Ajker Patrika

নতুন সংবিধান ও রাজনৈতিক কাঠামোর বদল চায় এনসিপি

সাখাওয়াত ফাহাদ, ঢাকা 
নতুন সংবিধান ও রাজনৈতিক কাঠামোর বদল চায় এনসিপি

আত্মপ্রকাশের পর সংবিধান পুনর্লিখনের দাবি তুলেছে জুলাই অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির নেতারা বলছেন, দেশে বর্তমানে যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিরাজ করছে, তার আমূল পরিবর্তন করতে হবে। এ জন্য নতুন সংবিধান বা পুনর্লিখন প্রয়োজন। একমাত্র গণপরিষদ নির্বাচনই সংবিধান পুনর্লিখনের বৈধতা দেয়। গণপরিষদ নির্বাচন ছাড়া সংবিধান পুনর্লিখন হলে তা টেকসই হবে না।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশের পর এনসিপির প্রথম কর্মসূচি ছিল গত মঙ্গলবার জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন। এদিন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘গণপরিষদ নির্বাচন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন একসঙ্গে হতে পারে। এর মাধ্যমেই নতুন কাঠামো ও নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে। গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান প্রকৃত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণে সহায়তা করবে।’

পুরোনো সংবিধান এবং পুরোনো শাসনকাঠামো রেখে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব নয় উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘একটি নতুন প্রজাতন্ত্র আমাদের করতে হবে এবং তার জন্য একটি নতুন সংবিধান ও গণপরিষদ প্রয়োজন।’

জাতীয় নাগরিক পার্টির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি রাজনৈতিক কাঠামো পরিবর্তনের কথা বলছে। দলের নেতারা মনে করেন, বর্তমান রাজনৈতিক কাঠামো ‘ভালো’ মানুষকে ‘খারাপ’ এবং ‘ছোট’ ফ্যাসিস্টকে ‘বড়’ ফ্যাসিস্টে পরিণত করে। তাই পুরো রাজনৈতিক কাঠামোরই পরিবর্তন দরকার। এই পরিবর্তন ছাড়া গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণ সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন, ‘সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সংবিধান পুনর্লিখনের সুযোগ থাকবে না। একমাত্র গণপরিষদ নির্বাচন সেই বৈধতা দেয়। তাই গণপরিষদ আমাদের প্রথম টার্গেট। আমরা বলেছি, প্রথমে বিচার, তারপর সংস্কার, তারপর নির্বাচন।

এটা চলমান প্রক্রিয়া। তবে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিচার না করা হলে নির্বাচনে এটা বড় সংকট তৈরি করবে।’

নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংস্কার করে কার্যকর ও শক্তিশালী করা প্রয়োজন জানিয়ে সামান্তা বলেন, ‘আমরা কাঠামো পরিবর্তনের কথাই বলছি। এই কাঠামোতে কোনো মানুষই ভালো থাকতে পারে না। এই কাঠামো পরিবর্তন না করলে শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শুরুই হতে পারবে না।’

তবে নতুন দলের এমন অবস্থানকে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরির যে প্রচেষ্টা, তাতে বড় বাধা হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, আওয়ামী লীগের বিচারিক প্রক্রিয়া এবং সংস্কার—দুটিই দীর্ঘমেয়াদি বিষয়। ঐকমত্যের ভিত্তিতেই এগুলো করতে হবে। নতুন দল এ বিষয়ে ভিন্ন অবস্থান নিলে রাজনৈতিকভাবে তারা ‘একঘরে’ হয়ে যেতে পারে বলে জানান তাঁরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘তারা যে মত পোষণ করছে, তা তো একতরফাভাবে তারা অন্যদের ওপর চাপিয়ে দিতে পারবে না। চাপিয়ে দিতে গেলেই সহিংসতা তৈরি হবে। উনাদের উদ্দেশ্য নিয়েও তখন সন্দেহ তৈরি হবে।’ তিনি বলেন, দলটির এখনো তেমন জনভিত্তিই তৈরি হয়নি। এখন জাতীয় পর্যায়েও যদি নিজেদের অবস্থানকে তারা একটা গোলমেলে পরিস্থিতে ফেলে দেয়, তাহলে তাদের প্রচেষ্টা শুরুতেই ব্যর্থ হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত