Ajker Patrika

জলবায়ু সংকট ও শিশুর শিক্ষা

সম্পাদকীয়
Thumbnail image

জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ। এর প্রভাব আর কেবল পরিবেশগত সমস্যা নয়; এটি মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভয়াবহ বিপর্যয় সৃষ্টি করছে। ইউনিসেফের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উঠে আসা তথ্য আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, জলবায়ু সংকট কেবল আগামী দিনের বাস্তবতা নয়, এটি ইতিমধ্যেই শিশুদের শিক্ষার মতো মৌলিক অধিকারে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।

২৫ জানুয়ারি আজকের পত্রিকায় ‘২০২৪ সালে ৩ কোটি ৩০ লাখ শিশুর শিক্ষা বিপন্ন’ শিরোনামে প্রকাশিত খবর থেকে চরম আবহাওয়ার কারণে বিপুলসংখ্যক শিশুর শিক্ষার সুযোগ হারানোর উদ্বেগজনক তথ্য জানা গেছে। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, তাপপ্রবাহ—এসব বিপর্যয় এ দেশে প্রতিবছর ঘন ঘন আঘাত হানে। তবে গত বছরের চিত্র ছিল ভয়াবহ। এপ্রিল-মে মাসে তাপপ্রবাহের কারণে স্কুলগুলো বন্ধ রাখতে হয়। এরপর ঘূর্ণিঝড় রিমাল এবং সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভয়াবহ বন্যা স্কুলশিক্ষার মেরুদণ্ডকে প্রায় ভেঙে দিয়েছে।

এই সংকটের চরম ভুক্তভোগী শিশুরা। তাপপ্রবাহে শারীরিক বিপন্নতার শিকার শিশুরা শিক্ষার পরিবেশে মনোনিবেশ করতে পারেনি। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো সরাসরি শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। ইউনিসেফের একটি রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, সিলেট অঞ্চলে আট সপ্তাহ এবং অন্যান্য অঞ্চলে ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। ফলে লক্ষাধিক শিশুর পড়াশোনা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।

শিক্ষা থেকে বঞ্চিত শিশুরা চরম সামাজিক সংকটের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এ ছাড়া বিশেষত কন্যাশিশুরা ঝুঁকিতে পড়ছে আরও বেশি। শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ার ফল হিসেবে বাল্যবিবাহের হার বাড়ছে, যা তাদের সামগ্রিক ভবিষ্যৎকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করছে। এটি দেশের নারীর ক্ষমতায়ন এবং সামগ্রিক অগ্রগতির জন্য একটি বড় হুমকি।

জলবায়ু সংকটের ফলে শিশুরা যে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, তা শুধু একটি প্রজন্মের জন্য নয়, এটি একটি জাতির ভবিষ্যতের জন্যও অশনিসংকেত। শিক্ষার অভাবে সৃষ্টি হওয়া ‘শিখন দারিদ্র্য’ বাংলাদেশের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে বহুলাংশে বাধাগ্রস্ত করবে। ইতিমধ্যে দেখা যাচ্ছে, প্রাথমিক পর্যায়ের অর্ধেক শিক্ষার্থী তাদের কাঙ্ক্ষিত দক্ষতা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে। এটি যদি অব্যাহত থাকে, তবে ভবিষ্যতে দক্ষ মানবসম্পদের ঘাটতি দেশের অগ্রগতিকে অচল করে দিতে পারে।

এই সংকট সমাধানে প্রয়োজন জলবায়ু-সহনশীল শিক্ষাব্যবস্থা। অবিলম্বে দেশের শিক্ষা খাতে এমন অবকাঠামো গড়ে তোলা প্রয়োজন, যা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষম। ইউনিসেফের পরামর্শ হলো, শিশুকেন্দ্রিক নীতি গ্রহণ করে তাদের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।

জলবায়ু পরিবর্তন আজকের সমস্যাই নয়, এটি ভবিষ্যৎকেও দুর্বল করে দিচ্ছে। কারণ, আজকের শিশুই আগামীর বাংলাদেশ। তাই নীতিনির্ধারকদের উচিত দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। শিশুদের শিক্ষার অধিকার এবং ভবিষ্যৎ রক্ষা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। অন্যথায় এক অনাগত প্রজন্মকে আমরা শুধু হতাশার সাগরে ফেলে দেব। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই হবে শিশুদের জন্য শিক্ষার আলো নিশ্চিত করার লড়াই। নইলে বাংলাদেশ শুধু পরিবেশগত নয়, সামাজিকভাবেও একটি বড় সংকটে পতিত হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত