Ajker Patrika

মাঠে বিএনপির তরুণেরা

  • বিভাগীয় পর্যায়ে সেমিনার ও সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল।
  • লক্ষ্য নির্বাচন ও সংস্কার প্রশ্নে জনমত গঠনের জন্য নাগরিক সমাজ ও তরুণদের কাছে যাওয়া।
  • কোনো ‘মহামানব’ তৈরির জন্য নয়, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন দিয়েছে মানুষ: আমীর খসরু
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
মাঠে বিএনপির তরুণেরা

রাষ্ট্র সংস্কারে সংবিধান সংস্কার কমিশনের করা বেশ কিছু মৌলিক প্রস্তাবের সঙ্গে একমত নয় বিএনপি। অন্তর্বর্তী সরকার প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে আগামী বছরের জুন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন করার কথা বললেও বিএনপি অনড় আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই ভোটের দাবিতে। কাঙ্ক্ষিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার দাবি আদায়ে সরকারকে চাপে রাখার কৌশল নিয়েছে দলটি। এ জন্য মাঠে নামানো হচ্ছে নেতা-কর্মীদের। এর অংশ হিসেবে সারা দেশে বিভাগীয় পর্যায়ে সেমিনার ও সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপির তিন অঙ্গসংগঠন—যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত হওয়া ও চলমান নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় আগামী নির্বাচনে তরুণ প্রজন্ম ও নতুন ভোটারদের সক্রিয় ভূমিকা থাকার সম্ভাবনা দেখছে বিএনপি। এ কারণে নাগরিকদের মধ্যে তরুণসমাজের কাছে আগে যাওয়ার কর্মসূচি নিয়েছে দলটি।

গতকাল সোমবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তিন সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিন অঙ্গসংগঠনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না।

যুবদল সভাপতি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় তরুণদের ক্ষমতায়ন, রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশগ্রহণ, সৃজনশীলতার বিকাশ ও তৃণমূল পর্যায়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের বাস্তবসম্মত মডেল গড়ে তুলতে এ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি বিভাগে দুই দিনব্যাপী কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথম দিন একটি করে সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে, যার শিরোনাম হবে ‘তারুণ্যের ভবিষ্যৎ ভাবনা, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ’। রাজনৈতিক পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে নানা শ্রেণি-পেশার তরুণ প্রতিনিধি, শিক্ষার্থী, উদীয়মান চিন্তাবিদ, তরুণ বক্তা ও উদ্যোক্তারা এতে অংশ নেবেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, পরিবেশ, নগরায়ণ, প্রযুক্তি, রাজনৈতিক অধিকার ও তারুণ্যের ক্ষমতায়নের জন্য একটি আধুনিক, মানবিক ও নিরাপদ বাংলাদেশ নির্মাণে কী করা যেতে পারে, সে বিষয়গুলো সেমিনারের আলোচনায় আসবে। বিএনপি ও মিত্র দলগুলোর ৩১ দফা রূপরেখা নিয়েও সেখানে কথা হবে।

কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন প্রতিটি বিভাগে ‘তরুণদের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার মহাসমাবেশ’ শীর্ষক গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এর উদ্দেশ্য হলো, দেশের তরুণসমাজের ঐক্য, দৃঢ়প্রত্যয় ও প্রত্যাশাকে প্রাণবন্ত পরিবেশে উপস্থাপন করা।

দেশের ১০টি সাংগঠনিক বিভাগকে চারটি বৃহত্তর অঞ্চলে ভাগ করে এ কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। ঘোষণা অনুযায়ী, প্রথম কর্মসূচি হবে আগামী ৯-১০ মে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা বিভাগে। দ্বিতীয় কর্মসূচি ১৬-১৭ মে খুলনা ও বরিশাল বিভাগে। তৃতীয় কর্মসূচি ২৩ মে বগুড়ায় এবং ২৪ মে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে। চতুর্থ কর্মসূচি ২৭-২৮ মে ঢাকা, ফরিদপুর, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগে।

নির্বাচন ও সংস্কার প্রশ্নে বিভিন্ন ইস্যুতে জনমত গঠনের জন্যও নাগরিক সমাজ বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখছে বিএনপি। মূলত এ কারণেই কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে দলের তিন অঙ্গসংগঠন।

এ বিষয়ে দলের অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিএনপি সংস্কার চায় না, এমন প্রচার রয়েছে। বিএনপি আসলে কী চায়, তা জানানোর পাশাপাশি সংস্কারের বিষয়ে দলের কর্মীসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করাও প্রয়োজন।

রাষ্ট্র ও সরকারব্যবস্থায় অন্তত কিছু পরিবর্তন আনতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বড় দলগুলোর একটি বিএনপি চায়, যেসব পরিবর্তন আনতে দলগুলো একমত পোষণ করছে, সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই ভোট হোক। তার আগে কখন কী করা হবে, সে বিষয়ে একটি সুস্পষ্ট পথরেখা চায় দলটি। অন্যদিকে বিএনপি সংস্কার ছাড়াই ক্ষমতার জন্য ভোট চায়, এমন প্রচারণা রয়েছে। এমন অবস্থায় নিজ দাবিগুলোকে সামনে নিয়ে নাগরিকদের কাছে যাচ্ছে বিএনপি।

এ বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে ডিসেম্বরে নির্বাচন করা যায়। এর বাইরে এখন সংস্কার করার সুযোগ নেই। ঐকমত্যের বাইরে কিছু করতে হলে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আসতে হবে।

বিএনপির নেতারা ডিসেম্বরের ভোটের জন্য পথনকশা চেয়ে কয়েক দফা দেখা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো পথনকশা দেওয়া হয়নি। শুধু বলা হয়েছে, আগামী জুনের মধ্যে ভোট করতে সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

গত সপ্তাহে কাতারভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম আল জাজিরাকে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশের পরিস্থিতি দেখে জনগণ মনে করে, অন্তর্বর্তী সরকার এখনো তাদের জন্য ভালো সমাধান। তারা বলছে না, অন্তর্বর্তী সরকারকে যেতে দাও। আজ আমাদের নির্বাচন। কেউ তা বলেনি।’

ইউনূসের এ মন্তব্যের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর মন্তব্য, এখানে ব্যক্তিবিশেষের বিষয় নয়। কোনো ‘মহামানব’ তৈরির জন্য মানুষ জীবন দেয়নি; দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন দিয়েছে। গতকাল ঢাকায় গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

আমীর খসরু বলেন, অতীতেও অনেক মহামানব তৈরি করা হয়েছে, তার ফলাফল কী হয়েছে, তা দেশের মানুষ দেখতে পেয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কূটনৈতিক পাসপোর্টকে রাতারাতি অর্ডিনারি বানিয়ে দেওয়া পরিচালক বরখাস্ত

এবার সরানো হলো জ্বালানি উপদেষ্টার পিএসকে

সব রুফটপ রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল

ঈদ শুভেচ্ছা কার্টুনে কুকুরের ছবি: প্রথম আলো সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন

উদ্দীপনের ২০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক সচিব মিহির কান্তির বিরুদ্ধে ৬ মামলা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত