অনলাইন ডেস্ক
বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউব এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে প্রবেশ করেছে। এআই যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে প্ল্যাটফর্মটিতে বিভিন্ন পরিবর্তন নিয়ে আসা হবে। এমনকি ইউটিউবে যুক্ত হতে পারে স্বয়ংক্রিয় ডাবিংও। তবে এসব এআই ভিত্তিক ফিচারগুলো তৈরি হবে কনটেন্ট নির্মাতাদের ডেটার ওপর, যা নিয়ে বেশ সমালোচনা রয়েছে। এভাবে এআই–এর হাত ধরে ইউটিউব, কীভাবে নতুন যুগে প্রবেশ করেছে তার ওপর আলোকপাত করেছেন ব্লুমবার্গের প্রতিবেদক মার্ক বার্গেন।
মিশরের জনপ্রিয় ইনফ্লুয়েন্সার ফারাহ মেধাতের সঙ্গে সম্প্রতি বৈঠক করেন ইউটিউবের ভাইস প্রেসিডেন্ট আমজাদ হানিফ। মেধাতের ভিডিওগুলো দক্ষিণ কোরিয়ার দর্শকের কাছেও জনপ্রিয়। হানিফ আশাবাদী, খুব শিগগিরই ইউটিউবের এআই প্রযুক্তি মেধাতকে কোরীয় ভাষায় সাবলীলভাবে কথা বলাতে সক্ষম হবে। তিনি আশা করছে—ভবিষ্যতে প্রতিটি ইউটিউব ভিডিও স্বয়ংক্রিয়ভাবে সব ভাষায় অনুবাদ ও ডাব করা সম্ভব হবে, এমনকি ভিডিওতে কথা বলার সময় ঠোঁটও যেন ভাষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে নড়ে।
হানিফ জানান, ইউটিউব নির্মাতাদের জন্য এমন এআই টুল আনছে যা ভিডিও আইডিয়া তৈরি, সম্পাদনা, মার্কেটিং এবং অ্যানালিটিক্সেও সহায়তা করবে।
২০০৫ সালে সহ–প্রতিষ্ঠাতা জাওয়েদ করিমের মাত্র ১৯ সেকেন্ডের এক ভিডিও দিয়ে যাত্রা শুরু করে ইউটিউব। আজ এটি বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষের আয়ের উৎস, বিনোদনের মাধ্যম ও মিডিয়া পাওয়ার হাউস।
তবে ইউটিউব ও নির্মাতাদের সম্পর্ক বরাবরই কিছুটা অস্বস্তিকর। নির্মাতাদের কোনো পরামর্শ গ্রহণ না করেই প্ল্যাটফর্মটি নীতিমালা, কপিরাইট ও আয়ের কৌশল ঠিক করে। তবুও এখন ইউটিউব বলছে, এআই নির্মাতাদের জন্য আরও বেশি ক্ষমতা এনে দেবে। এ ছাড়া গুগলের এআই মডেল ‘জেমিনি’ ইউটিউব নির্মাতাদের কনটেন্ট দিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছে—তাদের অনুমতি ছাড়াই।
আয় ও আধিপত্য
ইউটিউব এখন তার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অবস্থানে রয়েছে। স্পটিফাই, টিকটক ও বিভিন্ন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের তীব্র প্রতিযোগিতার মাঝেও ইউটিউব গত বছর বিজ্ঞাপন থেকে আয় করেছে ৩৬ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার এবং সাবস্ক্রিপশন ও অন্যান্য উৎস থেকে আরও ১৮ বিলিয়ন ডলার। গবেষণা প্রতিষ্ঠান মফেটনাথানসনের অনুমান অনুযায়ী, সাবস্ক্রিপশন ও অন্যান্য উৎস থেকে আরও ১৮ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে ইউটিউব। প্রতিষ্ঠানটি আরও পূর্বাভাস দিয়েছে, আগামী বছর ইউটিউব রাজস্ব আয়ের দিক থেকে ওয়াল্ট ডিজনি কোম্পানিকে ছাড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম বিনোদন কোম্পানিতে পরিণত হবে।
নেতৃত্ব বদল হলেও ইউটিউবের সাফল্যের গতি কমেনি। ২০২৩ সালের শুরুতে সুসান উজিসকি সিইও পদ থেকে পদত্যাগ করার পর নীল মোহন ইউটিউবের দায়িত্ব নেন। নীল মোহন ইউটিউবের হাল ধরার পর পডকাস্ট, টিভি এবং মিডিয়া জগতে ইউটিউবের উপস্থিতি আরও দৃঢ় হয়েছে। সম্প্রতি ট্রাম্পের সাক্ষাৎকার প্রচার করে পডকাস্টে ইউটিউবের একচেটিয়া অবস্থান নিশ্চিত করেছেন মোহন।
চলতি বছরের শুরুতে ইউটিউব ঘোষণা করেছে যে, প্রতি মাসে এক বিলিয়ন মানুষ প্ল্যাটফর্মে পডকাস্ট শোনেন, যা স্পটিফাইয়ের তুলনায় তাদের আধিপত্য আরও দৃঢ় করেছে।
টিভিতে ইউটিউব দেখা বাড়ানোকে আরেকটি প্রধান অগ্রাধিকার হিসেবে নির্ধারণ করেছেন মোহান। সম্প্রতি এনএফএল-এর সঙ্গে একটি চুক্তির মাধ্যমে এবং এমনকি প্রতিযোগী স্ট্রিমিং পরিষেবাগুলোকে ইউটিউব অ্যাপে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন। তিনি বড়-ইউটিউবারদের, যেমন রেট এবং লিংক–এর এমি পুরস্কার প্রচারাভিযানকেও সমর্থন করেছেন।
মিথিক্যাল এন্টারটেইনমেন্টের প্রেসিডেন্ট ব্রায়ান ফ্লানাগান বলেছেন, ইউটিউবের লক্ষ্য হলো একেবারে টিভির মতো প্রতিষ্ঠিত হওয়া, যেখানে রেটিং, মুনাফা, পুরস্কার এবং সাংস্কৃতিক গুরুত্ব—এসব সবকিছুই টিভির মতো গুরুত্ব পাবে।
এআই যুগ
২০২২ নালে চ্যাটজিপিটির আগমনের পর থেকেই শুরু হয়েছে জেনারেটিভ এআই-এর জোয়ার। এখন খুব সহজেই তৈরি করা যাচ্ছে ছবি, ভিডিও, এমনকি কণ্ঠের নকলও। নতুন এআই টুলগুলো এখন মানুষকে দ্রুত এবং সস্তায় কনটেন্ট তৈরি করতে সাহায্য করছে, ফলে ইন্টারনেট ভরে গেছে বিশ্বাসযোগ্য নকল ও ডিপফেক কন্টেন্টে। তবে হলিউড এখনো জেনারেটিভ এআইকে স্বাগতম জানায়নি। কারণ এআইয়ের মাধ্যমে ড্রেকের নকল কণ্ঠ দিয়ে মিউজিক তৈরি করা হয় যা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এটি মানুষের ইনটেলেকচুয়াল কনটেন্ট চুরির পূর্বাভাস হিসেবে দেখা হয়েছিল।
এদিকে গুগলও নিজেকে পুনর্গঠিত করেছে। ভিডিও-ভিত্তিক এআই কনটেন্টের যুগ সামাল দেওয়ার মতো প্রস্তুতি রয়েছে গুগলের। প্রতিষ্ঠানটি নিজস্ব ভিডিও এআই টুল ভিও চালু করেছে, যা প্রম্পটের মাধ্যমে ভিডিও তৈরি করতে পারে। এটি ওপেনএআইসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের অনুরূপ প্রযুক্তির মতো। তবে গুগলের এক বিশাল সুবিধা আছে। সেটি হলো—ইউটিউব। নির্মাতারা যদি প্রতিযোগী এআই টুল ব্যবহার করেও ভিডিও তৈরি করেন, তবুও তা প্রকাশের জন্য ইউটিউবই তাঁদের প্রথম পছন্দ হবে। এভাবেই শেষ পর্যন্ত গুগলই জিতে যায়।
জেনারেটিভ এআই-নির্ভর কনটেন্টের নতুন ঢেউ সামাল দিতে গিয়ে ইউটিউবও অন্যান্য ওয়েব প্ল্যাটফর্মের মতো কনটেন্টপ্রবাহ বজায় রাখার চেষ্টা করছে, পাশাপাশি কপিরাইট সমস্যা মোকাবিলা করছে। তবে এখানে ইউটিউবের একটি বড় সুবিধা রয়েছে। তারা প্রায় দুই দশক ধরে তারা পরিচালনা করছে ‘কনটেন্ট আইডি’ নামে একটি বিস্তৃত সফটওয়্যার সিস্টেম, যা ভিডিওতে কপিরাইটযুক্ত উপাদান শনাক্ত করতে পারে এবং যা মূলত হলিউড ও সংগীত শিল্পকে সন্তুষ্ট করেছে।
জেনারেটিভ এআইয়ের ব্যবহার বিস্তৃত হওয়ার পর ইউটিউব তার অংশীদারদের আশ্বস্ত করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। তারা ইউনিভার্সাল মিউজিক গ্রুপ এনভি এবং ক্রিয়েটিভস আর্টিস্টিক এজেন্সি এলএলসি-এর সঙ্গে চুক্তি করে, যাতে প্ল্যাটফর্মে সংগীতশিল্পী, ক্রীড়াবিদ এবং অভিনেতাদের অননুমোদিত এআই-নির্মিত কনটেন্ট পর্যবেক্ষণ করা যায়।
সম্প্রতি ইউটিউব কিছু শীর্ষস্থানীয় ইউটিউবারকেও এই ‘ডিপফেক’ সুরক্ষা উদ্যোগে যুক্ত করেছে। সিএএএ এর স্ট্র্যাটেজিক ডেভেলপমেন্ট প্রধান আলেক্সান্দ্রা শ্যানন বলেন, প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্মগুলো ডিপফেক মোকাবিলায় নানা রকম পদক্ষেপ নিয়েছে, তবে ‘ইউটিউব এগিয়ে রয়েছে, এটা আমি নিশ্চিতভাবেই বলব।
তবে সবচেয়ে বড় বিতর্কের বিষয়—চুপিচুপি নির্মাতাদের ভিডিও দিয়ে এআই মডেলগুলোর প্রশিক্ষণ। তবে ইউটিউব এটি স্পষ্টভাবে কখনো বলেনি। ওপেনএআই-র সোরা চালু হওয়ার পর এ বিতর্ক আরও বেড়েছে। ২০১৭ সাল থেকে প্রতি মিনিটে ৪০০ ঘণ্টার বেশি ভিডিও ইউটিউবে আপলোড হচ্ছে, যা এআই প্রশিক্ষণের জন্য একটি মূল্যবান উৎস।
ওপেনএআই এবং অন্যান্য কোম্পানিগুলি ইউটিউবের ভিডিও ডেটা ব্যবহার করলেও, ইউটিউব স্পষ্টভাবে এ ব্যাপারে কিছু জানায়নি। ইউটিউবের নিয়ম অনুযায়ী, ভিডিও আপলোড করার সময় ইউটিউবকে সেই ভিডিও ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়। গুগলের সিইওর ভাষ্য—‘আমরা ইউটিউবের নিয়ম মেনেই কনটেন্ট ব্যবহার করি। গুগল নিজেও ইউটিউবের ভিডিও ব্যবহার করেছে তার এআই মডেল জেমেনি প্রশিক্ষণের জন্য। তবে নির্মাতারা বলছেন, তখন তো এসব এআই প্রযুক্তি ছিলই না।
নতুন বাজার, নতুন সম্ভাবনা
গুগল তাদের মিডিয়া পার্টনারদের কনটেন্ট ব্যবহার না করলেও সাধারণ নির্মাতাদের কনটেন্ট ব্যবহার করেছে। এ নিয়ে অসন্তোষ থাকলেও ইউটিউব জানিয়েছে—এআই ফিচার পেতে হলে এই লেনদেনে রাজি থাকতে হবে। নতুন ফিচারগুলোর মধ্যে রয়েছে স্বয়ংক্রিয় অনুবাদ, ভয়েস ক্লোন, মন্তব্যের উত্তর দেওয়া ও অ্যানালাইটিকস বিশ্লেষণ।
ইতিমধ্যে ইউটিউব ডাবিং টুল দিয়ে হাজার হাজার ভিডিও একাধিক ভাষায় উপস্থাপন করছে, যেখান থেকে ৪০ শতাংশ ভিউ আসে অনুবাদিত ভাষা থেকে। পরবর্তী ধাপে কণ্ঠস্বর ক্লোনিং ও ঠোঁট মেলানোর ফিচার আনা হবে।
মিস্টার বিস্টের মতো ইউটিউবাররা ইতিমধ্যে নিজস্ব ডাবিং টিম গড়ে তুলেছে। তবে ইউটিউব এটি বিনা মূল্যে দিতে চায়, যেন সবাই নিজের সৃজনশীলতা তুলে ধরতে পারে।
তবে সবাই এআইকে সাদরে গ্রহণ করছে না। কেউ কেউ বলছে, ডাবিং করলে ইংরেজি ভাষার দর্শক হারায়, ফলে বিজ্ঞাপনী আয়ও কমে যেতে পারে। আবার অনেকে এআই ব্যবহারকে নির্মাতাদের সৃজনশীলতার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা বলেই মনে করেন।
এদিকে ইউটিউব প্ল্যাটফর্মে আগেই ভরে গেছে এআই-নির্ভর ‘ফেসলেস’ (চেহারাবিহীন) চ্যানেলে। অনেকেই ভুয়া মুভি বা সিরিজের ট্রেলার, ক্লিপ আর ডাব করা ভিডিও বানিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে। ইউটিউব সম্প্রতি কিছু চ্যানেলের বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দিলেও তাদের ভিডিও পোস্ট বন্ধ করেনি।
বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউব এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে প্রবেশ করেছে। এআই যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে প্ল্যাটফর্মটিতে বিভিন্ন পরিবর্তন নিয়ে আসা হবে। এমনকি ইউটিউবে যুক্ত হতে পারে স্বয়ংক্রিয় ডাবিংও। তবে এসব এআই ভিত্তিক ফিচারগুলো তৈরি হবে কনটেন্ট নির্মাতাদের ডেটার ওপর, যা নিয়ে বেশ সমালোচনা রয়েছে। এভাবে এআই–এর হাত ধরে ইউটিউব, কীভাবে নতুন যুগে প্রবেশ করেছে তার ওপর আলোকপাত করেছেন ব্লুমবার্গের প্রতিবেদক মার্ক বার্গেন।
মিশরের জনপ্রিয় ইনফ্লুয়েন্সার ফারাহ মেধাতের সঙ্গে সম্প্রতি বৈঠক করেন ইউটিউবের ভাইস প্রেসিডেন্ট আমজাদ হানিফ। মেধাতের ভিডিওগুলো দক্ষিণ কোরিয়ার দর্শকের কাছেও জনপ্রিয়। হানিফ আশাবাদী, খুব শিগগিরই ইউটিউবের এআই প্রযুক্তি মেধাতকে কোরীয় ভাষায় সাবলীলভাবে কথা বলাতে সক্ষম হবে। তিনি আশা করছে—ভবিষ্যতে প্রতিটি ইউটিউব ভিডিও স্বয়ংক্রিয়ভাবে সব ভাষায় অনুবাদ ও ডাব করা সম্ভব হবে, এমনকি ভিডিওতে কথা বলার সময় ঠোঁটও যেন ভাষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে নড়ে।
হানিফ জানান, ইউটিউব নির্মাতাদের জন্য এমন এআই টুল আনছে যা ভিডিও আইডিয়া তৈরি, সম্পাদনা, মার্কেটিং এবং অ্যানালিটিক্সেও সহায়তা করবে।
২০০৫ সালে সহ–প্রতিষ্ঠাতা জাওয়েদ করিমের মাত্র ১৯ সেকেন্ডের এক ভিডিও দিয়ে যাত্রা শুরু করে ইউটিউব। আজ এটি বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষের আয়ের উৎস, বিনোদনের মাধ্যম ও মিডিয়া পাওয়ার হাউস।
তবে ইউটিউব ও নির্মাতাদের সম্পর্ক বরাবরই কিছুটা অস্বস্তিকর। নির্মাতাদের কোনো পরামর্শ গ্রহণ না করেই প্ল্যাটফর্মটি নীতিমালা, কপিরাইট ও আয়ের কৌশল ঠিক করে। তবুও এখন ইউটিউব বলছে, এআই নির্মাতাদের জন্য আরও বেশি ক্ষমতা এনে দেবে। এ ছাড়া গুগলের এআই মডেল ‘জেমিনি’ ইউটিউব নির্মাতাদের কনটেন্ট দিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছে—তাদের অনুমতি ছাড়াই।
আয় ও আধিপত্য
ইউটিউব এখন তার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অবস্থানে রয়েছে। স্পটিফাই, টিকটক ও বিভিন্ন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের তীব্র প্রতিযোগিতার মাঝেও ইউটিউব গত বছর বিজ্ঞাপন থেকে আয় করেছে ৩৬ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার এবং সাবস্ক্রিপশন ও অন্যান্য উৎস থেকে আরও ১৮ বিলিয়ন ডলার। গবেষণা প্রতিষ্ঠান মফেটনাথানসনের অনুমান অনুযায়ী, সাবস্ক্রিপশন ও অন্যান্য উৎস থেকে আরও ১৮ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে ইউটিউব। প্রতিষ্ঠানটি আরও পূর্বাভাস দিয়েছে, আগামী বছর ইউটিউব রাজস্ব আয়ের দিক থেকে ওয়াল্ট ডিজনি কোম্পানিকে ছাড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম বিনোদন কোম্পানিতে পরিণত হবে।
নেতৃত্ব বদল হলেও ইউটিউবের সাফল্যের গতি কমেনি। ২০২৩ সালের শুরুতে সুসান উজিসকি সিইও পদ থেকে পদত্যাগ করার পর নীল মোহন ইউটিউবের দায়িত্ব নেন। নীল মোহন ইউটিউবের হাল ধরার পর পডকাস্ট, টিভি এবং মিডিয়া জগতে ইউটিউবের উপস্থিতি আরও দৃঢ় হয়েছে। সম্প্রতি ট্রাম্পের সাক্ষাৎকার প্রচার করে পডকাস্টে ইউটিউবের একচেটিয়া অবস্থান নিশ্চিত করেছেন মোহন।
চলতি বছরের শুরুতে ইউটিউব ঘোষণা করেছে যে, প্রতি মাসে এক বিলিয়ন মানুষ প্ল্যাটফর্মে পডকাস্ট শোনেন, যা স্পটিফাইয়ের তুলনায় তাদের আধিপত্য আরও দৃঢ় করেছে।
টিভিতে ইউটিউব দেখা বাড়ানোকে আরেকটি প্রধান অগ্রাধিকার হিসেবে নির্ধারণ করেছেন মোহান। সম্প্রতি এনএফএল-এর সঙ্গে একটি চুক্তির মাধ্যমে এবং এমনকি প্রতিযোগী স্ট্রিমিং পরিষেবাগুলোকে ইউটিউব অ্যাপে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন। তিনি বড়-ইউটিউবারদের, যেমন রেট এবং লিংক–এর এমি পুরস্কার প্রচারাভিযানকেও সমর্থন করেছেন।
মিথিক্যাল এন্টারটেইনমেন্টের প্রেসিডেন্ট ব্রায়ান ফ্লানাগান বলেছেন, ইউটিউবের লক্ষ্য হলো একেবারে টিভির মতো প্রতিষ্ঠিত হওয়া, যেখানে রেটিং, মুনাফা, পুরস্কার এবং সাংস্কৃতিক গুরুত্ব—এসব সবকিছুই টিভির মতো গুরুত্ব পাবে।
এআই যুগ
২০২২ নালে চ্যাটজিপিটির আগমনের পর থেকেই শুরু হয়েছে জেনারেটিভ এআই-এর জোয়ার। এখন খুব সহজেই তৈরি করা যাচ্ছে ছবি, ভিডিও, এমনকি কণ্ঠের নকলও। নতুন এআই টুলগুলো এখন মানুষকে দ্রুত এবং সস্তায় কনটেন্ট তৈরি করতে সাহায্য করছে, ফলে ইন্টারনেট ভরে গেছে বিশ্বাসযোগ্য নকল ও ডিপফেক কন্টেন্টে। তবে হলিউড এখনো জেনারেটিভ এআইকে স্বাগতম জানায়নি। কারণ এআইয়ের মাধ্যমে ড্রেকের নকল কণ্ঠ দিয়ে মিউজিক তৈরি করা হয় যা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এটি মানুষের ইনটেলেকচুয়াল কনটেন্ট চুরির পূর্বাভাস হিসেবে দেখা হয়েছিল।
এদিকে গুগলও নিজেকে পুনর্গঠিত করেছে। ভিডিও-ভিত্তিক এআই কনটেন্টের যুগ সামাল দেওয়ার মতো প্রস্তুতি রয়েছে গুগলের। প্রতিষ্ঠানটি নিজস্ব ভিডিও এআই টুল ভিও চালু করেছে, যা প্রম্পটের মাধ্যমে ভিডিও তৈরি করতে পারে। এটি ওপেনএআইসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের অনুরূপ প্রযুক্তির মতো। তবে গুগলের এক বিশাল সুবিধা আছে। সেটি হলো—ইউটিউব। নির্মাতারা যদি প্রতিযোগী এআই টুল ব্যবহার করেও ভিডিও তৈরি করেন, তবুও তা প্রকাশের জন্য ইউটিউবই তাঁদের প্রথম পছন্দ হবে। এভাবেই শেষ পর্যন্ত গুগলই জিতে যায়।
জেনারেটিভ এআই-নির্ভর কনটেন্টের নতুন ঢেউ সামাল দিতে গিয়ে ইউটিউবও অন্যান্য ওয়েব প্ল্যাটফর্মের মতো কনটেন্টপ্রবাহ বজায় রাখার চেষ্টা করছে, পাশাপাশি কপিরাইট সমস্যা মোকাবিলা করছে। তবে এখানে ইউটিউবের একটি বড় সুবিধা রয়েছে। তারা প্রায় দুই দশক ধরে তারা পরিচালনা করছে ‘কনটেন্ট আইডি’ নামে একটি বিস্তৃত সফটওয়্যার সিস্টেম, যা ভিডিওতে কপিরাইটযুক্ত উপাদান শনাক্ত করতে পারে এবং যা মূলত হলিউড ও সংগীত শিল্পকে সন্তুষ্ট করেছে।
জেনারেটিভ এআইয়ের ব্যবহার বিস্তৃত হওয়ার পর ইউটিউব তার অংশীদারদের আশ্বস্ত করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। তারা ইউনিভার্সাল মিউজিক গ্রুপ এনভি এবং ক্রিয়েটিভস আর্টিস্টিক এজেন্সি এলএলসি-এর সঙ্গে চুক্তি করে, যাতে প্ল্যাটফর্মে সংগীতশিল্পী, ক্রীড়াবিদ এবং অভিনেতাদের অননুমোদিত এআই-নির্মিত কনটেন্ট পর্যবেক্ষণ করা যায়।
সম্প্রতি ইউটিউব কিছু শীর্ষস্থানীয় ইউটিউবারকেও এই ‘ডিপফেক’ সুরক্ষা উদ্যোগে যুক্ত করেছে। সিএএএ এর স্ট্র্যাটেজিক ডেভেলপমেন্ট প্রধান আলেক্সান্দ্রা শ্যানন বলেন, প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্মগুলো ডিপফেক মোকাবিলায় নানা রকম পদক্ষেপ নিয়েছে, তবে ‘ইউটিউব এগিয়ে রয়েছে, এটা আমি নিশ্চিতভাবেই বলব।
তবে সবচেয়ে বড় বিতর্কের বিষয়—চুপিচুপি নির্মাতাদের ভিডিও দিয়ে এআই মডেলগুলোর প্রশিক্ষণ। তবে ইউটিউব এটি স্পষ্টভাবে কখনো বলেনি। ওপেনএআই-র সোরা চালু হওয়ার পর এ বিতর্ক আরও বেড়েছে। ২০১৭ সাল থেকে প্রতি মিনিটে ৪০০ ঘণ্টার বেশি ভিডিও ইউটিউবে আপলোড হচ্ছে, যা এআই প্রশিক্ষণের জন্য একটি মূল্যবান উৎস।
ওপেনএআই এবং অন্যান্য কোম্পানিগুলি ইউটিউবের ভিডিও ডেটা ব্যবহার করলেও, ইউটিউব স্পষ্টভাবে এ ব্যাপারে কিছু জানায়নি। ইউটিউবের নিয়ম অনুযায়ী, ভিডিও আপলোড করার সময় ইউটিউবকে সেই ভিডিও ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়। গুগলের সিইওর ভাষ্য—‘আমরা ইউটিউবের নিয়ম মেনেই কনটেন্ট ব্যবহার করি। গুগল নিজেও ইউটিউবের ভিডিও ব্যবহার করেছে তার এআই মডেল জেমেনি প্রশিক্ষণের জন্য। তবে নির্মাতারা বলছেন, তখন তো এসব এআই প্রযুক্তি ছিলই না।
নতুন বাজার, নতুন সম্ভাবনা
গুগল তাদের মিডিয়া পার্টনারদের কনটেন্ট ব্যবহার না করলেও সাধারণ নির্মাতাদের কনটেন্ট ব্যবহার করেছে। এ নিয়ে অসন্তোষ থাকলেও ইউটিউব জানিয়েছে—এআই ফিচার পেতে হলে এই লেনদেনে রাজি থাকতে হবে। নতুন ফিচারগুলোর মধ্যে রয়েছে স্বয়ংক্রিয় অনুবাদ, ভয়েস ক্লোন, মন্তব্যের উত্তর দেওয়া ও অ্যানালাইটিকস বিশ্লেষণ।
ইতিমধ্যে ইউটিউব ডাবিং টুল দিয়ে হাজার হাজার ভিডিও একাধিক ভাষায় উপস্থাপন করছে, যেখান থেকে ৪০ শতাংশ ভিউ আসে অনুবাদিত ভাষা থেকে। পরবর্তী ধাপে কণ্ঠস্বর ক্লোনিং ও ঠোঁট মেলানোর ফিচার আনা হবে।
মিস্টার বিস্টের মতো ইউটিউবাররা ইতিমধ্যে নিজস্ব ডাবিং টিম গড়ে তুলেছে। তবে ইউটিউব এটি বিনা মূল্যে দিতে চায়, যেন সবাই নিজের সৃজনশীলতা তুলে ধরতে পারে।
তবে সবাই এআইকে সাদরে গ্রহণ করছে না। কেউ কেউ বলছে, ডাবিং করলে ইংরেজি ভাষার দর্শক হারায়, ফলে বিজ্ঞাপনী আয়ও কমে যেতে পারে। আবার অনেকে এআই ব্যবহারকে নির্মাতাদের সৃজনশীলতার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা বলেই মনে করেন।
এদিকে ইউটিউব প্ল্যাটফর্মে আগেই ভরে গেছে এআই-নির্ভর ‘ফেসলেস’ (চেহারাবিহীন) চ্যানেলে। অনেকেই ভুয়া মুভি বা সিরিজের ট্রেলার, ক্লিপ আর ডাব করা ভিডিও বানিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে। ইউটিউব সম্প্রতি কিছু চ্যানেলের বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দিলেও তাদের ভিডিও পোস্ট বন্ধ করেনি।
আগাগোড়াই স্মার্টফোনের সঙ্গে বড় হওয়া প্রথম প্রজন্ম জেনারেশন জেড বা জেন-জি। যাদের জন্ম ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে। নতুন এক গবেষণা বলছে, ভুল তথ্যে বিশ্বাস করার ক্ষেত্রে যেসব শ্রেণি বা গোষ্ঠীর মানুষেরা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ তাদের মধ্যে প্রযুক্তির আশীর্বাদ নিয়ে জন্ম নেওয়া জেন-জি প্রজন্ম অন্যতম। সম্প্রতি কানাডা
৪ ঘণ্টা আগেচাকরির বাজারে এক নতুন হুমকির নাম—কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)। এই প্রযুক্তির সুযোগ নিয়ে প্রতারকেরা এখন তৈরি করছে ভুয়া প্রোফাইল। এসব ভুয়া প্রোফাইল দিয়ে অনলাইন ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে দূর থেকে কাজ করার সুযোগ পেতে চায় প্রতারকেরা।
৫ ঘণ্টা আগেপ্রকৃতির মাঝে ঘুরে বেড়ানো অনেকেরই প্রিয় অভ্যাস। তবে যতই দিকনির্দেশনার দক্ষতা থাকুক না কেন, প্রকৃতির গভীরে প্রবেশ করলে নির্ভরযোগ্য একটি জিপিএস ট্র্যাকারই হয় সবচেয়ে বড় সহায়। এ জন্য এমন এক উদ্ভাবনী ডিভাইস নিয়ে এসেছে গারমিন, যার রয়েছে যেকোনো পরিবেশে টিকে থাকার মতো স্থায়িত্ব, শক্তিশালী সিগন্যাল গ্রহণক্ষম
৫ ঘণ্টা আগেআজ শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ‘ইন্টারনেট সেবা: সমস্যা, সম্ভাবনা ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় এ কথা জানান সংগঠনের সভাপতি ইমদাদুল হক।
৬ ঘণ্টা আগে