
সরকারি কলেজে শিক্ষকতা শেষে জাতীয় রাজনীতিতে যুক্ত হন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ১৯৯০ সালে যোগ দেন বিএনপিতে। ২০১১ সাল থেকে দলের মহাসচিবের দায়িত্বে আছেন। দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি; ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, চীনের সঙ্গে সম্পর্কসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কামরুল হাসান ও উপসম্পাদক সাহিদুল ইসলাম চৌধুরী।
কামরুল হাসান ও সাহিদুল ইসলাম চৌধুরী

আজকের পত্রিকা: জাতীয় সনদ তৈরির কথা বলছে অন্তর্বর্তী সরকার। এতে বিএনপি কী দেখতে চায়?
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: সংস্কার প্রস্তাব যা এসেছে, তার মধ্যে যেগুলোতে আমরা একমত হব, সেগুলোর সমন্বয়ে সংস্কারের একটি সনদ তৈরি হবে। যে বিষয়গুলোয় মতৈক্য হবে না, সেগুলো জনগণের কাছে নিয়ে যেতে হবে। সেগুলো নির্বাচনী ইশতেহারে আসবে। জাতীয় সংসদে যাবে। শেষ পর্যন্ত সবকিছু সংসদে অনুমোদিত হতে হবে।
কোন বিষয়গুলোয় আমরা একমত হচ্ছি, তা ঠিক এ মুহূর্তে আমরা বলতে পারব না। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমরা একমত হয়েছি।
আজকের পত্রিকা: এই সনদ কার্যকর করার বিষয়ে বিএনপি কী ভূমিকা নেবে?
মির্জা ফখরুল: যে বিষয়গুলোয় একমত হওয়া যাবে, সেগুলো এই সরকার করে ফেলবে। সেগুলো আগামী সংসদে পাস হতে হবে।
আজকের পত্রিকা: আইন পরিষদে নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষের সদস্যরা কী প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত হবেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ আছে। দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে সদস্য নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে...
মির্জা ফখরুল: আমরা আনুপাতিক হারে সংসদে সদস্য (নিম্নকক্ষ) নির্বাচনের বিষয়ে একমত নই। উচ্চকক্ষে সদস্যরা কীভাবে নির্বাচিত হবেন, তা আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করা যেতে পারে।
আজকের পত্রিকা: আনুপাতিক পদ্ধতিতে আপনারা কী কী অসুবিধা দেখছেন?
মির্জা ফখরুল: আমরা বলেছি, সংসদে আলোচনার মাধ্যমে এটা করা যেতে পারে।
আজকের পত্রিকা: জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাব সংস্কার কমিশন থেকে আছে। বিএনপি ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের যে ৩১ দফা দিয়েছে, তাতে সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠনের কথা বলেছে। তাহলে এনসিসি গঠনে বিএনপির আপত্তি কেন?
মির্জা ফখরুল: এটা আমরা একদম না করে দিইনি। বলেছি, পরে সংসদে আলোচনা করে এটা করা যেতে পারে।
আজকের পত্রিকা: বিএনপি ২০১৬ সালে ‘ভিশন-২০৩০’ দিয়েছে। এতে বলা হয়, ‘এক দিনের গণতন্ত্রে’ সংসদীয় সরকারের আবরণে প্রধানমন্ত্রীর একক নির্বাহী ক্ষমতার মধ্যে একটি স্বৈরাচারী একনায়কতান্ত্রিক শাসনের জন্ম হয়। এখন নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনতে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানো এবং মেয়াদ সীমিত করার প্রস্তাব আছে। এতে কি ভারসাম্য আসবে?
মির্জা ফখরুল: গণতন্ত্র একটি সংস্কৃতি। এটা চর্চার বিষয়। চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়। মূল সমস্যা হলো, যেটা আমরা সবাই মিলে একমত হয়েছি, সেটাও চর্চা করিনি। যেমন কেয়ারটেকার সরকারব্যবস্থা। এটা প্রথমে আমরা মানতে চাইনি। যখন আমরা মেনেছি, এটা সংবিধানে যুক্ত করেছি। এই ব্যবস্থার অধীনে তিনটি নির্বাচন হয়েছে। সবাই বলছে, তিনটিই চমৎকার নির্বাচন হয়েছে। এই ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা গেলে নির্বাচনের ব্যবস্থাটা পাকা হয়ে যেত।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সরকারে যাঁরা এসেছেন, তাঁরা একেকজন পণ্ডিত মানুষ। কিন্তু জনগণের অংশগ্রহণ, জনগণকে সঙ্গে নেওয়া, এটা তো চর্চা করতে হবে। আজ যেটা গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো রাজনীতিকদের দৃঢ় অঙ্গীকার থাকা। এখন তাঁদের ছাত্রদের দলকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য যদি আলাদা করে নিয়মের বাইরে গিয়ে যদি কিছু করতে যান, মানুষ তা গ্রহণ করবে কি না, সে সিদ্ধান্তও নিতে হবে।
আজকের পত্রিকা: রাষ্ট্রপতির বর্তমান এখতিয়ারের সঙ্গে আর কী কী যুক্ত হওয়া দরকার বলে বিএনপি মনে করে?
মির্জা ফখরুল: আমরা সুনির্দিষ্টভাবে বলেছি, রাষ্ট্রপতির কী কী ক্ষমতা থাকা উচিত, আর প্রধানমন্ত্রীর কী কী ক্ষমতা থাকা দরকার। এগুলো এখনই বলতে পারব না। তবে এ ক্ষেত্রে একটি ভারসাম্য থাকা উচিত। আর মন্ত্রিসভা ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মধ্যেও ভারসাম্য থাকা উচিত।
আজকের পত্রিকা: আপনাদের নেতারা বলেন, বিএনপিকে ‘মাইনাস’ করার চেষ্টা সরকারের ভেতর থেকে আছে...
মির্জা ফখরুল: বর্তমান বিশ্বে বিরাজনীতিকরণের একটি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এটা বাংলাদেশে শুরু হয়েছে এক-এগারো (১১ জানুয়ারি ২০০৭) থেকে। ‘মাইনাস টু’ থিওরির কথা এসেছে। আমাদের অনেকে মনে করেন, এই চেষ্টা এখনো চলছে। এখন একটি মহল—যারা চায় না বিএনপি ক্ষমতায় আসুক, সরকার চালাক, নেতৃত্বের ভূমিকা নিক, তাদের মধ্যে এমন প্রবণতা আছে।
আজকের পত্রিকা: সরকার আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলছে। আপনারা কি মনে করেন, ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হবে?
মির্জা ফখরুল: নির্বাচন কী করে হবে? সরকার তো কোনো রোডম্যাপই দেয়নি! সরকার ধোঁয়াটে অবস্থা তৈরি করে রেখেছে। ডিসেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত তো কোনো তারিখ ঘোষণা করা হলো না। পরিষ্কার করে বলতে হবে, আমরা এই এই কাজগুলো করে এভাবে নির্বাচন করতে চাই। তা না হলে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে।
আজকের পত্রিকা: আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন—এমন একটি প্রচার আছে...
মির্জা ফখরুল: এটা যারা করে, তারা আসলে গণতন্ত্রে সেভাবে বিশ্বাস করে না। গণতন্ত্রে মূলকথা হলো, আপনি জনগণের মতামতের ভিত্তিতে ঠিক করবেন, কী করবেন। নির্বাচন না হলে কী লাভ হবে? আপনি কি এমন একটি শাসনব্যবস্থা চালাবেন, যা নির্বাচিত নয়! এ সরকার নির্বাচিত নয়। এ কারণে অনেক কিছু হচ্ছে না। সাধারণ মানুষ কোথাও বিচার পাচ্ছে না।
আজকের পত্রিকা: কয়েকটি দলের আচরণে আপনাদের কি মনে হচ্ছে, নির্বাচনে তাদের আগ্রহ কম...
মির্জা ফখরুল: তাঁরা হয়তো মনে করছেন, নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু হলেও তাঁরা জিততে পারবেন না। ভাবছেন, নির্বাচন দেরি হলে তাঁদের হয়তো একটু সুবিধা হবে। আসলে নির্বাচনে যত দেরি হবে, দেশ ও জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিদেশি বিনিয়োগ ততক্ষণ আসবে না, যতক্ষণ না এখানে নির্বাচিত সরকার আসে।
আজকের পত্রিকা: স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে করার কথা বলছে কয়েকটি দল। বিএনপি চায় সংসদ নির্বাচন। আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অসুবিধা কোথায়?
মির্জা ফখরুল: কোনোমতেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে নয়। মূল সংকট দেখা দিয়েছে সকলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি নিরপেক্ষ অবাধ সুষ্ঠু জাতীয় সংসদ নির্বাচন না হওয়ায়। স্থানীয় সরকার ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এ সমস্যার সমাধান হবে না।
আজকের পত্রিকা: বিএনপি কি নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে?
উত্তর: আমরা সব সময় প্রস্তুত। আজকে নির্বাচন দিন, আমরা কালকেই বেরিয়ে পড়ব।
আজকের পত্রিকা: নারী ইস্যুটি দেখুন, একটি কুশপুত্তলিকা পেটানোসহ নানা কিছু ঘটছে। আপনারা কিছু বলছেন না...।
মির্জা ফখরুল: অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যে কমিশন গঠন করেছেন (নারী বিষয়ে), সেটা গঠনের সময় বাংলাদেশের যে সংস্কৃতি, এখানকার মানুষের চিন্তাভাবনা বিবেচনায় নেননি। সরকারের উচিত ছিল, ওই কমিশনে প্রগতিশীল কিছু ইসলামি স্কলারকে রাখা। তাহলে বিষয়গুলো এভাবে আসত না।
আজকের পত্রিকা: মিয়ানমারের সঙ্গে যে করিডর, সেটা নিয়ে ‘নীতিগত সম্মতির’ কথা সরকার বলছে...
মির্জা ফখরুল: এটা তো আবার অস্বীকারও করেছে। একটা ধোঁয়াটে অবস্থা—এত রাখঢাক! কেন? এটার সঙ্গে দেশের নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার প্রশ্ন জড়িত। এতে রাখঢাকের কিছু নেই। যেহেতু সংসদ নেই, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলুন। শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিবস পালন করবেন কি না, তা আলাপ করতে সব দলকে ডাকলেন; সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়ে ভারতের প্রচার প্রসঙ্গে কথা বলতে ডাকলেন, করিডরের ব্যাপারে ডাকবেন না কেন! মিয়ানমার, রাখাইন ও রোহিঙ্গা আমাদের জাতীয় ইস্যু। সবাইকে ডাকুন, পরামর্শ করুন। তবে সংসদ ছাড়া এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না।
আজকের পত্রিকা: আওয়ামী লীগের রাজনীতির ব্যাপারে আপনাদের অবস্থান কী?
মির্জা ফখরুল: পরিষ্কারভাবে বলেছি, আওয়ামী লীগ একটি ফ্যাসিস্ট দল। তারা একটি গণহত্যার সঙ্গে জড়িত। এ জন্য তাদের বিচার করতে হবে। আর যদি আদালত মনে করে, দল হিসেবেও তাদের বিচার করা দরকার, তাহলে তা করতে হবে।
আজকের পত্রিকা: আওয়ামী লীগের রাজনীতি করা...
মির্জা ফখরুল: এটা মানুষ সিদ্ধান্ত নেবে। আদালত সিদ্ধান্ত নেবে। এটা আমি কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার!
আজকের পত্রিকা: জুলাই আন্দোলনে যেসব তরুণ সক্রিয় ছিলেন, রাজনীতির মাঠে তাঁদের কেমন দেখছেন?
মির্জা ফখরুল: ঢাকাতে তরুণেরা যথেষ্ট সক্রিয় আছে। ঢাকার বাইরে সেভাবে চোখে পড়েনি।
আজকের পত্রিকা: এর বাইরে দেশের সাধারণ তরুণদের কথা যদি বলেন...
মির্জা ফখরুল: তরুণদের কোনো সুনির্দিষ্ট মতাদর্শে আনতে না পারার কারণে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এর বহিঃপ্রকাশ ঘটছে রাজপথে। কোনো কিছু হলেই ওরা মারামারি করছে। কলেজে কলেজে মারামারি হচ্ছে। দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ছে। এগুলো বোধ হয় খুব ইতিবাচক কিছু হচ্ছে না। তরুণদের যদি একটি বিপ্লবী দল থাকত, তাহলে হয়তো কিছু কাজ হতো। কিন্তু এখন তো বিপ্লবী দল বলে কিছু নেই। একটি দল আছে, যে দলটি এখনো রাজনৈতিক দল হিসেবে তৈরি হতে পারেনি।
আজকের পত্রিকা: বিএনপিতে বড় কোনো পরিবর্তন আসছে?
মির্জা ফখরুল: আসছে তো! আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান (তারেক রহমান) নিজেই তো তরুণ।
আজকের পত্রিকা: ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশে ফিরবেন কবে, কেন ফিরছেন না?
উত্তর: অবশ্যই ফিরবেন। মামলা আছে কয়েকটা। শেষ হলেই চলে আসবেন।
আজকের পত্রিকা: তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান নাকি রাজনীতিতে আসবেন, এমন আওয়াজ আছে...
মির্জা ফখরুল: এটা আওয়াজেই আছে। আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। মিডিয়া গসিপ করছে।
আজকের পত্রিকা: নির্বাচনের পর বিএনপি জাতীয় সরকার গঠনের কথা বলছে। তাহলে কি বিএনপি এবার এককভাবে নির্বাচনে যাবে?
মির্জা ফখরুল: হ্যাঁ, সিদ্ধান্ত তো তাই আছে এককভাবে নির্বাচন করার। নির্বাচনের আগে সিদ্ধান্ত নেব, জোট করব কি করব না।
আজকের পত্রিকা: বিএনপি ক্ষমতায় এলে তারপরের নির্বাচন কি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করবেন?
মির্জা ফখরুল: এটা তো এবারই সংবিধানেই এসে যাচ্ছে। এটা সব দলেরই দাবি।
আজকের পত্রিকা: একটি সাধারণ অভিযোগ, বিএনপির লোকেরা বিভিন্ন জায়গায় নিজেরা নিজেরা মারামারি করছে, প্রাধান্য বিস্তারের জন্য...
মির্জা ফখরুল: বিচ্ছিন্ন দু-একটি ঘটনা ঘটছে। বহু আগে থেকেই এ দেশে মারামারি গণতন্ত্রের অংশ। ট্রাম্প হেরে যাওয়ার পর ক্যাপিটল হিল আক্রান্ত হয়নি? এতে কি সেখানে গণতন্ত্র শেষ হয়ে গেছে?
আজকের পত্রিকা: আপনার দলের লোকদের বিরুদ্ধে দখল-চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠছে...
মির্জা ফখরুল: তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে এগুলো মুহূর্তের মধ্যে দূর করে ফেলতে পারবেন, এটা সম্ভব নয়। তবে দলের পক্ষ থেকে সমন্বিত চেষ্টা আছে। আমরা প্রায় তিন হাজার লোককে বহিষ্কার করেছি দল থেকে।
আজকের পত্রিকা: জাতীয় সরকার হলে সংসদে বিরোধী দলের মাধ্যমে নির্বাহী বিভাগের জবাবদিহি নিশ্চিত করার যে ব্যাপার থাকে, সেটা কে পালন করবেন?
মির্জা ফখরুল: তখন বিরোধী দল তৈরি হবে। সবাই যে জাতীয় সরকারে আসবে, তা তো নয়। আর আমরা সবাইকে নিয়েই যে জাতীয় সরকার গঠন করব, তা-ও তো বলছি না।
আজকের পত্রিকা: মুহাম্মদ ইউনূসের আন্তর্জাতিক পরিচিতি আছে। আগামী নির্বাচনের পর বিএনপি কি তাঁকে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর আওতায় কোনো ভূমিকায় দেখতে চায়?
মির্জা ফখরুল: এটা এখনই বলা যাবে না, কে কী করতে চাইবেন, বা দল কী চাইবে। এটা নির্ভর করবে তখনকার রাজনৈতিক মেরুকরণের ওপর।
আজকের পত্রিকা: বিএনপির সর্বশেষ কাউন্সিল হয় ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ, যেখানে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তিন বছরের জন্য নির্বাচিত হন। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে দলের কাউন্সিল আয়োজনের কোনো পরিকল্পনা কি আছে?
মির্জা ফখরুল: নির্বাচন সামনে রেখে কাউন্সিল করলে অনেক ইস্যু সামনে চলে আসে। তাই এ মুহূর্তে কাউন্সিলের সম্ভাবনা কম। তবে প্রয়োজন হলে কাউন্সিল করব।
আজকের পত্রিকা: অন্তর্বর্তী সরকারে বিএনপির প্রভাব আছে, এতে নির্বাচন প্রভাবিত হতে পারে, এমন আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছে...
মির্জা ফখরুল: এটা একেবারেই ভুল কথা; বরং উল্টোটা আছে। আমলাদের বেশির ভাগই আমাদের কাজ করছে না।
আজকের পত্রিকা: জুলাই আন্দোলন বিএনপি কীভাবে দেখে?
মির্জা ফখরুল: একাত্তর হলো আমাদের ‘বটমলাইন’—আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলন, আমাদের পরিচিতি, স্বাতন্ত্র্য। আর চব্বিশে ছাত্রদের যে আন্দোলন, তা স্বতঃস্ফূর্ত তাৎক্ষণিক একটি বিষয়। ১৫ বছর ধরে গণতন্ত্রের জন্য যে নিরন্তর লড়াই করেছি আমরা, তার সঙ্গে ছাত্রদের আন্দোলন একটি স্ফুলিঙ্গের ভূমিকা রেখেছে। এটাকেও খাটো করে দেখার কোনো উপায় নেই।
আজকের পত্রিকা: তাহলে এই স্ফুলিঙ্গ বিএনপির ১৫ বছরের আন্দোলনে হলো না কেন?
মির্জা ফখরুল: কখন কোথায় স্ফুলিঙ্গ হবে, এটা বলা মুশকিল। এই ভূখণ্ডেই আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে লড়াই হয়েছে দীর্ঘ ১২ বছর। কিন্তু যেদিন আসাদ মারা গেছেন, সেদিনই তাঁর বিরুদ্ধে আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। তাঁর পতন হয়েছে। (এইচ এম) এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলেছে ৯ বছর। কিন্তু যেদিন ডা. মিলন মারা গেলেন, সেদিন এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন ছড়িয়ে গেল।
আজকের পত্রিকা: ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক খারাপ যাচ্ছে, গত ৫ আগস্টের পর থেকে। ভবিষ্যতে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে কীভাবে দেখেন?
মির্জা ফখরুল: আমার ধারণা ছিল, ভারত রাষ্ট্র হিসেবে অনেক বড়, সুপারপাওয়ারের কাছাকাছি। সে অনুযায়ী তাদের কূটনৈতিক চর্চা বাস্তবসম্মত হবে, টেকসই হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে সেই প্রত্যাশিত কূটনৈতিক চর্চা কখনোই করেনি। এই যে ‘সোনালি সম্পর্ক’ বা ‘স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক,’ সেটা ছিল আওয়ামী লীগের সঙ্গে। এটা ভারতের দিক থেকে একটি ভুল ছিল। একটি দলের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে গিয়ে বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে তাদের পুরোপুরি বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। এখন ভারতের জায়গা আর নেই।
সেই সম্পর্ক ভারতকে আবার তৈরি করতে হবে। এটা করতে হবে বিভিন্ন উপায়ে; যেমন তিস্তা ও অন্যান্য নদীর পানির হিস্যা দিতে হবে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার বন্ধ করতে হবে। আরেকটি বড় ইস্যু আছে, তা হচ্ছে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের কাছে ফেরত দিতে হবে।
আজকের পত্রিকা: ভারতের সঙ্গে বিএনপির যোগাযোগ কেমন?
মির্জা ফখরুল: আমরা সব দেশের সঙ্গে কাজকর্মের সম্পর্ক রক্ষা করি। ভারতের সঙ্গে সেটা আমাদের হচ্ছে না। আমরা আশা করি, বিএনপির সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরি করার উদ্যোগ ভারত নেবে।
আজকের পত্রিকা: জুলাই অভ্যুত্থানের পর ভারতের সঙ্গে আপনাদের যোগাযোগ হয়েছে?
মির্জা ফখরুল: না, আমাদের সঙ্গে সে ধরনের যোগাযোগ হয়নি। তবে আমাদের ইফতার পার্টিতে তাঁরা এসেছেন।
আজকের পত্রিকা: যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবকে আঞ্চলিক রাজনীতিতে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়? আঞ্চলিক রাজনীতিতে দেশটির ভূমিকাকে আপনারা কীভাবে দেখেন?
মির্জা ফখরুল: যুক্তরাষ্ট্র একটি পরাশক্তি। তারা এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে প্রাধান্য বিস্তারের জন্য উদ্গ্রীব। ভারতের সঙ্গে জোরালো সম্পর্ক আছে তাদের। সরকারিভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কও খারাপ নয়। তবে সম্পর্কের দিক থেকে ততটুকুই গ্রহণযোগ্য, যতটুকু বাংলাদেশের স্বার্থের সঙ্গে সম্পর্কিত।
আজকের পত্রিকা: চীনের সঙ্গে সম্পর্ক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক দিক থেকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। চীন বিষয়ে বিএনপির অবস্থান কী?
মির্জা ফখরুল: বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রথম চীনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেন, ১৯৭৫ সালে। তারপর থেকে চমৎকার সম্পর্ক ছিল। মাঝখানে একটু ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছে। এখন সম্পর্ক খুবই ভালো।
আজকের পত্রিকা: সাধারণ মানুষের ধারণা, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি খুব কৌশলে এগোচ্ছে, এটা কি ঠিক?
মির্জা ফখরুল: বিএনপি তো ‘ঘর পোড়া গরু, সিঁদুরে মেঘ দেখে ভয় পায়’। এত বড় অভ্যুত্থানের পর আমাদের একটি ভুলে যদি পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে চলে যায়, তাহলে দায়দায়িত্ব বিএনপিকে নিতে হবে।
জনগণকে এটা মনে রাখতে হবে, জনপ্রিয়তামুখী রাজনীতি ভিন্ন বিষয়। বিএনপি একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল। অতীতে কয়েকবার ক্ষমতায় ছিল। আবার ক্ষমতায় আসার আশা করে। সম্ভবত আবার ক্ষমতায় আসবে। এ কারণে বিএনপিকে প্রতিটি পা ফেলতে হয় হিসাব করে। আমরা ইচ্ছা করলেই কাল হরতাল ডাকতে পারি, ঢাকা শহর অচল করে দিতে পারি। কিন্তু সেটা আমরা কেন করব? আমরা মনে করি, এখন ধৈর্য ধরে এ সরকারকে সফল হতে দিতে হবে। দেশকে শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দিকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
আজকের পত্রিকা: আপনাকে ধন্যবাদ।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: আপনাদেরও ধন্যবাদ।
আরও খবর পড়ুন:
আজকের পত্রিকা: জাতীয় সনদ তৈরির কথা বলছে অন্তর্বর্তী সরকার। এতে বিএনপি কী দেখতে চায়?
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: সংস্কার প্রস্তাব যা এসেছে, তার মধ্যে যেগুলোতে আমরা একমত হব, সেগুলোর সমন্বয়ে সংস্কারের একটি সনদ তৈরি হবে। যে বিষয়গুলোয় মতৈক্য হবে না, সেগুলো জনগণের কাছে নিয়ে যেতে হবে। সেগুলো নির্বাচনী ইশতেহারে আসবে। জাতীয় সংসদে যাবে। শেষ পর্যন্ত সবকিছু সংসদে অনুমোদিত হতে হবে।
কোন বিষয়গুলোয় আমরা একমত হচ্ছি, তা ঠিক এ মুহূর্তে আমরা বলতে পারব না। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমরা একমত হয়েছি।
আজকের পত্রিকা: এই সনদ কার্যকর করার বিষয়ে বিএনপি কী ভূমিকা নেবে?
মির্জা ফখরুল: যে বিষয়গুলোয় একমত হওয়া যাবে, সেগুলো এই সরকার করে ফেলবে। সেগুলো আগামী সংসদে পাস হতে হবে।
আজকের পত্রিকা: আইন পরিষদে নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষের সদস্যরা কী প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত হবেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ আছে। দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে সদস্য নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে...
মির্জা ফখরুল: আমরা আনুপাতিক হারে সংসদে সদস্য (নিম্নকক্ষ) নির্বাচনের বিষয়ে একমত নই। উচ্চকক্ষে সদস্যরা কীভাবে নির্বাচিত হবেন, তা আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করা যেতে পারে।
আজকের পত্রিকা: আনুপাতিক পদ্ধতিতে আপনারা কী কী অসুবিধা দেখছেন?
মির্জা ফখরুল: আমরা বলেছি, সংসদে আলোচনার মাধ্যমে এটা করা যেতে পারে।
আজকের পত্রিকা: জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাব সংস্কার কমিশন থেকে আছে। বিএনপি ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের যে ৩১ দফা দিয়েছে, তাতে সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠনের কথা বলেছে। তাহলে এনসিসি গঠনে বিএনপির আপত্তি কেন?
মির্জা ফখরুল: এটা আমরা একদম না করে দিইনি। বলেছি, পরে সংসদে আলোচনা করে এটা করা যেতে পারে।
আজকের পত্রিকা: বিএনপি ২০১৬ সালে ‘ভিশন-২০৩০’ দিয়েছে। এতে বলা হয়, ‘এক দিনের গণতন্ত্রে’ সংসদীয় সরকারের আবরণে প্রধানমন্ত্রীর একক নির্বাহী ক্ষমতার মধ্যে একটি স্বৈরাচারী একনায়কতান্ত্রিক শাসনের জন্ম হয়। এখন নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনতে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানো এবং মেয়াদ সীমিত করার প্রস্তাব আছে। এতে কি ভারসাম্য আসবে?
মির্জা ফখরুল: গণতন্ত্র একটি সংস্কৃতি। এটা চর্চার বিষয়। চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়। মূল সমস্যা হলো, যেটা আমরা সবাই মিলে একমত হয়েছি, সেটাও চর্চা করিনি। যেমন কেয়ারটেকার সরকারব্যবস্থা। এটা প্রথমে আমরা মানতে চাইনি। যখন আমরা মেনেছি, এটা সংবিধানে যুক্ত করেছি। এই ব্যবস্থার অধীনে তিনটি নির্বাচন হয়েছে। সবাই বলছে, তিনটিই চমৎকার নির্বাচন হয়েছে। এই ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা গেলে নির্বাচনের ব্যবস্থাটা পাকা হয়ে যেত।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সরকারে যাঁরা এসেছেন, তাঁরা একেকজন পণ্ডিত মানুষ। কিন্তু জনগণের অংশগ্রহণ, জনগণকে সঙ্গে নেওয়া, এটা তো চর্চা করতে হবে। আজ যেটা গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো রাজনীতিকদের দৃঢ় অঙ্গীকার থাকা। এখন তাঁদের ছাত্রদের দলকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য যদি আলাদা করে নিয়মের বাইরে গিয়ে যদি কিছু করতে যান, মানুষ তা গ্রহণ করবে কি না, সে সিদ্ধান্তও নিতে হবে।
আজকের পত্রিকা: রাষ্ট্রপতির বর্তমান এখতিয়ারের সঙ্গে আর কী কী যুক্ত হওয়া দরকার বলে বিএনপি মনে করে?
মির্জা ফখরুল: আমরা সুনির্দিষ্টভাবে বলেছি, রাষ্ট্রপতির কী কী ক্ষমতা থাকা উচিত, আর প্রধানমন্ত্রীর কী কী ক্ষমতা থাকা দরকার। এগুলো এখনই বলতে পারব না। তবে এ ক্ষেত্রে একটি ভারসাম্য থাকা উচিত। আর মন্ত্রিসভা ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মধ্যেও ভারসাম্য থাকা উচিত।
আজকের পত্রিকা: আপনাদের নেতারা বলেন, বিএনপিকে ‘মাইনাস’ করার চেষ্টা সরকারের ভেতর থেকে আছে...
মির্জা ফখরুল: বর্তমান বিশ্বে বিরাজনীতিকরণের একটি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এটা বাংলাদেশে শুরু হয়েছে এক-এগারো (১১ জানুয়ারি ২০০৭) থেকে। ‘মাইনাস টু’ থিওরির কথা এসেছে। আমাদের অনেকে মনে করেন, এই চেষ্টা এখনো চলছে। এখন একটি মহল—যারা চায় না বিএনপি ক্ষমতায় আসুক, সরকার চালাক, নেতৃত্বের ভূমিকা নিক, তাদের মধ্যে এমন প্রবণতা আছে।
আজকের পত্রিকা: সরকার আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলছে। আপনারা কি মনে করেন, ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হবে?
মির্জা ফখরুল: নির্বাচন কী করে হবে? সরকার তো কোনো রোডম্যাপই দেয়নি! সরকার ধোঁয়াটে অবস্থা তৈরি করে রেখেছে। ডিসেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত তো কোনো তারিখ ঘোষণা করা হলো না। পরিষ্কার করে বলতে হবে, আমরা এই এই কাজগুলো করে এভাবে নির্বাচন করতে চাই। তা না হলে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে।
আজকের পত্রিকা: আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন—এমন একটি প্রচার আছে...
মির্জা ফখরুল: এটা যারা করে, তারা আসলে গণতন্ত্রে সেভাবে বিশ্বাস করে না। গণতন্ত্রে মূলকথা হলো, আপনি জনগণের মতামতের ভিত্তিতে ঠিক করবেন, কী করবেন। নির্বাচন না হলে কী লাভ হবে? আপনি কি এমন একটি শাসনব্যবস্থা চালাবেন, যা নির্বাচিত নয়! এ সরকার নির্বাচিত নয়। এ কারণে অনেক কিছু হচ্ছে না। সাধারণ মানুষ কোথাও বিচার পাচ্ছে না।
আজকের পত্রিকা: কয়েকটি দলের আচরণে আপনাদের কি মনে হচ্ছে, নির্বাচনে তাদের আগ্রহ কম...
মির্জা ফখরুল: তাঁরা হয়তো মনে করছেন, নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু হলেও তাঁরা জিততে পারবেন না। ভাবছেন, নির্বাচন দেরি হলে তাঁদের হয়তো একটু সুবিধা হবে। আসলে নির্বাচনে যত দেরি হবে, দেশ ও জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিদেশি বিনিয়োগ ততক্ষণ আসবে না, যতক্ষণ না এখানে নির্বাচিত সরকার আসে।
আজকের পত্রিকা: স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে করার কথা বলছে কয়েকটি দল। বিএনপি চায় সংসদ নির্বাচন। আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অসুবিধা কোথায়?
মির্জা ফখরুল: কোনোমতেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে নয়। মূল সংকট দেখা দিয়েছে সকলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি নিরপেক্ষ অবাধ সুষ্ঠু জাতীয় সংসদ নির্বাচন না হওয়ায়। স্থানীয় সরকার ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এ সমস্যার সমাধান হবে না।
আজকের পত্রিকা: বিএনপি কি নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে?
উত্তর: আমরা সব সময় প্রস্তুত। আজকে নির্বাচন দিন, আমরা কালকেই বেরিয়ে পড়ব।
আজকের পত্রিকা: নারী ইস্যুটি দেখুন, একটি কুশপুত্তলিকা পেটানোসহ নানা কিছু ঘটছে। আপনারা কিছু বলছেন না...।
মির্জা ফখরুল: অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যে কমিশন গঠন করেছেন (নারী বিষয়ে), সেটা গঠনের সময় বাংলাদেশের যে সংস্কৃতি, এখানকার মানুষের চিন্তাভাবনা বিবেচনায় নেননি। সরকারের উচিত ছিল, ওই কমিশনে প্রগতিশীল কিছু ইসলামি স্কলারকে রাখা। তাহলে বিষয়গুলো এভাবে আসত না।
আজকের পত্রিকা: মিয়ানমারের সঙ্গে যে করিডর, সেটা নিয়ে ‘নীতিগত সম্মতির’ কথা সরকার বলছে...
মির্জা ফখরুল: এটা তো আবার অস্বীকারও করেছে। একটা ধোঁয়াটে অবস্থা—এত রাখঢাক! কেন? এটার সঙ্গে দেশের নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার প্রশ্ন জড়িত। এতে রাখঢাকের কিছু নেই। যেহেতু সংসদ নেই, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলুন। শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিবস পালন করবেন কি না, তা আলাপ করতে সব দলকে ডাকলেন; সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়ে ভারতের প্রচার প্রসঙ্গে কথা বলতে ডাকলেন, করিডরের ব্যাপারে ডাকবেন না কেন! মিয়ানমার, রাখাইন ও রোহিঙ্গা আমাদের জাতীয় ইস্যু। সবাইকে ডাকুন, পরামর্শ করুন। তবে সংসদ ছাড়া এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না।
আজকের পত্রিকা: আওয়ামী লীগের রাজনীতির ব্যাপারে আপনাদের অবস্থান কী?
মির্জা ফখরুল: পরিষ্কারভাবে বলেছি, আওয়ামী লীগ একটি ফ্যাসিস্ট দল। তারা একটি গণহত্যার সঙ্গে জড়িত। এ জন্য তাদের বিচার করতে হবে। আর যদি আদালত মনে করে, দল হিসেবেও তাদের বিচার করা দরকার, তাহলে তা করতে হবে।
আজকের পত্রিকা: আওয়ামী লীগের রাজনীতি করা...
মির্জা ফখরুল: এটা মানুষ সিদ্ধান্ত নেবে। আদালত সিদ্ধান্ত নেবে। এটা আমি কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার!
আজকের পত্রিকা: জুলাই আন্দোলনে যেসব তরুণ সক্রিয় ছিলেন, রাজনীতির মাঠে তাঁদের কেমন দেখছেন?
মির্জা ফখরুল: ঢাকাতে তরুণেরা যথেষ্ট সক্রিয় আছে। ঢাকার বাইরে সেভাবে চোখে পড়েনি।
আজকের পত্রিকা: এর বাইরে দেশের সাধারণ তরুণদের কথা যদি বলেন...
মির্জা ফখরুল: তরুণদের কোনো সুনির্দিষ্ট মতাদর্শে আনতে না পারার কারণে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এর বহিঃপ্রকাশ ঘটছে রাজপথে। কোনো কিছু হলেই ওরা মারামারি করছে। কলেজে কলেজে মারামারি হচ্ছে। দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ছে। এগুলো বোধ হয় খুব ইতিবাচক কিছু হচ্ছে না। তরুণদের যদি একটি বিপ্লবী দল থাকত, তাহলে হয়তো কিছু কাজ হতো। কিন্তু এখন তো বিপ্লবী দল বলে কিছু নেই। একটি দল আছে, যে দলটি এখনো রাজনৈতিক দল হিসেবে তৈরি হতে পারেনি।
আজকের পত্রিকা: বিএনপিতে বড় কোনো পরিবর্তন আসছে?
মির্জা ফখরুল: আসছে তো! আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান (তারেক রহমান) নিজেই তো তরুণ।
আজকের পত্রিকা: ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশে ফিরবেন কবে, কেন ফিরছেন না?
উত্তর: অবশ্যই ফিরবেন। মামলা আছে কয়েকটা। শেষ হলেই চলে আসবেন।
আজকের পত্রিকা: তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান নাকি রাজনীতিতে আসবেন, এমন আওয়াজ আছে...
মির্জা ফখরুল: এটা আওয়াজেই আছে। আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। মিডিয়া গসিপ করছে।
আজকের পত্রিকা: নির্বাচনের পর বিএনপি জাতীয় সরকার গঠনের কথা বলছে। তাহলে কি বিএনপি এবার এককভাবে নির্বাচনে যাবে?
মির্জা ফখরুল: হ্যাঁ, সিদ্ধান্ত তো তাই আছে এককভাবে নির্বাচন করার। নির্বাচনের আগে সিদ্ধান্ত নেব, জোট করব কি করব না।
আজকের পত্রিকা: বিএনপি ক্ষমতায় এলে তারপরের নির্বাচন কি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করবেন?
মির্জা ফখরুল: এটা তো এবারই সংবিধানেই এসে যাচ্ছে। এটা সব দলেরই দাবি।
আজকের পত্রিকা: একটি সাধারণ অভিযোগ, বিএনপির লোকেরা বিভিন্ন জায়গায় নিজেরা নিজেরা মারামারি করছে, প্রাধান্য বিস্তারের জন্য...
মির্জা ফখরুল: বিচ্ছিন্ন দু-একটি ঘটনা ঘটছে। বহু আগে থেকেই এ দেশে মারামারি গণতন্ত্রের অংশ। ট্রাম্প হেরে যাওয়ার পর ক্যাপিটল হিল আক্রান্ত হয়নি? এতে কি সেখানে গণতন্ত্র শেষ হয়ে গেছে?
আজকের পত্রিকা: আপনার দলের লোকদের বিরুদ্ধে দখল-চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠছে...
মির্জা ফখরুল: তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে এগুলো মুহূর্তের মধ্যে দূর করে ফেলতে পারবেন, এটা সম্ভব নয়। তবে দলের পক্ষ থেকে সমন্বিত চেষ্টা আছে। আমরা প্রায় তিন হাজার লোককে বহিষ্কার করেছি দল থেকে।
আজকের পত্রিকা: জাতীয় সরকার হলে সংসদে বিরোধী দলের মাধ্যমে নির্বাহী বিভাগের জবাবদিহি নিশ্চিত করার যে ব্যাপার থাকে, সেটা কে পালন করবেন?
মির্জা ফখরুল: তখন বিরোধী দল তৈরি হবে। সবাই যে জাতীয় সরকারে আসবে, তা তো নয়। আর আমরা সবাইকে নিয়েই যে জাতীয় সরকার গঠন করব, তা-ও তো বলছি না।
আজকের পত্রিকা: মুহাম্মদ ইউনূসের আন্তর্জাতিক পরিচিতি আছে। আগামী নির্বাচনের পর বিএনপি কি তাঁকে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর আওতায় কোনো ভূমিকায় দেখতে চায়?
মির্জা ফখরুল: এটা এখনই বলা যাবে না, কে কী করতে চাইবেন, বা দল কী চাইবে। এটা নির্ভর করবে তখনকার রাজনৈতিক মেরুকরণের ওপর।
আজকের পত্রিকা: বিএনপির সর্বশেষ কাউন্সিল হয় ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ, যেখানে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তিন বছরের জন্য নির্বাচিত হন। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে দলের কাউন্সিল আয়োজনের কোনো পরিকল্পনা কি আছে?
মির্জা ফখরুল: নির্বাচন সামনে রেখে কাউন্সিল করলে অনেক ইস্যু সামনে চলে আসে। তাই এ মুহূর্তে কাউন্সিলের সম্ভাবনা কম। তবে প্রয়োজন হলে কাউন্সিল করব।
আজকের পত্রিকা: অন্তর্বর্তী সরকারে বিএনপির প্রভাব আছে, এতে নির্বাচন প্রভাবিত হতে পারে, এমন আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছে...
মির্জা ফখরুল: এটা একেবারেই ভুল কথা; বরং উল্টোটা আছে। আমলাদের বেশির ভাগই আমাদের কাজ করছে না।
আজকের পত্রিকা: জুলাই আন্দোলন বিএনপি কীভাবে দেখে?
মির্জা ফখরুল: একাত্তর হলো আমাদের ‘বটমলাইন’—আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলন, আমাদের পরিচিতি, স্বাতন্ত্র্য। আর চব্বিশে ছাত্রদের যে আন্দোলন, তা স্বতঃস্ফূর্ত তাৎক্ষণিক একটি বিষয়। ১৫ বছর ধরে গণতন্ত্রের জন্য যে নিরন্তর লড়াই করেছি আমরা, তার সঙ্গে ছাত্রদের আন্দোলন একটি স্ফুলিঙ্গের ভূমিকা রেখেছে। এটাকেও খাটো করে দেখার কোনো উপায় নেই।
আজকের পত্রিকা: তাহলে এই স্ফুলিঙ্গ বিএনপির ১৫ বছরের আন্দোলনে হলো না কেন?
মির্জা ফখরুল: কখন কোথায় স্ফুলিঙ্গ হবে, এটা বলা মুশকিল। এই ভূখণ্ডেই আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে লড়াই হয়েছে দীর্ঘ ১২ বছর। কিন্তু যেদিন আসাদ মারা গেছেন, সেদিনই তাঁর বিরুদ্ধে আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। তাঁর পতন হয়েছে। (এইচ এম) এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলেছে ৯ বছর। কিন্তু যেদিন ডা. মিলন মারা গেলেন, সেদিন এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন ছড়িয়ে গেল।
আজকের পত্রিকা: ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক খারাপ যাচ্ছে, গত ৫ আগস্টের পর থেকে। ভবিষ্যতে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে কীভাবে দেখেন?
মির্জা ফখরুল: আমার ধারণা ছিল, ভারত রাষ্ট্র হিসেবে অনেক বড়, সুপারপাওয়ারের কাছাকাছি। সে অনুযায়ী তাদের কূটনৈতিক চর্চা বাস্তবসম্মত হবে, টেকসই হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে সেই প্রত্যাশিত কূটনৈতিক চর্চা কখনোই করেনি। এই যে ‘সোনালি সম্পর্ক’ বা ‘স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক,’ সেটা ছিল আওয়ামী লীগের সঙ্গে। এটা ভারতের দিক থেকে একটি ভুল ছিল। একটি দলের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে গিয়ে বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে তাদের পুরোপুরি বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। এখন ভারতের জায়গা আর নেই।
সেই সম্পর্ক ভারতকে আবার তৈরি করতে হবে। এটা করতে হবে বিভিন্ন উপায়ে; যেমন তিস্তা ও অন্যান্য নদীর পানির হিস্যা দিতে হবে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার বন্ধ করতে হবে। আরেকটি বড় ইস্যু আছে, তা হচ্ছে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের কাছে ফেরত দিতে হবে।
আজকের পত্রিকা: ভারতের সঙ্গে বিএনপির যোগাযোগ কেমন?
মির্জা ফখরুল: আমরা সব দেশের সঙ্গে কাজকর্মের সম্পর্ক রক্ষা করি। ভারতের সঙ্গে সেটা আমাদের হচ্ছে না। আমরা আশা করি, বিএনপির সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরি করার উদ্যোগ ভারত নেবে।
আজকের পত্রিকা: জুলাই অভ্যুত্থানের পর ভারতের সঙ্গে আপনাদের যোগাযোগ হয়েছে?
মির্জা ফখরুল: না, আমাদের সঙ্গে সে ধরনের যোগাযোগ হয়নি। তবে আমাদের ইফতার পার্টিতে তাঁরা এসেছেন।
আজকের পত্রিকা: যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবকে আঞ্চলিক রাজনীতিতে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়? আঞ্চলিক রাজনীতিতে দেশটির ভূমিকাকে আপনারা কীভাবে দেখেন?
মির্জা ফখরুল: যুক্তরাষ্ট্র একটি পরাশক্তি। তারা এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে প্রাধান্য বিস্তারের জন্য উদ্গ্রীব। ভারতের সঙ্গে জোরালো সম্পর্ক আছে তাদের। সরকারিভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কও খারাপ নয়। তবে সম্পর্কের দিক থেকে ততটুকুই গ্রহণযোগ্য, যতটুকু বাংলাদেশের স্বার্থের সঙ্গে সম্পর্কিত।
আজকের পত্রিকা: চীনের সঙ্গে সম্পর্ক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক দিক থেকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। চীন বিষয়ে বিএনপির অবস্থান কী?
মির্জা ফখরুল: বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রথম চীনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেন, ১৯৭৫ সালে। তারপর থেকে চমৎকার সম্পর্ক ছিল। মাঝখানে একটু ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছে। এখন সম্পর্ক খুবই ভালো।
আজকের পত্রিকা: সাধারণ মানুষের ধারণা, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি খুব কৌশলে এগোচ্ছে, এটা কি ঠিক?
মির্জা ফখরুল: বিএনপি তো ‘ঘর পোড়া গরু, সিঁদুরে মেঘ দেখে ভয় পায়’। এত বড় অভ্যুত্থানের পর আমাদের একটি ভুলে যদি পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে চলে যায়, তাহলে দায়দায়িত্ব বিএনপিকে নিতে হবে।
জনগণকে এটা মনে রাখতে হবে, জনপ্রিয়তামুখী রাজনীতি ভিন্ন বিষয়। বিএনপি একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল। অতীতে কয়েকবার ক্ষমতায় ছিল। আবার ক্ষমতায় আসার আশা করে। সম্ভবত আবার ক্ষমতায় আসবে। এ কারণে বিএনপিকে প্রতিটি পা ফেলতে হয় হিসাব করে। আমরা ইচ্ছা করলেই কাল হরতাল ডাকতে পারি, ঢাকা শহর অচল করে দিতে পারি। কিন্তু সেটা আমরা কেন করব? আমরা মনে করি, এখন ধৈর্য ধরে এ সরকারকে সফল হতে দিতে হবে। দেশকে শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দিকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
আজকের পত্রিকা: আপনাকে ধন্যবাদ।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: আপনাদেরও ধন্যবাদ।
আরও খবর পড়ুন:

সরকারি কলেজে শিক্ষকতা শেষে জাতীয় রাজনীতিতে যুক্ত হন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ১৯৯০ সালে যোগ দেন বিএনপিতে। ২০১১ সাল থেকে দলের মহাসচিবের দায়িত্বে আছেন। দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি; ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, চীনের সঙ্গে সম্পর্কসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কামরুল হাসান ও উপসম্পাদক সাহিদুল ইসলাম চৌধুরী।
কামরুল হাসান ও সাহিদুল ইসলাম চৌধুরী

আজকের পত্রিকা: জাতীয় সনদ তৈরির কথা বলছে অন্তর্বর্তী সরকার। এতে বিএনপি কী দেখতে চায়?
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: সংস্কার প্রস্তাব যা এসেছে, তার মধ্যে যেগুলোতে আমরা একমত হব, সেগুলোর সমন্বয়ে সংস্কারের একটি সনদ তৈরি হবে। যে বিষয়গুলোয় মতৈক্য হবে না, সেগুলো জনগণের কাছে নিয়ে যেতে হবে। সেগুলো নির্বাচনী ইশতেহারে আসবে। জাতীয় সংসদে যাবে। শেষ পর্যন্ত সবকিছু সংসদে অনুমোদিত হতে হবে।
কোন বিষয়গুলোয় আমরা একমত হচ্ছি, তা ঠিক এ মুহূর্তে আমরা বলতে পারব না। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমরা একমত হয়েছি।
আজকের পত্রিকা: এই সনদ কার্যকর করার বিষয়ে বিএনপি কী ভূমিকা নেবে?
মির্জা ফখরুল: যে বিষয়গুলোয় একমত হওয়া যাবে, সেগুলো এই সরকার করে ফেলবে। সেগুলো আগামী সংসদে পাস হতে হবে।
আজকের পত্রিকা: আইন পরিষদে নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষের সদস্যরা কী প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত হবেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ আছে। দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে সদস্য নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে...
মির্জা ফখরুল: আমরা আনুপাতিক হারে সংসদে সদস্য (নিম্নকক্ষ) নির্বাচনের বিষয়ে একমত নই। উচ্চকক্ষে সদস্যরা কীভাবে নির্বাচিত হবেন, তা আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করা যেতে পারে।
আজকের পত্রিকা: আনুপাতিক পদ্ধতিতে আপনারা কী কী অসুবিধা দেখছেন?
মির্জা ফখরুল: আমরা বলেছি, সংসদে আলোচনার মাধ্যমে এটা করা যেতে পারে।
আজকের পত্রিকা: জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাব সংস্কার কমিশন থেকে আছে। বিএনপি ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের যে ৩১ দফা দিয়েছে, তাতে সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠনের কথা বলেছে। তাহলে এনসিসি গঠনে বিএনপির আপত্তি কেন?
মির্জা ফখরুল: এটা আমরা একদম না করে দিইনি। বলেছি, পরে সংসদে আলোচনা করে এটা করা যেতে পারে।
আজকের পত্রিকা: বিএনপি ২০১৬ সালে ‘ভিশন-২০৩০’ দিয়েছে। এতে বলা হয়, ‘এক দিনের গণতন্ত্রে’ সংসদীয় সরকারের আবরণে প্রধানমন্ত্রীর একক নির্বাহী ক্ষমতার মধ্যে একটি স্বৈরাচারী একনায়কতান্ত্রিক শাসনের জন্ম হয়। এখন নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনতে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানো এবং মেয়াদ সীমিত করার প্রস্তাব আছে। এতে কি ভারসাম্য আসবে?
মির্জা ফখরুল: গণতন্ত্র একটি সংস্কৃতি। এটা চর্চার বিষয়। চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়। মূল সমস্যা হলো, যেটা আমরা সবাই মিলে একমত হয়েছি, সেটাও চর্চা করিনি। যেমন কেয়ারটেকার সরকারব্যবস্থা। এটা প্রথমে আমরা মানতে চাইনি। যখন আমরা মেনেছি, এটা সংবিধানে যুক্ত করেছি। এই ব্যবস্থার অধীনে তিনটি নির্বাচন হয়েছে। সবাই বলছে, তিনটিই চমৎকার নির্বাচন হয়েছে। এই ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা গেলে নির্বাচনের ব্যবস্থাটা পাকা হয়ে যেত।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সরকারে যাঁরা এসেছেন, তাঁরা একেকজন পণ্ডিত মানুষ। কিন্তু জনগণের অংশগ্রহণ, জনগণকে সঙ্গে নেওয়া, এটা তো চর্চা করতে হবে। আজ যেটা গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো রাজনীতিকদের দৃঢ় অঙ্গীকার থাকা। এখন তাঁদের ছাত্রদের দলকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য যদি আলাদা করে নিয়মের বাইরে গিয়ে যদি কিছু করতে যান, মানুষ তা গ্রহণ করবে কি না, সে সিদ্ধান্তও নিতে হবে।
আজকের পত্রিকা: রাষ্ট্রপতির বর্তমান এখতিয়ারের সঙ্গে আর কী কী যুক্ত হওয়া দরকার বলে বিএনপি মনে করে?
মির্জা ফখরুল: আমরা সুনির্দিষ্টভাবে বলেছি, রাষ্ট্রপতির কী কী ক্ষমতা থাকা উচিত, আর প্রধানমন্ত্রীর কী কী ক্ষমতা থাকা দরকার। এগুলো এখনই বলতে পারব না। তবে এ ক্ষেত্রে একটি ভারসাম্য থাকা উচিত। আর মন্ত্রিসভা ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মধ্যেও ভারসাম্য থাকা উচিত।
আজকের পত্রিকা: আপনাদের নেতারা বলেন, বিএনপিকে ‘মাইনাস’ করার চেষ্টা সরকারের ভেতর থেকে আছে...
মির্জা ফখরুল: বর্তমান বিশ্বে বিরাজনীতিকরণের একটি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এটা বাংলাদেশে শুরু হয়েছে এক-এগারো (১১ জানুয়ারি ২০০৭) থেকে। ‘মাইনাস টু’ থিওরির কথা এসেছে। আমাদের অনেকে মনে করেন, এই চেষ্টা এখনো চলছে। এখন একটি মহল—যারা চায় না বিএনপি ক্ষমতায় আসুক, সরকার চালাক, নেতৃত্বের ভূমিকা নিক, তাদের মধ্যে এমন প্রবণতা আছে।
আজকের পত্রিকা: সরকার আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলছে। আপনারা কি মনে করেন, ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হবে?
মির্জা ফখরুল: নির্বাচন কী করে হবে? সরকার তো কোনো রোডম্যাপই দেয়নি! সরকার ধোঁয়াটে অবস্থা তৈরি করে রেখেছে। ডিসেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত তো কোনো তারিখ ঘোষণা করা হলো না। পরিষ্কার করে বলতে হবে, আমরা এই এই কাজগুলো করে এভাবে নির্বাচন করতে চাই। তা না হলে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে।
আজকের পত্রিকা: আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন—এমন একটি প্রচার আছে...
মির্জা ফখরুল: এটা যারা করে, তারা আসলে গণতন্ত্রে সেভাবে বিশ্বাস করে না। গণতন্ত্রে মূলকথা হলো, আপনি জনগণের মতামতের ভিত্তিতে ঠিক করবেন, কী করবেন। নির্বাচন না হলে কী লাভ হবে? আপনি কি এমন একটি শাসনব্যবস্থা চালাবেন, যা নির্বাচিত নয়! এ সরকার নির্বাচিত নয়। এ কারণে অনেক কিছু হচ্ছে না। সাধারণ মানুষ কোথাও বিচার পাচ্ছে না।
আজকের পত্রিকা: কয়েকটি দলের আচরণে আপনাদের কি মনে হচ্ছে, নির্বাচনে তাদের আগ্রহ কম...
মির্জা ফখরুল: তাঁরা হয়তো মনে করছেন, নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু হলেও তাঁরা জিততে পারবেন না। ভাবছেন, নির্বাচন দেরি হলে তাঁদের হয়তো একটু সুবিধা হবে। আসলে নির্বাচনে যত দেরি হবে, দেশ ও জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিদেশি বিনিয়োগ ততক্ষণ আসবে না, যতক্ষণ না এখানে নির্বাচিত সরকার আসে।
আজকের পত্রিকা: স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে করার কথা বলছে কয়েকটি দল। বিএনপি চায় সংসদ নির্বাচন। আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অসুবিধা কোথায়?
মির্জা ফখরুল: কোনোমতেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে নয়। মূল সংকট দেখা দিয়েছে সকলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি নিরপেক্ষ অবাধ সুষ্ঠু জাতীয় সংসদ নির্বাচন না হওয়ায়। স্থানীয় সরকার ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এ সমস্যার সমাধান হবে না।
আজকের পত্রিকা: বিএনপি কি নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে?
উত্তর: আমরা সব সময় প্রস্তুত। আজকে নির্বাচন দিন, আমরা কালকেই বেরিয়ে পড়ব।
আজকের পত্রিকা: নারী ইস্যুটি দেখুন, একটি কুশপুত্তলিকা পেটানোসহ নানা কিছু ঘটছে। আপনারা কিছু বলছেন না...।
মির্জা ফখরুল: অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যে কমিশন গঠন করেছেন (নারী বিষয়ে), সেটা গঠনের সময় বাংলাদেশের যে সংস্কৃতি, এখানকার মানুষের চিন্তাভাবনা বিবেচনায় নেননি। সরকারের উচিত ছিল, ওই কমিশনে প্রগতিশীল কিছু ইসলামি স্কলারকে রাখা। তাহলে বিষয়গুলো এভাবে আসত না।
আজকের পত্রিকা: মিয়ানমারের সঙ্গে যে করিডর, সেটা নিয়ে ‘নীতিগত সম্মতির’ কথা সরকার বলছে...
মির্জা ফখরুল: এটা তো আবার অস্বীকারও করেছে। একটা ধোঁয়াটে অবস্থা—এত রাখঢাক! কেন? এটার সঙ্গে দেশের নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার প্রশ্ন জড়িত। এতে রাখঢাকের কিছু নেই। যেহেতু সংসদ নেই, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলুন। শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিবস পালন করবেন কি না, তা আলাপ করতে সব দলকে ডাকলেন; সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়ে ভারতের প্রচার প্রসঙ্গে কথা বলতে ডাকলেন, করিডরের ব্যাপারে ডাকবেন না কেন! মিয়ানমার, রাখাইন ও রোহিঙ্গা আমাদের জাতীয় ইস্যু। সবাইকে ডাকুন, পরামর্শ করুন। তবে সংসদ ছাড়া এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না।
আজকের পত্রিকা: আওয়ামী লীগের রাজনীতির ব্যাপারে আপনাদের অবস্থান কী?
মির্জা ফখরুল: পরিষ্কারভাবে বলেছি, আওয়ামী লীগ একটি ফ্যাসিস্ট দল। তারা একটি গণহত্যার সঙ্গে জড়িত। এ জন্য তাদের বিচার করতে হবে। আর যদি আদালত মনে করে, দল হিসেবেও তাদের বিচার করা দরকার, তাহলে তা করতে হবে।
আজকের পত্রিকা: আওয়ামী লীগের রাজনীতি করা...
মির্জা ফখরুল: এটা মানুষ সিদ্ধান্ত নেবে। আদালত সিদ্ধান্ত নেবে। এটা আমি কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার!
আজকের পত্রিকা: জুলাই আন্দোলনে যেসব তরুণ সক্রিয় ছিলেন, রাজনীতির মাঠে তাঁদের কেমন দেখছেন?
মির্জা ফখরুল: ঢাকাতে তরুণেরা যথেষ্ট সক্রিয় আছে। ঢাকার বাইরে সেভাবে চোখে পড়েনি।
আজকের পত্রিকা: এর বাইরে দেশের সাধারণ তরুণদের কথা যদি বলেন...
মির্জা ফখরুল: তরুণদের কোনো সুনির্দিষ্ট মতাদর্শে আনতে না পারার কারণে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এর বহিঃপ্রকাশ ঘটছে রাজপথে। কোনো কিছু হলেই ওরা মারামারি করছে। কলেজে কলেজে মারামারি হচ্ছে। দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ছে। এগুলো বোধ হয় খুব ইতিবাচক কিছু হচ্ছে না। তরুণদের যদি একটি বিপ্লবী দল থাকত, তাহলে হয়তো কিছু কাজ হতো। কিন্তু এখন তো বিপ্লবী দল বলে কিছু নেই। একটি দল আছে, যে দলটি এখনো রাজনৈতিক দল হিসেবে তৈরি হতে পারেনি।
আজকের পত্রিকা: বিএনপিতে বড় কোনো পরিবর্তন আসছে?
মির্জা ফখরুল: আসছে তো! আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান (তারেক রহমান) নিজেই তো তরুণ।
আজকের পত্রিকা: ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশে ফিরবেন কবে, কেন ফিরছেন না?
উত্তর: অবশ্যই ফিরবেন। মামলা আছে কয়েকটা। শেষ হলেই চলে আসবেন।
আজকের পত্রিকা: তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান নাকি রাজনীতিতে আসবেন, এমন আওয়াজ আছে...
মির্জা ফখরুল: এটা আওয়াজেই আছে। আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। মিডিয়া গসিপ করছে।
আজকের পত্রিকা: নির্বাচনের পর বিএনপি জাতীয় সরকার গঠনের কথা বলছে। তাহলে কি বিএনপি এবার এককভাবে নির্বাচনে যাবে?
মির্জা ফখরুল: হ্যাঁ, সিদ্ধান্ত তো তাই আছে এককভাবে নির্বাচন করার। নির্বাচনের আগে সিদ্ধান্ত নেব, জোট করব কি করব না।
আজকের পত্রিকা: বিএনপি ক্ষমতায় এলে তারপরের নির্বাচন কি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করবেন?
মির্জা ফখরুল: এটা তো এবারই সংবিধানেই এসে যাচ্ছে। এটা সব দলেরই দাবি।
আজকের পত্রিকা: একটি সাধারণ অভিযোগ, বিএনপির লোকেরা বিভিন্ন জায়গায় নিজেরা নিজেরা মারামারি করছে, প্রাধান্য বিস্তারের জন্য...
মির্জা ফখরুল: বিচ্ছিন্ন দু-একটি ঘটনা ঘটছে। বহু আগে থেকেই এ দেশে মারামারি গণতন্ত্রের অংশ। ট্রাম্প হেরে যাওয়ার পর ক্যাপিটল হিল আক্রান্ত হয়নি? এতে কি সেখানে গণতন্ত্র শেষ হয়ে গেছে?
আজকের পত্রিকা: আপনার দলের লোকদের বিরুদ্ধে দখল-চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠছে...
মির্জা ফখরুল: তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে এগুলো মুহূর্তের মধ্যে দূর করে ফেলতে পারবেন, এটা সম্ভব নয়। তবে দলের পক্ষ থেকে সমন্বিত চেষ্টা আছে। আমরা প্রায় তিন হাজার লোককে বহিষ্কার করেছি দল থেকে।
আজকের পত্রিকা: জাতীয় সরকার হলে সংসদে বিরোধী দলের মাধ্যমে নির্বাহী বিভাগের জবাবদিহি নিশ্চিত করার যে ব্যাপার থাকে, সেটা কে পালন করবেন?
মির্জা ফখরুল: তখন বিরোধী দল তৈরি হবে। সবাই যে জাতীয় সরকারে আসবে, তা তো নয়। আর আমরা সবাইকে নিয়েই যে জাতীয় সরকার গঠন করব, তা-ও তো বলছি না।
আজকের পত্রিকা: মুহাম্মদ ইউনূসের আন্তর্জাতিক পরিচিতি আছে। আগামী নির্বাচনের পর বিএনপি কি তাঁকে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর আওতায় কোনো ভূমিকায় দেখতে চায়?
মির্জা ফখরুল: এটা এখনই বলা যাবে না, কে কী করতে চাইবেন, বা দল কী চাইবে। এটা নির্ভর করবে তখনকার রাজনৈতিক মেরুকরণের ওপর।
আজকের পত্রিকা: বিএনপির সর্বশেষ কাউন্সিল হয় ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ, যেখানে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তিন বছরের জন্য নির্বাচিত হন। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে দলের কাউন্সিল আয়োজনের কোনো পরিকল্পনা কি আছে?
মির্জা ফখরুল: নির্বাচন সামনে রেখে কাউন্সিল করলে অনেক ইস্যু সামনে চলে আসে। তাই এ মুহূর্তে কাউন্সিলের সম্ভাবনা কম। তবে প্রয়োজন হলে কাউন্সিল করব।
আজকের পত্রিকা: অন্তর্বর্তী সরকারে বিএনপির প্রভাব আছে, এতে নির্বাচন প্রভাবিত হতে পারে, এমন আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছে...
মির্জা ফখরুল: এটা একেবারেই ভুল কথা; বরং উল্টোটা আছে। আমলাদের বেশির ভাগই আমাদের কাজ করছে না।
আজকের পত্রিকা: জুলাই আন্দোলন বিএনপি কীভাবে দেখে?
মির্জা ফখরুল: একাত্তর হলো আমাদের ‘বটমলাইন’—আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলন, আমাদের পরিচিতি, স্বাতন্ত্র্য। আর চব্বিশে ছাত্রদের যে আন্দোলন, তা স্বতঃস্ফূর্ত তাৎক্ষণিক একটি বিষয়। ১৫ বছর ধরে গণতন্ত্রের জন্য যে নিরন্তর লড়াই করেছি আমরা, তার সঙ্গে ছাত্রদের আন্দোলন একটি স্ফুলিঙ্গের ভূমিকা রেখেছে। এটাকেও খাটো করে দেখার কোনো উপায় নেই।
আজকের পত্রিকা: তাহলে এই স্ফুলিঙ্গ বিএনপির ১৫ বছরের আন্দোলনে হলো না কেন?
মির্জা ফখরুল: কখন কোথায় স্ফুলিঙ্গ হবে, এটা বলা মুশকিল। এই ভূখণ্ডেই আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে লড়াই হয়েছে দীর্ঘ ১২ বছর। কিন্তু যেদিন আসাদ মারা গেছেন, সেদিনই তাঁর বিরুদ্ধে আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। তাঁর পতন হয়েছে। (এইচ এম) এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলেছে ৯ বছর। কিন্তু যেদিন ডা. মিলন মারা গেলেন, সেদিন এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন ছড়িয়ে গেল।
আজকের পত্রিকা: ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক খারাপ যাচ্ছে, গত ৫ আগস্টের পর থেকে। ভবিষ্যতে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে কীভাবে দেখেন?
মির্জা ফখরুল: আমার ধারণা ছিল, ভারত রাষ্ট্র হিসেবে অনেক বড়, সুপারপাওয়ারের কাছাকাছি। সে অনুযায়ী তাদের কূটনৈতিক চর্চা বাস্তবসম্মত হবে, টেকসই হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে সেই প্রত্যাশিত কূটনৈতিক চর্চা কখনোই করেনি। এই যে ‘সোনালি সম্পর্ক’ বা ‘স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক,’ সেটা ছিল আওয়ামী লীগের সঙ্গে। এটা ভারতের দিক থেকে একটি ভুল ছিল। একটি দলের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে গিয়ে বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে তাদের পুরোপুরি বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। এখন ভারতের জায়গা আর নেই।
সেই সম্পর্ক ভারতকে আবার তৈরি করতে হবে। এটা করতে হবে বিভিন্ন উপায়ে; যেমন তিস্তা ও অন্যান্য নদীর পানির হিস্যা দিতে হবে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার বন্ধ করতে হবে। আরেকটি বড় ইস্যু আছে, তা হচ্ছে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের কাছে ফেরত দিতে হবে।
আজকের পত্রিকা: ভারতের সঙ্গে বিএনপির যোগাযোগ কেমন?
মির্জা ফখরুল: আমরা সব দেশের সঙ্গে কাজকর্মের সম্পর্ক রক্ষা করি। ভারতের সঙ্গে সেটা আমাদের হচ্ছে না। আমরা আশা করি, বিএনপির সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরি করার উদ্যোগ ভারত নেবে।
আজকের পত্রিকা: জুলাই অভ্যুত্থানের পর ভারতের সঙ্গে আপনাদের যোগাযোগ হয়েছে?
মির্জা ফখরুল: না, আমাদের সঙ্গে সে ধরনের যোগাযোগ হয়নি। তবে আমাদের ইফতার পার্টিতে তাঁরা এসেছেন।
আজকের পত্রিকা: যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবকে আঞ্চলিক রাজনীতিতে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়? আঞ্চলিক রাজনীতিতে দেশটির ভূমিকাকে আপনারা কীভাবে দেখেন?
মির্জা ফখরুল: যুক্তরাষ্ট্র একটি পরাশক্তি। তারা এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে প্রাধান্য বিস্তারের জন্য উদ্গ্রীব। ভারতের সঙ্গে জোরালো সম্পর্ক আছে তাদের। সরকারিভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কও খারাপ নয়। তবে সম্পর্কের দিক থেকে ততটুকুই গ্রহণযোগ্য, যতটুকু বাংলাদেশের স্বার্থের সঙ্গে সম্পর্কিত।
আজকের পত্রিকা: চীনের সঙ্গে সম্পর্ক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক দিক থেকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। চীন বিষয়ে বিএনপির অবস্থান কী?
মির্জা ফখরুল: বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রথম চীনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেন, ১৯৭৫ সালে। তারপর থেকে চমৎকার সম্পর্ক ছিল। মাঝখানে একটু ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছে। এখন সম্পর্ক খুবই ভালো।
আজকের পত্রিকা: সাধারণ মানুষের ধারণা, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি খুব কৌশলে এগোচ্ছে, এটা কি ঠিক?
মির্জা ফখরুল: বিএনপি তো ‘ঘর পোড়া গরু, সিঁদুরে মেঘ দেখে ভয় পায়’। এত বড় অভ্যুত্থানের পর আমাদের একটি ভুলে যদি পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে চলে যায়, তাহলে দায়দায়িত্ব বিএনপিকে নিতে হবে।
জনগণকে এটা মনে রাখতে হবে, জনপ্রিয়তামুখী রাজনীতি ভিন্ন বিষয়। বিএনপি একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল। অতীতে কয়েকবার ক্ষমতায় ছিল। আবার ক্ষমতায় আসার আশা করে। সম্ভবত আবার ক্ষমতায় আসবে। এ কারণে বিএনপিকে প্রতিটি পা ফেলতে হয় হিসাব করে। আমরা ইচ্ছা করলেই কাল হরতাল ডাকতে পারি, ঢাকা শহর অচল করে দিতে পারি। কিন্তু সেটা আমরা কেন করব? আমরা মনে করি, এখন ধৈর্য ধরে এ সরকারকে সফল হতে দিতে হবে। দেশকে শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দিকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
আজকের পত্রিকা: আপনাকে ধন্যবাদ।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: আপনাদেরও ধন্যবাদ।
আরও খবর পড়ুন:
আজকের পত্রিকা: জাতীয় সনদ তৈরির কথা বলছে অন্তর্বর্তী সরকার। এতে বিএনপি কী দেখতে চায়?
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: সংস্কার প্রস্তাব যা এসেছে, তার মধ্যে যেগুলোতে আমরা একমত হব, সেগুলোর সমন্বয়ে সংস্কারের একটি সনদ তৈরি হবে। যে বিষয়গুলোয় মতৈক্য হবে না, সেগুলো জনগণের কাছে নিয়ে যেতে হবে। সেগুলো নির্বাচনী ইশতেহারে আসবে। জাতীয় সংসদে যাবে। শেষ পর্যন্ত সবকিছু সংসদে অনুমোদিত হতে হবে।
কোন বিষয়গুলোয় আমরা একমত হচ্ছি, তা ঠিক এ মুহূর্তে আমরা বলতে পারব না। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমরা একমত হয়েছি।
আজকের পত্রিকা: এই সনদ কার্যকর করার বিষয়ে বিএনপি কী ভূমিকা নেবে?
মির্জা ফখরুল: যে বিষয়গুলোয় একমত হওয়া যাবে, সেগুলো এই সরকার করে ফেলবে। সেগুলো আগামী সংসদে পাস হতে হবে।
আজকের পত্রিকা: আইন পরিষদে নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষের সদস্যরা কী প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত হবেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ আছে। দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে সদস্য নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে...
মির্জা ফখরুল: আমরা আনুপাতিক হারে সংসদে সদস্য (নিম্নকক্ষ) নির্বাচনের বিষয়ে একমত নই। উচ্চকক্ষে সদস্যরা কীভাবে নির্বাচিত হবেন, তা আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করা যেতে পারে।
আজকের পত্রিকা: আনুপাতিক পদ্ধতিতে আপনারা কী কী অসুবিধা দেখছেন?
মির্জা ফখরুল: আমরা বলেছি, সংসদে আলোচনার মাধ্যমে এটা করা যেতে পারে।
আজকের পত্রিকা: জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাব সংস্কার কমিশন থেকে আছে। বিএনপি ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের যে ৩১ দফা দিয়েছে, তাতে সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠনের কথা বলেছে। তাহলে এনসিসি গঠনে বিএনপির আপত্তি কেন?
মির্জা ফখরুল: এটা আমরা একদম না করে দিইনি। বলেছি, পরে সংসদে আলোচনা করে এটা করা যেতে পারে।
আজকের পত্রিকা: বিএনপি ২০১৬ সালে ‘ভিশন-২০৩০’ দিয়েছে। এতে বলা হয়, ‘এক দিনের গণতন্ত্রে’ সংসদীয় সরকারের আবরণে প্রধানমন্ত্রীর একক নির্বাহী ক্ষমতার মধ্যে একটি স্বৈরাচারী একনায়কতান্ত্রিক শাসনের জন্ম হয়। এখন নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনতে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানো এবং মেয়াদ সীমিত করার প্রস্তাব আছে। এতে কি ভারসাম্য আসবে?
মির্জা ফখরুল: গণতন্ত্র একটি সংস্কৃতি। এটা চর্চার বিষয়। চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়। মূল সমস্যা হলো, যেটা আমরা সবাই মিলে একমত হয়েছি, সেটাও চর্চা করিনি। যেমন কেয়ারটেকার সরকারব্যবস্থা। এটা প্রথমে আমরা মানতে চাইনি। যখন আমরা মেনেছি, এটা সংবিধানে যুক্ত করেছি। এই ব্যবস্থার অধীনে তিনটি নির্বাচন হয়েছে। সবাই বলছে, তিনটিই চমৎকার নির্বাচন হয়েছে। এই ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা গেলে নির্বাচনের ব্যবস্থাটা পাকা হয়ে যেত।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সরকারে যাঁরা এসেছেন, তাঁরা একেকজন পণ্ডিত মানুষ। কিন্তু জনগণের অংশগ্রহণ, জনগণকে সঙ্গে নেওয়া, এটা তো চর্চা করতে হবে। আজ যেটা গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো রাজনীতিকদের দৃঢ় অঙ্গীকার থাকা। এখন তাঁদের ছাত্রদের দলকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য যদি আলাদা করে নিয়মের বাইরে গিয়ে যদি কিছু করতে যান, মানুষ তা গ্রহণ করবে কি না, সে সিদ্ধান্তও নিতে হবে।
আজকের পত্রিকা: রাষ্ট্রপতির বর্তমান এখতিয়ারের সঙ্গে আর কী কী যুক্ত হওয়া দরকার বলে বিএনপি মনে করে?
মির্জা ফখরুল: আমরা সুনির্দিষ্টভাবে বলেছি, রাষ্ট্রপতির কী কী ক্ষমতা থাকা উচিত, আর প্রধানমন্ত্রীর কী কী ক্ষমতা থাকা দরকার। এগুলো এখনই বলতে পারব না। তবে এ ক্ষেত্রে একটি ভারসাম্য থাকা উচিত। আর মন্ত্রিসভা ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মধ্যেও ভারসাম্য থাকা উচিত।
আজকের পত্রিকা: আপনাদের নেতারা বলেন, বিএনপিকে ‘মাইনাস’ করার চেষ্টা সরকারের ভেতর থেকে আছে...
মির্জা ফখরুল: বর্তমান বিশ্বে বিরাজনীতিকরণের একটি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এটা বাংলাদেশে শুরু হয়েছে এক-এগারো (১১ জানুয়ারি ২০০৭) থেকে। ‘মাইনাস টু’ থিওরির কথা এসেছে। আমাদের অনেকে মনে করেন, এই চেষ্টা এখনো চলছে। এখন একটি মহল—যারা চায় না বিএনপি ক্ষমতায় আসুক, সরকার চালাক, নেতৃত্বের ভূমিকা নিক, তাদের মধ্যে এমন প্রবণতা আছে।
আজকের পত্রিকা: সরকার আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলছে। আপনারা কি মনে করেন, ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হবে?
মির্জা ফখরুল: নির্বাচন কী করে হবে? সরকার তো কোনো রোডম্যাপই দেয়নি! সরকার ধোঁয়াটে অবস্থা তৈরি করে রেখেছে। ডিসেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত তো কোনো তারিখ ঘোষণা করা হলো না। পরিষ্কার করে বলতে হবে, আমরা এই এই কাজগুলো করে এভাবে নির্বাচন করতে চাই। তা না হলে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে।
আজকের পত্রিকা: আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন—এমন একটি প্রচার আছে...
মির্জা ফখরুল: এটা যারা করে, তারা আসলে গণতন্ত্রে সেভাবে বিশ্বাস করে না। গণতন্ত্রে মূলকথা হলো, আপনি জনগণের মতামতের ভিত্তিতে ঠিক করবেন, কী করবেন। নির্বাচন না হলে কী লাভ হবে? আপনি কি এমন একটি শাসনব্যবস্থা চালাবেন, যা নির্বাচিত নয়! এ সরকার নির্বাচিত নয়। এ কারণে অনেক কিছু হচ্ছে না। সাধারণ মানুষ কোথাও বিচার পাচ্ছে না।
আজকের পত্রিকা: কয়েকটি দলের আচরণে আপনাদের কি মনে হচ্ছে, নির্বাচনে তাদের আগ্রহ কম...
মির্জা ফখরুল: তাঁরা হয়তো মনে করছেন, নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু হলেও তাঁরা জিততে পারবেন না। ভাবছেন, নির্বাচন দেরি হলে তাঁদের হয়তো একটু সুবিধা হবে। আসলে নির্বাচনে যত দেরি হবে, দেশ ও জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিদেশি বিনিয়োগ ততক্ষণ আসবে না, যতক্ষণ না এখানে নির্বাচিত সরকার আসে।
আজকের পত্রিকা: স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে করার কথা বলছে কয়েকটি দল। বিএনপি চায় সংসদ নির্বাচন। আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অসুবিধা কোথায়?
মির্জা ফখরুল: কোনোমতেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে নয়। মূল সংকট দেখা দিয়েছে সকলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি নিরপেক্ষ অবাধ সুষ্ঠু জাতীয় সংসদ নির্বাচন না হওয়ায়। স্থানীয় সরকার ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এ সমস্যার সমাধান হবে না।
আজকের পত্রিকা: বিএনপি কি নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে?
উত্তর: আমরা সব সময় প্রস্তুত। আজকে নির্বাচন দিন, আমরা কালকেই বেরিয়ে পড়ব।
আজকের পত্রিকা: নারী ইস্যুটি দেখুন, একটি কুশপুত্তলিকা পেটানোসহ নানা কিছু ঘটছে। আপনারা কিছু বলছেন না...।
মির্জা ফখরুল: অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যে কমিশন গঠন করেছেন (নারী বিষয়ে), সেটা গঠনের সময় বাংলাদেশের যে সংস্কৃতি, এখানকার মানুষের চিন্তাভাবনা বিবেচনায় নেননি। সরকারের উচিত ছিল, ওই কমিশনে প্রগতিশীল কিছু ইসলামি স্কলারকে রাখা। তাহলে বিষয়গুলো এভাবে আসত না।
আজকের পত্রিকা: মিয়ানমারের সঙ্গে যে করিডর, সেটা নিয়ে ‘নীতিগত সম্মতির’ কথা সরকার বলছে...
মির্জা ফখরুল: এটা তো আবার অস্বীকারও করেছে। একটা ধোঁয়াটে অবস্থা—এত রাখঢাক! কেন? এটার সঙ্গে দেশের নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার প্রশ্ন জড়িত। এতে রাখঢাকের কিছু নেই। যেহেতু সংসদ নেই, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলুন। শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিবস পালন করবেন কি না, তা আলাপ করতে সব দলকে ডাকলেন; সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়ে ভারতের প্রচার প্রসঙ্গে কথা বলতে ডাকলেন, করিডরের ব্যাপারে ডাকবেন না কেন! মিয়ানমার, রাখাইন ও রোহিঙ্গা আমাদের জাতীয় ইস্যু। সবাইকে ডাকুন, পরামর্শ করুন। তবে সংসদ ছাড়া এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না।
আজকের পত্রিকা: আওয়ামী লীগের রাজনীতির ব্যাপারে আপনাদের অবস্থান কী?
মির্জা ফখরুল: পরিষ্কারভাবে বলেছি, আওয়ামী লীগ একটি ফ্যাসিস্ট দল। তারা একটি গণহত্যার সঙ্গে জড়িত। এ জন্য তাদের বিচার করতে হবে। আর যদি আদালত মনে করে, দল হিসেবেও তাদের বিচার করা দরকার, তাহলে তা করতে হবে।
আজকের পত্রিকা: আওয়ামী লীগের রাজনীতি করা...
মির্জা ফখরুল: এটা মানুষ সিদ্ধান্ত নেবে। আদালত সিদ্ধান্ত নেবে। এটা আমি কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার!
আজকের পত্রিকা: জুলাই আন্দোলনে যেসব তরুণ সক্রিয় ছিলেন, রাজনীতির মাঠে তাঁদের কেমন দেখছেন?
মির্জা ফখরুল: ঢাকাতে তরুণেরা যথেষ্ট সক্রিয় আছে। ঢাকার বাইরে সেভাবে চোখে পড়েনি।
আজকের পত্রিকা: এর বাইরে দেশের সাধারণ তরুণদের কথা যদি বলেন...
মির্জা ফখরুল: তরুণদের কোনো সুনির্দিষ্ট মতাদর্শে আনতে না পারার কারণে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এর বহিঃপ্রকাশ ঘটছে রাজপথে। কোনো কিছু হলেই ওরা মারামারি করছে। কলেজে কলেজে মারামারি হচ্ছে। দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ছে। এগুলো বোধ হয় খুব ইতিবাচক কিছু হচ্ছে না। তরুণদের যদি একটি বিপ্লবী দল থাকত, তাহলে হয়তো কিছু কাজ হতো। কিন্তু এখন তো বিপ্লবী দল বলে কিছু নেই। একটি দল আছে, যে দলটি এখনো রাজনৈতিক দল হিসেবে তৈরি হতে পারেনি।
আজকের পত্রিকা: বিএনপিতে বড় কোনো পরিবর্তন আসছে?
মির্জা ফখরুল: আসছে তো! আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান (তারেক রহমান) নিজেই তো তরুণ।
আজকের পত্রিকা: ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশে ফিরবেন কবে, কেন ফিরছেন না?
উত্তর: অবশ্যই ফিরবেন। মামলা আছে কয়েকটা। শেষ হলেই চলে আসবেন।
আজকের পত্রিকা: তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান নাকি রাজনীতিতে আসবেন, এমন আওয়াজ আছে...
মির্জা ফখরুল: এটা আওয়াজেই আছে। আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। মিডিয়া গসিপ করছে।
আজকের পত্রিকা: নির্বাচনের পর বিএনপি জাতীয় সরকার গঠনের কথা বলছে। তাহলে কি বিএনপি এবার এককভাবে নির্বাচনে যাবে?
মির্জা ফখরুল: হ্যাঁ, সিদ্ধান্ত তো তাই আছে এককভাবে নির্বাচন করার। নির্বাচনের আগে সিদ্ধান্ত নেব, জোট করব কি করব না।
আজকের পত্রিকা: বিএনপি ক্ষমতায় এলে তারপরের নির্বাচন কি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করবেন?
মির্জা ফখরুল: এটা তো এবারই সংবিধানেই এসে যাচ্ছে। এটা সব দলেরই দাবি।
আজকের পত্রিকা: একটি সাধারণ অভিযোগ, বিএনপির লোকেরা বিভিন্ন জায়গায় নিজেরা নিজেরা মারামারি করছে, প্রাধান্য বিস্তারের জন্য...
মির্জা ফখরুল: বিচ্ছিন্ন দু-একটি ঘটনা ঘটছে। বহু আগে থেকেই এ দেশে মারামারি গণতন্ত্রের অংশ। ট্রাম্প হেরে যাওয়ার পর ক্যাপিটল হিল আক্রান্ত হয়নি? এতে কি সেখানে গণতন্ত্র শেষ হয়ে গেছে?
আজকের পত্রিকা: আপনার দলের লোকদের বিরুদ্ধে দখল-চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠছে...
মির্জা ফখরুল: তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে এগুলো মুহূর্তের মধ্যে দূর করে ফেলতে পারবেন, এটা সম্ভব নয়। তবে দলের পক্ষ থেকে সমন্বিত চেষ্টা আছে। আমরা প্রায় তিন হাজার লোককে বহিষ্কার করেছি দল থেকে।
আজকের পত্রিকা: জাতীয় সরকার হলে সংসদে বিরোধী দলের মাধ্যমে নির্বাহী বিভাগের জবাবদিহি নিশ্চিত করার যে ব্যাপার থাকে, সেটা কে পালন করবেন?
মির্জা ফখরুল: তখন বিরোধী দল তৈরি হবে। সবাই যে জাতীয় সরকারে আসবে, তা তো নয়। আর আমরা সবাইকে নিয়েই যে জাতীয় সরকার গঠন করব, তা-ও তো বলছি না।
আজকের পত্রিকা: মুহাম্মদ ইউনূসের আন্তর্জাতিক পরিচিতি আছে। আগামী নির্বাচনের পর বিএনপি কি তাঁকে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর আওতায় কোনো ভূমিকায় দেখতে চায়?
মির্জা ফখরুল: এটা এখনই বলা যাবে না, কে কী করতে চাইবেন, বা দল কী চাইবে। এটা নির্ভর করবে তখনকার রাজনৈতিক মেরুকরণের ওপর।
আজকের পত্রিকা: বিএনপির সর্বশেষ কাউন্সিল হয় ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ, যেখানে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তিন বছরের জন্য নির্বাচিত হন। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে দলের কাউন্সিল আয়োজনের কোনো পরিকল্পনা কি আছে?
মির্জা ফখরুল: নির্বাচন সামনে রেখে কাউন্সিল করলে অনেক ইস্যু সামনে চলে আসে। তাই এ মুহূর্তে কাউন্সিলের সম্ভাবনা কম। তবে প্রয়োজন হলে কাউন্সিল করব।
আজকের পত্রিকা: অন্তর্বর্তী সরকারে বিএনপির প্রভাব আছে, এতে নির্বাচন প্রভাবিত হতে পারে, এমন আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছে...
মির্জা ফখরুল: এটা একেবারেই ভুল কথা; বরং উল্টোটা আছে। আমলাদের বেশির ভাগই আমাদের কাজ করছে না।
আজকের পত্রিকা: জুলাই আন্দোলন বিএনপি কীভাবে দেখে?
মির্জা ফখরুল: একাত্তর হলো আমাদের ‘বটমলাইন’—আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলন, আমাদের পরিচিতি, স্বাতন্ত্র্য। আর চব্বিশে ছাত্রদের যে আন্দোলন, তা স্বতঃস্ফূর্ত তাৎক্ষণিক একটি বিষয়। ১৫ বছর ধরে গণতন্ত্রের জন্য যে নিরন্তর লড়াই করেছি আমরা, তার সঙ্গে ছাত্রদের আন্দোলন একটি স্ফুলিঙ্গের ভূমিকা রেখেছে। এটাকেও খাটো করে দেখার কোনো উপায় নেই।
আজকের পত্রিকা: তাহলে এই স্ফুলিঙ্গ বিএনপির ১৫ বছরের আন্দোলনে হলো না কেন?
মির্জা ফখরুল: কখন কোথায় স্ফুলিঙ্গ হবে, এটা বলা মুশকিল। এই ভূখণ্ডেই আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে লড়াই হয়েছে দীর্ঘ ১২ বছর। কিন্তু যেদিন আসাদ মারা গেছেন, সেদিনই তাঁর বিরুদ্ধে আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। তাঁর পতন হয়েছে। (এইচ এম) এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলেছে ৯ বছর। কিন্তু যেদিন ডা. মিলন মারা গেলেন, সেদিন এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন ছড়িয়ে গেল।
আজকের পত্রিকা: ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক খারাপ যাচ্ছে, গত ৫ আগস্টের পর থেকে। ভবিষ্যতে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে কীভাবে দেখেন?
মির্জা ফখরুল: আমার ধারণা ছিল, ভারত রাষ্ট্র হিসেবে অনেক বড়, সুপারপাওয়ারের কাছাকাছি। সে অনুযায়ী তাদের কূটনৈতিক চর্চা বাস্তবসম্মত হবে, টেকসই হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে সেই প্রত্যাশিত কূটনৈতিক চর্চা কখনোই করেনি। এই যে ‘সোনালি সম্পর্ক’ বা ‘স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক,’ সেটা ছিল আওয়ামী লীগের সঙ্গে। এটা ভারতের দিক থেকে একটি ভুল ছিল। একটি দলের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে গিয়ে বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে তাদের পুরোপুরি বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। এখন ভারতের জায়গা আর নেই।
সেই সম্পর্ক ভারতকে আবার তৈরি করতে হবে। এটা করতে হবে বিভিন্ন উপায়ে; যেমন তিস্তা ও অন্যান্য নদীর পানির হিস্যা দিতে হবে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার বন্ধ করতে হবে। আরেকটি বড় ইস্যু আছে, তা হচ্ছে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের কাছে ফেরত দিতে হবে।
আজকের পত্রিকা: ভারতের সঙ্গে বিএনপির যোগাযোগ কেমন?
মির্জা ফখরুল: আমরা সব দেশের সঙ্গে কাজকর্মের সম্পর্ক রক্ষা করি। ভারতের সঙ্গে সেটা আমাদের হচ্ছে না। আমরা আশা করি, বিএনপির সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরি করার উদ্যোগ ভারত নেবে।
আজকের পত্রিকা: জুলাই অভ্যুত্থানের পর ভারতের সঙ্গে আপনাদের যোগাযোগ হয়েছে?
মির্জা ফখরুল: না, আমাদের সঙ্গে সে ধরনের যোগাযোগ হয়নি। তবে আমাদের ইফতার পার্টিতে তাঁরা এসেছেন।
আজকের পত্রিকা: যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবকে আঞ্চলিক রাজনীতিতে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়? আঞ্চলিক রাজনীতিতে দেশটির ভূমিকাকে আপনারা কীভাবে দেখেন?
মির্জা ফখরুল: যুক্তরাষ্ট্র একটি পরাশক্তি। তারা এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে প্রাধান্য বিস্তারের জন্য উদ্গ্রীব। ভারতের সঙ্গে জোরালো সম্পর্ক আছে তাদের। সরকারিভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কও খারাপ নয়। তবে সম্পর্কের দিক থেকে ততটুকুই গ্রহণযোগ্য, যতটুকু বাংলাদেশের স্বার্থের সঙ্গে সম্পর্কিত।
আজকের পত্রিকা: চীনের সঙ্গে সম্পর্ক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক দিক থেকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। চীন বিষয়ে বিএনপির অবস্থান কী?
মির্জা ফখরুল: বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রথম চীনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেন, ১৯৭৫ সালে। তারপর থেকে চমৎকার সম্পর্ক ছিল। মাঝখানে একটু ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছে। এখন সম্পর্ক খুবই ভালো।
আজকের পত্রিকা: সাধারণ মানুষের ধারণা, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি খুব কৌশলে এগোচ্ছে, এটা কি ঠিক?
মির্জা ফখরুল: বিএনপি তো ‘ঘর পোড়া গরু, সিঁদুরে মেঘ দেখে ভয় পায়’। এত বড় অভ্যুত্থানের পর আমাদের একটি ভুলে যদি পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে চলে যায়, তাহলে দায়দায়িত্ব বিএনপিকে নিতে হবে।
জনগণকে এটা মনে রাখতে হবে, জনপ্রিয়তামুখী রাজনীতি ভিন্ন বিষয়। বিএনপি একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল। অতীতে কয়েকবার ক্ষমতায় ছিল। আবার ক্ষমতায় আসার আশা করে। সম্ভবত আবার ক্ষমতায় আসবে। এ কারণে বিএনপিকে প্রতিটি পা ফেলতে হয় হিসাব করে। আমরা ইচ্ছা করলেই কাল হরতাল ডাকতে পারি, ঢাকা শহর অচল করে দিতে পারি। কিন্তু সেটা আমরা কেন করব? আমরা মনে করি, এখন ধৈর্য ধরে এ সরকারকে সফল হতে দিতে হবে। দেশকে শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দিকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
আজকের পত্রিকা: আপনাকে ধন্যবাদ।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: আপনাদেরও ধন্যবাদ।
আরও খবর পড়ুন:

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের লাইন এখন অনেক লম্বা। প্রার্থী বাছাই করতে তাই নাজেহাল অবস্থা দলটির। এর ওপর যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের জন্য ছাড়তে হবে আসন। খুঁজতে হচ্ছে নতুন শরিক দলও। হিসাব মিলে গেলেও আসনের ভাগ দিতে হবে তাদের।
৫ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। তবে সংশোধিত আরপিওর একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা নিয়ে আপত্তি তুলেছে বিএনপি। নতুন সংশোধনীতে বলা হয়েছে, কোনো দল জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নিলেও প্রার্থীদের নিজ নিজ দলের প্রতীকেই ভোট করতে হবে।
৯ ঘণ্টা আগে
বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে প্রাথমিকে ধর্মীয় শিক্ষক পদ সৃষ্টি করা হবে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, যে জাতি ধর্মীয় ও নৈতিকতার ওপর সমুন্নত থাকে, তার পরাজয় হয় না।
১৩ ঘণ্টা আগে
সুফি সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করে উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে মাজার ও দরবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের স্বার্থেই মাজার ও দরবারের প্রতি এই সহিংসতাকে রোধ করতে হবে।
১৩ ঘণ্টা আগেরেজা করিম

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের লাইন এখন অনেক লম্বা। প্রার্থী বাছাই করতে তাই নাজেহাল অবস্থা দলটির। এর ওপর যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের জন্য ছাড়তে হবে আসন। খুঁজতে হচ্ছে নতুন শরিক দলও। হিসাব মিলে গেলেও আসনের ভাগ দিতে হবে তাদের। কিন্তু ওই দল থেকে জিতে আসার মতো প্রার্থী হাতে গোনা। আবার ভোটে প্রতীক ব্যবহারের নিয়মেও এসেছে বদল। এ অবস্থায় শরিক দল ও নিজেদের আসনের হিসাব মেলানো বেশ চ্যালেঞ্জের হয়ে দাঁড়িয়েছে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের জন্য।
ঘোষণা অনুযায়ী, জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা আগামী ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি। এর আগে চলতি মাসের মধ্যেই ২০০ আসনে নিজেদের একক প্রার্থী বাছাই করে তাঁদের সবুজ সংকেত দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেছেন, ‘এ মাসের মধ্যেই দলের পক্ষ থেকে কম-বেশি ২০০ নির্বাচনী এলাকায় একক প্রার্থীকে হয়তো আমরা গ্রিন সিগন্যাল দেব। সে প্রক্রিয়ায় আছি, আমরা শেষের দিকে।’
বিএনপি ও সংশ্লিষ্ট দলগুলোর সূত্র বলছে, আসন ভাগাভাগি নিয়ে বিএনপির সঙ্গে শরিক দলগুলোর আলোচনা চলমান রয়েছে। দলগুলো পৃথকভাবে তাদের প্রস্তাবিত প্রার্থীর তালিকা দিয়ে সে অনুযায়ী আসন ছাড় চেয়েছে। জমা পড়া তালিকা অনুযায়ী বিএনপির কাছে শরিকেরা দুই শতাধিক আসন ছাড় চেয়েছে। এসব তালিকা পর্যালোচনা করে সর্বোচ্চ ৩০টির মতো ছাড়ের কথা ভাবছে বিএনপি। এরই মধ্যে শরিক দলগুলোর মধ্য থেকে অন্তত ১৫ জনকে সবুজ সংকেত দিয়েছে তারা।
এদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে বিএনপির জোটবদ্ধ হওয়ার আলোচনাও এখন প্রকাশ্যে। তাদের মধ্যে আসন ভাগাভাগির আলোচনাও চলছে বলে জানা গেছে।
বিএনপির একটি সূত্র বলছে, এনসিপির সঙ্গে বিএনপির আলোচনা চলছে। এসব আলোচনা আসন ভাগাভাগি পর্যন্ত গড়িয়েছে। জোটবদ্ধ হলে এনসিপিকে ৫ থেকে ৭টি আসন ছাড় দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে বিএনপির পক্ষ থেকে। তবে এনসিপির চাওয়া আরও বেশি।
যদিও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলছেন, এনসিপির সঙ্গে বিএনপির রাজনৈতিক যোগাযোগ আছে। তবে দল দুটি জোটবদ্ধ হবে কী হবে না—তা এখনই বলা যায় না।
এদিকে বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনী জোটের বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা এখনো সম্ভাব্যতা যাচাইপর্বে আছি। আমাদের লক্ষ্য সরকার গঠন করা। সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা উঠে আসতে চাই এবং সে ক্ষেত্রে যেকোনো দলের সঙ্গে জোট বা সমঝোতা হতেই পারে। কিন্তু আমরা নিজেদের সক্ষমতাটা আগে তৈরি করছি।’
বিএনপির সূত্র বলছে, বিগত দিনে তাদের সঙ্গে রাজপথে যে দলগুলো যুগপৎ আন্দোলন করেছে, তাদের অবদানকে অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু যে সংখ্যক আসন ছাড়ের দাবি দলগুলোর পক্ষ থেকে এসেছে, তা বাস্তবসম্মত নয়। আবার যাকে আসন ছাড়া হবে, তিনি বিজয়ী হতে পারবেন কি না, তাও বিবেচনায় নিতে হচ্ছে। আসন ছাড় দিয়ে বিজয়ী হতে পারলেন না, প্রতিদ্বন্দ্বীরা জয়ী হলো, হয়তো সেই আসনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী জয়ী হতো—এমনটি হলে সবদিক থেকেই ক্ষতির কারণ হবে।
এর মধ্যে প্রতীক ব্যবহারের নিয়ম বদলের কারণে শরিকদের নিয়ে নতুন ভাবনায় পড়তে হয়েছে বিএনপিকে। সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, এখন থেকে জোটের প্রার্থীদের নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচন করতে হবে। জোটের প্রধান দলের প্রতীক ব্যবহার করা যাবে না। এ বাস্তবতায় শরিকদের জন্য ৩০টির বেশি আসন ছাড়ের সম্ভাবনা দেখছেন না বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ভূমিকা রাখেন এমন এক নেতা বলেন, শরিক দলের প্রার্থীদের মাঠের অবস্থান দুর্বল। বিএনপির মাঠ জরিপে এ বাস্তবতা উঠে এসেছে। এখন তাদের মধ্য থেকে জয়ী হওয়ার মতো প্রার্থী খুঁজে পাওয়াই দুরূহ হয়ে পড়েছে। তবে যেহেতু প্রতিশ্রুতি রয়েছে শরিকদের জন্য, তাই ভালো একটা উপায় খোঁজার চেষ্টা চলছে। প্রতীক বদলের বিষয়টি সংশোধনের জন্য এরই মধ্যে বিএনপি নির্বাচন কমিশনে যোগাযোগ করছে বলেও জানিয়েছেন দলটির নেতারা।
শরিক দলের নেতারাও এ বাস্তবতা মেনে নিয়েছেন। এর মধ্যে অনেক দল আগে জমা দেওয়া তালিকা ছোট করার কাজ করছে বলেও জানা গেছে।
গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা সাইফুল হক বলেন, ‘আমরা যে তালিকা করেছিলাম, তার একটা শর্টলিস্ট করছি। আগামী দু-এক দিনে মধ্যে এ কাজ শেষ হবে। চার-পাঁচ দিনের মধ্যে এ নিয়ে আমরা বিএনপির সঙ্গে বসব।’
আর বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, প্রতীক ব্যবহারের নতুন নিয়ম বলবৎ থাকলে নিবন্ধিত ছোট দলগুলো সমস্যায় পড়বে। অচেনা প্রতীক নিয়ে তাদের জয়ী হতে বেগ পেতে হবে। তবে যেসব দলের নিবন্ধন নেই, তাদের জন্য সমস্যা নেই।
জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের নেতা ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, ‘বিগত সময়ে যারা যুগপৎ আন্দোলন করেছে, ‘বিএনপি আমাদের কাছে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা চেয়েছে, আমরা দিয়েছি। শিগগিরই শরিকদের বিষয়টি নিয়ে বসবে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।’
আরপিও সংশোধন ও প্রতীক নিয়ে এই নেতা বলেন, গ্রামের মানুষ ছোট দলের প্রতীক চেনে না। এত কম সময়ে নতুন কোনো প্রতীককে পরিচিত করে তোলাও কঠিন। আসন ভাগাভাগি নিয়ে বিএনপির সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেও বিষয়টি জটিলতার সৃষ্টি করেছে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের লাইন এখন অনেক লম্বা। প্রার্থী বাছাই করতে তাই নাজেহাল অবস্থা দলটির। এর ওপর যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের জন্য ছাড়তে হবে আসন। খুঁজতে হচ্ছে নতুন শরিক দলও। হিসাব মিলে গেলেও আসনের ভাগ দিতে হবে তাদের। কিন্তু ওই দল থেকে জিতে আসার মতো প্রার্থী হাতে গোনা। আবার ভোটে প্রতীক ব্যবহারের নিয়মেও এসেছে বদল। এ অবস্থায় শরিক দল ও নিজেদের আসনের হিসাব মেলানো বেশ চ্যালেঞ্জের হয়ে দাঁড়িয়েছে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের জন্য।
ঘোষণা অনুযায়ী, জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা আগামী ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি। এর আগে চলতি মাসের মধ্যেই ২০০ আসনে নিজেদের একক প্রার্থী বাছাই করে তাঁদের সবুজ সংকেত দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেছেন, ‘এ মাসের মধ্যেই দলের পক্ষ থেকে কম-বেশি ২০০ নির্বাচনী এলাকায় একক প্রার্থীকে হয়তো আমরা গ্রিন সিগন্যাল দেব। সে প্রক্রিয়ায় আছি, আমরা শেষের দিকে।’
বিএনপি ও সংশ্লিষ্ট দলগুলোর সূত্র বলছে, আসন ভাগাভাগি নিয়ে বিএনপির সঙ্গে শরিক দলগুলোর আলোচনা চলমান রয়েছে। দলগুলো পৃথকভাবে তাদের প্রস্তাবিত প্রার্থীর তালিকা দিয়ে সে অনুযায়ী আসন ছাড় চেয়েছে। জমা পড়া তালিকা অনুযায়ী বিএনপির কাছে শরিকেরা দুই শতাধিক আসন ছাড় চেয়েছে। এসব তালিকা পর্যালোচনা করে সর্বোচ্চ ৩০টির মতো ছাড়ের কথা ভাবছে বিএনপি। এরই মধ্যে শরিক দলগুলোর মধ্য থেকে অন্তত ১৫ জনকে সবুজ সংকেত দিয়েছে তারা।
এদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে বিএনপির জোটবদ্ধ হওয়ার আলোচনাও এখন প্রকাশ্যে। তাদের মধ্যে আসন ভাগাভাগির আলোচনাও চলছে বলে জানা গেছে।
বিএনপির একটি সূত্র বলছে, এনসিপির সঙ্গে বিএনপির আলোচনা চলছে। এসব আলোচনা আসন ভাগাভাগি পর্যন্ত গড়িয়েছে। জোটবদ্ধ হলে এনসিপিকে ৫ থেকে ৭টি আসন ছাড় দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে বিএনপির পক্ষ থেকে। তবে এনসিপির চাওয়া আরও বেশি।
যদিও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলছেন, এনসিপির সঙ্গে বিএনপির রাজনৈতিক যোগাযোগ আছে। তবে দল দুটি জোটবদ্ধ হবে কী হবে না—তা এখনই বলা যায় না।
এদিকে বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনী জোটের বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা এখনো সম্ভাব্যতা যাচাইপর্বে আছি। আমাদের লক্ষ্য সরকার গঠন করা। সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা উঠে আসতে চাই এবং সে ক্ষেত্রে যেকোনো দলের সঙ্গে জোট বা সমঝোতা হতেই পারে। কিন্তু আমরা নিজেদের সক্ষমতাটা আগে তৈরি করছি।’
বিএনপির সূত্র বলছে, বিগত দিনে তাদের সঙ্গে রাজপথে যে দলগুলো যুগপৎ আন্দোলন করেছে, তাদের অবদানকে অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু যে সংখ্যক আসন ছাড়ের দাবি দলগুলোর পক্ষ থেকে এসেছে, তা বাস্তবসম্মত নয়। আবার যাকে আসন ছাড়া হবে, তিনি বিজয়ী হতে পারবেন কি না, তাও বিবেচনায় নিতে হচ্ছে। আসন ছাড় দিয়ে বিজয়ী হতে পারলেন না, প্রতিদ্বন্দ্বীরা জয়ী হলো, হয়তো সেই আসনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী জয়ী হতো—এমনটি হলে সবদিক থেকেই ক্ষতির কারণ হবে।
এর মধ্যে প্রতীক ব্যবহারের নিয়ম বদলের কারণে শরিকদের নিয়ে নতুন ভাবনায় পড়তে হয়েছে বিএনপিকে। সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, এখন থেকে জোটের প্রার্থীদের নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচন করতে হবে। জোটের প্রধান দলের প্রতীক ব্যবহার করা যাবে না। এ বাস্তবতায় শরিকদের জন্য ৩০টির বেশি আসন ছাড়ের সম্ভাবনা দেখছেন না বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ভূমিকা রাখেন এমন এক নেতা বলেন, শরিক দলের প্রার্থীদের মাঠের অবস্থান দুর্বল। বিএনপির মাঠ জরিপে এ বাস্তবতা উঠে এসেছে। এখন তাদের মধ্য থেকে জয়ী হওয়ার মতো প্রার্থী খুঁজে পাওয়াই দুরূহ হয়ে পড়েছে। তবে যেহেতু প্রতিশ্রুতি রয়েছে শরিকদের জন্য, তাই ভালো একটা উপায় খোঁজার চেষ্টা চলছে। প্রতীক বদলের বিষয়টি সংশোধনের জন্য এরই মধ্যে বিএনপি নির্বাচন কমিশনে যোগাযোগ করছে বলেও জানিয়েছেন দলটির নেতারা।
শরিক দলের নেতারাও এ বাস্তবতা মেনে নিয়েছেন। এর মধ্যে অনেক দল আগে জমা দেওয়া তালিকা ছোট করার কাজ করছে বলেও জানা গেছে।
গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা সাইফুল হক বলেন, ‘আমরা যে তালিকা করেছিলাম, তার একটা শর্টলিস্ট করছি। আগামী দু-এক দিনে মধ্যে এ কাজ শেষ হবে। চার-পাঁচ দিনের মধ্যে এ নিয়ে আমরা বিএনপির সঙ্গে বসব।’
আর বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, প্রতীক ব্যবহারের নতুন নিয়ম বলবৎ থাকলে নিবন্ধিত ছোট দলগুলো সমস্যায় পড়বে। অচেনা প্রতীক নিয়ে তাদের জয়ী হতে বেগ পেতে হবে। তবে যেসব দলের নিবন্ধন নেই, তাদের জন্য সমস্যা নেই।
জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের নেতা ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, ‘বিগত সময়ে যারা যুগপৎ আন্দোলন করেছে, ‘বিএনপি আমাদের কাছে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা চেয়েছে, আমরা দিয়েছি। শিগগিরই শরিকদের বিষয়টি নিয়ে বসবে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।’
আরপিও সংশোধন ও প্রতীক নিয়ে এই নেতা বলেন, গ্রামের মানুষ ছোট দলের প্রতীক চেনে না। এত কম সময়ে নতুন কোনো প্রতীককে পরিচিত করে তোলাও কঠিন। আসন ভাগাভাগি নিয়ে বিএনপির সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেও বিষয়টি জটিলতার সৃষ্টি করেছে।

আজকের পত্রিকা: জাতীয় সনদ তৈরির কথা বলছে অন্তর্বর্তী সরকার। এতে বিএনপি কী দেখতে চায়? মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: সংস্কার প্রস্তাব যা এসেছে, তার মধ্যে যেগুলোতে আমরা একমত হব, সেগুলোর সমন্বয়ে সংস্কারের একটি সনদ তৈরি হবে। যে বিষয়গুলোয় মতৈক্য হবে না, সেগুলো জনগণের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
০৬ মে ২০২৫
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। তবে সংশোধিত আরপিওর একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা নিয়ে আপত্তি তুলেছে বিএনপি। নতুন সংশোধনীতে বলা হয়েছে, কোনো দল জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নিলেও প্রার্থীদের নিজ নিজ দলের প্রতীকেই ভোট করতে হবে।
৯ ঘণ্টা আগে
বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে প্রাথমিকে ধর্মীয় শিক্ষক পদ সৃষ্টি করা হবে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, যে জাতি ধর্মীয় ও নৈতিকতার ওপর সমুন্নত থাকে, তার পরাজয় হয় না।
১৩ ঘণ্টা আগে
সুফি সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করে উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে মাজার ও দরবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের স্বার্থেই মাজার ও দরবারের প্রতি এই সহিংসতাকে রোধ করতে হবে।
১৩ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। তবে সংশোধিত আরপিওর একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা নিয়ে আপত্তি তুলেছে বিএনপি। নতুন সংশোধনীতে বলা হয়েছে, কোনো দল জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নিলেও প্রার্থীদের নিজ নিজ দলের প্রতীকেই ভোট করতে হবে। আগে জোটের যেকোনো দলের প্রতীক বেছে নেওয়ার সুযোগ ছিল। বিএনপির দাবি, এই পরিবর্তন ‘একতরফাভাবে’ করা হয়েছে, যা পুনর্বিবেচনা করা জরুরি।
গত বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসে সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন, ২০২৫’–এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। জোটের ভোটে দলীয় প্রতীক ছাড়াও আরপিওতে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী আনা হয়। ইভিএম ব্যবহার বাতিল, ‘না ভোট’ পুনর্বহাল, প্রার্থীদের দেশি-বিদেশি আয় ও সম্পত্তির বিবরণ প্রকাশের বাধ্যবাধকতা এবং পলাতক আসামিদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা— এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। তবে জোটের ভোটে দলীয় প্রতীক বাধ্যতামূলক করা ছাড়া বাকি সংশোধনীতে বিএনপি একমত।
জোটেও দলীয় প্রতীক নিয়ে বিএনপির আপত্তি কেন
গতকাল শুক্রবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা শুনেছি, উপদেষ্টা পরিষদ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধনের খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে। আইন উপদেষ্টা এ বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেছেন। আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী আমরা জানতে পেরেছি, সংশোধিত আরপিওতে এমন কিছু বিধান আছে, যেগুলোর বিষয়ে আমরা আগে থেকেই একমত ছিলাম। কিন্তু প্রতীকের বিষয়ে যেটি পরিবর্তন আনা হয়েছে, সে বিষয়ে আমাদের কোনো সম্মতি ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘আগে আরপিওর ২০ ধারায় বলা ছিল— জোটভুক্ত দলগুলো চাইলে নিজেদের প্রতীকে বা জোটের মধ্যে সম্মত কোনো এক প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবে। তফসিল ঘোষণার পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে জানাতে হতো। এতে ছোট দলগুলো জোটে থেকে কিছু আসন জয়ের সুযোগ পেত। এটা একটি ইতিবাচক ব্যবস্থা ছিল।’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বিষয়টি নিয়ে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনার পর বিএনপির সঙ্গে একমত হয়েছিলেন আইন উপদেষ্টা। তাই বিএনপি ধরে নিয়েছিল, ধারাটিতে কোনো পরিবর্তন আনা হবে না। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, সংশোধিত আরপিওতে দলীয় প্রতীক বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে ছোট দলগুলো জোটবদ্ধ নির্বাচনে অংশ নিতে নিরুৎসাহিত হবে।
বিএনপির আপত্তির কারণ ব্যাখ্যা করে স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘এখন যেভাবে সংশোধনীর খসড়া পাস হয়েছে, কয়দিন পর অধ্যাদেশ আকারে পাস হবে। সেটা হলে অনেক ছোট দলগুলোর যারা জোটভুক্ত হয়ে নির্বাচন করতে চাইবেন— ‘ছোট দল’ বলে কাউকে অসম্মান করছিন না, রাজনীতির মাঠে আকারে ছোট–বড় অনেক দল থাকে, যাদের জনসমর্থনের ভিত্তিতে এটা বলা হয়—তো তারা জোটবদ্ধ হতে উৎসাহিত হবেন না।’
এবিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘আমাদের দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের রাজনীতির ইতিহাসে দেখা গিয়েছে, ছোটখাট দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দ পার্লামেন্টে এলে জাতীয় সংসদটা সমৃদ্ধ হয়। এভাবে যুক্ত ইলেকশন করার মধ্য দিয়ে তাদের নির্বাচিত হওয়ার একটা সুযোগ হচ্ছে। সেটা থেকে তাঁদেরকে বঞ্চিত করা উচিত হবে বলে আমরা মনে করি না। কারণ আমরা একটা বহুদলীয় গণতন্ত্র, একটা সমৃদ্ধ জাতীয় সংসদ দেখতে চাই, যেখানে সকল মতের, আদর্শের ব্যক্তিগণ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ জাতির কল্যাণে তাঁদের অবদান রাখবেন এবং সেটা হলেই জাতির গণতান্ত্রিক সমৃদ্ধি আসে জাতি উপকৃত হয়।’
বিএনপির সঙ্গে ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘সেটায় (বাধ্যতামূলক দলীয় প্রতীক) তাদেরও সম্মতি নেই, আমাদেরও সম্মতি নেই। এটা একতরফাভাবে নির্বাচন কমিশন থেকে এভাবে কেন উত্থাপন করা হলো জানি না। কারণ আচরণবিধি এবং আরপিওর বিষয়ে আমাদের কাছে মতামত চেয়েছিল, আমরা নির্বাচন কমিশনে জানিয়েছিলাম। তার মধ্যে যে সমস্ত সংশোধনী এসেছে, সেগুলোর অধিকাংশের সঙ্গেই আমরা একমত। কিন্তু এই বিষয়টা, প্রতীকের বিষয়টা—জোটভুক্ত হলেও দলগুলোর নিজস্ব প্রতীকের বাইরে জোটের অন্য প্রতীক নিতে পারবে না—এ বিষয়ে আমরা কখনো সম্মত হইনি।’
এটি একতরফাভাবে নির্বাচন কমিশন থেকে উত্থাপন করা হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘আচরণবিধি ও আরপিও নিয়ে আমাদের মতামত নেওয়া হয়েছিল, এবং অধিকাংশ সংশোধনের সঙ্গে আমরা একমত। কিন্তু এই প্রতীকের বিষয়টি সুষ্ঠু রাজনীতির স্বার্থে ও নির্বাচনের অন্তর্ভুক্তিমূলক চরিত্র রক্ষার স্বার্থে পুনর্বিবেচনা করা উচিত। আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন কমিশন ও আইন উপদেষ্টার কাছে চিঠি দেব। বহুদলীয় গণতন্ত্রে ছোট দলের অংশগ্রহণ সংসদকে সমৃদ্ধ করে। এভাবে তাদের সুযোগ সংকুচিত করা গণতন্ত্রের জন্য ভালো নয়।’
ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি-এনসিপির জোট নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়েও সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন বিএনপিন স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে জোট গঠনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা চলছে। শেষ পর্যন্ত জোট কোন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়ায়, সেটা দেখতে আরও অপেক্ষা করতে হবে।’
এনসিপির সঙ্গে বিএনপির যোগাযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দলটির সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক যোগাযোগ আছে। তবে জোটবদ্ধ হব কি হব না—অথবা তারা হবে কি হবে না—রাজনীতির মাঠে এসব আগে থেকে বলা যায় না।’
তবে এনসিপির দিক থেকে এরকম কোনো ইঙ্গিত মিলেনি। এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আপাতত বিএনপির সঙ্গে জোট বা আসন সমঝোতা কোনো বিষয়েই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।’
বিএনপির অবস্থানে এনসিপির উদ্বেগ
এদিকে সংশোধিত আরপিও নিয়ে বিএনপির আপত্তিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মধ্যে উদ্বেগ দেখা গেছে। সংশোধিত আরপিও থেকে সরকার সরে এলে তা ‘লন্ডনের বৈঠকের ধারাবাহিকতায় বিএনপির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া’ হিসেবে দেখা হবে বলে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেছেন। আজ শনিবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সামনে তিনি এ প্রতিক্রিয়া জানান।
বিএনপির আপত্তি প্রসঙ্গে আখতার বলেন, ‘আমরা আরপিও সংশোধনীকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখি। এতে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও অংশগ্রহণ বাড়বে। কিন্তু বিএনপি এখন বলছে, তারা সংশোধনী বাতিলের আবেদন করবে আইন মন্ত্রণালয়ে। অথচ আইন উপদেষ্টা এই প্রক্রিয়ার অংশ নন। এটি রাজনৈতিকভাবে বিভ্রান্তিকর সংকেত দিচ্ছে। আইন উপদেষ্টার কাছে আবেদন করে আরপিও সংশোধনী ঠেকানোর মানসিকতা থেকে মনে হচ্ছে, কিছু দল হয়তো বিশেষ ব্যক্তিগত সম্পর্ক ব্যবহার করে নিজেদের সুবিধা নিতে চাইছে। এটা গণতান্ত্রিকভাবে অযৌক্তিক ও অনুপযুক্ত।’
সরকারকে সতর্ক করে এই এনসিপি নেতা বলেন, ‘যদি কোনো দলের চাপে সরকার এই সংশোধনী থেকে সরে আসে, তাহলে সেটা প্রমাণ করবে, সরকার বিএনপির সঙ্গে লন্ডন বৈঠকের সমঝোতার ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা হস্তান্তরের দিকে এগোচ্ছে। এটা জাতির জন্য কোনো সুস্থ প্রক্রিয়া নয়।’

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। তবে সংশোধিত আরপিওর একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা নিয়ে আপত্তি তুলেছে বিএনপি। নতুন সংশোধনীতে বলা হয়েছে, কোনো দল জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নিলেও প্রার্থীদের নিজ নিজ দলের প্রতীকেই ভোট করতে হবে। আগে জোটের যেকোনো দলের প্রতীক বেছে নেওয়ার সুযোগ ছিল। বিএনপির দাবি, এই পরিবর্তন ‘একতরফাভাবে’ করা হয়েছে, যা পুনর্বিবেচনা করা জরুরি।
গত বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসে সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন, ২০২৫’–এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। জোটের ভোটে দলীয় প্রতীক ছাড়াও আরপিওতে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী আনা হয়। ইভিএম ব্যবহার বাতিল, ‘না ভোট’ পুনর্বহাল, প্রার্থীদের দেশি-বিদেশি আয় ও সম্পত্তির বিবরণ প্রকাশের বাধ্যবাধকতা এবং পলাতক আসামিদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা— এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। তবে জোটের ভোটে দলীয় প্রতীক বাধ্যতামূলক করা ছাড়া বাকি সংশোধনীতে বিএনপি একমত।
জোটেও দলীয় প্রতীক নিয়ে বিএনপির আপত্তি কেন
গতকাল শুক্রবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা শুনেছি, উপদেষ্টা পরিষদ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধনের খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে। আইন উপদেষ্টা এ বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেছেন। আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী আমরা জানতে পেরেছি, সংশোধিত আরপিওতে এমন কিছু বিধান আছে, যেগুলোর বিষয়ে আমরা আগে থেকেই একমত ছিলাম। কিন্তু প্রতীকের বিষয়ে যেটি পরিবর্তন আনা হয়েছে, সে বিষয়ে আমাদের কোনো সম্মতি ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘আগে আরপিওর ২০ ধারায় বলা ছিল— জোটভুক্ত দলগুলো চাইলে নিজেদের প্রতীকে বা জোটের মধ্যে সম্মত কোনো এক প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবে। তফসিল ঘোষণার পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে জানাতে হতো। এতে ছোট দলগুলো জোটে থেকে কিছু আসন জয়ের সুযোগ পেত। এটা একটি ইতিবাচক ব্যবস্থা ছিল।’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বিষয়টি নিয়ে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনার পর বিএনপির সঙ্গে একমত হয়েছিলেন আইন উপদেষ্টা। তাই বিএনপি ধরে নিয়েছিল, ধারাটিতে কোনো পরিবর্তন আনা হবে না। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, সংশোধিত আরপিওতে দলীয় প্রতীক বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে ছোট দলগুলো জোটবদ্ধ নির্বাচনে অংশ নিতে নিরুৎসাহিত হবে।
বিএনপির আপত্তির কারণ ব্যাখ্যা করে স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘এখন যেভাবে সংশোধনীর খসড়া পাস হয়েছে, কয়দিন পর অধ্যাদেশ আকারে পাস হবে। সেটা হলে অনেক ছোট দলগুলোর যারা জোটভুক্ত হয়ে নির্বাচন করতে চাইবেন— ‘ছোট দল’ বলে কাউকে অসম্মান করছিন না, রাজনীতির মাঠে আকারে ছোট–বড় অনেক দল থাকে, যাদের জনসমর্থনের ভিত্তিতে এটা বলা হয়—তো তারা জোটবদ্ধ হতে উৎসাহিত হবেন না।’
এবিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘আমাদের দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের রাজনীতির ইতিহাসে দেখা গিয়েছে, ছোটখাট দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দ পার্লামেন্টে এলে জাতীয় সংসদটা সমৃদ্ধ হয়। এভাবে যুক্ত ইলেকশন করার মধ্য দিয়ে তাদের নির্বাচিত হওয়ার একটা সুযোগ হচ্ছে। সেটা থেকে তাঁদেরকে বঞ্চিত করা উচিত হবে বলে আমরা মনে করি না। কারণ আমরা একটা বহুদলীয় গণতন্ত্র, একটা সমৃদ্ধ জাতীয় সংসদ দেখতে চাই, যেখানে সকল মতের, আদর্শের ব্যক্তিগণ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ জাতির কল্যাণে তাঁদের অবদান রাখবেন এবং সেটা হলেই জাতির গণতান্ত্রিক সমৃদ্ধি আসে জাতি উপকৃত হয়।’
বিএনপির সঙ্গে ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘সেটায় (বাধ্যতামূলক দলীয় প্রতীক) তাদেরও সম্মতি নেই, আমাদেরও সম্মতি নেই। এটা একতরফাভাবে নির্বাচন কমিশন থেকে এভাবে কেন উত্থাপন করা হলো জানি না। কারণ আচরণবিধি এবং আরপিওর বিষয়ে আমাদের কাছে মতামত চেয়েছিল, আমরা নির্বাচন কমিশনে জানিয়েছিলাম। তার মধ্যে যে সমস্ত সংশোধনী এসেছে, সেগুলোর অধিকাংশের সঙ্গেই আমরা একমত। কিন্তু এই বিষয়টা, প্রতীকের বিষয়টা—জোটভুক্ত হলেও দলগুলোর নিজস্ব প্রতীকের বাইরে জোটের অন্য প্রতীক নিতে পারবে না—এ বিষয়ে আমরা কখনো সম্মত হইনি।’
এটি একতরফাভাবে নির্বাচন কমিশন থেকে উত্থাপন করা হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘আচরণবিধি ও আরপিও নিয়ে আমাদের মতামত নেওয়া হয়েছিল, এবং অধিকাংশ সংশোধনের সঙ্গে আমরা একমত। কিন্তু এই প্রতীকের বিষয়টি সুষ্ঠু রাজনীতির স্বার্থে ও নির্বাচনের অন্তর্ভুক্তিমূলক চরিত্র রক্ষার স্বার্থে পুনর্বিবেচনা করা উচিত। আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন কমিশন ও আইন উপদেষ্টার কাছে চিঠি দেব। বহুদলীয় গণতন্ত্রে ছোট দলের অংশগ্রহণ সংসদকে সমৃদ্ধ করে। এভাবে তাদের সুযোগ সংকুচিত করা গণতন্ত্রের জন্য ভালো নয়।’
ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি-এনসিপির জোট নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়েও সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন বিএনপিন স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে জোট গঠনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা চলছে। শেষ পর্যন্ত জোট কোন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়ায়, সেটা দেখতে আরও অপেক্ষা করতে হবে।’
এনসিপির সঙ্গে বিএনপির যোগাযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দলটির সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক যোগাযোগ আছে। তবে জোটবদ্ধ হব কি হব না—অথবা তারা হবে কি হবে না—রাজনীতির মাঠে এসব আগে থেকে বলা যায় না।’
তবে এনসিপির দিক থেকে এরকম কোনো ইঙ্গিত মিলেনি। এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আপাতত বিএনপির সঙ্গে জোট বা আসন সমঝোতা কোনো বিষয়েই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।’
বিএনপির অবস্থানে এনসিপির উদ্বেগ
এদিকে সংশোধিত আরপিও নিয়ে বিএনপির আপত্তিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মধ্যে উদ্বেগ দেখা গেছে। সংশোধিত আরপিও থেকে সরকার সরে এলে তা ‘লন্ডনের বৈঠকের ধারাবাহিকতায় বিএনপির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া’ হিসেবে দেখা হবে বলে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেছেন। আজ শনিবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সামনে তিনি এ প্রতিক্রিয়া জানান।
বিএনপির আপত্তি প্রসঙ্গে আখতার বলেন, ‘আমরা আরপিও সংশোধনীকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখি। এতে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও অংশগ্রহণ বাড়বে। কিন্তু বিএনপি এখন বলছে, তারা সংশোধনী বাতিলের আবেদন করবে আইন মন্ত্রণালয়ে। অথচ আইন উপদেষ্টা এই প্রক্রিয়ার অংশ নন। এটি রাজনৈতিকভাবে বিভ্রান্তিকর সংকেত দিচ্ছে। আইন উপদেষ্টার কাছে আবেদন করে আরপিও সংশোধনী ঠেকানোর মানসিকতা থেকে মনে হচ্ছে, কিছু দল হয়তো বিশেষ ব্যক্তিগত সম্পর্ক ব্যবহার করে নিজেদের সুবিধা নিতে চাইছে। এটা গণতান্ত্রিকভাবে অযৌক্তিক ও অনুপযুক্ত।’
সরকারকে সতর্ক করে এই এনসিপি নেতা বলেন, ‘যদি কোনো দলের চাপে সরকার এই সংশোধনী থেকে সরে আসে, তাহলে সেটা প্রমাণ করবে, সরকার বিএনপির সঙ্গে লন্ডন বৈঠকের সমঝোতার ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা হস্তান্তরের দিকে এগোচ্ছে। এটা জাতির জন্য কোনো সুস্থ প্রক্রিয়া নয়।’

আজকের পত্রিকা: জাতীয় সনদ তৈরির কথা বলছে অন্তর্বর্তী সরকার। এতে বিএনপি কী দেখতে চায়? মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: সংস্কার প্রস্তাব যা এসেছে, তার মধ্যে যেগুলোতে আমরা একমত হব, সেগুলোর সমন্বয়ে সংস্কারের একটি সনদ তৈরি হবে। যে বিষয়গুলোয় মতৈক্য হবে না, সেগুলো জনগণের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
০৬ মে ২০২৫
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের লাইন এখন অনেক লম্বা। প্রার্থী বাছাই করতে তাই নাজেহাল অবস্থা দলটির। এর ওপর যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের জন্য ছাড়তে হবে আসন। খুঁজতে হচ্ছে নতুন শরিক দলও। হিসাব মিলে গেলেও আসনের ভাগ দিতে হবে তাদের।
৫ ঘণ্টা আগে
বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে প্রাথমিকে ধর্মীয় শিক্ষক পদ সৃষ্টি করা হবে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, যে জাতি ধর্মীয় ও নৈতিকতার ওপর সমুন্নত থাকে, তার পরাজয় হয় না।
১৩ ঘণ্টা আগে
সুফি সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করে উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে মাজার ও দরবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের স্বার্থেই মাজার ও দরবারের প্রতি এই সহিংসতাকে রোধ করতে হবে।
১৩ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে প্রাথমিকে ধর্মীয় শিক্ষক পদ সৃষ্টি করা হবে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, যে জাতি ধর্মীয় ও নৈতিকতার ওপর সমুন্নত থাকে, তার পরাজয় হয় না।
আজ শনিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় মূল্যবোধ সংরক্ষণ পরিষদ আয়োজিত সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ ও মূল্যবোধ পরিপন্থী সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে আয়োজন করা হয় সেমিনারটির।
এতে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি আব্দুল হালিম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির সৈয়দ মো. রেজাউল করীম, এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মো. মামুনুল হক প্রমুখ।
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘বিগত দিনে কিছু সংগঠনের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালানো হয়েছে। নীতি-নৈতিকতাবিবর্জিত কোনো জাতি শক্তিশালী জাতি হিসেবে পরিচয় লাভ করতে পারে না। যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকি, তবে বাংলাদেশে আবার ফ্যাসিবাদের উত্থান ও উৎপাত বন্ধ হবে।’
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, পশ্চিমা আধিপত্যবাদের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা ও মূল্যবোধবিবর্জিত শিক্ষার প্রসার ঘটানো হচ্ছে, যা দেশের সংস্কৃতি, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সামাজিক কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। প্রাথমিক শিক্ষাকে নৈতিকতাবিরোধী অবস্থান থেকে ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে।
এনসিপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষাব্যবস্থায় প্রাসঙ্গিকতা ও মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনা হবে জানিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, শিক্ষার্থীদের জিপিএ-৫ প্রণোদনা দিয়ে মূল্যবোধ কেড়ে নিয়েছিল শেখ হাসিনা। এভাবে সবাইকে কোনো না কোনো প্রণোদনা দিয়ে ফ্যাসিজম বহাল রেখেছিল। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ভিত্তিতে দেশ চলবে এবং শিক্ষাব্যবস্থায় সেটি বিরাজমান থাকবে।
সৈয়দ মো. রেজাউল করীম বলেন, ‘দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের প্রজ্ঞাপন এখনই দিতে হবে। অন্যথায় আমরা সব দল মিলে সম্মিলিত কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব। এই ইস্যু আমাদের প্রজন্মের অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িত, তাই আমরা যতটুকু কঠোর হওয়ার দরকার, ততটুকুই হব।’
মো. মামুনুল হক বলেন, ‘ভবিষ্যতে যারাই বাংলাদেশের ক্ষমতায় যাবে, তাদের ইসলামপন্থীদের সঙ্গে নিয়েই দেশ পরিচালনা করতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষায় ইসলামি মূল্যবোধ সমুন্নত রাখতে সামনে বৃহত্তর কর্মসূচিও আসতে পারে।’

বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে প্রাথমিকে ধর্মীয় শিক্ষক পদ সৃষ্টি করা হবে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, যে জাতি ধর্মীয় ও নৈতিকতার ওপর সমুন্নত থাকে, তার পরাজয় হয় না।
আজ শনিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় মূল্যবোধ সংরক্ষণ পরিষদ আয়োজিত সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ ও মূল্যবোধ পরিপন্থী সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে আয়োজন করা হয় সেমিনারটির।
এতে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি আব্দুল হালিম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির সৈয়দ মো. রেজাউল করীম, এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মো. মামুনুল হক প্রমুখ।
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘বিগত দিনে কিছু সংগঠনের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালানো হয়েছে। নীতি-নৈতিকতাবিবর্জিত কোনো জাতি শক্তিশালী জাতি হিসেবে পরিচয় লাভ করতে পারে না। যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকি, তবে বাংলাদেশে আবার ফ্যাসিবাদের উত্থান ও উৎপাত বন্ধ হবে।’
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, পশ্চিমা আধিপত্যবাদের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা ও মূল্যবোধবিবর্জিত শিক্ষার প্রসার ঘটানো হচ্ছে, যা দেশের সংস্কৃতি, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সামাজিক কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। প্রাথমিক শিক্ষাকে নৈতিকতাবিরোধী অবস্থান থেকে ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে।
এনসিপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষাব্যবস্থায় প্রাসঙ্গিকতা ও মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনা হবে জানিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, শিক্ষার্থীদের জিপিএ-৫ প্রণোদনা দিয়ে মূল্যবোধ কেড়ে নিয়েছিল শেখ হাসিনা। এভাবে সবাইকে কোনো না কোনো প্রণোদনা দিয়ে ফ্যাসিজম বহাল রেখেছিল। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ভিত্তিতে দেশ চলবে এবং শিক্ষাব্যবস্থায় সেটি বিরাজমান থাকবে।
সৈয়দ মো. রেজাউল করীম বলেন, ‘দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের প্রজ্ঞাপন এখনই দিতে হবে। অন্যথায় আমরা সব দল মিলে সম্মিলিত কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব। এই ইস্যু আমাদের প্রজন্মের অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িত, তাই আমরা যতটুকু কঠোর হওয়ার দরকার, ততটুকুই হব।’
মো. মামুনুল হক বলেন, ‘ভবিষ্যতে যারাই বাংলাদেশের ক্ষমতায় যাবে, তাদের ইসলামপন্থীদের সঙ্গে নিয়েই দেশ পরিচালনা করতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষায় ইসলামি মূল্যবোধ সমুন্নত রাখতে সামনে বৃহত্তর কর্মসূচিও আসতে পারে।’

আজকের পত্রিকা: জাতীয় সনদ তৈরির কথা বলছে অন্তর্বর্তী সরকার। এতে বিএনপি কী দেখতে চায়? মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: সংস্কার প্রস্তাব যা এসেছে, তার মধ্যে যেগুলোতে আমরা একমত হব, সেগুলোর সমন্বয়ে সংস্কারের একটি সনদ তৈরি হবে। যে বিষয়গুলোয় মতৈক্য হবে না, সেগুলো জনগণের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
০৬ মে ২০২৫
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের লাইন এখন অনেক লম্বা। প্রার্থী বাছাই করতে তাই নাজেহাল অবস্থা দলটির। এর ওপর যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের জন্য ছাড়তে হবে আসন। খুঁজতে হচ্ছে নতুন শরিক দলও। হিসাব মিলে গেলেও আসনের ভাগ দিতে হবে তাদের।
৫ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। তবে সংশোধিত আরপিওর একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা নিয়ে আপত্তি তুলেছে বিএনপি। নতুন সংশোধনীতে বলা হয়েছে, কোনো দল জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নিলেও প্রার্থীদের নিজ নিজ দলের প্রতীকেই ভোট করতে হবে।
৯ ঘণ্টা আগে
সুফি সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করে উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে মাজার ও দরবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের স্বার্থেই মাজার ও দরবারের প্রতি এই সহিংসতাকে রোধ করতে হবে।
১৩ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, ‘সবাই সংঘাতের জন্য মুখিয়ে আছে এবং আপনারা অবশ্যই এটা অল্প কয়েক মাসের মধ্যে দেখতে পাবেন। আমি আশঙ্কা করছি, যদি এটার সঙ্গে ধর্মীয় যে দৃষ্টিকোণ, এটা যদি যুক্ত হয়, তাহলে বাংলাদেশের পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।’
আজ শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বিএমএ ভবনে ‘মাজার সংস্কৃতি: সহিংসতা, সংকট ও ভবিষ্যৎ ভাবনা’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই আশঙ্কার কথা জানান। সংলাপের আয়োজন করে সুফি সম্প্রদায় নিয়ে গবেষণা করা প্ল্যাটফর্ম ‘মাকাম’।
উপদেষ্টা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দরবারগুলোর সঙ্গে সংযোগ তৈরি করার চেষ্টা করছে বলে শুনেছি। দরবারগুলোকে এটা বোঝানোর জন্য যে অধ্যাপক ইউনূসের সরকার এসে মাজার ভেঙে দিচ্ছে, মসজিদ থেকে বের করে দিচ্ছে। এই কোশ্চেনটা (প্রশ্ন) অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ইস্যু নয়। এটা ৫০ বছর ধরে চলছে। যখন সরকার পরিবর্তন হয়, মসজিদ কমিটি বদল হয়ে যায়। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্নিং কমিটি বদল হয়ে যায়।’
মাজার-দরবারে হামলা বন্ধে সামাজিকভাবে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মাহফুজ আলম বলেন, ‘দেশে কোনো কোনো দূতাবাস চায়, মাজারগুলো ধ্বংস হোক। একধরনের রাজনৈতিক আদর্শিক জায়গা এখানে আছে। গত এক বছর যাবৎ মাজার-দরবারের ওপর যে হামলা হয়েছে, তার যদি পাল্টা আঘাত হয়, তাহলে তা রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতাকে নস্যাৎ করবে। ফলে এই সহিংসতাকে যেকোনো মূল্যেই হোক বন্ধ করতে হবে। সহিংসতা বন্ধ করার জন্য সামাজিকভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। সামাজিক সংলাপের মাধ্যমেই এই সংকট দূরীভূত করা সম্ভব।’
এ সময় সুফি সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে মাজার ও দরবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের স্বার্থেই মাজার ও দরবারের প্রতি এই সহিংসতাকে রোধ করতে হবে। আমার পরামর্শ থাকবে, সুফি সমাজের পক্ষ থেকে এই আওয়াজ তোলা উচিত—আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সকল দলের ইশতেহারে যেন সুফি সমাজের সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত হয়।’
সংলাপে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘মাজারে সহিংসতার বিষয়ে কথা বলা একটা ট্যাবুতে পরিণত হয়েছে। আজকের এই অনুষ্ঠানে আসতেও আমি উদ্বিগ্ন ছিলাম। কিন্তু এই ট্যাবু ভাঙতে হবে। আমাদের দেশে মাজার-দরবারে দায়িত্বশীল যাঁরা আছেন, তাঁদের একটা ঘাটতি হলো, তাঁরা রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণে প্রভাব রাখতে পারছেন না। যে কারণে তাঁদের কণ্ঠস্বর রাষ্ট্রকে বাধ্য করতে পারছে না।’
সুফি সমাজের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সুফি সমাজের এখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তৈরি করা প্রয়োজন, যার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণে আপনারা অবদান রাখতে পারবেন। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে মাজার-দরবারে যে সহিংসতা হলো, এ ঘটনাগুলোর তদন্ত ও অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করা দরকার। জাতীয় নাগরিক পার্টি এই কমিশন গঠনের জন্য পর্যাপ্ত সহায়তা করবে। সর্বশেষ কথা হলো, এ দেশের নাগরিক কওমি হোক, আলিয়া হোক, সুন্নি হোক—যে যেই মতাদর্শ ধারণ করুক না কেন—কেউ কারও গায়ে আঘাত করবে না। এই জায়গায় আমাদের একটি বৃহত্তর ঐক্য প্রয়োজন।’
সংলাপে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. আয়াতুল ইসলাম। আরও উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মানজুর আল মতিন, দ্য ডিসেন্টের সম্পাদক ও ফ্যাক্টচেকার কদরুদ্দীন শিশির, মাইজভান্ডার দরবার শরিফের রহমানিয়া মঈনিয়া মঞ্জিলের প্রতিনিধি মোহাম্মদ আসলাম হোসেন, অলিতলা দরবার শরিফের পীর মাওলানা গোলাম মহিউদ্দিন লতিফী প্রমুখ।

তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, ‘সবাই সংঘাতের জন্য মুখিয়ে আছে এবং আপনারা অবশ্যই এটা অল্প কয়েক মাসের মধ্যে দেখতে পাবেন। আমি আশঙ্কা করছি, যদি এটার সঙ্গে ধর্মীয় যে দৃষ্টিকোণ, এটা যদি যুক্ত হয়, তাহলে বাংলাদেশের পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।’
আজ শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বিএমএ ভবনে ‘মাজার সংস্কৃতি: সহিংসতা, সংকট ও ভবিষ্যৎ ভাবনা’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই আশঙ্কার কথা জানান। সংলাপের আয়োজন করে সুফি সম্প্রদায় নিয়ে গবেষণা করা প্ল্যাটফর্ম ‘মাকাম’।
উপদেষ্টা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দরবারগুলোর সঙ্গে সংযোগ তৈরি করার চেষ্টা করছে বলে শুনেছি। দরবারগুলোকে এটা বোঝানোর জন্য যে অধ্যাপক ইউনূসের সরকার এসে মাজার ভেঙে দিচ্ছে, মসজিদ থেকে বের করে দিচ্ছে। এই কোশ্চেনটা (প্রশ্ন) অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ইস্যু নয়। এটা ৫০ বছর ধরে চলছে। যখন সরকার পরিবর্তন হয়, মসজিদ কমিটি বদল হয়ে যায়। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্নিং কমিটি বদল হয়ে যায়।’
মাজার-দরবারে হামলা বন্ধে সামাজিকভাবে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মাহফুজ আলম বলেন, ‘দেশে কোনো কোনো দূতাবাস চায়, মাজারগুলো ধ্বংস হোক। একধরনের রাজনৈতিক আদর্শিক জায়গা এখানে আছে। গত এক বছর যাবৎ মাজার-দরবারের ওপর যে হামলা হয়েছে, তার যদি পাল্টা আঘাত হয়, তাহলে তা রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতাকে নস্যাৎ করবে। ফলে এই সহিংসতাকে যেকোনো মূল্যেই হোক বন্ধ করতে হবে। সহিংসতা বন্ধ করার জন্য সামাজিকভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। সামাজিক সংলাপের মাধ্যমেই এই সংকট দূরীভূত করা সম্ভব।’
এ সময় সুফি সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে মাজার ও দরবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের স্বার্থেই মাজার ও দরবারের প্রতি এই সহিংসতাকে রোধ করতে হবে। আমার পরামর্শ থাকবে, সুফি সমাজের পক্ষ থেকে এই আওয়াজ তোলা উচিত—আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সকল দলের ইশতেহারে যেন সুফি সমাজের সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত হয়।’
সংলাপে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘মাজারে সহিংসতার বিষয়ে কথা বলা একটা ট্যাবুতে পরিণত হয়েছে। আজকের এই অনুষ্ঠানে আসতেও আমি উদ্বিগ্ন ছিলাম। কিন্তু এই ট্যাবু ভাঙতে হবে। আমাদের দেশে মাজার-দরবারে দায়িত্বশীল যাঁরা আছেন, তাঁদের একটা ঘাটতি হলো, তাঁরা রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণে প্রভাব রাখতে পারছেন না। যে কারণে তাঁদের কণ্ঠস্বর রাষ্ট্রকে বাধ্য করতে পারছে না।’
সুফি সমাজের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সুফি সমাজের এখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তৈরি করা প্রয়োজন, যার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণে আপনারা অবদান রাখতে পারবেন। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে মাজার-দরবারে যে সহিংসতা হলো, এ ঘটনাগুলোর তদন্ত ও অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করা দরকার। জাতীয় নাগরিক পার্টি এই কমিশন গঠনের জন্য পর্যাপ্ত সহায়তা করবে। সর্বশেষ কথা হলো, এ দেশের নাগরিক কওমি হোক, আলিয়া হোক, সুন্নি হোক—যে যেই মতাদর্শ ধারণ করুক না কেন—কেউ কারও গায়ে আঘাত করবে না। এই জায়গায় আমাদের একটি বৃহত্তর ঐক্য প্রয়োজন।’
সংলাপে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. আয়াতুল ইসলাম। আরও উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মানজুর আল মতিন, দ্য ডিসেন্টের সম্পাদক ও ফ্যাক্টচেকার কদরুদ্দীন শিশির, মাইজভান্ডার দরবার শরিফের রহমানিয়া মঈনিয়া মঞ্জিলের প্রতিনিধি মোহাম্মদ আসলাম হোসেন, অলিতলা দরবার শরিফের পীর মাওলানা গোলাম মহিউদ্দিন লতিফী প্রমুখ।

আজকের পত্রিকা: জাতীয় সনদ তৈরির কথা বলছে অন্তর্বর্তী সরকার। এতে বিএনপি কী দেখতে চায়? মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: সংস্কার প্রস্তাব যা এসেছে, তার মধ্যে যেগুলোতে আমরা একমত হব, সেগুলোর সমন্বয়ে সংস্কারের একটি সনদ তৈরি হবে। যে বিষয়গুলোয় মতৈক্য হবে না, সেগুলো জনগণের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
০৬ মে ২০২৫
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের লাইন এখন অনেক লম্বা। প্রার্থী বাছাই করতে তাই নাজেহাল অবস্থা দলটির। এর ওপর যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের জন্য ছাড়তে হবে আসন। খুঁজতে হচ্ছে নতুন শরিক দলও। হিসাব মিলে গেলেও আসনের ভাগ দিতে হবে তাদের।
৫ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। তবে সংশোধিত আরপিওর একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা নিয়ে আপত্তি তুলেছে বিএনপি। নতুন সংশোধনীতে বলা হয়েছে, কোনো দল জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নিলেও প্রার্থীদের নিজ নিজ দলের প্রতীকেই ভোট করতে হবে।
৯ ঘণ্টা আগে
বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে প্রাথমিকে ধর্মীয় শিক্ষক পদ সৃষ্টি করা হবে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, যে জাতি ধর্মীয় ও নৈতিকতার ওপর সমুন্নত থাকে, তার পরাজয় হয় না।
১৩ ঘণ্টা আগে