Ajker Patrika

আন্তর্জাতিক নারী

সীমানাহীন উড়ানের চেষ্টায় হোমা

মৌনতা আমিন
সীমানাহীন উড়ানের চেষ্টায় হোমা

বাকি দুনিয়ার কাছে নাম না জানা কাবুলের এক সরু গলির ভেতর অখ্যাত এক স্কুলে সংগোপনে হয়ে গেল দুই দিনের এক প্রদর্শনী। কাবুল শুনেই বুঝতে পারছেন, সেখানে এসব প্রদর্শনী সরকারিভাবে নিষিদ্ধ। কিন্তু সেটি হয়ে গেল।

সেই প্রদর্শনীতে দেখানো হলো ক্লাসরুমের বদ্ধ দেয়ালে আটকে পড়া কন্যাশিশুদের শৈশব, কাবুলের সরু গলিপথে বোরকা পরা কিশোরীর বই নিয়ে ছুটে চলা এবং এমন আরও কিছু ছবি।

হোমার তোলা ছবি নিয়ে প্রদর্শনীটির নাম ছিল ‘বর্ডারলেস ফ্লাইট’। ছবি: সংগৃহীত
হোমার তোলা ছবি নিয়ে প্রদর্শনীটির নাম ছিল ‘বর্ডারলেস ফ্লাইট’। ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক অনলাইন গণমাধ্যম ‘রুখসানা মিডিয়া’ সেই সংবাদ প্রচার করেছে। তাদের মাধ্যমে জানা যায়, আলোকচিত্রীর নাম ছিল হোমা মোহাম্মদী। সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, সেটি তাঁর ছদ্মনাম। নিরাপত্তার কারণে তারা ছদ্মনাম ব্যবহার করেছে। এই নিরাপত্তার কারণটি বেশ সংগত আফগানিস্তানের প্রেক্ষাপটে।

হোমার জন্ম আফগানিস্তানের দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে। মাত্র ১৪ বছর বয়সে তাঁর শিক্ষাজীবন থেমে যায়। লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেলে হোমা ইংরেজি পড়ানো শুরু করেন এক শিক্ষার্থীকে। আমরা যাকে বলি প্রাইভেট পড়ানো, তিনি তা-ই করতেন। দীর্ঘদিন ধরে প্রাইভেট পড়িয়ে টাকা জমিয়ে তিনি তাঁর প্রথম ক্যামেরা কেনেন। সেটি নিয়ে নেমে পড়েন কাবুলের রাস্তায় ছবি তুলতে। তাঁর ছবির বিষয় ছিল আফগানিস্তানের রাজনৈতিক জীবন, বন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়, কাজের অধিকার হারানো নারী কিংবা মেয়ে ইত্যাদি। প্রথম দিকে ভালোই চলছিল। লেখাপড়া করতে না পারার দুঃখ তিনি ঘুচিয়ে নিচ্ছিলেন ছবি তুলে।

হোমার তোলা ছবি নিয়ে প্রদর্শনীটির নাম ছিল ‘বর্ডারলেস ফ্লাইট’। ছবি: সংগৃহীত
হোমার তোলা ছবি নিয়ে প্রদর্শনীটির নাম ছিল ‘বর্ডারলেস ফ্লাইট’। ছবি: সংগৃহীত

কিন্তু তাতেও বাদ সাধে তালেবান। তারা ছিনিয়ে নিয়ে ছবি মুছে দিয়ে ভেঙে ফেলে ক্যামেরা ও লেন্স। সমানতালে চলে হুমকি-ধমকি। হোমা আবার অর্থ জমিয়ে কিনে ফেলেন ক্যামেরা। শুরু করেন তালেবানের অপছন্দের ছবি তোলা। হোমার তোলা সেসব ছবি নিয়েই হয়ে গেল আলোচ্য প্রদর্শনীটি, গত এপ্রিল মাসে, খুব গোপনে। তাঁর প্রদর্শনীটির নাম ছিল ‘বর্ডারলেস ফ্লাইট’। কারণ কী?

আজ হয়তো আমি স্কুলে যেতে পারছি না, তারা আমার ক্যামেরা ভেঙে ফেলছে, কিন্তু তারা কখনোই আমার স্বপ্ন ভেঙে ফেলতে পারবে না। হোমা মোহাম্মদী

হোমার সেই শিক্ষার্থী নিজের খাতায় বিমানের অনেক ছবি আঁকত। সেসব ছবি দেখে হোমা তার কাছে বিমানের ছবি আঁকার কারণ জানতে চান। ১০ বছর বয়সী শিক্ষার্থীটি জানায়, সে পাইলট হতে চায়। কিন্তু সেটা এখন আর সম্ভব নয়। তাই সে খাতায় ছবি এঁকে রেখেছে। এ কারণেই হোমা তাঁর ছবির কালেকশনের নাম দিয়েছেন ‘বর্ডারলেস ফ্লাইট’। একই নামে করেছেন প্রদর্শনীও। তিনি মনে করেন, এই মেয়েরা খাঁচায় থেকেও ওড়ার স্বপ্ন দেখে।

হোমার তোলা ছবিগুলো আফগান নারী, কিশোরী ও কন্যাশিশুদের শক্তি, সাহস এবং অন্ধকারের বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রেরণা দেয়। সঙ্গে হোমার নিজের যুদ্ধও সে প্রমাণ দেয়। ইংরেজি বিষয়ে প্রাইভেট পড়িয়ে অর্থ জমিয়ে এক বছর ধরে ছবি জমানো, তারপর প্রদর্শনী। এই পুরো বিষয় অত্যন্ত গোপনে করে গেছেন হোমা। তাঁর এই প্রদর্শনী ছিল ২০২১ সালে তালেবান পুনরায় ক্ষমতায় এসে নারীদের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর প্রথম উদ্যোগ। হোমা শুধু ছবি তুলতে চাননি, তিনি বিশ্বকে জানাতে চেয়েছেন, তাঁরা এখনো বেঁচে আছেন।

সূত্র: রুখসানা মিডিয়া

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘তুমি ঘুমাও কীভাবে’, সৌদি যুবরাজকে নিয়ে ট্রাম্পের বিস্ময়

ফরিদপুরে পালিয়ে যাওয়া আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার, থানার ওসিকে বদলি

বিদায় বিশ্বের দরিদ্রতম প্রেসিডেন্ট

সৌদি আরবের সঙ্গে ১৪২ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির চুক্তি করে নিজের রেকর্ড ভাঙল যুক্তরাষ্ট্র

বিদ্যালয়ে সময় দেন না শিক্ষক, ইউএনওর কাছে অভিযোগ করায় সহকর্মীকে মারধর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত