মন্টি বৈষ্ণব, ঢাকা

মানুষ জীবন ধারণের জন্য যা কিছু গ্রহণ করে, তার সিংহভাগই আসে প্রকৃতি থেকে। প্রকৃতির প্রতিটি প্রাণের আছে আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য। প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে পশু-পাখি ও মানুষের সঙ্গে প্রতিটি গাছের ভাষা ও আচরণ আলাদা। গাছের কাছে না গেলে সেই ভাষা বোঝা যায় না।
সনাতন মালো উল্লাস। প্রকৃতিকে ভালোবাসেন মনপ্রাণ উজাড় করে। ভালোবাসার সেই জায়গা থেকে রাস্তাঘাটে পড়ে থাকা অপ্রয়োজনীয়, মূল্যহীন নানা উপকরণ দিয়ে তৈরি করেন বিভিন্ন ধরনের শিল্পকর্ম।
রাস্তাঘাটে নিতান্তই অবহেলায় পড়ে থাকা উপকরণ দিয়ে ভাস্কর্য তৈরির প্রসঙ্গে সনাতন বলেন, ‘শিল্পকর্ম, চিন্তা, চর্চা, সাধনা বা সংরক্ষণ এক সূত্রে গাঁথা। এ ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাটা মূল বিষয় বলে মনে হয় না আমার কাছে। আগ্রহ বা ভালোবাসা থাকলে যেকোনো জায়গা থেকে মানুষ অনেক কিছু তৈরি করতে পারে। আমার কাজের মূল উপাদান রাস্তাঘাটে, মাঠে, জঙ্গলে, পুকুরপাড়ে, নদীর ধারে পড়ে থাকা গাছের শেকড়, ভাঙা ডালপালা, লতাপাতা ও পশু-পাখির হাড়গোড়। ভাস্কর্য নিয়ে আমার কাজ করা ভালো লাগার জায়গা থেকে। এই ভালো লাগাটা ক্রমাগত ভালোবাসায় পরিবর্তিত হচ্ছে। তবে এই ভালোবাসাকে যত্ন ও পরিচর্যায় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আন্তরিকতার। সেই আন্তরিকতার গভীরে আছে মানবিক সমাজ গঠনে নিজেকে নিবেদন করা।’
তবে নিজের তৈরি শিল্পকর্মকে ‘ভাস্কর্য’ বলার চেয়ে ‘রূপান্তর’ বলতে বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন সনাতন। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘আমরা তো কোনো কিছু সৃষ্টি বা তৈরি করতে পারি না; বরং এই প্রকৃতিতে যা আছে, সেটাকে চিন্তা আর ইচ্ছেশক্তির সমন্বয়ে রূপান্তর করতে পারি মাত্র। আমরা কেউ গাছ বা পাখি সৃষ্টি করতে পারি না। কিন্তু গাছের শেকড়, পাতা, ফুল বা পাখির পালক, এমনকি ফেলে দেওয়া যেকোনো প্রাকৃতিক উপকরণ কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ধরনের শিল্পকর্ম তৈরি করতে পারি। প্রাকৃতিক এই উপকরণগুলো একসময় সেই সময়ের ইতিহাসকে বহন করবে। ধ্বংস হয়ে যাওয়া সভ্যতা যখন মানুষ মাটি খুঁড়ে আবিষ্কার করে, তখন সেখান থেকে উদ্ধারকৃত ভাস্কর্য এবং অন্যান্য শিল্পকর্মই বলে দেয় সেই সময়ের ইতিহাস।’
এ ধরনের শিল্পকর্মের দিকে সনাতনের আকর্ষণ কিন্তু ছোটবেলা থেকেই। বলা যায়, বেড়ে ওঠার সঙ্গেই কাঠ খোদাইয়ের বিষয়টি জড়িয়ে রয়েছে। সনাতন বলছেন, ‘তখন আমি বড়জোর তৃতীয় কিংবা চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। বাড়িতে প্রায় প্রতিবছর বর্ষাকালের শুরু কিংবা শীতের শেষে চার-পাঁচজনের একদল কাঠমিস্ত্রি আসতেন। তাঁরা মাসাধিককাল কিংবা তারও বেশি সময় ধরে নতুন নৌকা বানানো, পুরোনো নৌকা মেরামতের পাশাপাশি কাঠের নানা আসবাব তৈরি করতেন। বাড়ির খুব কাছেই ছিল কুমার নদ। তাঁরা নদের পাড়ে নৌকার বাদাম টানিয়ে ছায়াময় জায়গা তৈরি করে সেখানে কাজ করতেন সকাল থেকে রাত অবধি। স্কুল থেকে ফিরে প্রায় সারা দিনই কাটত সেই মিস্ত্রিদের সঙ্গে। হাতুড়ি, বাটাল, বাইসখান, রেন্দা, করাত, শীল ইত্যাদি হাতিয়ারের আলাদা আলাদা শব্দ আমাকে খুব টানত। কখনো কখনো টুকরো কাঠের ওপর হাতুড়ি ও বাটাল নিয়ে কিছু একটা করার প্রাণান্তকর চেষ্টা করতাম। বলতে গেলে শুরুর প্রথমটা সেখান থেকেই।’
সনাতনের চারুকলায় পড়ার ভীষণ ইচ্ছা থাকলেও উপযুক্ত গাইডলাইন বা অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সেদিকে আর যাননি। কোনো সম্ভ্রান্ত বা বনেদি পরিবারে তাঁর জন্ম হয়নি। খুব সাধারণ খেটে খাওয়া শ্রমজীবী পরিবারে জন্ম। সনাতনের পূর্বপুরুষের পেশা ছিল মাছ ধরা। অর্থনৈতিক টানাপোড়েন ও বৈরী স্রোতে দাঁড় বেয়ে, জাল বেয়ে, মাছ ধরে, কখনো বিক্রি করে তাঁর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাজীবন শেষ হয়। সনাতনের ছোটবেলা কেটেছে জল-কাদা, স্রোত, রোদ-বৃষ্টি, ঝড়, নৌকা, নদী, অন্ধকার রাত আর নদীতে ভেসে যাওয়া সুখ-দুঃখের গল্পের সঙ্গে। পাড় ভেঙে জলে পড়ে যাওয়া গাছ, শেকড়, লতাপাতা আরও অনেক কিছুর সঙ্গে মিলেমিশে কেটেছে তাঁর ছেলেবেলা। একসময় মাছ ধরার নৌকায়ও কুপিবাতির আলোয় পড়ালেখা করেছেন।
২০০৫ সালে তিনি ঢাকায় স্থায়ীভাবে বাস করতে শুরু করেন। ছাত্রজীবন শেষে ঢোকেন বেসরকারি চাকরিতে। এর মধ্যে তিনি সময় ও সুযোগ বের করে তাঁর কাজ করার উপাদান সংগ্রহ করতেন। কাজের প্রয়োজনে ঢাকার বাইরে গেলে সেখান থেকে তিনি নিয়ে আসতেন গাছের টুকরো বা শেকড়সহ বিভিন্ন উপকরণ। এ ছাড়া পুরানা পল্টনের মুক্তি ভবনের বেসমেন্টে তাঁর কাজের জন্য একটা রুম ছিল। সেখানে তিনি তাঁর কাজগুলো সংরক্ষণে রাখতেন। ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবে হাজারো মানুষের অনেক মূল্যবান জিনিসের সঙ্গে তাঁর কাজগুলোও আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এ ঘটনার পরে ক্ষোভে অনেক দিন তিনি কাজ থেকে দূরে ছিলেন।
বর্তমানে কাজের পরিবেশ বা পরিধির বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘সীমিত আয়ের চাকরি করে ভাস্কর্যের মতো বিরাট বিষয়ে চর্চা করা দুঃসাহস ছাড়া আর কিছুই নয়। সংগ্রহে থাকা কিছু কাঠ আর শিকড় নিয়ে সাধারণ অ্যান্টিকাটার ও হাতুড়ি-বাটাল দিয়েই কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। এভাবে কাজ করা ভীষণ কষ্টকর ও সময়সাপেক্ষ। একদিকে বেঁচে থাকার সংগ্রাম, অন্যদিকে শিল্পচর্চা। নিজের জীবনের টানাপোড়েন মাঝেমধ্যে এই কাজে বিরাট বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যদি টাকা-পয়সা উপার্জনের চাপ না থাকত, তবে নিজের মনের মতো করে তৈরি করতাম বিভিন্ন ধরনের শিল্পকর্ম। যদিও মাঝেমধ্যে মনে হয় এই উন্মাদনা নিতান্তই বিলাসিতা।’
সনাতন গান করেন, লেখেন। কাঠের তৈরি এসব ভাস্কর্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে নিজের গানের কাছেই ফিরে গেলেন তিনি। বললেন, ‘আমার লেখা একটা গানের একটা প্রিয় লাইন হলো—“পাখিটা বুকের ভেতর রয়…”। আমি আমার কাজে প্রথম এবং সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা পাই প্রকৃতির কাছ থেকে। দু-একজন জানেন আমি বড় গাছদের “মা”, আর ছোট গাছদের “সন্তান” বলে ডাকি। সুযোগ পেলে গাছ লাগাই। বৃক্ষ নিধনে ভীষণ কষ্ট পাই। পরিবারের সহযোগিতা না থাকলে কেউ কোনো কাজই ভালোভাবে করতে পারে না। আমি কৃতজ্ঞ আমার ব্যক্তিগত এবং আত্মিক পরিবারের কাছে। আত্মিক পরিবারের দু-একজন সুহৃদ কিছু কাজ সংরক্ষণের জন্য জায়গা দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। এর বাইরে সহযোগিতা বলতে যা বোঝায়, তা পাইনি কারও কাছ থেকে।’
সনাতনের করা এই ‘ব্যক্তিগত’ ও ‘আত্মিক’ পরিবারের উল্লেখ বেশ আগ্রহী করে তুলল। জানতে চাইলে বললেন, ‘আমি তিন রকম পরিবারের সদস্য। একটি নিজস্ব বা ব্যক্তিগত, একটি বৃহত্তর, আরেকটি আদর্শিক। ব্যক্তিগত পরিবার বলতে বৈবাহিক সূত্রে শিল্পী আক্তার আমার জীবনবন্ধু। আমাদের একটি কন্যাসন্তান আছে। তার নাম মেঘবতী স্লোগান। সে ৮ পেরিয়ে ৯-এর পথে। ক্লাস ওয়ানে পড়ে। আমরা বলি, “স্লোগান শিল্পী সনাতন—এক সত্তায় তিনজন”। মা-বাবা আছেন। আমার তিন বোন ও চার ভাই। এ ছাড়া দেশ ও দেশের সীমানা ছাড়িয়ে মানবধর্মে বিশ্বাসী অগণিত আপনজন আমার আদর্শিক পরিবারের সদস্য।’
এই কাজ নিয়ে পরিকল্পনা কী—জানতে চাইলে সনাতন বলেন, ‘এটা আমার পেশা নয়। আবার শুধু শখের বসে করছি, তা-ও নয়। তবে যদি কখনো জীবনযাপনের সঙ্গে একে সম্পূর্ণভাবে যুক্ত করতে পারি, তবে জীবন সার্থক হবে। অনেক কিছু নিয়ে অনেক ভাবনা আছে, সবটা তো আর বাস্তবায়ন সম্ভব না। প্রতিনিয়ত কাজ করা এবং কাজগুলো সংরক্ষণের মতো একটি জায়গা হলে একটি গ্যালারি করতাম। কাজগুলো সবাইকে দেখানোর জন্য প্রদর্শন করতে চাই। পাখিরা যাতে ভালো থাকে, তার জন্য পৃথিবীকে সবুজ করতে চাই। দেশ যে আদর্শের জন্য স্বাধীন হয়েছে, সেই আলোকে অগণিত ভাস্কর্য করতে চাই। নতুন প্রজন্মকে এই বিষয়ের প্রতি আগ্রহী করতে একটি পাঠশালা করার ভাবনা অনেক দিনের। যদিও আমার চলমান বাস্তবতায় এটা অনেকটাই অলীক কল্পনা। সব থেকে বড় কথা হলো, আমি প্রতিনিয়ত শিখতে চাই, জানতে চাই এবং কাজ করতে চাই।’
আলাপে পাখির প্রসঙ্গই ঘুরেফিরে আসে বারবার। নিজের স্বপ্ন ও কাজ যেন পাখির ডানাতেই ভর করে আছে। যেন সবুজই সনাতনের একমাত্র আরাধ্য। বললেন, ‘পৃথিবী ক্রমাগত পাখিশূন্য হয়ে যাচ্ছে। আমাদের এই প্রিয় শরীর খাঁচাটাও একদিন পাখিশূন্য হয়ে যাবে। যেদিন পৃথিবী থেকে শেষ পাখিটা বিলুপ্ত হবে, সেই দিন সেই পৃথিবীতে কোনো মানুষ বেঁচে থাকতে পারবে কি না, সে বিষয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। আমি আমার কাজের মাধ্যমে একটা কথা বারবার বলতে চাই। সেটা হলো, মানুষের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে অবশ্যই পাখিদের বাসযোগ্য করতে হবে পৃথিবীকে।’

মানুষ জীবন ধারণের জন্য যা কিছু গ্রহণ করে, তার সিংহভাগই আসে প্রকৃতি থেকে। প্রকৃতির প্রতিটি প্রাণের আছে আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য। প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে পশু-পাখি ও মানুষের সঙ্গে প্রতিটি গাছের ভাষা ও আচরণ আলাদা। গাছের কাছে না গেলে সেই ভাষা বোঝা যায় না।
সনাতন মালো উল্লাস। প্রকৃতিকে ভালোবাসেন মনপ্রাণ উজাড় করে। ভালোবাসার সেই জায়গা থেকে রাস্তাঘাটে পড়ে থাকা অপ্রয়োজনীয়, মূল্যহীন নানা উপকরণ দিয়ে তৈরি করেন বিভিন্ন ধরনের শিল্পকর্ম।
রাস্তাঘাটে নিতান্তই অবহেলায় পড়ে থাকা উপকরণ দিয়ে ভাস্কর্য তৈরির প্রসঙ্গে সনাতন বলেন, ‘শিল্পকর্ম, চিন্তা, চর্চা, সাধনা বা সংরক্ষণ এক সূত্রে গাঁথা। এ ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাটা মূল বিষয় বলে মনে হয় না আমার কাছে। আগ্রহ বা ভালোবাসা থাকলে যেকোনো জায়গা থেকে মানুষ অনেক কিছু তৈরি করতে পারে। আমার কাজের মূল উপাদান রাস্তাঘাটে, মাঠে, জঙ্গলে, পুকুরপাড়ে, নদীর ধারে পড়ে থাকা গাছের শেকড়, ভাঙা ডালপালা, লতাপাতা ও পশু-পাখির হাড়গোড়। ভাস্কর্য নিয়ে আমার কাজ করা ভালো লাগার জায়গা থেকে। এই ভালো লাগাটা ক্রমাগত ভালোবাসায় পরিবর্তিত হচ্ছে। তবে এই ভালোবাসাকে যত্ন ও পরিচর্যায় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আন্তরিকতার। সেই আন্তরিকতার গভীরে আছে মানবিক সমাজ গঠনে নিজেকে নিবেদন করা।’
তবে নিজের তৈরি শিল্পকর্মকে ‘ভাস্কর্য’ বলার চেয়ে ‘রূপান্তর’ বলতে বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন সনাতন। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘আমরা তো কোনো কিছু সৃষ্টি বা তৈরি করতে পারি না; বরং এই প্রকৃতিতে যা আছে, সেটাকে চিন্তা আর ইচ্ছেশক্তির সমন্বয়ে রূপান্তর করতে পারি মাত্র। আমরা কেউ গাছ বা পাখি সৃষ্টি করতে পারি না। কিন্তু গাছের শেকড়, পাতা, ফুল বা পাখির পালক, এমনকি ফেলে দেওয়া যেকোনো প্রাকৃতিক উপকরণ কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ধরনের শিল্পকর্ম তৈরি করতে পারি। প্রাকৃতিক এই উপকরণগুলো একসময় সেই সময়ের ইতিহাসকে বহন করবে। ধ্বংস হয়ে যাওয়া সভ্যতা যখন মানুষ মাটি খুঁড়ে আবিষ্কার করে, তখন সেখান থেকে উদ্ধারকৃত ভাস্কর্য এবং অন্যান্য শিল্পকর্মই বলে দেয় সেই সময়ের ইতিহাস।’
এ ধরনের শিল্পকর্মের দিকে সনাতনের আকর্ষণ কিন্তু ছোটবেলা থেকেই। বলা যায়, বেড়ে ওঠার সঙ্গেই কাঠ খোদাইয়ের বিষয়টি জড়িয়ে রয়েছে। সনাতন বলছেন, ‘তখন আমি বড়জোর তৃতীয় কিংবা চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। বাড়িতে প্রায় প্রতিবছর বর্ষাকালের শুরু কিংবা শীতের শেষে চার-পাঁচজনের একদল কাঠমিস্ত্রি আসতেন। তাঁরা মাসাধিককাল কিংবা তারও বেশি সময় ধরে নতুন নৌকা বানানো, পুরোনো নৌকা মেরামতের পাশাপাশি কাঠের নানা আসবাব তৈরি করতেন। বাড়ির খুব কাছেই ছিল কুমার নদ। তাঁরা নদের পাড়ে নৌকার বাদাম টানিয়ে ছায়াময় জায়গা তৈরি করে সেখানে কাজ করতেন সকাল থেকে রাত অবধি। স্কুল থেকে ফিরে প্রায় সারা দিনই কাটত সেই মিস্ত্রিদের সঙ্গে। হাতুড়ি, বাটাল, বাইসখান, রেন্দা, করাত, শীল ইত্যাদি হাতিয়ারের আলাদা আলাদা শব্দ আমাকে খুব টানত। কখনো কখনো টুকরো কাঠের ওপর হাতুড়ি ও বাটাল নিয়ে কিছু একটা করার প্রাণান্তকর চেষ্টা করতাম। বলতে গেলে শুরুর প্রথমটা সেখান থেকেই।’
সনাতনের চারুকলায় পড়ার ভীষণ ইচ্ছা থাকলেও উপযুক্ত গাইডলাইন বা অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সেদিকে আর যাননি। কোনো সম্ভ্রান্ত বা বনেদি পরিবারে তাঁর জন্ম হয়নি। খুব সাধারণ খেটে খাওয়া শ্রমজীবী পরিবারে জন্ম। সনাতনের পূর্বপুরুষের পেশা ছিল মাছ ধরা। অর্থনৈতিক টানাপোড়েন ও বৈরী স্রোতে দাঁড় বেয়ে, জাল বেয়ে, মাছ ধরে, কখনো বিক্রি করে তাঁর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাজীবন শেষ হয়। সনাতনের ছোটবেলা কেটেছে জল-কাদা, স্রোত, রোদ-বৃষ্টি, ঝড়, নৌকা, নদী, অন্ধকার রাত আর নদীতে ভেসে যাওয়া সুখ-দুঃখের গল্পের সঙ্গে। পাড় ভেঙে জলে পড়ে যাওয়া গাছ, শেকড়, লতাপাতা আরও অনেক কিছুর সঙ্গে মিলেমিশে কেটেছে তাঁর ছেলেবেলা। একসময় মাছ ধরার নৌকায়ও কুপিবাতির আলোয় পড়ালেখা করেছেন।
২০০৫ সালে তিনি ঢাকায় স্থায়ীভাবে বাস করতে শুরু করেন। ছাত্রজীবন শেষে ঢোকেন বেসরকারি চাকরিতে। এর মধ্যে তিনি সময় ও সুযোগ বের করে তাঁর কাজ করার উপাদান সংগ্রহ করতেন। কাজের প্রয়োজনে ঢাকার বাইরে গেলে সেখান থেকে তিনি নিয়ে আসতেন গাছের টুকরো বা শেকড়সহ বিভিন্ন উপকরণ। এ ছাড়া পুরানা পল্টনের মুক্তি ভবনের বেসমেন্টে তাঁর কাজের জন্য একটা রুম ছিল। সেখানে তিনি তাঁর কাজগুলো সংরক্ষণে রাখতেন। ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবে হাজারো মানুষের অনেক মূল্যবান জিনিসের সঙ্গে তাঁর কাজগুলোও আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এ ঘটনার পরে ক্ষোভে অনেক দিন তিনি কাজ থেকে দূরে ছিলেন।
বর্তমানে কাজের পরিবেশ বা পরিধির বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘সীমিত আয়ের চাকরি করে ভাস্কর্যের মতো বিরাট বিষয়ে চর্চা করা দুঃসাহস ছাড়া আর কিছুই নয়। সংগ্রহে থাকা কিছু কাঠ আর শিকড় নিয়ে সাধারণ অ্যান্টিকাটার ও হাতুড়ি-বাটাল দিয়েই কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। এভাবে কাজ করা ভীষণ কষ্টকর ও সময়সাপেক্ষ। একদিকে বেঁচে থাকার সংগ্রাম, অন্যদিকে শিল্পচর্চা। নিজের জীবনের টানাপোড়েন মাঝেমধ্যে এই কাজে বিরাট বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যদি টাকা-পয়সা উপার্জনের চাপ না থাকত, তবে নিজের মনের মতো করে তৈরি করতাম বিভিন্ন ধরনের শিল্পকর্ম। যদিও মাঝেমধ্যে মনে হয় এই উন্মাদনা নিতান্তই বিলাসিতা।’
সনাতন গান করেন, লেখেন। কাঠের তৈরি এসব ভাস্কর্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে নিজের গানের কাছেই ফিরে গেলেন তিনি। বললেন, ‘আমার লেখা একটা গানের একটা প্রিয় লাইন হলো—“পাখিটা বুকের ভেতর রয়…”। আমি আমার কাজে প্রথম এবং সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা পাই প্রকৃতির কাছ থেকে। দু-একজন জানেন আমি বড় গাছদের “মা”, আর ছোট গাছদের “সন্তান” বলে ডাকি। সুযোগ পেলে গাছ লাগাই। বৃক্ষ নিধনে ভীষণ কষ্ট পাই। পরিবারের সহযোগিতা না থাকলে কেউ কোনো কাজই ভালোভাবে করতে পারে না। আমি কৃতজ্ঞ আমার ব্যক্তিগত এবং আত্মিক পরিবারের কাছে। আত্মিক পরিবারের দু-একজন সুহৃদ কিছু কাজ সংরক্ষণের জন্য জায়গা দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। এর বাইরে সহযোগিতা বলতে যা বোঝায়, তা পাইনি কারও কাছ থেকে।’
সনাতনের করা এই ‘ব্যক্তিগত’ ও ‘আত্মিক’ পরিবারের উল্লেখ বেশ আগ্রহী করে তুলল। জানতে চাইলে বললেন, ‘আমি তিন রকম পরিবারের সদস্য। একটি নিজস্ব বা ব্যক্তিগত, একটি বৃহত্তর, আরেকটি আদর্শিক। ব্যক্তিগত পরিবার বলতে বৈবাহিক সূত্রে শিল্পী আক্তার আমার জীবনবন্ধু। আমাদের একটি কন্যাসন্তান আছে। তার নাম মেঘবতী স্লোগান। সে ৮ পেরিয়ে ৯-এর পথে। ক্লাস ওয়ানে পড়ে। আমরা বলি, “স্লোগান শিল্পী সনাতন—এক সত্তায় তিনজন”। মা-বাবা আছেন। আমার তিন বোন ও চার ভাই। এ ছাড়া দেশ ও দেশের সীমানা ছাড়িয়ে মানবধর্মে বিশ্বাসী অগণিত আপনজন আমার আদর্শিক পরিবারের সদস্য।’
এই কাজ নিয়ে পরিকল্পনা কী—জানতে চাইলে সনাতন বলেন, ‘এটা আমার পেশা নয়। আবার শুধু শখের বসে করছি, তা-ও নয়। তবে যদি কখনো জীবনযাপনের সঙ্গে একে সম্পূর্ণভাবে যুক্ত করতে পারি, তবে জীবন সার্থক হবে। অনেক কিছু নিয়ে অনেক ভাবনা আছে, সবটা তো আর বাস্তবায়ন সম্ভব না। প্রতিনিয়ত কাজ করা এবং কাজগুলো সংরক্ষণের মতো একটি জায়গা হলে একটি গ্যালারি করতাম। কাজগুলো সবাইকে দেখানোর জন্য প্রদর্শন করতে চাই। পাখিরা যাতে ভালো থাকে, তার জন্য পৃথিবীকে সবুজ করতে চাই। দেশ যে আদর্শের জন্য স্বাধীন হয়েছে, সেই আলোকে অগণিত ভাস্কর্য করতে চাই। নতুন প্রজন্মকে এই বিষয়ের প্রতি আগ্রহী করতে একটি পাঠশালা করার ভাবনা অনেক দিনের। যদিও আমার চলমান বাস্তবতায় এটা অনেকটাই অলীক কল্পনা। সব থেকে বড় কথা হলো, আমি প্রতিনিয়ত শিখতে চাই, জানতে চাই এবং কাজ করতে চাই।’
আলাপে পাখির প্রসঙ্গই ঘুরেফিরে আসে বারবার। নিজের স্বপ্ন ও কাজ যেন পাখির ডানাতেই ভর করে আছে। যেন সবুজই সনাতনের একমাত্র আরাধ্য। বললেন, ‘পৃথিবী ক্রমাগত পাখিশূন্য হয়ে যাচ্ছে। আমাদের এই প্রিয় শরীর খাঁচাটাও একদিন পাখিশূন্য হয়ে যাবে। যেদিন পৃথিবী থেকে শেষ পাখিটা বিলুপ্ত হবে, সেই দিন সেই পৃথিবীতে কোনো মানুষ বেঁচে থাকতে পারবে কি না, সে বিষয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। আমি আমার কাজের মাধ্যমে একটা কথা বারবার বলতে চাই। সেটা হলো, মানুষের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে অবশ্যই পাখিদের বাসযোগ্য করতে হবে পৃথিবীকে।’
মন্টি বৈষ্ণব, ঢাকা

মানুষ জীবন ধারণের জন্য যা কিছু গ্রহণ করে, তার সিংহভাগই আসে প্রকৃতি থেকে। প্রকৃতির প্রতিটি প্রাণের আছে আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য। প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে পশু-পাখি ও মানুষের সঙ্গে প্রতিটি গাছের ভাষা ও আচরণ আলাদা। গাছের কাছে না গেলে সেই ভাষা বোঝা যায় না।
সনাতন মালো উল্লাস। প্রকৃতিকে ভালোবাসেন মনপ্রাণ উজাড় করে। ভালোবাসার সেই জায়গা থেকে রাস্তাঘাটে পড়ে থাকা অপ্রয়োজনীয়, মূল্যহীন নানা উপকরণ দিয়ে তৈরি করেন বিভিন্ন ধরনের শিল্পকর্ম।
রাস্তাঘাটে নিতান্তই অবহেলায় পড়ে থাকা উপকরণ দিয়ে ভাস্কর্য তৈরির প্রসঙ্গে সনাতন বলেন, ‘শিল্পকর্ম, চিন্তা, চর্চা, সাধনা বা সংরক্ষণ এক সূত্রে গাঁথা। এ ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাটা মূল বিষয় বলে মনে হয় না আমার কাছে। আগ্রহ বা ভালোবাসা থাকলে যেকোনো জায়গা থেকে মানুষ অনেক কিছু তৈরি করতে পারে। আমার কাজের মূল উপাদান রাস্তাঘাটে, মাঠে, জঙ্গলে, পুকুরপাড়ে, নদীর ধারে পড়ে থাকা গাছের শেকড়, ভাঙা ডালপালা, লতাপাতা ও পশু-পাখির হাড়গোড়। ভাস্কর্য নিয়ে আমার কাজ করা ভালো লাগার জায়গা থেকে। এই ভালো লাগাটা ক্রমাগত ভালোবাসায় পরিবর্তিত হচ্ছে। তবে এই ভালোবাসাকে যত্ন ও পরিচর্যায় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আন্তরিকতার। সেই আন্তরিকতার গভীরে আছে মানবিক সমাজ গঠনে নিজেকে নিবেদন করা।’
তবে নিজের তৈরি শিল্পকর্মকে ‘ভাস্কর্য’ বলার চেয়ে ‘রূপান্তর’ বলতে বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন সনাতন। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘আমরা তো কোনো কিছু সৃষ্টি বা তৈরি করতে পারি না; বরং এই প্রকৃতিতে যা আছে, সেটাকে চিন্তা আর ইচ্ছেশক্তির সমন্বয়ে রূপান্তর করতে পারি মাত্র। আমরা কেউ গাছ বা পাখি সৃষ্টি করতে পারি না। কিন্তু গাছের শেকড়, পাতা, ফুল বা পাখির পালক, এমনকি ফেলে দেওয়া যেকোনো প্রাকৃতিক উপকরণ কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ধরনের শিল্পকর্ম তৈরি করতে পারি। প্রাকৃতিক এই উপকরণগুলো একসময় সেই সময়ের ইতিহাসকে বহন করবে। ধ্বংস হয়ে যাওয়া সভ্যতা যখন মানুষ মাটি খুঁড়ে আবিষ্কার করে, তখন সেখান থেকে উদ্ধারকৃত ভাস্কর্য এবং অন্যান্য শিল্পকর্মই বলে দেয় সেই সময়ের ইতিহাস।’
এ ধরনের শিল্পকর্মের দিকে সনাতনের আকর্ষণ কিন্তু ছোটবেলা থেকেই। বলা যায়, বেড়ে ওঠার সঙ্গেই কাঠ খোদাইয়ের বিষয়টি জড়িয়ে রয়েছে। সনাতন বলছেন, ‘তখন আমি বড়জোর তৃতীয় কিংবা চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। বাড়িতে প্রায় প্রতিবছর বর্ষাকালের শুরু কিংবা শীতের শেষে চার-পাঁচজনের একদল কাঠমিস্ত্রি আসতেন। তাঁরা মাসাধিককাল কিংবা তারও বেশি সময় ধরে নতুন নৌকা বানানো, পুরোনো নৌকা মেরামতের পাশাপাশি কাঠের নানা আসবাব তৈরি করতেন। বাড়ির খুব কাছেই ছিল কুমার নদ। তাঁরা নদের পাড়ে নৌকার বাদাম টানিয়ে ছায়াময় জায়গা তৈরি করে সেখানে কাজ করতেন সকাল থেকে রাত অবধি। স্কুল থেকে ফিরে প্রায় সারা দিনই কাটত সেই মিস্ত্রিদের সঙ্গে। হাতুড়ি, বাটাল, বাইসখান, রেন্দা, করাত, শীল ইত্যাদি হাতিয়ারের আলাদা আলাদা শব্দ আমাকে খুব টানত। কখনো কখনো টুকরো কাঠের ওপর হাতুড়ি ও বাটাল নিয়ে কিছু একটা করার প্রাণান্তকর চেষ্টা করতাম। বলতে গেলে শুরুর প্রথমটা সেখান থেকেই।’
সনাতনের চারুকলায় পড়ার ভীষণ ইচ্ছা থাকলেও উপযুক্ত গাইডলাইন বা অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সেদিকে আর যাননি। কোনো সম্ভ্রান্ত বা বনেদি পরিবারে তাঁর জন্ম হয়নি। খুব সাধারণ খেটে খাওয়া শ্রমজীবী পরিবারে জন্ম। সনাতনের পূর্বপুরুষের পেশা ছিল মাছ ধরা। অর্থনৈতিক টানাপোড়েন ও বৈরী স্রোতে দাঁড় বেয়ে, জাল বেয়ে, মাছ ধরে, কখনো বিক্রি করে তাঁর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাজীবন শেষ হয়। সনাতনের ছোটবেলা কেটেছে জল-কাদা, স্রোত, রোদ-বৃষ্টি, ঝড়, নৌকা, নদী, অন্ধকার রাত আর নদীতে ভেসে যাওয়া সুখ-দুঃখের গল্পের সঙ্গে। পাড় ভেঙে জলে পড়ে যাওয়া গাছ, শেকড়, লতাপাতা আরও অনেক কিছুর সঙ্গে মিলেমিশে কেটেছে তাঁর ছেলেবেলা। একসময় মাছ ধরার নৌকায়ও কুপিবাতির আলোয় পড়ালেখা করেছেন।
২০০৫ সালে তিনি ঢাকায় স্থায়ীভাবে বাস করতে শুরু করেন। ছাত্রজীবন শেষে ঢোকেন বেসরকারি চাকরিতে। এর মধ্যে তিনি সময় ও সুযোগ বের করে তাঁর কাজ করার উপাদান সংগ্রহ করতেন। কাজের প্রয়োজনে ঢাকার বাইরে গেলে সেখান থেকে তিনি নিয়ে আসতেন গাছের টুকরো বা শেকড়সহ বিভিন্ন উপকরণ। এ ছাড়া পুরানা পল্টনের মুক্তি ভবনের বেসমেন্টে তাঁর কাজের জন্য একটা রুম ছিল। সেখানে তিনি তাঁর কাজগুলো সংরক্ষণে রাখতেন। ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবে হাজারো মানুষের অনেক মূল্যবান জিনিসের সঙ্গে তাঁর কাজগুলোও আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এ ঘটনার পরে ক্ষোভে অনেক দিন তিনি কাজ থেকে দূরে ছিলেন।
বর্তমানে কাজের পরিবেশ বা পরিধির বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘সীমিত আয়ের চাকরি করে ভাস্কর্যের মতো বিরাট বিষয়ে চর্চা করা দুঃসাহস ছাড়া আর কিছুই নয়। সংগ্রহে থাকা কিছু কাঠ আর শিকড় নিয়ে সাধারণ অ্যান্টিকাটার ও হাতুড়ি-বাটাল দিয়েই কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। এভাবে কাজ করা ভীষণ কষ্টকর ও সময়সাপেক্ষ। একদিকে বেঁচে থাকার সংগ্রাম, অন্যদিকে শিল্পচর্চা। নিজের জীবনের টানাপোড়েন মাঝেমধ্যে এই কাজে বিরাট বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যদি টাকা-পয়সা উপার্জনের চাপ না থাকত, তবে নিজের মনের মতো করে তৈরি করতাম বিভিন্ন ধরনের শিল্পকর্ম। যদিও মাঝেমধ্যে মনে হয় এই উন্মাদনা নিতান্তই বিলাসিতা।’
সনাতন গান করেন, লেখেন। কাঠের তৈরি এসব ভাস্কর্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে নিজের গানের কাছেই ফিরে গেলেন তিনি। বললেন, ‘আমার লেখা একটা গানের একটা প্রিয় লাইন হলো—“পাখিটা বুকের ভেতর রয়…”। আমি আমার কাজে প্রথম এবং সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা পাই প্রকৃতির কাছ থেকে। দু-একজন জানেন আমি বড় গাছদের “মা”, আর ছোট গাছদের “সন্তান” বলে ডাকি। সুযোগ পেলে গাছ লাগাই। বৃক্ষ নিধনে ভীষণ কষ্ট পাই। পরিবারের সহযোগিতা না থাকলে কেউ কোনো কাজই ভালোভাবে করতে পারে না। আমি কৃতজ্ঞ আমার ব্যক্তিগত এবং আত্মিক পরিবারের কাছে। আত্মিক পরিবারের দু-একজন সুহৃদ কিছু কাজ সংরক্ষণের জন্য জায়গা দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। এর বাইরে সহযোগিতা বলতে যা বোঝায়, তা পাইনি কারও কাছ থেকে।’
সনাতনের করা এই ‘ব্যক্তিগত’ ও ‘আত্মিক’ পরিবারের উল্লেখ বেশ আগ্রহী করে তুলল। জানতে চাইলে বললেন, ‘আমি তিন রকম পরিবারের সদস্য। একটি নিজস্ব বা ব্যক্তিগত, একটি বৃহত্তর, আরেকটি আদর্শিক। ব্যক্তিগত পরিবার বলতে বৈবাহিক সূত্রে শিল্পী আক্তার আমার জীবনবন্ধু। আমাদের একটি কন্যাসন্তান আছে। তার নাম মেঘবতী স্লোগান। সে ৮ পেরিয়ে ৯-এর পথে। ক্লাস ওয়ানে পড়ে। আমরা বলি, “স্লোগান শিল্পী সনাতন—এক সত্তায় তিনজন”। মা-বাবা আছেন। আমার তিন বোন ও চার ভাই। এ ছাড়া দেশ ও দেশের সীমানা ছাড়িয়ে মানবধর্মে বিশ্বাসী অগণিত আপনজন আমার আদর্শিক পরিবারের সদস্য।’
এই কাজ নিয়ে পরিকল্পনা কী—জানতে চাইলে সনাতন বলেন, ‘এটা আমার পেশা নয়। আবার শুধু শখের বসে করছি, তা-ও নয়। তবে যদি কখনো জীবনযাপনের সঙ্গে একে সম্পূর্ণভাবে যুক্ত করতে পারি, তবে জীবন সার্থক হবে। অনেক কিছু নিয়ে অনেক ভাবনা আছে, সবটা তো আর বাস্তবায়ন সম্ভব না। প্রতিনিয়ত কাজ করা এবং কাজগুলো সংরক্ষণের মতো একটি জায়গা হলে একটি গ্যালারি করতাম। কাজগুলো সবাইকে দেখানোর জন্য প্রদর্শন করতে চাই। পাখিরা যাতে ভালো থাকে, তার জন্য পৃথিবীকে সবুজ করতে চাই। দেশ যে আদর্শের জন্য স্বাধীন হয়েছে, সেই আলোকে অগণিত ভাস্কর্য করতে চাই। নতুন প্রজন্মকে এই বিষয়ের প্রতি আগ্রহী করতে একটি পাঠশালা করার ভাবনা অনেক দিনের। যদিও আমার চলমান বাস্তবতায় এটা অনেকটাই অলীক কল্পনা। সব থেকে বড় কথা হলো, আমি প্রতিনিয়ত শিখতে চাই, জানতে চাই এবং কাজ করতে চাই।’
আলাপে পাখির প্রসঙ্গই ঘুরেফিরে আসে বারবার। নিজের স্বপ্ন ও কাজ যেন পাখির ডানাতেই ভর করে আছে। যেন সবুজই সনাতনের একমাত্র আরাধ্য। বললেন, ‘পৃথিবী ক্রমাগত পাখিশূন্য হয়ে যাচ্ছে। আমাদের এই প্রিয় শরীর খাঁচাটাও একদিন পাখিশূন্য হয়ে যাবে। যেদিন পৃথিবী থেকে শেষ পাখিটা বিলুপ্ত হবে, সেই দিন সেই পৃথিবীতে কোনো মানুষ বেঁচে থাকতে পারবে কি না, সে বিষয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। আমি আমার কাজের মাধ্যমে একটা কথা বারবার বলতে চাই। সেটা হলো, মানুষের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে অবশ্যই পাখিদের বাসযোগ্য করতে হবে পৃথিবীকে।’

মানুষ জীবন ধারণের জন্য যা কিছু গ্রহণ করে, তার সিংহভাগই আসে প্রকৃতি থেকে। প্রকৃতির প্রতিটি প্রাণের আছে আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য। প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে পশু-পাখি ও মানুষের সঙ্গে প্রতিটি গাছের ভাষা ও আচরণ আলাদা। গাছের কাছে না গেলে সেই ভাষা বোঝা যায় না।
সনাতন মালো উল্লাস। প্রকৃতিকে ভালোবাসেন মনপ্রাণ উজাড় করে। ভালোবাসার সেই জায়গা থেকে রাস্তাঘাটে পড়ে থাকা অপ্রয়োজনীয়, মূল্যহীন নানা উপকরণ দিয়ে তৈরি করেন বিভিন্ন ধরনের শিল্পকর্ম।
রাস্তাঘাটে নিতান্তই অবহেলায় পড়ে থাকা উপকরণ দিয়ে ভাস্কর্য তৈরির প্রসঙ্গে সনাতন বলেন, ‘শিল্পকর্ম, চিন্তা, চর্চা, সাধনা বা সংরক্ষণ এক সূত্রে গাঁথা। এ ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাটা মূল বিষয় বলে মনে হয় না আমার কাছে। আগ্রহ বা ভালোবাসা থাকলে যেকোনো জায়গা থেকে মানুষ অনেক কিছু তৈরি করতে পারে। আমার কাজের মূল উপাদান রাস্তাঘাটে, মাঠে, জঙ্গলে, পুকুরপাড়ে, নদীর ধারে পড়ে থাকা গাছের শেকড়, ভাঙা ডালপালা, লতাপাতা ও পশু-পাখির হাড়গোড়। ভাস্কর্য নিয়ে আমার কাজ করা ভালো লাগার জায়গা থেকে। এই ভালো লাগাটা ক্রমাগত ভালোবাসায় পরিবর্তিত হচ্ছে। তবে এই ভালোবাসাকে যত্ন ও পরিচর্যায় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আন্তরিকতার। সেই আন্তরিকতার গভীরে আছে মানবিক সমাজ গঠনে নিজেকে নিবেদন করা।’
তবে নিজের তৈরি শিল্পকর্মকে ‘ভাস্কর্য’ বলার চেয়ে ‘রূপান্তর’ বলতে বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন সনাতন। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘আমরা তো কোনো কিছু সৃষ্টি বা তৈরি করতে পারি না; বরং এই প্রকৃতিতে যা আছে, সেটাকে চিন্তা আর ইচ্ছেশক্তির সমন্বয়ে রূপান্তর করতে পারি মাত্র। আমরা কেউ গাছ বা পাখি সৃষ্টি করতে পারি না। কিন্তু গাছের শেকড়, পাতা, ফুল বা পাখির পালক, এমনকি ফেলে দেওয়া যেকোনো প্রাকৃতিক উপকরণ কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ধরনের শিল্পকর্ম তৈরি করতে পারি। প্রাকৃতিক এই উপকরণগুলো একসময় সেই সময়ের ইতিহাসকে বহন করবে। ধ্বংস হয়ে যাওয়া সভ্যতা যখন মানুষ মাটি খুঁড়ে আবিষ্কার করে, তখন সেখান থেকে উদ্ধারকৃত ভাস্কর্য এবং অন্যান্য শিল্পকর্মই বলে দেয় সেই সময়ের ইতিহাস।’
এ ধরনের শিল্পকর্মের দিকে সনাতনের আকর্ষণ কিন্তু ছোটবেলা থেকেই। বলা যায়, বেড়ে ওঠার সঙ্গেই কাঠ খোদাইয়ের বিষয়টি জড়িয়ে রয়েছে। সনাতন বলছেন, ‘তখন আমি বড়জোর তৃতীয় কিংবা চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। বাড়িতে প্রায় প্রতিবছর বর্ষাকালের শুরু কিংবা শীতের শেষে চার-পাঁচজনের একদল কাঠমিস্ত্রি আসতেন। তাঁরা মাসাধিককাল কিংবা তারও বেশি সময় ধরে নতুন নৌকা বানানো, পুরোনো নৌকা মেরামতের পাশাপাশি কাঠের নানা আসবাব তৈরি করতেন। বাড়ির খুব কাছেই ছিল কুমার নদ। তাঁরা নদের পাড়ে নৌকার বাদাম টানিয়ে ছায়াময় জায়গা তৈরি করে সেখানে কাজ করতেন সকাল থেকে রাত অবধি। স্কুল থেকে ফিরে প্রায় সারা দিনই কাটত সেই মিস্ত্রিদের সঙ্গে। হাতুড়ি, বাটাল, বাইসখান, রেন্দা, করাত, শীল ইত্যাদি হাতিয়ারের আলাদা আলাদা শব্দ আমাকে খুব টানত। কখনো কখনো টুকরো কাঠের ওপর হাতুড়ি ও বাটাল নিয়ে কিছু একটা করার প্রাণান্তকর চেষ্টা করতাম। বলতে গেলে শুরুর প্রথমটা সেখান থেকেই।’
সনাতনের চারুকলায় পড়ার ভীষণ ইচ্ছা থাকলেও উপযুক্ত গাইডলাইন বা অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সেদিকে আর যাননি। কোনো সম্ভ্রান্ত বা বনেদি পরিবারে তাঁর জন্ম হয়নি। খুব সাধারণ খেটে খাওয়া শ্রমজীবী পরিবারে জন্ম। সনাতনের পূর্বপুরুষের পেশা ছিল মাছ ধরা। অর্থনৈতিক টানাপোড়েন ও বৈরী স্রোতে দাঁড় বেয়ে, জাল বেয়ে, মাছ ধরে, কখনো বিক্রি করে তাঁর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাজীবন শেষ হয়। সনাতনের ছোটবেলা কেটেছে জল-কাদা, স্রোত, রোদ-বৃষ্টি, ঝড়, নৌকা, নদী, অন্ধকার রাত আর নদীতে ভেসে যাওয়া সুখ-দুঃখের গল্পের সঙ্গে। পাড় ভেঙে জলে পড়ে যাওয়া গাছ, শেকড়, লতাপাতা আরও অনেক কিছুর সঙ্গে মিলেমিশে কেটেছে তাঁর ছেলেবেলা। একসময় মাছ ধরার নৌকায়ও কুপিবাতির আলোয় পড়ালেখা করেছেন।
২০০৫ সালে তিনি ঢাকায় স্থায়ীভাবে বাস করতে শুরু করেন। ছাত্রজীবন শেষে ঢোকেন বেসরকারি চাকরিতে। এর মধ্যে তিনি সময় ও সুযোগ বের করে তাঁর কাজ করার উপাদান সংগ্রহ করতেন। কাজের প্রয়োজনে ঢাকার বাইরে গেলে সেখান থেকে তিনি নিয়ে আসতেন গাছের টুকরো বা শেকড়সহ বিভিন্ন উপকরণ। এ ছাড়া পুরানা পল্টনের মুক্তি ভবনের বেসমেন্টে তাঁর কাজের জন্য একটা রুম ছিল। সেখানে তিনি তাঁর কাজগুলো সংরক্ষণে রাখতেন। ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবে হাজারো মানুষের অনেক মূল্যবান জিনিসের সঙ্গে তাঁর কাজগুলোও আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এ ঘটনার পরে ক্ষোভে অনেক দিন তিনি কাজ থেকে দূরে ছিলেন।
বর্তমানে কাজের পরিবেশ বা পরিধির বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘সীমিত আয়ের চাকরি করে ভাস্কর্যের মতো বিরাট বিষয়ে চর্চা করা দুঃসাহস ছাড়া আর কিছুই নয়। সংগ্রহে থাকা কিছু কাঠ আর শিকড় নিয়ে সাধারণ অ্যান্টিকাটার ও হাতুড়ি-বাটাল দিয়েই কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। এভাবে কাজ করা ভীষণ কষ্টকর ও সময়সাপেক্ষ। একদিকে বেঁচে থাকার সংগ্রাম, অন্যদিকে শিল্পচর্চা। নিজের জীবনের টানাপোড়েন মাঝেমধ্যে এই কাজে বিরাট বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যদি টাকা-পয়সা উপার্জনের চাপ না থাকত, তবে নিজের মনের মতো করে তৈরি করতাম বিভিন্ন ধরনের শিল্পকর্ম। যদিও মাঝেমধ্যে মনে হয় এই উন্মাদনা নিতান্তই বিলাসিতা।’
সনাতন গান করেন, লেখেন। কাঠের তৈরি এসব ভাস্কর্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে নিজের গানের কাছেই ফিরে গেলেন তিনি। বললেন, ‘আমার লেখা একটা গানের একটা প্রিয় লাইন হলো—“পাখিটা বুকের ভেতর রয়…”। আমি আমার কাজে প্রথম এবং সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা পাই প্রকৃতির কাছ থেকে। দু-একজন জানেন আমি বড় গাছদের “মা”, আর ছোট গাছদের “সন্তান” বলে ডাকি। সুযোগ পেলে গাছ লাগাই। বৃক্ষ নিধনে ভীষণ কষ্ট পাই। পরিবারের সহযোগিতা না থাকলে কেউ কোনো কাজই ভালোভাবে করতে পারে না। আমি কৃতজ্ঞ আমার ব্যক্তিগত এবং আত্মিক পরিবারের কাছে। আত্মিক পরিবারের দু-একজন সুহৃদ কিছু কাজ সংরক্ষণের জন্য জায়গা দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। এর বাইরে সহযোগিতা বলতে যা বোঝায়, তা পাইনি কারও কাছ থেকে।’
সনাতনের করা এই ‘ব্যক্তিগত’ ও ‘আত্মিক’ পরিবারের উল্লেখ বেশ আগ্রহী করে তুলল। জানতে চাইলে বললেন, ‘আমি তিন রকম পরিবারের সদস্য। একটি নিজস্ব বা ব্যক্তিগত, একটি বৃহত্তর, আরেকটি আদর্শিক। ব্যক্তিগত পরিবার বলতে বৈবাহিক সূত্রে শিল্পী আক্তার আমার জীবনবন্ধু। আমাদের একটি কন্যাসন্তান আছে। তার নাম মেঘবতী স্লোগান। সে ৮ পেরিয়ে ৯-এর পথে। ক্লাস ওয়ানে পড়ে। আমরা বলি, “স্লোগান শিল্পী সনাতন—এক সত্তায় তিনজন”। মা-বাবা আছেন। আমার তিন বোন ও চার ভাই। এ ছাড়া দেশ ও দেশের সীমানা ছাড়িয়ে মানবধর্মে বিশ্বাসী অগণিত আপনজন আমার আদর্শিক পরিবারের সদস্য।’
এই কাজ নিয়ে পরিকল্পনা কী—জানতে চাইলে সনাতন বলেন, ‘এটা আমার পেশা নয়। আবার শুধু শখের বসে করছি, তা-ও নয়। তবে যদি কখনো জীবনযাপনের সঙ্গে একে সম্পূর্ণভাবে যুক্ত করতে পারি, তবে জীবন সার্থক হবে। অনেক কিছু নিয়ে অনেক ভাবনা আছে, সবটা তো আর বাস্তবায়ন সম্ভব না। প্রতিনিয়ত কাজ করা এবং কাজগুলো সংরক্ষণের মতো একটি জায়গা হলে একটি গ্যালারি করতাম। কাজগুলো সবাইকে দেখানোর জন্য প্রদর্শন করতে চাই। পাখিরা যাতে ভালো থাকে, তার জন্য পৃথিবীকে সবুজ করতে চাই। দেশ যে আদর্শের জন্য স্বাধীন হয়েছে, সেই আলোকে অগণিত ভাস্কর্য করতে চাই। নতুন প্রজন্মকে এই বিষয়ের প্রতি আগ্রহী করতে একটি পাঠশালা করার ভাবনা অনেক দিনের। যদিও আমার চলমান বাস্তবতায় এটা অনেকটাই অলীক কল্পনা। সব থেকে বড় কথা হলো, আমি প্রতিনিয়ত শিখতে চাই, জানতে চাই এবং কাজ করতে চাই।’
আলাপে পাখির প্রসঙ্গই ঘুরেফিরে আসে বারবার। নিজের স্বপ্ন ও কাজ যেন পাখির ডানাতেই ভর করে আছে। যেন সবুজই সনাতনের একমাত্র আরাধ্য। বললেন, ‘পৃথিবী ক্রমাগত পাখিশূন্য হয়ে যাচ্ছে। আমাদের এই প্রিয় শরীর খাঁচাটাও একদিন পাখিশূন্য হয়ে যাবে। যেদিন পৃথিবী থেকে শেষ পাখিটা বিলুপ্ত হবে, সেই দিন সেই পৃথিবীতে কোনো মানুষ বেঁচে থাকতে পারবে কি না, সে বিষয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। আমি আমার কাজের মাধ্যমে একটা কথা বারবার বলতে চাই। সেটা হলো, মানুষের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে অবশ্যই পাখিদের বাসযোগ্য করতে হবে পৃথিবীকে।’

ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে।
৪ দিন আগে
শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া
৪ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে...
৪ দিন আগে
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে। শুধু তা-ই নয়, তাঁকে কিন্তু কখনো গহিন অরণ্যের আস্তানায় সশস্ত্র রক্ষীবেষ্টিত হয়ে আত্মগোপনে থাকতে হয়নি। তাঁর মাদক কারবারের আয় গোটা দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখত। আর তাঁকে কখনো জেলে যাওয়ার চিন্তা করতে হয়নি। কারণ, মাদক-সংক্রান্ত অপরাধের শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা যাঁদের ছিল, তাঁরা সবাই ছিলেন তাঁর বেতনভুক্ত কর্মচারী!
তিনি আর কেউ নন, তিনি রানি ভিক্টোরিয়া। তাঁর হাতে ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দণ্ড।
রানি ভিক্টোরিয়া শুধু সাম্রাজ্য পরিচালনাতেই মাদক ব্যবহার করেননি, ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি ছিলেন বিভিন্ন ধরনের ড্রাগের ভক্ত। সিংহাসনে আরোহণের সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর।
ভিক্টোরিয়ার অন্যতম প্রিয় মাদক ছিল আফিম। ঊনবিংশ শতাব্দীর ব্রিটেনে আফিম সেবনের ফ্যাশনেবল উপায় ছিল—অ্যালকোহলের সঙ্গে মিশিয়ে লডেনাম আকারে পান করা। তীব্র ব্যথা বা অস্বস্তি দূর করতে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো। এমনকি দাঁত ওঠার সময় শিশুদের জন্যও এটি সুপারিশ করতেন চিকিৎসকেরা। রানি ভিক্টোরিয়াও প্রতিদিন সকালে এক ঢোক লডেনাম পান করে দিন শুরু করতেন।
এ ছাড়া তিনি সেবন করতেন কোকেন। এটি তখন ছিল সম্পূর্ণ নতুন এবং বৈধ। দাঁতের ব্যথা উপশম এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য রানি কোকেন মিশ্রিত চুইংগাম ও ওয়াইন পছন্দ করতেন। প্রসবের সময় অসহনীয় যন্ত্রণা কমাতে তিনি সানন্দে ক্লোরোফর্ম গ্রহণ করেন এবং এই অভিজ্ঞতাটিকে ‘স্বর্গীয়’ বলে বর্ণনা করেছেন।
১৮৩৭ সালে যখন ভিক্টোরিয়া সিংহাসনে বসেন, উত্তরাধিকারসূত্রে একটি বড় সংকটের বোঝা তাঁর ঘাড়ে চাপে—ব্রিটিশরা চীন থেকে বিপুল পরিমাণ চা আমদানি করত। এর ফলে ব্রিটেনের সব অর্থ চীনে চলে যাচ্ছিল। আর ওই সময় ব্রিটিশদের হাতে চীনে রপ্তানি করার মতো কিছু ছিল না। ব্রিটেন মরিয়া হয়ে এমন একটি পণ্যের সন্ধান করছিল, যা চীনের লোকেরা চাইবে।
এ সমস্যার সমাধান ছিল আফিম। ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত ভারতে প্রচুর আফিম উৎপাদিত হতো। এটি ছিল অত্যন্ত কার্যকর ব্যথানাশক এবং মারাত্মকভাবে আসক্তি সৃষ্টিকারী। ফলে চীনের লোকেরা এর জন্য প্রচুর দাম দিতে প্রস্তুত ছিল। রানি ভিক্টোরিয়ার শাসন শুরু হওয়ার পর, চীনে আফিমের চালান দ্রুত বাড়তে থাকে। আফিমের কল্যাণে রাতারাতি বাণিজ্য ভারসাম্য বদলে যায়। চীনই ব্রিটিশদের কাছে ঋণী হতে শুরু করে। মাদক কারবার থেকে আসা অর্থ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মোট বার্ষিক আয়ের ১৫ থেকে ২০ শতাংশে দাঁড়ায়।
চীন সরকার মরিয়া হয়ে আফিমের প্রবাহ বন্ধ করার চেষ্টা করে। চীনের সম্রাট এই কাজের জন্য প্রশাসক লিন জেক্সুকে নিয়োগ করেন। জেক্সু রানি ভিক্টোরিয়ার কাছে একটি চিঠি লিখে ব্রিটিশদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন—চীন যেখানে চা, রেশম ও মৃৎপাত্রের মতো উপকারী পণ্য পাঠাচ্ছে, সেখানে ব্রিটেন কেন তার বিনিময়ে কোটি কোটি মানুষকে ক্ষতিকর মাদক পাঠাচ্ছে?
রানি সেই চিঠি পড়ারও প্রয়োজন বোধ করেননি। ফলে ১৮৩৯ সালের বসন্তে লিন জেক্সু ব্রিটিশ জাহাজ বহর আটক করেন এবং প্রায় আড়াই মিলিয়ন পাউন্ড আফিম দক্ষিণ চীন সাগরে ফেলে দেন।
মাত্র ২০ বছর বয়সী রানি ভিক্টোরিয়া এই ঘটনায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। যেকোনো ক্ষমতাধর সাম্রাজ্যবাদী কিশোরীর মতো তাঁর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল প্রত্যাশিতই—তিনি চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এটিই ইতিহাসে প্রথম ‘আফিম যুদ্ধ’ নামে পরিচিত।
ব্রিটিশ বাহিনী চীনা সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে এবং হাজার হাজার চীনা নাগরিককে হত্যা করে। সম্রাট বাধ্য হয়ে একটি অসম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির ফলে হংকংকে ব্রিটিশদের হাতে তুলে দিতে হয়। চীনে আফিম ঢোকার জন্য আরও বন্দর খুলে দেওয়া হয় এবং চীনে বসবাসকারী ব্রিটিশ নাগরিকেরা আইনি সুরক্ষা পান।
এ ঘটনা বিশ্বজুড়ে চীন সাম্রাজ্যের অজেয় ভাবমূর্তি ভেঙে দেয়। এভাবেই একজন একগুঁয়ে কিশোরী রানি একটি প্রাচীন, মর্যাদাপূর্ণ সভ্যতাকে তাঁর সামনে হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করেন। এই নির্মম, নির্লজ্জ আত্মস্বার্থই রানি ভিক্টোরিয়াকে ইতিহাসের সবচেয়ে সফল মাদক সম্রাট বানিয়ে তোলে!
তথ্যসূত্র: টাইম

ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে। শুধু তা-ই নয়, তাঁকে কিন্তু কখনো গহিন অরণ্যের আস্তানায় সশস্ত্র রক্ষীবেষ্টিত হয়ে আত্মগোপনে থাকতে হয়নি। তাঁর মাদক কারবারের আয় গোটা দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখত। আর তাঁকে কখনো জেলে যাওয়ার চিন্তা করতে হয়নি। কারণ, মাদক-সংক্রান্ত অপরাধের শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা যাঁদের ছিল, তাঁরা সবাই ছিলেন তাঁর বেতনভুক্ত কর্মচারী!
তিনি আর কেউ নন, তিনি রানি ভিক্টোরিয়া। তাঁর হাতে ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দণ্ড।
রানি ভিক্টোরিয়া শুধু সাম্রাজ্য পরিচালনাতেই মাদক ব্যবহার করেননি, ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি ছিলেন বিভিন্ন ধরনের ড্রাগের ভক্ত। সিংহাসনে আরোহণের সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর।
ভিক্টোরিয়ার অন্যতম প্রিয় মাদক ছিল আফিম। ঊনবিংশ শতাব্দীর ব্রিটেনে আফিম সেবনের ফ্যাশনেবল উপায় ছিল—অ্যালকোহলের সঙ্গে মিশিয়ে লডেনাম আকারে পান করা। তীব্র ব্যথা বা অস্বস্তি দূর করতে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো। এমনকি দাঁত ওঠার সময় শিশুদের জন্যও এটি সুপারিশ করতেন চিকিৎসকেরা। রানি ভিক্টোরিয়াও প্রতিদিন সকালে এক ঢোক লডেনাম পান করে দিন শুরু করতেন।
এ ছাড়া তিনি সেবন করতেন কোকেন। এটি তখন ছিল সম্পূর্ণ নতুন এবং বৈধ। দাঁতের ব্যথা উপশম এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য রানি কোকেন মিশ্রিত চুইংগাম ও ওয়াইন পছন্দ করতেন। প্রসবের সময় অসহনীয় যন্ত্রণা কমাতে তিনি সানন্দে ক্লোরোফর্ম গ্রহণ করেন এবং এই অভিজ্ঞতাটিকে ‘স্বর্গীয়’ বলে বর্ণনা করেছেন।
১৮৩৭ সালে যখন ভিক্টোরিয়া সিংহাসনে বসেন, উত্তরাধিকারসূত্রে একটি বড় সংকটের বোঝা তাঁর ঘাড়ে চাপে—ব্রিটিশরা চীন থেকে বিপুল পরিমাণ চা আমদানি করত। এর ফলে ব্রিটেনের সব অর্থ চীনে চলে যাচ্ছিল। আর ওই সময় ব্রিটিশদের হাতে চীনে রপ্তানি করার মতো কিছু ছিল না। ব্রিটেন মরিয়া হয়ে এমন একটি পণ্যের সন্ধান করছিল, যা চীনের লোকেরা চাইবে।
এ সমস্যার সমাধান ছিল আফিম। ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত ভারতে প্রচুর আফিম উৎপাদিত হতো। এটি ছিল অত্যন্ত কার্যকর ব্যথানাশক এবং মারাত্মকভাবে আসক্তি সৃষ্টিকারী। ফলে চীনের লোকেরা এর জন্য প্রচুর দাম দিতে প্রস্তুত ছিল। রানি ভিক্টোরিয়ার শাসন শুরু হওয়ার পর, চীনে আফিমের চালান দ্রুত বাড়তে থাকে। আফিমের কল্যাণে রাতারাতি বাণিজ্য ভারসাম্য বদলে যায়। চীনই ব্রিটিশদের কাছে ঋণী হতে শুরু করে। মাদক কারবার থেকে আসা অর্থ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মোট বার্ষিক আয়ের ১৫ থেকে ২০ শতাংশে দাঁড়ায়।
চীন সরকার মরিয়া হয়ে আফিমের প্রবাহ বন্ধ করার চেষ্টা করে। চীনের সম্রাট এই কাজের জন্য প্রশাসক লিন জেক্সুকে নিয়োগ করেন। জেক্সু রানি ভিক্টোরিয়ার কাছে একটি চিঠি লিখে ব্রিটিশদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন—চীন যেখানে চা, রেশম ও মৃৎপাত্রের মতো উপকারী পণ্য পাঠাচ্ছে, সেখানে ব্রিটেন কেন তার বিনিময়ে কোটি কোটি মানুষকে ক্ষতিকর মাদক পাঠাচ্ছে?
রানি সেই চিঠি পড়ারও প্রয়োজন বোধ করেননি। ফলে ১৮৩৯ সালের বসন্তে লিন জেক্সু ব্রিটিশ জাহাজ বহর আটক করেন এবং প্রায় আড়াই মিলিয়ন পাউন্ড আফিম দক্ষিণ চীন সাগরে ফেলে দেন।
মাত্র ২০ বছর বয়সী রানি ভিক্টোরিয়া এই ঘটনায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। যেকোনো ক্ষমতাধর সাম্রাজ্যবাদী কিশোরীর মতো তাঁর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল প্রত্যাশিতই—তিনি চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এটিই ইতিহাসে প্রথম ‘আফিম যুদ্ধ’ নামে পরিচিত।
ব্রিটিশ বাহিনী চীনা সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে এবং হাজার হাজার চীনা নাগরিককে হত্যা করে। সম্রাট বাধ্য হয়ে একটি অসম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির ফলে হংকংকে ব্রিটিশদের হাতে তুলে দিতে হয়। চীনে আফিম ঢোকার জন্য আরও বন্দর খুলে দেওয়া হয় এবং চীনে বসবাসকারী ব্রিটিশ নাগরিকেরা আইনি সুরক্ষা পান।
এ ঘটনা বিশ্বজুড়ে চীন সাম্রাজ্যের অজেয় ভাবমূর্তি ভেঙে দেয়। এভাবেই একজন একগুঁয়ে কিশোরী রানি একটি প্রাচীন, মর্যাদাপূর্ণ সভ্যতাকে তাঁর সামনে হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করেন। এই নির্মম, নির্লজ্জ আত্মস্বার্থই রানি ভিক্টোরিয়াকে ইতিহাসের সবচেয়ে সফল মাদক সম্রাট বানিয়ে তোলে!
তথ্যসূত্র: টাইম

মানুষ জীবনধারণের জন্য যা কিছু গ্রহণ করেন, তার সিংহভাগই আসে প্রকৃতি থেকে। প্রকৃতির প্রতিটি প্রাণের আছে আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য। প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে পশু-পাখি ও মানুষের সঙ্গে প্রতিটি গাছের ভাষা এবং আচরণ আলাদা। গাছের কাছে না গেলে সে ভাষা বোঝা যায় না। সনাতন মালো উল্লাস। প্রকৃতিকে ভালোবাসেন মনপ্র
২৭ নভেম্বর ২০২১
শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া
৪ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে...
৪ দিন আগে
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া হবে।
বুকার পুরস্কারের ইতিহাসে এই প্রথমবার বিচারক প্যানেলে থাকবে শিশুরাও। বর্তমান চিলড্রেনস লরিয়েট শিশুসাহিত্যিক ফ্রাঙ্ক কটরেল-বয়েস বিচারকদের উদ্বোধনী প্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁর সঙ্গে আরও দুজন প্রাপ্তবয়স্ক বিচারক থাকবেন, যাঁরা প্রথমে আটটি বইয়ের একটি শর্টলিস্ট তৈরি করবেন। এরপর বিজয়ী নির্ধারণে সহায়তা করার জন্য তিনজন শিশু বিচারক নির্বাচিত হবেন।
বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, প্রতিবছর চিলড্রেনস বুকার প্রাইজের জন্য শর্টলিস্টেড হওয়া এবং বিজয়ী বইগুলোর ৩০ হাজার কপি শিশুদের উপহার দেওয়া হবে। ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্ট, দ্য রিডিং এজেন্সি, বুকব্যাংকস এবং চিলড্রেনস বুক প্রজেক্টসহ বিভিন্ন সহযোগী সংস্থাদের মাধ্যমে এ বইগুলো দেওয়া হবে। গত ২০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে শিশুদের ‘আনন্দ নিয়ে পড়া’র প্রবণতা। এমন সময় বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশন এ উদ্যোগটি নিল।
কটরেল-বয়েস বলেন, এই পুরস্কার শিশুদের উপভোগ করার মতো বই খুঁজে বের করা সহজ করে তুলবে। তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি শিশুরই বইয়ের জগতে ডুব দেওয়ার যে আনন্দ, তা উপভোগ করার সুযোগ পাওয়া উচিত। বিচারক প্যানেলে তাদের আমন্ত্রণ জানানোর মাধ্যমে এবং মনোনীত বইগুলো উপহার দেওয়ার মাধ্যমে হাজার হাজার শিশুকে বই পড়ার চমৎকার দুনিয়ায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘এটা বেশ দারুণ আয়োজন হতে যাচ্ছে।’ তিনি মজা করে বলেন, ‘চলুন, হইচই শুরু করা যাক!’
শিশুসাহিত্য জগতের শীর্ষ লেখকদের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে এ ঘোষণা। সাবেক শিশুসাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত মালরি ব্ল্যাকম্যান, জ্যাকলিন উইলসন, মাইকেল মরপুরগো, ক্রেসিডা কাউয়েল, অ্যান ফাইন এবং জোসেফ কোয়েলোরা—সবাই নতুন এই পুরস্কারকে স্বাগত জানিয়েছেন।
ইংরেজিতে লেখা বা ইংরেজিতে অনূদিত এবং যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত সমসাময়িক শিশুসাহিত্যগুলোতে এ পুরস্কার দেওয়া হবে। প্রাপ্তবয়স্কদের বুকার এবং আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কারের মতোই বিজয়ী লেখক ৫০ হাজার পাউন্ড এবং শর্টলিস্টেড লেখকেরা প্রত্যেকে ২ হাজার ৫০০ পাউন্ড পাবেন।
প্রথম চিলড্রেনস বুকার পুরস্কারের জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু হবে ২০২৬ সালের বসন্তে। বিচারক হতে শিশুদের আবেদন প্রক্রিয়াও এই সময়ে জানিয়ে দেওয়া হবে। সেই বছরের নভেম্বরে ঘোষণা করা হবে শর্টলিস্ট এবং শিশু বিচারকদের নাম। বিজয়ীর নাম প্রকাশ করা হবে ২০২৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে তরুণ পাঠকদের জন্য আয়োজিত একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে। ২০২৭ সালের পুরস্কারের জন্য ২০২৫ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে প্রকাশিত বই হতে হবে।
শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিল্পকলায় সমর্থন এবং জলবায়ু-সংকট মোকাবিলায় কাজ করা দাতব্য সংস্থা একেও ফাউন্ডেশনের (AKO Foundation) সহযোগিতায় এ পুরস্কার পরিচালিত হবে।
বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী (সিইও) গ্যাবি উড বলেন, ‘২০০৫ সালে আন্তর্জাতিক বুকার প্রাইজ চালুর পর গত ২০ বছরে আমাদের সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী উদ্যোগ চিলড্রেনস বুকার। এর একাধিক লক্ষ্য রয়েছে। একদিকে এটি শিশুদের জন্য লেখা ভবিষ্যৎ ক্লাসিক সাহিত্যকে সম্মান জানাবে, অন্যদিকে এটি এমন একটি সামাজিক উদ্যোগ, যা তরুণদের আরও বেশি করে পড়াশোনায় অনুপ্রাণিত করবে। এর মাধ্যমেই আমরা এমন এক বীজ রোপণ করতে চাই, যেখান থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আজীবন পাঠকেরা বিকশিত হবে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি, শিশুদের বিশেষ করে শিশুসাহিত্যের আসল বিচারকদের মতামত শোনার জন্য।
একেও ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী ফিলিপ ল-ফোর্ড বলেন, ‘এই অংশীদারত্ব ফাউন্ডেশনের সাক্ষরতা বৃদ্ধি ও সামাজিক গতিশীলতা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। আমরা গর্বিত যে এমন একটি প্রকল্পে অবদান রাখতে পারছি, যা তরুণ পাঠকদের অনুপ্রাণিত ও ক্ষমতায়িত করবে।’
বিনো ব্রেইন নামের একটি যুব গবেষণা সংস্থা ও ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্টের সহযোগিতায় নিয়মিত পরামর্শ সেশনের মাধ্যমে শিশুরা এই পুরস্কারের গঠন প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে। ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্ট শিশুদের পড়ার অভ্যাসের দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতা মূল্যায়নে সহায়তা করবে।
বুকার ফাউন্ডেশনের মতে, এই নতুন পুরস্কারটি শিশুসাহিত্যকে ‘সংস্কৃতির কেন্দ্রে স্থাপন’ করার একটি প্রচেষ্টা। সিইও গ্যাবি উড বলেন, ‘এই উদ্যোগের লক্ষ্য শুধু শিশুসাহিত্যে উৎকর্ষকে স্বীকৃতি দেওয়া নয়, বরং আরও বেশি তরুণকে এমন গল্প ও চরিত্র আবিষ্কারে সহায়তা করা ‘যারা তাদের সারা জীবনের সঙ্গী হয়ে থাকবে।’
বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী সাহিত্য পুরস্কার বুকার প্রাইজ প্রথম প্রদান করা হয়েছিল ১৯৬৯ সালে। যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত ইংরেজিতে রচিত অসাধারণ কথাসাহিত্যকে সম্মান জানাতে এই পুরস্কার প্রবর্তিত হয়।

শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া হবে।
বুকার পুরস্কারের ইতিহাসে এই প্রথমবার বিচারক প্যানেলে থাকবে শিশুরাও। বর্তমান চিলড্রেনস লরিয়েট শিশুসাহিত্যিক ফ্রাঙ্ক কটরেল-বয়েস বিচারকদের উদ্বোধনী প্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁর সঙ্গে আরও দুজন প্রাপ্তবয়স্ক বিচারক থাকবেন, যাঁরা প্রথমে আটটি বইয়ের একটি শর্টলিস্ট তৈরি করবেন। এরপর বিজয়ী নির্ধারণে সহায়তা করার জন্য তিনজন শিশু বিচারক নির্বাচিত হবেন।
বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, প্রতিবছর চিলড্রেনস বুকার প্রাইজের জন্য শর্টলিস্টেড হওয়া এবং বিজয়ী বইগুলোর ৩০ হাজার কপি শিশুদের উপহার দেওয়া হবে। ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্ট, দ্য রিডিং এজেন্সি, বুকব্যাংকস এবং চিলড্রেনস বুক প্রজেক্টসহ বিভিন্ন সহযোগী সংস্থাদের মাধ্যমে এ বইগুলো দেওয়া হবে। গত ২০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে শিশুদের ‘আনন্দ নিয়ে পড়া’র প্রবণতা। এমন সময় বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশন এ উদ্যোগটি নিল।
কটরেল-বয়েস বলেন, এই পুরস্কার শিশুদের উপভোগ করার মতো বই খুঁজে বের করা সহজ করে তুলবে। তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি শিশুরই বইয়ের জগতে ডুব দেওয়ার যে আনন্দ, তা উপভোগ করার সুযোগ পাওয়া উচিত। বিচারক প্যানেলে তাদের আমন্ত্রণ জানানোর মাধ্যমে এবং মনোনীত বইগুলো উপহার দেওয়ার মাধ্যমে হাজার হাজার শিশুকে বই পড়ার চমৎকার দুনিয়ায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘এটা বেশ দারুণ আয়োজন হতে যাচ্ছে।’ তিনি মজা করে বলেন, ‘চলুন, হইচই শুরু করা যাক!’
শিশুসাহিত্য জগতের শীর্ষ লেখকদের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে এ ঘোষণা। সাবেক শিশুসাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত মালরি ব্ল্যাকম্যান, জ্যাকলিন উইলসন, মাইকেল মরপুরগো, ক্রেসিডা কাউয়েল, অ্যান ফাইন এবং জোসেফ কোয়েলোরা—সবাই নতুন এই পুরস্কারকে স্বাগত জানিয়েছেন।
ইংরেজিতে লেখা বা ইংরেজিতে অনূদিত এবং যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত সমসাময়িক শিশুসাহিত্যগুলোতে এ পুরস্কার দেওয়া হবে। প্রাপ্তবয়স্কদের বুকার এবং আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কারের মতোই বিজয়ী লেখক ৫০ হাজার পাউন্ড এবং শর্টলিস্টেড লেখকেরা প্রত্যেকে ২ হাজার ৫০০ পাউন্ড পাবেন।
প্রথম চিলড্রেনস বুকার পুরস্কারের জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু হবে ২০২৬ সালের বসন্তে। বিচারক হতে শিশুদের আবেদন প্রক্রিয়াও এই সময়ে জানিয়ে দেওয়া হবে। সেই বছরের নভেম্বরে ঘোষণা করা হবে শর্টলিস্ট এবং শিশু বিচারকদের নাম। বিজয়ীর নাম প্রকাশ করা হবে ২০২৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে তরুণ পাঠকদের জন্য আয়োজিত একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে। ২০২৭ সালের পুরস্কারের জন্য ২০২৫ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে প্রকাশিত বই হতে হবে।
শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিল্পকলায় সমর্থন এবং জলবায়ু-সংকট মোকাবিলায় কাজ করা দাতব্য সংস্থা একেও ফাউন্ডেশনের (AKO Foundation) সহযোগিতায় এ পুরস্কার পরিচালিত হবে।
বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী (সিইও) গ্যাবি উড বলেন, ‘২০০৫ সালে আন্তর্জাতিক বুকার প্রাইজ চালুর পর গত ২০ বছরে আমাদের সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী উদ্যোগ চিলড্রেনস বুকার। এর একাধিক লক্ষ্য রয়েছে। একদিকে এটি শিশুদের জন্য লেখা ভবিষ্যৎ ক্লাসিক সাহিত্যকে সম্মান জানাবে, অন্যদিকে এটি এমন একটি সামাজিক উদ্যোগ, যা তরুণদের আরও বেশি করে পড়াশোনায় অনুপ্রাণিত করবে। এর মাধ্যমেই আমরা এমন এক বীজ রোপণ করতে চাই, যেখান থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আজীবন পাঠকেরা বিকশিত হবে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি, শিশুদের বিশেষ করে শিশুসাহিত্যের আসল বিচারকদের মতামত শোনার জন্য।
একেও ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী ফিলিপ ল-ফোর্ড বলেন, ‘এই অংশীদারত্ব ফাউন্ডেশনের সাক্ষরতা বৃদ্ধি ও সামাজিক গতিশীলতা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। আমরা গর্বিত যে এমন একটি প্রকল্পে অবদান রাখতে পারছি, যা তরুণ পাঠকদের অনুপ্রাণিত ও ক্ষমতায়িত করবে।’
বিনো ব্রেইন নামের একটি যুব গবেষণা সংস্থা ও ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্টের সহযোগিতায় নিয়মিত পরামর্শ সেশনের মাধ্যমে শিশুরা এই পুরস্কারের গঠন প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে। ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্ট শিশুদের পড়ার অভ্যাসের দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতা মূল্যায়নে সহায়তা করবে।
বুকার ফাউন্ডেশনের মতে, এই নতুন পুরস্কারটি শিশুসাহিত্যকে ‘সংস্কৃতির কেন্দ্রে স্থাপন’ করার একটি প্রচেষ্টা। সিইও গ্যাবি উড বলেন, ‘এই উদ্যোগের লক্ষ্য শুধু শিশুসাহিত্যে উৎকর্ষকে স্বীকৃতি দেওয়া নয়, বরং আরও বেশি তরুণকে এমন গল্প ও চরিত্র আবিষ্কারে সহায়তা করা ‘যারা তাদের সারা জীবনের সঙ্গী হয়ে থাকবে।’
বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী সাহিত্য পুরস্কার বুকার প্রাইজ প্রথম প্রদান করা হয়েছিল ১৯৬৯ সালে। যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত ইংরেজিতে রচিত অসাধারণ কথাসাহিত্যকে সম্মান জানাতে এই পুরস্কার প্রবর্তিত হয়।

মানুষ জীবনধারণের জন্য যা কিছু গ্রহণ করেন, তার সিংহভাগই আসে প্রকৃতি থেকে। প্রকৃতির প্রতিটি প্রাণের আছে আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য। প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে পশু-পাখি ও মানুষের সঙ্গে প্রতিটি গাছের ভাষা এবং আচরণ আলাদা। গাছের কাছে না গেলে সে ভাষা বোঝা যায় না। সনাতন মালো উল্লাস। প্রকৃতিকে ভালোবাসেন মনপ্র
২৭ নভেম্বর ২০২১
ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে।
৪ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে...
৪ দিন আগে
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
৬ দিন আগেসম্পাদকীয়

নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে পারে অন্য জায়গার এসব খাবার। অন্তত ছায়ানীড়ের নিয়মিত ভক্ত-গ্রাহকেরা এমন দাবি করতেই পারেন। তাতে দোষের কিছু নেই।
তাই হয়তো এখনো রেস্তোরাঁটির সামনে ভিড় লেগে থাকে। ব্যস্ত সড়কের পাশ থেকে যখন মুরগি পোড়ার সুঘ্রাণ পাওয়া যায়, তখন পথে যেতে অনেকেই হয়তো বিরতি নিয়ে কিনে নেন ছায়ানীড়ের শর্মা বা গ্রিল চিকেন। ভেতরে বসে খেতে হলে লম্বা লাইনে যেমন দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, আবার পার্সেল নিতে গেলেও অপেক্ষা করতে হয়। প্রাত্যহিক এ দৃশ্য ছায়ানীড়ের জনপ্রিয়তার প্রমাণ। বিরিয়ানি ও অন্যান্য ফাস্ট ফুড খাবারও পাওয়া যায় এখানে।
ছবি: ওমর ফারুক

নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে পারে অন্য জায়গার এসব খাবার। অন্তত ছায়ানীড়ের নিয়মিত ভক্ত-গ্রাহকেরা এমন দাবি করতেই পারেন। তাতে দোষের কিছু নেই।
তাই হয়তো এখনো রেস্তোরাঁটির সামনে ভিড় লেগে থাকে। ব্যস্ত সড়কের পাশ থেকে যখন মুরগি পোড়ার সুঘ্রাণ পাওয়া যায়, তখন পথে যেতে অনেকেই হয়তো বিরতি নিয়ে কিনে নেন ছায়ানীড়ের শর্মা বা গ্রিল চিকেন। ভেতরে বসে খেতে হলে লম্বা লাইনে যেমন দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, আবার পার্সেল নিতে গেলেও অপেক্ষা করতে হয়। প্রাত্যহিক এ দৃশ্য ছায়ানীড়ের জনপ্রিয়তার প্রমাণ। বিরিয়ানি ও অন্যান্য ফাস্ট ফুড খাবারও পাওয়া যায় এখানে।
ছবি: ওমর ফারুক

মানুষ জীবনধারণের জন্য যা কিছু গ্রহণ করেন, তার সিংহভাগই আসে প্রকৃতি থেকে। প্রকৃতির প্রতিটি প্রাণের আছে আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য। প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে পশু-পাখি ও মানুষের সঙ্গে প্রতিটি গাছের ভাষা এবং আচরণ আলাদা। গাছের কাছে না গেলে সে ভাষা বোঝা যায় না। সনাতন মালো উল্লাস। প্রকৃতিকে ভালোবাসেন মনপ্র
২৭ নভেম্বর ২০২১
ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে।
৪ দিন আগে
শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া
৪ দিন আগে
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
৬ দিন আগেসম্পাদকীয়

আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন। বলা হয়, চিত্তরঞ্জন দাশের জীবনদর্শনে প্রভাবিত হয়েই শচীমোহন রেস্তোরাঁটির নাম দেন ‘দেশবন্ধু সুইটমিট অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’। এর উল্টো দিকে তখন ছিল ইত্তেফাক পত্রিকার অফিস।
সেখানকার সাংবাদিকেরা দেশবন্ধুর পরোটা-লুচি-ভাজি-হালুয়া খেতে যেতেন নিয়মিত। কবি-সাহিত্যিক-অভিনয়শিল্পীরাও পছন্দ করতেন এই রেস্তোরাঁর খাবার। এমনকি এফডিসিতে ফরমাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো দেশবন্ধুর নাশতা। এখন হয়তো মানিক মিয়া, রাজ্জাক, কবরী কিংবা শাবানাদের মতো বিখ্যাতরা সেখানে যান না কিন্তু তাতে দেশবন্ধুর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি একটুও। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এখনো ঢাকাবাসীর ভিড় দেখা যায় এই রেস্তোরাঁয়। ভাবা যায়, সারা দিনই এখানকার পরোটা-ভাজি বিক্রি হতে থাকে! দুপুরে অবশ্য খাবারের তালিকায় ভাত-মাছ-মাংসও আছে। ছবি: মেহেদী হাসান

আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন। বলা হয়, চিত্তরঞ্জন দাশের জীবনদর্শনে প্রভাবিত হয়েই শচীমোহন রেস্তোরাঁটির নাম দেন ‘দেশবন্ধু সুইটমিট অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’। এর উল্টো দিকে তখন ছিল ইত্তেফাক পত্রিকার অফিস।
সেখানকার সাংবাদিকেরা দেশবন্ধুর পরোটা-লুচি-ভাজি-হালুয়া খেতে যেতেন নিয়মিত। কবি-সাহিত্যিক-অভিনয়শিল্পীরাও পছন্দ করতেন এই রেস্তোরাঁর খাবার। এমনকি এফডিসিতে ফরমাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো দেশবন্ধুর নাশতা। এখন হয়তো মানিক মিয়া, রাজ্জাক, কবরী কিংবা শাবানাদের মতো বিখ্যাতরা সেখানে যান না কিন্তু তাতে দেশবন্ধুর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি একটুও। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এখনো ঢাকাবাসীর ভিড় দেখা যায় এই রেস্তোরাঁয়। ভাবা যায়, সারা দিনই এখানকার পরোটা-ভাজি বিক্রি হতে থাকে! দুপুরে অবশ্য খাবারের তালিকায় ভাত-মাছ-মাংসও আছে। ছবি: মেহেদী হাসান

মানুষ জীবনধারণের জন্য যা কিছু গ্রহণ করেন, তার সিংহভাগই আসে প্রকৃতি থেকে। প্রকৃতির প্রতিটি প্রাণের আছে আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য। প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে পশু-পাখি ও মানুষের সঙ্গে প্রতিটি গাছের ভাষা এবং আচরণ আলাদা। গাছের কাছে না গেলে সে ভাষা বোঝা যায় না। সনাতন মালো উল্লাস। প্রকৃতিকে ভালোবাসেন মনপ্র
২৭ নভেম্বর ২০২১
ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে।
৪ দিন আগে
শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া
৪ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে...
৪ দিন আগে