Ajker Patrika

ছেলের জন্য দেশ ভুলেছেন তাঁরা

রানা আব্বাস, আবুধাবি
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২১, ১৫: ৫২
ছেলের জন্য দেশ ভুলেছেন তাঁরা

দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের মিডিয়া সেন্টারের গেট থেকে ডান দিকে এগিয়ে দুই দলের ড্রেসিংরুমে ঢোকার মুখে ছোট্ট একটা জটলা। গত রোববার ভারত-নিউজিল্যান্ড ম্যাচ দেখতে আসা শত-সহস্র ভারতীয় দর্শকের ভিড়ে কয়েকজন কিউই সমর্থক সেখানে দাঁড়িয়ে। তাঁদের সবার গায়ে নিউজিল্যান্ডের জার্সি। জার্সির পেছনে লেখা—কনওয়ে, ৮৮।

নিউজিল্যান্ড দলের টপঅর্ডার ব্যাটার ডেভন কনওয়ের ভক্ত হবে—এমনটা ভেবে তাঁদের পাশ কাটিয়ে যেতেই এক ভারতীয় দর্শকের কথাটা কানে এল, ‘আপনি কনওয়ের বাবা?’ এবার একটু থমকে দাঁড়াতে হলো। পঞ্চাশোর্ধ্ব ভদ্রলোক ওই দর্শককে উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, শুধু আমিই নই। এখানে ওর মা, বোন, চাচা, ফুপুও আছেন।’ এগিয়ে যেতেই পরিচয় হলো ভদ্রলোকের সঙ্গে। ভদ্রলোক ডেন্টন কনওয়ে, ডেভনের বাবা। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দেখতেই শুধু নয়, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ছেলের খেলা দেখতে আরব আমিরাতে পুরো পরিবার নিয়েই চলে এসেছেন ডেন্টন।

পরিবারের কে কে এসেছেন খেলা দেখতে? প্রশ্নটা করতেই ডেন্টন কাগজ-কলম চাইলেন। নিজেই লিখে দিলেন সবার নাম। তালিকাটা দেখা যাক—ডেন্টন কনওয়ে (বাবা), স্যান্ডি কনওয়ে (মা), চার্ন কনওয়ে (বোন), মারলিন টার (ফুপু), রায়ান কনওয়ে (চাচা), ডায়ান কনওয়ে (ফুপু), ব্রেন্ডন গিটেনস (শ্যালক)। ‘আমরা পরিবারের সাতজন এসেছি। করোনার কারণে ওর খেলা দেখতে নিউজিল্যান্ডে যেতে পারিনি, ইংল্যান্ডে যেতে পারিনি। ডেভন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সুযোগ পাওয়ার পর প্রথমবারের মতো মাঠে এসেছি ওর খেলা দেখতে। পুরো বিশ্বকাপই দেখব।’—ডেন্টনের কথা শুনে একটু চমকে উঠতে হলো!

করোনার কারণে গত জুনে ইংল্যান্ডে নিউজিল্যান্ড সিরিজ ও চ্যাম্পিয়নসশিপের ফাইনাল দেখে যুক্তরাজ্যে যেতে পারেননি, সেটি না হয় বোঝা গেল। কিন্তু ঘরের মাঠে ছেলের খেলা দেখতে মাঠে কেন যেতে পারেননি? গত গ্রীষ্মে নিউজিল্যান্ডের মাঠে দর্শকদের প্রবেশাধিকার তো ছিল। ডেন্টন জানালেন, তাঁরা নিউজিল্যান্ডে থাকেন না, থাকেন দক্ষিণ আফ্রিকায়। ওহ, এবার মনে পড়ল, ডেভন কনওয়ের জন্ম, বেড়ে ওঠা সবই দক্ষিণ আফ্রিকায়।

দক্ষিণ আফ্রিকায় ক্রিকেটে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ না দেখতে পেয়ে বছর চারেক আগে ডেভন তাঁর জীবনসঙ্গিনী কিম ওয়াটসনকে নিয়ে পাড়ি জমান নিউজিল্যান্ডে। গত তিন বছরে নিউজিল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক ভালো খেলার পুরস্কার হিসেবে গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিকে অভিষেক হয়েছে তাঁর। গ্রান্ট ইলিয়টের পর দ্বিতীয় দক্ষিণ আফ্রিকান হিসেবে খেলছেন নিউজিল্যান্ড দলে। গত এক বছরে তিন সংস্করণেই ধারাবাহিক দুর্দান্ত খেলে নিজেকে অন্যভাবে চিনিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের এই বাঁহাতি টপঅর্ডার ব্যাটার। গত মার্চ-এপ্রিলে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশকে যেভাবে ভুগিয়েছিলেন, নিশ্চয়ই মনে আছে। কনওয়ে গত জুনে আলোড়ন তুলেছিলেন অভিষেকেই লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরি করে।

ছেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ধারাবাহিক দ্যুতি ছড়াচ্ছেন, অথচ মাঠে আসতে পারছেন না ডেন্টন। মহামারির সময়ে নিউজিল্যান্ডেও যেতে পারেননি ভ্রমণ জটিলতায়। পেশাগত জীবনে বাবা ডেন্টন নিজে ফুটবলের কোচ ছিলেন, কিন্তু ছেলে ক্রিকেটার হয়েছেন। ‘ও ছেলেবেলা থেকেই ক্রিকেট বেশি ভালোবাসে। আমি তার প্যাশনকে সম্মান করেছি। বাধা দিইনি। চেয়েছি সে যেটা পছন্দ করে সেটাই করুক’—বলছিলেন ডেন্টন। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা ছেড়ে ডেভনের নিউজিল্যান্ডে পাড়ি জমানোর ব্যাপারটা কি সহজ ছিল? ডেন্টন বলছেন, ‘আমরা ওর এ সিদ্ধান্তকেও সম্মান জানিয়েছি। সেটির পুরস্কার সে এখন পাচ্ছে।’

হঠাৎ পাশ থেকে চাচা রায়ান কুক উৎফুল্লস্বরে বলে উঠলেন, ‘দেখুন আমার দুই পায়ে স্যান্ডেল নেই! খেলা দেখতে এসে দর্শকের ভিড়ে ছিড়ে গেছে! কোনো সমস্যা নেই, আমাদের দল তো জিতেছে।’ আসলেই, ভদ্রলোক বেশ তপ্ত সড়কে খালি পায়ে দিব্যি হেঁটে চলেছেন। এই যে ডেভনের সৌজন্যে নিউজিল্যান্ড যে ‘নিজেদের দল’ হয়ে গেছে, দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে খেলা হলে কোন দলকে সমর্থন করবেন? পুরো কনওয়ে পরিবার সমস্বরে বলে উঠল, ‘অবশ্যই নিউজিল্যান্ড!’ নিজের দেশ দক্ষিণ আফ্রিকাকে সমর্থন করবেন না? ‘ছেলে যে দলে খেলবে আমরা সেটিকে সমর্থন করব’—ডেন্টনের উত্তর।
সামনে থেকে স্যান্ডি (কনওয়ের মা) তাগাদা দিলেন দ্রুত হাঁটতে, হোটেলে ফেরার ট্যাক্সি খুঁজতে হবে তাঁদের। দ্রুতই কনওয়ে পরিবার মিলিয়ে গেল দুবাইয়ের রঙিন আলোর মেলায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রুয়া নির্বাচন: বিএনপিপন্থীদের বর্জন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জামায়াতপন্থী ২৭ জন নির্বাচিত

‘পাপ কাহিনী’র হাত ধরে দেশের ওটিটিতে ফিরল অশ্লীলতা

সৌদি আরবের কেনা ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলকে দেওয়ার অনুরোধ যুক্তরাষ্ট্রের, প্রত্যাখ্যান করে কিসের ইঙ্গিত দিল রিয়াদ

আওয়ামী লীগ নেতাকে ধরতে গিয়ে ছেলের বঁটির আঘাতে এসআই আহত, আটক ২

সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদের বাসায় সমন্বয়ক পরিচয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি, আটক ৫

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত