Ajker Patrika

গাজার কনটেন্ট নিয়ে কাজ করায় ছাঁটাই, মেটার বিরুদ্ধে প্রকৌশলীর মামলা

আপডেট : ০৫ জুন ২০২৪, ১৭: ১৬
গাজার কনটেন্ট নিয়ে কাজ করায় ছাঁটাই, মেটার বিরুদ্ধে প্রকৌশলীর মামলা

গাজার যুদ্ধ–সম্পর্কিত কনটেন্ট পরিচালনার ক্ষেত্রে মেটার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনেছেন কোম্পানিটির সাবেক এক প্রকৌশলী। গতকাল মঙ্গলবার এক মামলায় তিনি দাবি করেছেন, সামাজিক প্ল্যাটফর্ম ইনস্টাগ্রামে ফিলিস্তিনিদের দেওয়া পোস্টগুলো মুছে যাচ্ছিল। এ সমস্যা দূর করতে তিনি কাজ করায় মেটা তাঁকে বরখাস্ত করেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে।

ফেরাস হামাদ নামের এই ফিলিস্তিনি-আমেরিকান প্রকৌশলী জানান, ২০২১ সাল থেকে তিনি যুক্ত ছিলেন মেটার মেশিন লার্নিং টিমের সঙ্গে। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে তাঁকে মেটা থেকে বরখাস্ত করা হয়। মেটায় কাজের সময় বিভিন্ন বিষয়ে বৈষম্য, অন্যায়ভাবে চাকরি থেকে বাদ দেওয়া এবং আরও কিছু বিষয়ে অভিযোগ এনে তিনি সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্টের বিরুদ্ধে ক্যালিফোর্নিয়ার এক আদালতে মামলা করেছেন।

হামাদ ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে মেটার পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে বলেন, সংস্থাটি তাঁর কর্মচারীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে দেওয়া বিভিন্ন পোস্ট মুছে দিয়েছে। বিশেষ করে যেসব পোস্টে গাজায় স্বজনদের মৃত্যুর উল্লেখ ও ফিলিস্তিনি পতাকার ইমোজির ব্যবহার ছিল। এ নিয়ে মেটা তার কর্মীদের মাঝে তদন্তও পরিচালনা করেছে। মামলার অভিযোগপত্র অনুসারে, ইসরায়েলি বা ইউক্রেনের পতাকার ইমোজি পোস্ট করার জন্য মেটা তার কর্মীদের মাঝে কোনো তদন্ত শুরু করেনি।

হামাদের অভিযোগ সম্পর্কে রয়টার্সের কাছে মেটা তাৎক্ষণিকভাবে কোনো জবাব দেয়নি।

মেটাকে নিয়ে ২০২১ সালে করা মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দীর্ঘদিনের সমালোচনাগুলো প্রতিফলিত হচ্ছে হামাদের দাবিগুলোর মধ্যে। সে সময় মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত উঠে আসে, ইসরায়েল–ফিলিস্তিনি ইস্যুতে করা পোস্টগুলো নিয়ন্ত্রণ করে মেটা। এ নিয়ে তখন মেটাকে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়তে হয়।

গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালানোর পর ইসরায়েল পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। ইসরায়েলি হিসাব অনুসারে, হামাসের হামলায় ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি নিহত এবং ২৫০ জনেরও বেশি ইসরায়েলিকে অপহরণ করে হামাস। হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের আকাশ ও স্থল যুদ্ধে ৩৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

গত বছর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে সংস্থাটির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে, তারা ফিলিস্তিনিদের পক্ষে দেওয়া পোস্টগুলোর প্রচার নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। এ বছরের শুরুতে মেটার প্রায় ২০০ কর্মচারী প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ এবং অন্য নির্বাহীদের কাছে এক খোলা চিঠিতে এ ব্যাপারে উদ্বেগের কথা জানান।

হামাদ জানান, ডিসেম্বরে কোম্পানির প্ল্যাটফর্মগুলোতে কিছু গুরুতর সমস্যা দেখা দেয়। এসইভি বা ‘সাইট ইভেন্ট’ হিসেবে পরিচিত এ সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করতে গিয়ে তিনি দেখেন, ফিলিস্তিনিদের ইনস্টাগ্রাম পোস্টে এসইভি–সংক্রান্ত কিছু প্রক্রিয়াগত সমস্যা রয়ে গেছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনি ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীদের পোস্ট করা কনটেন্টে ত্রুটি লক্ষ করেন হামাদ। বিধিনিষেধের সঙ্গে সম্পর্কিত এসইভি পরিচালনার ক্ষেত্রে তিনি (হামাদ) পদ্ধতিগত অনিয়ম লক্ষ করেন; যা পোস্টগুলোকে খুঁজে পেতে এবং ফিডে প্রদর্শিত হতে বাধা দেয়।

এক অভিযোগে হামাদ বলেন, ফিলিস্তিনি ফটোসাংবাদিক মোতাজ আজাইজার পোস্ট করা একটি ছোট ভিডিওকে পর্নোগ্রাফি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। তবে আদতে সেটি ছিল গাজার একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবন। হামাদ বলেন, এই ত্রুটি সমাধানের করতে গিয়ে তিনি সহকর্মীদের হেনস্তার শিকার হয়েছেন। যদিও একই ধরনের সমস্যার সমাধান তিনি এর আগেও করেছেন। পরে তাঁর ম্যানেজার লিখিতভাবে নিশ্চিত করেছেন যে এসইভি তাঁর কাজের অংশ।

পরের মাসে এক মেটা কর্মকর্তা হামাদকে জানান, তাঁর (হামাদ) বিরুদ্ধে চলছে অভ্যন্তরীণ তদন্ত। বরখাস্ত হওয়ার পরদিন হামাদ মেটার বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ বৈষম্য নিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন।

হামাদ বলেছেন, ফটোসাংবাদিক আজাইজাকে উল্লেখ করে মেটা তাঁকে জানায়, নীতি লঙ্ঘন করে একজন কর্মচারী হয়ে ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত কোনো ব্যক্তির অ্যাকাউন্টের বিষয়ে কাজ করার জন্য তাঁকে বরখাস্ত করা হয়েছে। যদিও হামাদের দাবি, আজাইজার সঙ্গে তাঁর কোনো ব্যক্তিগত সম্পর্ক নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত