Ajker Patrika

শাপলার দাবি ছাড়তে চায় না নাগরিক ঐক্য

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
শাপলার দাবি ছাড়তে চায় না নাগরিক ঐক্য

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতীকের তালিকা হালনাগাদ করার উদ্যোগ মাসকয়েক আগেই নেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তাদের এই উদ্যোগের মধ্যেই একটি প্রতীক দুটি রাজনৈতিক দল চেয়ে আবেদন করে। প্রতীকটি হলো—শাপলা। এটিকে এখনো গ্যাজেটভুক্ত করেনি ইসি। করা হলে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের নিয়ে গড়া দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) যেন সেটি পায়, তা তারা জানিয়েছে।

গত ২২ জুন শাপলা প্রতীক চেয়ে ইসিতে নিবন্ধনের আবেদন করে এনসিপি। তাদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় পছন্দের প্রতীক যথাক্রমে কলম ও মোবাইল ফোন। দলটির নেতারা আশাবাদী, শাপলাই তাঁরা প্রতীক হিসেবে পাবেন।

খোদ এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সেদিনই সাংবাদিকদের বলেছিলেন, শাপলা তাঁদের প্রথম পছন্দ। তাঁদের আশা, ‘জনগণের মার্কা হিসেবে, গণ-অভ্যুত্থানের মার্কা হিসেবে, সাধারণ গ্রামবাংলার প্রতীক হিসেবে’ শাপলা মার্কা এনসিপি পাবে।

তবে এ নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে নাগরিক ঐক্য। তাদেরও দলীয় প্রতীক হিসেবে শাপলা-ই পছন্দ। নাগরিক ঐক্যের নেতাদের ভাষ্য, এনসিপি শাপলা প্রতীক চেয়ে আবেদনের পাঁচ দিন আগে দলীয় প্রতীক কেটলি পাল্টে শাপলার জন্য আবেদন করেছিলেন তাঁরা।

কিন্তু সংবাদমাধ্যম থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এনসিপি শাপলা প্রতীক পেতে যাচ্ছে—এমন প্রচার উদ্বেগে ফেলেছে মাহমুদুর রহমান মান্নার দলটিকে।

তাই হালনাগাদ তালিকায় শাপলা যুক্ত হলে তা যেন নাগরিক ঐক্যকেই দেওয়া হয়া—এ দাবি নিয়ে আজ বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে হাজির হয় তাদের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল।

সেখানে এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে দলটির বৈঠক হয়। বৈঠকে ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদও উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা একটি দাবির কথা জানাতে এসেছিলাম। গত ১৭ জুন আমাদের দলীয় প্রতীক কেটলি পরিবর্তন করে প্রথমে শাপলা বা দ্বিতীয় দোয়েল চেয়ে আবেদন করেছিলাম আমরা।

‘আমরা ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছি। ২০২৪ সালেও করেছিলাম। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে আমরা যখন নিবন্ধন পাই, তখন পছন্দ অনুযায়ী প্রতীক পাইনি। তাই ১৭ জুন আমাদের প্রতীক পরিবর্তন করে শাপলা বা দোয়েল চেয়েছিলাম।

‘কিন্তু দলের নিবন্ধন আবেদনের শেষদিন গত ২২ জুন একটা দল (জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি) তাদের আবেদনে দলীয় প্রতীক হিসেবে শাপলা চেয়েছে। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি এমনভাবে এসেছে যে, কমিশন প্রতীকটি তাদের বরাদ্দ দিয়ে দিয়েছে। সেই জায়গা থেকে আমরা আমাদের উদ্বেগ জানাতে ইসিতে এসেছিলাম। এখন পর্যন্ত দল নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ হয়নি। তাই এ ধরনের বিষয় সামনে আসা যৌক্তিক নয়।’

সাকিব আনোয়ার বলেন, ‘আজকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে আমরা জানিয়েছি, যদি নতুন করে শাপলা গেজেটভুক্ত হয়, তাহলে আমরা যেহেতু ১৭ জুন আবেদন করেছি, তাই শাপলা প্রতীকটি আমাদের প্রাপ্য। আমরা এখন নতুন বাংলাদেশে আছি। এখানে সরকারি দল বলে কিছু নাই যে তারা (এনসিপি) বিশেষ কোনো সুযোগ-সুবিধা পাবে। এটি আমরা প্রত্যাশা করি না। আমরা আশা করছি, কমিশন বিষয়গুলো বিবেচনা করবে।’

বৈঠকে ইসির পক্ষ থেকে কী বলা হয়েছে—তা জানতে চাওয়া হলে নাগরিক ঐক্যের এই নেতা বলেন, ‘কমিশন বলেছে কে নিবন্ধন পাবে, কে পাবে না—তা এখন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়নি। শাপলা যদি প্রতীক হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়, তাহলে আমরা যেহেতু এরই মধ্যে আবেদন করেছি, তাই আমাদের বরাদ্দ দেওয়া হবে। আমরা বঞ্চিত হব না—সেটি আমরা যেমন প্রত্যাশা করি, কমিশনও আমাদের তা নিশ্চিত করেছে।

‘কমিশন যৌক্তিকভাবে বিষয়টি বিবেচনা করবে। আমরা দুটি প্রতীক চেয়েছি। শাপলা যদি গেজেটভুক্ত হয়, তাহলে আমাদের শাপলা প্রতীক যেন দেওয়া হয়। আর যদি শাপলা গেজেটভুক্ত না হয়, তাহলে আমাদের দ্বিতীয় পছন্দ দোয়েল যেন দেওয়া হয়।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সাকিব আনোয়ার বলেন, ‘আমরা কেউ ভবিষ্যৎ দেখতে পারি না। শাপলা প্রতীক চেয়ে আমাদের আবেদনের পাঁচ দিন পর অন্য কোনো দল নতুন করে নিবন্ধনের জন্য আসবে এবং তারাও একই প্রতীক বরাদ্দ চাইবে, তা নিশ্চয়ই আমরা আগে থেকে জানতাম না।

‘আমরা তখন বিষয়টি জানতামই না। পরে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি এমনভাবে এসেছে, কমিশন যেন প্রতীকটি তাদের বরাদ্দ দিয়ে দিয়েছে। আমরা আমাদের সেই কনসার্নের জায়গাটা কমিশনকে জানাতে এসেছিলাম। এখন পর্যন্ত শাপলা প্রতীক গেজেটভুক্তই হয়নি। আগে এটি তালিকাভুক্ত হবে। তালিকাভুক্ত হলে এটির প্রাপ্য আমরা, সেটি জানাতে এসেছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত