মগবাজার

মগবাজার শর্মা হাউসের বিস্ফোরণের পর তিন দিন ধরে ধ্বংসস্তূপে বাবার লাশ খুঁজছেন হেনা বেগম (৪১)। আজ মঙ্গলবারও শর্মা হাউসের ধসে পড়া অংশে বাবার ছবি নিয়ে দাঁড়িয়ে বারবার আহাজারি করছেন তিনি। হেনা বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলতে থাকেন, 'ভাই একটু দেখন, বিল্ডিংয়ের ভাঙা অংশের নিচে আমার বাবার লাশ আছে

রাজধানীর মগবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় 'অপরাধজনক নরহত্যা' মামলা দায়ের করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর রমনা থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করা হয়। পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে। 

আমার বাসা এখানেই। গতকাল সন্ধ্যায় বিকট একটা আওয়াজের সঙ্গে সঙ্গে ভূমিকম্পের মতো অনুভূত হয়। তখন বুঝিনি। তারপর টিভিতে দেখছি

যুবক বয়স থেকেই বাস চালাতেন আবুল কাসেম মোল্লা। স্বপ্ন ছিল একদিন নিজের একটা বাস হবে, সেই বাস চালাবেন তিনি নিজেই। পরিবারের অভাব অনটন থাকবে না। সচ্ছলতায় জীবন কাটাবেন স্ত্রী সন্তান নিয়ে। দেড় বছর আগে ঋণ করে কিনেও ফেলেছিলেন তিনি। অকস্মাৎ বিস্ফোরণ শেষ করে দিল সব

ওয়ারলেস রেলগেট এলাকার যারা ওই পরিবারকে চিনতেন সবাই বিমর্ষ হয়ে পড়েছেন। ফুটফুটে সংসারটি মিলিয়ে গেল অল্প সময়েই। কারও কাছেই নেই সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা

‘মনে হইতাছিল সব যেন মাটির নিচে ঢুইকা যাইব। যে যেমনে পারতাছে (পারছে) জানের মায়ায় দৌড়াইতাছে (দৌড়াচ্ছে)। আমি কিছু চিন্তা না কইরা গলির ভিতরে ঢুইকা গেছি।’ বলছিলেন মগবাজারে আড়ংয়ের আউটলেটের পাশে পত্রিকা বিক্রি করা মোহাম্মদ আবদুল গফুর...

রোববার রাতে বাসায় ফিরে না আসায় নোমানের সন্ধান করা হয়। রাতভর হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে খোঁজা হয় তাকে। পরিবারের পাশাপাশি তার বন্ধু ও সহকর্মীরাও খুঁজতে থাকে। আজ সোমবার সকালে টিভিতে খবর দেখে রমনা থানায় গিয়ে খোঁজ পাওয়া যায় তাঁর

দগ্ধ হয়ে ৫ জন বার্ন ইনস্টিটিউটে এবং ৪ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁরা হলেন-নুরুন্নবী (৩৫), ইমরান (২৫), রাসেল (২১), জাফর (৬১), কালু (৩৩), সুভাস (৬২), কামাল হোসেন (৪২), হৃদয় (২৮) এবং শামীম (৩০)

মগবাজারের ওয়্যারলেস গেট এলাকার শরমা হাউসের তিন তলা ভবনে গতকাল রোববার সন্ধ্যা ৭টা ৩৪ মিনিটের দিকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ধারণা গ্যাসের কারণে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে

যখন শব্দ করে পুরো হাসপাতালটা কেঁপে ওঠে। তখন ভূমিকম্প ভেবে হাসপাতালের রোগীরা দৌড়াদৌড়ি করছিল। ঘটনার কিছু সময় পর একের পর এক আহত মানুষ আসতে থাকে। সারি সারি রক্ত মাখা মানুষ। হাসপাতালের নিচ তলার মেজেতে প্রায় তিন শ আহত মানুষকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ঘটনার সময় মনে হয়েছিল আমরা যুদ্ধবিধ্বস্ত কোন এলাকায় রয়েছি

ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে রোববার রাতেই পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সোমবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে সংস্থাটির পরিচালক জিল্লুর রহমান বলেন, ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ। এটি ব্যবহারের অনুপযোগী। যে কোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। কেন এই বিস্ফোরণ তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। সাত কর্ম দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

রাজধানীর মগবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর প্রায় ১৮ ঘণ্টা ধরে ভবনের সামনের রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এখনো ভবনের সামনের দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া যাত্রীবাহী বাস সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে 

রাজধানীর মগবাজারে রবিবার সন্ধ্যায় ঘটে যাওয়া বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন গণমাধ্যম কর্মী হাফেজ মুস্তাফিজুর রাহমান। মুস্তাফিজুর রেডিও ধ্বনির ইসলামিক অনুষ্ঠান ‘আহকামুল জুমা’ এর উপস্থাপক ছিলেন।

মগবাজারের এই বিস্ফোরণ নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড বলে মনে হচ্ছে না। গ্যাস জমে বিস্ফোরণ হতে পারে। এখনও ভবনের ভেতরে মিথেন গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। সঠিক তদন্ত করে বিস্ফোরণের কারণ বের করা হবে বলে জানিয়েছেন আইজিপি বেনজীর আহমেদ

রাজধানীর মগবাজারে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, এ দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ও আহত হওয়ার ঘটনা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক ও মর্মস্পর্শী। এসব ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে তা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সরকার উদাসীনতা দেখিয়েছে।

রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর মগবাজারের শরমা হাউসে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বহু হতাহতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। 

বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণের কথা উড়িয়ে দিয়েছেন ঘটনাস্থলের চারটি ভবন দূরের জোনায়েত স্টোরের মালিক বশির। তিনি বলেন, বিস্ফোরণের কয়েক মিনিট পর পর্যন্ত বিদ্যুৎ ছিল। ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণ ঘটলে বিদ্যুৎ থাকত না।