Ajker Patrika

ভালোবাসা আর অপেক্ষা মেশানো

সম্পাদকীয়
আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯: ২৬
ভালোবাসা আর অপেক্ষা মেশানো

আদিম ও প্রাগৈতিহাসিক বনানীর মাঝে অনেক কিছুই কিন্তু অপেক্ষারত ছিল আমাদের জন্য। বিস্ময়ের সঙ্গে হঠাৎই লক্ষ করলাম, একটি সুন্দর পাহাড়ঘেরা মাঠ, স্বচ্ছ জলাধার, সবুজ বুনোফুল, আকাশ থেকে পাতার ফাঁক দিয়ে ঝরে পড়ছে উদার আলোর স্রোত। আমরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো সেখানে থামলাম।

চারদিকের বাতাসে ম ম করছে কোনো নাম না-জানা পবিত্র ফুলের গন্ধ। মাঠের মাঝখানে একটি ষাঁড়ের মুণ্ডু নজরে এল, বোধ হয় এখানকার কোনো রীতি-রেওয়াজ। সুনসান নীরবতার মাঝেই দেখি মানুষেরা সারি দিয়ে আসছে এবং ওই ষাঁড় মুণ্ডের চক্ষুকোটরে একটি করে মুদ্রা ও কিছু খাবার রেখে যাচ্ছে।

এই অভূতপূর্ব উৎসবটি কিন্তু এখানেই শেষ হলো না। আমার নিজের সঙ্গীদেরও দেখি, মাথার টুপি খুলে ওই খুলিকে ঘিরে এক পায়ে এক কিম্ভূত নাচ শুরু করেছে। ওই দুর্বোধ্য দৃশ্য দেখতে দেখতে স্পষ্ট বুঝতে পারলাম, এই প্রান্তিক অজানা মানুষদের সঙ্গে আমাদেরও এক বন্ধন তৈরি হয়ে গেছে। আবেগের টান যেন ধরে রাখছে একে অপরকে।

যাত্রা এর পরও চালু রইল। রাতে আমরা পাহাড়ের শেষ প্রান্তে উপস্থিত হলাম। চোখে পড়ল আগুনের আভা। অর্থাৎ, খুব সম্ভবত এখানে মানুষের বসবাস রয়েছে। কাছে গিয়ে দেখি ভগ্ন ঘরবাড়ি উচ্ছন্নে যাওয়া বস্তিতে প্রায় নির্বাপিত একটি লোকালয়। ভেঙে যাওয়া একটি বাড়িতে ঢুকতেই নজরে এল ঘরের মধ্যেই একটি বিশাল বৃক্ষের কাণ্ডে আগুন জ্বলছে, দিনরাত জ্বলার ফলে গাছের কঙ্কালটি যেন শুধু চোখে পড়ে।

সেই বৃক্ষ কঙ্কাল ঘরের মেঝেতে জন্ম নিয়ে ছাদ ফুঁড়ে ওপরে উঠে গিয়েছে ধ্বনির ঘনান্ধকারে।...যে গানটি গাওয়া হচ্ছে তা যেন দূর কোনো ঝরনার জন্য হা-হুতাশে ভরা। ভালোবাসা আর অপেক্ষা মেশানো কান্নার ধ্বনির মতো।...এই মানুষগুলো আমাদের সম্পর্কে কিছু জানে না। কোন পথে যাত্রা করছি, তা-ও তারা জানে না। আমার নাম বা কবিতাও কখনো শোনেনি। অথবা কে বলতে পারে ওরা হয়তো কোনোভাবে টের পেয়ে গেছে আমাদের বৃত্তান্ত!

চিলির কবি পাবলো নেরুদা ১৯৭১ সালে নোবেল পুরস্কার পান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত