Ajker Patrika

তালাকের ক্ষেত্রে স্বামীর একতরফা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে স্ত্রী মামলা করতে পারেন

ব্যারিস্টার ইফফাত গিয়াস আরেফিন
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

গত বছর আমার বিয়ে হয় ছেলের ইচ্ছার বিরুদ্ধে। বিয়ের কয়েক দিন পরে সে আমাকে ছেড়ে চলে যায়। আর কখনো খোঁজখবর নেয়নি। তখন আমাদের বিয়ে রেজিস্ট্রি হয়েছিল। কিন্তু তখন আমার স্বামীর বয়স কম ছিল। তার বিরুদ্ধে আমি মামলা করতে চাইলে কাজি সাহেব আমাদের বিয়ের কাবিলনামা অস্বীকার করেন। তখন আমি আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে (৯)১ মামলা করি। এরপর সে কিছুদিন হাজতে ছিল। তারপর বিয়ের শর্তে আপস হলে আমাদের আবার বিয়ে হয় কোর্টের মাধ্যমে। পরে আমি মামলা তুলে নিই। দীর্ঘদিন আমরা ঘর-সংসার করে আসছি। কিন্তু হঠাৎ সে তালাকের নোটিশ পাঠিয়েছে। কিন্তু আমি সংসার করতে চাই। তার বিরুদ্ধে কি আইনি পদক্ষেপ নিতে পারব? জিনাত আরা, কুষ্টিয়া

আপনার বর্ণনা অনুযায়ী, আপনার স্বামীর সঙ্গে আপনার প্রথম বিয়ে হয়েছিল তাঁর অনিচ্ছায়, নাবালক বয়সে। বাংলাদেশের মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী, কোনো পুরুষের বয়স ১৮ বছরের নিচে হলে, তাঁর বিয়ে বৈধ নয়। রেজিস্ট্রারদেরও এ ধরনের বিয়ে রেজিস্ট্রি করা আইনবিরুদ্ধ হিসেবে গণ্য হয়।

» তবে পরবর্তী সময়ে আদালতের মাধ্যমে পুনরায় বিয়েকে বৈধ ধরা হবে।

» বর্তমান অবস্থায় মুসলিম পারিবারিক আইন (তালাকসংক্রান্ত) অনুযায়ী কিছু বিষয় জানতে হবে।

তালাকের প্রক্রিয়া ও বৈধতা

» তালাক দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বামীকে প্রথমে তালাকের নোটিশ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও স্ত্রীকে পৃথকভাবে পাঠাতে হয়।

» তারপর ৯০ দিনের একটি ইদ্দত সময় গণনা শুরু হয়। এ সময়ের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর সমঝোতা হলে তালাক বাতিল করা যায়।

» যদি স্বামী একতরফাভাবে তালাক দেন এবং ইদ্দতের সময় শেষ হয়ে যায়, তাহলে তালাক কার্যকর হয়।

আপনি যা করতে পারেন

অনাপত্তিপত্র

আপনি সংসার করতে ইচ্ছুক হলে এখনই চেয়ারম্যান বরাবর তালাক মেনে না নেওয়ার এবং পুনরায় পারিবারিক মিলনের আগ্রহ প্রকাশ করে আপত্তিপত্র দিতে পারেন।

সংসার পুনরুদ্ধার মামলা করা

আপনি চাইলে পারিবারিক আদালতে গিয়ে ‘সংসার পুনরুদ্ধার’ মামলা করতে পারেন। স্বামী স্ত্রীকে অন্যায়ভাবে পরিত্যাগ করলে এটি মুসলিম পারিবারিক আইনের অধীনে স্বামীর বিরুদ্ধে দায়ের করা যায়। এই মামলার মাধ্যমে আদালত স্ত্রীকে তাঁর স্বাভাবিক অধিকার অনুযায়ী সংসারে ফিরিয়ে নিতে স্বামীকে নির্দেশ দিতে পারেন।

যৌতুক ও নির্যাতনসংক্রান্ত মামলা

যদি আপনার স্বামী তালাকের জন্য চাপ দেন, নির্যাতন করেন বা অন্য কারণে আপনাকে ত্যাগ করে থাকেন, আপনি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (ধারা ১১ বা ৩) অনুযায়ী আবার মামলা করতে পারেন।

মোহরানা ও খোরপোশ

তালাক কার্যকর হয়ে গেলে স্বামীকে অবশ্যই আপনাকে মোহরানা পরিশোধ করতে হবে। এ ছাড়া যদি আপনি নির্ভরশীল হন বা সন্তান থাকে, তাহলে খোরপোশ দাবি করতে পারেন।

ইসলামি শরিয়াহ ও সামাজিক উদ্যোগ

অনেক সময় সামাজিক ও ধর্মীয় নেতাদের মধ্যস্থতায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আপস হয়। আপনি চাইলে স্থানীয় মসজিদের ইমাম, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা পারিবারিক বয়স্ক লোকজনের মাধ্যমে আলোচনায় যেতে পারেন।

আপনি একজন আইনস্বীকৃত স্ত্রী এবং সংসার করতে ইচ্ছুক। আপনার স্বামীর একতরফা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপনি আইনের আশ্রয়ে সংসার পুনরুদ্ধার, খোরপোশ বা নারী নির্যাতনের মামলা করতে পারেন।

পরামর্শ দিয়েছেন: অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পিরোজপুরের কচুরিপানা রপ্তানি হচ্ছে ২৫ দেশে

ওসি-এসআই-কনস্টেবল চক্র: আখাউড়া ইমিগ্রেশনে টাকা দিলে সব হয়

তোমাদের যে কিছু করিনি, তা-ই ভাগ্য—ডাকাতির সময় দুই কিশোরীকে সাবেক সেনা কর্মকর্তা

সাধুর বেশে এসে সাবেক স্ত্রীকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা

বরিশাল-১: স্বপন-কুদ্দুসের দ্বন্দ্বে নির্বাচনের আগে দলে অস্থিরতা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত