Ajker Patrika

আলোকে কঠিন বস্তুতে পরিণত করলেন বিজ্ঞানীরা

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ৩০ জুন ২০২৫, ১১: ৩৬
আলো ও পদার্থ একত্রিত হয়ে সুপারসলিডে রূপ নিতে পারে। ছবি: ডেইলি গ্যালাক্সি
আলো ও পদার্থ একত্রিত হয়ে সুপারসলিডে রূপ নিতে পারে। ছবি: ডেইলি গ্যালাক্সি

প্রথমবারের মতো আলোকে ‘সুপারসলিডে’ রূপান্তর করলেন বিজ্ঞানীরা। এটি এমন এক অদ্ভুত পদার্থ, যা একসঙ্গে কঠিন ও তরল অবস্থায় থাকতে পারে।

বিজ্ঞানীরা আগে পরমাণু দিয়ে সুপারসলিড তৈরি করলেও, এবারই প্রথমবারের মতো আলো ও বস্তু (matter) একত্র করে এই অদ্ভুত পদার্থ তৈরি করলেন।

গত ৫ মার্চ বিশ্বখ্যাত মার্কিন জার্নাল ‘নেচার’-এ প্রকাশিত গবেষণাপত্রে বলা হয়, এই সাফল্য ঘনীভূত পদার্থ (condensed matter physics) নিয়ে গবেষণার এক নতুন দ্বার উন্মোচন করবে।

সুপারসলিড কী

সুপারসলিড এমন এক কোয়ান্টাম অবস্থার পদার্থ, যেখানে কণাগুলো সুশৃঙ্খল, স্ফটিকের মতো গঠনে আবদ্ধ থাকে। এই বৈশিষ্ট্য কঠিন বস্তুতে দেখা যায়। তবে একই সঙ্গে সেগুলো নিজেরাই চলে বেড়াতে পারে। তরল পদার্থের মতো এতে সান্দ্রতা (তরলের অণুগুলোর মধ্যে ঘর্ষণ বল) থাকে না। সাধারণত কঠিন পদার্থ নিজে নিজেই চলাচল করতে পারে না। তবে সুপারসলিডে কণাগুলোর পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার কারণে পদার্থের ঘনত্ব ও দিক পরিবর্তিত হয়, অথচ গঠনের সুনির্দিষ্ট কাঠামো অটুট থাকে।

উল্লেখ্য, সান্দ্রতা হলো—কোনো তরল তার আকার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কতটা প্রতিরোধ দেখায়। উচ্চ সান্দ্রতার তরল যেমন সিরাপ—ধীর গতিতে প্রবাহিত হয়, আর পানি দ্রুত। তবে সুপারফ্লুইড বা সুপারসলিডে এই প্রতিরোধ একেবারে থাকে না। তাই একবার যদি কোনো বাহ্যিক বল বা শক্তির প্রয়োগে সুপারফ্লুইড বা সুপারসলিড চলতে শুরু করে, তাহলে সান্দ্রতা না থাকার কারণে তা কোনো রকম শক্তি ক্ষয় ছাড়াই অনির্দিষ্টকাল ধরে চলতে থাকে।

এই ধরনের আচরণের সেরা উদাহরণ হলো—হিলিয়াম-৪, যা প্রায় শূন্য কেলভিনে ঠান্ডা করলে এমন অবস্থায় পৌঁছে যায় যে সেটি আর সান্দ্রতা ধরে রাখতে পারে না। তখন হিলিয়াম এমনভাবে প্রবাহিত হয়, নিজের থেকেই পাত্র ছেড়ে বাইরে চলে আসে! এটিই সুপারফ্লুইডের বৈশিষ্ট্য।

সুপারসলিড তৈরি করতে হলে পদার্থকে প্রায় শূন্য কেলভিন (মাইনাস ২৭৩ দশমিক ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তাপমাত্রায় ঠান্ডা করতে হয়। এই স্বল্প তাপমাত্রার কারণে বেশির ভাগ কণা নিজ শক্তির সর্বনিম্ন পর্যায়ে অবস্থান করে। তাপমাত্রা বেশি হলে এসব কণা শক্তি শোষণ ও বিকিরণ করে এলোমেলোভাবে লাফাতে থাকে, ঠিক যেন বল পিটে খেলতে থাকা শিশুদের মতো।

অন্যদিকে, তাপমাত্রা যথেষ্ট কমিয়ে ফেলা হলে কণাগুলোর অবস্থান প্রায় স্থির হয়ে যায়। তখন প্রতিটি কণার কোয়ান্টাম আচরণ পর্যবেক্ষণ করা সহজ হয়। এভাবে সুপারসলিডিটির মাধ্যমে কণার বৈশিষ্ট্য আরও নিখুঁতভাবে জানা যায়।

এর আগে, সুপারসলিড তৈরি হয়েছে পারমাণবিক গ্যাস থেকে। তবে এবার গবেষকেরা ব্যবহার করেছেন এক বিশেষ প্রযুক্তি—‘পোলারিটন’ সিস্টেম।

পোলারিটন হলো এমন একটি সংকর কণিকা, যা ফোটন (আলোক কণিকা) এবং এক্সাইটনের মতো কোয়াসিকনিকার শক্তিশালী বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি একধরনের কোয়াসিকনা। এই পোলারিটনের বৈশিষ্ট্য এমন যে তারা গ্যাসের মতোই শক্তির সর্বনিম্ন স্তরে অবস্থান করতে পারে। অর্থাৎ, আলো ও পদার্থ একত্র হয়ে সুপারসলিডে রূপ নিতে পারে।

সুপারসলিড নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে বোঝা যায়—যখন তাপের প্রভাব নেই, তখন কণাগুলো কীভাবে একে অপরের সঙ্গে আচরণ করে। এটি মূলত আমাদের পদার্থের সবচেয়ে মৌলিক গঠন ও গুণাবলি সম্পর্কে বুঝতে সাহায্য করে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে সুপারসলিড ব্যবহার হতে পারে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, সুপার কন্ডাক্টর, ঘর্ষণহীন লুব্রিকেন্ট ইত্যাদি ক্ষেত্রে। আলো দিয়ে সুপারসলিড তৈরিকে তাই কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানে নতুন যুগের সূচনা বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

তথ্যসূত্র: লাইভ সায়েন্স

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত