Ajker Patrika

টুলির দুঃখ ঘুচল না

রিমন রহমান, রাজশাহী
টুলির দুঃখ ঘুচল না

ভ্যানে বিক্রির জন্য সাজানো হরেক মাল। বাচ্চাদের জন্য রয়েছে কিছু বেলুন। এই বেলুন পেয়ে সব বাচ্চা খুশিই হয়। কিন্তু যিনি বেলুন বেচেন, তাঁর জীবনটা দুঃখে ভরা। তাই একজন নারী হয়েও হরেক মালের ব্যবসা করতে হয় তাঁকে। ভ্যান চালিয়ে ঘুরতে হয় শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। 

এই নারীর নাম টুলি বেগম (৪০)। রাজশাহী নগরীর বিহারি কলোনিতে তাঁর বাড়ি। টুলি দুই ছেলে আর দুই মেয়ের মা। বিয়ের পর দুই ছেলে আলাদা। এক মেয়ে শ্বশুরবাড়ি। স্বামীর নির্যাতনে আরেক মেয়ে শ্বশুরবাড়ি থাকতে পারে না। মা-মেয়ের মুখের ভাত জোটাতে টুলি এখন হরেক মালের ব্যবসায়ী। 

গত ১৭ আগস্ট নগরীর রেলগেটে দাঁড়িয়ে ছিলেন টুলি। কথা হয় সেখানেই। এভাবে ভ্যান চালিয়ে এই ব্যবসা কেন, জানতে চাইলে টুলি বললেন, ‘সবই কপাল।’ তারপর হড় হড় করে শোনালেন নিজের জীবনের কথা। জানালেন, ১৯৯৭ সালে ঢাকা থেকে এক যুবক কাজের সন্ধানে এসেছিলেন তাঁদের এলাকায়। তাঁর সঙ্গেই টুলির বিয়ে হয়েছিল। তারপর তিনি যখন আড়াই মাসের অন্তঃসত্ত্বা, তখন স্বামী হুমায়ুন কবীর লাপাত্তা হয়ে যান। টুলি তাঁর বাড়িও চিনতেন না। 

পেট চালাতে টুলি তখন শুরু করেন নির্মাণ শ্রমিকের কাজ। পেটের সন্তানের বয়স ছয় মাস হওয়া পর্যন্ত টুলি এই কাজ করেন। সন্তান প্রসবের তিন মাস পর থেকে আবার একই কাজ শুরু করেন। কিছুদিন পর তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দেন হোটেলের কর্মচারী সালাহউদ্দিন। রাজি হয়ে যান টুলির চা দোকানি বাবা। বিয়ে হয়। কোলজুড়ে একে একে আসে আরও তিন সন্তান। সবারই বিয়ে দেওয়া হয়। এবার সংসারে একটু সচ্ছলতা আনার পরিকল্পনা করেন টুলি। 

রাজশাহী নগরীতে ভ্যানে করে হরে কমাল বিক্রি করছেন টুলিতাই গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে ২০১৯ সালে যান সৌদি আরব। গৃহকর্তার নির্যাতন সহ্য করে থাকেন ৯ মাস। মাসে মাসে স্বামীর কাছে পাঠান ২০ হাজার টাকা। ৯ মাস পর দেশে ফিরে দেখলেন, দুই যুগের সংসার ভুলে স্বামী আরেকটা বিয়ে করেছেন। সেই স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা থাকেন। পাঠানো টাকার কিছুই পাননি টুলি। ছেলে দুটোও নিজেদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত। টুলির নিজের একার পেট চালানো যখন দায়, তখন স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে চলে এল বড় মেয়েটা। 

টুলি কী করবেন, ভেবেই পাচ্ছিলেন না। দিশেহারা টুলিকে পরিচিত এক ভাই পরামর্শ দিলেন হরেক মালের ব্যবসার। পরিচিত আরেক ভাই দিলেন তাঁর বাড়িতে পড়ে থাকা ভ্যানটি। আর ৬৫০ টাকা ধার করলেন টুলি। এই পুঁজি নিয়ে নেমে পড়লেন হরেক মালের ব্যবসায়। রোজ ভোরে টুলি বের হন। দুপুরে বাড়ি গিয়ে রান্না করে খান। বিকেলে আবার বের হয়ে রাত ১০টায় বাড়ি ফেরেন। এটাই টুলির রোজকার রুটিন। সারা দিনে রোজগার ১০০-১৫০ টাকা। এই দিয়েই চলছে মা-মেয়ের সংসার। 

টুলি বললেন, ‘প্রথম স্বামী চলে যাওয়ার পর আরেকটা বিয়ে করনু। ছেলেপুলেকে কষ্ট করে মানুষ করনু। বিয়ে-শাদি দিয়ে মুক্ত হনু। তারপর একটু সুখের আশায় সৌদি গেনু। কিন্তু সুখ হোলো না। ২২ বছর আগে যা ছিনু, এখনো তাই। আমার দুঃখ কোনো দিনই ঘুঁচলো ন্যা।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত