Ajker Patrika

ফেসবুক–ইনস্টাগ্রাম ভেরিফিকেশনে লাগবে টাকা, আগের ব্লু ব্যাজধারীদের কী হবে

প্রযুক্তি ডেস্ক
ফেসবুক–ইনস্টাগ্রাম ভেরিফিকেশনে লাগবে টাকা, আগের ব্লু ব্যাজধারীদের কী হবে

চলতি মাসের শুরুতে ব্যবহারকারীদের মাঝে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের ব্লু টিক নিয়ে গুঞ্জন ছড়ায়। ফাঁস হওয়া একটি কোড দেখে ধারণা করা হয়েছিল, ব্লু টিক সাবস্ক্রিপশন সেবা চালু হচ্ছে এই দুই প্ল্যাটফর্মে। মূলত রিভার্স ইঞ্জিনিয়ার আলেসান্দ্রো পালুজি একটি কোডের সন্ধান পেয়েছিলেন। কোডটিতে ‘IG_NME_PAID_BLUE_BADGE_IDV’ ও ‘FB_NME_PAID_BLUE BADGE_IDV’ লেখা ছিল। কোডটি দেখে সহজেই ধারণা করা যেতে পারে যে, এই দুই প্ল্যাটফর্মে শিগগিরই চালু হচ্ছে ব্লু ব্যাজ সাবস্ক্রিপশন সেবা। তবে এ ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলেন না ব্যবহারকারীরা। 

সব ধারণা সত্য প্রমাণ করে গতকাল রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) মেটার সিইও মার্ক জাকারবার্গ ঘোষণা দেন, ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ব্লু ব্যাজ পেতে টাকা লাগবে। জাকারবার্গ জানিয়েছেন, ওয়েব সংস্করণে ব্লু ব্যাজের জন্য ব্যবহারকারীকে খরচ করতে হবে মাসে ১১ ডলার ৯৯ সেন্ট। আর মোবাইল সংস্করণেও ব্লু ব্যাজ পেতে চাইলে খরচ করতে হবে মাসে ১৪ ডলার ৯৯ সেন্ট। 

চলতি সপ্তাহে এই সেবা শুধু অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে চালু করা হচ্ছে। তবে শিগগিরই অন্যান্য দেশেও ব্লু ব্যাজ সাবস্ক্রিপশন পরিষেবা চালু করা হবে। 

ভেরিফায়েড করানোর জন্য অর্থ খরচের পাশাপাশি জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্সের মতো সরকারি নথিপত্র দিতে হবে। ব্যবহারকারীকে নিশ্চিত করতে হবে যে ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামের প্রোফাইলের সঙ্গে পরিচয়পত্রের ছবি ও নামে হুবহু মিল রয়েছে। 

নতুন করে যারা ব্লু ব্যাজ পেতে চান, তাদের ব্যাপারে জাকারবার্গ বিস্তারিত জানিয়েছেন। তবে কোনো সূত্র থেকেই এখনো জানা যায়নি আগের ব্লু ব্যাজধারীদের কী হবে। আগে ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে ব্লু ব্যাজ পেতে হলে ব্যবহারকারীকে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে আবেদন করতে হতো। বেশির ভাগ সময় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিসহ বিভিন্ন তারকা বা সোশ্যাল মিডিয়ায় নির্দিষ্ট সংখ্যক অনুসারী থাকা ফেসবুক অ্যাকাউন্টগুলোই পেত ব্লু ব্যাজ। তবে নতুন নিয়ম অনুযায়ী যে কেউ পরিচয় নিশ্চিতকরণের নথিপত্র দিয়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ খরচ করেই পেতে পারবেন ব্লু ব্যাজ। 

তবে এতে করে আগের ব্লু ব্যাজধারীরা এই সাবস্ক্রিপশনের আওতায় কীবাবে পড়বেন, তাদের কোন প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে এবং আরও কতোদিন তারা বিনামূল্যের ব্লু ব্যাজ ধারণ করতে পারবেন—এ নিয়ে কোনো স্পষ্ট ধারণা দেননি জাকারবার্গ। মেটা এখনো আনুষ্ঠানিকভাব এ ব্যাপারে কিছু না জানালেও ধারণা করা হচ্ছে, টুইটারের মালিক ইলন মাস্কের দেখানো পথেই হাঁটতে পারেন জাকারবার্গ। 

এর আগে, ব্লু টিক সাবস্ক্রিপশন সেবা চালু করে মাইক্রো ব্লগিং সাইট টুইটার। মাসিক ৭ ডলার ৯৯ সেন্টের বিনিময়ে যেকোনো ব্যবহারকারী ব্লু টিক সাবস্ক্রিপশন সেবা নিতে পেরেছেন। শুরুতে শুধুমাত্র অ্যাপল অর্থাৎ আইওএস ব্যবহারকারীদের জন্য চালু হলেও কিছুদিনের মধ্যেই অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের জন্যও আনা হয়েছিল সেবাটি। 

ব্লু টিক সেবা চালুর কিছুদিনের মধ্যেই এটি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় টুইটার। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া আইডি খুলে ব্লু টিক নেওয়ার ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় গত ১১ নভেম্বর টুইটার ব্লু টিক সাবস্ক্রিপশন সেবা স্থগিত করে। পরবর্তীতে এ সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ ও প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ধূসর রঙের আলাদা ‘অফিশিয়াল’ ব্যাজের ঘোষণা দেয় টুইটার। 

এ ব্যাপারে টুইটারের নির্মীয়মাণ পণ্যবিষয়ক নির্বাহী এস্থার ক্রফোর্ড এক টুইট বার্তায় বলেন, ‘সরকারি সংস্থা, টুইটারের ব্যবসায়িক অংশীদার, বড় মিডিয়া আউটলেট, প্রকাশনা সংস্থাসহ বেশ কিছু বিখ্যাত ব্যক্তি টুইটারে অফিশিয়াল লেবেলটি পাবেন। আগে যেসব অ্যাকাউন্ট ভেরিফায়েড অর্থাৎ ব্লু ব্যাজ ছিল তাদের সবাই অফিশিয়াল লেবেল পাবেন না। এ ছাড়া লেবেলটি কিনে নেওয়ার কোনো সুযোগও নেই। অফিশিয়াল লেবেলটি নির্বাচিত কিছু অ্যাকাউন্টের জন্যই প্রযোজ্য হবে।’ তবে নতুন এই ব্যাজ চালুর একদিনের মধ্যেই মুছে ফেলে প্ল্যাটফর্মটি। 

নির্দিষ্ট সময় পর টুইটার আবার ব্লু টিক সাবস্ক্রিপশন চালুর ঘোষণা দেয়। পরবর্তীতে অফিশিয়াল ব্যাজের পরিবর্তে টুইটারে তিনটি রঙের আলাদা ভেরিফিকেশন টিক আনার কথা জানান ইলন মাস্ক। ব্যক্তি, সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে তিন রংয়ের আলাদা ভেরিফিকেশন টিক দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। নতুন ব্যবস্থা অনুসারে, ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টগুলোতে ব্যক্তিদের জন্য নীল, সরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য ধূসর এবং অন্যান্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্য সোনালি টিক মার্ক থাকবে। যাদের আগে থেকে ভেরিফায়েড ছিল তাঁরা সাবস্ক্রিপশন ফি না দিলে ব্যাজ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। 

ব্লু টিক সাবস্ক্রিপশন সেবার প্রবর্তক বলা যায় সাবেক শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ককে। তবে বেশ কিছু পরীক্ষামূলক সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত তিনি বর্তমান সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। বলা যায়, মাস্কের দেখানো পথ অনুসরণ করেই মেটা চালু করেছে তাদের ব্লু ব্যাজ সাবস্ক্রিপশন সেবা। ধারণা করা হচ্ছে, টুইটারের নেওয়া বাকি সিদ্ধান্তগুলোর সঙ্গেও মেটার পরবর্তী সিদ্ধান্তগুলোর মিল থাকবে। এতে করে যাদের এখন ব্লু ব্যাজ রয়েছে তাঁদের ব্যাজ ধরে রাখতে হলে নিয়ম মেনে টাকা দিতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে টুইটারের মতোই আলাদাভাবে চিহ্নিত করার ব্যবস্থাও থাকতে পারে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত