Ajker Patrika

ঠিকানাটা দিয়েন ফাহির...

গোলাম ওয়াদুদ, ঢাকা
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২২, ১৩: ৫৯
ঠিকানাটা দিয়েন ফাহির...

কয়েক দিন আগে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি তাদের ফেসবুক পেজে জানিয়েছে, তারা গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেবে। সেই তথ্য দেখে সহকর্মী বাপ্পি বলছিলেন, ‘ভাই, তাহলে তো ফাহিরও টাকা পাবে।’ কথাটা শোনার পর অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম ফাহিরের ডেস্কের জন্য আনা প্লাস্টিকের একটি ফুলের দিকে। এখন ফাহির শুধু একটি নাম।

ফাহির, যার কেতাবি নাম মো. ফখরুল ইসলাম ভূঁইয়া। ঠিক এক বছর আগে তিনি ছুটি নিয়েছেন। এখনো ছুটিতে আছেন। আর থাকবেনও। যেদিন ফাহির চিরদিনের জন্য ছুটি নিলেন, সেদিনটা ছিল শনিবার (১১ ডিসেম্বর, ২০২১)। শনিবার আমার সাপ্তাহিক ছুটি। তাই তাঁর ছুটি নেওয়ার দিন আমার সঙ্গে দেখা হয়নি। তবে কথা হয়েছিল অনেকবার।

যেহেতু ফাহিরের সঙ্গে আমার চেনাজানার বয়স ৯ মাস, সেহেতু অনেকটা স্মৃতি জমে আছে। ফাহির উদ্যোক্তা হতে চাইতেন। কখনো ভাবতেন একটা ছোট্ট জুসের দোকান দেবেন, কখনো আবার পিৎজা। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় যেখানেই দোকান ভাড়ার ‘টু-লেট’ দেখতেন, সেখানেই উঁকি দিতেন। জিজ্ঞেস করে খোঁজ-খবর নিতেন। হয়তো বেঁচে থাকলে এতদিনে একটা জুস বা পিৎজা বা কফিশপ হয়ে যেত ফাহিরের।

ফাহিরের সঙ্গে আমার সম্পর্ক বন্ধুর মতো হলেও একে অপরকে আপনি বলে সম্বোধন করতাম। আমি যদি কোনো কারণে রাগতাম, তখন বলে উঠতেন, আরেহ পাগলা…। তবে সহকর্মী হিসেবে সম্মানের জায়গাটা আলাদাভাবেই ছিল। ফাহির বিনয়ী ছিলেন। যে কারও সমস্যায় এগিয়ে আসতেন। অন্যের সমস্যা নিজের ওপর নিয়ে সমাধান করার চেষ্টা করতেন। তবে শিশুদের মতো অভিমানীও ছিলেন ফাহির।

একদিনের ঘটনা মনে পড়ছে। ফাহিরের তখন বিয়ের তারিখ ঠিক হয়েছে। ২০২২ সালের জানুয়ারির ৭ তারিখ তাঁর বিয়ে। ফাহিরের মৃত্যুর কয়েক দিন আগে তেজগাঁওয়ে একটা টং দোকানে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম আমরা। সেদিন বৃষ্টি হচ্ছিল। ফাহির বলছিলেন, ‘ওয়াদুদ ভাই, আমার বিয়ে হয়তো শুক্রবার হবে। অফিসের সবাই তো যেতে পারবে না। আপনাকে আর সুপ্রিয় ভাইকে কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে যেতে হবে। নেলসন ভাইকে আগে থেকেই বলে রাখবেন।’ 

বলেছিলাম, ‘দেখি।’ কিন্তু ফাহিরের অভিমান তা মানবে কেন? বলে উঠেছিলেন, ‘আপনাদের কোনো কথা আমি ফেলি না। আপনারা না গেলে আর কিছু শুনব না।’

ডেস্কে ফাহিরের রেখে যাওয়া প্লাস্টিকের ফুল

এমনই ছিলেন ফাহির। মাথা হুটহাট গরম করতেন। কিন্তু একবার যদি তাঁর দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ সুরে ডাক দিতাম, ‘ফাহিইইর...’, তবেই চুপচাপ। অনেকটা শিশুর মতো। যে কিনা শাসনও বোঝে, আবার স্নেহও।

ফাহিরের চলে যাওয়ার এক বছর হয়ে গেল। এই এক বছরে পৃথিবী অনেক বদলে গেছে, বদলে গেছি আমি, আমরা। আর হ্যাঁ, ফাহির আপনাকে বলা হয়নি, আমাদের পদোন্নতি হয়েছে, যেটার অপেক্ষায় আপনিও ছিলেন। কত কিছুই তো ভাবতেন, কত কিছু পরিকল্পনা করতেন। আপনি ছুটি না নিলে আপনারও পদোন্নতি হয়ে যেত আর আপনার যে আশা-আকাঙ্ক্ষা ছিল, সেটাও কিছুটা হলেও পূরণ হতো।

ফাহির জানেন, আপনার ডেস্কে যে প্লাস্টিকের ফুল ছিল, সেটা আমি এখনো যত্ন করে রেখে দিয়েছি। আমার ডেস্কে আপনার ওই একটা স্মৃতিই আছে। মাঝে মাঝে মনে পড়লে আপন মনে দেখি, আপনার কর্মকাণ্ডের কথা ভাবি। প্লাস্টিকের ফুল তো, শুকাবে না কখনো। মাঝে মাঝে ছবিও তুলে দেব। ঠিকানাটা দিয়েন ফাহির, পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা থাকবে।

হয়তো ভালো আছেন। ভালো থাকবেন, ফাহির।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পদোন্নতি দিয়ে ৬৫ হাজার সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা: ডিজি

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

সমালোচনার মুখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের নিয়োগ বাতিল

মির্জা ফখরুলের কাছে অভিযোগ, ১৬ দিনের মাথায় ঠাকুরগাঁও থানার ওসি বদলি

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত