Ajker Patrika

যুক্তরাষ্ট্রে মিলল ২০ কোটি বছর আগের উড়ন্ত সরীসৃপের জীবাশ্ম

অনলাইন ডেস্ক
গাঙচিল আকৃতির উড়ন্ত সরীসৃপটি সম্ভবত এমন কিছু খেত, যার শরীরে ছিল শক্ত আবরণ। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
গাঙচিল আকৃতির উড়ন্ত সরীসৃপটি সম্ভবত এমন কিছু খেত, যার শরীরে ছিল শক্ত আবরণ। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় খুঁজে পাওয়া গেছে ২০ কোটিরও বেশি বছর আগের উড়ন্ত সরীসৃপের নতুন প্রজাতি। বিজ্ঞানীরা জানান, এটি এখন পর্যন্ত উত্তর আমেরিকায় খুঁজে পাওয়া প্রাচীনতম টেরোসর বা উড়ন্ত সরীসৃপ।

২০১১ সালে অ্যারিজোনার পেট্রিফাইড ফরেস্ট ন্যাশনাল পার্কে খননের সময় একটি চোয়ালের হাড় খুঁজে পান গবেষকেরা। দীর্ঘ গবেষণা ও আধুনিক স্ক্যানিং প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্প্রতি নিশ্চিত হওয়া গেছে, এটি একটি সম্পূর্ণ নতুন প্রজাতির টেরোসরের চিহ্ন।

যুক্তরাষ্ট্রের স্মিথসোনিয়ান ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্টোরির নেতৃত্বে পরিচালিত গবেষণায় এই প্রাণীর নাম রাখা হয়েছে ‘Eotephradactylus mcintireae’, যার অর্থ ‘ছাই-ডানার ভোরের দেবী’। এই নামকরণের কারণ হলো—প্রাচীন নদীর তলদেশে এর হাড় সংরক্ষণে সাহায্য করেছিল আগ্নেয়গিরির ছাই।

গবেষক ড. ক্লিগম্যান বলেন, ‘ট্রায়াসিক যুগের টেরোসরের হাড় সাধারণত খুবই ছোট, পাতলা এবং ফাঁপা হয়। এ কারণে সেগুলো সহজেই ধ্বংস হয়ে যায়, সংরক্ষিত থাকে না।’

২০ কোটিরও বেশি বছর আগে, সেই নদীর তলদেশেই ধাপে ধাপে পলি জমে সংরক্ষিত হয়েছিল বিভিন্ন জীবের হাড়, আঁশ ও জীবনের অন্য নানা চিহ্ন।

এই আবিষ্কারের স্থানটি ছিল একসময়কার নদীর তলদেশ। এখানে স্তরে স্তরে জমে থাকা পলিমাটির নিচে চাপা পড়ে সংরক্ষিত হয় নানা জীবাশ্ম।

বিশ্বের সমস্ত ভূখণ্ড একত্রিত হয়ে গঠিত হয়েছিল সুপারকন্টিনেন্ট (মহাদেশ) প্যানজিয়া। এই মহাদেশের মধ্যাঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হতো ২০ কোটি বছর আগে এই নদী।

টেরোসরের চোয়ালের হাড়টি হলো ওই স্থান থেকে উদ্ধার করা একটি বিস্তৃত জীবাশ্ম সংগ্রহের অংশ, যেখানে আরও পাওয়া গেছে বিভিন্ন প্রাণীর হাড়, দাঁত, মাছের আঁশ, এমনকি জীবাশ্মে পরিণত হওয়া মল (যা ‘কোপ্রোলাইট’ নামে পরিচিত)।

ড. ক্লিগম্যান বলেন, ‘এই প্রাচীন নদীর পলিমাটির স্তরে আমরা টেরোসরের হাড় শনাক্ত করতে পারছি—এটি ইঙ্গিত করে যে বিশ্বের অন্যান্য স্থানে ট্রায়াসিক যুগের শিলাস্তরেও হয়তো এমন পলিমাটি রয়েছে, যেখানে টেরোসরের হাড় সংরক্ষিত থাকতে পারে।’

টেরোসরটির দাঁত পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা এর খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কেও ধারণা পেয়েছেন।

ড. ক্লিগম্যান জানান, ‘দাঁতের অগ্রভাগে অস্বাভাবিক মাত্রায় ক্ষয়ের চিহ্ন পাওয়া গেছে, যা থেকে বোঝা যায়—এই গাঙচিল (seagull) আকৃতির উড়ন্ত সরীসৃপটি সম্ভবত এমন কিছু খেত, যার শরীরে ছিল শক্ত আবরণ। এদের সবচেয়ে সম্ভাব্য শিকার ছিল প্রাচীন মাছ, যাদের শরীর ছিল হাড়ের মতো শক্ত আঁশে আবৃত।

২০১১ সালে অ্যারিজোনার পেট্রিফাইড ফরেস্ট ন্যাশনাল পার্কে খননের সময় একটি চোয়ালের হাড় খুঁজে পান গবেষকেরা ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
২০১১ সালে অ্যারিজোনার পেট্রিফাইড ফরেস্ট ন্যাশনাল পার্কে খননের সময় একটি চোয়ালের হাড় খুঁজে পান গবেষকেরা ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

বিজ্ঞানীদের মতে, এই জীবাশ্ম স্থানটি এমন এক সময়ের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরে, যখন আজকের পরিচিত প্রাণীদের পাশাপাশি বাস করত অনেক বিলুপ্ত প্রাণীও। যেমন: বিশাল আকারের উভচর এবং কুমিরের পূর্বপুরুষ। এমনকি আমাদের পরিচিত প্রাণী ব্যাঙ, কচ্ছপও সেসময় বাস করত।

ড. ক্লিগম্যান বলেন, ‘এ ধরনের জীবাশ্ম স্থান আমাদের সেই সময়ের জীববৈচিত্র্য ও বিবর্তনের ক্রম বোঝার সুযোগ দেয়। এভাবে আমরা এমন সব প্রাণীকে চিহ্নিত করতে পারি, যারা পরবর্তীতে টিকে গিয়েছিল, আবার অনেকেই ট্রায়াসিক যুগ অতিক্রম করতে পারেনি।’

গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে ‘প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস’ নামের সাময়িকীতে।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত