উচ্চশিক্ষার প্রসারে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে দেশে ১০৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখছে। ২৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বনশ্রীতে আজকের পত্রিকার সভাকক্ষে আয়োজিত ‘উচ্চশিক্ষায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা: বর্তমান অবস্থা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তাদের বিভিন্ন অভিমত উঠে এসেছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি থাকা উচিত
ড. মো. সবুর খান, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি ও ট্রাষ্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশলান ইউনিভার্সিটি
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি থাকা উচিত, এটা সত্য। পিএইচডি পলিসি (নীতিমালা) হয়ে গেছে, কিন্তু তা সার্কুলেট হচ্ছে না। অনেকে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালুর ক্ষেত্রে দু-একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংগতি তুলে ধরেন। কিন্তু দু-একটি প্রতিষ্ঠান দিয়ে সবগুলোকে বিবেচনা করা ঠিক নয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সুযোগ দিতে হবে। সুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবেশ দিতে হবে। চাকরির বাজারে তারা কীভাবে ভূমিকা রাখছে, সেটা দেখতে হবে। এ ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমগুলোকেও ভূমিকা পালন করতে হবে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কীভাবে ট্যাক্সে অবদান রাখছে, সেটা নিয়েও সার্ভে হতে পারে। আমাদের শিক্ষকেরা ট্যাক্স দিচ্ছেন, কর্মকর্তারা ট্যাক্স দিচ্ছেন। কেনাকাটার ভেতরেও আমরা ট্যাক্স-ভ্যাট দিচ্ছি। একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপরেও ট্যাক্স চাপানো হচ্ছে। পাশাপাশি আমাদের শিক্ষার্থীরা পাস করে বেরিয়ে যাচ্ছে, তারা কতটুকু ট্যাক্স দিচ্ছে, এটা অনেকে জানে না। আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, গত পাঁচ বছরে বিলো ফোরটি টপ ট্যাক্সপেয়ার যারা, তারা সবাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের।
বিদেশি শিক্ষার্থী আমাদের দেশে কম আসছে। কিন্তু যে কয়জন আসছে, সেটা নিয়ে আমাদের শুকরিয়া আদায় করা উচিত। কিছু শিক্ষার্থী যে এ দেশে আসে, তাদেরকে স্যালুট করা উচিত।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা ভালো জব করছে। কারণ, তারা তো বাই ডিফল্ট মেরিটোরিয়াস স্টুডেন্টগুলো পাচ্ছে। তাদের পড়াশোনা হচ্ছে, না হচ্ছে, সেটা বিষয় নয়। তাদের এক্সট্রা কালিকুলার অ্যাকটিভিটিস কী? বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শিক্ষার্থীদের গড়ে তুলছেন শিক্ষকেরা। এতে তুলনামূলক বেশি শ্রম দিতে হচ্ছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সৃজনশীল কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকছে। তারা গবেষণা করছে। তার নতুন নতুন প্রোডাক্ট নিয়ে আসছে। বৈশ্বিক প্রতিযোগিতাগুলোতে যাচ্ছে। অবশ্যই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও যাচ্ছে।
শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান থাকতে হবে
ড. এস এম হাফিজুর রহমান, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইআর), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল/পিএইচডি ডিগ্রি চালু নিয়ে নানা মত রয়েছে। এটাই বাস্তবতা। কারণ, কিছু নেতিবাচক উদাহরণ তৈরি হয়েছে। আমি এ-সংক্রান্ত একটি কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছি। এরই মধ্যে আমরা বেশ কিছু কাজ করেছি। পরিকল্পনা রয়েছে, শিগগির একটি কর্মশালা ও ফিজিবিলিটি স্টাডি করার।
শুধু ইউনিভার্সিটির র্যাঙ্কিংয়ের চিন্তা করলে হবে না; আমাদের চিন্তা করতে হবে এর ইমপ্যাক্ট নিয়ে। ইন্ডাস্ট্রি র্যাঙ্কিং নিয়ে এক দশকে অনেক কথা হয়েছে। কিন্তু খুব যে উন্নতি হয়েছে, তা আমার মনে হয় না।
এসডিএ ডাইমেনশনে আমরা বারবার বলছি কোয়ালিটি এডুকেশনের কথা। তবে এটাতে এখন পরিবর্তন এসেছে। এখন বলা হচ্ছে নলেজ। যা আগে ছিল এসডিএ ডাইমেনশনের এডুকেশন। যে ইউনিভার্সিটি নলেজ ক্রিয়েট করতে পারবে, তারাই এগিয়ে থাকবে। আর নলেজ ক্রিয়েট করতে হবে রিসার্চের মাধ্যমে।
কোন ইউনিভার্সিটি কত টাকা খরচ করছে গবেষণায়? এটি একটি নির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে আসা উচিত। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে ইউনিভার্সিটির অবদান থাকতে হবে। এটা নিয়ে আমাদের কাজ করার সুযোগ আছে। পাবলিক-প্রাইভেট সব ইউনিভার্সিটিতে কোয়ালিটি এস্যুরেন্সে আরও কাজ করতে হবে। তাহলে আমরা মানসম্মত মানুষ পাব। যারা দেশের উন্নয়নে অবদান রাখবে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ যে বিষয়গুলো অ্যাপলাইড, সে বিষয়েই শিক্ষার্থীরা পড়তে চায়। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কিছু নন-অ্যাপলাইড বিষয় চালু হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নন-অ্যাপলাইড বিষয় চালু হয়েছে। এটায় একটা ব্যালেন্স থাকা প্রয়োজন বলে মনে হয়।
মানসম্মত শিক্ষক পাওয়া কঠিন
অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম মিয়া, উপাচার্য, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশলান ইউনিভার্সিটি
উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার আগে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার মান বুঝতে হবে। আমি যদি ভালো মানের জিনিস না পাই, যতই আমি প্রক্রিয়াকরণ করি, সেখান থেকে ভালো ফল আসে না। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা নিয়েও কথা বলা দরকার। কারণ, এটাই আমাদের ভিত্তি।
বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বোঝা উচিত। এখানে সরকারি-বেসরকারি দুটো ভাগ করা চরম বোকামি। বিশ্ববিদ্যালয় যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো না চলে, তাহলে কখনোই বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গায় যাওয়া সম্ভব নয়। এখানে আপনাকে স্বাধীনতা দিতে হবে। আমাকে হাত-পা বেঁধে দিয়ে বলবেন সাঁতরাও, আরেকজনকে ছেড়ে দিয়ে বলবেন, প্রতিযোগিতায় যাও, তা হতে পারে না।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাদ দিলে দেখা যাবে, দেশের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। বর্তমান সময়ে সবচেয়ে কঠিন যে সমস্যার সম্মুখীন আমরা হই, সেটা হচ্ছে, মানসম্মত শিক্ষক পাওয়া; যা অত্যন্ত কঠিন। আমরা চেষ্টা করছি, কিন্তু পেতে হবে তো। যারা ভালো ভালো ফিল্ডে পিএইচডি করছে, তাদের দেশে ফিরে আসার প্রবণতা অনেক কম। মেধাবী শিক্ষার্থীদের আমরা হারাচ্ছি। এদেরকেই আমাদের দরকার। আমরা ভালো বেতন দিয়েও শিক্ষক পাচ্ছি না। আমাদের চেষ্টার কমতি আছে, তা নয়।
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখনো পিএইচডির সুযোগ দেওয়া হয়নি। তাহলে রিসার্চ করবে কে? মাস্টার্সে খুব বেশি শিক্ষার্থী পাওয়া যায় না। মাস্টার্স করার একটা ভালো পরিবেশ তৈরি করাটা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া উচিত
অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান, উপাচার্য, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসেফিক
তথ্যপ্রবাহের যুগে শিক্ষার্থীরা অনেক তথ্য নিয়ে আসছে। কিন্তু কোন শিক্ষার্থী আসছে? বুয়েটে যে শিক্ষার্থী যাচ্ছে, সেই শিক্ষার্থীকে আমরা পাচ্ছি না। আমাদের এই জায়গাটা বুঝতে হবে। সাধারণত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মধ্যম গ্রুপের শিক্ষার্থীদের পাচ্ছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য এটা আরও কঠিন। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত করে গড়ে তোলার জন্য শিক্ষকদের অনেক কষ্ট করতে হয়। এই উপযুক্ত করে গড়ে তোলার জন্য আমাদের যে মানসম্পন্ন শিক্ষক দরকার, সেই শিক্ষক আমরা পাচ্ছি না।
পিএইচডি প্রোগ্রাম চালুর বিষয়টি এখন আর দাবির পর্যায়ে নেই। আমরা সত্যিই তৃষ্ণার্ত। কিসের জন্য তৃষ্ণার্ত? বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি প্রোগ্রাম থাকা প্রয়োজন। আমি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে বিনীত অনুরোধ করেছি, আপনারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পিএইচডি দিন। আমি প্রস্তাব দিয়েছি, প্রোগ্রামভিত্তিক হলেও পিএইচডি দিন। একটা ইউনিভার্সিটিতে যদি চারটা প্রোগ্রাম থাকে, আটটা প্রোগ্রাম থাকে, নয়টা প্রোগ্রাম থাকে; তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী অন্তত পিএইচডি করার সুযোগ দিন। পিএইচডি থাকলে আমাদের শিক্ষকেরা পিএইচডি করতে পারবেন। অন্যরাও আসবেন। আমাদের দেশে এখনো এই কালচার যে শিক্ষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্যই দেশে পিএইচডি করা হয়।
যদি শিক্ষার্থীদের কাঁচামাল বলি, তাহলে শিক্ষকদের দক্ষ শ্রমিক বলতে হবে। শিক্ষকদের সেই দক্ষতা গড়ে তোলার বিষয়টা আছে। এই দক্ষতায় আমরা যেন পিছিয়ে না পড়ি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে যেন আমরা ব্যবহার করি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শুনলে আমরা জাত গেল, জাত গেল বলে চিৎকার করছি। আসলে জাত যাবে না। মানুষের সহজাত বুদ্ধিমত্তাটাকে কীভাবে উন্নত করা যায়, সেই ক্ষেত্রে আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করতে পারি। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, মানসম্পন্ন শিক্ষার্থী পেতে হলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ছোট করে হলেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া উচিত।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে যাচ্ছে
অধ্যাপক ড. এম আশিক মোসাদ্দিক, উপ–উপাচার্য, ইষ্ট–ওয়েষ্ট ইউনিভার্সিটি
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি আরেকটু ভালো শিক্ষার্থীরা আসে, তাহলে তাদের চাকরির বাজারের জন্য প্রস্তুত করতে আরেকটু সুবিধা হয়। আমি বিশ্বাস করি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের জব মার্কেটের জন্য প্রস্তুত করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
অনার্স মাস্টার্স করেই কেউ শিক্ষক হয়ে গেলেন, তা নয়। শিক্ষক হওয়ার জন্য একটা প্রসিডিউর আছে। সেই প্রশিক্ষণটা তাঁর দরকার যে কীভাবে তিনি শিক্ষার্থীদের একটা মার্কেটের জন্য যোগ্য করে তুলবেন। সেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চেষ্টা করছি, কীভাবে শিক্ষকদের আরও প্রশিক্ষিত করা যায়।
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপরে যখন ছাত্রছাত্রীর চাপ ছিল, তখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এগিয়ে এসেছে। ২০১০ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নীতিমালা করা হয়। সেখানে বলা হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজেদের জমি এবং ২৫ হাজার বর্গফুটের ভবন থাকতে হবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আস্তে আস্তে নিজেদের মূল ভবনে যাচ্ছে। যারা এখনো যেতে পারেনি, তারাও চেষ্টা করছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সম্ভাবনা অনেক ভালো। গবেষণা এবং পিএইচডির ক্ষেত্রে কোনো কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্ষমতা অনেক বেশি। দেশের বিভিন্ন জায়গায় কিছু সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে, যেগুলো কলেজ হওয়ারও যোগ্য নয়। শুধু সরকারি হওয়ার কারণে সেগুলো যদি পিএইচডি অফার করতে পারে, সেটাকে আমি অন্যায় বলব। সরকারি বা বেসরকারি নয়, একই মানদণ্ডে দেখতে হবে কোন বিশ্ববিদ্যালয় পিএইচডি ডিগ্রি অফার করতে পারবে আর কে পারবে না। তাহলে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে একটা মানদণ্ড হয়ে দাঁড়াবে।
শিক্ষার পেছনে খরচের মানসিকতায় বদল চাই
অধ্যাপক ড. গৌর গোবিন্দ গোস্বামী, উপ–উপাচার্য, উত্তরা ইউনিভার্সিটি
একটি গবেষণায় দেখেছি, ভর্তুকি যোগ করা হলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর পেছনে যে খরচ, তা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর চেয়ে অনেক বেশি। ফ্রি হোস্টেল এবং ইউটিলিটিজ বিল যদি যোগ করা হয়, তাহলে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অনেক বেশি ব্যয়বহুল। আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে একজনকে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট করতে হলে আমেরিকায় আড়াই থেকে তিন কোটি টাকা লাগে। যেখানে বাংলাদেশে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু আট লাখ টাকা লাগে। তাহলে কোনটি কম ব্যয়বহুল? বিদেশ নাকি বাংলাদেশ? এখানে মূল সমস্যাটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়। অভিভাবকদের সক্ষমতার বিষয় আছে এবং সচেতনতার বিষয় আছে। শিক্ষার পেছনে খরচের যে মানসিকতা, তা কীভাবে পরিবর্তন করা যায়, সেটার জন্য একটা উদ্যোগ নেওয়া দরকার, যাতে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সময়ে সময়ে ফি পুনর্নির্ধারণ করতে পারে এবং ভালো শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারে।
একজন পিএইচডি করা শিক্ষক সাধারণত দেশে আসতে চান না। তাহলে আমরা কীভাবে আন্তর্জাতিক মান মেইনটেইন করব? এ জন্য আমরা হিমশিম খাচ্ছি এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একটা অলিগোপলিস্টিক কমপিটিশন চলছে। যেমন এক জায়গায় একজন আছেন, তাঁকে ২০ হাজার ৫০ হাজার বেশি দিয়ে আরেক জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে। এতে দেশের কোনো উপকার হচ্ছে না। তিনি বাংলাদেশের ভেতরেই থাকছেন; বরং আমাদের দেখতে হবে, কীভাবে এ দেশের ভালো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়া যায়।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যয়টা বেশি কোন সেন্সে? অ্যাকচুয়াল সেন্সে, নাকি সাবসিডাইজড সেন্সে? অ্যাকচুয়াল সেন্সে ব্যয় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে কম। যেহেতু আমাদের কোনো সরকারি সাবসিডি নেই। সাবসিডি বিবেচনায় নেওয়া হলে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খরচ বেসরকারির চেয়ে বেশি হবে।
সমাজের প্রয়োজনটাও অনুধাবন করতে হবে
শামসুল আলম লিটন, ট্রাষ্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান, অতীশ দীপঙ্কর ইউনিভার্সিটি অব সাইয়েন্স এন্ড টেকনোলজি
দীর্ঘ ২০ বছর পশ্চিমে বসবাস করে দেখেছি, ‘অপরচুনিটি’, ‘কোয়ালিটি অ্যাকসেস’ এই শব্দগুলো আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় নেই। ভোকেশনাল ট্রেইনিং ও মানসম্মত নয়। অতীশ দীপঙ্কর ইউনিভার্সিটিতে আমরা সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অরিয়েন্টেন্ড সাবজেক্ট নিয়ে শুরু করেছিলাম।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সোশ্যাল সায়েন্স এবং আর্টসের সাবজেক্টগুলো শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ পড়ে থাকে। কিন্তু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন সেগুলো বন্ধ করে দিতে হলো, এটা একটা বড় ইস্যু। কারণ, ওখানে ফ্যাকাল্টি আছে। বাস্তবতা হচ্ছে, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক জানতে চায়, কারা ইন্ডাস্ট্রি এবং মার্কেট এমপ্লয়মেন্ট সম্পর্কে সচেতন। তাহলে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে কি সোশ্যাল সায়েন্স এবং আর্টসের সাবজেক্টগুলো বন্ধ করে দিতে হবে? অথবা প্রাইভেটে ভর্তুকি দিয়ে চালাতে হবে? মূলকথা হচ্ছে, আমরা আসলে সোসাইটির আলটিমেট প্রয়োজনটা অনুধাবন করছি কি না? এই জায়গাটা নিয়ে কারও কাজ করার সুযোগ হয়নি। কারণ, হয়তো এই জায়গাটায় লাভ-ক্ষতির সুযোগ কম।
আমরা পুলিশ এবং প্রশাসনে পিএইচডি দেখি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্লেজারিজমের উৎপাত দেখি। যখন পিএইচডির সাবজেক্টের একটু ডিটেইলে যাই, তখন দেখি কচুরিপানার নানা দিক নিয়ে বেশি পিএইচডি হয়েছে। এত পিএইচডি দিয়ে আমরা আসলে কী করব? এটা সবকিছুর জন্য প্রযোজ্য নয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যারা অ্যাভারেজ রেজাল্ট করছে, তারাও পিএইচডিতে সুযোগ পাচ্ছে। কীভাবে পাচ্ছে, সেটাও দেখা দরকার।
আমরা বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয় দখল দেখেছি। ভবিষ্যতে আমরা যেন রাজনৈতিক চাপে না পড়ি। আমি মনে করি, ৫ আগস্ট থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়ার অনেক কিছু আছে।
শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি, ট্যাক্স—এগুলো একটা বিষয়। কিন্তু শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত যে পরিসীমা, সেখানে তাদের অবস্থানটা কোথায়। এর অর্থটাও তাদের বুঝতে হবে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দক্ষতা উন্নয়নে এগিয়ে যাচ্ছে
অধ্যাপক মো. শামসুল হুদা, ট্রেজারার, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি
১৯৯২ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যখন শুরু হলো, তখন সমাজের উচ্চবিত্তের সন্তানেরা তাদের সামর্থ্যের জায়গা থেকে এই সুযোগটা নিয়েছে। কিন্তু ধীরে ধীরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা এমনভাবে আকৃষ্ট করতে শুরু করল যে এখন নিম্নবিত্ত এবং নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির শিক্ষার্থীদের আমরা উচ্চশিক্ষায় পাচ্ছি, যেটি হয়তো আগে কল্পনাও করা যেত না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবাদে তারা এখন উচ্চশিক্ষায় বৈশ্বিকভাবে চাহিদাসম্পন্ন বিষয়গুলোতে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে।
উচ্চমাধ্যমিক পাস শিক্ষার্থীর সমাজে কোনো অবস্থান নেই। চাকরির ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এখানে নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করছে। যেখানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এত প্রতিযোগিতা, সেখানে ৪০-৪৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর সুযোগ হয় না। অথচ আমরা গত দুই বছরের পরিসংখ্যান যদি দেখি, প্রায় সাড়ে ১০ লাখ শিক্ষার্থী উচ্চমাধ্যমিক অতিক্রম করে এসেছে। এদের যদি আমরা উচ্চশিক্ষার জায়গায় অথবা ভোকেশনাল অথবা টেকনিক্যাল কোনো জায়গায় সম্পৃক্ত না করি, সমাজে এই পর্যায়ে এই যুব শক্তি ডিমান্ড বেইজড যে কর্মসংস্থানগুলো আছে, সেই জায়গায় যদি তাদের নিয়ে যেতে না পারি, সেলেবল প্রোডাক্ট হিসেবে যদি তাদের তৈরি করতে না পারি, তবে তা জাতির জন্য অত্যন্ত হতাশাজনক হবে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেভাবে স্কিল ডেভেলপমেন্টে এগিয়ে যাচ্ছে, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেই ধারায় যেতে পারেনি। একজন শিক্ষার্থী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে, কোন বিষয়ে পড়বে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সেটা সম্ভব নয়। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঝুঁকি অনেক বেশি।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। এখানে মুনাফা করার সুযোগ কোথায়? বৈষম্যমূলকভাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্যাক্স বসানো হয়েছিল। আয়ই যার নেই, সে কেন ট্যাক্স দেবে?
বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা অনুদান বাড়ানো দরকার
অধ্যাপক মো. আসাদ উল্লাহ-আল-হোসেন, উপদেষ্টা, ইংরেজি বিভাগ, ইন্টারন্যাশনাল স্টান্ডার্ড ইউনিভার্সিটি
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা অনুদান বাড়ানো দরকার। যে অনুদান দেওয়া হয়, তা পর্যাপ্ত নয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অবহেলা করা হচ্ছে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিচ্ছে না। কিছু শিক্ষার্থী দেখলাম, ৩ দশমিক ৯ নিয়ে পাস করে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইভা দিতে গিয়েছিল। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলে তাদের সরাসরি বাদ দেওয়া হলো। এটা আমাকে খুবই মর্মাহত করেছে যে এত রেজাল্ট ভালো, তবু শুধু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বলে নেওয়া হচ্ছে না।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করে আমি দেখেছি, শিক্ষকেরা দিনরাত কাজ করেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও তাঁরা যোগাযোগ রাখছেন। গবেষণাতেও তাঁরা খুব ভালো অবদান রাখছেন। জার্নালগুলোতেও তাঁদের কাজ যাচ্ছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে তাঁরা আরও ভালো করতেন।
পিএইচডির ক্ষেত্রে অবশ্যই কোয়ালিটি দেখা উচিত। আমি দেখেছি, আমারই ছাত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছে বা করে এসেছে। কিন্তু সেখানে তো আমি মান দেখছি না। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ‘নাক উঁচু ভাব’ লক্ষণীয়।
আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দেখি, শুধু ভাইভা নিয়েই শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়।
আমাদের ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড ইউনিভার্সিটি মাত্র পাঁচ বছর অতিক্রম করেছে। এর মধ্যেই তাদের অগ্রগতি অনেক। ওখানে শিক্ষকের সংখ্যা হয়তোবা কম। ডিপার্টমেন্ট পাঁচ-ছয়টা। ফ্যাকাল্টি তিন-চারটা। তারপরেও আমাদের অগ্রগতি কম নয়।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাফল্য ও কৃতিত্ব অনেক
অধ্যাপক এ এম এম হামিদুর রহমান, ইংরেজি বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশলান ইউনিভার্সিটি
প্রতিষ্ঠানের মান, শিক্ষা প্রদানের মান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি আমরা মানসম্পন্ন শিক্ষার্থী বের করতে না পারি, যদি শিক্ষার মান সেই জায়গায় না যায়, তাহলে কখনোই আমাদের শিক্ষার্থীরা সফল হবে না, চাকরি পাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম অর্জিত হবে না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় আইটিএসসি আছে। আমাদের প্রতিটি ফ্যাকাল্টি, প্রতিটি ডিপার্টমেন্ট শিক্ষার মান আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে অনেক সচেষ্ট। আমরা অনেক সমস্যার কথা বলেছি। কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাফল্য ও কৃতিত্ব অনেক।
যদি কিউ এস ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিং দেখি, টাইমস হায়ার র্যাঙ্কিং দেখি, আমরা অনেক ভালো অবস্থানে আছি। দেশে এবং সমগ্র বিশ্বে। এরই মধ্যে আমরা শিক্ষার উন্নতির জন্য এইচআরডিআইয়ের মাধ্যমে আমাদের শিক্ষকদের অনেক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। শিক্ষকদের অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছে আমাদের কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আমাদের ফিউচার ড্যাফোডিল বলে একটা প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠেছে। যেখানে আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে, সামনে কী করব। আমরা এই কোয়ালিটি আরও কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাব, সেই চেষ্টা করছি।
আমাদের ২২০ জন বিদেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন, আর তিনজন বিদেশি শিক্ষক রয়েছেন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকারের অনুমতি পেয়েছে। দুবাইয়ে আমাদের ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির একটি শাখা চালু হচ্ছে। শিগগির তার অবকাঠামোর কাজ শুরু হবে। আইটিএসসি এবং অন্যান্য কাজ সাফল্যের সঙ্গে করছি। ভবিষ্যতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের লিডিং বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গণ্য হবে, এটাই আমরা আশা করি।
যাঁরা অংশ নিয়েছিলেন
আলোচক
ড. মো. সবুর খান
চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি ও ট্রাষ্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
অধ্যাপক ড. এস এম হাফিজুর রহমান
শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইআর), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম মিয়া
উপাচার্য
ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান
উপাচার্য
ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক
অধ্যাপক ড. এম আশিক মোসাদ্দিক
উপ-উপাচার্য
ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি
অধ্যাপক ড. গৌর গোবিন্দ গোস্বামী
উপ-উপাচার্য
উত্তরা ইউনিভার্সিটি
মো. শামসুল আলম লিটন
ট্রাষ্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান
অতীশ দীপঙ্কর ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি
অধ্যাপক মো. শামসুল হুদা
ট্রেজারার
ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি
অধ্যাপক মো. আসাদ উল্লাহ-আল-হোসেন
উপদেষ্টা, ইংরেজি বিভাগ
ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড ইউনিভার্সিটি
অধ্যাপক এ এম এম হামিদুর রহমান
ইংরেজি বিভাগ
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
স্বাগত বক্তব্য
কামরুল হাসান
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক
আজকের পত্রিকা
সঞ্চালনা
সাহিদুল ইসলাম চৌধুরী
উপসম্পাদক
আজকের পত্রিকা
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি থাকা উচিত
ড. মো. সবুর খান, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি ও ট্রাষ্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশলান ইউনিভার্সিটি
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি থাকা উচিত, এটা সত্য। পিএইচডি পলিসি (নীতিমালা) হয়ে গেছে, কিন্তু তা সার্কুলেট হচ্ছে না। অনেকে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালুর ক্ষেত্রে দু-একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংগতি তুলে ধরেন। কিন্তু দু-একটি প্রতিষ্ঠান দিয়ে সবগুলোকে বিবেচনা করা ঠিক নয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সুযোগ দিতে হবে। সুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবেশ দিতে হবে। চাকরির বাজারে তারা কীভাবে ভূমিকা রাখছে, সেটা দেখতে হবে। এ ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমগুলোকেও ভূমিকা পালন করতে হবে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কীভাবে ট্যাক্সে অবদান রাখছে, সেটা নিয়েও সার্ভে হতে পারে। আমাদের শিক্ষকেরা ট্যাক্স দিচ্ছেন, কর্মকর্তারা ট্যাক্স দিচ্ছেন। কেনাকাটার ভেতরেও আমরা ট্যাক্স-ভ্যাট দিচ্ছি। একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপরেও ট্যাক্স চাপানো হচ্ছে। পাশাপাশি আমাদের শিক্ষার্থীরা পাস করে বেরিয়ে যাচ্ছে, তারা কতটুকু ট্যাক্স দিচ্ছে, এটা অনেকে জানে না। আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, গত পাঁচ বছরে বিলো ফোরটি টপ ট্যাক্সপেয়ার যারা, তারা সবাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের।
বিদেশি শিক্ষার্থী আমাদের দেশে কম আসছে। কিন্তু যে কয়জন আসছে, সেটা নিয়ে আমাদের শুকরিয়া আদায় করা উচিত। কিছু শিক্ষার্থী যে এ দেশে আসে, তাদেরকে স্যালুট করা উচিত।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা ভালো জব করছে। কারণ, তারা তো বাই ডিফল্ট মেরিটোরিয়াস স্টুডেন্টগুলো পাচ্ছে। তাদের পড়াশোনা হচ্ছে, না হচ্ছে, সেটা বিষয় নয়। তাদের এক্সট্রা কালিকুলার অ্যাকটিভিটিস কী? বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শিক্ষার্থীদের গড়ে তুলছেন শিক্ষকেরা। এতে তুলনামূলক বেশি শ্রম দিতে হচ্ছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সৃজনশীল কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকছে। তারা গবেষণা করছে। তার নতুন নতুন প্রোডাক্ট নিয়ে আসছে। বৈশ্বিক প্রতিযোগিতাগুলোতে যাচ্ছে। অবশ্যই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও যাচ্ছে।
শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান থাকতে হবে
ড. এস এম হাফিজুর রহমান, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইআর), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল/পিএইচডি ডিগ্রি চালু নিয়ে নানা মত রয়েছে। এটাই বাস্তবতা। কারণ, কিছু নেতিবাচক উদাহরণ তৈরি হয়েছে। আমি এ-সংক্রান্ত একটি কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছি। এরই মধ্যে আমরা বেশ কিছু কাজ করেছি। পরিকল্পনা রয়েছে, শিগগির একটি কর্মশালা ও ফিজিবিলিটি স্টাডি করার।
শুধু ইউনিভার্সিটির র্যাঙ্কিংয়ের চিন্তা করলে হবে না; আমাদের চিন্তা করতে হবে এর ইমপ্যাক্ট নিয়ে। ইন্ডাস্ট্রি র্যাঙ্কিং নিয়ে এক দশকে অনেক কথা হয়েছে। কিন্তু খুব যে উন্নতি হয়েছে, তা আমার মনে হয় না।
এসডিএ ডাইমেনশনে আমরা বারবার বলছি কোয়ালিটি এডুকেশনের কথা। তবে এটাতে এখন পরিবর্তন এসেছে। এখন বলা হচ্ছে নলেজ। যা আগে ছিল এসডিএ ডাইমেনশনের এডুকেশন। যে ইউনিভার্সিটি নলেজ ক্রিয়েট করতে পারবে, তারাই এগিয়ে থাকবে। আর নলেজ ক্রিয়েট করতে হবে রিসার্চের মাধ্যমে।
কোন ইউনিভার্সিটি কত টাকা খরচ করছে গবেষণায়? এটি একটি নির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে আসা উচিত। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে ইউনিভার্সিটির অবদান থাকতে হবে। এটা নিয়ে আমাদের কাজ করার সুযোগ আছে। পাবলিক-প্রাইভেট সব ইউনিভার্সিটিতে কোয়ালিটি এস্যুরেন্সে আরও কাজ করতে হবে। তাহলে আমরা মানসম্মত মানুষ পাব। যারা দেশের উন্নয়নে অবদান রাখবে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ যে বিষয়গুলো অ্যাপলাইড, সে বিষয়েই শিক্ষার্থীরা পড়তে চায়। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কিছু নন-অ্যাপলাইড বিষয় চালু হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নন-অ্যাপলাইড বিষয় চালু হয়েছে। এটায় একটা ব্যালেন্স থাকা প্রয়োজন বলে মনে হয়।
মানসম্মত শিক্ষক পাওয়া কঠিন
অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম মিয়া, উপাচার্য, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশলান ইউনিভার্সিটি
উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার আগে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার মান বুঝতে হবে। আমি যদি ভালো মানের জিনিস না পাই, যতই আমি প্রক্রিয়াকরণ করি, সেখান থেকে ভালো ফল আসে না। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা নিয়েও কথা বলা দরকার। কারণ, এটাই আমাদের ভিত্তি।
বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বোঝা উচিত। এখানে সরকারি-বেসরকারি দুটো ভাগ করা চরম বোকামি। বিশ্ববিদ্যালয় যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো না চলে, তাহলে কখনোই বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গায় যাওয়া সম্ভব নয়। এখানে আপনাকে স্বাধীনতা দিতে হবে। আমাকে হাত-পা বেঁধে দিয়ে বলবেন সাঁতরাও, আরেকজনকে ছেড়ে দিয়ে বলবেন, প্রতিযোগিতায় যাও, তা হতে পারে না।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাদ দিলে দেখা যাবে, দেশের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। বর্তমান সময়ে সবচেয়ে কঠিন যে সমস্যার সম্মুখীন আমরা হই, সেটা হচ্ছে, মানসম্মত শিক্ষক পাওয়া; যা অত্যন্ত কঠিন। আমরা চেষ্টা করছি, কিন্তু পেতে হবে তো। যারা ভালো ভালো ফিল্ডে পিএইচডি করছে, তাদের দেশে ফিরে আসার প্রবণতা অনেক কম। মেধাবী শিক্ষার্থীদের আমরা হারাচ্ছি। এদেরকেই আমাদের দরকার। আমরা ভালো বেতন দিয়েও শিক্ষক পাচ্ছি না। আমাদের চেষ্টার কমতি আছে, তা নয়।
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখনো পিএইচডির সুযোগ দেওয়া হয়নি। তাহলে রিসার্চ করবে কে? মাস্টার্সে খুব বেশি শিক্ষার্থী পাওয়া যায় না। মাস্টার্স করার একটা ভালো পরিবেশ তৈরি করাটা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া উচিত
অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান, উপাচার্য, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসেফিক
তথ্যপ্রবাহের যুগে শিক্ষার্থীরা অনেক তথ্য নিয়ে আসছে। কিন্তু কোন শিক্ষার্থী আসছে? বুয়েটে যে শিক্ষার্থী যাচ্ছে, সেই শিক্ষার্থীকে আমরা পাচ্ছি না। আমাদের এই জায়গাটা বুঝতে হবে। সাধারণত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মধ্যম গ্রুপের শিক্ষার্থীদের পাচ্ছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য এটা আরও কঠিন। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত করে গড়ে তোলার জন্য শিক্ষকদের অনেক কষ্ট করতে হয়। এই উপযুক্ত করে গড়ে তোলার জন্য আমাদের যে মানসম্পন্ন শিক্ষক দরকার, সেই শিক্ষক আমরা পাচ্ছি না।
পিএইচডি প্রোগ্রাম চালুর বিষয়টি এখন আর দাবির পর্যায়ে নেই। আমরা সত্যিই তৃষ্ণার্ত। কিসের জন্য তৃষ্ণার্ত? বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি প্রোগ্রাম থাকা প্রয়োজন। আমি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে বিনীত অনুরোধ করেছি, আপনারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পিএইচডি দিন। আমি প্রস্তাব দিয়েছি, প্রোগ্রামভিত্তিক হলেও পিএইচডি দিন। একটা ইউনিভার্সিটিতে যদি চারটা প্রোগ্রাম থাকে, আটটা প্রোগ্রাম থাকে, নয়টা প্রোগ্রাম থাকে; তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী অন্তত পিএইচডি করার সুযোগ দিন। পিএইচডি থাকলে আমাদের শিক্ষকেরা পিএইচডি করতে পারবেন। অন্যরাও আসবেন। আমাদের দেশে এখনো এই কালচার যে শিক্ষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্যই দেশে পিএইচডি করা হয়।
যদি শিক্ষার্থীদের কাঁচামাল বলি, তাহলে শিক্ষকদের দক্ষ শ্রমিক বলতে হবে। শিক্ষকদের সেই দক্ষতা গড়ে তোলার বিষয়টা আছে। এই দক্ষতায় আমরা যেন পিছিয়ে না পড়ি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে যেন আমরা ব্যবহার করি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শুনলে আমরা জাত গেল, জাত গেল বলে চিৎকার করছি। আসলে জাত যাবে না। মানুষের সহজাত বুদ্ধিমত্তাটাকে কীভাবে উন্নত করা যায়, সেই ক্ষেত্রে আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করতে পারি। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, মানসম্পন্ন শিক্ষার্থী পেতে হলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ছোট করে হলেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া উচিত।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে যাচ্ছে
অধ্যাপক ড. এম আশিক মোসাদ্দিক, উপ–উপাচার্য, ইষ্ট–ওয়েষ্ট ইউনিভার্সিটি
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি আরেকটু ভালো শিক্ষার্থীরা আসে, তাহলে তাদের চাকরির বাজারের জন্য প্রস্তুত করতে আরেকটু সুবিধা হয়। আমি বিশ্বাস করি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের জব মার্কেটের জন্য প্রস্তুত করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
অনার্স মাস্টার্স করেই কেউ শিক্ষক হয়ে গেলেন, তা নয়। শিক্ষক হওয়ার জন্য একটা প্রসিডিউর আছে। সেই প্রশিক্ষণটা তাঁর দরকার যে কীভাবে তিনি শিক্ষার্থীদের একটা মার্কেটের জন্য যোগ্য করে তুলবেন। সেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চেষ্টা করছি, কীভাবে শিক্ষকদের আরও প্রশিক্ষিত করা যায়।
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপরে যখন ছাত্রছাত্রীর চাপ ছিল, তখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এগিয়ে এসেছে। ২০১০ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নীতিমালা করা হয়। সেখানে বলা হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজেদের জমি এবং ২৫ হাজার বর্গফুটের ভবন থাকতে হবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আস্তে আস্তে নিজেদের মূল ভবনে যাচ্ছে। যারা এখনো যেতে পারেনি, তারাও চেষ্টা করছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সম্ভাবনা অনেক ভালো। গবেষণা এবং পিএইচডির ক্ষেত্রে কোনো কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্ষমতা অনেক বেশি। দেশের বিভিন্ন জায়গায় কিছু সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে, যেগুলো কলেজ হওয়ারও যোগ্য নয়। শুধু সরকারি হওয়ার কারণে সেগুলো যদি পিএইচডি অফার করতে পারে, সেটাকে আমি অন্যায় বলব। সরকারি বা বেসরকারি নয়, একই মানদণ্ডে দেখতে হবে কোন বিশ্ববিদ্যালয় পিএইচডি ডিগ্রি অফার করতে পারবে আর কে পারবে না। তাহলে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে একটা মানদণ্ড হয়ে দাঁড়াবে।
শিক্ষার পেছনে খরচের মানসিকতায় বদল চাই
অধ্যাপক ড. গৌর গোবিন্দ গোস্বামী, উপ–উপাচার্য, উত্তরা ইউনিভার্সিটি
একটি গবেষণায় দেখেছি, ভর্তুকি যোগ করা হলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর পেছনে যে খরচ, তা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর চেয়ে অনেক বেশি। ফ্রি হোস্টেল এবং ইউটিলিটিজ বিল যদি যোগ করা হয়, তাহলে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অনেক বেশি ব্যয়বহুল। আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে একজনকে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট করতে হলে আমেরিকায় আড়াই থেকে তিন কোটি টাকা লাগে। যেখানে বাংলাদেশে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু আট লাখ টাকা লাগে। তাহলে কোনটি কম ব্যয়বহুল? বিদেশ নাকি বাংলাদেশ? এখানে মূল সমস্যাটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়। অভিভাবকদের সক্ষমতার বিষয় আছে এবং সচেতনতার বিষয় আছে। শিক্ষার পেছনে খরচের যে মানসিকতা, তা কীভাবে পরিবর্তন করা যায়, সেটার জন্য একটা উদ্যোগ নেওয়া দরকার, যাতে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সময়ে সময়ে ফি পুনর্নির্ধারণ করতে পারে এবং ভালো শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারে।
একজন পিএইচডি করা শিক্ষক সাধারণত দেশে আসতে চান না। তাহলে আমরা কীভাবে আন্তর্জাতিক মান মেইনটেইন করব? এ জন্য আমরা হিমশিম খাচ্ছি এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একটা অলিগোপলিস্টিক কমপিটিশন চলছে। যেমন এক জায়গায় একজন আছেন, তাঁকে ২০ হাজার ৫০ হাজার বেশি দিয়ে আরেক জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে। এতে দেশের কোনো উপকার হচ্ছে না। তিনি বাংলাদেশের ভেতরেই থাকছেন; বরং আমাদের দেখতে হবে, কীভাবে এ দেশের ভালো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়া যায়।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যয়টা বেশি কোন সেন্সে? অ্যাকচুয়াল সেন্সে, নাকি সাবসিডাইজড সেন্সে? অ্যাকচুয়াল সেন্সে ব্যয় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে কম। যেহেতু আমাদের কোনো সরকারি সাবসিডি নেই। সাবসিডি বিবেচনায় নেওয়া হলে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খরচ বেসরকারির চেয়ে বেশি হবে।
সমাজের প্রয়োজনটাও অনুধাবন করতে হবে
শামসুল আলম লিটন, ট্রাষ্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান, অতীশ দীপঙ্কর ইউনিভার্সিটি অব সাইয়েন্স এন্ড টেকনোলজি
দীর্ঘ ২০ বছর পশ্চিমে বসবাস করে দেখেছি, ‘অপরচুনিটি’, ‘কোয়ালিটি অ্যাকসেস’ এই শব্দগুলো আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় নেই। ভোকেশনাল ট্রেইনিং ও মানসম্মত নয়। অতীশ দীপঙ্কর ইউনিভার্সিটিতে আমরা সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অরিয়েন্টেন্ড সাবজেক্ট নিয়ে শুরু করেছিলাম।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সোশ্যাল সায়েন্স এবং আর্টসের সাবজেক্টগুলো শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ পড়ে থাকে। কিন্তু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন সেগুলো বন্ধ করে দিতে হলো, এটা একটা বড় ইস্যু। কারণ, ওখানে ফ্যাকাল্টি আছে। বাস্তবতা হচ্ছে, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক জানতে চায়, কারা ইন্ডাস্ট্রি এবং মার্কেট এমপ্লয়মেন্ট সম্পর্কে সচেতন। তাহলে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে কি সোশ্যাল সায়েন্স এবং আর্টসের সাবজেক্টগুলো বন্ধ করে দিতে হবে? অথবা প্রাইভেটে ভর্তুকি দিয়ে চালাতে হবে? মূলকথা হচ্ছে, আমরা আসলে সোসাইটির আলটিমেট প্রয়োজনটা অনুধাবন করছি কি না? এই জায়গাটা নিয়ে কারও কাজ করার সুযোগ হয়নি। কারণ, হয়তো এই জায়গাটায় লাভ-ক্ষতির সুযোগ কম।
আমরা পুলিশ এবং প্রশাসনে পিএইচডি দেখি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্লেজারিজমের উৎপাত দেখি। যখন পিএইচডির সাবজেক্টের একটু ডিটেইলে যাই, তখন দেখি কচুরিপানার নানা দিক নিয়ে বেশি পিএইচডি হয়েছে। এত পিএইচডি দিয়ে আমরা আসলে কী করব? এটা সবকিছুর জন্য প্রযোজ্য নয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যারা অ্যাভারেজ রেজাল্ট করছে, তারাও পিএইচডিতে সুযোগ পাচ্ছে। কীভাবে পাচ্ছে, সেটাও দেখা দরকার।
আমরা বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয় দখল দেখেছি। ভবিষ্যতে আমরা যেন রাজনৈতিক চাপে না পড়ি। আমি মনে করি, ৫ আগস্ট থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়ার অনেক কিছু আছে।
শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি, ট্যাক্স—এগুলো একটা বিষয়। কিন্তু শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত যে পরিসীমা, সেখানে তাদের অবস্থানটা কোথায়। এর অর্থটাও তাদের বুঝতে হবে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দক্ষতা উন্নয়নে এগিয়ে যাচ্ছে
অধ্যাপক মো. শামসুল হুদা, ট্রেজারার, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি
১৯৯২ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যখন শুরু হলো, তখন সমাজের উচ্চবিত্তের সন্তানেরা তাদের সামর্থ্যের জায়গা থেকে এই সুযোগটা নিয়েছে। কিন্তু ধীরে ধীরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা এমনভাবে আকৃষ্ট করতে শুরু করল যে এখন নিম্নবিত্ত এবং নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির শিক্ষার্থীদের আমরা উচ্চশিক্ষায় পাচ্ছি, যেটি হয়তো আগে কল্পনাও করা যেত না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবাদে তারা এখন উচ্চশিক্ষায় বৈশ্বিকভাবে চাহিদাসম্পন্ন বিষয়গুলোতে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে।
উচ্চমাধ্যমিক পাস শিক্ষার্থীর সমাজে কোনো অবস্থান নেই। চাকরির ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এখানে নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করছে। যেখানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এত প্রতিযোগিতা, সেখানে ৪০-৪৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর সুযোগ হয় না। অথচ আমরা গত দুই বছরের পরিসংখ্যান যদি দেখি, প্রায় সাড়ে ১০ লাখ শিক্ষার্থী উচ্চমাধ্যমিক অতিক্রম করে এসেছে। এদের যদি আমরা উচ্চশিক্ষার জায়গায় অথবা ভোকেশনাল অথবা টেকনিক্যাল কোনো জায়গায় সম্পৃক্ত না করি, সমাজে এই পর্যায়ে এই যুব শক্তি ডিমান্ড বেইজড যে কর্মসংস্থানগুলো আছে, সেই জায়গায় যদি তাদের নিয়ে যেতে না পারি, সেলেবল প্রোডাক্ট হিসেবে যদি তাদের তৈরি করতে না পারি, তবে তা জাতির জন্য অত্যন্ত হতাশাজনক হবে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেভাবে স্কিল ডেভেলপমেন্টে এগিয়ে যাচ্ছে, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেই ধারায় যেতে পারেনি। একজন শিক্ষার্থী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে, কোন বিষয়ে পড়বে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সেটা সম্ভব নয়। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঝুঁকি অনেক বেশি।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। এখানে মুনাফা করার সুযোগ কোথায়? বৈষম্যমূলকভাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্যাক্স বসানো হয়েছিল। আয়ই যার নেই, সে কেন ট্যাক্স দেবে?
বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা অনুদান বাড়ানো দরকার
অধ্যাপক মো. আসাদ উল্লাহ-আল-হোসেন, উপদেষ্টা, ইংরেজি বিভাগ, ইন্টারন্যাশনাল স্টান্ডার্ড ইউনিভার্সিটি
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা অনুদান বাড়ানো দরকার। যে অনুদান দেওয়া হয়, তা পর্যাপ্ত নয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অবহেলা করা হচ্ছে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিচ্ছে না। কিছু শিক্ষার্থী দেখলাম, ৩ দশমিক ৯ নিয়ে পাস করে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইভা দিতে গিয়েছিল। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলে তাদের সরাসরি বাদ দেওয়া হলো। এটা আমাকে খুবই মর্মাহত করেছে যে এত রেজাল্ট ভালো, তবু শুধু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বলে নেওয়া হচ্ছে না।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করে আমি দেখেছি, শিক্ষকেরা দিনরাত কাজ করেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও তাঁরা যোগাযোগ রাখছেন। গবেষণাতেও তাঁরা খুব ভালো অবদান রাখছেন। জার্নালগুলোতেও তাঁদের কাজ যাচ্ছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে তাঁরা আরও ভালো করতেন।
পিএইচডির ক্ষেত্রে অবশ্যই কোয়ালিটি দেখা উচিত। আমি দেখেছি, আমারই ছাত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছে বা করে এসেছে। কিন্তু সেখানে তো আমি মান দেখছি না। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ‘নাক উঁচু ভাব’ লক্ষণীয়।
আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দেখি, শুধু ভাইভা নিয়েই শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়।
আমাদের ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড ইউনিভার্সিটি মাত্র পাঁচ বছর অতিক্রম করেছে। এর মধ্যেই তাদের অগ্রগতি অনেক। ওখানে শিক্ষকের সংখ্যা হয়তোবা কম। ডিপার্টমেন্ট পাঁচ-ছয়টা। ফ্যাকাল্টি তিন-চারটা। তারপরেও আমাদের অগ্রগতি কম নয়।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাফল্য ও কৃতিত্ব অনেক
অধ্যাপক এ এম এম হামিদুর রহমান, ইংরেজি বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশলান ইউনিভার্সিটি
প্রতিষ্ঠানের মান, শিক্ষা প্রদানের মান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি আমরা মানসম্পন্ন শিক্ষার্থী বের করতে না পারি, যদি শিক্ষার মান সেই জায়গায় না যায়, তাহলে কখনোই আমাদের শিক্ষার্থীরা সফল হবে না, চাকরি পাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম অর্জিত হবে না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় আইটিএসসি আছে। আমাদের প্রতিটি ফ্যাকাল্টি, প্রতিটি ডিপার্টমেন্ট শিক্ষার মান আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে অনেক সচেষ্ট। আমরা অনেক সমস্যার কথা বলেছি। কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাফল্য ও কৃতিত্ব অনেক।
যদি কিউ এস ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিং দেখি, টাইমস হায়ার র্যাঙ্কিং দেখি, আমরা অনেক ভালো অবস্থানে আছি। দেশে এবং সমগ্র বিশ্বে। এরই মধ্যে আমরা শিক্ষার উন্নতির জন্য এইচআরডিআইয়ের মাধ্যমে আমাদের শিক্ষকদের অনেক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। শিক্ষকদের অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছে আমাদের কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আমাদের ফিউচার ড্যাফোডিল বলে একটা প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠেছে। যেখানে আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে, সামনে কী করব। আমরা এই কোয়ালিটি আরও কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাব, সেই চেষ্টা করছি।
আমাদের ২২০ জন বিদেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন, আর তিনজন বিদেশি শিক্ষক রয়েছেন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকারের অনুমতি পেয়েছে। দুবাইয়ে আমাদের ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির একটি শাখা চালু হচ্ছে। শিগগির তার অবকাঠামোর কাজ শুরু হবে। আইটিএসসি এবং অন্যান্য কাজ সাফল্যের সঙ্গে করছি। ভবিষ্যতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের লিডিং বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গণ্য হবে, এটাই আমরা আশা করি।
যাঁরা অংশ নিয়েছিলেন
আলোচক
ড. মো. সবুর খান
চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি ও ট্রাষ্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
অধ্যাপক ড. এস এম হাফিজুর রহমান
শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইআর), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম মিয়া
উপাচার্য
ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান
উপাচার্য
ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক
অধ্যাপক ড. এম আশিক মোসাদ্দিক
উপ-উপাচার্য
ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি
অধ্যাপক ড. গৌর গোবিন্দ গোস্বামী
উপ-উপাচার্য
উত্তরা ইউনিভার্সিটি
মো. শামসুল আলম লিটন
ট্রাষ্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান
অতীশ দীপঙ্কর ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি
অধ্যাপক মো. শামসুল হুদা
ট্রেজারার
ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি
অধ্যাপক মো. আসাদ উল্লাহ-আল-হোসেন
উপদেষ্টা, ইংরেজি বিভাগ
ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড ইউনিভার্সিটি
অধ্যাপক এ এম এম হামিদুর রহমান
ইংরেজি বিভাগ
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
স্বাগত বক্তব্য
কামরুল হাসান
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক
আজকের পত্রিকা
সঞ্চালনা
সাহিদুল ইসলাম চৌধুরী
উপসম্পাদক
আজকের পত্রিকা
প্রতিবছরের ১১ জুলাই পালিত হয় বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস। দিবসটি উপলক্ষে ৮ জুলাই ঢাকায় আজকের পত্রিকা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় ‘ন্যায্য ও সম্ভাবনাময় বিশ্বে পছন্দের পরিবার গড়তে প্রয়োজন তারুণ্যের ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক। আয়োজনে জনসংখ্যা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পপুলেশন সার্ভিসেস...
১১ জুলাই ২০২৫আগামীর পৃথিবী গড়তে তরুণদের ক্ষমতায়ন জরুরি। নীতিনির্ধারণী ক্ষেত্রে তাঁদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। বিশেষ করে ন্যায্য ও সম্ভাবনায় বিশ্বে নিজেদের পরিবার গঠনের ক্ষেত্রে তারুণ্যকে ক্ষমতায়ন করতে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। সম্পর্ক, পরিবার গঠন, পিতামাতার ভূমিকা গ্রহণ বিষয়ে সচেতন...
০৯ জুলাই ২০২৫মাসিক বা পিরিয়ড নারীজীবনের খুব স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। তবে আমাদের দেশে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে অনেকে অস্বস্তিতে পড়েন। মাসিকের ব্যবস্থাপনা সঠিক না হলে মাতৃত্ব ঝুঁকিপূর্ণ হয়। প্রতিবছরের ২৮ মে বিশ্বব্যাপী মাসিক স্বাস্থ্যবিধি দিবস পালন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে ২৫ মে আজকের পত্রিকা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত
২৮ মে ২০২৫নারীর মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও সুরক্ষা নিয়ে জনসমক্ষে আলোচনা ও সচেতনতা জরুরি। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্কার ভেঙে বিষয়টিকে নারী ও পুরুষ সবার কাছে সহজ ও স্বাভাবিক করে তুলতে সবাইকে কাজ করতে হবে। স্যানিটারি প্যাডের সহজলভ্যতা, তা ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকা এবং ব্যবহারের পরে পরিবেশসম্মতভাবে ফেলে দেওয়ার দিক
২৫ মে ২০২৫প্রতিবছরের ১১ জুলাই পালিত হয় বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস। দিবসটি উপলক্ষে ৮ জুলাই ঢাকায় আজকের পত্রিকা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় ‘ন্যায্য ও সম্ভাবনাময় বিশ্বে পছন্দের পরিবার গড়তে প্রয়োজন তারুণ্যের ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক। আয়োজনে জনসংখ্যা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পপুলেশন সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (পিএসটিসি), প্রজননস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল প্ল্যানড প্যারেন্টহুড ফেডারেশন (আইপিপিএফ), আজকের পত্রিকা এবং দ্য ডেইলি নিউ এইজ। পাঠকদের জন্য গোলটেবিলের আলোচিত বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো—
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
তরুণদের বাদ দিয়ে উন্নয়ন সম্ভব নয়
বাংলাদেশ বেশ এগিয়েছে। আমরা যদি গড় আয়ু চিন্তা করি, সারা বিশ্বে পুরুষের গড় আয়ু ৭১ বছর। বাংলাদেশে এটা ৭৪। সারা বিশ্বে নারীর গড় আয়ু ৭৪। বাংলাদেশে এটা ৭৬ বছর। সুতরাং এদিকে আমাদের অগ্রগতি হয়েছে। আমাদের দেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি বা ১৮ কোটি হলে তার মোটামুটি ৯ কোটি নারী। অ্যাডোলেসেন্ট বা কিশোর-কিশোরী এত দিন ২০ শতাংশ ছিল, এখন একটু কমে ১৯ শতাংশ হয়েছে। তাতেও বর্তমানে এই বয়সীদের সংখ্যা দেশে সাড়ে ৩ কোটির মতো। বাংলাদেশে তরুণদের সংজ্ঞা একটু ভিন্ন। আমাদের দেশে এটা ১৮ থেকে ৩৫ বছর। কিন্তু জাতিসংঘের হিসাবে ১৫ থেকে ২৪ বছর পর্যন্ত তরুণ হিসেবে ধরা হয়। ‘অ্যাডোলেসেন্ট এবং ইয়ুথ’ একসঙ্গে যদি চিন্তা করি—আমরা যাকে ‘ইয়াং পিপল’ বলি, সেই তরুণেরা আমাদের জনগোষ্ঠীর এক-তৃতীয়াংশ। এর মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে, তরুণ জনগোষ্ঠীর গুরুত্ব কত। যে দেশে তরুণেরা জনগোষ্ঠীর এত বিশাল অংশ, সে দেশে তাদের বাদ দিয়ে কোনো ধরনের পরিকল্পনা বা নীতি নিয়ে আমরা এগোতে পারব বলে মনে করি না। ক্লাইমেট ভালনারেবল সিচুয়েশনে আমাদের ছেলেমেয়েরা ‘আনসারটেইনিটি অব প্যারেন্টহুড’ এর কারণে হয় আগে, না হয় দেরিতে বিয়ে করছে। তাদের কেন্দ্র করে পরিবার গঠনের বিষয় নিয়ে আরও গভীরে ভাবতে হবে।
কিশোরীদের ক্ষমতায়নে পিতৃতন্ত্র বড় বাধা এখনো
জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কিশোরীদের প্রজননস্বাস্থ্যের ওপর ভয়াবহ বিপদ হয়ে উঠতে পারে। ভবিষ্যতে স্বাস্থ্যের জন্য একটা খারাপ দিক হয়ে দাঁড়াবে এটি। সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে তরুণদের সক্ষমতা আর কতখানি? এই সমাজে এখনো পরিবারের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত থাকার চেষ্টা করি। আমরা হয়তো সবকিছু প্রস্তুত করে তাঁদের সামনে নিয়ে গেলাম। তাঁরা ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’—বলে সিদ্ধান্ত দিয়ে দিলেন। সঙ্গী নির্বাচন থেকে কিন্তু বিষয়টা শুরু হলো। এরপরে বিয়ে, বাচ্চা নেওয়ার সময়—এ বিষয়গুলো ক্ষমতায়নের মধ্যে আসবে। কয়টা বাচ্চা নেব? দুই বাচ্চার মধ্যে কত বছর ব্যবধান থাকবে? এই প্রতিটি বিষয় পরিবারের যাঁর কাছে সিদ্ধান্তের জন্য উপস্থাপন করেছিলাম, তাঁর কাছ থেকেই নির্দেশনা আসে। জ্ঞান, দক্ষতা, অধিকার ও সুযোগ—এগুলো ক্ষমতায়নের মাধ্যম। কিন্তু এগুলো একজন কিশোরী বা কিশোরকে দিলেই কি সে ক্ষমতাবান হয়ে যাবে? আমাদের দেশে এ ক্ষেত্রে কিছু সাংস্কৃতিক প্রতিবন্ধকতা আছে। সেই জায়গায় আলোকপাত করতে হবে। পিতৃতন্ত্র পরিবর্তন হয়নি এখনো। পরিবারের যাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, সেই বড়দের যদি আমরা অ্যাড্রেস না করি, তাহলে যতই তরুণদের ক্ষমতায়নের চেষ্টা করি না কেন, প্রকৃত ক্ষমতায়ন হবে না। এ জন্য আমাদের বড়দের ওপরও নজর দিতে হবে।
নীতির ঘাটতি নয়, বাস্তবায়নেই সবচেয়ে বিপত্তি
আমাদের অনেক কিছুই অর্জিত হয়েছে। কিন্তু ১৫-১৬ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থেকে বলব, একটা অতৃপ্তি থেকেই গেছে। এত কিছু করলাম, তার কতটুকু টেকসই হলো? অ্যাডোলেসেন্ট কর্নারের কথা বলা হয়েছে, এটা স্বাস্থ্য বিভাগের অপারেশন প্ল্যানে চলে গেছে। সেখানে কিশোর বয়সীরা তাদের প্রজননস্বাস্থ্য সম্পর্কে জানার সুযোগ পাবে। সরকারের সেবার গুণমান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কিন্তু তারপরেও তো কিছু একটা পাবে। কিশোর-কিশোরীরা অন্তত একটা জায়গায় যেতে পারবে। এখনকার যে স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রকল্পগুলো হচ্ছে, সেগুলো একেবারেই আলাদা। যেভাবে ওনাদের সঙ্গে দাতাগোষ্ঠী কাজ করেছে, সরকারের কাজটাকে যে জায়গায় নিয়ে আসা হয়েছিল, সেটি এখন আর খুঁজে পাচ্ছি না। আমি একপ্রকার হতাশ। এখনো অনেক কাজ করতে হবে। বাংলাদেশে অনেক ভালো নীতি তৈরি হয়। কিন্তু আমাদের নীতিগুলোতে আন্তসম্পর্ক থাকে না। আমরা যেসব আন্তর্জাতিক কনভেনশনে স্বাক্ষর করি, স্থানীয় নীতির সঙ্গে তার একটা দূরত্ব থেকে যায়। আমরা যে কনভেনশনে স্বাক্ষর করলাম, সেটার আঙ্গিকেই তো স্থানীয় নীতি নির্ধারিত হবে। কিন্তু ওই জায়গায় আমরা যেতে পারছি না। গৃহীত নীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে অনেক সমস্যা। নীতি, অ্যাকশন প্ল্যান তৈরিসহ সবকিছু শেষ করলাম। তখন সরকার পরিবর্তন হয়ে গেল। গৃহীত নীতিগুলো বাস্তবায়ন করা গেলেও কিন্তু অনেক দূর এগোনো যায়। ২০২৪ সালের পরে বাংলাদেশে একটা পরিবর্তিত প্রেক্ষাপট দেখতে পাচ্ছি।
নীতিনির্ধারণে তরুণদের কণ্ঠ শুনতে হবে
তারুণ্যের ক্ষমতায়ন কীভাবে হবে, যদি তরুণদের কণ্ঠই শোনা না যায়? আমরা প্রায়ই দেখি, পরিবার পরিকল্পনা কিংবা স্বাস্থ্যনীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে তরুণদের অংশগ্রহণকে অগ্রাহ্য করা হয়। প্রায়ই দেখা যায়, জ্যেষ্ঠ নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, তারুণ্যের ব্যাপারে তাঁরাই ভালো বোঝেন। তাঁরা নিজেদের সময়ের অভিজ্ঞতা দিয়ে আজকের তরুণদের বাস্তবতা মেপে ফেলেন। তাঁদের বুঝতে হবে, সময় পাল্টে গেছে। এখনকার প্রজন্ম সম্পূর্ণ আলাদাভাবে বড় হচ্ছে। তাদের সমাজভাবনা, প্রযুক্তির সঙ্গে যোগাযোগ—সবকিছুই আলাদা। আমাদের মত যদি শোনা না হয়, তাহলে তো সমস্যা। আমি মনে করি, যেসব নীতি আমাদের জীবনের ওপর প্রভাব ফেলবে, সেসব নীতিতে আমাদের অন্তর্ভুক্তি বাধ্যতামূলক করা উচিত। সব নীতি নির্ধারণের জায়গায় তারুণ্যের অংশগ্রহণ রাখতে হবে। শুধু অংশগ্রহণের জন্য অংশগ্রহণ নয়, নীতি নির্ধারণে তাদের গুরুত্ব দিতে হবে। শুধু শহর নয়, তৃণমূল পর্যায় থেকেও তরুণদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তরুণদের বাস্তবতা, বয়স ও প্রেক্ষাপট বুঝে বন্ধুত্বপূর্ণ ও নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে।
অবহেলিত জনগোষ্ঠীর জন্য নেই টেকসই সমাধান
আমরা ২০ থেকে ২৫ বছর ধরে যৌনকর্মী ও মাদকসেবীদের নিয়ে কাজ করেছি। দুই জায়গায় দুই ধরনের চ্যালেঞ্জ। যৌনকর্মীরা খুব অল্প বয়সে পেশায় প্রবেশ করেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অনিচ্ছায়। বিভিন্ন সামাজিক কারণে তাঁরা স্বাস্থ্যসেবা থেকে অনেক দূরে থাকেন। যেমন একসময় তাঁরা স্যান্ডেল পর্যন্ত পরতে পারতেন না। সামাজিক ট্যাবু ছিল, তাঁরা স্যান্ডেল পরতে পারবেন না। এটার পরিবর্তন হয়েছে। নিজেদের কাজের ধরন কেমন হবে, এটা তাঁরাও নির্ধারণ করতে পারেন না। কারণ, গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী তাঁদের সেবা দিতে হয়। অনেক গ্রাহক কনডম ব্যবহার করতে চান না। যদি বলি, যৌনকর্ম একটা পেশা; তাহলে সেই পেশায় তাঁদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা, নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষমতা বাংলাদেশে তৈরি হয়নি। মাদকসেবীদের কথা বললে রাষ্ট্র এটাকে অপরাধ হিসেবে দেখে। মাদকের সঙ্গে জড়িতরা এ থেকে নিরাময়ের ক্ষেত্রে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক জরিপে দেখা গেছে, দেশে প্রায় এক কোটি মাদকসেবী আছে। এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে আমরা আসলে কোনো পরিকল্পনার মধ্যে রেখেছি বলে মনে হয় না। রাষ্ট্র কোনো সিদ্ধান্তে না এলে এটা অর্থনৈতিক বা সামাজিকভাবে একটা ভয়ংকর দুর্যোগ তৈরি করবে।
প্রকল্প নয়, চাই টেকসই রাজনৈতিক অঙ্গীকার
বাংলাদেশে বেশির ভাগ কাজই হয় প্রকল্পভিত্তিক। প্রকল্প শেষ তো কাজও শেষ। তরুণ জনগোষ্ঠীকে ‘পাওয়ার অব দ্য গ্লোব’ বলা যেতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো, এই শক্তিটা কীভাবে ব্যবহার করা হবে। এ রকম একটা শক্তি যদি খারাপ দিকে যায়, তা সবকিছু ধ্বংস করে দিতে পারে। আর ভালো দিকটা যদি ব্যবহার করা হয়, তাহলে এটা নতুন একটি পৃথিবী গড়তে পারে। আমাদের দেশে ৭৭ শতাংশ নারীই সন্তানধারণের ক্ষেত্রে নিজেরা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। প্রতি তিনজনে একজন মা অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের শিকার হচ্ছেন। এত বছর যে হাজার হাজার কোটি টাকা আমরা বিনিয়োগ করলাম, তার টেকসই প্রভাব কোথায়? সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার না থাকলে এই বিষয়ে অগ্রগতি সম্ভব নয়। কারণ, এনজিওগুলো একা এটা পারবে না। কারণ, তারা কেবল তহবিল পেলেই কাজ করতে পারে, অন্যথায় নয়। ‘রিটার্ন অব ইনভেস্টমেন্ট’ (বিনিয়োগের ফলাফল)-এর বিষয়টিও আমাদের দেখতে হবে। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এসআরএইচআরের (যৌন, প্রজননস্বাস্থ্য ও অধিকার) পেছনে যে বিনিয়োগ করা হয়েছে, তার কি ফল আমরা পেয়েছি? নাকি এটা ওয়েস্টেজ (অপব্যয়)? এক ডলার খরচ করে যদি আমরা দেখি, হাফ ডলারও আসেনি, তাহলে এটা অপব্যয়। এক ডলার খরচ করে যদি শিক্ষা, জ্ঞান, স্বাস্থ্য বা প্রজননস্বাস্থ্যের মাধ্যমে দেড় ডলারও ফিরে আসে, তাহলে বলব, এটা একটা ভালো ইঙ্গিত।
ক্ষমতায়নে বাদ না পড়ুক কেউই কখনো
সার্বিকভাবে তারুণ্যের ক্ষমতা তখনই কাজে আসবে, যখন সব ধরনের তরুণকে কাজে লাগানো হবে। আমি বলতে চাচ্ছি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন তরুণ-তরুণীদের কথা। তাঁদের সমাজের মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আমরা যখন মাঠপর্যায়ে কাজ করতে যাই, তখন দেখি, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন তরুণ-তরুণীরা স্বাস্থ্যসেবা থেকে উপেক্ষিত থাকেন। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারেন না। এটা শুধু উন্নয়নগত চ্যালেঞ্জ নয়, মানবাধিকার লঙ্ঘনও বটে। সে কারণে আহ্বান থাকবে, আমরা যেন সব প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবায় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন তরুণ-তরুণীদের শারীরিক প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে পারি। আর কেউ যেন তাঁর লৈঙ্গিক কিংবা সামাজিক পরিচয়ের কারণে পিছিয়ে না পড়েন।
তরুণদের অংশগ্রহণ ছাড়া পরিবর্তন সম্ভব নয়
সহিংসতা, বাল্যবিবাহ, কম বয়সে গর্ভধারণ—এগুলো একটি আরেকটির সঙ্গে যুক্ত। এর পেছনে অনেক ফ্যাক্টর কাজ করে। এটাকে পরিবর্তন করতে চাইলে তরুণদের ক্ষমতায়নের কোনো বিকল্প নেই। তবে শুধু তরুণদের ক্ষমতায়ন এককভাবে এর পরিবর্তন করতে পারবে না। এর সঙ্গে আরও নানা বিষয় যুক্ত আছে। সেগুলোকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হবে। ২০ বছর আগের চিত্রের সঙ্গে এখনকার চিত্রের অনেক পার্থক্য। আগে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে তরুণেরা ছিলেন না, কিন্তু এখন আছেন। প্রশ্ন হলো, তাঁরা কি নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে যেতে পারছেন? তরুণদেরও তথ্য দিয়ে তৈরি করতে হবে। তাঁরা যখন প্রতিনিধিত্ব করবেন, তখন সিদ্ধান্ত দেওয়ার বিষয়টা আরও অনেক শক্তিশালী হবে।
তরুণদের জনস্বাস্থ্যসেবায় প্রবেশাধিকার জরুরি
বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালন প্রথম শুরু হয় ১৯৮৯ সালে, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি বা ইউএনডিপির উদ্যোগে। এর পর থেকে দিবসটি পালনে সমন্বয় করে আসছে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল। এর লক্ষ্য হলো, জনসংখ্যা-সম্পর্কিত বিষয়সমূহ এবং উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, মানবাধিকার সম্পর্কে বৈশ্বিক সচেতনতা বাড়ানো। বর্তমানে বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকের বয়স ত্রিশের নিচে। বাংলাদেশে ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সীদের সংখ্যা জনসংখ্যার ২৮ শতাংশ। এই জনমিতির সুবিধা নেওয়ার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বর্তমান তরুণ প্রজন্মের পরিবার পরিকল্পনা ও জনস্বাস্থ্যসেবায় প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
অচলায়তন ভাঙতে হবে
তরুণদের ক্ষমতায়ন ছাড়া সুষ্ঠু পরিবার গঠন করা সম্ভব নয়। জাতীয় সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, আমাদের দেশে ৬৪ শতাংশ কিশোরী জীবনে প্রথম মাসিক হওয়ার আগে এ সম্পর্কে জানতই না। ৫০ শতাংশ কিশোরী এখনো মাসিকের সময় নোংরা কাপড় ব্যবহার করে। আবার মাসিক স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে কথা বলার চেয়ে যৌনস্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলা আরও কঠিন। এই অচলায়তন চলতে দেওয়া যায় না। এটি ভাঙতে না পারাটা আমাদের জন্য লজ্জার। তরুণদের আমি চেঞ্জমেকার হিসেবে দেখি। তাদের ক্ষমতায়ন করা জরুরি। আচরণগত পরিবর্তন আসতে হবে। শুধু জ্ঞানই সবকিছু নয়।
সেবাকেন্দ্র তরুণদের প্রয়োজন অনুযায়ী প্রস্তুত হোক
আমরা অনেক সামাজিক ট্যাবু, লজ্জা ভাঙতে পারছি না। এটা নতুন প্রজন্মের জীবনযাপনে প্রভাব ফেলছে। অ্যাডোলেসেন্ট কর্নারের কথা আমরা বলছি, কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় এটা সীমিত। এই যে এত গার্মেন্টস শ্রমিক রয়েছে বা স্কুল-কলেজে যারা পড়ছে, তারা কি ওই সময়টায় সেবাকেন্দ্রে সেবা নিতে যেতে পারে? যখন তারা সময় পায়, তখন সেবাকেন্দ্রই বন্ধ থাকে। আমাদের সেবাকেন্দ্রগুলো তরুণদের সেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত কি না, সেটা দেখতে হবে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। হতাশ হলে চলবে না। অনেক দূর যেতে হবে। সেই প্রত্যয় ও চেষ্টাটা থাকা দরকার।
জনগণের কাছে পৌঁছাতে হবে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম
দেশের একজন নাগরিক হিসেবে চাই, আমাদের ছেলেমেয়েরা সব রকমের সাহায্য-সহযোগিতা ও সমর্থন পাক। যৌন, প্রজননস্বাস্থ্য এবং অধিকার সম্পর্কে যেন তারা সঠিকভাবে জানতে পারে। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে অনেক কিছুই হয়, কিন্তু সেটা কতটা তৃণমূল পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে, সেটা দেখা দরকার। সিডব্লিউএফডির একটি কর্মসূচি থেকে আমরা স্যানিটারি ন্যাপকিন দিয়ে থাকি। এটা আমরা শুধু কিশোরীদের নয়, তাদের মায়েদেরও দিয়ে থাকি। স্কুলের টয়লেট সংস্কার করে দিচ্ছি। কিন্তু এগুলো সবই পাইলটিং বা পরীক্ষামূলক। কয়েকটি এলাকার মুষ্টিমেয় কিছু মেয়ে এগুলো সম্পর্কে জানছে। তাদের মাধ্যমে হয়তো অন্যরা জানছে। কিন্তু সরকারের মাধ্যমে হলে আরও অনেকের কাছে এ সেবা পৌঁছে দেওয়া যেত।
স্পর্শকাতর অংশ সম্পর্কে শিশু বয়স থেকেই জানাতে হবে
আমরা তরুণদের ক্ষমতায়নের কথা বলছি। তাদের ক্ষমতায়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য তথ্য একটা বড় শক্তি। তরুণদের ওপর নানা ক্ষেত্রে নানা মাত্রায় লৈঙ্গিকভিত্তিক সহিংসতা হচ্ছে। তরুণদের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য না থাকা এর অন্যতম কারণ। বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা প্রলোভন কিংবা ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে সহিংসতা চালানো হচ্ছে। কর্মক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার করা হয়। রাস্তাঘাটেও সহিংসতা হচ্ছে। সহিংসতা কমাতে হলে তরুণ প্রজন্মের কাছে সঠিক তথ্য দিতে হবে। এটাকে আমরা কীভাবে মোকাবিলা করব, সেটা ভাবতে হবে। শিশু-কিশোরদের শুরু থেকে খারাপ স্পর্শ, ভালো স্পর্শ নিয়ে শিক্ষা দিতে হবে। শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর অংশ সম্পর্কে শিশু বয়স থেকেই জানাতে হবে।
এসডিজি অর্জন করতে পারব বলে মনে হয় না
বিশ্বে বর্তমানে জনসংখ্যা ৮১০ কোটি। তার মধ্যে তরুণদের সংখ্যা ১৮০ কোটি। তার অর্থ, এরা একটা বিশাল জনগোষ্ঠী। এই তরুণদের বেশির ভাগ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বাস করে। বিবাহবহির্ভূত যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে কন্ট্রাসেপটিভ প্রিভ্যালেন্স রেট (সিপিআর) এ দেশে খুবই কম। এ কারণে অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণ অনেক বেশি। এ কারণে এইচআইভিতেও আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে। মেয়েরা অনেক এগিয়েছে, কিন্তু বাল্যবিবাহের হার এখনো অনেক বেশি। অর্ধেক মেয়েরই ১৫ বছরের আগে বিয়ে হচ্ছে। সামাজিক কারণে এটা হচ্ছে। আমাদের মাতৃমৃত্যুর হার অনেক কমেছে। কিন্তু আমরা কি ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জন করতে পারব? আমার মনে হয়, পারব না।
তরুণেরা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা পান না
আমরা প্রায়ই বলি, ইয়ুথ এমপাওয়ারমেন্ট বা মিনিংফুল ইয়ুথ পার্টিসিপেশন। আজকাল প্রায় প্রতিটি এনজিওতে কিছু না কিছু তরুণ স্বেচ্ছাসেবকের গ্রুপ বা তরুণদের ফোরাম থাকে। তরুণেরা কি সত্যি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার প্রক্রিয়ার অংশ হচ্ছেন, নাকি তাঁদেরকে নামেমাত্র যুক্ত করা হচ্ছে? অনেক সময় অংশগ্রহণটা মনে হয় নেহাতই নামসর্বস্ব। তরুণেরা অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেলেও সব সময় তাঁরা কথা বলার সুযোগ পান না কিংবা কথা বলার সুযোগ পেলেও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাটা পান না। এখন তরুণদের ফোরামগুলোতে সিদ্ধান্ত নেন সিনিয়ররা। তরুণদের কাজ শুধু সহযোগিতা বা প্রতিনিধিত্ব করাতে আটকে থাকে।
তরুণ প্রজন্ম একটি বড় ধরনের নিয়ন্ত্রক শক্তি
আমাদের জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ তরুণ; যা জনসংখ্যার প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি। অবশ্য বয়সের দিক থেকে বিবেচনা করলে বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে তরুণের সংজ্ঞা ভিন্ন। কোথাও ২৫ বছর, কোথাও বা ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত তরুণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই পার্থক্যটাও আমাদের মাথায় রাখতে হবে। তরুণ প্রজন্ম একটি বড় ধরনের নিয়ন্ত্রক শক্তি বলে মনে করি। তারা সমাজ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সমাজের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে পারে। আবার এই শক্তিটাকে আমরা যদি সুপথে না রাখতে পারি, যদি সঠিক পরামর্শ দিতে না পারি, তাহলে তাদের মিসলিড (ভুল দিকে চালিত) হওয়ার আশঙ্কাও থেকে যায়।
প্রশ্ন করতে শেখা তরুণ নেতৃত্বের ভিত্তি
প্রশ্ন করতে শেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তরুণ সম্প্রদায় প্রশ্ন করতে শিখলে আগামীতে তাঁদের সমস্যার খানিকটা সমাধান তাঁরাই করতে পারবেন। তরুণেরাই নেতৃত্ব দেবেন। তাহলে আমরা কেমন নেতৃত্ব তৈরি করব? এই সমাজ, এই রাষ্ট্র থেকে বের হয়ে আজকের তরুণেরাই তো নেতৃত্বে যাবেন। তাঁদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য পাওয়ার অধিকার—এ সবকিছুই শুধু প্রকল্পভিত্তিক হলে তা টেকসই হবে কি না, এই শঙ্কা থেকে যায়। সামাজিক প্রেক্ষাপটকে বিবেচনা করে পরিবর্তনগুলো আনতে হবে। সামগ্রিকভাবে সমাজে যদি পরিবর্তন না আসে, তাহলে পরিবর্তন সম্ভব নয়। এই সমাজ মানে শুধু ঢাকা নয়; এটা অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে হবে। যেমন প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। তাদের স্বাস্থ্য, খাদ্য—সবকিছুই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
কথা বোঝানোর দক্ষতা শেখানোয় জোর দিতে হবে
আমরা অনেক উদ্যোগ নিই। কিন্তু সেগুলো সঠিকভাবে হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা উচিত। যেমন বাল্যবিবাহ বা কম বয়সে গর্ভধারণ রোধে আমরা কিশোরীদের সঙ্গে কাজ করি। এতে মনে হয়, বাল্যবিবাহ বা কম বয়সে গর্ভধারণ রোধের দায়িত্ব শুধু কিশোরীদের। আমরা যখন এ সম্পর্কে কিশোরীদের পড়াশোনা করাচ্ছি, তখন তাদের কেবল জ্ঞানটুকুই দিচ্ছি। তাকে কেবল এ সম্পর্কে পড়ানোই হয়। কিন্তু ওই মেয়েটাকে এটা শেখানো হয় না যে কীভাবে মা-বাবাকে বাল্যবিবাহ বন্ধের বিষয়ে বোঝাতে হবে। এ কারণে তারা প্রায় কখনোই মা-বাবাকে সেভাবে বোঝাতে পারে না। তাদের অন্যকে কথা বোঝানোর দক্ষতা শেখানোয় জোর দিতে হবে।
অধিকাংশ নারী নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না
একটা মেয়ের ১৮ বছর বয়স হওয়ার পর সে পরিণত হয়। কিন্তু আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপট অনুযায়ী, একটা মেয়ের পিরিয়ড শুরু হওয়া মানেই সে পরিণত হয়ে গেছে, তাকে বিয়ে দেওয়া যায়। পিরিয়ডের কারণে অনেকের স্কুলে যাওয়ায় ছেদ পড়ছে, বাল্যবিবাহ হচ্ছে। এখনো অধিকাংশ নারী নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না যে তিনি সন্তান নেবেন কি না। তাই এখনো অসংখ্য প্রসবকালীন মাতৃমৃত্যু ঘটছে। এসআরএইচআর আমার একটা অধিকার। এই অধিকার প্রতিনিয়ত হরণ করে নেওয়া হচ্ছে। প্রত্যেক তরুণের মনে এই ধারণাটা রাখতে হবে, আমার পরিবার আমার পছন্দে। আমি যদি আমার পছন্দে পরিবার গড়তে পারি, তাহলে আমার জীবন পরিবর্তন করতে পারব।
যাঁরা অংশ নিয়েছিলেন
সঞ্চালক
ড. নূর মোহাম্মদ
নির্বাহী পরিচালক, পপুলেশন সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (পিএসটিসি)
আলোচক
আবু হাসানাত মোহাম্মদ কিশোয়ার হোসেন
অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
মাশফিকা জামান সাটিয়ার
সিনিয়র পলিসি অ্যাডভাইজার, জেন্ডার অ্যান্ড সিভিল সোসাইটি, নেদারল্যান্ডস দূতাবাস, ঢাকা
সাবিক রহমান
সদস্যসচিব, ন্যাশনাল ইয়ুথ নেটওয়ার্ক
ড. মো. গোলাম রহমান
সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
ডা. মো. শহিদুল ইসলাম
সিনিয়র ম্যানেজার, এইচআইভি প্রোগ্রাম, সেভ দ্য চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনাল
ডা. কাজী গোলাম রাসুল
সিনিয়র ডিরেক্টর অ্যান্ড হেড অব হেলথ, ফ্রেন্ডশিপ
সুহাস মাহমুদ
প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর, পিএসটিসি
ডা. ইখতিয়ার উদ্দিন খন্দকার
প্রেসিডেন্ট, নেয়ার্স (এনইএআরএস)
ডা. মো. মাহবুবুল আলম
হেড অব প্রোগ্রামস, পিএসটিসি
অলক কুমার মজুমদার
পরিচালক, প্রোগ্রাম অ্যান্ড অপারেশনস, রেডঅরেঞ্জ কমিউনিকেশনস
অনিতা শরীফ চৌধুরী
টিম লিডার, ফোকাস প্রজেক্ট, পিএসটিসি
ড. লাডলি ফায়্জ
নির্বাহী পরিচালক, সিডব্লিউএফডি
কানিজ গোফরানী কোরায়শী
প্রকল্প ব্যবস্থাপক, পিএসটিসি
ডা. নাফিসা লিরা হক
অ্যাডজাংক্ট ফ্যাকাল্টি, জেপিজিএসএইচ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
এ. কিউ. শুদ্ধ হক
প্রোগ্রাম অফিসার, পিএসটিসি
মো. মুস্তাফিজুর রহমান
প্রধান প্রতিবেদক, নিউ এইজ
মো. মশিউর রহমান
জেনারেল ম্যানেজার, ফিল্ড ইমপ্লিমেন্টেশন, সোশ্যাল মার্কেটিং কোম্পানি (এসএমসি)
ফারজানা আক্তার রিমু
পিয়ার এডুকেটর, গোল প্রজেক্ট
তরুণদের বাদ দিয়ে উন্নয়ন সম্ভব নয়
বাংলাদেশ বেশ এগিয়েছে। আমরা যদি গড় আয়ু চিন্তা করি, সারা বিশ্বে পুরুষের গড় আয়ু ৭১ বছর। বাংলাদেশে এটা ৭৪। সারা বিশ্বে নারীর গড় আয়ু ৭৪। বাংলাদেশে এটা ৭৬ বছর। সুতরাং এদিকে আমাদের অগ্রগতি হয়েছে। আমাদের দেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি বা ১৮ কোটি হলে তার মোটামুটি ৯ কোটি নারী। অ্যাডোলেসেন্ট বা কিশোর-কিশোরী এত দিন ২০ শতাংশ ছিল, এখন একটু কমে ১৯ শতাংশ হয়েছে। তাতেও বর্তমানে এই বয়সীদের সংখ্যা দেশে সাড়ে ৩ কোটির মতো। বাংলাদেশে তরুণদের সংজ্ঞা একটু ভিন্ন। আমাদের দেশে এটা ১৮ থেকে ৩৫ বছর। কিন্তু জাতিসংঘের হিসাবে ১৫ থেকে ২৪ বছর পর্যন্ত তরুণ হিসেবে ধরা হয়। ‘অ্যাডোলেসেন্ট এবং ইয়ুথ’ একসঙ্গে যদি চিন্তা করি—আমরা যাকে ‘ইয়াং পিপল’ বলি, সেই তরুণেরা আমাদের জনগোষ্ঠীর এক-তৃতীয়াংশ। এর মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে, তরুণ জনগোষ্ঠীর গুরুত্ব কত। যে দেশে তরুণেরা জনগোষ্ঠীর এত বিশাল অংশ, সে দেশে তাদের বাদ দিয়ে কোনো ধরনের পরিকল্পনা বা নীতি নিয়ে আমরা এগোতে পারব বলে মনে করি না। ক্লাইমেট ভালনারেবল সিচুয়েশনে আমাদের ছেলেমেয়েরা ‘আনসারটেইনিটি অব প্যারেন্টহুড’ এর কারণে হয় আগে, না হয় দেরিতে বিয়ে করছে। তাদের কেন্দ্র করে পরিবার গঠনের বিষয় নিয়ে আরও গভীরে ভাবতে হবে।
কিশোরীদের ক্ষমতায়নে পিতৃতন্ত্র বড় বাধা এখনো
জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কিশোরীদের প্রজননস্বাস্থ্যের ওপর ভয়াবহ বিপদ হয়ে উঠতে পারে। ভবিষ্যতে স্বাস্থ্যের জন্য একটা খারাপ দিক হয়ে দাঁড়াবে এটি। সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে তরুণদের সক্ষমতা আর কতখানি? এই সমাজে এখনো পরিবারের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত থাকার চেষ্টা করি। আমরা হয়তো সবকিছু প্রস্তুত করে তাঁদের সামনে নিয়ে গেলাম। তাঁরা ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’—বলে সিদ্ধান্ত দিয়ে দিলেন। সঙ্গী নির্বাচন থেকে কিন্তু বিষয়টা শুরু হলো। এরপরে বিয়ে, বাচ্চা নেওয়ার সময়—এ বিষয়গুলো ক্ষমতায়নের মধ্যে আসবে। কয়টা বাচ্চা নেব? দুই বাচ্চার মধ্যে কত বছর ব্যবধান থাকবে? এই প্রতিটি বিষয় পরিবারের যাঁর কাছে সিদ্ধান্তের জন্য উপস্থাপন করেছিলাম, তাঁর কাছ থেকেই নির্দেশনা আসে। জ্ঞান, দক্ষতা, অধিকার ও সুযোগ—এগুলো ক্ষমতায়নের মাধ্যম। কিন্তু এগুলো একজন কিশোরী বা কিশোরকে দিলেই কি সে ক্ষমতাবান হয়ে যাবে? আমাদের দেশে এ ক্ষেত্রে কিছু সাংস্কৃতিক প্রতিবন্ধকতা আছে। সেই জায়গায় আলোকপাত করতে হবে। পিতৃতন্ত্র পরিবর্তন হয়নি এখনো। পরিবারের যাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, সেই বড়দের যদি আমরা অ্যাড্রেস না করি, তাহলে যতই তরুণদের ক্ষমতায়নের চেষ্টা করি না কেন, প্রকৃত ক্ষমতায়ন হবে না। এ জন্য আমাদের বড়দের ওপরও নজর দিতে হবে।
নীতির ঘাটতি নয়, বাস্তবায়নেই সবচেয়ে বিপত্তি
আমাদের অনেক কিছুই অর্জিত হয়েছে। কিন্তু ১৫-১৬ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থেকে বলব, একটা অতৃপ্তি থেকেই গেছে। এত কিছু করলাম, তার কতটুকু টেকসই হলো? অ্যাডোলেসেন্ট কর্নারের কথা বলা হয়েছে, এটা স্বাস্থ্য বিভাগের অপারেশন প্ল্যানে চলে গেছে। সেখানে কিশোর বয়সীরা তাদের প্রজননস্বাস্থ্য সম্পর্কে জানার সুযোগ পাবে। সরকারের সেবার গুণমান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কিন্তু তারপরেও তো কিছু একটা পাবে। কিশোর-কিশোরীরা অন্তত একটা জায়গায় যেতে পারবে। এখনকার যে স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রকল্পগুলো হচ্ছে, সেগুলো একেবারেই আলাদা। যেভাবে ওনাদের সঙ্গে দাতাগোষ্ঠী কাজ করেছে, সরকারের কাজটাকে যে জায়গায় নিয়ে আসা হয়েছিল, সেটি এখন আর খুঁজে পাচ্ছি না। আমি একপ্রকার হতাশ। এখনো অনেক কাজ করতে হবে। বাংলাদেশে অনেক ভালো নীতি তৈরি হয়। কিন্তু আমাদের নীতিগুলোতে আন্তসম্পর্ক থাকে না। আমরা যেসব আন্তর্জাতিক কনভেনশনে স্বাক্ষর করি, স্থানীয় নীতির সঙ্গে তার একটা দূরত্ব থেকে যায়। আমরা যে কনভেনশনে স্বাক্ষর করলাম, সেটার আঙ্গিকেই তো স্থানীয় নীতি নির্ধারিত হবে। কিন্তু ওই জায়গায় আমরা যেতে পারছি না। গৃহীত নীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে অনেক সমস্যা। নীতি, অ্যাকশন প্ল্যান তৈরিসহ সবকিছু শেষ করলাম। তখন সরকার পরিবর্তন হয়ে গেল। গৃহীত নীতিগুলো বাস্তবায়ন করা গেলেও কিন্তু অনেক দূর এগোনো যায়। ২০২৪ সালের পরে বাংলাদেশে একটা পরিবর্তিত প্রেক্ষাপট দেখতে পাচ্ছি।
নীতিনির্ধারণে তরুণদের কণ্ঠ শুনতে হবে
তারুণ্যের ক্ষমতায়ন কীভাবে হবে, যদি তরুণদের কণ্ঠই শোনা না যায়? আমরা প্রায়ই দেখি, পরিবার পরিকল্পনা কিংবা স্বাস্থ্যনীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে তরুণদের অংশগ্রহণকে অগ্রাহ্য করা হয়। প্রায়ই দেখা যায়, জ্যেষ্ঠ নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, তারুণ্যের ব্যাপারে তাঁরাই ভালো বোঝেন। তাঁরা নিজেদের সময়ের অভিজ্ঞতা দিয়ে আজকের তরুণদের বাস্তবতা মেপে ফেলেন। তাঁদের বুঝতে হবে, সময় পাল্টে গেছে। এখনকার প্রজন্ম সম্পূর্ণ আলাদাভাবে বড় হচ্ছে। তাদের সমাজভাবনা, প্রযুক্তির সঙ্গে যোগাযোগ—সবকিছুই আলাদা। আমাদের মত যদি শোনা না হয়, তাহলে তো সমস্যা। আমি মনে করি, যেসব নীতি আমাদের জীবনের ওপর প্রভাব ফেলবে, সেসব নীতিতে আমাদের অন্তর্ভুক্তি বাধ্যতামূলক করা উচিত। সব নীতি নির্ধারণের জায়গায় তারুণ্যের অংশগ্রহণ রাখতে হবে। শুধু অংশগ্রহণের জন্য অংশগ্রহণ নয়, নীতি নির্ধারণে তাদের গুরুত্ব দিতে হবে। শুধু শহর নয়, তৃণমূল পর্যায় থেকেও তরুণদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তরুণদের বাস্তবতা, বয়স ও প্রেক্ষাপট বুঝে বন্ধুত্বপূর্ণ ও নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে।
অবহেলিত জনগোষ্ঠীর জন্য নেই টেকসই সমাধান
আমরা ২০ থেকে ২৫ বছর ধরে যৌনকর্মী ও মাদকসেবীদের নিয়ে কাজ করেছি। দুই জায়গায় দুই ধরনের চ্যালেঞ্জ। যৌনকর্মীরা খুব অল্প বয়সে পেশায় প্রবেশ করেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অনিচ্ছায়। বিভিন্ন সামাজিক কারণে তাঁরা স্বাস্থ্যসেবা থেকে অনেক দূরে থাকেন। যেমন একসময় তাঁরা স্যান্ডেল পর্যন্ত পরতে পারতেন না। সামাজিক ট্যাবু ছিল, তাঁরা স্যান্ডেল পরতে পারবেন না। এটার পরিবর্তন হয়েছে। নিজেদের কাজের ধরন কেমন হবে, এটা তাঁরাও নির্ধারণ করতে পারেন না। কারণ, গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী তাঁদের সেবা দিতে হয়। অনেক গ্রাহক কনডম ব্যবহার করতে চান না। যদি বলি, যৌনকর্ম একটা পেশা; তাহলে সেই পেশায় তাঁদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা, নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষমতা বাংলাদেশে তৈরি হয়নি। মাদকসেবীদের কথা বললে রাষ্ট্র এটাকে অপরাধ হিসেবে দেখে। মাদকের সঙ্গে জড়িতরা এ থেকে নিরাময়ের ক্ষেত্রে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক জরিপে দেখা গেছে, দেশে প্রায় এক কোটি মাদকসেবী আছে। এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে আমরা আসলে কোনো পরিকল্পনার মধ্যে রেখেছি বলে মনে হয় না। রাষ্ট্র কোনো সিদ্ধান্তে না এলে এটা অর্থনৈতিক বা সামাজিকভাবে একটা ভয়ংকর দুর্যোগ তৈরি করবে।
প্রকল্প নয়, চাই টেকসই রাজনৈতিক অঙ্গীকার
বাংলাদেশে বেশির ভাগ কাজই হয় প্রকল্পভিত্তিক। প্রকল্প শেষ তো কাজও শেষ। তরুণ জনগোষ্ঠীকে ‘পাওয়ার অব দ্য গ্লোব’ বলা যেতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো, এই শক্তিটা কীভাবে ব্যবহার করা হবে। এ রকম একটা শক্তি যদি খারাপ দিকে যায়, তা সবকিছু ধ্বংস করে দিতে পারে। আর ভালো দিকটা যদি ব্যবহার করা হয়, তাহলে এটা নতুন একটি পৃথিবী গড়তে পারে। আমাদের দেশে ৭৭ শতাংশ নারীই সন্তানধারণের ক্ষেত্রে নিজেরা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। প্রতি তিনজনে একজন মা অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের শিকার হচ্ছেন। এত বছর যে হাজার হাজার কোটি টাকা আমরা বিনিয়োগ করলাম, তার টেকসই প্রভাব কোথায়? সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার না থাকলে এই বিষয়ে অগ্রগতি সম্ভব নয়। কারণ, এনজিওগুলো একা এটা পারবে না। কারণ, তারা কেবল তহবিল পেলেই কাজ করতে পারে, অন্যথায় নয়। ‘রিটার্ন অব ইনভেস্টমেন্ট’ (বিনিয়োগের ফলাফল)-এর বিষয়টিও আমাদের দেখতে হবে। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এসআরএইচআরের (যৌন, প্রজননস্বাস্থ্য ও অধিকার) পেছনে যে বিনিয়োগ করা হয়েছে, তার কি ফল আমরা পেয়েছি? নাকি এটা ওয়েস্টেজ (অপব্যয়)? এক ডলার খরচ করে যদি আমরা দেখি, হাফ ডলারও আসেনি, তাহলে এটা অপব্যয়। এক ডলার খরচ করে যদি শিক্ষা, জ্ঞান, স্বাস্থ্য বা প্রজননস্বাস্থ্যের মাধ্যমে দেড় ডলারও ফিরে আসে, তাহলে বলব, এটা একটা ভালো ইঙ্গিত।
ক্ষমতায়নে বাদ না পড়ুক কেউই কখনো
সার্বিকভাবে তারুণ্যের ক্ষমতা তখনই কাজে আসবে, যখন সব ধরনের তরুণকে কাজে লাগানো হবে। আমি বলতে চাচ্ছি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন তরুণ-তরুণীদের কথা। তাঁদের সমাজের মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আমরা যখন মাঠপর্যায়ে কাজ করতে যাই, তখন দেখি, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন তরুণ-তরুণীরা স্বাস্থ্যসেবা থেকে উপেক্ষিত থাকেন। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারেন না। এটা শুধু উন্নয়নগত চ্যালেঞ্জ নয়, মানবাধিকার লঙ্ঘনও বটে। সে কারণে আহ্বান থাকবে, আমরা যেন সব প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবায় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন তরুণ-তরুণীদের শারীরিক প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে পারি। আর কেউ যেন তাঁর লৈঙ্গিক কিংবা সামাজিক পরিচয়ের কারণে পিছিয়ে না পড়েন।
তরুণদের অংশগ্রহণ ছাড়া পরিবর্তন সম্ভব নয়
সহিংসতা, বাল্যবিবাহ, কম বয়সে গর্ভধারণ—এগুলো একটি আরেকটির সঙ্গে যুক্ত। এর পেছনে অনেক ফ্যাক্টর কাজ করে। এটাকে পরিবর্তন করতে চাইলে তরুণদের ক্ষমতায়নের কোনো বিকল্প নেই। তবে শুধু তরুণদের ক্ষমতায়ন এককভাবে এর পরিবর্তন করতে পারবে না। এর সঙ্গে আরও নানা বিষয় যুক্ত আছে। সেগুলোকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হবে। ২০ বছর আগের চিত্রের সঙ্গে এখনকার চিত্রের অনেক পার্থক্য। আগে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে তরুণেরা ছিলেন না, কিন্তু এখন আছেন। প্রশ্ন হলো, তাঁরা কি নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে যেতে পারছেন? তরুণদেরও তথ্য দিয়ে তৈরি করতে হবে। তাঁরা যখন প্রতিনিধিত্ব করবেন, তখন সিদ্ধান্ত দেওয়ার বিষয়টা আরও অনেক শক্তিশালী হবে।
তরুণদের জনস্বাস্থ্যসেবায় প্রবেশাধিকার জরুরি
বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালন প্রথম শুরু হয় ১৯৮৯ সালে, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি বা ইউএনডিপির উদ্যোগে। এর পর থেকে দিবসটি পালনে সমন্বয় করে আসছে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল। এর লক্ষ্য হলো, জনসংখ্যা-সম্পর্কিত বিষয়সমূহ এবং উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, মানবাধিকার সম্পর্কে বৈশ্বিক সচেতনতা বাড়ানো। বর্তমানে বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকের বয়স ত্রিশের নিচে। বাংলাদেশে ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সীদের সংখ্যা জনসংখ্যার ২৮ শতাংশ। এই জনমিতির সুবিধা নেওয়ার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বর্তমান তরুণ প্রজন্মের পরিবার পরিকল্পনা ও জনস্বাস্থ্যসেবায় প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
অচলায়তন ভাঙতে হবে
তরুণদের ক্ষমতায়ন ছাড়া সুষ্ঠু পরিবার গঠন করা সম্ভব নয়। জাতীয় সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, আমাদের দেশে ৬৪ শতাংশ কিশোরী জীবনে প্রথম মাসিক হওয়ার আগে এ সম্পর্কে জানতই না। ৫০ শতাংশ কিশোরী এখনো মাসিকের সময় নোংরা কাপড় ব্যবহার করে। আবার মাসিক স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে কথা বলার চেয়ে যৌনস্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলা আরও কঠিন। এই অচলায়তন চলতে দেওয়া যায় না। এটি ভাঙতে না পারাটা আমাদের জন্য লজ্জার। তরুণদের আমি চেঞ্জমেকার হিসেবে দেখি। তাদের ক্ষমতায়ন করা জরুরি। আচরণগত পরিবর্তন আসতে হবে। শুধু জ্ঞানই সবকিছু নয়।
সেবাকেন্দ্র তরুণদের প্রয়োজন অনুযায়ী প্রস্তুত হোক
আমরা অনেক সামাজিক ট্যাবু, লজ্জা ভাঙতে পারছি না। এটা নতুন প্রজন্মের জীবনযাপনে প্রভাব ফেলছে। অ্যাডোলেসেন্ট কর্নারের কথা আমরা বলছি, কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় এটা সীমিত। এই যে এত গার্মেন্টস শ্রমিক রয়েছে বা স্কুল-কলেজে যারা পড়ছে, তারা কি ওই সময়টায় সেবাকেন্দ্রে সেবা নিতে যেতে পারে? যখন তারা সময় পায়, তখন সেবাকেন্দ্রই বন্ধ থাকে। আমাদের সেবাকেন্দ্রগুলো তরুণদের সেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত কি না, সেটা দেখতে হবে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। হতাশ হলে চলবে না। অনেক দূর যেতে হবে। সেই প্রত্যয় ও চেষ্টাটা থাকা দরকার।
জনগণের কাছে পৌঁছাতে হবে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম
দেশের একজন নাগরিক হিসেবে চাই, আমাদের ছেলেমেয়েরা সব রকমের সাহায্য-সহযোগিতা ও সমর্থন পাক। যৌন, প্রজননস্বাস্থ্য এবং অধিকার সম্পর্কে যেন তারা সঠিকভাবে জানতে পারে। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে অনেক কিছুই হয়, কিন্তু সেটা কতটা তৃণমূল পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে, সেটা দেখা দরকার। সিডব্লিউএফডির একটি কর্মসূচি থেকে আমরা স্যানিটারি ন্যাপকিন দিয়ে থাকি। এটা আমরা শুধু কিশোরীদের নয়, তাদের মায়েদেরও দিয়ে থাকি। স্কুলের টয়লেট সংস্কার করে দিচ্ছি। কিন্তু এগুলো সবই পাইলটিং বা পরীক্ষামূলক। কয়েকটি এলাকার মুষ্টিমেয় কিছু মেয়ে এগুলো সম্পর্কে জানছে। তাদের মাধ্যমে হয়তো অন্যরা জানছে। কিন্তু সরকারের মাধ্যমে হলে আরও অনেকের কাছে এ সেবা পৌঁছে দেওয়া যেত।
স্পর্শকাতর অংশ সম্পর্কে শিশু বয়স থেকেই জানাতে হবে
আমরা তরুণদের ক্ষমতায়নের কথা বলছি। তাদের ক্ষমতায়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য তথ্য একটা বড় শক্তি। তরুণদের ওপর নানা ক্ষেত্রে নানা মাত্রায় লৈঙ্গিকভিত্তিক সহিংসতা হচ্ছে। তরুণদের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য না থাকা এর অন্যতম কারণ। বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা প্রলোভন কিংবা ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে সহিংসতা চালানো হচ্ছে। কর্মক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার করা হয়। রাস্তাঘাটেও সহিংসতা হচ্ছে। সহিংসতা কমাতে হলে তরুণ প্রজন্মের কাছে সঠিক তথ্য দিতে হবে। এটাকে আমরা কীভাবে মোকাবিলা করব, সেটা ভাবতে হবে। শিশু-কিশোরদের শুরু থেকে খারাপ স্পর্শ, ভালো স্পর্শ নিয়ে শিক্ষা দিতে হবে। শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর অংশ সম্পর্কে শিশু বয়স থেকেই জানাতে হবে।
এসডিজি অর্জন করতে পারব বলে মনে হয় না
বিশ্বে বর্তমানে জনসংখ্যা ৮১০ কোটি। তার মধ্যে তরুণদের সংখ্যা ১৮০ কোটি। তার অর্থ, এরা একটা বিশাল জনগোষ্ঠী। এই তরুণদের বেশির ভাগ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বাস করে। বিবাহবহির্ভূত যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে কন্ট্রাসেপটিভ প্রিভ্যালেন্স রেট (সিপিআর) এ দেশে খুবই কম। এ কারণে অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণ অনেক বেশি। এ কারণে এইচআইভিতেও আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে। মেয়েরা অনেক এগিয়েছে, কিন্তু বাল্যবিবাহের হার এখনো অনেক বেশি। অর্ধেক মেয়েরই ১৫ বছরের আগে বিয়ে হচ্ছে। সামাজিক কারণে এটা হচ্ছে। আমাদের মাতৃমৃত্যুর হার অনেক কমেছে। কিন্তু আমরা কি ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জন করতে পারব? আমার মনে হয়, পারব না।
তরুণেরা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা পান না
আমরা প্রায়ই বলি, ইয়ুথ এমপাওয়ারমেন্ট বা মিনিংফুল ইয়ুথ পার্টিসিপেশন। আজকাল প্রায় প্রতিটি এনজিওতে কিছু না কিছু তরুণ স্বেচ্ছাসেবকের গ্রুপ বা তরুণদের ফোরাম থাকে। তরুণেরা কি সত্যি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার প্রক্রিয়ার অংশ হচ্ছেন, নাকি তাঁদেরকে নামেমাত্র যুক্ত করা হচ্ছে? অনেক সময় অংশগ্রহণটা মনে হয় নেহাতই নামসর্বস্ব। তরুণেরা অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেলেও সব সময় তাঁরা কথা বলার সুযোগ পান না কিংবা কথা বলার সুযোগ পেলেও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাটা পান না। এখন তরুণদের ফোরামগুলোতে সিদ্ধান্ত নেন সিনিয়ররা। তরুণদের কাজ শুধু সহযোগিতা বা প্রতিনিধিত্ব করাতে আটকে থাকে।
তরুণ প্রজন্ম একটি বড় ধরনের নিয়ন্ত্রক শক্তি
আমাদের জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ তরুণ; যা জনসংখ্যার প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি। অবশ্য বয়সের দিক থেকে বিবেচনা করলে বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে তরুণের সংজ্ঞা ভিন্ন। কোথাও ২৫ বছর, কোথাও বা ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত তরুণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই পার্থক্যটাও আমাদের মাথায় রাখতে হবে। তরুণ প্রজন্ম একটি বড় ধরনের নিয়ন্ত্রক শক্তি বলে মনে করি। তারা সমাজ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সমাজের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে পারে। আবার এই শক্তিটাকে আমরা যদি সুপথে না রাখতে পারি, যদি সঠিক পরামর্শ দিতে না পারি, তাহলে তাদের মিসলিড (ভুল দিকে চালিত) হওয়ার আশঙ্কাও থেকে যায়।
প্রশ্ন করতে শেখা তরুণ নেতৃত্বের ভিত্তি
প্রশ্ন করতে শেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তরুণ সম্প্রদায় প্রশ্ন করতে শিখলে আগামীতে তাঁদের সমস্যার খানিকটা সমাধান তাঁরাই করতে পারবেন। তরুণেরাই নেতৃত্ব দেবেন। তাহলে আমরা কেমন নেতৃত্ব তৈরি করব? এই সমাজ, এই রাষ্ট্র থেকে বের হয়ে আজকের তরুণেরাই তো নেতৃত্বে যাবেন। তাঁদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য পাওয়ার অধিকার—এ সবকিছুই শুধু প্রকল্পভিত্তিক হলে তা টেকসই হবে কি না, এই শঙ্কা থেকে যায়। সামাজিক প্রেক্ষাপটকে বিবেচনা করে পরিবর্তনগুলো আনতে হবে। সামগ্রিকভাবে সমাজে যদি পরিবর্তন না আসে, তাহলে পরিবর্তন সম্ভব নয়। এই সমাজ মানে শুধু ঢাকা নয়; এটা অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে হবে। যেমন প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। তাদের স্বাস্থ্য, খাদ্য—সবকিছুই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
কথা বোঝানোর দক্ষতা শেখানোয় জোর দিতে হবে
আমরা অনেক উদ্যোগ নিই। কিন্তু সেগুলো সঠিকভাবে হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা উচিত। যেমন বাল্যবিবাহ বা কম বয়সে গর্ভধারণ রোধে আমরা কিশোরীদের সঙ্গে কাজ করি। এতে মনে হয়, বাল্যবিবাহ বা কম বয়সে গর্ভধারণ রোধের দায়িত্ব শুধু কিশোরীদের। আমরা যখন এ সম্পর্কে কিশোরীদের পড়াশোনা করাচ্ছি, তখন তাদের কেবল জ্ঞানটুকুই দিচ্ছি। তাকে কেবল এ সম্পর্কে পড়ানোই হয়। কিন্তু ওই মেয়েটাকে এটা শেখানো হয় না যে কীভাবে মা-বাবাকে বাল্যবিবাহ বন্ধের বিষয়ে বোঝাতে হবে। এ কারণে তারা প্রায় কখনোই মা-বাবাকে সেভাবে বোঝাতে পারে না। তাদের অন্যকে কথা বোঝানোর দক্ষতা শেখানোয় জোর দিতে হবে।
অধিকাংশ নারী নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না
একটা মেয়ের ১৮ বছর বয়স হওয়ার পর সে পরিণত হয়। কিন্তু আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপট অনুযায়ী, একটা মেয়ের পিরিয়ড শুরু হওয়া মানেই সে পরিণত হয়ে গেছে, তাকে বিয়ে দেওয়া যায়। পিরিয়ডের কারণে অনেকের স্কুলে যাওয়ায় ছেদ পড়ছে, বাল্যবিবাহ হচ্ছে। এখনো অধিকাংশ নারী নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না যে তিনি সন্তান নেবেন কি না। তাই এখনো অসংখ্য প্রসবকালীন মাতৃমৃত্যু ঘটছে। এসআরএইচআর আমার একটা অধিকার। এই অধিকার প্রতিনিয়ত হরণ করে নেওয়া হচ্ছে। প্রত্যেক তরুণের মনে এই ধারণাটা রাখতে হবে, আমার পরিবার আমার পছন্দে। আমি যদি আমার পছন্দে পরিবার গড়তে পারি, তাহলে আমার জীবন পরিবর্তন করতে পারব।
যাঁরা অংশ নিয়েছিলেন
সঞ্চালক
ড. নূর মোহাম্মদ
নির্বাহী পরিচালক, পপুলেশন সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (পিএসটিসি)
আলোচক
আবু হাসানাত মোহাম্মদ কিশোয়ার হোসেন
অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
মাশফিকা জামান সাটিয়ার
সিনিয়র পলিসি অ্যাডভাইজার, জেন্ডার অ্যান্ড সিভিল সোসাইটি, নেদারল্যান্ডস দূতাবাস, ঢাকা
সাবিক রহমান
সদস্যসচিব, ন্যাশনাল ইয়ুথ নেটওয়ার্ক
ড. মো. গোলাম রহমান
সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
ডা. মো. শহিদুল ইসলাম
সিনিয়র ম্যানেজার, এইচআইভি প্রোগ্রাম, সেভ দ্য চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনাল
ডা. কাজী গোলাম রাসুল
সিনিয়র ডিরেক্টর অ্যান্ড হেড অব হেলথ, ফ্রেন্ডশিপ
সুহাস মাহমুদ
প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর, পিএসটিসি
ডা. ইখতিয়ার উদ্দিন খন্দকার
প্রেসিডেন্ট, নেয়ার্স (এনইএআরএস)
ডা. মো. মাহবুবুল আলম
হেড অব প্রোগ্রামস, পিএসটিসি
অলক কুমার মজুমদার
পরিচালক, প্রোগ্রাম অ্যান্ড অপারেশনস, রেডঅরেঞ্জ কমিউনিকেশনস
অনিতা শরীফ চৌধুরী
টিম লিডার, ফোকাস প্রজেক্ট, পিএসটিসি
ড. লাডলি ফায়্জ
নির্বাহী পরিচালক, সিডব্লিউএফডি
কানিজ গোফরানী কোরায়শী
প্রকল্প ব্যবস্থাপক, পিএসটিসি
ডা. নাফিসা লিরা হক
অ্যাডজাংক্ট ফ্যাকাল্টি, জেপিজিএসএইচ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
এ. কিউ. শুদ্ধ হক
প্রোগ্রাম অফিসার, পিএসটিসি
মো. মুস্তাফিজুর রহমান
প্রধান প্রতিবেদক, নিউ এইজ
মো. মশিউর রহমান
জেনারেল ম্যানেজার, ফিল্ড ইমপ্লিমেন্টেশন, সোশ্যাল মার্কেটিং কোম্পানি (এসএমসি)
ফারজানা আক্তার রিমু
পিয়ার এডুকেটর, গোল প্রজেক্ট
উচ্চশিক্ষার প্রসারে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে দেশে ১০৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখছে। ২৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বনশ্রীতে আজকের পত্রিকার
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫আগামীর পৃথিবী গড়তে তরুণদের ক্ষমতায়ন জরুরি। নীতিনির্ধারণী ক্ষেত্রে তাঁদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। বিশেষ করে ন্যায্য ও সম্ভাবনায় বিশ্বে নিজেদের পরিবার গঠনের ক্ষেত্রে তারুণ্যকে ক্ষমতায়ন করতে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। সম্পর্ক, পরিবার গঠন, পিতামাতার ভূমিকা গ্রহণ বিষয়ে সচেতন...
০৯ জুলাই ২০২৫মাসিক বা পিরিয়ড নারীজীবনের খুব স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। তবে আমাদের দেশে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে অনেকে অস্বস্তিতে পড়েন। মাসিকের ব্যবস্থাপনা সঠিক না হলে মাতৃত্ব ঝুঁকিপূর্ণ হয়। প্রতিবছরের ২৮ মে বিশ্বব্যাপী মাসিক স্বাস্থ্যবিধি দিবস পালন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে ২৫ মে আজকের পত্রিকা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত
২৮ মে ২০২৫নারীর মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও সুরক্ষা নিয়ে জনসমক্ষে আলোচনা ও সচেতনতা জরুরি। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্কার ভেঙে বিষয়টিকে নারী ও পুরুষ সবার কাছে সহজ ও স্বাভাবিক করে তুলতে সবাইকে কাজ করতে হবে। স্যানিটারি প্যাডের সহজলভ্যতা, তা ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকা এবং ব্যবহারের পরে পরিবেশসম্মতভাবে ফেলে দেওয়ার দিক
২৫ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আগামীর পৃথিবী গড়তে তরুণদের ক্ষমতায়ন জরুরি। নীতিনির্ধারণী ক্ষেত্রে তাঁদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। বিশেষ করে ন্যায্য ও সম্ভাবনায় বিশ্বে নিজেদের পরিবার গঠনের ক্ষেত্রে তারুণ্যকে ক্ষমতায়ন করতে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। সম্পর্ক, পরিবার গঠন, পিতামাতার ভূমিকা গ্রহণ বিষয়ে সচেতন এবং তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতা, লৈঙ্গিক সমতা এবং স্বাস্থ্যসেবায় তাঁদের প্রবেশাধিকারে গুরুত্ব দেওয়া দরকার।
‘ন্যায্য ও সম্ভাবনাময় বিশ্বে পছন্দের পরিবার গড়তে প্রয়োজন তারুণ্যের ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এমন কথা বলেছেন আলোচকেরা। বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস ২০২৫ উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর বনশ্রীতে ‘আজকের পত্রিকা’ কার্যালয়ে এর আয়োজন করা হয়। জনসংখ্যা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পপুলেশন সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (পিএসটিসি), প্রজননস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল প্ল্যানড প্যারেন্টহুড ফেডারেশন (আইপিপিএফ), দৈনিক আজকের পত্রিকা এবং দৈনিক নিউ এজ এই আয়োজন করে।
পিএসটিসির নির্বাহী পরিচালক ড. নূর মোহাম্মদের সঞ্চালনায় আয়োজনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন পিএসটিসির হেড অব প্রোগ্রামস ডা. মো. মাহবুবুল আলম। তিনি বলেন, বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালনে সমন্বয় করে আসছে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল। বাংলাদেশে ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সীদের সংখ্যা এখন দেশের মোট জনসংখ্যার ২৮ শতাংশ। তবে এই জনমিতির সুবিধা নেওয়ার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও পরিবার পরিকল্পনা ও জনস্বাস্থ্যসেবায় প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে বর্তমান তরুণ প্রজন্মের উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
ড. নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘তরুণ জনগোষ্ঠী আমাদের দেশে এক-তৃতীয়াংশ। এর মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে, তরুণ জনগোষ্ঠীর গুরুত্ব কত। যে দেশে তরুণ জনগোষ্ঠী এত বিশাল অংশ, তাদের বাদ দিয়ে কোনো ধরনের পরিকল্পনা বা নীতি নিয়ে আমরা এগোতে পারব বলে মনে করি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান আবু হাসানাত মো. কিশোয়ার হোসেন বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কিশোরীদের প্রজননস্বাস্থ্যের জন্য একটা ভয়াবহ বিপদের কারণ। তরুণদেরকেই আমরা শুধু বিবেচনায় রাখব, কিন্তু পরিবারের যাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, সেই বড়দের যদি বিবেচনায় না রাখি, তাহলে যতই তরুণদের ক্ষমতায়ন করি না কেন, ক্ষমতায়ন হবে না।’
ঢাকায় নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের সিনিয়র পলিসি অ্যাডভাইজার (জেন্ডার অ্যান্ড সিভিল সোসাইটি) মাশফিকা জামান সাটিয়ার বলেন, ‘নীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে অনেক সমস্যা। নীতি যেগুলো নেওয়া হয়েছে, সেগুলো যদি বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলেও কিন্তু অনেক দূর আগানো যায়।’
ফ্রেন্ডশিপের সিনিয়র পরিচালক ও হেড অব হেলথ ডা. কাজী গোলাম রাসুল বলেন, ‘তরুণ জনগোষ্ঠীকে পাওয়ার অব দ্য গ্লোব বলা যেতে পারে। এই শক্তিটা কীভাবে ব্যবহার করা হবে? এটার ভালো দিক ব্যবহার হবে, নাকি খারাপ দিক? একটা শক্তি যদি খারাপ দিকে যায়, এটা সবকিছু ধ্বংস করে দিতে পারে। আর এটার ভালো দিকটা যদি ব্যবহার করা হয়, তাহলে এটা নতুন একটি পৃথিবী গড়তে পারে।’
ন্যাশনাল ইয়ুথ নেটওয়ার্কের সদস্যসচিব সাবিক রহমান বলেন, ‘তারুণ্যের ক্ষমতায়ন কীভাবে হবে, যদি তরুণদের কণ্ঠই শোনা না যায়। আমরা প্রায়ই দেখি, পরিবার পরিকল্পনা কিংবা স্বাস্থ্যনীতি—এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তরুণদের অংশগ্রহণকে অনেক সময় অগ্রাহ্য করা হয়।’
সেভ দ্য চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনালের সিনিয়র ম্যানেজার (এইচআইভি প্রোগ্রাম) ডা. মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ২০-২৫ বছর ধরে যৌনকর্মী ও মাদকসেবীদের নিয়ে কাজ করেছি। দুই জায়গায় দুই ধরনের চ্যালেঞ্জ। যৌনকর্মীরা খুব অল্প বয়সে, অনিচ্ছায় যৌনজীবনে প্রবেশ করে। সামাজিক বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে তারা স্বাস্থ্যসেবা থেকে অনেক দূরে থাকে। মাদকের সঙ্গে যারা জড়িত, তারা এর নিরাময়ের ক্ষেত্রে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত।’
আজকের পত্রিকার সম্পাদক ড. মো. গোলাম রহমান বলেন, ‘তরুণ প্রজন্ম একটি বড় ধরনের নিয়ন্ত্রণশক্তি। এই শক্তিটাকে আমরা যদি সুপথে না রাখতে পারি, আমরা যদি সঠিকভাবে পরামর্শ দিতে না পারি, তাহলে তাদের মিসলিড (ভুল দিকে চালিত) হওয়ার সুযোগ থেকে যায়।’
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জেপিজিএসএইচের অ্যাডজাংক্ট ফ্যাকাল্টি ডা. নাফিসা লিরা হক বলেন, ‘বিবাহবহির্ভূত যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে গর্ভনিরোধক প্রিভালেন্স রেট (সিপিআর) খুবই কম। যার কারণে অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণ আমাদের দেশে অনেক বেশি। এ কারণে এইচআইভিতে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে।’
নেয়ার্সের (এনইএআরএস) প্রেসিডেন্ট ডা. ইখতিয়ার উদ্দিন খন্দকার বলেন, ‘২০ বছর আগের চিত্রের সঙ্গে এখনকার চিত্রের অনেক পার্থক্য। বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে তরুণেরা ছিল না, কিন্তু এখন আছে। প্রশ্ন হলো, তারা কি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে যেতে পারছে? তাদেরও তথ্য দিয়ে তৈরি করতে হবে।’
পিএসটিসির প্রকল্প ব্যবস্থাপক কানিজ গোফরানী কোরায়শী বলেন, ‘লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা নানাভাবে হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে তরুণদের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য না থাকার কারণে। সহিংসতা কমাতে হলে তরুণ প্রজন্মের কাছে সঠিক তথ্য দিতে হবে।’
পিএসটিসির প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সুহাস মাহমুদ বলেন, ‘সার্বিকভাবে তারুণ্যের ক্ষমতা তখনই আসবে, যখন সব ধরনের তরুণ; বিশেষ করে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন তরুণ-তরুণীদের আমরা যদি মেইনস্ট্রিমে অন্তর্ভুক্ত করতে পারি।’
নিউ এজের প্রধান প্রতিবেদক মো. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘প্রশ্ন করতে শেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যখন তরুণ সম্প্রদায় প্রশ্ন করতে শিখবে, তাদের সমস্যা খানিকটা তারাই সমাধানের দিকে নিয়ে যেতে পারবে।’
পিএসটিসির প্রোগ্রাম অফিসার এ কিউ শুদ্ধ হক বলেন, ‘আজকাল প্রায় প্রতিটি এনজিও আইএনজিওতে কিছু না কিছু তরুণ স্বেচ্ছাসেবকের গ্রুপ বা তরুণদের ফোরাম থাকে। কিন্তু এই অংশগ্রহণ তরুণদের জন্য কতটা অর্থপূর্ণ? তরুণেরা কি সত্যিই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার প্রক্রিয়ার অংশ হচ্ছে, নাকি তাদেরকে নামেমাত্র যুক্ত করা হচ্ছে?’
পিএসটিসির ফোকাস প্রজেক্টের টিম লিডার অনিতা শরীফ চৌধুরী বলেন, ‘সমাজে আমাদের কিছু ভঙ্গুর মানুষ আছে। তাদের কথা আরেকটু বেশি করে চিন্তা করতে হবে। অন্যভাবে ভাবতে হবে। তাদেরও ক্ষমতায়নের প্রয়োজন আছে।’
সিডব্লিউএফডির নির্বাহী পরিচালক ড. লাডলি ফায়্জ বলেন, ‘১৯৯০ সালের দিকে যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্যের বিষয়গুলো ভেঙে বলার মতো পরিবেশ ছিল না। আমি চাই, আমাদের ছেলেমেয়েরা সব রকমের সহযোগিতা-সমর্থন পাক। যৌন, প্রজননস্বাস্থ্য এবং অধিকার সম্পর্কেও যেন তারা সঠিকভাবে জানতে পারে।’
সোশ্যাল মার্কেটিং কোম্পানির (এসএমসি) ফিল্ড ইমপ্লিমেন্টেশনের জেনারেল ম্যানেজার মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘কিশোরী মেয়েদের বাল্যবিবাহ সম্পর্কে পড়ানো হয়। কিন্তু ওই মেয়েটাকে এটা শেখানো হয় না যে কীভাবে বাবা-মাকে বাল্যবিবাহ বন্ধের বিষয়ে বোঝাতে হবে।’
গোল প্রজেক্টের পিয়ার এডুকেটর ফারজানা আক্তার রিমু বলেন, ‘আমরা প্রতিবছর জাঁকজমকভাবে মিনিস্ট্রিয়াল হাইজিন ডে পালন করলাম। মেয়েরা বাড়িতে গেল। পরের দিন পিরিয়ড হওয়ার পর তাদের মা আর স্কুলে আসতে দিল না। তাহলে এই উদ্যাপনের মানে কী রইল?’
রেডঅরেঞ্জ কমিউনিকেশনসের পরিচালক (প্রোগ্রাম অ্যান্ড অপারেশনস) অলক কুমার মজুমদার বলেন, ‘তরুণদের ক্ষমতায়ন ছাড়া সুস্থ পরিবার গঠন সম্ভব নয়। কিশোর-কিশোরীদের (অ্যাডলসেন্স) ক্ষেত্রে একটা নলেজ গ্যাপ ভীষণভাবে রয়ে গেছে। সরকারের জাতীয় জরিপে দেখেছি, ৬৪ শতাংশ মেয়ে মাসিক হওয়ার আগে জানতই না।’
আগামীর পৃথিবী গড়তে তরুণদের ক্ষমতায়ন জরুরি। নীতিনির্ধারণী ক্ষেত্রে তাঁদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। বিশেষ করে ন্যায্য ও সম্ভাবনায় বিশ্বে নিজেদের পরিবার গঠনের ক্ষেত্রে তারুণ্যকে ক্ষমতায়ন করতে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। সম্পর্ক, পরিবার গঠন, পিতামাতার ভূমিকা গ্রহণ বিষয়ে সচেতন এবং তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতা, লৈঙ্গিক সমতা এবং স্বাস্থ্যসেবায় তাঁদের প্রবেশাধিকারে গুরুত্ব দেওয়া দরকার।
‘ন্যায্য ও সম্ভাবনাময় বিশ্বে পছন্দের পরিবার গড়তে প্রয়োজন তারুণ্যের ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এমন কথা বলেছেন আলোচকেরা। বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস ২০২৫ উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর বনশ্রীতে ‘আজকের পত্রিকা’ কার্যালয়ে এর আয়োজন করা হয়। জনসংখ্যা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পপুলেশন সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (পিএসটিসি), প্রজননস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল প্ল্যানড প্যারেন্টহুড ফেডারেশন (আইপিপিএফ), দৈনিক আজকের পত্রিকা এবং দৈনিক নিউ এজ এই আয়োজন করে।
পিএসটিসির নির্বাহী পরিচালক ড. নূর মোহাম্মদের সঞ্চালনায় আয়োজনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন পিএসটিসির হেড অব প্রোগ্রামস ডা. মো. মাহবুবুল আলম। তিনি বলেন, বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালনে সমন্বয় করে আসছে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল। বাংলাদেশে ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সীদের সংখ্যা এখন দেশের মোট জনসংখ্যার ২৮ শতাংশ। তবে এই জনমিতির সুবিধা নেওয়ার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও পরিবার পরিকল্পনা ও জনস্বাস্থ্যসেবায় প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে বর্তমান তরুণ প্রজন্মের উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
ড. নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘তরুণ জনগোষ্ঠী আমাদের দেশে এক-তৃতীয়াংশ। এর মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে, তরুণ জনগোষ্ঠীর গুরুত্ব কত। যে দেশে তরুণ জনগোষ্ঠী এত বিশাল অংশ, তাদের বাদ দিয়ে কোনো ধরনের পরিকল্পনা বা নীতি নিয়ে আমরা এগোতে পারব বলে মনে করি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান আবু হাসানাত মো. কিশোয়ার হোসেন বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কিশোরীদের প্রজননস্বাস্থ্যের জন্য একটা ভয়াবহ বিপদের কারণ। তরুণদেরকেই আমরা শুধু বিবেচনায় রাখব, কিন্তু পরিবারের যাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, সেই বড়দের যদি বিবেচনায় না রাখি, তাহলে যতই তরুণদের ক্ষমতায়ন করি না কেন, ক্ষমতায়ন হবে না।’
ঢাকায় নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের সিনিয়র পলিসি অ্যাডভাইজার (জেন্ডার অ্যান্ড সিভিল সোসাইটি) মাশফিকা জামান সাটিয়ার বলেন, ‘নীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে অনেক সমস্যা। নীতি যেগুলো নেওয়া হয়েছে, সেগুলো যদি বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলেও কিন্তু অনেক দূর আগানো যায়।’
ফ্রেন্ডশিপের সিনিয়র পরিচালক ও হেড অব হেলথ ডা. কাজী গোলাম রাসুল বলেন, ‘তরুণ জনগোষ্ঠীকে পাওয়ার অব দ্য গ্লোব বলা যেতে পারে। এই শক্তিটা কীভাবে ব্যবহার করা হবে? এটার ভালো দিক ব্যবহার হবে, নাকি খারাপ দিক? একটা শক্তি যদি খারাপ দিকে যায়, এটা সবকিছু ধ্বংস করে দিতে পারে। আর এটার ভালো দিকটা যদি ব্যবহার করা হয়, তাহলে এটা নতুন একটি পৃথিবী গড়তে পারে।’
ন্যাশনাল ইয়ুথ নেটওয়ার্কের সদস্যসচিব সাবিক রহমান বলেন, ‘তারুণ্যের ক্ষমতায়ন কীভাবে হবে, যদি তরুণদের কণ্ঠই শোনা না যায়। আমরা প্রায়ই দেখি, পরিবার পরিকল্পনা কিংবা স্বাস্থ্যনীতি—এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তরুণদের অংশগ্রহণকে অনেক সময় অগ্রাহ্য করা হয়।’
সেভ দ্য চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনালের সিনিয়র ম্যানেজার (এইচআইভি প্রোগ্রাম) ডা. মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ২০-২৫ বছর ধরে যৌনকর্মী ও মাদকসেবীদের নিয়ে কাজ করেছি। দুই জায়গায় দুই ধরনের চ্যালেঞ্জ। যৌনকর্মীরা খুব অল্প বয়সে, অনিচ্ছায় যৌনজীবনে প্রবেশ করে। সামাজিক বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে তারা স্বাস্থ্যসেবা থেকে অনেক দূরে থাকে। মাদকের সঙ্গে যারা জড়িত, তারা এর নিরাময়ের ক্ষেত্রে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত।’
আজকের পত্রিকার সম্পাদক ড. মো. গোলাম রহমান বলেন, ‘তরুণ প্রজন্ম একটি বড় ধরনের নিয়ন্ত্রণশক্তি। এই শক্তিটাকে আমরা যদি সুপথে না রাখতে পারি, আমরা যদি সঠিকভাবে পরামর্শ দিতে না পারি, তাহলে তাদের মিসলিড (ভুল দিকে চালিত) হওয়ার সুযোগ থেকে যায়।’
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জেপিজিএসএইচের অ্যাডজাংক্ট ফ্যাকাল্টি ডা. নাফিসা লিরা হক বলেন, ‘বিবাহবহির্ভূত যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে গর্ভনিরোধক প্রিভালেন্স রেট (সিপিআর) খুবই কম। যার কারণে অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণ আমাদের দেশে অনেক বেশি। এ কারণে এইচআইভিতে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে।’
নেয়ার্সের (এনইএআরএস) প্রেসিডেন্ট ডা. ইখতিয়ার উদ্দিন খন্দকার বলেন, ‘২০ বছর আগের চিত্রের সঙ্গে এখনকার চিত্রের অনেক পার্থক্য। বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে তরুণেরা ছিল না, কিন্তু এখন আছে। প্রশ্ন হলো, তারা কি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে যেতে পারছে? তাদেরও তথ্য দিয়ে তৈরি করতে হবে।’
পিএসটিসির প্রকল্প ব্যবস্থাপক কানিজ গোফরানী কোরায়শী বলেন, ‘লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা নানাভাবে হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে তরুণদের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য না থাকার কারণে। সহিংসতা কমাতে হলে তরুণ প্রজন্মের কাছে সঠিক তথ্য দিতে হবে।’
পিএসটিসির প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সুহাস মাহমুদ বলেন, ‘সার্বিকভাবে তারুণ্যের ক্ষমতা তখনই আসবে, যখন সব ধরনের তরুণ; বিশেষ করে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন তরুণ-তরুণীদের আমরা যদি মেইনস্ট্রিমে অন্তর্ভুক্ত করতে পারি।’
নিউ এজের প্রধান প্রতিবেদক মো. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘প্রশ্ন করতে শেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যখন তরুণ সম্প্রদায় প্রশ্ন করতে শিখবে, তাদের সমস্যা খানিকটা তারাই সমাধানের দিকে নিয়ে যেতে পারবে।’
পিএসটিসির প্রোগ্রাম অফিসার এ কিউ শুদ্ধ হক বলেন, ‘আজকাল প্রায় প্রতিটি এনজিও আইএনজিওতে কিছু না কিছু তরুণ স্বেচ্ছাসেবকের গ্রুপ বা তরুণদের ফোরাম থাকে। কিন্তু এই অংশগ্রহণ তরুণদের জন্য কতটা অর্থপূর্ণ? তরুণেরা কি সত্যিই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার প্রক্রিয়ার অংশ হচ্ছে, নাকি তাদেরকে নামেমাত্র যুক্ত করা হচ্ছে?’
পিএসটিসির ফোকাস প্রজেক্টের টিম লিডার অনিতা শরীফ চৌধুরী বলেন, ‘সমাজে আমাদের কিছু ভঙ্গুর মানুষ আছে। তাদের কথা আরেকটু বেশি করে চিন্তা করতে হবে। অন্যভাবে ভাবতে হবে। তাদেরও ক্ষমতায়নের প্রয়োজন আছে।’
সিডব্লিউএফডির নির্বাহী পরিচালক ড. লাডলি ফায়্জ বলেন, ‘১৯৯০ সালের দিকে যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্যের বিষয়গুলো ভেঙে বলার মতো পরিবেশ ছিল না। আমি চাই, আমাদের ছেলেমেয়েরা সব রকমের সহযোগিতা-সমর্থন পাক। যৌন, প্রজননস্বাস্থ্য এবং অধিকার সম্পর্কেও যেন তারা সঠিকভাবে জানতে পারে।’
সোশ্যাল মার্কেটিং কোম্পানির (এসএমসি) ফিল্ড ইমপ্লিমেন্টেশনের জেনারেল ম্যানেজার মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘কিশোরী মেয়েদের বাল্যবিবাহ সম্পর্কে পড়ানো হয়। কিন্তু ওই মেয়েটাকে এটা শেখানো হয় না যে কীভাবে বাবা-মাকে বাল্যবিবাহ বন্ধের বিষয়ে বোঝাতে হবে।’
গোল প্রজেক্টের পিয়ার এডুকেটর ফারজানা আক্তার রিমু বলেন, ‘আমরা প্রতিবছর জাঁকজমকভাবে মিনিস্ট্রিয়াল হাইজিন ডে পালন করলাম। মেয়েরা বাড়িতে গেল। পরের দিন পিরিয়ড হওয়ার পর তাদের মা আর স্কুলে আসতে দিল না। তাহলে এই উদ্যাপনের মানে কী রইল?’
রেডঅরেঞ্জ কমিউনিকেশনসের পরিচালক (প্রোগ্রাম অ্যান্ড অপারেশনস) অলক কুমার মজুমদার বলেন, ‘তরুণদের ক্ষমতায়ন ছাড়া সুস্থ পরিবার গঠন সম্ভব নয়। কিশোর-কিশোরীদের (অ্যাডলসেন্স) ক্ষেত্রে একটা নলেজ গ্যাপ ভীষণভাবে রয়ে গেছে। সরকারের জাতীয় জরিপে দেখেছি, ৬৪ শতাংশ মেয়ে মাসিক হওয়ার আগে জানতই না।’
উচ্চশিক্ষার প্রসারে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে দেশে ১০৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখছে। ২৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বনশ্রীতে আজকের পত্রিকার
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫প্রতিবছরের ১১ জুলাই পালিত হয় বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস। দিবসটি উপলক্ষে ৮ জুলাই ঢাকায় আজকের পত্রিকা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় ‘ন্যায্য ও সম্ভাবনাময় বিশ্বে পছন্দের পরিবার গড়তে প্রয়োজন তারুণ্যের ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক। আয়োজনে জনসংখ্যা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পপুলেশন সার্ভিসেস...
১১ জুলাই ২০২৫মাসিক বা পিরিয়ড নারীজীবনের খুব স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। তবে আমাদের দেশে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে অনেকে অস্বস্তিতে পড়েন। মাসিকের ব্যবস্থাপনা সঠিক না হলে মাতৃত্ব ঝুঁকিপূর্ণ হয়। প্রতিবছরের ২৮ মে বিশ্বব্যাপী মাসিক স্বাস্থ্যবিধি দিবস পালন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে ২৫ মে আজকের পত্রিকা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত
২৮ মে ২০২৫নারীর মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও সুরক্ষা নিয়ে জনসমক্ষে আলোচনা ও সচেতনতা জরুরি। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্কার ভেঙে বিষয়টিকে নারী ও পুরুষ সবার কাছে সহজ ও স্বাভাবিক করে তুলতে সবাইকে কাজ করতে হবে। স্যানিটারি প্যাডের সহজলভ্যতা, তা ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকা এবং ব্যবহারের পরে পরিবেশসম্মতভাবে ফেলে দেওয়ার দিক
২৫ মে ২০২৫আজকের পত্রিকা ডেস্ক
মাসিক বা পিরিয়ড নারীজীবনের খুব স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। তবে আমাদের দেশে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে অনেকে অস্বস্তিতে পড়েন। মাসিকের ব্যবস্থাপনা সঠিক না হলে মাতৃত্ব ঝুঁকিপূর্ণ হয়। প্রতিবছরের ২৮ মে বিশ্বব্যাপী মাসিক স্বাস্থ্যবিধি দিবস পালন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে ২৫ মে আজকের পত্রিকা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় ‘মাসিকবান্ধব বিশ্বের জন্য একতা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক। আয়োজনে সহযোগী ছিল বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পপুলেশন সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (পিএসটিসি) এবং ইন্টারন্যাশনাল প্ল্যানড প্যারেন্টহুড ফেডারেশন (আইপিপিএফ)। লিখেছেন আজকের পত্রিকার প্রতিবেদক অর্চি হক।
মানুষকে বোঝাতে হবে, এটা নিষিদ্ধ বিষয় নয়
এই ইস্যুকে আমরা অনেক শব্দের মাধ্যমে চিহ্নিত করি। মাসিক হলো সবচেয়ে প্রচলিত শব্দ। প্রতি মাসে এটা আসে, তাই এটাকে মাসিক বলা হয়। অনেক ছেলে মাসিক কী, এটা নিয়ে কৌতুক করে, হাসাহাসি করে। ইংরেজিতে পিরিয়ড শব্দটি প্রচলিত। ‘মেন্সট্রুয়েশন’—এই লম্বা শব্দটি না বলে অনেকে মিনস বলে। শব্দচয়ন বা শব্দের ব্যবহার—এগুলোও অনেক কিছু নির্দেশ করে।
এই সভার মূল উপস্থাপনায় বলা হয়েছে, পুরুষ অথবা ছেলেদেরও মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার কাজে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। এটা নিয়ে ভাবা উচিত। তবে মাসিক বিষয়টা কি স্বাস্থ্যের নাকি জনস্বাস্থ্যের, এটা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
মাসিক নিয়ে আমরা যে কণ্ঠস্বর তৈরি করেছি, এটা ছড়িয়ে দিতে চাই। এটাই আমাদের এই সংলাপের মূল উদ্দেশ্য। পরিবারের প্রত্যেক মানুষকে বোঝাতে হবে যে এটা নিষিদ্ধ কোনো বিষয় নয়। শিক্ষকদের বলতে হবে। শিক্ষার্থীদের সামনেই আলোচনা করতে হবে।
যখন দুর্যোগ হয়, বন্যা হয়, তখন আমরা চিন্তা করি, চাল, ডাল, পানি, লবণ সাহায্যের জন্য নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু কেউ চিন্তা করে না, ওখানে স্যানিটারি প্যাড নিতে হবে। কেউ চিন্তা করি না যে ওখানে একজন গর্ভবতী মা থাকতে পারেন, একজন কিশোরী বা তরুণী থাকতে পারে। তার নিরাপত্তা দিতে হবে। তার জন্য মাসিক ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদির ব্যবস্থা থাকতে হবে। এই চিন্তাগুলো সবাইকে করতে হবে। অন্যথায় মাসিকবান্ধব বিশ্ব গড়ে তোলা সম্ভব নয়।
মেয়েদের স্কুলে অনুপস্থিতির বড় কারণ অপরিষ্কার টয়লেট
কিশোর-কিশোরীর স্বাস্থ্য নিয়ে স্কুল পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে আমরা দেখেছি, স্কুলগুলো আমাদের শক্তির জায়গা। সেখানে ইতিবাচক অভিজ্ঞতা রয়েছে। মেয়েরা মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে কিছু জানে না, এমন নয়। গবেষণার কাজে নীলফামারী ও ভোলার স্কুলে গিয়ে আমরা দেখেছি, স্কুলে মেয়েদের অনুপস্থিত থাকার অনেক কারণ রয়েছে। সবচেয়ে কমন (সাধারণ) কারণ হলো, তারা অপরিষ্কার টয়লেট ব্যবহার করতে চায় না। এই বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। মেয়েরা বলেছে, মাসিকের সময় পেটব্যথা হয়, ওষুধ খেলে ব্যথা কমেও যায়। তাই ব্যথার কারণে তারা স্কুলে অনুপস্থিত থাকে, তা নয়; বরং অপরিষ্কার জায়গাটাকে তারা এড়াতে চায় বলেই স্কুলে যায় না।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্যানিটারি প্যাড ডিসপোজাল আরেকটি সমস্যা। মেয়েরা এমনটাও বলেছে, ‘স্কুলে আসতে চাই না, সেটার আরও একটা কারণ, ব্যবহৃত স্যানিটারি প্যাড অথবা কাপড়টা আমি কোথায় ফেলব?’ যেসব স্কুলে পাঁচ শ বা এক হাজার কিশোরী থাকে, সবার একসঙ্গে মাসিক হয় না, এটা ঠিক। কিন্তু প্রতি মাসেই কারও না কারও তো হচ্ছে। ব্যবহৃত স্যানিটারি ন্যাপকিনগুলো কীভাবে ডিসপোজাল হবে, সেটা কি আমরা ভাবছি? স্কুলের কোন জায়গাটাতে এগুলো ডিসপোজাল হবে? শহরের কথা যদি ধরি, সিটি করপোরেশন থেকে এগুলো কীভাবে সংগ্রহ করা হচ্ছে?
ছেলেদেরও মাসিক স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতন করা উচিত। তাদের বোঝানো উচিত, এটা একটা স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। তার মায়ের এবং বোনেরও এটা হয়। সে যদি এটা না বোঝে, তবে বিয়ের পর তার দাম্পত্যজীবনেও সমস্যা তৈরি হতে পারে।
মাসিকবান্ধব বিশ্ব গড়তে হলে পরিবেশকেন্দ্রিক হতে হবে
টয়লেট ফ্যাসিলিটি, ওয়াশ ফ্যাসিলিটি নিয়ে আমরা কথা বলছি। কিন্তু এরপর আর আমরা কথা বলছি না। সেকেন্ডারি ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে গিয়ে এই প্যাডগুলো, স্যানিটারি ন্যাপকিনগুলো কীভাবে ডিসপোজ হচ্ছে, এটার মেকানিজম আমাদের দেশে কেমন আছে? এটা গৃহস্থালি বর্জ্যের সঙ্গে মিলে আমাদের ভূমিতে কীভাবে চলে যাচ্ছে, তা নিয়ে নীতিগত জায়গায় আলোচনা আমি কখনোই শুনি না। এই আলোচনা হওয়া জরুরি। মাসিকবান্ধব বিশ্ব যদি আমাদের তৈরি করতে হয়, শুধু মানুষকেন্দ্রিক নয়, পরিবেশকেন্দ্রিকও তৈরি করতে হবে। এটার জন্য সচেতনতা ও গবেষণা জরুরি। আমাদের অনেক ধরনের মিথ (বদ্ধমূল ধারণা) আছে, ভালো লাগা, মন্দ লাগা আছে যে আমার ব্যবহৃত প্যাডটা আসলে কোথায় যাচ্ছে? কার হাতে এটা ম্যানেজ হচ্ছে? অনেক সামাজিক, ধর্মীয় সংস্কার আমাদের মনে কাজ করে। অনেক পরিবার এখন পর্যন্ত প্যাডে কনভার্ট করতে চায় না। এর অন্যতম কারণ হলো, তার প্যাড কোথায় ডিসপোজ হচ্ছে।
বন্যার সময় প্যাড ডিসপোজ করা একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। একতলা, দোতলা বাড়িগুলো তখন পানির নিচে থাকে। প্যাড ফেললে সেটা ভেসে বেড়াচ্ছে। সেখান থেকে পানি নিয়ে আবার ফুটিয়ে খাওয়া হচ্ছে। এটা আসলে হাইজিনের (পরিচ্ছন্নতার) বিপরীতে যায়। আমরা শুধু স্যানিটারি প্যাডের কথা বলি। কিন্তু পুনর্ব্যবহারযোগ্য কাপড়ের কথা বলি না। আবার কাপড় ব্যবহার করতে হলে শুধু পুরোনো কাপড়ই দেওয়া হয়। মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার জন্য নতুন কাপড়ও তো দেওয়া যেতে পারে। এটা নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত।
মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার সরঞ্জামগুলো সুলভে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।
মাসিকের ব্যবস্থাপনা সঠিক না হলে মাতৃত্ব ঝুঁকিপূর্ণ হয় ২৮ মে মাসিক স্বাস্থ্যবিধি ও নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস। নিরাপদ মাতৃত্ব বিষয়টাও মাসিকের সঙ্গে সম্পর্কিত। মাসিকের ব্যবস্থাপনা যদি সঠিক না হয়, মাতৃত্ব ঝুঁকিপূর্ণ হয়। ২০২১ সালে জাতীয় মাসিক স্বাস্থ্যবিধি ব্যবস্থাপনা কৌশলপত্র করা হয়েছিল। খুব সুন্দর কৌশলপত্র এটা। সরকারিভাবে যে কাজগুলো হচ্ছে, তার পাশাপাশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাও কাজ করছে। পিএসটিসি ১৯৭৮ সালে জন্মলগ্ন থেকে যৌন প্রজননস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছে। সেই অভিজ্ঞতা থেকে আমরা বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে নারী স্বাস্থ্যবিষয়ক অধিকার বাস্তবায়নে কাজ করছি। একটা প্রকল্পের অধীনে আমরা প্রায় সাড়ে ৫ হাজার শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দিয়েছি, তারা যেন সিলেবাসে মাসিকসংক্রান্ত অধ্যায়টি স্বাচ্ছন্দ্যে পড়াতে পারেন। আমাদের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর অধিকাংশ শিক্ষক ক্লাসরুমে এ বিষয়ে স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। এর সূত্র ধরে আমরা চেষ্টা করেছি, টিচার্স ট্রেনিং কলেজের কারিকুলামেও মাসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক তথ্যগুলোকে যুক্ত করার জন্য। কারণ, শিক্ষকেরা যখন প্রশিক্ষণ পায়, তখন এই আলোচনাগুলো আসা উচিত। তাহলে পরবর্তীকালে শিক্ষার্থীদের পড়ানোর সময় তাঁরা সেটা বোঝাতে পারবেন।
আমরা বর্তমানে আরেকটি প্রকল্প পরিচালনা করছি, যেখানে খেলাধুলার মাধ্যমে কীভাবে মেয়েদের ট্যাবুসংক্রান্ত বিষয় দূর করা যায়, সেটা নিয়ে কাজ করছি। আমাদের প্রকল্পের কাজ চলছে, যেটার মাধ্যমে মানুষকে মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সচেতন করা হচ্ছে। পাশাপাশি নারীরা যেন সুলভে মাসিক ব্যবস্থাপনা উপকরণ পায়, সেটার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এই প্রকল্পে ছয় শতাধিক সামাজিক উদ্যোক্তা আমাদের সঙ্গে কাজ করছেন।
বন্ধ্যাত্বের অন্যতম কারণ মাসিক অব্যবস্থাপনা
মাসিকের কারণে দাম্পত্যজীবনেও সমস্যা হয়। এই সমস্যা বন্ধ্যাত্বের দিকেও ঠেলে দিচ্ছে। নারীদের বন্ধ্যাত্বের অন্যতম কারণ হলো মাসিক অব্যবস্থাপনা। এই জিনিসগুলো জানাবার জন্য আমাদের কাজ করা উচিত। কমিউনিকেশন ম্যাটেরিয়ালে এই জিনিসগুলো আমাদের যুক্ত করা উচিত। বেদেসহ বিভিন্ন প্রান্তিক গোষ্ঠীর সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, তাদের কত অজ্ঞতা আছে, কত বদ্ধমূল ধারণা আছে। এই সভ্য যুগেও মাসিক হলে সেই মেয়েটাকে বা নারীটাকে আলাদা করে দিচ্ছে। খাবার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হচ্ছে না। এক কোণে করে রাখার ফলে তার মানসিক সমস্যা হচ্ছে। সামাজিক অন্তর্ভুক্তির জায়গা থেকে সে বঞ্চিত হচ্ছে। তার মানসিক আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে মাসিক অব্যবস্থাপনা।
আমাদের দেশের অনেক নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও ব্যবহারযোগ্য বাথরুম নেই। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যেখানে অনেক মেয়েকে মাসিক নিয়ে অনেকটা সময় কাটাতে হয়, সেখানে বাথরুমগুলো কতটা মাসিকবান্ধব? সেই বাথরুমগুলো ছেলেমেয়ে-নির্বিশেষে সবাই ব্যবহার করছে। সেগুলো কতটুকু পরিষ্কার, ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে হচ্ছে কি না, সেখানে নিরাপত্তা কতটুকু নিশ্চিত করতে পারছি। এসব নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে।
সচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রে কমিউনিকেশন ম্যাটেরিয়ালগুলো (যোগাযোগ উপকরণ) প্রান্তিক অঞ্চলের জন্য কেমন হবে, নৃগোষ্ঠীর জন্য কেমন হবে আর শহুরে এলাকার জন্য কেমন হবে, এটা নিয়ে আলাদাভাবে ভাবতে হবে। আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করলে মাসিকবান্ধব বাংলাদেশ গড়তে পারব।
বন্যার সময় বেশি সমস্যায় পড়েন নারীরা
বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি নারী রয়েছেন, যাঁরা ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী। কিশোরী রয়েছেন ১৭ মিলিয়ন। প্রতি মাসেই তাঁরা এই অবস্থার মধ্য দিয়ে যান। কিন্তু এ নিয়ে কথা বলতে কেউ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। তাই তাঁরা সঠিকভাবে মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা করতে পারেন না। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন নারী, পথ বা বস্তির তরুণী এবং বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নারীরা বেশি সমস্যার মধ্যে আছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যাগ্রস্ত এলাকায়, বিশেষ করে বন্যার সময়ে মাসিক নিয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন নারীরা।
এ সময়ে নারী কর্মীদের ডেস্কে কাজের ব্যবস্থা করতে হবে
আমাদের সিস্টেম চেঞ্জ নিয়ে ভাবতে হবে। প্রতি মাসের এই দিনগুলো নারীদের জন্য কঠিন হয়। আমাদের যে মানবসম্পদ নীতি আছে, জেন্ডার নীতি আছে, সেখানে এই বিষয়ে ভাবা প্রয়োজন। যাঁরা মাঠপর্যায়ে কাজ করেন, এই দিনগুলোতে তাঁদের অফিসের ডেস্কে কাজ দেওয়া যায় কি না, দেখতে হবে। আমরা যারা মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা, মাতৃস্বাস্থ্য অথবা জনস্বাস্থ্য খাতে কাজ করি, তারা বলতে পারি, আজ আমি এটা করতে পারছি না। কারণ, আমি ভালো বোধ করছি না। এই সুযোগ সব নারীর থাকা উচিত। আমি স্কুল-কলেজ কর্তৃপক্ষেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। একটা পরীক্ষা, একটা ইনকোর্স অথবা একটা অ্যাসাইনমেন্ট সাবমিট করা; ওই দিনটা কঠিন হতে পারে। বিষয়টি সিস্টেমে নিয়ে যাওয়া খুব সহজ নয়। কিন্তু আমরা যদি একটু মানবিক হয়ে বিষয়টি প্রাতিষ্ঠানিক সিস্টেমে নিতে পারি, সেটাও খুব ইতিবাচক হবে বলে মনে করি।
পাইলট আকারে কিছু করা যায় কি না ভাবা দরকার
মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতে এবং মাসিকবান্ধব বিশ্ব গড়তে এ ধরনের বৈঠক হওয়া জরুরি। তবে গবেষণা, সেমিনার ইত্যাদির তুলনায় প্রয়োগ কতটুকু হচ্ছে? স্বল্প মেয়াদে পাইলট আকারে কিছু করা যায় কি না, সেটা ভাবা দরকার। খুচরা প্যাড বিক্রি হওয়া প্রয়োজন। আমাদের লজ্জা-দ্বিধার ক্ষেত্রে কতটুকু উত্তরণ ঘটাতে পেরেছি, সেটা ভাবতে হবে। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একটা ছোট প্রকল্প ছিল, স্কুলে স্যানিটারি প্যাড সরবরাহ করা। স্কুলে শিক্ষার্থীরা নিজেরাও যেন প্যাড তৈরি করতে পারে, সে জন্য যন্ত্রপাতিও দেওয়া হয়েছিল। এই প্রকল্পকে আরও বৃহদাকারে করার জন্য আমি প্রস্তাব রেখেছিলাম। কিন্তু সেটা কার্যকর হয়নি।
মাসিকের সঙ্গে বাল্যবিবাহ সম্পর্কিত
মাসিকের সময় স্যানিটারি প্যাড ডিজপোজালের বিষয়টি একটি বড় ইস্যু। বিশেষ করে, বন্যার সময়ে এটা বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়ায়। স্কুল-কলেজে একদম গ্রামের দিকে বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে যে স্কুলগুলো আছে, সেখানে আরও বেশি সমস্যা। বেশির ভাগ সময় দেখা যায়, নদী বা এ রকম জায়গাতে স্যানিটারি প্যাড ছুড়ে ফেলা হয়। মাসিক বিষয়টাকে সেন্টার অব ডিসকাশনে রাখতে হবে। কারণ, মাসিকের সঙ্গে বাল্যবিবাহ সম্পর্কিত। যখনই মাসিক শুরু হচ্ছে, তখনই বাবা-মা মনে করছেন যে মেয়ে বিয়ের উপযুক্ত হয়ে গেছে। এটার সঙ্গে পুষ্টি জড়িত। কারণ, মাসিকের সময় অনেক জায়গায় অনেক খাবার খেতে দেওয়া হয় না। মাসিক স্বাস্থ্য আলাদা না করে মেইনস্ট্রিম হেলথের সঙ্গে এটাকে যুক্ত করা উচিত।
আমাদের অস্তিত্বের সঙ্গে মাসিক সম্পর্কিত
একজন মানুষ পৃথিবীতে সেই নারীর মাধ্যমে আসে, যে মেয়ের বা যেই মায়ের মাসিক হয়েছে। সুতরাং এটা আমাদের অস্তিত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত। সুতরাং এই বিষয়কে আমাদের সম্মান করতেই হবে। আর এই কাজ আমাদের বাড়ি থেকে শুরু করতে হবে। মাসিক একটি স্বাভাবিক বিষয়। এ সম্পর্কে আমাদের লজ্জা, ভয় থাকার কথা নয়। আমার অনুরোধ থাকবে, সবাই স্যানিটারি ন্যাপকিন সঙ্গে রাখবেন। কারও প্রয়োজন হলে দেবেন এবং সবাইকে এই পরামর্শ দেবেন।
মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়টি আমরা অগ্রাধিকার দিচ্ছি। সরকারের অর্থনৈতিক সংকট, প্রতিবন্ধকতা ইত্যাদি নানা সমস্যা রয়েছে। তার মধ্যেও আমরা এক কোটি স্যানিটারি ন্যাপকিন কেনার অনুমোদন পেয়েছি। আমরা এগুলো বিতরণ করব। মেনস্ট্রুয়াল হেলথ ম্যানেজমেন্টকে (এমএইচএম) আমরা এখন মেনস্ট্রুয়াল হেলথ অ্যান্ড হাইজিন ম্যানেজমেন্ট বলি। আশির দশকে ১০ শতাংশ স্যানিটারি ন্যাপকিনও ব্যবহৃত হতো না। এখন আমাদের মেয়েরা ৫০ শতাংশ স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করছে। আশা করি, একসময় আমাদের শতভাগ মেয়েই মানসম্মত স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করবে।
মাসিকের সঠিক ব্যবস্থাপনা না হলে স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে
নারীদের ক্ষেত্রে মাসিক তার প্রাত্যহিক জীবনের অংশ। এটাকে আলাদা করে দেখার কিছু নেই। একজন নারীকে তাঁর জীবনে গড়ে ৩ হাজার দিন মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা করতে হয়। এটা তাঁর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটা অবশ্যই স্বাস্থ্যের বিষয়। মাসিকের সঠিক ব্যবস্থাপনা না হলে স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে। তাই একে স্বাস্থ্যের সঙ্গে চিন্তা করতে হবে। নারীস্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাব বিশাল। প্রত্যেক নারীকে কর্মক্ষম হিসেবে চিন্তা করলে ওই নারীর কর্মক্ষমতার সঙ্গে তাঁর মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার একটা সম্পর্ক আছে। এর সঙ্গে অনেক সামাজিক বিষয়ের যোগাযোগ রয়েছে। জেন্ডার বেজড ভায়োলেন্সের সঙ্গে এটার সম্পর্ক আছে। আমাদের বড় বড় দুর্যোগের সময় ভাবি না যে মাসিক ব্যবস্থাপনার সরঞ্জামাদি জরুরি সাহায্যের (ইমিডিয়েট সাপোর্ট) একটা অংশ হওয়া উচিত।
সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই
বাংলাদেশ সচেতনতায় অনেক অনেক পিছিয়ে। আমরা চাইলেও অনেক কিছু বলতে পারি না। আমাদের দেশে মাসিক হওয়া মানে, বিয়ের জন্য আমরা প্রস্তুত। বাল্যবিবাহের বিষয়টা এখানে চলে আসে। অর্থাৎ মাসিকের সঙ্গে বাল্যবিবাহের সম্পর্ক রয়েছে। আবার মাসিকের সঙ্গে স্বাস্থ্যগত বিষয়ও জড়িত। আমরা যদি সঠিকভাবে মাসিক স্বাস্থ্যবিধি মানতে না পারি, তাহলে আমাদের স্বাস্থ্যগত জটিলতা দেখা দিতে পারে। জরায়ু সংক্রমণ হতে পারে, ছত্রাক সংক্রমণ ঘটতে পারে। কিশোরীরা যেন দ্বিধাহীনভাবে এটা নিয়ে কথা বলতে পারে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। আমার মেয়েকে বলেছি, তোমার মাসিকের সময় স্যানিটারি প্যাডের কথা বললে বাবা কিনে এনে দেবে। আমার মেয়ে তার বাবার কাছে প্যাড চাইতে শিখেছে। এটা একটা উত্তরণ।
অসচ্ছল নারীদের স্যানিটারি প্যাড কিনতে সমস্যা হয়
গ্রামে বা বস্তি এলাকাগুলোতে মেয়েদের জন্য স্যানিটারি প্যাড বেশ কাজের। কারণ, এই জায়গাগুলোতে ২০টি পর্যন্ত পরিবার একটি বাথরুম ব্যবহার করে। এসব জায়গায় কাপড় ব্যবহার করা সমস্যাজনক। কারণ, একটা কাপড় ধুয়ে পরিষ্কার করতে যে সময় প্রয়োজন, বাথরুমে সেই সময়টা পাওয়া যায় না। কেউ এসে তাড়া দেয়। যারা আর্থিকভাবে একটু সচ্ছল, তারা স্যানিটারি প্যাড কিনতে পারে। তারা আর কাপড়ে ফেরত যেতে চায় না। তবে যারা অসচ্ছল, তাদের এটা কিনতে সমস্যা হয়। আমরা প্রকল্পের আওতায় মেয়েদের স্যানিটারি প্যাড সরবরাহ করেছি। ওরা এখন বলে, ‘আপা, প্রজেক্ট শেষ হয়ে গেলে আমরা কীভাবে কিনব?’
সহজলভ্য হতে হবে মাসিক ব্যবস্থাপনার পণ্য
মাসিককে এখনো কোনো কোনো জায়গায় শারীরিক অসুস্থতা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। কিন্তু এটা আসলে সুস্থ স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। এটা নিয়ে বারবার কথা বলা উচিত। মেয়েরা যেন মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে সঠিকভাবে জানতে পারে এবং বলতে পারে, এমন স্বাভাবিক পরিবেশ চাই। এ ছাড়া পিরিয়ডকালে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করা এবং মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার পণ্যগুলো সহজলভ্য করা দরকার।
স্যানিটারি প্যাডের দাম নিয়ন্ত্রণে আনা উচিত
যাঁরা শহরে থাকেন, তাঁদের জন্য স্যানিটারি প্যাড কেনা তুলনামূলক সহজ। কিন্তু যাঁরা গ্রামে থাকেন, তাঁদের স্যানিটারি প্যাড ব্যবহারের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। গ্রামে যে নারীরা থাকেন, তাঁরা মাসের হাতখরচ বাঁচিয়ে প্যাড কিনতে পারছেন কি না, এ বিষয়টা চিন্তা করা উচিত। স্যানিটারি প্যাডের দাম নিয়ন্ত্রণে আনা উচিত।
দোকানে খুচরা প্যাডের ব্যবস্থা করতে হবে
আমি গ্রামে দেখেছি, সেখানে শুধু বাজারেই স্যানিটারি প্যাড রাখা হয়। কিন্তু বাড়ির আশপাশের দোকানগুলোতে প্যাড রাখা হয় না। বাড়ির মেয়েরা খুব একটা বাজারে যান না। ফলে প্যাড কিনতে তাঁরা সমস্যায় পড়েন। আরেকটি সমস্যা হলো, বাসার বাইরে থাকার সময় প্যাড লাগলে পুরো প্যাকেট কিনতে হয়। হয়তো বাসায় পর্যাপ্ত প্যাড আছে বা তখন হাতে ওই পরিমাণ টাকা নেই, তাই ওই সময় পুরো প্যাকেট কেনা কষ্টকর হয়ে পড়ে। দোকানে খুচরা প্যাড বিক্রয়ের ব্যবস্থা থাকলে ভালো হতো।
সামাজিক মাধ্যমে হতে হবে ইতিবাচক প্রচার
এখনকার তরুণেরা দীর্ঘ সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাটান। কিন্তু সেখানে মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে তথ্য খুব একটা পাওয়া যায় না। সামাজিক মাধ্যমে চ্যানেল বা পেজ করে রিলস, ইনফোগ্রাফিকস, কনটেন্ট তুলে ধরে তরুণসমাজকে এ বিষয়ে সচেতন করে তোলা যেতে পারে। একজন নারী গড়ে ৩ হাজার দিন মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় কাটান। বছরের হিসাবে এটা ছয় থেকে আট বছর। তাই বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মাসিক নিয়ে ট্যাবু ভাঙতে হবে
মাসিক বিষয়টি এখনো আমাদের সমাজে ট্যাবু। এই ট্যাবু ভাঙার জন্য আমাদের উদার হয়ে সচেতনভাবে নাগরিক দায়িত্ব পালন করা প্রয়োজন। শিশু-কিশোরদের বইপুস্তকে আমরা বিষয়টিকে প্রতিফলিত করতে পারিনি। এটা সহজভাবে পাঠ্যপুস্তকে তুলে ধরতে হবে। ভাষার ব্যবহার, শব্দের ব্যবহার, আচার-ব্যবহারের মাধ্যমে এই প্রসঙ্গকে সহজভাবে উপস্থাপন করার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই আমাদের এগোতে হবে।
যাঁরা অংশ নিয়েছিলেন
সঞ্চালক
ড. নূর মোহাম্মদ
নির্বাহী পরিচালক, পিএসটিসি
আলোচক
ডা. ফারিহা হাসিন, সহযোগী অধ্যাপক, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (সাবেক বিএসএমএমইউ)
নন্দিনী লোপা
কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর, গ্লোবাল ফাইন্যান্সিং ফ্যাসিলিটি (জিএফএফ), বিশ্বব্যাংক
কানিজ গোফরানী কোরায়শী
প্রজেক্ট ম্যানেজার, পিএসটিসি
ডা. ফারহানা হক
ডিরেক্টর (হেলথ কমিউনিকেশন)
রেডঅরেঞ্জ কমিউনিকেশনস
সাঈদা বানী
প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর, ফেমিনিস্ট অপরচুনিটিস নাউ, ক্রিয়া
রেজিনা আরজু
উপপরিচালক (প্রশিক্ষণ), মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর
মাহবুবা হক কুমকুম
জ্যেষ্ঠ প্রশিক্ষক ও পরামর্শক, এমডিএফ বাংলাদেশ
ডা. মো. মনজুর হোসাইন
প্রোগ্রাম ম্যানেজার (এ অ্যান্ড আরএইচ), পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর
অনিতা শরীফ চৌধুরী, টিম লিডার, পিএসটিসি
ডা. মো. মাহবুবুল আলম, হেড অব প্রোগ্রামস, পিএসটিসি
ডা. সুস্মিতা আহমেদ, জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা, আইপাস বাংলাদেশ
মাহমুদা নাসরিন, প্রজেক্ট ম্যানেজার, পিএসটিসি
প্রিয়তা মণ্ডল
চেয়ারপারসন, ন্যাশনাল ইয়ুথ নেটওয়ার্ক (নয়ন)
তাহরিমা তাসলিম
সদস্য, ন্যাশনাল ইয়ুথ নেটওয়ার্ক (নয়ন)
সুমাইয়া আক্তার
ইন্টার্ন, পিএসটিসি (শিক্ষার্থী, পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)
শুভাশীষ কুমার রিমন, ইন্টার্ন, পিএসটিসি (শিক্ষার্থী, পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)
ড. মো. গোলাম রহমান
সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
সাহিদুল ইসলাম চৌধুরী, উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
মাসিক বা পিরিয়ড নারীজীবনের খুব স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। তবে আমাদের দেশে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে অনেকে অস্বস্তিতে পড়েন। মাসিকের ব্যবস্থাপনা সঠিক না হলে মাতৃত্ব ঝুঁকিপূর্ণ হয়। প্রতিবছরের ২৮ মে বিশ্বব্যাপী মাসিক স্বাস্থ্যবিধি দিবস পালন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে ২৫ মে আজকের পত্রিকা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় ‘মাসিকবান্ধব বিশ্বের জন্য একতা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক। আয়োজনে সহযোগী ছিল বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পপুলেশন সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (পিএসটিসি) এবং ইন্টারন্যাশনাল প্ল্যানড প্যারেন্টহুড ফেডারেশন (আইপিপিএফ)। লিখেছেন আজকের পত্রিকার প্রতিবেদক অর্চি হক।
মানুষকে বোঝাতে হবে, এটা নিষিদ্ধ বিষয় নয়
এই ইস্যুকে আমরা অনেক শব্দের মাধ্যমে চিহ্নিত করি। মাসিক হলো সবচেয়ে প্রচলিত শব্দ। প্রতি মাসে এটা আসে, তাই এটাকে মাসিক বলা হয়। অনেক ছেলে মাসিক কী, এটা নিয়ে কৌতুক করে, হাসাহাসি করে। ইংরেজিতে পিরিয়ড শব্দটি প্রচলিত। ‘মেন্সট্রুয়েশন’—এই লম্বা শব্দটি না বলে অনেকে মিনস বলে। শব্দচয়ন বা শব্দের ব্যবহার—এগুলোও অনেক কিছু নির্দেশ করে।
এই সভার মূল উপস্থাপনায় বলা হয়েছে, পুরুষ অথবা ছেলেদেরও মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার কাজে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। এটা নিয়ে ভাবা উচিত। তবে মাসিক বিষয়টা কি স্বাস্থ্যের নাকি জনস্বাস্থ্যের, এটা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
মাসিক নিয়ে আমরা যে কণ্ঠস্বর তৈরি করেছি, এটা ছড়িয়ে দিতে চাই। এটাই আমাদের এই সংলাপের মূল উদ্দেশ্য। পরিবারের প্রত্যেক মানুষকে বোঝাতে হবে যে এটা নিষিদ্ধ কোনো বিষয় নয়। শিক্ষকদের বলতে হবে। শিক্ষার্থীদের সামনেই আলোচনা করতে হবে।
যখন দুর্যোগ হয়, বন্যা হয়, তখন আমরা চিন্তা করি, চাল, ডাল, পানি, লবণ সাহায্যের জন্য নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু কেউ চিন্তা করে না, ওখানে স্যানিটারি প্যাড নিতে হবে। কেউ চিন্তা করি না যে ওখানে একজন গর্ভবতী মা থাকতে পারেন, একজন কিশোরী বা তরুণী থাকতে পারে। তার নিরাপত্তা দিতে হবে। তার জন্য মাসিক ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদির ব্যবস্থা থাকতে হবে। এই চিন্তাগুলো সবাইকে করতে হবে। অন্যথায় মাসিকবান্ধব বিশ্ব গড়ে তোলা সম্ভব নয়।
মেয়েদের স্কুলে অনুপস্থিতির বড় কারণ অপরিষ্কার টয়লেট
কিশোর-কিশোরীর স্বাস্থ্য নিয়ে স্কুল পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে আমরা দেখেছি, স্কুলগুলো আমাদের শক্তির জায়গা। সেখানে ইতিবাচক অভিজ্ঞতা রয়েছে। মেয়েরা মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে কিছু জানে না, এমন নয়। গবেষণার কাজে নীলফামারী ও ভোলার স্কুলে গিয়ে আমরা দেখেছি, স্কুলে মেয়েদের অনুপস্থিত থাকার অনেক কারণ রয়েছে। সবচেয়ে কমন (সাধারণ) কারণ হলো, তারা অপরিষ্কার টয়লেট ব্যবহার করতে চায় না। এই বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। মেয়েরা বলেছে, মাসিকের সময় পেটব্যথা হয়, ওষুধ খেলে ব্যথা কমেও যায়। তাই ব্যথার কারণে তারা স্কুলে অনুপস্থিত থাকে, তা নয়; বরং অপরিষ্কার জায়গাটাকে তারা এড়াতে চায় বলেই স্কুলে যায় না।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্যানিটারি প্যাড ডিসপোজাল আরেকটি সমস্যা। মেয়েরা এমনটাও বলেছে, ‘স্কুলে আসতে চাই না, সেটার আরও একটা কারণ, ব্যবহৃত স্যানিটারি প্যাড অথবা কাপড়টা আমি কোথায় ফেলব?’ যেসব স্কুলে পাঁচ শ বা এক হাজার কিশোরী থাকে, সবার একসঙ্গে মাসিক হয় না, এটা ঠিক। কিন্তু প্রতি মাসেই কারও না কারও তো হচ্ছে। ব্যবহৃত স্যানিটারি ন্যাপকিনগুলো কীভাবে ডিসপোজাল হবে, সেটা কি আমরা ভাবছি? স্কুলের কোন জায়গাটাতে এগুলো ডিসপোজাল হবে? শহরের কথা যদি ধরি, সিটি করপোরেশন থেকে এগুলো কীভাবে সংগ্রহ করা হচ্ছে?
ছেলেদেরও মাসিক স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতন করা উচিত। তাদের বোঝানো উচিত, এটা একটা স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। তার মায়ের এবং বোনেরও এটা হয়। সে যদি এটা না বোঝে, তবে বিয়ের পর তার দাম্পত্যজীবনেও সমস্যা তৈরি হতে পারে।
মাসিকবান্ধব বিশ্ব গড়তে হলে পরিবেশকেন্দ্রিক হতে হবে
টয়লেট ফ্যাসিলিটি, ওয়াশ ফ্যাসিলিটি নিয়ে আমরা কথা বলছি। কিন্তু এরপর আর আমরা কথা বলছি না। সেকেন্ডারি ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে গিয়ে এই প্যাডগুলো, স্যানিটারি ন্যাপকিনগুলো কীভাবে ডিসপোজ হচ্ছে, এটার মেকানিজম আমাদের দেশে কেমন আছে? এটা গৃহস্থালি বর্জ্যের সঙ্গে মিলে আমাদের ভূমিতে কীভাবে চলে যাচ্ছে, তা নিয়ে নীতিগত জায়গায় আলোচনা আমি কখনোই শুনি না। এই আলোচনা হওয়া জরুরি। মাসিকবান্ধব বিশ্ব যদি আমাদের তৈরি করতে হয়, শুধু মানুষকেন্দ্রিক নয়, পরিবেশকেন্দ্রিকও তৈরি করতে হবে। এটার জন্য সচেতনতা ও গবেষণা জরুরি। আমাদের অনেক ধরনের মিথ (বদ্ধমূল ধারণা) আছে, ভালো লাগা, মন্দ লাগা আছে যে আমার ব্যবহৃত প্যাডটা আসলে কোথায় যাচ্ছে? কার হাতে এটা ম্যানেজ হচ্ছে? অনেক সামাজিক, ধর্মীয় সংস্কার আমাদের মনে কাজ করে। অনেক পরিবার এখন পর্যন্ত প্যাডে কনভার্ট করতে চায় না। এর অন্যতম কারণ হলো, তার প্যাড কোথায় ডিসপোজ হচ্ছে।
বন্যার সময় প্যাড ডিসপোজ করা একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। একতলা, দোতলা বাড়িগুলো তখন পানির নিচে থাকে। প্যাড ফেললে সেটা ভেসে বেড়াচ্ছে। সেখান থেকে পানি নিয়ে আবার ফুটিয়ে খাওয়া হচ্ছে। এটা আসলে হাইজিনের (পরিচ্ছন্নতার) বিপরীতে যায়। আমরা শুধু স্যানিটারি প্যাডের কথা বলি। কিন্তু পুনর্ব্যবহারযোগ্য কাপড়ের কথা বলি না। আবার কাপড় ব্যবহার করতে হলে শুধু পুরোনো কাপড়ই দেওয়া হয়। মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার জন্য নতুন কাপড়ও তো দেওয়া যেতে পারে। এটা নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত।
মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার সরঞ্জামগুলো সুলভে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।
মাসিকের ব্যবস্থাপনা সঠিক না হলে মাতৃত্ব ঝুঁকিপূর্ণ হয় ২৮ মে মাসিক স্বাস্থ্যবিধি ও নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস। নিরাপদ মাতৃত্ব বিষয়টাও মাসিকের সঙ্গে সম্পর্কিত। মাসিকের ব্যবস্থাপনা যদি সঠিক না হয়, মাতৃত্ব ঝুঁকিপূর্ণ হয়। ২০২১ সালে জাতীয় মাসিক স্বাস্থ্যবিধি ব্যবস্থাপনা কৌশলপত্র করা হয়েছিল। খুব সুন্দর কৌশলপত্র এটা। সরকারিভাবে যে কাজগুলো হচ্ছে, তার পাশাপাশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাও কাজ করছে। পিএসটিসি ১৯৭৮ সালে জন্মলগ্ন থেকে যৌন প্রজননস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছে। সেই অভিজ্ঞতা থেকে আমরা বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে নারী স্বাস্থ্যবিষয়ক অধিকার বাস্তবায়নে কাজ করছি। একটা প্রকল্পের অধীনে আমরা প্রায় সাড়ে ৫ হাজার শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দিয়েছি, তারা যেন সিলেবাসে মাসিকসংক্রান্ত অধ্যায়টি স্বাচ্ছন্দ্যে পড়াতে পারেন। আমাদের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর অধিকাংশ শিক্ষক ক্লাসরুমে এ বিষয়ে স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। এর সূত্র ধরে আমরা চেষ্টা করেছি, টিচার্স ট্রেনিং কলেজের কারিকুলামেও মাসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক তথ্যগুলোকে যুক্ত করার জন্য। কারণ, শিক্ষকেরা যখন প্রশিক্ষণ পায়, তখন এই আলোচনাগুলো আসা উচিত। তাহলে পরবর্তীকালে শিক্ষার্থীদের পড়ানোর সময় তাঁরা সেটা বোঝাতে পারবেন।
আমরা বর্তমানে আরেকটি প্রকল্প পরিচালনা করছি, যেখানে খেলাধুলার মাধ্যমে কীভাবে মেয়েদের ট্যাবুসংক্রান্ত বিষয় দূর করা যায়, সেটা নিয়ে কাজ করছি। আমাদের প্রকল্পের কাজ চলছে, যেটার মাধ্যমে মানুষকে মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সচেতন করা হচ্ছে। পাশাপাশি নারীরা যেন সুলভে মাসিক ব্যবস্থাপনা উপকরণ পায়, সেটার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এই প্রকল্পে ছয় শতাধিক সামাজিক উদ্যোক্তা আমাদের সঙ্গে কাজ করছেন।
বন্ধ্যাত্বের অন্যতম কারণ মাসিক অব্যবস্থাপনা
মাসিকের কারণে দাম্পত্যজীবনেও সমস্যা হয়। এই সমস্যা বন্ধ্যাত্বের দিকেও ঠেলে দিচ্ছে। নারীদের বন্ধ্যাত্বের অন্যতম কারণ হলো মাসিক অব্যবস্থাপনা। এই জিনিসগুলো জানাবার জন্য আমাদের কাজ করা উচিত। কমিউনিকেশন ম্যাটেরিয়ালে এই জিনিসগুলো আমাদের যুক্ত করা উচিত। বেদেসহ বিভিন্ন প্রান্তিক গোষ্ঠীর সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, তাদের কত অজ্ঞতা আছে, কত বদ্ধমূল ধারণা আছে। এই সভ্য যুগেও মাসিক হলে সেই মেয়েটাকে বা নারীটাকে আলাদা করে দিচ্ছে। খাবার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হচ্ছে না। এক কোণে করে রাখার ফলে তার মানসিক সমস্যা হচ্ছে। সামাজিক অন্তর্ভুক্তির জায়গা থেকে সে বঞ্চিত হচ্ছে। তার মানসিক আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে মাসিক অব্যবস্থাপনা।
আমাদের দেশের অনেক নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও ব্যবহারযোগ্য বাথরুম নেই। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যেখানে অনেক মেয়েকে মাসিক নিয়ে অনেকটা সময় কাটাতে হয়, সেখানে বাথরুমগুলো কতটা মাসিকবান্ধব? সেই বাথরুমগুলো ছেলেমেয়ে-নির্বিশেষে সবাই ব্যবহার করছে। সেগুলো কতটুকু পরিষ্কার, ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে হচ্ছে কি না, সেখানে নিরাপত্তা কতটুকু নিশ্চিত করতে পারছি। এসব নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে।
সচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রে কমিউনিকেশন ম্যাটেরিয়ালগুলো (যোগাযোগ উপকরণ) প্রান্তিক অঞ্চলের জন্য কেমন হবে, নৃগোষ্ঠীর জন্য কেমন হবে আর শহুরে এলাকার জন্য কেমন হবে, এটা নিয়ে আলাদাভাবে ভাবতে হবে। আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করলে মাসিকবান্ধব বাংলাদেশ গড়তে পারব।
বন্যার সময় বেশি সমস্যায় পড়েন নারীরা
বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি নারী রয়েছেন, যাঁরা ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী। কিশোরী রয়েছেন ১৭ মিলিয়ন। প্রতি মাসেই তাঁরা এই অবস্থার মধ্য দিয়ে যান। কিন্তু এ নিয়ে কথা বলতে কেউ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। তাই তাঁরা সঠিকভাবে মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা করতে পারেন না। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন নারী, পথ বা বস্তির তরুণী এবং বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নারীরা বেশি সমস্যার মধ্যে আছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যাগ্রস্ত এলাকায়, বিশেষ করে বন্যার সময়ে মাসিক নিয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন নারীরা।
এ সময়ে নারী কর্মীদের ডেস্কে কাজের ব্যবস্থা করতে হবে
আমাদের সিস্টেম চেঞ্জ নিয়ে ভাবতে হবে। প্রতি মাসের এই দিনগুলো নারীদের জন্য কঠিন হয়। আমাদের যে মানবসম্পদ নীতি আছে, জেন্ডার নীতি আছে, সেখানে এই বিষয়ে ভাবা প্রয়োজন। যাঁরা মাঠপর্যায়ে কাজ করেন, এই দিনগুলোতে তাঁদের অফিসের ডেস্কে কাজ দেওয়া যায় কি না, দেখতে হবে। আমরা যারা মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা, মাতৃস্বাস্থ্য অথবা জনস্বাস্থ্য খাতে কাজ করি, তারা বলতে পারি, আজ আমি এটা করতে পারছি না। কারণ, আমি ভালো বোধ করছি না। এই সুযোগ সব নারীর থাকা উচিত। আমি স্কুল-কলেজ কর্তৃপক্ষেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। একটা পরীক্ষা, একটা ইনকোর্স অথবা একটা অ্যাসাইনমেন্ট সাবমিট করা; ওই দিনটা কঠিন হতে পারে। বিষয়টি সিস্টেমে নিয়ে যাওয়া খুব সহজ নয়। কিন্তু আমরা যদি একটু মানবিক হয়ে বিষয়টি প্রাতিষ্ঠানিক সিস্টেমে নিতে পারি, সেটাও খুব ইতিবাচক হবে বলে মনে করি।
পাইলট আকারে কিছু করা যায় কি না ভাবা দরকার
মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতে এবং মাসিকবান্ধব বিশ্ব গড়তে এ ধরনের বৈঠক হওয়া জরুরি। তবে গবেষণা, সেমিনার ইত্যাদির তুলনায় প্রয়োগ কতটুকু হচ্ছে? স্বল্প মেয়াদে পাইলট আকারে কিছু করা যায় কি না, সেটা ভাবা দরকার। খুচরা প্যাড বিক্রি হওয়া প্রয়োজন। আমাদের লজ্জা-দ্বিধার ক্ষেত্রে কতটুকু উত্তরণ ঘটাতে পেরেছি, সেটা ভাবতে হবে। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একটা ছোট প্রকল্প ছিল, স্কুলে স্যানিটারি প্যাড সরবরাহ করা। স্কুলে শিক্ষার্থীরা নিজেরাও যেন প্যাড তৈরি করতে পারে, সে জন্য যন্ত্রপাতিও দেওয়া হয়েছিল। এই প্রকল্পকে আরও বৃহদাকারে করার জন্য আমি প্রস্তাব রেখেছিলাম। কিন্তু সেটা কার্যকর হয়নি।
মাসিকের সঙ্গে বাল্যবিবাহ সম্পর্কিত
মাসিকের সময় স্যানিটারি প্যাড ডিজপোজালের বিষয়টি একটি বড় ইস্যু। বিশেষ করে, বন্যার সময়ে এটা বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়ায়। স্কুল-কলেজে একদম গ্রামের দিকে বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে যে স্কুলগুলো আছে, সেখানে আরও বেশি সমস্যা। বেশির ভাগ সময় দেখা যায়, নদী বা এ রকম জায়গাতে স্যানিটারি প্যাড ছুড়ে ফেলা হয়। মাসিক বিষয়টাকে সেন্টার অব ডিসকাশনে রাখতে হবে। কারণ, মাসিকের সঙ্গে বাল্যবিবাহ সম্পর্কিত। যখনই মাসিক শুরু হচ্ছে, তখনই বাবা-মা মনে করছেন যে মেয়ে বিয়ের উপযুক্ত হয়ে গেছে। এটার সঙ্গে পুষ্টি জড়িত। কারণ, মাসিকের সময় অনেক জায়গায় অনেক খাবার খেতে দেওয়া হয় না। মাসিক স্বাস্থ্য আলাদা না করে মেইনস্ট্রিম হেলথের সঙ্গে এটাকে যুক্ত করা উচিত।
আমাদের অস্তিত্বের সঙ্গে মাসিক সম্পর্কিত
একজন মানুষ পৃথিবীতে সেই নারীর মাধ্যমে আসে, যে মেয়ের বা যেই মায়ের মাসিক হয়েছে। সুতরাং এটা আমাদের অস্তিত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত। সুতরাং এই বিষয়কে আমাদের সম্মান করতেই হবে। আর এই কাজ আমাদের বাড়ি থেকে শুরু করতে হবে। মাসিক একটি স্বাভাবিক বিষয়। এ সম্পর্কে আমাদের লজ্জা, ভয় থাকার কথা নয়। আমার অনুরোধ থাকবে, সবাই স্যানিটারি ন্যাপকিন সঙ্গে রাখবেন। কারও প্রয়োজন হলে দেবেন এবং সবাইকে এই পরামর্শ দেবেন।
মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়টি আমরা অগ্রাধিকার দিচ্ছি। সরকারের অর্থনৈতিক সংকট, প্রতিবন্ধকতা ইত্যাদি নানা সমস্যা রয়েছে। তার মধ্যেও আমরা এক কোটি স্যানিটারি ন্যাপকিন কেনার অনুমোদন পেয়েছি। আমরা এগুলো বিতরণ করব। মেনস্ট্রুয়াল হেলথ ম্যানেজমেন্টকে (এমএইচএম) আমরা এখন মেনস্ট্রুয়াল হেলথ অ্যান্ড হাইজিন ম্যানেজমেন্ট বলি। আশির দশকে ১০ শতাংশ স্যানিটারি ন্যাপকিনও ব্যবহৃত হতো না। এখন আমাদের মেয়েরা ৫০ শতাংশ স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করছে। আশা করি, একসময় আমাদের শতভাগ মেয়েই মানসম্মত স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করবে।
মাসিকের সঠিক ব্যবস্থাপনা না হলে স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে
নারীদের ক্ষেত্রে মাসিক তার প্রাত্যহিক জীবনের অংশ। এটাকে আলাদা করে দেখার কিছু নেই। একজন নারীকে তাঁর জীবনে গড়ে ৩ হাজার দিন মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা করতে হয়। এটা তাঁর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটা অবশ্যই স্বাস্থ্যের বিষয়। মাসিকের সঠিক ব্যবস্থাপনা না হলে স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে। তাই একে স্বাস্থ্যের সঙ্গে চিন্তা করতে হবে। নারীস্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাব বিশাল। প্রত্যেক নারীকে কর্মক্ষম হিসেবে চিন্তা করলে ওই নারীর কর্মক্ষমতার সঙ্গে তাঁর মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার একটা সম্পর্ক আছে। এর সঙ্গে অনেক সামাজিক বিষয়ের যোগাযোগ রয়েছে। জেন্ডার বেজড ভায়োলেন্সের সঙ্গে এটার সম্পর্ক আছে। আমাদের বড় বড় দুর্যোগের সময় ভাবি না যে মাসিক ব্যবস্থাপনার সরঞ্জামাদি জরুরি সাহায্যের (ইমিডিয়েট সাপোর্ট) একটা অংশ হওয়া উচিত।
সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই
বাংলাদেশ সচেতনতায় অনেক অনেক পিছিয়ে। আমরা চাইলেও অনেক কিছু বলতে পারি না। আমাদের দেশে মাসিক হওয়া মানে, বিয়ের জন্য আমরা প্রস্তুত। বাল্যবিবাহের বিষয়টা এখানে চলে আসে। অর্থাৎ মাসিকের সঙ্গে বাল্যবিবাহের সম্পর্ক রয়েছে। আবার মাসিকের সঙ্গে স্বাস্থ্যগত বিষয়ও জড়িত। আমরা যদি সঠিকভাবে মাসিক স্বাস্থ্যবিধি মানতে না পারি, তাহলে আমাদের স্বাস্থ্যগত জটিলতা দেখা দিতে পারে। জরায়ু সংক্রমণ হতে পারে, ছত্রাক সংক্রমণ ঘটতে পারে। কিশোরীরা যেন দ্বিধাহীনভাবে এটা নিয়ে কথা বলতে পারে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। আমার মেয়েকে বলেছি, তোমার মাসিকের সময় স্যানিটারি প্যাডের কথা বললে বাবা কিনে এনে দেবে। আমার মেয়ে তার বাবার কাছে প্যাড চাইতে শিখেছে। এটা একটা উত্তরণ।
অসচ্ছল নারীদের স্যানিটারি প্যাড কিনতে সমস্যা হয়
গ্রামে বা বস্তি এলাকাগুলোতে মেয়েদের জন্য স্যানিটারি প্যাড বেশ কাজের। কারণ, এই জায়গাগুলোতে ২০টি পর্যন্ত পরিবার একটি বাথরুম ব্যবহার করে। এসব জায়গায় কাপড় ব্যবহার করা সমস্যাজনক। কারণ, একটা কাপড় ধুয়ে পরিষ্কার করতে যে সময় প্রয়োজন, বাথরুমে সেই সময়টা পাওয়া যায় না। কেউ এসে তাড়া দেয়। যারা আর্থিকভাবে একটু সচ্ছল, তারা স্যানিটারি প্যাড কিনতে পারে। তারা আর কাপড়ে ফেরত যেতে চায় না। তবে যারা অসচ্ছল, তাদের এটা কিনতে সমস্যা হয়। আমরা প্রকল্পের আওতায় মেয়েদের স্যানিটারি প্যাড সরবরাহ করেছি। ওরা এখন বলে, ‘আপা, প্রজেক্ট শেষ হয়ে গেলে আমরা কীভাবে কিনব?’
সহজলভ্য হতে হবে মাসিক ব্যবস্থাপনার পণ্য
মাসিককে এখনো কোনো কোনো জায়গায় শারীরিক অসুস্থতা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। কিন্তু এটা আসলে সুস্থ স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। এটা নিয়ে বারবার কথা বলা উচিত। মেয়েরা যেন মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে সঠিকভাবে জানতে পারে এবং বলতে পারে, এমন স্বাভাবিক পরিবেশ চাই। এ ছাড়া পিরিয়ডকালে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করা এবং মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার পণ্যগুলো সহজলভ্য করা দরকার।
স্যানিটারি প্যাডের দাম নিয়ন্ত্রণে আনা উচিত
যাঁরা শহরে থাকেন, তাঁদের জন্য স্যানিটারি প্যাড কেনা তুলনামূলক সহজ। কিন্তু যাঁরা গ্রামে থাকেন, তাঁদের স্যানিটারি প্যাড ব্যবহারের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। গ্রামে যে নারীরা থাকেন, তাঁরা মাসের হাতখরচ বাঁচিয়ে প্যাড কিনতে পারছেন কি না, এ বিষয়টা চিন্তা করা উচিত। স্যানিটারি প্যাডের দাম নিয়ন্ত্রণে আনা উচিত।
দোকানে খুচরা প্যাডের ব্যবস্থা করতে হবে
আমি গ্রামে দেখেছি, সেখানে শুধু বাজারেই স্যানিটারি প্যাড রাখা হয়। কিন্তু বাড়ির আশপাশের দোকানগুলোতে প্যাড রাখা হয় না। বাড়ির মেয়েরা খুব একটা বাজারে যান না। ফলে প্যাড কিনতে তাঁরা সমস্যায় পড়েন। আরেকটি সমস্যা হলো, বাসার বাইরে থাকার সময় প্যাড লাগলে পুরো প্যাকেট কিনতে হয়। হয়তো বাসায় পর্যাপ্ত প্যাড আছে বা তখন হাতে ওই পরিমাণ টাকা নেই, তাই ওই সময় পুরো প্যাকেট কেনা কষ্টকর হয়ে পড়ে। দোকানে খুচরা প্যাড বিক্রয়ের ব্যবস্থা থাকলে ভালো হতো।
সামাজিক মাধ্যমে হতে হবে ইতিবাচক প্রচার
এখনকার তরুণেরা দীর্ঘ সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাটান। কিন্তু সেখানে মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে তথ্য খুব একটা পাওয়া যায় না। সামাজিক মাধ্যমে চ্যানেল বা পেজ করে রিলস, ইনফোগ্রাফিকস, কনটেন্ট তুলে ধরে তরুণসমাজকে এ বিষয়ে সচেতন করে তোলা যেতে পারে। একজন নারী গড়ে ৩ হাজার দিন মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় কাটান। বছরের হিসাবে এটা ছয় থেকে আট বছর। তাই বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মাসিক নিয়ে ট্যাবু ভাঙতে হবে
মাসিক বিষয়টি এখনো আমাদের সমাজে ট্যাবু। এই ট্যাবু ভাঙার জন্য আমাদের উদার হয়ে সচেতনভাবে নাগরিক দায়িত্ব পালন করা প্রয়োজন। শিশু-কিশোরদের বইপুস্তকে আমরা বিষয়টিকে প্রতিফলিত করতে পারিনি। এটা সহজভাবে পাঠ্যপুস্তকে তুলে ধরতে হবে। ভাষার ব্যবহার, শব্দের ব্যবহার, আচার-ব্যবহারের মাধ্যমে এই প্রসঙ্গকে সহজভাবে উপস্থাপন করার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই আমাদের এগোতে হবে।
যাঁরা অংশ নিয়েছিলেন
সঞ্চালক
ড. নূর মোহাম্মদ
নির্বাহী পরিচালক, পিএসটিসি
আলোচক
ডা. ফারিহা হাসিন, সহযোগী অধ্যাপক, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (সাবেক বিএসএমএমইউ)
নন্দিনী লোপা
কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর, গ্লোবাল ফাইন্যান্সিং ফ্যাসিলিটি (জিএফএফ), বিশ্বব্যাংক
কানিজ গোফরানী কোরায়শী
প্রজেক্ট ম্যানেজার, পিএসটিসি
ডা. ফারহানা হক
ডিরেক্টর (হেলথ কমিউনিকেশন)
রেডঅরেঞ্জ কমিউনিকেশনস
সাঈদা বানী
প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর, ফেমিনিস্ট অপরচুনিটিস নাউ, ক্রিয়া
রেজিনা আরজু
উপপরিচালক (প্রশিক্ষণ), মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর
মাহবুবা হক কুমকুম
জ্যেষ্ঠ প্রশিক্ষক ও পরামর্শক, এমডিএফ বাংলাদেশ
ডা. মো. মনজুর হোসাইন
প্রোগ্রাম ম্যানেজার (এ অ্যান্ড আরএইচ), পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর
অনিতা শরীফ চৌধুরী, টিম লিডার, পিএসটিসি
ডা. মো. মাহবুবুল আলম, হেড অব প্রোগ্রামস, পিএসটিসি
ডা. সুস্মিতা আহমেদ, জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা, আইপাস বাংলাদেশ
মাহমুদা নাসরিন, প্রজেক্ট ম্যানেজার, পিএসটিসি
প্রিয়তা মণ্ডল
চেয়ারপারসন, ন্যাশনাল ইয়ুথ নেটওয়ার্ক (নয়ন)
তাহরিমা তাসলিম
সদস্য, ন্যাশনাল ইয়ুথ নেটওয়ার্ক (নয়ন)
সুমাইয়া আক্তার
ইন্টার্ন, পিএসটিসি (শিক্ষার্থী, পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)
শুভাশীষ কুমার রিমন, ইন্টার্ন, পিএসটিসি (শিক্ষার্থী, পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)
ড. মো. গোলাম রহমান
সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
সাহিদুল ইসলাম চৌধুরী, উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
উচ্চশিক্ষার প্রসারে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে দেশে ১০৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখছে। ২৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বনশ্রীতে আজকের পত্রিকার
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫প্রতিবছরের ১১ জুলাই পালিত হয় বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস। দিবসটি উপলক্ষে ৮ জুলাই ঢাকায় আজকের পত্রিকা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় ‘ন্যায্য ও সম্ভাবনাময় বিশ্বে পছন্দের পরিবার গড়তে প্রয়োজন তারুণ্যের ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক। আয়োজনে জনসংখ্যা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পপুলেশন সার্ভিসেস...
১১ জুলাই ২০২৫আগামীর পৃথিবী গড়তে তরুণদের ক্ষমতায়ন জরুরি। নীতিনির্ধারণী ক্ষেত্রে তাঁদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। বিশেষ করে ন্যায্য ও সম্ভাবনায় বিশ্বে নিজেদের পরিবার গঠনের ক্ষেত্রে তারুণ্যকে ক্ষমতায়ন করতে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। সম্পর্ক, পরিবার গঠন, পিতামাতার ভূমিকা গ্রহণ বিষয়ে সচেতন...
০৯ জুলাই ২০২৫নারীর মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও সুরক্ষা নিয়ে জনসমক্ষে আলোচনা ও সচেতনতা জরুরি। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্কার ভেঙে বিষয়টিকে নারী ও পুরুষ সবার কাছে সহজ ও স্বাভাবিক করে তুলতে সবাইকে কাজ করতে হবে। স্যানিটারি প্যাডের সহজলভ্যতা, তা ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকা এবং ব্যবহারের পরে পরিবেশসম্মতভাবে ফেলে দেওয়ার দিক
২৫ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
নারীর মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও সুরক্ষা নিয়ে জনসমক্ষে আলোচনা ও সচেতনতা জরুরি। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্কার ভেঙে বিষয়টিকে নারী ও পুরুষ সবার কাছে সহজ ও স্বাভাবিক করে তুলতে সবাইকে কাজ করতে হবে। স্যানিটারি প্যাডের সহজলভ্যতা, তা ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকা এবং ব্যবহারের পরে পরিবেশসম্মতভাবে ফেলে দেওয়ার দিকেও লক্ষ রাখা দরকার। মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও সুরক্ষায় দেশে ইতিবাচক কিছু পরিবর্তন এলেও এখনো অনেক কিছু করার বাকি।
নারীর স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞ, নারী অধিকারকর্মী এবং পর্যবেক্ষকেরা গতকাল রোববার দৈনিক ‘আজকের পত্রিকা’ আয়োজিত ‘মাসিকবান্ধব বিশ্বের জন্য একতা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এমন অভিমত দিয়েছেন।
মাসিক স্বাস্থ্যবিধি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা নারীর মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও সুরক্ষা নিয়ে নানা পর্যায়ের আলোচনা করেন। ‘আজকের পত্রিকা’ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠক আয়োজনে সহযোগিতা করেছে জনসংখ্যা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পপুলেশন সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (পিএসটিসি) এবং প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল প্ল্যানড প্যারেন্টহুড ফেডারেশন (আইপিপিএফ)।
পিএসটিসির নির্বাহী পরিচালক ডা. নূর মোহাম্মদের সঞ্চালনায় আয়োজনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন পিএসটিসির টিম লিডার অনিতা শরীফ চৌধুরী। তিনি বলেন, বাংলাদেশের শতকরা ৮০ ভাগ নারী ট্যাবু (নিষিদ্ধ বিষয়) ও কুসংস্কারের কারণে মাসিক নিয়ে কথা বলেন না। এ কারণে তাঁরা সঠিকভাবে মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা করতে পারেন না। অন্য দিকে মাসিক ব্যবস্থাপনার সরঞ্জামাদি, নারীবান্ধব টয়লেট ব্যবস্থা, মাসিক সম্পর্কিত স্বাস্থ্য সচেতনতা না থাকায় নারীর স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন নারী, পথ বা বস্তির তরুণী এবং বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নারীরা বেশি সমস্যার মধ্যে আছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যাগ্রস্ত এলাকায়, বিশেষ করে বন্যার সময়ে মাসিক নিয়ে বড় সমস্যায় পড়েন নারীরা।
অনিতা শরীফের তুলে ধরা সার্বিক চিত্রের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের নারীদের মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও সুরক্ষা নিয়ে আলোচনা করেন বিশেষজ্ঞসহ অতিথিরা।
বক্তারা নগর থেকে শুরু করে গ্রামীণসহ প্রান্তিক পর্যায়ে নারীর মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও সুরক্ষার চ্যালেঞ্জের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন। তাঁরা চ্যালেঞ্জগুলো উত্তরণের সম্ভাব্য উপায় নিয়েও কথা বলেন।
বৈঠকের সঞ্চালক পিএসটিসির নির্বাহী পরিচালক ডা. নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘মাসিক নিয়ে আমরা যে কণ্ঠস্বর তৈরি করেছি, এটা ছড়িয়ে দিতে চাই। এটাই আমাদের এই সংলাপের মূল উদ্দেশ্য। পরিবারের প্রত্যেকটা মানুষকে বোঝাতে হবে যে এটা নিষিদ্ধ কোনো বিষয় নয়। শিক্ষকদের বলতে হবে, এটা বাসায় নয় শিক্ষার্থীদের সামনেই আলোচনা করতে হবে।’
মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশাসন ও প্রশিক্ষণ) রেজিনা আরজু লাভলী বলেন, এ ধরনের বৈঠক হওয়া জরুরি। তবে গবেষণা, সেমিনার ইত্যাদির তুলনায় প্রয়োগ কতটুক হচ্ছে? তাই স্বল্প মেয়াদে পাইলট আকারে কিছু করা যায় কি না, সেটা ভাবা দরকার।
পরিবারের প্রত্যেকটা মানুষকে বোঝাতে হবে যে মাসিক নিষিদ্ধ কোনো বিষয় নয়। ডা. নূর মোহাম্মদ পিএসটিসির নির্বাহী পরিচালক
পরিবারের সংস্কার ভাঙার একটি উৎসাহব্যঞ্জক উদাহরণ দেন পরিবার-পরিকল্পনা অধিদপ্তরের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মো. মনজুর হোসাইন। তিনি বলেন, ‘১৯৮০ সালের কথা। আমার খালাতো বোনের প্রথম মাসিক হয়েছে। খালা খালুকে বললেন, তোমার মেয়ের শরীর খারাপ করেছে। খালু শুনে বাজার থেকে প্যাড আর মিষ্টি নিয়ে এলেন। খালার কাছে প্যাডটা দিয়ে বললেন, এটা মেয়ের ব্যবস্থাপনার জন্য। খালা জিজ্ঞেস করলেন, মিষ্টি কিসের জন্য? খালু বললেন, এই মিষ্টি তুমি সবাইকে বিলিয়ে বল যে আমার মেয়ের মাসিক হয়েছে। খালার প্রতিক্রিয়া ছিল, এ রকম একটা শরমের বিষয় আমি কীভাবে মানুষকে বলব? খালু বললেন, “আমি তো আজকে আশ্বস্ত হলাম যে আমার মেয়েটা স্বাভাবিক।” সুতরাং আমি বলতে চাই, মাসিক একটি স্বাভাবিক বিষয়। এ সম্পর্কে আমাদের যে লজ্জা ভয় তা থাকার কোনো কথা নয়।’
শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বিষয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এমডিএফের বাংলাদেশ কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ প্রশিক্ষক মাহবুবা হক কুমকুম ব্যবহৃত স্যানিট্যারি প্যাড নষ্ট করার (ডিসপোজাল) সমস্যাটি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বিশেষ করে বন্যার সময় কেমন হবে, স্কুল-কলেজে কীভাবে হবে। গ্রাম বা প্রান্তিক অঞ্চলে আরও সমস্যা।
পিএসটিসির হেড অব প্রোগ্রামস ডা. মো. মাহবুবুল আলম বলেন, মাসিকের সঠিক ব্যবস্থাপনা না করা হলে স্বাস্থ্যের ইস্যু আসে। তাই এটাকে স্বাস্থ্যের সঙ্গে চিন্তা করতে হবে।
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (সাবেক বিএসএমএমইউ) সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারিহা হোসেন বলেন, ‘আমাদের মেয়েদের স্কুলে অনুপস্থিত থাকার গুরুত্বপূর্ণ একটা কারণ হলো, অপরিষ্কার টয়লেট ওরা ব্যবহার করতে চায় না।’
ফেমিনিস্ট অপরচুনিটিস নাউ, ক্রিয়া-এর প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর সাঈদা বাণী শহরের প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিবেশ কতটা নারীবান্ধব, সেই প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় বিষয়টি যুক্ত আছে কি না। যে নারীরা মাঠপর্যায়ে কাজ করেন মাসিকের দিনগুলোতে তাঁদের অফিসের ডেস্কে কাজ দেওয়া যায় কি না দেখতে হবে।
আইপাস বাংলাদেশের সিনিয়র অ্যাডভাইজর সুস্মিতা আহমেদ বলেন, ‘আম্মা বলতেন, মাসিকের কাপড় এমন জায়গায় মেলে দিতে হবে আব্বা যেন না দেখে। সেখান থেকে এক ধাপ এগিয়েছি। আমার মেয়েকে বলেছি, তোমার মাসিকের সময় স্যানিটারি প্যাডের কথা বললে বাবা কিনে এনে দেবে। আমার মেয়ে তার বাবার কাছে প্যাড চাইতে শিখেছে। এটা একটা উত্তরণ।’
রেডঅরেঞ্জ কমিউনিকেশনসের হেলথ কমিউনিকেশন ডিরেক্টর ডা. ফারহানা হক বলেন, মাসিকের বিষয়টাকে কিশোরীদের কাছে এমনভাবে ভয়াবহ করে তোলা হয় যে তারা আতঙ্কিত হয়ে যায়।
পিএসটিসির প্রজেক্ট ম্যানেজার কানিজ গোফরানি কুরাইশি বলেন, একই দিন (২৮ মে) নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস। এ বিষয়টাও মাসিকের সঙ্গে সম্পর্কিত। মাসিকের ব্যবস্থাপনা যদি সঠিক না হয়, মাতৃত্ব তখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়।
মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় মাসিকের বিষয়টি যুক্ত আছে কি না দেখতে হবে। সাঈদা বাণী প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর, ফেমিনিস্ট অপরচুনিটিস নাউ, ক্রিয়া
বিশ্বব্যাংকের গ্লোবাল ফাইন্যান্সিং ফ্যাসিলিটির (জিএফএফ) কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর নন্দিনী লোপা মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার সরঞ্জামগুলো সুলভে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে নিয়ে যাওয়ার উপায় নিয়ে আলোচনায় জোর দেন।
পিএসটিসির প্রজেক্ট ম্যানেজার মাহমুদা নাসরিন মনে করেন বস্তির মেয়েদের জন্য স্যানিটারি প্যাড বেশ কাজের। কারণ বস্তির একটা বাথরুম ২০টি পর্যন্ত পরিবার ব্যবহার করে। তবে তাদের নিজে থেকে প্যাড কেনার আর্থিক সমস্যা আছে।
ন্যাশনাল ইয়ুথ নেটওয়ার্কের চেয়ারপারসন প্রিয়তা মণ্ডল বলেন, মেয়েরা যেন মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে সঠিকভাবে জানতে পারে এবং বলতে পারে এমন স্বাভাবিক পরিবেশ চাই। এ ছাড়া পিরিয়ডকালীন শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং পুষ্টি নিশ্চিত করা এবং মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার পণ্যগুলো সহজলভ্য করা দরকার।
বৈঠকে নিজের অভিজ্ঞতা জানান তরুণেরাও। ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং ন্যাশনাল ইয়ুথ নেটওয়ার্কের সদস্য তাহরিমা তাসলিম স্যানিটারি ন্যাপকিন সুলভে পাওয়ার ব্যবস্থা করতে বলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শুভাশীষ কুমার ইমন বললেন, এখনকার তরুণেরা দীর্ঘ সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাটান। কিন্তু সেখানে মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে তথ্য খুব একটা পাওয়া যায় না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার বলেন, বাসার বাইরে থাকার সময় প্যাড লাগলে পুরো প্যাকেট কিনতে হয়। দোকানে খুচরা প্যাডের ব্যবস্থা থাকলে ভালো হতো।
গোলটেবিল বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য দেন দৈনিক আজকের পত্রিকার সম্পাদক ড. গোলাম রহমান। তিনি বলেন, ‘ইস্যুটি এখনো আমাদের সমাজে ট্যাবু হিসেবে আছে। এটা ভাঙতে উদার মনে সচেতনভাবে নাগরিক দায়িত্ব পালন প্রয়োজন।’
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন দৈনিক আজকের পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কামরুল হাসান এবং পিএসটিসি ও আজকের পত্রিকার বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা।
নারীর মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও সুরক্ষা নিয়ে জনসমক্ষে আলোচনা ও সচেতনতা জরুরি। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্কার ভেঙে বিষয়টিকে নারী ও পুরুষ সবার কাছে সহজ ও স্বাভাবিক করে তুলতে সবাইকে কাজ করতে হবে। স্যানিটারি প্যাডের সহজলভ্যতা, তা ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকা এবং ব্যবহারের পরে পরিবেশসম্মতভাবে ফেলে দেওয়ার দিকেও লক্ষ রাখা দরকার। মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও সুরক্ষায় দেশে ইতিবাচক কিছু পরিবর্তন এলেও এখনো অনেক কিছু করার বাকি।
নারীর স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞ, নারী অধিকারকর্মী এবং পর্যবেক্ষকেরা গতকাল রোববার দৈনিক ‘আজকের পত্রিকা’ আয়োজিত ‘মাসিকবান্ধব বিশ্বের জন্য একতা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এমন অভিমত দিয়েছেন।
মাসিক স্বাস্থ্যবিধি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা নারীর মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও সুরক্ষা নিয়ে নানা পর্যায়ের আলোচনা করেন। ‘আজকের পত্রিকা’ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠক আয়োজনে সহযোগিতা করেছে জনসংখ্যা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পপুলেশন সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (পিএসটিসি) এবং প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল প্ল্যানড প্যারেন্টহুড ফেডারেশন (আইপিপিএফ)।
পিএসটিসির নির্বাহী পরিচালক ডা. নূর মোহাম্মদের সঞ্চালনায় আয়োজনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন পিএসটিসির টিম লিডার অনিতা শরীফ চৌধুরী। তিনি বলেন, বাংলাদেশের শতকরা ৮০ ভাগ নারী ট্যাবু (নিষিদ্ধ বিষয়) ও কুসংস্কারের কারণে মাসিক নিয়ে কথা বলেন না। এ কারণে তাঁরা সঠিকভাবে মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা করতে পারেন না। অন্য দিকে মাসিক ব্যবস্থাপনার সরঞ্জামাদি, নারীবান্ধব টয়লেট ব্যবস্থা, মাসিক সম্পর্কিত স্বাস্থ্য সচেতনতা না থাকায় নারীর স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন নারী, পথ বা বস্তির তরুণী এবং বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নারীরা বেশি সমস্যার মধ্যে আছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যাগ্রস্ত এলাকায়, বিশেষ করে বন্যার সময়ে মাসিক নিয়ে বড় সমস্যায় পড়েন নারীরা।
অনিতা শরীফের তুলে ধরা সার্বিক চিত্রের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের নারীদের মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও সুরক্ষা নিয়ে আলোচনা করেন বিশেষজ্ঞসহ অতিথিরা।
বক্তারা নগর থেকে শুরু করে গ্রামীণসহ প্রান্তিক পর্যায়ে নারীর মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও সুরক্ষার চ্যালেঞ্জের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন। তাঁরা চ্যালেঞ্জগুলো উত্তরণের সম্ভাব্য উপায় নিয়েও কথা বলেন।
বৈঠকের সঞ্চালক পিএসটিসির নির্বাহী পরিচালক ডা. নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘মাসিক নিয়ে আমরা যে কণ্ঠস্বর তৈরি করেছি, এটা ছড়িয়ে দিতে চাই। এটাই আমাদের এই সংলাপের মূল উদ্দেশ্য। পরিবারের প্রত্যেকটা মানুষকে বোঝাতে হবে যে এটা নিষিদ্ধ কোনো বিষয় নয়। শিক্ষকদের বলতে হবে, এটা বাসায় নয় শিক্ষার্থীদের সামনেই আলোচনা করতে হবে।’
মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশাসন ও প্রশিক্ষণ) রেজিনা আরজু লাভলী বলেন, এ ধরনের বৈঠক হওয়া জরুরি। তবে গবেষণা, সেমিনার ইত্যাদির তুলনায় প্রয়োগ কতটুক হচ্ছে? তাই স্বল্প মেয়াদে পাইলট আকারে কিছু করা যায় কি না, সেটা ভাবা দরকার।
পরিবারের প্রত্যেকটা মানুষকে বোঝাতে হবে যে মাসিক নিষিদ্ধ কোনো বিষয় নয়। ডা. নূর মোহাম্মদ পিএসটিসির নির্বাহী পরিচালক
পরিবারের সংস্কার ভাঙার একটি উৎসাহব্যঞ্জক উদাহরণ দেন পরিবার-পরিকল্পনা অধিদপ্তরের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মো. মনজুর হোসাইন। তিনি বলেন, ‘১৯৮০ সালের কথা। আমার খালাতো বোনের প্রথম মাসিক হয়েছে। খালা খালুকে বললেন, তোমার মেয়ের শরীর খারাপ করেছে। খালু শুনে বাজার থেকে প্যাড আর মিষ্টি নিয়ে এলেন। খালার কাছে প্যাডটা দিয়ে বললেন, এটা মেয়ের ব্যবস্থাপনার জন্য। খালা জিজ্ঞেস করলেন, মিষ্টি কিসের জন্য? খালু বললেন, এই মিষ্টি তুমি সবাইকে বিলিয়ে বল যে আমার মেয়ের মাসিক হয়েছে। খালার প্রতিক্রিয়া ছিল, এ রকম একটা শরমের বিষয় আমি কীভাবে মানুষকে বলব? খালু বললেন, “আমি তো আজকে আশ্বস্ত হলাম যে আমার মেয়েটা স্বাভাবিক।” সুতরাং আমি বলতে চাই, মাসিক একটি স্বাভাবিক বিষয়। এ সম্পর্কে আমাদের যে লজ্জা ভয় তা থাকার কোনো কথা নয়।’
শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বিষয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এমডিএফের বাংলাদেশ কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ প্রশিক্ষক মাহবুবা হক কুমকুম ব্যবহৃত স্যানিট্যারি প্যাড নষ্ট করার (ডিসপোজাল) সমস্যাটি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বিশেষ করে বন্যার সময় কেমন হবে, স্কুল-কলেজে কীভাবে হবে। গ্রাম বা প্রান্তিক অঞ্চলে আরও সমস্যা।
পিএসটিসির হেড অব প্রোগ্রামস ডা. মো. মাহবুবুল আলম বলেন, মাসিকের সঠিক ব্যবস্থাপনা না করা হলে স্বাস্থ্যের ইস্যু আসে। তাই এটাকে স্বাস্থ্যের সঙ্গে চিন্তা করতে হবে।
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (সাবেক বিএসএমএমইউ) সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারিহা হোসেন বলেন, ‘আমাদের মেয়েদের স্কুলে অনুপস্থিত থাকার গুরুত্বপূর্ণ একটা কারণ হলো, অপরিষ্কার টয়লেট ওরা ব্যবহার করতে চায় না।’
ফেমিনিস্ট অপরচুনিটিস নাউ, ক্রিয়া-এর প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর সাঈদা বাণী শহরের প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিবেশ কতটা নারীবান্ধব, সেই প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় বিষয়টি যুক্ত আছে কি না। যে নারীরা মাঠপর্যায়ে কাজ করেন মাসিকের দিনগুলোতে তাঁদের অফিসের ডেস্কে কাজ দেওয়া যায় কি না দেখতে হবে।
আইপাস বাংলাদেশের সিনিয়র অ্যাডভাইজর সুস্মিতা আহমেদ বলেন, ‘আম্মা বলতেন, মাসিকের কাপড় এমন জায়গায় মেলে দিতে হবে আব্বা যেন না দেখে। সেখান থেকে এক ধাপ এগিয়েছি। আমার মেয়েকে বলেছি, তোমার মাসিকের সময় স্যানিটারি প্যাডের কথা বললে বাবা কিনে এনে দেবে। আমার মেয়ে তার বাবার কাছে প্যাড চাইতে শিখেছে। এটা একটা উত্তরণ।’
রেডঅরেঞ্জ কমিউনিকেশনসের হেলথ কমিউনিকেশন ডিরেক্টর ডা. ফারহানা হক বলেন, মাসিকের বিষয়টাকে কিশোরীদের কাছে এমনভাবে ভয়াবহ করে তোলা হয় যে তারা আতঙ্কিত হয়ে যায়।
পিএসটিসির প্রজেক্ট ম্যানেজার কানিজ গোফরানি কুরাইশি বলেন, একই দিন (২৮ মে) নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস। এ বিষয়টাও মাসিকের সঙ্গে সম্পর্কিত। মাসিকের ব্যবস্থাপনা যদি সঠিক না হয়, মাতৃত্ব তখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়।
মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় মাসিকের বিষয়টি যুক্ত আছে কি না দেখতে হবে। সাঈদা বাণী প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর, ফেমিনিস্ট অপরচুনিটিস নাউ, ক্রিয়া
বিশ্বব্যাংকের গ্লোবাল ফাইন্যান্সিং ফ্যাসিলিটির (জিএফএফ) কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর নন্দিনী লোপা মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার সরঞ্জামগুলো সুলভে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে নিয়ে যাওয়ার উপায় নিয়ে আলোচনায় জোর দেন।
পিএসটিসির প্রজেক্ট ম্যানেজার মাহমুদা নাসরিন মনে করেন বস্তির মেয়েদের জন্য স্যানিটারি প্যাড বেশ কাজের। কারণ বস্তির একটা বাথরুম ২০টি পর্যন্ত পরিবার ব্যবহার করে। তবে তাদের নিজে থেকে প্যাড কেনার আর্থিক সমস্যা আছে।
ন্যাশনাল ইয়ুথ নেটওয়ার্কের চেয়ারপারসন প্রিয়তা মণ্ডল বলেন, মেয়েরা যেন মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে সঠিকভাবে জানতে পারে এবং বলতে পারে এমন স্বাভাবিক পরিবেশ চাই। এ ছাড়া পিরিয়ডকালীন শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং পুষ্টি নিশ্চিত করা এবং মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার পণ্যগুলো সহজলভ্য করা দরকার।
বৈঠকে নিজের অভিজ্ঞতা জানান তরুণেরাও। ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং ন্যাশনাল ইয়ুথ নেটওয়ার্কের সদস্য তাহরিমা তাসলিম স্যানিটারি ন্যাপকিন সুলভে পাওয়ার ব্যবস্থা করতে বলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শুভাশীষ কুমার ইমন বললেন, এখনকার তরুণেরা দীর্ঘ সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাটান। কিন্তু সেখানে মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে তথ্য খুব একটা পাওয়া যায় না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার বলেন, বাসার বাইরে থাকার সময় প্যাড লাগলে পুরো প্যাকেট কিনতে হয়। দোকানে খুচরা প্যাডের ব্যবস্থা থাকলে ভালো হতো।
গোলটেবিল বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য দেন দৈনিক আজকের পত্রিকার সম্পাদক ড. গোলাম রহমান। তিনি বলেন, ‘ইস্যুটি এখনো আমাদের সমাজে ট্যাবু হিসেবে আছে। এটা ভাঙতে উদার মনে সচেতনভাবে নাগরিক দায়িত্ব পালন প্রয়োজন।’
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন দৈনিক আজকের পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কামরুল হাসান এবং পিএসটিসি ও আজকের পত্রিকার বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা।
উচ্চশিক্ষার প্রসারে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে দেশে ১০৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখছে। ২৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বনশ্রীতে আজকের পত্রিকার
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫প্রতিবছরের ১১ জুলাই পালিত হয় বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস। দিবসটি উপলক্ষে ৮ জুলাই ঢাকায় আজকের পত্রিকা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় ‘ন্যায্য ও সম্ভাবনাময় বিশ্বে পছন্দের পরিবার গড়তে প্রয়োজন তারুণ্যের ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক। আয়োজনে জনসংখ্যা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পপুলেশন সার্ভিসেস...
১১ জুলাই ২০২৫আগামীর পৃথিবী গড়তে তরুণদের ক্ষমতায়ন জরুরি। নীতিনির্ধারণী ক্ষেত্রে তাঁদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। বিশেষ করে ন্যায্য ও সম্ভাবনায় বিশ্বে নিজেদের পরিবার গঠনের ক্ষেত্রে তারুণ্যকে ক্ষমতায়ন করতে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। সম্পর্ক, পরিবার গঠন, পিতামাতার ভূমিকা গ্রহণ বিষয়ে সচেতন...
০৯ জুলাই ২০২৫মাসিক বা পিরিয়ড নারীজীবনের খুব স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। তবে আমাদের দেশে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে অনেকে অস্বস্তিতে পড়েন। মাসিকের ব্যবস্থাপনা সঠিক না হলে মাতৃত্ব ঝুঁকিপূর্ণ হয়। প্রতিবছরের ২৮ মে বিশ্বব্যাপী মাসিক স্বাস্থ্যবিধি দিবস পালন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে ২৫ মে আজকের পত্রিকা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত
২৮ মে ২০২৫