Ajker Patrika

ক্যামেরাহীন কবি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
আপডেট : ১৪ আগস্ট ২০২১, ০৮: ৩৬
ক্যামেরাহীন কবি

কবিতাই তাঁর প্রকাশের জায়গা, কিন্তু গদ্যও লেখেন অনবদ্য। নির্মলেন্দু গুণ কখনো কখনো গদ্যে যা লিখে রেখেছেন, তা পড়ে ফেলা যায় সহজেই। কোথাও হোঁচট খেতে হয় না। মনে হয়, তিনি যেন সামনে দাঁড়িয়ে আড্ডার ছলে বলছেন কথাগুলো।

এই যুগে ছবি তোলার জন্য ক্যামেরার প্রয়োজন হয় না। হাতে একটা স্মার্টফোন থাকলেই হয়। যেকোনো সচল বা স্থিরচিত্র ধারণ করা যায় অনায়াসে। কিন্তু যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে, সেটা ১৯৮২ সাল। স্মার্টফোন তখন ছিল না। ইয়াশিকা, নাইকন, ক্যাননসহ নানা ধরনের ক্যামেরার রমরমা সে সময়। সোভিয়েত ইউনিয়নে পাওয়া যেত জেনিত নামে একটি ক্যামেরা। সেটাও ছিল খুব ভালো।

সে সময় কবি নির্মলেন্দু গুণের কোনো ক্যামেরা ছিল না। ক্যামেরাকে তখনো খুব দামি একটি সম্পত্তি হিসেবেই ভাবা হতো। ক্যামেরাহীন কবি সোভিয়েত ইউনিয়ন ঘুরে গেছেন ভিয়েতনামে। সে সময় সেখানে হচ্ছিল দ্বাদশ আফ্রো-এশীয় লেখক সম্মেলন। অংশগ্রহণকারীদের পকেট মানি হিসেবে দেওয়া হয়েছিল ২০০ ডং করে। কিছু জরুরি জিনিসপত্র, এই যেমন তিনটি চিঠি, একটি টেলিগ্রাম পাঠাতে মাত্র ১০ ডং খরচ হলো কবির। ভিয়েতনামের মুদ্রার মান এত উচ্চে ভেবে খুশি হলেন তিনি। কিন্তু বিড়ম্বনায় পড়লেন ছবি তুলতে গিয়ে। নিজের ক্যামেরা না থাকলে যে এতটা ভুগতে হবে, সেটা তিনি বুঝতেই পারেননি।
সেদিন বিকেলে তিনি নিজের ছবি তোলাতে চাইলেন। পেশাদার ফটোগ্রাফারকে দিয়েই তো তোলাতে হবে। ছবি তোলার পর দুটো ছবি কিনতে চাইলে দেখা গেল তার দাম ১০০ ডং! এটা ছিল কবির ভাবনারও অতীত! বেশ কিছুক্ষণ দ্বিধাদ্বন্দ্বে কাটল কবির সময়। নেবেন কি নেবেন না! অবশেষে ছবির কাছে পরাজিত হলো অর্থ। তিনি কিনে নিলেন। ভাবলেন, টাকা অস্থির, ছবি অচল ও স্থির। ছবি কথা বলবে।

ভুল ভাবেননি কবি। এখনো সে ছবি দেখে আনন্দে তাঁর মন ভরে যায়।

সূত্র: নির্মলেন্দু গুণ, এবং প্যারিস, পৃষ্ঠা ৮১

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত