Ajker Patrika

দর্শক হয়ে সাবিনাদের ড্র দেখলেন কোচ ছোটন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৩ জুলাই ২০২৩, ২২: ৩২
Thumbnail image

বাংলাদেশ-নেপাল ম্যাচের মধ্য বিরতি চলছে। কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামের দক্ষিণ গ্যালারিতে তখন একজনকে ঘিরে সাংবাদিকদের একপ্রস্থ জটলা। সেই জটলার মাঝখানে বসে খেলা দেখতে বেশ বেগ পেতে হলো গোলাম রব্বানী ছোটনের। 

কমলাপুর স্টেডিয়ামের দক্ষিণ গ্যালারিতে বসে খেলা দেখা পুরোনো শখ ছোটনের। আজও সেই প্রিয় জায়গায় বসে দেখলেন বাংলাদেশ-নেপাল ম্যাচ। অতীতের সেই দেখা আর আজকের দেখার মাঝে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। নিজের সাবেক শিষ্যদের খেলা সম্ভবত এবারই প্রথম দর্শক হয়ে দেখতে হলো দীর্ঘ ১৪ বছর নারী দলের কোচ থাকা ছোটনকে। 

গত সেপ্টেম্বরে মেয়েদের প্রথম সাফ জিতিয়েছিলেন ছোটন। মাস দুই আগেও ছিলেন নারী দলের কোচ। ১৪ বছরের সম্পর্কের সুতো গত মে মাসে ছিঁড়ে ফেলেছেন নিজেই। দুই মাসের ব্যবধানে ছোটন এখন নারী ফুটবলে শুধুই অতীত। 

হতে পারেন অতীত, যাঁদের নিজ হাতে আন্তর্জাতিক ফুটবলে এনেছেন—সেই সাবেক শিষ্যদের খেলা দেখে কী মনের ভুলে একবারও আক্ষেপ হয় না ছোটনের?—প্রশ্নটা যখন করা হচ্ছে তখন নেপালের সঙ্গে প্রথমার্ধে গোলশূন্য বাংলাদেশ। প্রশ্নটা শুনে একটা শুকনো হাসিই দিলেন ছোটন। 

নেপালের বিপক্ষে এগিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে ১০ মাস পর আন্তর্জাতিক ফুটবলে নামা বাংলাদেশকে। প্রথমার্ধে সাবিনা খাতুনদের ফুটবল ছিল বেশ রকম এলোমেলো। কেন এমন এলোপাতাড়ি ফুটবল খেলছেন সাবিনারা—সেই প্রশ্নের জবাবে ছোটন বললেন, ‘সাফে আমরা কাদা মাঠেও নেপালকে হারিয়েছিলাম। যেহেতু আমরা ১০ মাস পর খেলছি ওই জায়গায় একটু...’

ছোটন যেমন বিদায় বলেছেন বাংলাদেশের ডাগআউটকে, তেমনি মাঠের খেলাকে বিদায় বলেছেন সিরাত জাহান স্বপ্না। ডিফেন্ডার আঁখি খাতুন চীনে। শামসুন্নাহার জুনিয়রের ডেঙ্গু জ্বর। নেপাল ম্যাচে এই তিনজনের না থাকাটা খুব প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করেন ছোটন, ‘স্বপ্নার জায়গাটা আমরা মিস করছি। আঁখি থাকলে লং বলে সুযোগ তৈরি হতো। শামসুন্নাহার এক্সক্লুসিভলি খেলে। ও থাকলে নেপালের রক্ষণে অনেক বড় সমস্যা হতো।’ 

গ্যালারিতে বসা ছোটনকে একটা প্রশ্ন শুনতেই হতো এবং শুনলেনও। মাঠের খেলা মিস করছেন কি না শুনেই বললেন, ‘এখন পার্থক্যটা হলো যে আগে আমি ডাগআউটে থাকতাম, আজ গ্যালারিতে। একজন দর্শক হিসেবে খেলা দেখতে এসেছি। আমার এখনো কোনো অনুভূতি নেই। অতীতের সব স্মৃতি আমি ভুলে যেতে চাই। এখন খুব আরামে আছি। এই যে বাদাম খেতে খেতে খেলা দেখছি।’ 
 
চাইলে স্টেডিয়ামের ভিআইপি বক্সে বসেও খেলা দেখতে পারতেন ছোটন। সেই সুযোগটা থাকার পরও কেন নিলেন না তিনি? উত্তরটা ছোটনের মুখ থেকেই শোনা যাক, ‘এগুলো আমার কাছে শুধুই আনুষ্ঠানিকতা। সেখানে তো আমাকে বসেই থাকতে হতো। ছোটবেলা থেকে আমি গ্যালারিতে বসে খেলা দেখি। মোহামেডান গ্যালারিতে বসে বন্ধুদের সঙ্গে খেতে খেতে খেলা দেখতাম। এখনো তা-ই করি।’ 

ম্যাচের আগে ফুটবলারদের কাছ থেকে ফোন পেয়েছেন ছোটন। সাবেক শিষ্যদের জন্য একটাই বার্তা ছিল তাঁর, ‘তোমরা সাফ চ্যাম্পিয়ন। তোমরা ভালো ফুটবল খেলেছ। দর্শকেরা তোমাদের পা থেকে ভালো খেলা দেখতে চায়। তোমরা তোমাদের সর্বোচ্চটা দিয়েই খেলবা।’ 
 
ছোটন যখন কথা বলছিলেন তখন তাঁকে ঘিরে এক ঝাঁক সাধারণ দর্শক। কেউ একজন বলে উঠলেন, ‘আমরা ছোটন স্যারকে ফিরে পেতে চাই।’ হাসিমুখে তাঁদের ভালোবাসা নিয়ে শুধু একটা কথাই বললেন সাফজয়ী কোচ, ‘বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষই আমাকে ভালোবাসে। আমি আর জাতীয় দলে ফিরতে চাই না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত