Ajker Patrika

সাইম্যাটিকস: যে কৌশলে শব্দও খালি চোখে দেখা যায়

প্রমিতি কিবরিয়া ইসলাম, ঢাকা 
সাইম্যাটিকস: যে কৌশলে শব্দও খালি চোখে দেখা যায়

শব্দ তো অদৃশ্য তরঙ্গ। কিন্তু চাইলে শব্দ দেখাও যায়! অদ্ভুত শোনালেও এর যৌক্তিক ব্যাখ্যা রয়েছে। পানিভর্তি কাচের পাত্রে চামচ দিয়ে হালকা আঘাত করলে দেখা যায়, পাত্রের পানিও কম্পিত হয়। শব্দ তরঙ্গে ওপর নির্ভর করে পানি বিভিন্ন আকৃতি ধারণ করে। এভাবে শব্দ তরঙ্গের গতিবিধি চোখে দেখা যায়।

সাইম্যাটিকস হলো বিজ্ঞানের একটি শাখা যা শব্দ তরঙ্গের আকৃতি নিয়ে গবেষণা করে। তরল, কঠিন পৃষ্ঠের মতো বিভিন্ন মাধ্যমের ওপর কীভাবে শব্দ তরঙ্গ জ্যামিতিক প্যাটার্ন তৈরি করতে পারে, তা এই শাখায় গবেষণা করা হয়। মাত্র ১৯৭০ সাল থেকে শব্দ তরঙ্গের আকার–আকৃতি নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গবেষণা শুরু করা হয়। তবে এর আগেও শব্দ তরঙ্গের প্রভাবে বিভিন্ন পৃষ্ঠে তৈরি ভিন্ন ভিন্ন প্যাটার্ন মানুষের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করেছিল। 

অষ্টাদশ শতাব্দীতে আর্নেস্ট ফ্লোরেন্স ফ্রেডরিখ ক্লাদনির শব্দের তরঙ্গ নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ ছিল। তিনি একাধারে আইনজীবী, তত্ত্ববিদ, উদ্ভাবক, ডিজাইনার ও ধ্বনিবিদ ছিলেন। তাঁর বাবা পেশায় আইনজীবী ছিলেন। বাবার আদেশেই আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন। বাবার মৃত্যুর পর আগ্রহের বিষয় নিয়ে গবেষণা শুরু করলেন ক্লাদনি। তিনি শব্দ তরঙ্গের প্রভাবে পৃষ্ঠের ওপর তৈরি বিভিন্ন প্যাটার্ন তৈরি করে দেখান। 

শক্ত পৃষ্ঠে শব্দ কম্পনের বিভিন্ন প্যাটার্ন বা আকার দেখানোর কৌশল উদ্ভাবন করেন ক্লাদনি। শব্দের মাধ্যমে তৈরি এসব আকারকে ক্লাদনি ফিগার বা ক্লাদনি প্যাটার্ন বলা হয়। পুরো ইউরোপ ঘুরে নিজের তৈরি যন্ত্র দিয়ে শব্দের মাধ্যমে তৈরি বিভিন্ন প্যাটার্ন দেখিয়ে দর্শকদের মুগ্ধ ও বিস্মিত করেছেন। তাঁর এসব শো–এর জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয় স্থানীয় জাদুকরেরা। শব্দ যে দেখা যায় তা সর্বপ্রথম প্রমাণ করেন ক্লাদনি। একটি ধাতব প্লেটে শব্দ কম্পনের মাধ্যমে প্যাটার্ন তৈরির নিজস্ব কৌশল তৈরি করেন তিনি। এসব প্লেটে শব্দ তরঙ্গের মাধ্যমে বিভিন্ন প্যাটার্ন তৈরি করে দেখান, যা আগে কখনো কল্পনা করেনি কেউ।

কৌশলগুলোর মধ্যে একটি ছিল— একটি নমনীয় ধাতব প্লেটের প্রান্ত বরাবর বেহালার বো–কে (বেহালা বাজানোর জন্য বিশেষ দণ্ড) আলতোভাবে টেনে নেওয়া হয়। পিতলের প্লেটটি সূক্ষ্ম বালির স্তর দিয়ে আবৃত ছিল। বালিগুলো সামান্য কম্পনেও প্রতিক্রিয়া দেখায়। বালির দানাগুলো কম্পিত হয়ে প্লেটজুড়ে একই ধরনের প্যাটার্নে তৈরি করে। এসব প্যাটার্ন শব্দের তরঙ্গ ও পৃষ্ঠের গঠনের ওপর নির্ভর করে তৈরি হয়। প্লেটের সীমানা কতটুকু, প্লেটটি কীভাবে রাখা হয়েছে ও প্লেটের কোন জায়গায় কম্পনটি তৈরি করা হয়েছে তার ওপরও প্যাটার্ন নির্ভর করে। 

১৭৮৭ সালে ক্লাদনির প্রথম বই ‘ডিসকভার ইন দ্য থিওরি অব সাউন্ড’ প্রকাশিত হয়। এই বইয়ে তিনি প্যাটার্ন তৈরির কৌশল তুলে ধরেন। 

শব্দের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করার জন্য ক্লাদনি অন্য বিজ্ঞানীদের বইও পড়েন। শব্দ চোখে দেখার বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করেন রবার্ট হুকও। 

২০০ বছর পরেও সাইম্যাটিকসের প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে। শুধু ধ্বনিবিদদের জন্যই নয়, ভিজ্যুয়াল আর্ট শিক্ষার্থী ও গবেষকদের জন্যও একটি আকর্ষণীয় বিষয় হয়ে উঠেছে এটি। 

পদার্থবিদ্যা, সংগীত ও শিল্পসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব রয়েছে। শব্দকে চিত্রিত করার ক্লাদনির বিভিন্ন কৌশল বাদ্যযন্ত্র নির্মাতাদের সাহায্য করতে পারে। এটি গবেষকদের শব্দ, তরঙ্গ ও প্যাটার্নের মধ্যে সম্পর্ক আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত