Ajker Patrika

পদার্থবিদ্যার নিয়ম ভেঙে অ্যান্টার্কটিকার বরফ ফুঁড়ে এল রহস্যময় রেডিও তরঙ্গ

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৫ জুন ২০২৫, ১৫: ০৫
এবার যে সংকেত পাওয়া গেছে, তা এসেছে বরফের নিচ থেকে। ছবি: পেন স্টেট
এবার যে সংকেত পাওয়া গেছে, তা এসেছে বরফের নিচ থেকে। ছবি: পেন স্টেট

বরফের নিচ থেকে উঠে আসা রহস্যময় রেডিও তরঙ্গ ধরা পড়েছে অ্যান্টার্কটিকায় পরিচালিত এক গবেষণায়। আন্তর্জাতিক এক গবেষক দল অ্যান্টার্কটিকার আকাশে ওড়ানো এক বিশেষ ডিটেক্টরের মাধ্যমে এমন কিছু সংকেত পেয়েছে, যা পদার্থবিদ্যার প্রচলিত নিয়মের সঙ্গে যায় না।

উচ্চ উচ্চতায় ওড়ানো বেলুনে স্থাপিত রেডিও অ্যানটেনা ব্যবহার করে কাজ করে আনিটা (অ্যান্টার্কটিক ইম্পালসিভ ট্রানসিয়েন্ট অ্যানটেনা) নামের এই ডিটেক্টর। এটি মূলত বরফের নিচে উচ্চশক্তির কসমিক কণার আঘাতে সৃষ্ট রেডিও তরঙ্গ শনাক্ত করে।

মহাজাগতিক কণার প্রভাবে সৃষ্ট রেডিও তরঙ্গ শনাক্ত করার জন্য বেলুনের মাধ্যমে উচ্চ আকাশে পাঠানো হয় আনিটার যন্ত্রপাতি। মূল লক্ষ্য ছিল—মহাবিশ্বজুড়ে ঘটে যাওয়া মহাজাগতিক ঘটনার নতুন সূত্র খোঁজা।

অ্যান্টার্কটিকা বেছে নেওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ ছিল—এ অঞ্চলে বাইরের রেডিও তরঙ্গের হস্তক্ষেপ নেই বললেই চলে। ফলে সংকেতের বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করা যায়।

তবে এবার যে সংকেত পাওয়া গেছে, তা এসেছে বরফের নিচ থেকে, যা অত্যন্ত অস্বাভাবিক। সংকেতগুলো প্রায় ৩০ ডিগ্রি নিচ থেকে উঠে এসেছে, অর্থাৎ এগুলো বরফ ও পৃথিবীর পাথুরে স্তর ভেদ করে উঠেছে।

পেন স্টেট ইউনিভার্সিটির পদার্থবিদ স্টেফানি উইসেল বলেন, এমন সংকেতের উৎস যদি পরিচিত কোনো কণা হতো—যেমন: নিউট্রিনো, তাহলে পৃথিবীর এত পুরু স্তর পার হওয়ার পর সেই সংকেত বিলীন হয়ে যাওয়ার কথা।

উইসেল আরও বলেন, ‘গাণিতিক হিসব মিলছে না।’

নিউট্রিনো একটি প্রায় ভরহীন ও বিদ্যুৎ-নিরপেক্ষ কণা, যা সচরাচর কোনো কিছুর সঙ্গে প্রতিক্রিয়া দেখায় না। মানুষের শরীর, পৃথিবী ও মহাকাশ সব সময় নিউট্রিনো প্রবাহিত হয়।

স্টেফানি উইসেল বলেন, ‘এই মুহূর্তে আপনার নখের ওপর দিয়ে এক বিলিয়ন নিউট্রিনো পার হয়ে যাচ্ছে।’

তবে এবার যে সংকেত ধরা পড়েছে, তা নিউট্রিনোর মতো আচরণ করছে না। যদি নিউট্রিনো হয়, তাহলে এত গভীর মাটির নিচ দিয়ে আসার পরেও তা শনাক্ত হওয়াটা প্রায় অসম্ভব।

আনিটার পাওয়া সংকেত যাচাই করতে গবেষকেরা আইসকিউব (IceCube) ও আর্জেন্টিনার পিয়েরে অগার (Pierre Auger) পর্যবেক্ষণাগার থেকে তথ্য মিলিয়ে দেখেন। তবে সেসব ডিটেক্টরে এমন কোনো সংকেত পাওয়া যায়নি।

স্টেফানি উইসেল বলেন, ‘এটা প্রমাণ করে যে এটি পরিচিত কোনো কণার কাজ নয়।’

বহু মডেল ও সিমুলেশন চালিয়ে পরিচিত কসমিক রশ্মি বা ব্যাকগ্রাউন্ড নয়েজও বাদ দেওয়া হয়েছে। সবকিছু ছেঁকে শেষ পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের কাছে এটি ‘একটি ব্যতিক্রমী’ সংকেত হিসেবে রয়ে গেছে।

স্টেফানি উইসেল এবং তাঁর পেন স্টেট দলের গবেষকেরা এখন আরও উন্নত একটি ডিটেক্টর বানাচ্ছেন—নাম পিইউইও।

এই ডিটেক্টর আরও বেশি সংবেদনশীল এবং এতে এই অজানা সংকেতের উৎস সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

উইসেল বলেন, ‘আমরা যদি আরও এমন সংকেত ধরি, তাহলে বুঝতে পারব এটি নতুন কোনো পদার্থবিজ্ঞানের ইঙ্গিত কি না, নাকি বিরল কোনো প্রাকৃতিক ঘটনার ফল।’

তথ্যসূত্র: ফক্সনিউজ ও ইন্টারেস্টিং ইঞ্জিনিয়ারিং

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত