Ajker Patrika

উভয় কক্ষে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব চায় জামায়াত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৯: ৫২
উভয় কক্ষে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব চায় জামায়াত

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় একমত প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। কমিশনের প্রস্তাবে উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের কথা বলা হলেও জামায়াতে ইসলামী চায় উভয় কক্ষে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব। গতকাল শনিবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে এই অবস্থান জানিয়েছে দলটি।

গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় জামায়াতের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ শুরু হয়। দুপুরে ১ ঘণ্টা বিরতি দিয়ে আলোচনা চলে বিকেল সোয়া ৫টা পর্যন্ত। পরে সংলাপ মুলতবি করা হয়। গতকাল শুধু সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবগুলোর ওপর আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে সংলাপে অংশগ্রহণ করেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার ও ড. ইফতেখারুজ্জামান। সঞ্চালনা করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

জামায়াতের পক্ষ থেকে দলের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদল ছিল। প্রতিনিধিদলে ছিলেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, হামিদুর রহমান আযাদ, এহসান মাহবুব জুবায়ের, কার্যনির্বাহী সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির ও সরকার মো. মহিউদ্দিন।

সংলাপে জামায়াত জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের (এনসিসি) প্রস্তাবে একমত হলেও তাতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতিকে রাখার পক্ষে নয়। এ ছাড়া দলটি প্রধানমন্ত্রী পদে সর্বোচ্চ দুবার থাকার পক্ষে মত দিয়েছে। যদিও তিনটি বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে দ্বিমত জানিয়ে রেখেছে বিএনপি।

দুই কক্ষবিশিষ্ট আইনসভার প্রস্তাব করেছিল সংবিধান সংস্কার কমিশন। তাদের প্রস্তাবে বিদ্যমান পদ্ধতিতে নিম্নকক্ষ তথা জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং উচ্চকক্ষ সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু জামায়াতের পক্ষে উভয় কক্ষে সংখ্যানুপাতিক প্রস্তাব করা হয়েছে। দলটির দাবি, বিশ্বে ৬০টির বেশি দেশে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।

এ বিষয়ে সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, সারা দেশে একসঙ্গে দলীয় প্রতীক বা দলের ভিত্তিতে নির্বাচন হবে। সারা দেশে যে দল যে সংখ্যক ভোট পাবে, সেই অনুপাতে সংসদে আসন নির্ধারিত হবে। এতে বাংলাদেশের নির্বাচনে যে দুর্নীতি, জবরদখল হচ্ছে এবং ভোটবিহীন নির্বাচনের যে ফলাফল হচ্ছে, এটি তখন বন্ধ হয়ে যাবে। টাকার খেলাও বন্ধ হয়ে যাবে।

একজন সর্বোচ্চ দুবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হতে পারবেন বলে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে। বিষয়টিতে একমত প্রকাশ করে আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না। অর্থাৎ ১০ বছরের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না।

এনসিসির বিষয়ে জামায়াতে ইসলামী নীতিগতভাবে একমত বলে কমিশনকে জানিয়েছে। তবে দলটির লিখিত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এনসিসি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বিষয়টি নিয়ে আগামী বৈঠকে আরও আলোচনা করতে চায় জামায়াত। সে সময় তারা তাদের প্রস্তাব পরিবর্তন করতে পারে। তবে এনসিসিতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতিকে রাখার পক্ষে নয় দলটি। এ বিষয়ে দলটির নায়েবে আমির বলেন, এনসিসি গঠনের ক্ষেত্রে যেসব প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে, তাদের প্রস্তাবনায় রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান বিচারপতি এই দুটি পদেরও প্রস্তাব ছিল। আমরা বলেছি, ‘যেহেতু উনারা দুজন রাষ্ট্রের দুটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন, যেকোনো জরুরি অবস্থা হলে অনেক সময় রাষ্ট্রপতির কাছে ধরনা দিতে হয়, অনেক সময় সর্বোচ্চ বিচারালয়ের প্রয়োজন হয়, সে জন্য কমিটির ভেতরে তাদের যুক্ত না করাই ভালো হবে। এনসিসির কাঠামোগত দিকগুলোতে আমরা একমত হয়েছি।’

সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে সংসদ সদস্যরা ভোট দিতে পারেন না। সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে অর্থবিল ছাড়া সব বিষয়ে এমপিদের দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে ভোট দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। তবে জামায়াত অর্থবিল ছাড়াও আস্থা ভোটে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে চলার ভোটের পক্ষে। আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘৭০ অনুচ্ছেদের সংশোধনসহ ওনাদের (ঐকমত্য কমিশন) প্রস্তাবের সঙ্গে একমত হয়েছি। সেটি হচ্ছে, সংবিধান পরিবর্তন, অর্থবিল বা বাজেট অনুমোদন এবং আস্থা ভোট ছাড়া বাকি যেকোনো বিষয়ে একজন সংসদ সদস্য যেকোনো দলের ও মতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারেন।’

সংবিধানের মূলনীতিতে বহুত্ববাদ যুক্ত করার প্রস্তাবে দ্বিমত জানিয়েছে জামায়াত। দলটির নায়েবে আমির বলেন, ‘সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে সংবিধানের মূলনীতিতে বহুত্ববাদ সম্পূর্ণরূপে বাদ দেওয়ার কথা আমরা বলেছি এবং আরেকটি প্রস্তাব করেছি, সেটি হলো আল্লাহর ওপর সম্পূর্ণ আস্তা এবং বিশ্বাস স্থাপন করার জন্য।’

সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, ‘সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব ছিল সংসদ ও রাষ্ট্রপতির মেয়াদ চার বছর হবে। আমরা এর সঙ্গে দ্বিমত জানিয়েছি। আমরা বলেছি, সংসদ ও রাষ্ট্রপতির মেয়াদ পাঁচ বছর থাকবে।’

সংস্কার প্রক্রিয়ায় সবাই একত্রে আছে জানিয়ে সূচনা বক্তব্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, ‘সবাই মিলেই আমরা চেষ্টাটা করছি। এটা কোনো রাজনৈতিক দলের একক বিষয় নয়, কেবল রাজনৈতিক দলের বিষয় নয়, সবার বিষয়। জাতির আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করার জন্য আমাদের চেষ্টা। আমাদের লক্ষ্য এক। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করছি। আমাদের সবার সাফল্য নির্ভর করছে আমাদের সবার আন্তরিক চেষ্টার মধ্যে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত