Ajker Patrika

মানুষের মূত্র থেকে উৎপাদিত হবে সার

কৃষি খেতে সার ছিটাচ্ছেন কৃষক। ছবি: সংগৃহীত
কৃষি খেতে সার ছিটাচ্ছেন কৃষক। ছবি: সংগৃহীত

মানুষের মূত্রে প্রচুর পরিমাণে নাইট্রোজেন থাকে, যা উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা মানুষের মূত্রকে সার হিসেবে ব্যবহার করার আরও কার্যকর উপায় আবিষ্কার করেছেন। চীনের হেনান বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানীরা এই দাবি করেছেন। ব্রিটিশ বিজ্ঞান বিষয়ক ম্যাগাজিন নিউ সায়েন্টিস্টের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

সাধারণত মানুষের মূত্রে থাকা নাইট্রোজেনযুক্ত যৌগ ফসল উৎপাদনে অত্যন্ত সহায়ক হলেও, এগুলোকে রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংগ্রহ করার প্রচলিত পদ্ধতিগুলো শিল্পোৎপাদিত সার তৈরির তুলনায় কম কার্যকর ও জটিল। উদাহরণস্বরূপ, ইউরিয়া সার তৈরির ক্ষেত্রে যে হ্যাবার-বোস প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়, তা এই ক্ষেত্রে খাটে না। এই প্রক্রিয়ায় বাতাসের নাইট্রোজেনকে হাইড্রোজেনের সঙ্গে যুক্ত করে অ্যামোনিয়া তৈরি করা হয়। এই ইউরিয়া তৈরির প্রক্রিয়া শক্তিঘন অর্থাৎ এতে ব্যাপক শক্তি ব্যয় করতে হয় এবং পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী।

তবে চীনের হেনান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিনজিয়ান শি এবং তাঁর দল দাবি করেছেন যে, মূত্রে বাতাসের অক্সিজেন এবং গ্রাফাইট ক্যাটালিস্ট বা অনুঘটক যোগ করে পারকার্বামাইড নামে এক ধরনের নাইট্রোজেনসমৃদ্ধ যৌগ উৎপাদন করা সম্ভব। এই প্রক্রিয়াটি সহজ, কয়েকটি ধাপেই সম্পন্ন হয় এবং এতে কোনো বর্জ্য উৎপাদিত হয় না।

শি জানান, প্রচলিত পদ্ধতিতে মূত্র থেকে ইউরিয়া আলাদা করতে হলে মূত্র ঘনীভূত করে তা থেকে ইউরিয়া ও অজৈব লবণ বের করে তা পরিষ্কার করতে হয়। এটি সময়সাপেক্ষ এবং এই প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত ইউরিয়ার বিশুদ্ধতা কম। তবে নতুন পদ্ধতিতে, গ্রাফাইটের পাতলা শিট ব্যবহার করে একটি ইলেকট্রোড বা তড়িৎদণ্ড তৈরি করা হয়। এরপর এটিকে ঘন ইউরিয়া সমৃদ্ধ দ্রবণে স্থাপন করা হয়। এরপর, দ্রবণের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করলে পারকার্বামাইড নামক কঠিন স্ফটিক তৈরি হয়। এই পারকার্বামাইড বাতাসের অক্সিজেন, পানির হাইড্রোজেন এবং মূত্রের ইউরিয়া থেকে গঠিত। এই স্ফটিক সহজেই তরল থেকে পৃথক করা যায়।

এরপর শি ও তাঁর দল পারকার্বামাইডকে সার হিসেবে পরীক্ষা করেন। তাঁরা দেখতে পান, এটি গম, বাদাম এবং লেটুসের গাছের উচ্চতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং এই সারের প্রয়োগ পানি বা প্রচলিত ইউরিয়া সারের ব্যবহারের তুলনায় বেশি কার্যকর। শি মনে করেন, পারকার্বামাইড মাটিতে ধীরে ধীরে অক্সিজেন ছেড়ে দিয়ে নাইট্রোজেনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।

ইউনিভার্সিটি অব শেফিল্ডের জেমস ম্যাকগ্রেগর এই বিষয়ে বলেন, এই পদ্ধতিটি অন্যান্য রাসায়নিক প্রক্রিয়ার জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এটি পুরো শহরের বর্জ্য শোধনাগারে প্রয়োগ করা কঠিন হতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না যে,১০ বছরের মধ্যে এটি একটি বড় শিল্প প্রক্রিয়া হয়ে উঠবে। তবে স্থানীয় এবং ছোট মাত্রার উৎপাদনের জন্য, বিশেষ করে কৃষি খাতে এটি কার্যকর হতে পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত