Ajker Patrika

যে নারীর উদ্ভাবিত ডিশওয়াশিং মেশিন এখন ঘরে ঘরে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ডিশওয়াশিং মেশিনের উদ্ভাবক জোসেফিন গারিস কোক্রান। ছবি: ইউএস পেটেন্ট অফিস।
ডিশওয়াশিং মেশিনের উদ্ভাবক জোসেফিন গারিস কোক্রান। ছবি: ইউএস পেটেন্ট অফিস।

১৮৯৩ সাল। ছয় মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে আয়োজিত হয়েছিল শতাব্দীর অন্যতম বৃহৎ আয়োজন ওয়ার্ল্ডস কলম্বিয়ান এক্সপোজিশন। এই আয়োজনে এসেছিল ২ কোটি ৭০ লাখেরও বেশি মানুষ। মেশিনারি হলে আয়োজিত এই মেলায় হাজারো নতুন যন্ত্রপাতির প্রদর্শিত হয়েছিল। ফোনোগ্রাফ-টেলিগ্রাফের মতো যন্ত্রের মিছিলে এই প্রদর্শনীতে আলোড়ন তুলেছিল একটি ডিশওয়াশিং মেশিন।

ডিশওয়াশিং যন্ত্রটি দিয়ে একসঙ্গে ২০০ টিরও বেশি থালা-বাসন ধোয়া যেত। ডিশওয়াশিং মেশিনে দেওয়ার মাত্র দুই মিনিটের মধ্যেই থালা-বাসন ঝকঝকে পরিষ্কার হয়ে বেরিয়ে আসত। বিশাল এই মেলায় এই ডিশওয়াশিং মেশিনটি শুধু প্রদর্শনের জন্যই ছিল না, পাশাপাশি মেলার রেস্তোরাঁগুলো প্রতিদিন হাজার হাজার থালা-বাসন পরিষ্কার করতে এটি ব্যবহার করেছিল। এমনকি মেলায় ‘সেরা যান্ত্রিক নির্মাণ, স্থায়িত্ব এবং নির্দিষ্ট কাজে উপযোগিতার’ জন্য পুরস্কারও পেয়েছিল এই যন্ত্র।

জেনে অবাক হবেন যে, এই ডিশওয়াশিং মেশিনের উদ্ভাবক ছিলেন একজন নারী এবং ওই বিশাল আয়োজনের একমাত্র নারী উদ্ভাবক। চলুন তাঁর সম্পর্কে জানা যাক। প্রকৌশলী লরেন বুশের লেখা ওউম্যান ইন দ্য ন্যাশনাল ইনভেন্টরস হল অব ফেম বইয়ে এই নারী উদ্ভাবককে নিয়ে একটি অধ্যায় রয়েছে।

জোসেফিন গারিস কোক্রান। ১৮৩৯ সালের এক শীতল মার্চের দিনে ওহাইওর অ্যাশতাবুলা কাউন্টিতে জন্ম হয় তাঁর। পূর্বসূরিদের থেকে পেয়েছিলেন উদ্ভাবনী দক্ষতা। প্রথম স্টিমবোটের তৈরির পেটেন্ট পেয়েছিলেন প্রপিতামহ। বাবা ছিলেন একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, যিনি ওহাইও ও ইন্ডিয়ানায় একাধিক চূর্ণীকল (মিল) পরিচালনা করতেন।

মায়ের মৃত্যুর পর জোসেফিন বড় বোনের সঙ্গে ইলিনয়ে চলে আসেন, যেখানে তাঁর পরিচয় হয় উইলিয়াম কোক্রানের সঙ্গে। জীবন নিয়ে অ্যাডভেঞ্চার করে বেড়ানো উইলিয়ামের সঙ্গে বেশ সখ্যতা হয় জোসেফিনের। ইলিনয়ে ড্রাই গুডস ব্যবসা ছিল উইলিয়ামের। ১৮৫৮ সালে ১৯ বছর বয়সী জোসেফিন নয় বছরের বড় উইলিয়াম কোক্রানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।

স্বাধীনতাপ্রিয় জোসেফিন সফল এক ব্যবসায়ীর স্ত্রী হিসেবে স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন পার করছিলেন। ইলিনয়ের শেলবিভিলে একটি বড় বাড়িতে বসবাস শুরু করেন এই দম্পতি। জোসেফিন প্রায়ই অতিথিদের আপ্যায়নে তাঁর উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ১৭শ শতাব্দীর চিনামাটির বাসন ব্যবহার করতেন। তবে বাসন ধোয়ার সময় গৃহপরিচারকেরা ভেঙে ফেলেছে দেখে তিনি হতাশ হয়ে পড়েন। পরে নিজেই বাসন ধোয়ার সিদ্ধান্ত নেন, কিন্তু তাঁর হাত থেকে পড়েও প্লেট ভেঙে যায়।

এ অবস্থায় জোসেফিন ভাবতে থাকেন, এ কাজটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে করা যায় কি না। দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে তিনি ঘোষণা করেন, ‘যদি অন্য কেউ ডিশওয়াশিং মেশিন আবিষ্কার না করে, তবে আমি নিজেই এটি করব।’

প্রদর্শনীতে আলোড়ন তুলেছিল একটি ডিশওয়াশিং মেশিন। ছবি: শিকাগো মিউজিয়াম।
প্রদর্শনীতে আলোড়ন তুলেছিল একটি ডিশওয়াশিং মেশিন। ছবি: শিকাগো মিউজিয়াম।

এমন অবস্থায় ১৮৮৩ সালে উইলিয়াম হঠাৎ মারা গেলে জোসেফিন জানতে পারেন, তাঁদের আর্থিক অবস্থা আসলে তাঁর ধারণার চেয়ে অনেক বেশি খারাপ। উইলিয়াম মাত্র ১৫০০ ডলার এবং ক্রমবর্ধমান ঋণের বোঝা রেখে মারা গিয়েছিলেন। জোসেফিন এ সময় তাঁর ডিশওয়াশিং মেশিন তৈরি পরিকল্পনায় পুরোপুরি মনোনিবেশ করেন।

এ কাজে তাঁর সহযোগী হন মেকানিক জর্জ বাটারস। জোসেফিনের আঁকা নকশা থেকে একটি কার্যকর প্রোটোটাইপ তৈরি করতে কাজ করেন তিনি। লরেন বুশ তাঁর বইয়ে লেখেন, ‘তাদের কাজের সম্পর্ক অত্যন্ত সফল ছিল, কারণ বাটারস তাঁকে গুরুত্ব সহকারে নিতেন। তিনি জানতেন, তাঁর কাজ কেবল জোসেফিনের ধারণাগুলোর বাস্তবায়ন করা।’

লোকচক্ষু এড়িয়ে জোসেফিন ও বাটারস বাড়ির পেছনে শেডে কাজ করতেন। বুশ বলেন, ‘জোসেফিন খুব সচেতন ছিলেন। মানুষ যদি বারবার তাঁর বাড়িতে বাটারসকে আসতে দেখত, তবে এটি তার সামাজিক মর্যাদার জন্য ক্ষতিকর হতে পারত।’

১৮৮৬ সালের বড়দিনের কয়েকদিন পরেই, জোসেফিন ‘ডিশ ওয়াশিং মেশিন’ এর জন্য মার্কিন পেটেন্ট নম্বর পান। জোসেফিনের আশা ছিল, তাঁর এই উদ্ভাবন নারীদের কাজের বোঝা কমাতে সাহায্য করবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, যন্ত্রটির দাম এত বেশি দাঁড়ায় যে সাধারণ ঘরের নারীদের সাধ্যের মধ্যে ছিল না।

এক সাক্ষাৎকারে জোসেফিন বলেন, ‘যখন রান্নাঘরের জন্য ৭৫ থেকে ১০০ ডলার খরচের কথা আসে, তখন একজন নারী সঙ্গে সঙ্গে হিসাব কষতে বসে যান যে এই অর্থ দিয়ে আর কী কী করা সম্ভব। তিনি বাসন ধোয়া অপছন্দ করেন—কোনো নারীই বা পছন্দ করেন?—কিন্তু তিনি এখনো তাঁর সময় ও স্বাচ্ছন্দ্যকে অর্থমূল্য হিসেবে ভাবতে শেখেননি। তাছাড়া, বাড়ির বড় খরচের ক্ষেত্রে শেষ সিদ্ধান্ত নারীর হাতে থাকে না।’

তারপর জোসেফিন নারীদের গৃহের ব্যবহারের ভাবনা দূরে রেখে হোটেল ও রেস্তোরাঁর দিকে মনোযোগ দেন। অবশেষে ১৮৮৭ সালে শিকাগোর পামার হাউস হোটেলে তাঁর প্রথম ডিশওয়াশিং মেশিন বিক্রি করতে পারেন।

পুরুষ হোটেল মালিকদের কাছে নিজের ধারণা উপস্থাপন করা কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল, সে স্মৃতি মনে করে জোসেফিন বলেন, ‘আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না সেই সময় কেমন ছিল...একজন নারীর জন্য একা একটি হোটেলের লবিতে প্রবেশ করাই ছিল দুঃসাহসিক কাজ। আমি কখনো আমার স্বামী বা বাবাকে ছাড়া কোথাও যাইনি। লবিটা যেন এক মাইল চওড়া মনে হচ্ছিল। প্রতিটি পদক্ষেপে মনে হচ্ছিল আমি অজ্ঞান হয়ে যাব, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। বরং আমি ৮০০ ডলারের একটি অর্ডার পেয়েছিলাম।’

জোসেফিনের করা ডিশওয়াশিং মেশিনের পেটেন্ট। ছবি: ইউএস পেটেন্ট অফিস।
জোসেফিনের করা ডিশওয়াশিং মেশিনের পেটেন্ট। ছবি: ইউএস পেটেন্ট অফিস।

জোসেফিন পরে গারিস-কোক্রান নামে ডিশওয়াশিং কোম্পানি গড়ে তোলেন। ১৮৯৩ সালের শিকাগো ওয়ার্ল্ডস ফেয়ার তাঁর জন্য বড় সাফল্য নিয়ে আসে। একমাত্র নারী উদ্ভাবক হিসেবে মেলায় তিনি সবার মনোযোগ কাড়েন। আগের থেকে অনেক বেশি অর্ডার আসতে থাকে তাঁর। রেস্তোরাঁ ও হোটেলগুলোর পাশাপাশি হাসপাতালগুলোও তাঁর থেকে ডিশওয়াশার কেনা শুরু করে।

১৮৯৮ সালের দিকে জোসেফিন ডিশওয়াশার তৈরির পুরো প্রক্রিয়াটি নিজের কারখানায় শুরু করেন। কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে ‘ক্রেসেন্ট ওয়াশিং মেশিন কোম্পানি’ রাখেন। নিজস্ব কারখানা চালু করার পর তিনি সেই শুরুর সময়ের সঙ্গী বাটারসকে পদোন্নতি দিয়ে ফোরম্যান হিসেবে নিয়োগ দেন। কোম্পানি বড় হতে থাকে। ইলিনয় ছাড়িয়ে, আলাস্কা থেকে মেক্সিকো পর্যন্ত পৌঁছে যায় জোসেফিনের ডিশওয়াশার।

১৯১৩ সালের ৩ আগস্ট ৭৪ বছর বয়সে শিকাগোতে নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সফল নারী উদ্ভাবক জোসেফিন ক্রোকান। তাঁর মৃত্যুর ১৩ বছর পর হোবার্ট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি ক্রেসেন্ট ডিশওয়াশিং কোম্পানিকে অধিগ্রহণ করে। জোসেফিনের মূল পেটেন্টের ওপর ভিত্তি করে কিচেনএইড ডিশওয়াশার উৎপাদন শুরু করে। ১৯৮৬ সালে হোবার্টের কিচেনএইড ব্র্যান্ডটি হুইরপুল কর্পোরেশন অধিগ্রহণ করে।

প্রকৌশলী লরেন বুশ বলেন, “এটি আশ্চর্যের বিষয়, এখন এই আধুনিক যুগে যেসব ডিশওয়াশার তৈরি হচ্ছে সেগুলোর সঙ্গে জোসেফিনের আবিষ্কৃত ডিশওয়াশারের এক ‘অবিচ্ছিন্ন সংযোগ’ রয়ে গেছে।”

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রোকেয়াকে ‘মুরতাদ’ বলা রাবি শিক্ষকের অপসারণ চায় মহিলা পরিষদ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ৩০
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান। ছবি: সংগৃহীত
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান। ছবি: সংগৃহীত

নারী জাগরণের অগ্রদূত রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনকে নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), বাংলাদেশ মহিলা পরিষদসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও সংস্থা। আজ বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) আলাদা বিবৃতিতে এই নিন্দা জানায় সংগঠনগুলো। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হয়ে বেগম রোকেয়াকে নিয়ে ঘৃণা প্রচারমূলক ও নারীবিদ্বেষী বক্তব্য রাষ্ট্রীয় আইন এবং পেশাগত নীতিবোধের চরম লঙ্ঘন বলে মনে করে সংগঠনগুলো।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান ৯ ডিসেম্বর রোকেয়া দিবসে তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে সমাজ সংস্কারক মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়াকে ‘মুরতাদ-কাফির’ আখ্যায়িত করে পোস্ট দেন। এর নিন্দা জানিয়ে বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) তাদের বিবৃতিতে বলেছে, ‘বাংলা ও বাঙালি নারী জাগরণের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়া, যাঁর অবদান আমাদের শিক্ষা, সমাজচিন্তা ও মনন গঠনের ভিত্তি। তাঁকে নিয়ে এমন বিদ্বেষপূর্ণ ও উসকানিমূলক মন্তব্য কেবল নিন্দনীয়ই নয়, এটি নারীর মর্যাদার ওপর সরাসরি আক্রমণ। একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, যিনি নিজেদের পেশার নৈতিকতা, শালীনতা এবং প্রগতিশীল চেতনার প্রতীক হওয়ার কথা, তাঁর কাছ থেকে এ ধরনের বক্তব্য একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বজ্ঞানহীন, ঘৃণা প্রচারমূলক ও নারীবিদ্বেষী বক্তব্য পেশাগত নীতিবোধের চরম লঙ্ঘন।’

আসক মনে করে, ‘এ ধরনের মন্তব্য ব্যক্তিগত দায়িত্বহীনতার সীমা ছাড়িয়ে সমাজে বিভাজন, নারীবিদ্বেষী ও ঘৃণামূলক বক্তব্যকে উসকে দেয়। যা মানবাধিকার মানদণ্ড, রাষ্ট্রীয় আইন এবং একাডেমিক নৈতিকতার সরাসরি লঙ্ঘন। বেগম রোকেয়া শুধুই একজন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব নন, তিনি বাঙালি নারীর মুক্তি আন্দোলনের ভিত্তি। তাঁকে অবমাননা করা মানে বাঙালির সামষ্টিক অগ্রযাত্রাকে আঘাত করা।’

নারী অধিকার ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ তাদের বিবৃতিতে অনতিবিলম্বে ওই শিক্ষকের অপসারণের দাবি জানিয়েছে। সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম ও সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘যারা ধর্মের অপব্যাখ্যার ওপর ভর করে নারীদের সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষক তাদেরই একজন। রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন ১৫০ বছর আগে নারী মুক্তির যে স্বপ্ন দেখিয়ে গেছেন, তাঁর আদর্শ এখনো প্রাসঙ্গিক হওয়ায় নারী প্রগতিবিরোধী একটি গোষ্ঠী তাঁকে ভয় পায়। রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের স্বপ্নকে বুকে ধারণ করে যখন দেশের মেয়েরা সকল ক্ষেত্রে অগ্রসর হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখন শিক্ষক নামধারী একজন ব্যক্তির এই অপপ্রচার, তার শিক্ষকতার যোগ্যতা নিয়ে ভাবতে বাধ্য করে।’

মহিলা পরিষদ মনে করে, ‘যখন রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রোকেয়া দিবস পালন করা হচ্ছে, রোকেয়া পদকের প্রবর্তন করা হয়েছে, তখন এ ধরনের অপপ্রচার রাষ্ট্রীয় নীতিবিরোধী কাজ। এ ধরনের অপচেষ্টা স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে নারীর অগ্রযাত্রা প্রতিহত করার একটি ষড়যন্ত্র এবং দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করার একটি অপতৎপরতা। এই অপপ্রচার সুস্থ সমাজ গঠনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। সমাজের মধ্যে বসবাসকারী নারীবিদ্বেষী গোষ্ঠীর এ ধরনের সমাজবিরোধী কর্মকাণ্ড সম্মিলিতভাবে এখনই প্রতিহত করা দরকার।’

নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন নারীপক্ষের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বেগম রোকেয়া কখনোই ধর্মবিদ্বেষী ছিলেন না। বরং তিনি আজীবন অন্ধ কুসংস্কার, বৈষম্য ও অজ্ঞতার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। ধর্মের ব্যবহার করে নারীকে অসম্মান-অপদস্থ করা, নারীর অধিকার খর্ব করা এবং নারীকে চার দেয়ালের অন্ধকারে আবদ্ধ করে রাখার বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছেন।’

নারীপক্ষের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘কাউকে অসম্মান ও হেয়প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে ধর্মীয় শব্দ-বাক্য ব্যবহার করা অন্যায় এবং সংকীর্ণ মানসিকতার পরিচয়। রোকেয়াসহ নারী-পুরুষ নির্বিশেষে কোনো মানুষের প্রতিই এমন বক্তব্য ও আচরণের তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানায় নারীপক্ষ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ল্যানসেটের গবেষণা: শৈশবে ১০০ কোটি মানুষ যৌন সহিংসতার শিকার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৪৪
ল্যানসেটের গবেষণা: শৈশবে ১০০ কোটি মানুষ যৌন সহিংসতার শিকার
প্রতীকী ছবি

বিশ্বজুড়ে এক শ কোটির বেশি মানুষ যাদের বয়স ১৫ বছর কিংবা এর বেশি; তারা শৈশবে কোনো না কোনোভাবে যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছে। এ ছাড়া ৬০ কোটির বেশি নারী তাঁর সঙ্গীর দ্বারা সহিসংতার শিকার হয়েছেন ২০২৩ সালে। দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চলে এমন নির্যাতনের হার সবচেয়ে বেশি। বিখ্যাত চিকিৎসাবিষয়ক সাময়িকী ল্যানসেটে প্রকাশিত গবেষণায় এ চিত্র উঠে এসেছে।

গত মঙ্গলবার গবেষণাটি প্রকাশ করা হয়েছে। ২০৪টি দেশ ও অঞ্চলের তথ্য নিয়ে এ গবেষণা করা হয়েছে। গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, এমন সহিংসতার কারণে দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চলে এইডস এবং অন্যান্য ক্রনিক রোগের সংক্রমণের হারও বেশি।

এই গবেষণার জন্য ২০২৩ সালের ‘গ্লোবাল বার্ডেন ডিজিজের’ (জিবিডি) তথ্য নেওয়া হয়েছে। গবেষণায় যুক্ত ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনসহ ৬০০টির বেশি প্রতিষ্ঠান। ল্যানসেটের ওই গবেষণায় বলা হচ্ছে, জীবনসঙ্গীর ওপর চালানো নির্যাতন ও শিশুদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া যৌন সহিংসতা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অন্যতম একটি উপায়। এটি সমাজে এবং ভুক্তভোগীদের ওপর দীর্ঘ মেয়াদে প্রভাব ফেলছে। এর স্বাস্থ্যগত প্রভাব ভয়ংকর।

তবে এটি জানার পরও বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে প্রতিকারে যথেষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।

এই নিয়ে ভারতের গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়েছে, এমন সহিসংতার কারণে ভুক্তভোগীরা যে স্বাস্থ্যগত ক্ষতি ও প্রতিবন্ধিতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, এর চিত্র উঠে এসেছে গবেষণায়। নারীরা যে প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েছেন এর অন্যতম আটটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম কারণ বিষণ্নতা ও উদ্বেগজনিত রোগ। সহিংসতার শিকার নারীরা এসব রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে তাদের অনেকে প্রতিবন্ধিতা বরণ করতে বাধ্য হচ্ছেন। এ ছাড়া শিশুরা যারা এমন যৌন সহিংসতার শিকার হচ্ছে, তারা মানসিক এবং এইডস, ডায়াবেটিসসহ ক্রনিক বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

এদিকে জীবনসঙ্গীর নির্যাতনের শিকার হয়ে বিশ্বজুড়ে ২০২৩ সালে মারা গেছে ১ লাখ ৪৫ হাজার মানুষ। এর মধ্যে অনেকে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। অনেকে আত্মহত্যা করেছে। আবার নির্যাতনের কারণে এইডসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে কেউ কেউ। ল্যানসেট বলছে, ২০২৩ সালে ৩০ হাজার নারীকে হত্যা করেছেন তাঁর সঙ্গী। ২০২৩ সালে যৌন সহিংসতার কারণে মারা গেছে ২ লাখ ৯০ হাজার শিশু। এর একটি বড় অংশ আত্মহত্যা করেছে। এ ছাড়া এইডস, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে অনেকে। এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণও ছিল যৌন সহিংসতা।

দক্ষিণ এশিয়ায় এখন যাঁরা প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ, যারা শৈশবে যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন, তাঁদের অনেকের মধ্যে আত্মঘাতী প্রবণতা দেখা দিয়েছে। অনেকে সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। আর নারীরা যাঁরা কিনা শৈশবে যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে দুশ্চিন্তাজনিত রোগ বেড়েছে।

ল্যানসেটের এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের সহকারী অধ্যাপক লুইসা সোরিও ফ্লোর। তিনি বলেন, শিশুদের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতা ও নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতাকে দীর্ঘ সময় ধরে যেভাবে সমাজ দেখে আসছে, নতুন এই গবেষণা সেটাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। এমন ভুক্তভোগীদের স্বাস্থ্যগত অবস্থা কী, সেটাও সামনে এনেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় জীবনের গল্প

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মাহমুদা পারভীন। নামটি এখনো খুব পরিচিত নয়। সরকারি বাঙলা কলেজ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন তিনি। তবে তাঁর আরেকটি পরিচয় আরও উজ্জ্বল; তিনি একজন মুহূর্ত-শিকারি, ফটোগ্রাফার। কোনো প্রশিক্ষণ নেই, কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির কাছে গ্রুমিংও নয়; নিজের ভালোবাসা আর অনুভূতির টানে তিনি ধরে রাখতে শুরু করেছিলেন প্রিয় মুহূর্তগুলো।

মা, বাবা, ভাই, ভাবি এবং তাঁদের সন্তানদের নিয়ে মাহমুদার পরিবার। সেখানে আর কেউ ছবি তোলে না; তাই ফটোগ্রাফি নিয়ে তাঁর যে জগৎ, সেটি পুরোপুরি নিজের হাতে গড়া। একাকী এই পথচলাই যেন তাঁকে আরও বিশেষ মনোযোগী করে তুলেছে, আরও অনুপ্রাণিত করেছে।

শুরুটা খুব সাধারণ, তারপরও বিশেষ

‘সুন্দর মুহূর্ত ধরে রাখতে ভালো লাগে’—এমনই এক সাধারণ অনুভূতি থেকে মাহমুদা ছবি তুলতে শুরু করেন। সময়কে কেউ থামাতে পারে না। কিন্তু ছবি সেই সময়ের ছাপকে ধরে রাখতে পারে। এই টান থেকে তাঁর ফটোগ্রাফির যাত্রা।

প্রথম ক্যামেরা? ক্যামেরা বলা যাবে না। কারণ, এখন পর্যন্ত তিনি মোবাইল ফোন দিয়েই ছবি তোলেন। এই মোবাইল যেন তাঁর হাতে এক জাদুর বাক্স।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

স্বীকৃতির প্রথম ধাপ

মোবাইল ফোন দিয়ে তোলা তাঁর ছবি প্রথমবার জায়গা করে নেয় ‘তরুণেরাই পরিবর্তনের প্রভাবক’ আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে। জাতিসংঘের ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত হয়েছিল প্রদর্শনী। সেখান থেকে তিনি পেয়েছেন একটি সার্টিফিকেট। এটি তাঁর কাছে শুধু একটি কাগজ নয়, নিজেকে আরও একধাপ এগিয়ে নেওয়ার সাহস।

অনলাইন প্রতিযোগিতায় তাঁর সাফল্য রয়েছে। ‘প্রাণোচ্ছ্বাস আত্মসেবা নয়, মানবসেবা’-এর ১৭ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত ফটোগ্রাফি কনটেস্টে তিনি দ্বিতীয় হয়েছেন।

মাহমুদা পারভীন।
মাহমুদা পারভীন।

যেসব ছবি ছুঁয়ে যায়

প্রিয় ছবির কথা উঠলে তিনি স্মরণ করেন এই নভেম্বরের এক ভোরের স্মৃতি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কুয়াশাঘেরা পথে হাঁটতে হাঁটতে দেখেছিলেন, একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছে। চারদিকে কুয়াশা, ভোরের ঠান্ডা, নিস্তব্ধতা আর দুই বন্ধুর পথচলার মিষ্টি স্মৃতি। তিনি মোবাইল ফোনে মুহূর্তটাকে বন্দী করেছিলেন।

ভয়ের দিক

যে কাজ মানুষকে আনন্দ দেয়, সেটির পেছনেও ভয় থাকে। মাহমুদার ভয় খুব সাধারণ, কিন্তু বাস্তব। তা হলো, সব সময় অনুমতি নিয়ে ছবি তোলা যায় না। কেউ যদি বিরক্ত হয়! কেউ রাগ করলে? এসব মাঝে মাঝে তাঁকে থামিয়ে দেয়।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

নারী ফটোগ্রাফার হওয়ার বাড়তি চ্যালেঞ্জ

বাইরের মানুষ বাজে কথা না বললেও অনেক জায়গায় শুনতে হয়, মেয়ে হয়ে ছবি তুলছেন? বিষয়টি সবাই ভালো চোখে দেখে না। তার ওপর বিশেষ চ্যালেঞ্জ হলো, বাড়ির লোকজন এখনো জানেই না, তিনি ছবি তোলেন! তাই নিজের ভালোবাসার কাজটুকু তাঁকে চুপিচুপি, নিজের মতো করে করতে হয়।

পাখির ছবি, প্রকৃতির ছবি

মাহমুদার ভালো লাগে ল্যান্ডস্কেপ, স্ট্রিট ফটোগ্রাফি ও পোর্ট্রেট। বারান্দায় এসে ডেকে ওঠা শালিক পাখিগুলো তাঁর ছবি তোলার নিয়মিত বিষয়। খেলা করতে করতে শালিকদের যে স্বচ্ছন্দ ভঙ্গি, সেগুলো তিনি ক্যামেরায় ধরে রাখার চেষ্টা করেন।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

অভাববোধ করেন একজন গাইডের

মাহমুদার বড় আফসোস, কেউ নেই যিনি বলে দেবেন, কোন ছবি ভালো, কোনটা নয়, কোথায় ভুল, কীভাবে আরও ভালো হওয়া যায়। একজন অভিজ্ঞ মানুষের কাছ থেকে পথনির্দেশনা পেলে তিনি বিশ্বাস করেন, গল্প আরও গভীরভাবে বলতে পারবেন।

স্বপ্ন এখনো চলমান

একদিন চাকরি হবে, ব্যস্ততা তখন নিশ্চয় বাড়বে। কিন্তু ছবি তোলার নেশা কখনো হারিয়ে যাবে না। সুযোগ পেলে নিজের একটি ক্যামেরা কিনবেন; তখন আরও দক্ষভাবে, আরও গল্পময় ছবি তুলবেন। নতুন নতুন গল্পের সন্ধানে পথচলা অব্যাহত থাকবে— মাহমুদার স্বপ্ন আপাতত এতটুকুই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যৌতুক দাবি ও গ্রহণ করা এবং যৌতুকের জন্য চাপ দেওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ

ব্যারিস্টার ইফফাত গিয়াস আরেফিন
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন: বিয়ের পর থেকে আমি নানা জুলুমের শিকার। বলতে গেলে, সব ধরনের জুলুম হয়েছে ১৪ বছর ধরে। আমাদের ৮ বছরের একটি সন্তান আছে। ইশারা-ইঙ্গিতে সাহায্য চায়। অর্থাৎ যৌতুক। সেটা পায় না বলে নানা কারণে রাগ প্রকাশ করে এবং চাপ দেয়। এর থেকে রক্ষা পেতে আমি কী করতে পারি?

নুসরাত জিনিয়া, মুন্সিগঞ্জ

উত্তর: দীর্ঘ ১৪ বছরের মানসিক-শারীরিক নির্যাতন, অর্থনৈতিক চাপ এবং ইঙ্গিতে যৌতুক দাবি করা—এ সবই আইনের চোখে অপরাধ।

যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮ অনুযায়ী

  • যৌতুক দাবি করা, গ্রহণ করা কিংবা সে জন্য চাপ দেওয়া—সবই দণ্ডনীয় অপরাধ।
  • এর শাস্তি সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং জরিমানা।
  • ইঙ্গিতে বা আচরণে চাপ দেওয়া—এটিও অপরাধের মধ্যে গণ্য হয়।

এ ক্ষেত্রে যা করতে পারেন, তা হলো:

  • নথি বা প্রমাণ সংগ্রহ করুন
  • আপনার নিরাপত্তা সবার আগে। প্রমাণ বলতে—হুমকি বা দাবি-সম্পর্কিত অডিও বা ভিডিও
  • মেসেজ, কল রেকর্ড
  • প্রতিবেশী বা আত্মীয়ের সাক্ষ্য
  • চিকিৎসার রিপোর্ট (যদি শারীরিক নির্যাতন থাকে)
  • ১৪ বছরের নির্যাতনের যেকোনো প্রমাণ
  • কোনো ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে প্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা করবেন না।
  • স্থানীয় থানায় জিডি করুন। জিডি করলে—
  • আপনার নিরাপত্তার রেকর্ড তৈরি হবে
  • ভবিষ্যতে মামলা করলে আপনার বক্তব্য শক্তিশালী হবে

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করার সুযোগ যদি শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন থাকে—

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এ শাস্তির বিধান আছে।

যৌতুক মামলা করতে চাইলে কী হয়

যৌতুক মামলায় অভিযোগ করলে পুলিশ তদন্ত করবে এবং প্রমাণ পেলে মামলাটি আদালতে যাবে।

সে ক্ষেত্রে আপনার জন্য সুবিধা

  • স্বামীর পক্ষ থেকে যৌতুকের চাপ বা নির্যাতন আইনি অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি পাবে।
  • তিনি দোষী প্রমাণিত হলে জরিমানা ও কারাদণ্ড হতে পারে।
  • এটি আপনাকে ভবিষ্যতের নির্যাতন থেকে আইনগত সুরক্ষা দেবে।
  • পরবর্তী সময়ে ভরণপোষণ বা হেফাজত বা ডিভোর্সের মামলা করলে আপনার আইনি অবস্থান শক্তিশালী হতে পারে।
  • আপনার সন্তানের নিরাপত্তা এবং ভবিষ্যতের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

ভরণপোষণ ও সন্তানের হেফাজতের অধিকার

আপনি পারিবারিক আদালতে ভরণপোষণ মামলা এবং সন্তানের হেফাজত মামলা করতে পারবেন। ৮ বছর বয়সী সন্তানের হেফাজত সাধারণত মায়ের পক্ষেই যায়, যদিও পরিস্থিতি অনুযায়ী বিচারক সিদ্ধান্ত নেন।

মামলা করা একটি বড় সিদ্ধান্ত। আপনার ভাববার বিষয়, নিজের ও সন্তানের নিরাপত্তা, স্বামীর সঙ্গে থাকা কি বাস্তবে সম্ভব, নাকি ক্ষতির ঝুঁকি বাড়ছে? আপনার কাছে পর্যাপ্ত প্রমাণ আছে কি না? তবে সম্পূর্ণ প্রমাণ না থাকলেও প্রাথমিক তথ্য দিয়ে মামলা করা যায়।

নিরাপদ আশ্রয় বা জরুরি সহায়তা যদি আপনি বিপদের মুখে থাকেন—

  • ৯৯৯-এ কল করুন
  • জাতীয় মহিলা সহায়তা কেন্দ্রের ১০৯ নম্বরে কল করতে পারেন।
  • স্থানীয় নারী সহায়তা কেন্দ্র বা আইন সহায়তা কেন্দ্র ফাউন্ডেশনে যোগাযোগ করতে পারেন।

তবে মামলা করা একটি বড় সিদ্ধান্ত। আপনার ভাববার বিষয় নিজের ও সন্তানের নিরাপত্তা, স্বামীর সঙ্গে থাকা কি বাস্তবে সম্ভব, নাকি ক্ষতির ঝুঁকি বাড়ছে? আপনার কাছে পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ আছে কি না?

তবে সম্পূর্ণ প্রমাণ না থাকলেও প্রাথমিক তথ্য দিয়ে মামলা করা যায়।

পরিস্থিতি অনুযায়ী মামলা করা আপনার প্রতি চলমান নির্যাতন এবং যৌতুকের চাপ থেকে মুক্তির উপায় হতে পারে। তবে এ ধরনের সমস্যার সমাধানের জন্য একজন বিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ নিন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত