফ) শেষ ঘাঁটিটিও দখল করে নেয়। সেনাবাহিনীর হিসেবে বুধবার পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। সুদান ডক্টরস নেটওয়ার্কের হিসাব অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা কমপক্ষে ১ হাজার ৫০০।
প্রায় ১৮ মাস ধরে অবরুদ্ধ শহরে প্রায় ১২ লাখ মানুষ টিকে ছিল স্রেফ পশুখাদ্য খেয়ে। আরএসএফ ৫৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্যারিকেড তৈরি করে খাবার ও ওষুধের প্রবেশ বন্ধ করে দেয় এবং মানুষের পালানোর পথও রুদ্ধ করে রাখে। আল–জাজিরার যাচাইকৃত ভিডিওতে দেখা গেছে, আরএসএফ সদস্যরা মানুষকে গুলি করছে, নির্যাতন করছে। আগেও তারা নিজেদের এমন নৃশংসতা ভিডিও করে ছড়িয়েছে।
সুদানি চিকিৎসক ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে, আরএসএফ গণহত্যা চালাচ্ছে, মানুষকে আটক করছে এবং হাসপাতালগুলোয় হামলা করছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর জানিয়েছে, পালিয়ে যাওয়া মানুষদেরও হত্যা করা হচ্ছে। এসব হত্যার পেছনে জাতিগত উদ্দেশ্যের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাব উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণ করে বলেছে, মাটির রং পরিবর্তন ও ছোট ছোট বস্তুসমষ্টি দেখা গেছে, যা মৃতদেহ ও রক্তের চিহ্ন হতে পারে। এই দাগগুলো আরএসএফ দখলের আগে দেখা যায়নি। জাতিসংঘ জানিয়েছে, মাত্র দুই দিনে ২৬ হাজার মানুষ শহর থেকে পালিয়েছে। তারা বেশির ভাগই পায়ে হেঁটে পশ্চিমে টাওয়িলা শহরের দিকে গেছে, যা ৭০ কিলোমিটার দূরে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মতে, এখনো প্রায় ১ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ এল-ফাশেরে আটকা পড়ে আছে।
এদিকে পাশের উত্তর কোরদোফান প্রদেশের বারা শহরেও হত্যাকাণ্ডের খবর এসেছে। ২৫ অক্টোবর আরএসএফ শহরটি দখলের ঘোষণা দেয়। সেখানে সাধারণ মানুষ ও ত্রাণকর্মীদের ওপরও হামলা চালানো হয়েছে। রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্টের আন্তর্জাতিক ফেডারেশন জানিয়েছে, বারায় তাদের পাঁচজন স্বেচ্ছাসেবক নিহত হয়েছেন, তিনজন নিখোঁজ। বারা শহরটি এল-ওবেইদের কাছে, যা এখনো সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে আরএসএফ সেখানে অগ্রসর হচ্ছে।
এল-ফাশের ও এল-ওবেইদ কেন গুরুত্বপূর্ণ
দুই শহরই পশ্চিম সুদানের প্রধান শহর এবং এখন যুদ্ধক্ষেত্র। আরএসএফ ইতিমধ্যে দেশের পশ্চিমাংশে দৃঢ় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। তারা পুরো অঞ্চল দখল করতে চায়। সেনাবাহিনী পূর্ব দিক থেকে আরএসএফের নিয়ন্ত্রণে ঢোকার চেষ্টা করছে। এল-ফাশের ছিল উত্তর দারফুরের রাজধানী এবং দারফুর অঞ্চলে সেনাবাহিনীর শেষ বড় ঘাঁটি। এটি হারানোর পর দেশ কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে—পূর্বে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ, পশ্চিমে আরএসএফের শাসন।
আরএসএফ এখন দারফুরে নিজেদের সমান্তরাল সরকার গঠন করেছে। সেনাবাহিনী অবস্থান করছে পূর্ব, মধ্য ও উত্তরাঞ্চলে। এল-ওবেইদ উত্তর কোরদোফান প্রদেশের রাজধানী এবং তেলসমৃদ্ধ শহর। এটি দারফুর ও রাজধানী খার্তুমের মধ্যে কৌশলগত সংযোগস্থল। বর্তমানে এটি সেনাবাহিনীর হাতে, কিন্তু আরএসএফ শহরটির দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
গত ২৫ অক্টোবর আরএসএফ ঘোষণা দেয় যে তারা বারা শহর পুনর্দখল করেছে, যা এল-ওবেইদ থেকে মাত্র ৫৯ কিলোমিটার দূরে। গত সেপ্টেম্বরে সেনাবাহিনী ওই শহরটি আরএসএফের কাছ থেকে পুনরায় নিয়েছিল। এখন আরএসএফ বারা থেকে এল-ওবেইদে হামলা চালাচ্ছে। জুলাই পর্যন্ত সেখানে অন্তত ১ লাখ ৩৭ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল।
দুই পক্ষের বক্তব্য
সোমবার সেনাপ্রধান ও কার্যত রাষ্ট্রপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান বলেন, জনগণকে বাঁচাতে তার বাহিনী এল-ফাশের থেকে সরে গেছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের জনগণের ওপর যা ঘটেছে, তার প্রতিশোধ নেওয়া হবে।’ বুধবার সুদান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুসেইন আল-আমিন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করেন।
আরএসএফের নেতা মুহাম্মদ হামদান দাগালো—যিনি হেমেদতি নামেও পরিচিত—দাবি করেন, তারা সুদানকে ‘সত্যিকারের গণতন্ত্রে ঐক্যবদ্ধ’ করতে চান। তিনি বলেন, যারা বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে, তাদের জবাবদিহির মুখোমুখি করা হবে।
আরএসএফ কারা
আরএসএফের যাত্রা শুরু ২০০৩ সালে, দারফুর যুদ্ধের সময়। তখন তাদের নাম ছিল ‘জানজাওয়িদ।’ তারা ছিল এক যাযাবর সশস্ত্র দল। সে সময় তারা প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরের পক্ষে লড়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ—তারা স্থানীয় জাতিগোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালিয়েছিল। মানবাধিকার সংগঠনগুলো একে গণহত্যা হিসেবে বর্ণনা করেছে। এতে ১ লাখ থেকে ৩ লাখ মানুষ নিহত হয় এবং ২৫ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়।
এরপর, ২০১৩ সালে আল-বশির জানজাওয়িদ বাহিনীকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস’ নামে প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৭ সালে আইন করে এই বাহিনীকে স্বাধীন নিরাপত্তা সংস্থার মর্যাদা দেওয়া হয়। ২০১৯ সালে আরএসএফ গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেয় এবং ওমর আল-বশিরকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সহায়তা করে। পরে ২০২১ সালে তারা সেনাবাহিনীর সঙ্গে মিলে বেসামরিক প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লাহ হামদককে উৎখাত করে। এতে দেশটির বেসামরিক-সামরিক যৌথ শাসনব্যবস্থা শেষ হয়ে যায়।
সংঘাতের শুরু যেভাবে
আরএসএফ নেতা হেমেদতি ও সেনাপ্রধান আল-বুরহানের মধ্যে মতবিরোধ বাড়তে থাকে। মূল প্রশ্ন ছিল—আরএসএফ কবে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত হবে এবং কে দেশের নেতৃত্ব দেবে। ২০২৩ সালে ১৫ এপ্রিল এই বিরোধ পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে রূপ নেয়। সেনাবাহিনী চায়, আরএসএফ পুরোপুরি তাদের অধীনে আসুক। কিন্তু আরএসএফ স্বাধীন থাকতে চায়।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, দুই পক্ষই যুদ্ধাপরাধ ও নৃশংসতা চালিয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দেয়, দারফুরে আরএসএফ ও তাদের মিত্ররা গণহত্যা চালাচ্ছে। এতে সবচেয়ে বড় বিপদে পড়েছে সাধারণ মানুষ। সুদানি মানবাধিকার সংগঠনগুলো আগে থেকেই সতর্ক করেছিল, আরএসএফ যদি এল-ফাশের দখল করে, তাহলে তা সাধারণ মানুষের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে।
আল–জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পালিয়ে আসা মানুষজন জানিয়েছে—আরএসএফ সদস্যরা ঘরে ঘরে গিয়ে জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে মানুষ হত্যা করছে। এল–ফাশের শহরে সৌদি হাসপাতালেই প্রায় ৫০০ মানুষ নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সেখানে রোগী, স্বাস্থ্যকর্মী ও আশ্রয়প্রার্থী সাধারণ মানুষ ছিল।
আরএসএফ শত শত মানুষকে আটক করেছে। বহু নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, আরএসএফ যেসব শহর দখল করবে, সেখানেও গণহত্যার আশঙ্কা রয়েছে।
এল-ফাশের দখলের ফলে আরএসএফ এখন পুরো দারফুর অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণে। অঞ্চলটি কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি চাদ, লিবিয়া ও দক্ষিণ সুদানের সীমান্তে অবস্থিত এবং সোনার প্রধান উৎসগুলোর একটি। ইতালির আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক গবেষণা সংস্থা আইএসপিআই ২০২৪ সালের প্রতিবেদনে বলেছে, দারফুরের সোনার জন্য লড়াইই এই যুদ্ধের অন্যতম কারণ।
সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র ও আফ্রিকান ইউনিয়নের মধ্যস্থতায় বহুবার আলোচনার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু কোনো ফল মেলেনি। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, মিশর ও সংযুক্ত আরব আমিরাত মিলে ‘কোয়াড’ নামে একটি জোট গঠন করেছে। তারা ১২ সেপ্টেম্বর যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনা ঘোষণা করে।
তাদের পরিকল্পনায় বলা হয়েছিল, তিন মাসের মানবিক বিরতি দেওয়া হবে যাতে ত্রাণ সহায়তা প্রবেশ করতে পারে। এরপর স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং নয় মাসের মধ্যে বেসামরিক সরকারে ফেরার প্রক্রিয়া শুরু হবে। প্রথমে সেনাপ্রধান আল-বুরহান এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি চান, আরএসএফ ভেঙে দেওয়া হোক। কিন্তু ১৫ অক্টোবর মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ এল-সিসির সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি কিছুটা নমনীয় হন।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে দুই পক্ষের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা হয়। অক্টোবরের শেষে আরও বৈঠকের কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই আরএসএফ এল-ফাশের দখল করে নেয়। এখন আলোচনা কোন পথে যাবে, তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ফলে, এই অবস্থায় আশঙ্কা বাড়ছে যে, যেহেতু দারফুর অঞ্চল প্রায় পুরোটাই আরএসএফের হাতে চলে গেছে, তাহলে কি সুদান আরও একবার ভাঙতে চলেছে। এর আগে, সুদান ভেঙে দক্ষিণ সুদান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়।


ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রে ‘স্টেট ভিজিট’ বা রাষ্ট্রীয় সফরে রয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। এই সফরেও তিনি যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। উইনস্টন চার্চিল, নেলসন ম্যান্ডেলার মতো অল্প কয়েকজন রাষ্ট্রনেতা এই সম্মান পেয়েছেন।
২২ জুন ২০২৩
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁর দেশ আবারও পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষায় ফিরবে। তাঁর এই ঘোষণা দেশটির দীর্ঘদিনের নীতিতে এক বিশাল পরিবর্তন। ট্রাম্প নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘যেহেতু অন্যান্য দেশগুলোও পরীক্ষা চালাচ্ছে, তাই আমিও অন্যদের সঙ্গে সমানতাল
৪ ঘণ্টা আগে
বিশ্ব রাজনীতিতে আবারও পারমাণবিক যুদ্ধের আতঙ্ক ঘনীভূত হচ্ছে। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র—দুই পরাশক্তির শীর্ষ নেতার সাম্প্রতিক ঘোষণায় এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, শীতল যুদ্ধের পর বিশ্বে যে পারমাণবিক ভারসাম্য তৈরি হয়েছিল, তা এখন ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে।
১৬ ঘণ্টা আগে
বিরল খনিজ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের এই টানাপোড়েন আগেও ছিল। চীন বহু বছর ধরে তার বৃহত্তর শিল্পনীতির অংশ হিসেবে এই খনিজগুলোর ওপর প্রায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। তাই বিরল খনিজকে কেন্দ্র করে চীনের কৌশলগত বৈশ্বিক প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টার বিপরীতে ট্রাম্প প্রশাসনও পাল্টা খেলায় নেমেছে।
২১ ঘণ্টা আগে