Ajker Patrika

এক রত্নগর্ভা মা রেখা রানী

আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর (মানিকগঞ্জ)
Thumbnail image

মাত্র ১৪ বছর বয়সে বিয়ে। একান্নবর্তী পরিবার সামলে সাত সন্তানকে শিক্ষিত করে তোলা মোটেই সহজ কাজ নয়। কিন্তু কখনো কখনো এমন কঠিন কাজও করে ফেলেন আমাদের দেশের মায়েরা। তেমনই একজন রত্নগর্ভা মা ঘিওরের ৭৬ বছর বয়সী রেখা রানী ঘোষ।

ঘিওরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় স্বামী সন্তোষ কুমার ঘোষের সঙ্গে বসবাস করেন রেখা রানী। মা দিবসে আমরা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম সেই বাড়িতে। সন্তানদের কথা বলতে গিয়ে তাঁর চোখ-মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠছিল বারবার। আমরা শুনতে চাইছিলাম তাঁর জীবন ও সংগ্রামের কথা। বয়সের ভার আর জীবনের বিপুল পরিশ্রমে তিনি কিছুটা ক্লান্তই বটে। কিন্তু বলে গেলেন নিজের কথা। তাঁর জন্ম ১৯৪৮ সালে, পাবনা জেলার বনগ্রামে। তুখোড় মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও নারীশিক্ষায় তৎকালীন সমাজের অনীহা আর ধর্মীয় গোঁড়ামির কারণে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে তার ইতি টানতে বাধ্য হন তিনি। মাত্র ১৪ বছর বয়সে পরিবারের মতে বসেন বিয়ের পিঁড়িতে। তারপর সংসারের বোঝা কাঁধে চাপে। স্বামীর সংসারে এসে নানান প্রতিকূল অবস্থা দেখে চিন্তিত হলেও কোনো দিন হতাশ হননি রেখা রানী। স্বামীর অল্প আয় দিয়ে অনেক কষ্টে সংসার পরিচালনা করেছেন। কিন্তু পড়াশোনার প্রতি নিজের তীব্র আকাঙ্ক্ষার কথা তিনি ভুলে যাননি।

রেখা রানী বললেন, ‘আমার খুব পড়াশোনার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু পারিনি। তাই আমার নিজের স্বপ্ন সন্তানদের মধ্যে দেখার প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। নিজেকে আমি সফল বলব। আমি চাই সন্তানেরা সমাজ ও দেশের কাজে এসে মানুষের কল্যাণে নিবেদিত থাকুক। নিজের আলোয় সমাজকে আলোকিত করুক।’

নিজের লালিত স্বপ্ন বাস্তব করতে পাঁচ ছেলে আর দুই মেয়েকে অনেক কষ্টে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। সন্তানদের সব সময় বুঝিয়েছেন, শুধু অর্থ উপার্জন করে প্রকৃত মানুষ হওয়া যায় না। লেখাপড়া হচ্ছে স্থায়ী সম্পদ। লেখাপড়া শিখে নিজে আলোকিত হয়ে সমাজ আলোকিত করা যায়। তাঁর সন্তানদের মধ্যে বড় মেয়ে কল্পনা রানী ঘোষ (৬০) টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন। ছেলে ডা. দিলীপ কুমার ঘোষ (৫৭) শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। নিতাই কুমার ঘোষ (৫৫) সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। গৌরাঙ্গ কুমার ঘোষ (৫০) একজন সফল ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ। আনন্দ কুমার ঘোষ (৪৭) তেরশ্রী ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক, প্রকৌশলী অজয় কুমার ঘোষ (৪৫) গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) উপব্যবস্থাপক এবং সবার ছোট মেয়ে অঞ্জনা রানী ঘোষ (৩৮) মানিকগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন।

রেখা রানীর চতুর্থ সন্তান গৌরাঙ্গ কুমার ঘোষ বলেছেন, ‘একজন মা তাঁর সন্তানদের জীবন গড়তে যে কী ভূমিকা রাখেন, তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আমাদের মা। কোনো সমস্যা হলে আমরা মায়ের সঙ্গেই শেয়ার করতাম। তিনি নিজে কষ্ট করে আমাদের লেখাপড়া করিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত