Ajker Patrika

‘বাইকটা না থাকলে আমগো অস্তিত্বই থাকত না’

ফজলুল কবির
আপডেট : ১৯ আগস্ট ২০২২, ২২: ৫৬
‘বাইকটা না থাকলে আমগো অস্তিত্বই থাকত না’

শহরটার আজকে কী হইলো?
আনোয়ার: আর তো কয় দিন। তারপর তো আবার সব বন্ধ। সবাই বাড়ি যাইতেছে ভাই। সকালে মাওয়া গেছিলাম। ভোর ৫টার দিকে। মানুষ আর মানুষ। আমি ৪টার দিকে তেজগাঁও থেইকা রওনা দিছি, পৌঁছাইছি ৫টায়। এক ঘণ্টা লাগে। সকাল তো। জ্যাম নাই। সবাই বাড়ি যাইতেছে।

লকডাউন না?
আনোয়ার: লকডাউন তো। এই শুইনাই তো আরও ছুটতেছে।

তো যাইতেছে কেমনে?
আনোয়ার: কেউ যায় হোন্ডায় (মোটরসাইকেলে), কেউ সিএনজিতে, কিছু প্রাইভেট কারে, মাইক্রোতে—কত পথ আছে।

আপনার বাড়ি কই?
আনোয়ার: আমার বাড়ি গোপালগঞ্জ। ঘাটের থেইকা ৫০ কিলো আমার বাড়ি।

গোপালগঞ্জ কোন জায়গায়?
আনোয়ার: মকসুদপুর। ঘাট থেইকা বেশিক্ষণ লাগে না।

ঢাকায় আসছেন কবে? এই বাইক চালাতেই?
আনোয়ার: না, অনেক আগে থেইকা। কমিউনিটি সেন্টারে চাকরি করি। এখন কাজ নাই তো, তাই বাইক চালাই। এইটা যদি ভাই না থাকত, আমগো কোনো অস্তিত্বই থাকত না।

কোন কমিউনিটি সেন্টার?
আনোয়ার: বাংলামোটরে। এখন তো কোনো কাজ নাই। কোনো অনুষ্ঠান নাই। চলা কঠিন। এই একটা বছর হোন্ডায় (মোটরসাইকেলে) পইড়া রইছে।

আয় হয় কেমন?
আনোয়ার: মোটামুটি। ওই যে বলে না, কিছু না পাওয়ার চাইতে ভালো। অনেক ঝামেলা। পুলিশ অনেক ঝামেলা করে। আরও নানা ডিস্টার্ব (বাধা) আছে।

পুলিশ কী ঝামেলা করে?
আনোয়ার: কাগজ ঠিক আছে। তারপরও ধরতে চাইলে তো ফসকানোর কায়দা নাই।

আর কি ডিস্টার্ব?
আনোয়ার: ধরেন রাতের বেলা একজনরে নিয়া গেলেন। সরু গলিতে ঢুইকা কইল উপর থেইকা টাকা আইনা দিতেছি। তারপর আর দেখা নাই।

এ রকম হইছে আপনার সাথে?
আনোয়ার: হইছে। বেশি না। তবে অনেক হয় এমন। আবার উল্টা ঘটনাও আছে। তবে ভাই একটা কথা কই, দামি বাইক দেইখা উঠবেন না। তারা হয়তো বড়লোকের পোলাপান (ছেলে)। বাসায় টাকা–পয়সা নিয়া ঝামেলা কইরা বাইর (বের) হইছে। ঠেক দিব (ছিনতাই করবে)।

আপনি কি তাহলে করোনার সময়ই বাইক চালানো শুরু করছেন?
আনোয়ার: হ্যাঁ, এক বছর।

গেল বছর লকডাউনের সময় কী করছেন?
আনোয়ার: খুব কষ্ট গেছে ভাই। ২৫ দিন বইসা ছিলাম। বাসায় ছোট বাচ্চা, বউ, বাড়িতে বাপ–মা।

বাসায় কে কে আছে?
আনোয়ার: বউ, বাচ্চা। বাড়িতে বাপ–মা আছে, বোন, আর ছোট ভাই আছে।

বাচ্চার বয়স কত?
আনোয়ার: ২০ মাস। এখন হাঁটে। নয় মাসে হাঁটা শিখছে।

ভাই–বোন কি ওই দুজনই?
আনোয়ার: না আরও দুই ভাই আছে। তারা সৌদি (আরব) থাকে। ছোট বোন পড়ে নাইনে। খুব ব্রিলিয়ান্ট।

আপনি কত দূর পড়ছেন?
আনোয়ার: ইন্টারমিডিয়েট (উচ্চমাধ্যমিক) পর্যন্ত পড়ছি। তারপর আর পড়ি নাই। অভাব ছিল। তবে মাথা ভালো ছিল। ক্লাসে রোল ২ ছিল (কোন ক্লাসে, তা বলেননি)।

তা আপনিও তো আপনার ভাইদের মতো বিদেশ যাইতে পারতেন?
আনোয়ার: গেছিলাম তো। আরব আমিরাত। তারপর ফিরলাম। ২০১৩ সালে দেশের অবস্থা যখন খারাপ, তখন অনেকে ফেরত আসল না, ওই সময় দেশে আসছি। কিছু নিয়া আসতে পারি নাই।

তারপর এখানে এসে কমিউনিটি সেন্টারে?
আনোয়ার: হ্যাঁ। আমি ছিলাম সার্ভিস সুপারভাইজার। কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠানের সবকিছু আমার আন্ডারে। কিন্তু করোনায় সব ওলটপালট কইরা দিল।

(পথ ফুরিয়ে গেল। আনোয়ারের চোখে তখন সামনের দিন নিয়ে দুর্ভাবনা, নাকি বিগত দিনের না মেলা অঙ্কের হিসাব—তা বোঝার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলাম। ছবি তুলতে চাইলাম। বললেন, ‘ভাই চেহারাটা যেন না বোঝা যায়।’ আশ্বস্ত করলাম। তোলা ছবি দেখিয়েও নিলাম। তারপর নাগরিক রীতি মেনে ‘আবার দেখা হবে’ বলে দুজন দুদিকে। মাথায় তখন আনোয়ারের বলা কথা, করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী গ্রাফ, লকডাউন ইত্যাদি কেমন জট পাকিয়ে যেতে থাকে।)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে না নেওয়ার প্রস্তাব র‍্যাব ডিজির

পরিপাকতন্ত্রের ওষুধের পেছনেই মানুষের ব্যয় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত