মার্কিন ডলার

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানামুখী পদক্ষেপের পরও ডলারের বাজার লাগামহীন। ব্যাংকের পাশাপাশি খোলাবাজারের জন্যও বাফেদা–এবিবি দর নির্ধারণ করে দিলেও সেই দরে ডলার মিলছে না মানি চেঞ্জারে। তবে বাড়তি দাম দিলেই খোলাবাজারে মেলে ডলার। এমন তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংক, গোয়েন্দা সংস্থাসহ সংশ্লিষ্টদের কাছেও রয়েছে। 

ডলারের মজুত কমছে, আবার সরকারের বৈদেশিক ঋণ শোধের চাপ বাড়ছে। এ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো সরকারকে আসল বাবদ ২ বিলিয়ন ডলার শোধ করতে হবে। আগামী বছর থেকে এ চাপ আরও বাড়বে। পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প, টানেল, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বড় বড় প্রায় সব মেগা প্রকল্প উদ্বোধন হয়েছে।

দেশের ডলার বাজারের অস্থিরতা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া দরে ব্যাংক ও মানি চেঞ্জারগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে খোলাবাজারে ডলার বিক্রির অতীতের সব রেকর্ড গতকাল ভেঙে পড়েছে। খোলাবাজারে ডলারের নিয়ন্ত্রণ কালোবাজারিদের দখলে চলে গেছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব মতে, দেশে এখন বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভ ২০ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার বা ২ হাজার ৬৬ কোটি ৫৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার। গত সপ্তাহে ২৩১ মিলিয়ন বা ২৩ দশমিক ১ কোটি ডলার খরচের পর এ রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে। 

বৈদেশিক মুদ্রার আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ায় আর্থিক হিসাবের বড় ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। এতে অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে ১৮১ কোটি ৮০ লাখ ডলারের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। টাকার অঙ্কে যা ২০ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যের (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) চিত্রে এসব তথ্য

চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের শুরুতে ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানের মুদ্রা রুপির দাম দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে কম ছিল। কিন্তু সেখান থেকে দারুণভাবে ফিরে এসেছে পাকিস্তানি রুপি। এতটাই দারুণভাবে ফিরে এসেছে যে, সাম্প্রতিক সময়ে বৈশ্বিক মুদ্রাগুলোর মধ্যে পাকিস্তানি রুপির দামই সবচেয়ে বেশি বেড়েছে

দেশের ডলার সংকটের সময় পাটজাত পণ্য, রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার নতুন সম্ভাবনা রয়েছে। পুরো বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনে উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্লাস্টিক ও সিনথেটিক পণ্য ব্যবহারের পরিবর্তে পাটজাত পণ্য ব্যবহারে গুরুত্ব দিচ্ছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে

মার্কিন ডলারের মাধ্যমে রপ্তানিমুখী গ্রাহকদের ঋণ সুবিধা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সাউথইস্ট ব্যাংকের চুক্তি সই হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘বাংলাদেশ ব্যাংক-লং টার্ম ফাইনান্সিং ফ্যাসিলিটি (বিবি-এলটিএফ) ’-এর আওতায় সম্প্রতি এই চুক্তি সই হয়। 

ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি (ইউসিবি) দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন সুবিধা (বিবি-এলটিএফএফ) কর্মসূচির বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি সই করেছে। কর্মসূচির আওতায় ইউসিবি রপ্তানিমুখী শিল্পগুলোতে দীর্ঘমেয়াদি বৈদেশিক মুদ্রা অর্থায়ন (মার্কিন ডলার) করবে। 

মানি লন্ডারিংসহ নানা ধরনের আর্থিক অপরাধ দমন এবং ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পাল্টা হিসেবে অভ্যন্তরীণ বাজারে ডলার লেনদেন নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে ইরাক। ইরাকের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, আগামী বছরের ১ জানুয়ারি থেকে মার্কিন ডলারে নগদ উত্তোলন এবং লেন

রপ্তানি আয়ে খরা চলছে। রেমিট্যান্সেও একই হাল। দেশে ডলার আসার প্রধান এই দুটি পথ সংকীর্ণ হওয়ায় টান পড়েছে রিজার্ভে। এই পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর উচিত ছিল প্রবাসী কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়িয়ে রিজার্ভকে সমৃদ্ধ করা।

তালেবান নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তানের মুদ্রা এখন বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী মুদ্রা। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (ত্রৈমাসিক) আফগানিস্তানের মুদ্রা এমন অবস্থানে উঠে এসেছে। এই সময়ের মধ্যে আফগান আফগানির (২০০৩ সালে প্রচলন করা আফগানিস্তানের মুদ্রা) দাম ৯ শতাংশ বেড়েছে। 

ডলারের অগ্রিম বুকিং ইস্যুর এক দিনের মাথায় বিধিমালা স্পষ্ট করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী কেবল দেশের আমদানিকারকেরা সর্বোচ্চ ৩ মাসের জন্য ডলারের অগ্রিম বুকিং দিতে পারবেন। 

বৈধ পথে ও ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে গতি বাড়েনি। চলতি সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম ১৫ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে মাত্র ৭৩ কোটি ৯৯ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার। এতে দৈনিক রেমিট্যান্স এসেছে ৪ কোটি ৯৩ লাখ ৩২ হাজার মার্কিন ডলার।

পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত ইউরেনিয়ামকে বলে ‘ইয়েলো কেক’। ডেটা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইউএক্সসির তথ্য অনুসারে, এই ধাতুর দাম গত মাসে প্রায় ১২ শতাংশ বেড়ে প্রতি পাউন্ড ৬৫ দশমিক ৫০ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ইউরেনিয়ামের বাজারে গত বছরের সর্বোচ্চ দামের রেকর্ড ভেঙেছে গত আগস্টে। ২০

ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সৃষ্ট ডলার সংকট কমাতে গৃহীত পদক্ষেপ কাজে আসছে না। উল্টো ডলারের খোলাবাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন অবৈধ ডলার ব্যবসায়ীরা। গতকাল খোলাবাজারে ডলারের ঘোষিত কেনাবেচার দর ছিল যথাক্রমে ১১১ টাকা এবং ১১২ টাকা ৫০ পয়সা।

রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি কমছে। আবার প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সেও চলছে মন্দা। ডলার আসার প্রধান দুই উৎস ঝুঁকিতে। এর মধ্যেই এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দায় সুদসহ ১১০ থেকে ১২০ কোটি ডলার শোধ করতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে শিগগির রিজার্ভ আরও কমে ২২ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে আসছে। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকে