Ajker Patrika

চাঁদে ৪জি নেটওয়ার্ক সেবা দেবে নকিয়া

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১: ৫৯
চাঁদের অভিমুখে যাওয়ার নতুন একটি মিশন শুরু করতে যাচ্ছে বেসরকারি কোম্পানি ইনটুইটিভ মেশিনস। ছবি: টেলিকম রিভিউ
চাঁদের অভিমুখে যাওয়ার নতুন একটি মিশন শুরু করতে যাচ্ছে বেসরকারি কোম্পানি ইনটুইটিভ মেশিনস। ছবি: টেলিকম রিভিউ

চাঁদে মোবাইল নেটওয়ার্ক স্থাপন করতে যাচ্ছে নকিয়া। এই ৪জি সেলুলার নেটওয়ার্ক চাঁদে অবতরণকারী মহাকাশযানগুলোর মধ্যে যোগাযোগের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

চলতি মাসের শেষে চাঁদের অভিমুখে যাওয়ার নতুন একটি মিশন শুরু করতে যাচ্ছে বেসরকারি কোম্পানি ইনটুইটিভ মেশিনস। কোম্পানিটি প্রথম বাণিজ্যিক ল্যান্ডারটি সম্প্রতি চাঁদে অবতরণ করেছে। নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণ করা হবে এই দ্বিতীয় মহাকাশযান। এই মিশনের পরিকল্পনা হচ্ছে—চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে ল্যান্ডার, রোভার ও হপার পাঠানো এবং একটি যোগাযোগ স্যাটেলাইট চাঁদের কক্ষপথে স্থাপন করা। এই মিশনেই চাঁদে নকিয়ার তৈরি বিশেষ সেলুলার প্রযুক্তি নিয়ে যাওয়া হবে।

দীর্ঘ সময় ধরে পৃথিবী থেকে চাঁদ বা মহাকাশে যোগাযোগের মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট রেডিও যোগাযোগ। এই প্রযুক্তি কাজ করার প্রেরক এবং গ্রহণকারী অ্যানটেনার মধ্যে কোনো বাধা থাকা যাবে না (যেমন: কোনো পাহাড় বা অন্য বস্তু)। এর মাধ্যমে সীমিত পরিমাণে ডেটা আদান-প্রদান সম্ভব হতো। এটি অ্যাপোলো প্রোগ্রামের সময় প্রথম ব্যবহৃত হয়েছিল।

অতীতে মহাকাশে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট রেডিও ব্যবহারে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। কারণ আগে শুধু একটি মহাকাশযান, ল্যান্ডার বা রোভারই পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করত এবং খুব কম ডেটা আদান-প্রদান করলেও সমস্যা ছিল না। তাই তখন তেমন অনেক পয়েন্ট সংযুক্ত করার প্রয়োজন ছিল না।

এদিকে নাসার আর্টেমিস প্রোগ্রামের অধীনে ২০২৮ সালের মধ্যে মহাকাশচারীদের চাঁদে ফেরত পাঠানো হবে এবং ২০৩০-এর দশকে স্থায়ীভাবে চাঁদে বসবাস শুরু করা হবে। এর ফলে যোগাযোগের উপায়ও পরিবর্তিত হতে যাচ্ছে। এতে আরও বেশি ডিভাইস সংযুক্ত হবে এবং আগের তুলনায় দ্রুততর ডেটা স্থানান্তরের প্রয়োজন হবে।

২০২০ সালে চাঁদের জন্য উপযোগী সেলুলার নেটওয়ার্ক তৈরি করার জন্য নকিয়ার গবেষণা সংস্থা বেল ল্যাবসের সঙ্গে যোগাযোগ করে নাসা। কোম্পানিটির প্রেসিডেন্ট থিয়েরি ক্লেইন বলেন, পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট রেডিও যোগাযোগ থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ সেলুলার নেটওয়ার্ক আর্কিটেকচারে রূপান্তর হলে ডেটা স্থানান্তরের গতি বাড়বে, যোগাযোগের পরিসর বাড়বে এবং একাধিক ডিভাইস একসঙ্গে যুক্ত হতে পারবে। তবে মহাকাশ ভ্রমণ এবং চন্দ্রপৃষ্ঠের কঠিন পরিবেশে পৃথিবীভিত্তিক সেলুলার প্রযুক্তি সরাসরি ব্যবহার করা বেশ কঠিন।

নকিয়া এই নেটওয়ার্কের জন্য একটি বিশেষ প্রযুক্তি তৈরি করেছে, যা মহাকাশের তাপমাত্রা, রেডিয়েশন ও কম্পনের মতো কঠোর পরিবেশে টিকে থাকতে সক্ষম। শুধু অ্যান্টেনা এবং শক্তির উৎস বাদে সারা নেটওয়ার্কের উপাদানগুলো একত্রিত করা হয়েছে ‘নেটওয়ার্ক ইন আ বক্স’ নামক একটি যন্ত্রে। যন্ত্রটি সোলার প্যানেলের মাধ্যমে শক্তি পাবে।

এই মিশনে চাঁদের সেলুলার নেটওয়ার্কটি ল্যান্ডার ও দুটি যানবাহনের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনে সহায়ক হবে। তবে এই নেটওয়ার্ক শুধু কয়েক দিনের জন্য কার্যকর হবে। কারণ চাঁদের রাতের তাপমাত্রা ও পরিবেশের কারণে বাহনগুলো চালু থাকতে পারবে না।

তবে, নকিয়া ভবিষ্যতে আরও উন্নত ৪জি বা ৫জি নেটওয়ার্ক স্থাপনের পরিকল্পনা করছে, যা আর্টেমিস মিশনের ভবিষ্যৎ বাসস্থান ও তার আশপাশে কার্যকর হবে। এটি মহাকাশচারীদের এক্সিওম স্যুটেও যুক্ত করা হবে, যাতে ভবিষ্যতে চাঁদে আরও কার্যকর যোগাযোগব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায়।

তবে, এই পরিকল্পনা নিয়ে সবাই খুশি নয়। চাঁদে সেলুলার নেটওয়ার্ক স্থাপন করার ফলে তা দূরদর্শন টেলিস্কোপগুলোর পর্যবেক্ষণে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। চাঁদের কক্ষপথ থেকে রেডিও সংকেত পাঠানো অনেক সময় টেলিস্কোপগুলোর দৃষ্টিতে আঘাত করতে পারে। এ কারণে নকিয়া এই প্রযুক্তির জন্য আন্তর্জাতিকভাবে বিশেষ ছাড় পাওয়ার চেষ্টা করছে।

জাতীয় রেডিও অ্যাস্ট্রোনমি অবজারভেটরির (এনআরএও) ডেপুটি স্পেকট্রাম ম্যানেজার লেন ক্রিস ডি প্রি বলেন, ‘কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট, যেমন স্টারলিংক প্রায়ই রেডিও টেলিস্কোপগুলোর দৃষ্টির মধ্যে চলে আসে। চাঁদে একটি পূর্ণাঙ্গ সেলুলার নেটওয়ার্ক স্থাপন করলে রাতের আকাশে আরও বেশি রেডিও সিগন্যাল তৈরি করবে। এই সিগন্যালগুলো টেলিস্কোপের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। কারণ টেলিস্কোপগুলো আকাশের দিকে লক্ষ রেখে রেডিও তরঙ্গ গ্রহণ করে। কোনো ধরনের অতিরিক্ত রেডিও সংকেত তাদের সঠিকভাবে কাজ করতে বাধা দিতে পারে।

এ ছাড়া, চাঁদে সেলুলার নেটওয়ার্ক স্থাপনের জন্য নতুন রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড বেছে নিতে হবে। কারণ এলটিই ব্যান্ডটি চাঁদে ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত নয়। তবে নকিয়া ইতিমধ্যে সম্ভাব্য ব্যান্ডগুলোর একটি তালিকা প্রস্তুত করেছে এবং এই নেটওয়ার্ক পৃথিবীজুড়ে ব্যবহৃত ৪জি বা ৫জি স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকবে।

তথ্যসূত্র: এমআইটি টেকনলজি রিভিউ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইউএসএআইডির ২৯ মিলিয়ন ডলার নেওয়া ‘নাম না শোনা’ বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি কারা

জুনের মধ্যেই একসঙ্গে করা সম্ভব পাঁচ স্থানীয় নির্বাচন

২৯ মিলিয়ন ডলার নিয়েছে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান, যার নাম শোনেনি কেউ: ট্রাম্প

সড়কে ছড়িয়ে ছিল বিপুলসংখ্যক জাতীয় পরিচয়পত্র, পরে উদ্ধার

পদোন্নতি পেয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব হলেন ওবায়দুর রহমান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত