Ajker Patrika

জাতিসংঘ ‘সুস্পষ্টভাবে ইহুদিবিদ্বেষী’, বললেন গুগলের সহপ্রতিষ্ঠাতা

অনলাইন ডেস্ক
গত মাসে প্রকাশিত জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ মন্তব্য করেন ব্রিন। ছবি: এএফপি
গত মাসে প্রকাশিত জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ মন্তব্য করেন ব্রিন। ছবি: এএফপি

জাতিসংঘকে ‘সুস্পষ্টভাবে ইহুদিবিদ্বেষী’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন গুগলের সহপ্রতিষ্ঠাতা সের্গেই ব্রিন। গত শনিবার গুগলের কর্মীদের জন্য নির্ধারিত একটি অভ্যন্তরীণ চ্যাট ফোরামে তিনি এই মন্তব্য করেন। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনার সময় তাঁর ওই মন্তব্যের স্ক্রিনশট এবং ফোরামের একজন বর্তমান সদস্যের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট।

গত মাসে প্রকাশিত জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই মন্তব্য করেন ব্রিন। প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়, গুগল ও তার মূল কোম্পানি অ্যালফাবেটসহ কয়েকটি প্রযুক্তি কোম্পানি গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা থেকে লাভবান হয়েছে এবং এআই প্রযুক্তি ইসরায়েল সরকারকে সরবরাহ করেছে।

ব্রিন বলেছেন, গাজার সঙ্গে গণহত্যা শব্দটি ব্যবহার করা অনেক ইহুদি মানুষের জন্য অত্যন্ত আক্রমণাত্মক, কারণ ইহুদিরা প্রকৃত গণহত্যার শিকার হয়েছে।

ব্রিন আরও বলেন, আমি মনে করি, জাতিসংঘের মতো একটি প্রতিষ্ঠান, যা অনেক সময় ইহুদিবিদ্বেষী মনোভাব প্রকাশ করেছে, তাদের রিপোর্ট বা বক্তব্যকে গাজার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে তথ্যসূত্র হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়।’

এই মন্তব্য গুগলের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিভাগ ডিপমাইন্ডের একটি অভ্যন্তরীণ চ্যাট ফোরামে করা হয়, যেখানে প্রায় ২ হাজার ৫০০ কর্মী, অনেকেই এআই গবেষক, জাতিসংঘের প্রতিবেদনের বিষয়ে আলোচনায় যুক্ত ছিলেন।

প্রতিবেদনটি তৈরি করেন জাতিসংঘের অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলের বিশেষ প্রতিবেদক, ইতালির আইনবিদ ফ্রান্সেসকা আলবানিজ। যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘে তার প্রতিনিধি হিসেবে আলবানিজকে বরখাস্ত করার দাবি জানায়, তাঁর বিরুদ্ধে ইসরায়েলবিরোধিতা ও ইহুদিবিরোধিতার অভিযোগ তোলে।

ইসরায়েলের সমালোচকেরা গাজায় দেশটির অভিযানকে গণহত্যা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই অভিযোগকে অস্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন, তারা হামাসের পরিচালিত একটি ‘গণহত্যা চেষ্টার’ বিরুদ্ধে আত্মরক্ষা করছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৫৭ হাজারেও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। মন্ত্রণালয়টি বেসামরিক ও যোদ্ধার মধ্যে পার্থক্য করে না।

ব্রিন বলেন, ‘আমার মন্তব্যটি একটি অভ্যন্তরীণ আলোচনার প্রতিক্রিয়া, যেখানে একটি সুস্পষ্ট পক্ষপাতদুষ্ট ও বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদনকে উল্লেখ করা হচ্ছিল।’

গুগল ও জাতিসংঘের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

এর আগেও গুগল ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তির বিরোধিতা করায় কয়েক কর্মীকে বরখাস্ত করেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হওয়ার পর গুগল ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কাছে তাদের এআই টুল বিক্রি শুরু করে।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর ডেটা ব্যবস্থাপনা চাহিদা বেড়ে গেলে, গুগল ও আমাজন ‘গুরুত্বপূর্ণ ক্লাউড ও এআই অবকাঠামো’ দিয়ে সহযোগিতা করে। প্রতিবেদনে গুগল ও আমাজনের যৌথভাবে অর্জিত ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের ‘প্রজেক্ট নিম্বাস’ ক্লাউড চুক্তির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে জাতিসংঘের প্রতিবেদন সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেনি আমাজন।

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘে আহ্বান জানিয়েছে, আলবানিজের কার্যকলাপের নিন্দা জানিয়ে তাকে অপসারণ করা হোক। এ বছরের শুরুতেও একই অনুরোধ জানানো হয়েছিল।

গুগল প্রকাশ্যে দাবি করে আসছে যে, তারা ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখে। তবে ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, জানুয়ারিতে গুগলের ক্লাউড বিভাগের নথিপত্রে দেখা গেছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ওপর হামাসের হামলার পর গুগলের কর্মীরা সরাসরি ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং আইডিএফকে এআই প্রযুক্তিতে সহায়তা করছে।

গুগল তাদের এআই নীতিমালা থেকে ‘অস্ত্র বা নজরদারির জন্য ব্যবহার করা হবে না’—এই অঙ্গীকার বাদ দেয় গত ফেব্রুয়ারিতে। ২০১৮ সালে কর্মীদের প্রতিবাদের মুখে প্রণীত এই নীতিমালায় ছিল, আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের সাধারণ নীতিমালার সঙ্গে সংগতি রেখে এআই ব্যবহার করা হবে।

ইসরায়েলের সঙ্গে ব্যবসায়িক চুক্তির বিরোধিতা করে কর্মী বিক্ষোভের পর অনেক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান কর্মীদের রাজনৈতিক প্রতিবাদ ও কর্মক্ষেত্রের কার্যক্রম সীমিত করেছে।

২০২৪ সালে গুগল ইসরায়েলের ক্লাউড চুক্তির প্রতিবাদে যুক্ত কর্মীদের ছাঁটাই করার পর সিইও সুন্দর পিচাই একটি মেমোতে বলেন, কর্মক্ষেত্রকে ‘বিতর্কিত ইস্যু বা রাজনীতির আলোচনার জায়গা’ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।

ব্রিনের মন্তব্যটি ‘জিডিএম হট গস’ নামের একটি ফোরামে আসে, যেখানে ডিপমাইন্ডের কর্মীরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। সেখানে বিদ্রুপ করে এক গবেষণা প্রকৌশলী বলেন, ‘এখানে একমাত্র আশার আলো হলো, আমরা জেমিনির পেছনে এত সময় ও টাকা খরচ করছি যে, সেটি গণহত্যার জন্য বেশি কিছু করতে পারছে না।’

উল্লেখ্য, ব্রিন ছোটবেলায় তাঁর বাবা-মায়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। তাঁরা ছিলেন রাশিয়ান ইহুদি, যারা সোভিয়েত ইউনিয়নে ভোগান্তিকর ইহুদিবিদ্বেষের শিকার হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে আসেন। এ তথ্য ২০০৯ সালে প্রকাশিত কেন অলেট্টার বই ‘গুগল: দ্য অ্যান্ড অব দ্য ওয়ার্ল্ড অ্যাজ উই নো ইট’-এ উল্লেখ করা হয়েছে।

ব্রিন ও গুগলের আরেক সহপ্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ ২০১৯ সালে কোম্পানির দৈনন্দিন কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়ান। তবে ২০২২ সালের শেষ দিকে ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটি চালুর পর গুগল যখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে প্রতিযোগিতায় নামার চেষ্টা করে, তখন ব্রিন আবার সেই প্রচেষ্টায় সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

২১ বছর বয়সেই ব্যবসায় বাজিমাত, দুই বছরে বিক্রি আড়াই কোটির বেশি

নিহতের ফোনের ভিডিওতে মিলল ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহ চিত্র: বিবিসির অনুসন্ধান

ইন্টারনেট ছাড়াই চলবে হোয়াটসঅ্যাপের নতুন প্রতিদ্বন্দ্বী

জুলাইয়ে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেন হাসিনা, ফাঁস হওয়া অডিও বিশ্লেষণ করে জানাল বিবিসি

চীন-পাকিস্তান-বাংলাদেশের স্বার্থ মিলে গেলে ভারতের নিরাপত্তাঝুঁকি তৈরি হতে পারে: জেনারেল অনিল চৌহান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত