Ajker Patrika

বিশ্বের প্রাচীনতম বংশপরম্পরা উদ্‌ঘাটন 

আপডেট : ০৮ জানুয়ারি ২০২২, ১৮: ৩৪
বিশ্বের প্রাচীনতম বংশপরম্পরা উদ্‌ঘাটন 

যুক্তরাজ্যের কটসওয়াল্ডসের হ্যাজলটন গ্রামে নব্য প্রস্তর যুগের একটি সমাধি পাওয়া গেছে। তাতে সমাধিস্থ ৩৫টি দেহাবশেষ পাওয়া গেছে । দেহাবশেষগুলো প্রায় ৫ হাজার ৭০০ বছর আগের। ধারণা করা হচ্ছে, এরাই ব্রিটেনের প্রথম দিকের কৃষক।

যুক্তরাজ্যের নিউক্যাসল ইউনিভার্সিটির গবেষক ড. ক্রিস ফাউলার বলেছেন, ফলাফলগুলো আশ্চর্যজনক। জেনেটিক পরীক্ষায় দেখা গেছে, এদের মধ্যে ২৭ ব্যক্তি একটি পরিবারের পাঁচ প্রজন্মের ছিল। যাঁদের হাড় ও দাঁতের ডিএনএ পরীক্ষা করে দেখা গেছে, তাঁদের বেশির ভাগের জন্ম চারজন নারী থেকে। তবে তাঁদের বাবা একজনই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি এখন পর্যন্ত পুনর্গঠিত প্রাচীনতম ফ্যামিলি ট্রি বা বংশপরম্পরা। 

নিউক্যাসল ইউনিভার্সিটির প্রত্নতাত্ত্বিক এবং বাস্ক কান্ট্রি ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ভিয়েনা ও হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির জিনতত্ত্ববিদেরা এই গবেষণায় জড়িত ছিলেন। গবেষণাটি বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী নেচারে প্রকাশিত হয়েছে।

ড. ক্রিস ফাউলার বলেন, এটা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যখন তারা এই সমাধিগুলো তৈরি করছিল, তখন তারা এমন লোকদের বেছে নিচ্ছিল, যারা সেখানে প্রথম সমাহিত হওয়া লোকদের নিকটাত্মীয় ছিল। সমাধিতে পাওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের বন্ধন গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ সেখানে দেখা গেছে যে সমাধিতে খুব ছোট কিছু শিশুকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

সমাধিটি দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। এটি ছিল এল আকৃতির। গবেষণায় দেখা গেছে, নারীদের পরিচয় অনুযায়ী মরদেহগুলো সমাধিস্থ করা হয়েছিল, যা থেকে বোঝা যায়, সেখানে প্রথম প্রজন্মের নারীদের স্মৃতি সামাজিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ ছিল।

সমাধিতে পাওয়া ব্যক্তিরা খ্রিষ্টপূর্ব ৩ হাজার ৭০০ থেকে ৩ হাজার ৬০০ সালের আশপাশে বাস করত। তারা ব্রিটেনের প্রথম দিকের কৃষক। ইউরোপ মহাদেশে গবাদিপশু ও শস্য চাষ শুরু হওয়ার প্রায় ১০০ বছর পরে সমাধিটি নির্মিত হয়েছিল। এটি যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত স্টোনহেঞ্জ নির্মাণ শুরুর ৭০০ বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছিল। 

প্রত্নতাত্ত্বিকেরা বলছেন, সম্ভবত তারা পশু পালন করত। তা থেকে দুগ্ধজাত দ্রব্য গ্রহণ ও প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করত। পাশাপাশি তারা খাদ্য সংরক্ষণ ও রান্নার জন্য পাত্র তৈরি করত। আর পারিবারিক বন্ধন ছিল তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

ড. ক্রিস ফাউলার বলেন, এই গবেষণা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি আমাদের দেখতে দেয় যে নব্য প্রস্তর সমাজে কী ঘটেছে। তারা এই সমাধি দিয়ে বংশোদ্ভূতের ধারা চিহ্নিত করেছে। ডিএনএ বিশ্লেষণের মাধ্যমে ওই ব্যক্তিদের বয়স, লিঙ্গ ও পারিবারিক বন্ধন বিশ্লেষণ করা হয়েছে। 

ফাউলার আরও বলেন, এই গবেষণায় আমরা সেই ব্যক্তিদের আরও বিশদ ছবি তৈরি করেছি, যা মানুষ হিসেবে তাদের আমাদের সঙ্গে আরও বেশি সম্পর্কযুক্ত করে তোলে। 

ফাউলার জানান, এমন একটি গবেষণা আয়ারল্যান্ডের সমাধিতে করা হয়েছিল। তবে ওই দেহাবশেষগুলো জৈবিকভাবে সম্পর্কিত ছিল না। 

ইউনিভার্সিটি অব ভিয়েনার গবেষক রন পিনহাসি বলেন, মাত্র কয়েক বছর আগে কল্পনা করা কঠিন ছিল যে নব্য প্রস্তর যুগের আত্মীয়তার কাঠামো কেমন ছিল। তবে এই গবেষণা কেবল শুরু । সন্দেহ নেই যে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও অন্যান্য অঞ্চলের সমাধি থেকে আরও অনেক কিছু আবিষ্কার করা যেতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত