Ajker Patrika

দুদু মিয়া

সম্পাদকীয়
Thumbnail image

দুদু মিয়া ছিলেন ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের সংগঠন ফরায়েজী আন্দোলনের অন্যতম নেতা। তিনি ১৮১৯ সালে মাদারীপুরের শ্যামাইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর আসল নাম ছিল মুহসীন উদ্দীন। পিতা হাজি শরীয়তুল্লাহর মৃত্যুর পর তিনি এ আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। 

বাল্যকালে দুদু মিয়া পিতার কাছে আরবি ও ফারসি ভাষা শেখেন। ১২ বছর বয়সেই শিক্ষার জন্য সৌদি আরবের মক্কায় চলে যান। সেখানে তিনি পাঁচ বছর শিক্ষা লাভ করে দেশে ফিরে আসেন। 

ফরায়েজী আন্দোলন ছিল ধর্মীয় সংস্কারের পাশাপাশি জমিদার, নীলকরদের অত্যাচার ও শোষণ থেকে কৃষকদের মুক্তির আন্দোলন। দুদু মিয়া এ আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করেন। গ্রামের কৃষকসমাজকে সংগঠিত করার জন্য পঞ্চায়েতব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। এ জন্য কাউকেই আদালতের দ্বারস্থ হতে হতো না। পাশাপাশি তিনি লাঠিয়াল বাহিনী গঠন করেন। এ বাহিনীর মাধ্যমে তিনি জমিদার ও নীলকরদের ভাড়াটে বাহিনীর শক্তি সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত করে দেন। আর সালিসি আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন দ্বন্দ্ব-কলহ মীমাংসা করতেন।

দুদু মিয়া মানবকল্যাণে সমতা ও ভ্রাতৃত্বের ঘোষণা দেন এবং শ্রমের ওপর জমির মালিকানা নিহিত—এ মতবাদ প্রচার করেন। তিনি ঘোষণা করেন—‘জমির মালিকানা কৃষকের’। তাঁর এ ঘোষণা নির্যাতিত কৃষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের কৃষকেরা ফরায়েজী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিরাট শক্তি অর্জন করেন। 

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পর বাংলার কৃষকের ওপর জমিদাররা নানা ধরনের কর আরোপ করেন। এ করের টাকা দিতে না পারলে তাঁদের ওপর নির্মম অত্যাচার চালানো হতো। এ কারণে দুদু মিয়ার নেতৃত্বে কৃষকেরা সংগঠিত হয়ে জমিদারদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন। একসময় জমিদার ও নীলকরবিরোধী এই আন্দোলন ব্রিটিশের ক্ষমতায় আঘাত করতে সমর্থ হয়। ফলে আন্দোলন দমাতে দুদু মিয়াকে কয়েকবার জেলে বন্দী করে সরকার। ১৮৬২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন সংগ্রামী দুদু মিয়া।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত