ইশতিয়াক হাসান
প্রাণীজগতে কুমিরের পরিচয় দুর্ধর্ষ শিকারি হিসেবে। স্বাভাবিকভাবেই যেসব নদী, লেক কিংবা পুকুরে কুমির থাকে, মানুষ সেগুলো এড়িয়ে চলে। তবে বুরকিনা ফাসোর ছোট্ট এক গ্রামে ব্যাপারটা একেবারেই আলাদা। এখানে মানুষ আর কুমিরে দারুণ সুসম্পর্ক। এমনকি সেখানে গিয়ে কোনো গ্রামবাসীকে বিশালাকার এসব সরীসৃপের কোনো একটির পিঠে চড়ে বসে থাকতে দেখে চমকে উঠতে পারেন।
বুরকিনা ফাসোতে শুষ্ক সাভানা অঞ্চল আর সবুজ অরণ্য দুটিই পাবেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই বৈচিত্র্যময় প্রকৃতির পাশাপাশি বাজৌলি গ্রামটি টানছে পর্যটকদেরও। বুরকিনা ফাসোর রাজধানী ওয়াগুদুগু থেকে বাজৌলি নামের গ্রামটির দূরত্ব মাইল বিশেক। সেখানে বেশ বড়সড় এক পুকুরে শ দুয়েক কুমিরের বাস। ওই পুকুরই ব্যবহার করে গ্রামবাসী। হঠাৎ বাইরে থেকে কেউ এলে চমকে ওঠেন এভাবে মিলেমিশে থাকা দেখে।
‘ছোটবেলা থেকেই কুমিরের সঙ্গে অভ্যস্ত আমরা। এদের সঙ্গেই পুকুরে সাঁতার কাটি।’ বলেন স্থানীয় বাসিন্দা পিয়েরে কাবোরে। তাঁর কয়েক গজের মধ্যে গ্রামবাসীর দেওয়া একটা মুরগি দিয়ে ভোজে মজেছে বিশালদেহী এক কুমির।
‘আমরা এদের একেবারে কাছে চলে যাই। ওপরে বসে পড়ি। সাহস থাকলে এদের একটার ওপর শুয়েও পড়তে পারবে। কোনো সমস্যা নেই। এরা পবিত্র প্রাণী। কারও ক্ষতি করে না।’ বলেন পিয়েরে কাবোরে।
স্থানীয় কিংবদন্তি অনুসারে কুমিরের সঙ্গে এই সম্পর্কের সূচনা সেই পনেরো শতকের দিকে। গোটা গ্রামটি বড় এক খরার মুখে পড়েছিল তখন। এ সময়ই কুমিরেরা গ্রামের নারীদের পানিপূর্ণ গুপ্ত এক পুকুরের কাছে নিয়ে যায়। সেখানেই পিপাসা মেটায় গ্রামবাসী। বিষয়টি উদ্যাপন ও কুমিরদের ধন্যবাদ জানাতে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে গ্রামবাসী। কুম লাকরে নামের এ ধরনের একটি উৎসব হয়। এখন হয় প্রতিবছর। সেখানে কুমিরকে নানা ধরনের খাবার দেওয়া হয় উপঢৌকন হিসেবে। তেমনি নিজেদের স্বাস্থ্য, উন্নতি ও ভালো ফসলের জন্য প্রার্থনা করে গ্রামবাসী।
কুমির একটি প্রাণী, যেটি সাধারণত ভীতি তৈরি করে মানুষের মধ্যে। গোটা পৃথিবীতে প্রতিবছর মোটামুটি হাজার খানেক মানুষ মারা যায় কুমিরের আক্রমণে। এর প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ আফ্রিকা মহাদেশে। প্রাণীটিকে আফ্রিকার বেশির ভাগ বড় নদীতে পাওয়া যায়। আক্রমণ হঠাৎ হঠাৎ হলেও মানুষ সতর্ক থাকে। তবে বাজৌলির কুমিরেরা মোটেই অন্য কুমিরদের মতো নয়।
বাজৌলির এই কুমিরদের নীল ক্রোকোডাইলের দূর সম্পর্কের আত্মীয় বলতে পারেন। ক্রোকোডিলাস সুচাস নামের আলাদা একটি প্রজাতি তারা। ওয়েস্ট আফ্রিকান ক্রোকোডাইল বা পশ্চিম আফ্রিকান কুমির নামেও এরা পরিচিত।
আসল ব্যাপার হলো, শত শত বছরের পারস্পরিক সহযোগিতার কারণেই এই গ্রামে ভিন্ন এক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা কুমিরদের প্রিয় খাবার মুরগি-মাছ খেতে দেয়। বিনিময়ে কুমিরও তাদের সঙ্গে বন্ধুর মতো আচরণ করে। স্থানীয় বাসিন্দা পিটার যেমন বলেন, ‘আমাদের কুমিরেরা মানুষকে খায় না। বরং তারা গ্রামকে রক্ষা করে। পুকুরে ২০০ কুমির আছে, কিন্তু বাচ্চারা সেখানে সাঁতার কাটে কোনো সমস্যা ছাড়াই।’
মজার ঘটনা, এখনে কুমির মারা যাওয়ার পর অনুষ্ঠান এমনকি গোরও দেওয়া হয় তাদের। গ্রামবাসী বিশ্বাস করে, গ্রামে কোনো দুর্ঘটনা বা অশুভ ঘটনা ঘনিয়ে এলে কেঁদে ওঠে কুমিরেরা। তখন কুমিরদের খাবার দেওয়াসহ নানা আচার পালন করা হয় গ্রামটিকে বিপদ থেকে দূরে রাখতে।
কুমির আর গ্রামবাসীদের এমন সম্পর্কের কথা শুনে দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকেরা আসেন। এতে এখানকার মানুষেরও দু-পয়সা রোজগার হয়। ‘একটু দূর থেকে দেখতে দারুণ লাগে। তবে পিঠে চড়ে বসাটা কেমন উদ্ভট লাগে।’ বলেন বুরকিনা ফাসোতে দাদা-দাদিকে দেখতে আসা ফরাসি তরুণ টমাস বাসপিন।
তবে পৃথিবীর উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়ছে গ্রামটির ওপরও। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমছে এই এলাকায়। কুমিরের বাসা হিসেবে পরিচিত বিখ্যাত পুকুরটিতেও পানি কমে যায় কোনো কোনো ঋতুতে। যদি কখনো এটি শুকিয়ে যায়, তবে সরীসৃপ বন্ধুরা কি আবার মানুষকে দেবে নতুন পুকুরের সন্ধান?
সূত্র: ট্রিলম্যাগ ডট কম, এনডিটিভি, এমিউজিং প্ল্যানেট
প্রাণীজগতে কুমিরের পরিচয় দুর্ধর্ষ শিকারি হিসেবে। স্বাভাবিকভাবেই যেসব নদী, লেক কিংবা পুকুরে কুমির থাকে, মানুষ সেগুলো এড়িয়ে চলে। তবে বুরকিনা ফাসোর ছোট্ট এক গ্রামে ব্যাপারটা একেবারেই আলাদা। এখানে মানুষ আর কুমিরে দারুণ সুসম্পর্ক। এমনকি সেখানে গিয়ে কোনো গ্রামবাসীকে বিশালাকার এসব সরীসৃপের কোনো একটির পিঠে চড়ে বসে থাকতে দেখে চমকে উঠতে পারেন।
বুরকিনা ফাসোতে শুষ্ক সাভানা অঞ্চল আর সবুজ অরণ্য দুটিই পাবেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই বৈচিত্র্যময় প্রকৃতির পাশাপাশি বাজৌলি গ্রামটি টানছে পর্যটকদেরও। বুরকিনা ফাসোর রাজধানী ওয়াগুদুগু থেকে বাজৌলি নামের গ্রামটির দূরত্ব মাইল বিশেক। সেখানে বেশ বড়সড় এক পুকুরে শ দুয়েক কুমিরের বাস। ওই পুকুরই ব্যবহার করে গ্রামবাসী। হঠাৎ বাইরে থেকে কেউ এলে চমকে ওঠেন এভাবে মিলেমিশে থাকা দেখে।
‘ছোটবেলা থেকেই কুমিরের সঙ্গে অভ্যস্ত আমরা। এদের সঙ্গেই পুকুরে সাঁতার কাটি।’ বলেন স্থানীয় বাসিন্দা পিয়েরে কাবোরে। তাঁর কয়েক গজের মধ্যে গ্রামবাসীর দেওয়া একটা মুরগি দিয়ে ভোজে মজেছে বিশালদেহী এক কুমির।
‘আমরা এদের একেবারে কাছে চলে যাই। ওপরে বসে পড়ি। সাহস থাকলে এদের একটার ওপর শুয়েও পড়তে পারবে। কোনো সমস্যা নেই। এরা পবিত্র প্রাণী। কারও ক্ষতি করে না।’ বলেন পিয়েরে কাবোরে।
স্থানীয় কিংবদন্তি অনুসারে কুমিরের সঙ্গে এই সম্পর্কের সূচনা সেই পনেরো শতকের দিকে। গোটা গ্রামটি বড় এক খরার মুখে পড়েছিল তখন। এ সময়ই কুমিরেরা গ্রামের নারীদের পানিপূর্ণ গুপ্ত এক পুকুরের কাছে নিয়ে যায়। সেখানেই পিপাসা মেটায় গ্রামবাসী। বিষয়টি উদ্যাপন ও কুমিরদের ধন্যবাদ জানাতে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে গ্রামবাসী। কুম লাকরে নামের এ ধরনের একটি উৎসব হয়। এখন হয় প্রতিবছর। সেখানে কুমিরকে নানা ধরনের খাবার দেওয়া হয় উপঢৌকন হিসেবে। তেমনি নিজেদের স্বাস্থ্য, উন্নতি ও ভালো ফসলের জন্য প্রার্থনা করে গ্রামবাসী।
কুমির একটি প্রাণী, যেটি সাধারণত ভীতি তৈরি করে মানুষের মধ্যে। গোটা পৃথিবীতে প্রতিবছর মোটামুটি হাজার খানেক মানুষ মারা যায় কুমিরের আক্রমণে। এর প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ আফ্রিকা মহাদেশে। প্রাণীটিকে আফ্রিকার বেশির ভাগ বড় নদীতে পাওয়া যায়। আক্রমণ হঠাৎ হঠাৎ হলেও মানুষ সতর্ক থাকে। তবে বাজৌলির কুমিরেরা মোটেই অন্য কুমিরদের মতো নয়।
বাজৌলির এই কুমিরদের নীল ক্রোকোডাইলের দূর সম্পর্কের আত্মীয় বলতে পারেন। ক্রোকোডিলাস সুচাস নামের আলাদা একটি প্রজাতি তারা। ওয়েস্ট আফ্রিকান ক্রোকোডাইল বা পশ্চিম আফ্রিকান কুমির নামেও এরা পরিচিত।
আসল ব্যাপার হলো, শত শত বছরের পারস্পরিক সহযোগিতার কারণেই এই গ্রামে ভিন্ন এক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা কুমিরদের প্রিয় খাবার মুরগি-মাছ খেতে দেয়। বিনিময়ে কুমিরও তাদের সঙ্গে বন্ধুর মতো আচরণ করে। স্থানীয় বাসিন্দা পিটার যেমন বলেন, ‘আমাদের কুমিরেরা মানুষকে খায় না। বরং তারা গ্রামকে রক্ষা করে। পুকুরে ২০০ কুমির আছে, কিন্তু বাচ্চারা সেখানে সাঁতার কাটে কোনো সমস্যা ছাড়াই।’
মজার ঘটনা, এখনে কুমির মারা যাওয়ার পর অনুষ্ঠান এমনকি গোরও দেওয়া হয় তাদের। গ্রামবাসী বিশ্বাস করে, গ্রামে কোনো দুর্ঘটনা বা অশুভ ঘটনা ঘনিয়ে এলে কেঁদে ওঠে কুমিরেরা। তখন কুমিরদের খাবার দেওয়াসহ নানা আচার পালন করা হয় গ্রামটিকে বিপদ থেকে দূরে রাখতে।
কুমির আর গ্রামবাসীদের এমন সম্পর্কের কথা শুনে দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকেরা আসেন। এতে এখানকার মানুষেরও দু-পয়সা রোজগার হয়। ‘একটু দূর থেকে দেখতে দারুণ লাগে। তবে পিঠে চড়ে বসাটা কেমন উদ্ভট লাগে।’ বলেন বুরকিনা ফাসোতে দাদা-দাদিকে দেখতে আসা ফরাসি তরুণ টমাস বাসপিন।
তবে পৃথিবীর উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়ছে গ্রামটির ওপরও। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমছে এই এলাকায়। কুমিরের বাসা হিসেবে পরিচিত বিখ্যাত পুকুরটিতেও পানি কমে যায় কোনো কোনো ঋতুতে। যদি কখনো এটি শুকিয়ে যায়, তবে সরীসৃপ বন্ধুরা কি আবার মানুষকে দেবে নতুন পুকুরের সন্ধান?
সূত্র: ট্রিলম্যাগ ডট কম, এনডিটিভি, এমিউজিং প্ল্যানেট
‘নির্ভীক’ শব্দটা অনেকেই গর্বের সঙ্গে ব্যবহার করেন। কিন্তু মানুষ সত্যিকার অর্থে পুরোপুরি নির্ভীক নয়। জন্মগতভাবে মানুষের ভয় খুব সীমিত—মাত্র দুটি। গবেষণা বলছে, মানুষ জন্মগতভাবে যেসব ভয় নিয়ে আসে, তার মধ্যে রয়েছে উঁচু থেকে পড়ে যাওয়ার ভয় এবং বিকট শব্দে চমকে ওঠা।
২ ঘণ্টা আগেবেশির ভাগ বিড়ালপ্রেমীই আতঙ্কে থাকেন, কখন তাদের পোষা বিড়াল কোনো ইঁদুর বা পাখি শিকার করে বাসায় নিয়ে আসে। তবে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড শহরের এক পরিবারের বিড়ালের কর্মকাণ্ড এই সাধারণ দুশ্চিন্তার চেয়েও ভয়াবহ। কারণ, তাদের ১৫ মাস বয়সী বিড়ালটি একা পুরো এলাকায় চুরির রাজত্ব কায়েম করেছে। পুরো এলাকার অপরাধ জগতে
১০ ঘণ্টা আগেভারতের মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরে এক নাটকীয় দৃশ্যের অবতারণা হয়েছিল। মাঝ রাস্তায় দুই ঘোড়ার লড়াইয়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের সৃষ্টি হয়। এই তাণ্ডবের মধ্যে একটি ঘোড়া একটি অটো রিকশার ওপর লাফিয়ে পড়ে। এতে দুজন গুরুতর আহত হন। এরপর ঘোড়াটি প্রায় ২০ মিনিট রিকশার ভেতরে আটকে ছিল।
৩ দিন আগেহাঙ্গেরির মধ্যযুগে একটি মঠ প্যাননহালমা আর্চঅ্যাবি। এই মঠের কয়েক শ বছরের পুরোনো বই সাম্প্রতিক সময়ে এসে গুবরে পোকার আক্রমণের মুখোমুখি হয়েছে। আর বইগুলোকে পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষায় শুরু হয়েছে এক বড় আকারের উদ্ধার অভিযান। মঠটির লাইব্রেরি থেকে সরানো হচ্ছে হাতে বাঁধানো প্রায় এক লাখ বই।
৩ দিন আগে