Ajker Patrika

রদ্রিকে ব্যালন ডি’অর তুলে দেওয়া কিং জর্জকে চেনেন তো

লাইছ ত্বোহা, ঢাকা
রদ্রিকে ব্যালন ডি’অর তুলে দেওয়া কিং জর্জকে চেনেন তো

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ লাইবেরিয়া। অর্থনৈতিক দৈন্যদশাগ্রস্ত দেশটি কখনো ফুটবল বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করতে পারেনি। তবে সে দেশেরই একজন কিংবদন্তি ফুটবলার ছিলেন জর্জ উইয়াহ। যিনি ২০১৮ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত লাইবেরিয়ার ২৫০তম প্রেসিডেন্ট ছিলেন।

পিতা-মাতার রাখা নাম জর্জ টাওলন মান্নেহ ওপ্পং ওসমান উইয়াহর চেয়ে ’কিং জর্জ’ নামেই তিনি বেশি পরিচিত। যাঁর দেশ কখনো ফুটবল বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি, সেই দেশেই আছেন একজন ব্যালন ডি’অর জয়ী। উইয়াহ সেই কিংবদন্তি—বিশ্বের একমাত্র ফুটবলার যিনি ব্যালন ডি’অর জয়ী প্রেসিডেন্ট।

গতকাল প্যারিসের থিয়েটার দু শাতেলেতে বর্ষসেরা ফুটবলার রদ্রির হাতে ব্যালন ডি’অর তুলে দিয়েছেন এ জর্জ উইয়াহ। নব্বইয়ের দশকে যারা ফুটবল দেখেছেন, তাঁরা হয়তো ভালো চেনার কথা। তিনি পিএসজি, ম্যানচেস্টার সিটি, মোনাকো, এসি মিলান, মার্শেইয়ের মতো ক্লাব মাতিয়েছেন। ফরাসি ক্লাব পিএসজিতে থাকা অবস্থায় ১৯৯৫ সালে ব্যালন ডি’অর ও ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতেন তিনি।

এখন পর্যন্ত এ দুটি পুরস্কার জেতা একমাত্র আফ্রিকান ফুটবলারও তিনি। খেলোয়াড় ও রাজনৈতিক জীবনে খ্যাতি কুড়ালেও লাইবেরিয়ার ফুটবলের জন্য প্রেসিডেন্ট উইয়াহ তেমন কিছুই করতে পারেননি। বর্তমানে ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে লাইবেরিয়ার অবস্থান ১৪৯ নম্বরে।

ক্যারিয়ার শেষে কোনো দলের ম্যানেজার হতে চাননি উইয়াহ। তিনি চাইলেন দুই গৃহযুদ্ধে লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়া লাইবেরিয়ার মানুষের সেবা করতে। যার জন্য ফুটবল মাঠ ছেড়ে নাম লেখান রাজনীতির খাতায়। ২০০৫ সালে তিনি তৈরি করলেন ‘কংগ্রেস ফর ডেমোক্রেটিক চেঞ্জেস’ নামে একটি রাজনৈতিক দল। ওই বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিলেন।

কিন্তু বিরোধী দল উইয়াহর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। তবে দেশটির আদালত তাঁকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বৈধতা দেয়। প্রথম নির্বাচনেই হয়েছেন ব্যর্থ। সেবার তিনি হেরে যান জনসন শিরলিফের কাছে। ছয় বছর পর ভাইস প্রেসিডেন্ট পদেও দেখেন হার।

পরবর্তীতে তিনি লন্ডনের পাকউড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্পোর্টস ম্যানেজমেন্টের ওপর বিএ ডিগ্রি এবং মায়ামির দেভরি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। তারপরই যেন নিজের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যেও সফল হতে শুরু করলেন। ২০১৪ সালে সিনেট নির্বাচনে তাঁর কাছে হেরে যায় তৎকালীন প্রেসিডেন্টের পুত্র রবার্ট শিরলিফ। ২০১৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জোসেফ বোয়াকাইকে হারিয়ে নির্বাচিত হন লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট। ২০১৮ সালে লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসাবে ছয় বছরের জন্য শপথ নেন উইয়াহ। তারপর দেশটির ফুটবল নিয়ে স্বপ্ন দেখছিলেন সমর্থকেরা। কিন্তু ছয় বছর দায়িত্ব পালন করার পরও এই কিংবদন্তি দেশটির ফুটবলে তেমন কোনো পরিবর্তন আনতে পারেননি। 

মূলত লাইবেরিয়ার অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে সমর্থকদের প্রত্যাশা মতো ফুটবলে উন্নতি করতে পারেননি উইয়াহ। বিনিয়োগের অভাব, উন্নয়ন ও অবকাঠামো তৈরি জন্য যে অর্থ প্রয়োজন, সে আলোকে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির অর্থনীতির অবস্থা ভালো নেই। উইয়াহ অন্যান্য খাতের চেয়ে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যতে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু ’৮০ ও ’৯০-এর দশকে প্রতিটি সরকার ফুটবলের জন্য অর্থ দিয়েছিল, যা পরবর্তীতে দেখা যায়নি। পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তা না পেয়ে লাইবেরিয়া ফুটবল পিছিয়ে পড়েছে আরও। অন্যান্য খাত থেকে সরকারের কাছে প্রত্যাশাও ছিল অনেক বেশি।

জর্জ–২রাজধানী মনরোভিয়ার ক্লারা টাউনের এক বস্তিতেই ১৯৬৬ সালের ১ অক্টোবর জন্ম হয়েছিল উইয়াহর। জন্মসূত্রে ছিলেন দক্ষিণ-পূর্ব লাইবেরিয়ার ক্রু নৃ-গোষ্ঠীর সদস্য। বাবা উইলিয়াম টি উইয়াহ ছিলেন খ্রিষ্টান। মেকানিকের কাজ করতেন তিনি। মা আন্না কোয়াই উইয়াহ ছিলেন মুসলমান। চার ভাইয়ের টান পোড়েনের সংসারে বিচ্ছেদ হয় বাবা-মায়ের।

ছন্দহীন জীবনে পড়াশোনার চেয়ে অলিগলিতে ফুটবল খেলার মাঝে আনন্দ খুঁজতেন উইয়াহ। কর্মজীবনের শুরুটা হয় সরকারের টেলিফোন বিভাগের টেকনিশিয়ান হিসাবে। কিন্তু তাঁর ফুটবল প্রতিভায় স্থানীয় ইয়ং সারভাইভার ক্লাব তাকে খুঁজে নেয়। লাইবেরিয়া প্রিমিয়ার লিগ খেলার সময় চোখে পড়লেন ক্যামেরুনের ফুটবলার ক্লাদিও লোহুয়ার। এরপর বিখ্যাত কোচ আর্সেন ওয়েঙ্গারের মাধ্যমে সরাসরি মোনাকোতে যোগ দেন।

১৯৮৮ সালে মোনাকোর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার সময় উইয়াহর বয়স ছিল ২২ বছর। পরের বছর আফ্রিকার সেরা ফুটবলারের স্বীকৃতি পান। উইয়াহর দাপটে ১৯৯২ সালে ইউরোপিয়ান কাপ উইনার্স কাপের শিরোপা জেতে মোনাকো। এরপর যোগ দেন পিএসজিতে। সেখানেও সাফল্যের ধারা ধরে রাখেন। ১৯৯৩ ফ্রেঞ্চ কাপ এবং পরের বছর ফ্রেঞ্চ লিগ জেতে ক্লাবটি। উঠেছিল চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালেও। উইয়াহ হয়েছিলেন সর্বোচ্চ গোলদাতা। এমন পারফরম্যান্সে ওই বছর জেতেন ব্যালন ডি’অর ও ফিফা বর্ষসেরা পুরস্কার অর্জন করেন জর্জ উইয়াহ।

তারপর যোগ দেন এসি মিলানে। যে ক্লাবে তিনি খেলেছেন গুলিত, ফন বাস্তেন, ভিয়েরা, ব্যাজিও ও পাওলো মালদিনির মতো তারকাদের সঙ্গে। ১৯৯৬ সালে আফ্রিকার শতাব্দী সেরা ফুটবলার নির্বাচিত হয়েছিলেন উইয়াহ। পরবর্তীতে ম্যানচেস্টার সিটি ও চেলসিতেও খেলেছেন তিনি। ক্লাব ক্যারিয়ারে ৪১১ ম্যাচে ১৯৩টি এবং জাতীয় দলের হয়ে ৬১ ম্যাচে করেছেন ২২ গোল করেছেন তিন।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত