Ajker Patrika

বাংলাদেশের হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ার ব্যাখ্যা কী

অনলাইন ডেস্ক
প্রথম ওয়ানডেতে আফগানিস্তানের দুর্দান্ত বোলিংয়ে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে বাংলাদেশ। ছবি: এসিবি
প্রথম ওয়ানডেতে আফগানিস্তানের দুর্দান্ত বোলিংয়ে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে বাংলাদেশ। ছবি: এসিবি

রীতিমতো অবিশ্বাস্য, এ অদ্ভুত এক ধস! ২ উইকেটে রান ১২০। তাদের দরকার আর ১১৪ রান। হাতে ৮ উইকেট, পড়ে আছে ২৪ ওভারেরও বেশি। এই সময়ে বাজির দরে কোনোভাবেই বোলিং দল এগিয়ে থাকবে না, থাকবে ব্যাটিং দল। সেই ব্যাটিং দলটা বাংলাদেশ, তারা সব যুক্তিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ১১ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে বসল। ২৩ রানের মধ্যে ৮ উইকেট হারিয়ে ম্যাচটাই হেরে বসল!

আফগানদের বিপক্ষে গত পরশু শারজায় ১১ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের এই ব্যাটিং বিপর্যয় এরই মধ্যে উইজডেনের করা রেকর্ডের তালিকায় ঠাঁই নিয়ে ফেলেছে। তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে বাজে হারের পর রীতিমতো দলকে তুলাধোনা করে ছাড়ছেন দর্শকেরা! এ রকম হার হজম করতে কাদের ভালো লাগে, বলুন? তবে এও ঠিক, জয়ের কক্ষপথে থেকেও অদ্ভুত ধসে হেরে যাওয়ার উদাহরণ বাংলাদেশের অনেক আছে। ২০১৪ সালে ভারতের বিপক্ষে মিরপুরে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ১০৬ রানের সহজ এক লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ একপর্যায়ে ৩ উইকেটে ৫০ রান তুলে ফেলেছিল। সেখান থেকে ৫৮ রানে অলআউট! স্টুয়ার্ট বিনির পেস বোলিং সেদিন বাংলাদেশের কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর বোলিং মনে হয়েছিল!

২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বেঙ্গালুরুতে ভারতের বিপক্ষে শেষ তিন বলে ৩ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের হেরে যাওয়ার বেদনায় আজও পোড়ায় মুশফিকদের। কিন্তু সেখান থেকে কি শিক্ষা আর নিতে পেরেছেন তাঁরা? নইলে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি কেন হয়? সবশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এই আফগানিস্তানের বিপক্ষেই ব্যাখ্যাতীত ধসে জেতার মতো অবস্থায় থেকেও শুধু ম্যাচই হারেনি, সেমিফাইনালে ওঠার স্বপ্নও ক্যারিবীয় দ্বীপে জলাঞ্জলি দিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। সেন্ট ভিনসেন্টে ১১৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১১ ওভার শেষ না হতেই ৫ উইকেটে ৮০ রান তুলে ফেলা বাংলাদেশ ১৭.৫ ওভারে গুটিয়ে যায় ১০৫ রান তুলে।

শারজায় গত পরশু মাঠে উপস্থিত ছিলেন দেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুল। চোখের সামনে তিনি দেখেছেন এই অদ্ভুত ধস। খেলা দেখে চরম হতাশ বুলবুল সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘জয়-পরাজয় তো থাকতেই পারে, কিন্তু অধিনায়কত্ব আর ব্যাটিং পরিকল্পনা দেখে সত্যিই বিস্মিত হয়েছি। সবকিছুই যেন ক্লান্ত দেখাচ্ছিল—শরীরী ভাষা, বলের প্রতি মনোযোগ, প্রি-বল রুটিন, পুরোটা মিলিয়ে পরিকল্পনা খুবই দুর্বল মনে হয়েছে।’

সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল আফগানিস্তানের স্পিনারদের দক্ষতা সামনে এনেছেন, ‘আফগানিস্তানের স্পিনাররা খুবই ভালো। শুরুতে আমরা তাদের সামলাতে পেরেছিলাম। কিন্তু শিশিরে বল গ্রিপে সমস্যা হওয়ার পরও তারা জোরে বল করায় আমরা বিপাকে পড়েছি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রতিপক্ষের কৌশলের বিপরীতে মানসিক প্রস্তুতি জরুরি।’ আশরাফুলের চোখে বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা মনস্তাত্ত্বিকভাবেও যথেষ্ট পিছিয়ে।

আরেক সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট ব্যস্ততার কারণে ম্যাচটি টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার না দেখলেও পরে স্কোর দেখে হতবাক হয়েছেন। তিনি বললেন, ‘আমরা যে জেতার পথেই ছিলাম, সেটা তো স্কোর দেখেই বোঝা যায়। হাইলাইটস দেখে বুঝলাম উইকেটও খুব কঠিন ছিল না। দলের এমন ব্যর্থতার কারণ খুঁজে বের করাই গুরুত্বপূর্ণ। খেলোয়াড়দের স্কিল ঠিক থাকলেও চাপে পড়ে সেগুলো ঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারছে না। খেলোয়াড়দের নিয়ে আরও মনোযোগী হতে হবে বোর্ডের।’

প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরিয়ান মেহরাব হোসেন অপি দলের এই ব্যাটিং ধসের প্রবণতা নিয়ে নিজের হতাশা গোপন করেননি। তিনি মনে করেন, স্নায়ুচাপ সামলাতে পারে না বাংলাদেশ। বললেন, ‘শুরুটা বেশ ভালো ছিল। আমরা যে একটা জেতার মতো পরিস্থিতিতে ছিলাম, সেটা স্কোরকার্ডই বলে দিচ্ছে। কিন্তু ম্যাচের শেষ দিকে হঠাৎই নার্ভাস হয়ে পড়ে দল। কেন এ সমস্যা হচ্ছে, সঠিকভাবে খুঁজে বের করতে পারছে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত