পল ককরেন স্বাধীন সাংবাদিক, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা
ইসরায়েল ও তার সমর্থকেরা হামাসকে ধ্বংস করতে এবং ‘মানব পশুদের’, অর্থাৎ ফিলিস্তিনিদের হত্যা করতে চাইছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফিলিস্তিনিদের এ নামেই অভিহিত করেছেন। কিন্তু তাঁদের গণহত্যার এ কৌশল কাজ করবে না। এমনকি ইসরায়েল যদি হামাসের নেতৃত্বকে ধ্বংস করতে পারেও, তবে অন্য একটি দল সে জায়গা নিয়ে নেবে।
যেকোনো কারণেই হোক, বিশ্বের গণমাধ্যমগুলোতে যে বিষয়টি খুব কম উল্লেখ করা হয়েছে তা হলো, ৭ অক্টোবরের হামলায় হামাসের পাশাপাশি অন্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলো, যেমন আল আকসা মার্টায়ার্স ব্রিগেড, কমিউনিস্ট ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন, প্যালেস্টিনিয়ান ইসলামিক জিহাদ, প্যালেস্টিনিয়ান মুজাহিদিন মুভমেন্ট ও দ্য পপুলার রেজিস্ট্যান্স কমিটিও জড়িত ছিল।
ইসরায়েলিরা গাজা উপত্যকায় যতই আঘাত করুক না কেন, তারা তাদের দখলদারির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ নিশ্চিহ্ন করতে পারবে না।
কেননা তারা প্রতিরোধের আগুন জ্বালাতে সাহায্য করছে। কয়েক দশক ধরে তারা এটা করেছে। এই ধারা অব্যাহত রাখলে ইসরায়েল কোনোভাবেই এ অঞ্চলের জনগণের কাছে জনপ্রিয় হতে পারবে না।
২০০৬ সালের জুলাইয়ে লেবাননের হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধের সময়, আমি লেবানিজ বন্ধুদের সঙ্গে দাহিয়েহতে (বৈরুতের সংখ্যাগরিষ্ঠ শিয়া দক্ষিণ শহরতলি) কানা গণহত্যার খবর দেখছিলাম। আমার বন্ধু তার সাত বছর বয়সী ভাতিজার দিকে ইশারা করে জিজ্ঞেস করল যে এটা দেখে ওর ইসরায়েল সম্পর্কে কী ধারণা হচ্ছে। আমি বললাম, ‘ভালো কিছু না।’
একই দৃশ্য আজ গাজায়। মধ্যপ্রাচ্যের পাশাপাশি গোটা বিশ্ব দেখছে গাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে পুরুষ, নারী ও শিশুদের মৃতদেহ বের করে আনা হচ্ছে। ১৭ বছর আগে আমি যে ছেলেটির সঙ্গে টিভিতে গণহত্যার খবর দেখেছিলাম, তার বয়স এখন ২৩ বছর এবং আমার জানামতে সে প্রতিরোধের সঙ্গে জড়িত নয়, কিন্তু সে এখনো ইসরায়েলকে পছন্দ করে না।
ফিলিস্তিন ও প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর এমন অবিশ্বাস্য রকমের সহিংসতা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে দেখে চলেছে। বর্ণবৈষম্য এবং দখলদারির অবসান না হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের সহিংসতার চক্র বন্ধ হবে না। যেমন নেলসন ম্যান্ডেলা লিখেছেন, ‘যদি অত্যাচারী সহিংসতা করে, তবে নিপীড়িতদের সহিংসভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’
ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলের কথা শোনার জন্য সম্ভাব্য সব রকমের চেষ্টা করেছে, তবুও তারা বিরামহীন সহিংসতার মুখোমুখি হয়েছে ও হচ্ছে। ২০১৮ সালের মার্চ মাসে ফিলিস্তিনিরা তাদের পৈতৃক বাড়িতে ‘ফিরে যাওয়ার অধিকার’ দাবি করে সীমান্তের বেড়ায় এসে প্রতিবাদ করেছিল। বছরব্যাপী এ প্রতিবাদ বিক্ষোভের সময় গুপ্তঘাতকের হামলায় ২৬৬ জনের মৃত্যু হয়। আহত হয় ৩০ হাজার মানুষ।
দখলদারদের অধীনে কোনো ফিলিস্তিনি নিরাপদ নয়। জাতিসংঘের হিসাবে, ২০১৫ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ইসরায়েলি হামলায় শুধু ৮ হাজার ৭০০-এর বেশি শিশু নিহত হয়েছে। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছিল, ‘পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি শিশুদের জন্য ১৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী বছর ছিল ২০২২।’ এখন মনে হচ্ছে ২০২৩ শিশু নিহতের দিক দিয়ে ২০২২ সালকে ছাড়িয়ে যাবে। সেই প্রতিবেদন আগস্ট মাসে প্রকাশিত হয়। তখন থেকে গাজা অবরোধের সময় দেড় হাজারের বেশি শিশু নিহত হয়েছে।
এত সহিংসতা সত্ত্বেও অত্যাচারীরা ফিলিস্তিনি জনগণের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে দমাতে পারেনি। এটা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কোনো বহির্জাগতিক বিষয় নয়। তাদের প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান ১৯৮২ সালে কলম্বিয়া থেকে মহাকাশযান উৎক্ষেপণের সময় তা আফগানিস্তানের মানুষকে উৎসর্গ করেছিলেন। বলেছিলেন, দখলদারির বিরুদ্ধে সংগ্রাম মানুষের স্বাধীনতার সর্বোচ্চ আকাঙ্ক্ষাকে মূর্ত করে তোলে।
এখনো ইসরায়েলি, আমেরিকান এবং তাদের ইউরোপীয় মিত্ররা মনে করে যে ব্যাপক বোমাবর্ষণ এবং হয়রানি, অবরোধ বা নিষেধাজ্ঞা আরোপের মতো পদক্ষেপ কোনো না কোনোভাবে কাজ করবে। ইসরায়েলিরা ১৯৪৮ সাল থেকে গাজার বিরুদ্ধে এই কৌশল প্রয়োগের চেষ্টা করে আসছে এবং ২০০৬, ২০০৮, ২০০৯, ২০১০, ২০১১, ২০১৪, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২১ সালেও চেষ্টা করেছে। এটি স্পষ্টতই কোনো কাজ করেনি। তবে এ কারণে ফিলিস্তিনিদের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে। তাদের সীমাহীন কষ্ট পোহাতে হয়েছে।
৯৮২ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ইসরায়েলিরা দক্ষিণ লেবানন দখল করার চেষ্টা করেছিল। তারা সেটা না পারলেও তাদের পায়ের মধ্যে লেজ রেখে চলে গিয়েছিল, যেমনটি যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে ১৮ বছর করেছে। মনে রাখতে হবে, সবচেয়ে অত্যাধুনিক অস্ত্রে বলীয়ান বাহিনীও প্রতিরোধকে ধ্বংস করতে পারে না। কারণ তারা প্রতিরোধকারীদের ‘হৃদয় ও মন’ জয় করতে পারে না।
শ্বেতাঙ্গ দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী শাসন এবং আফ্রিকা ও এশিয়ার অন্যত্র ঔপনিবেশিক শাসকেরা তা বুঝতে পেরেছেন। স্থিতাবস্থা বজায় রাখা যাবে না যদি না সেখানকার ভূমিপুত্রদের সম্পূর্ণ বা বড় অংশকে ধ্বংস করা না হয়। যেমনটি আদতে ঘটেছে আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় (এখনো আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে একটি কণ্ঠস্বর হিসেবে অস্বীকার করে)।
মার্কিন নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক যুদ্ধে ৪৫ লাখ মানুষ মারা গেছে। লাখো কোটি ডলার খরচ হয়েছে। এর ফলে যে ধ্বংস ও বিপর্যয় হয়েছে, তা সারা বিশ্বকে একটি কম নিরাপদ স্থানে পরিণত করে। যদিও এটাই ছিল প্রত্যাশিত এবং পরিষ্কার।
লেবাননের প্রয়াত শিয়া মুসলিম নেতা গ্র্যান্ড আয়াতুল্লাহ মোহাম্মদ হুসেইন ফাদলাল্লাহ ইরাক আক্রমণের ঠিক পরে ২০০৪ সালে আমাকে বলেছিলেন, ‘যত দিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি একই থাকবে এবং ফিলিস্তিন সমস্যা অমীমাংসিত থাকবে, ততক্ষণ মার্কিন “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ” চলবে।’
২০০৬ সালে ইসরায়েলিরা লেবাননে বোমা ফেলতে চেয়েছিল, যাতে দেশটি ‘অন্ধকার যুগে ফিরে যায়’। তারা চেয়েছিল হিজবুল্লাহকে নিশ্চিহ্ন করতে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সমর্থন সত্ত্বেও তারা এটা করতে পারেনি; বরং হিজবুল্লাহ আরও শক্তিশালী হয়ে উঠে এসেছে। দক্ষিণ লেবানন এবং বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলিতে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল ইসরায়েল। আল মানার টেলিভিশন ভবনসহ বহু ভবন গুঁড়িয়ে দিয়েছিল। সেগুলো আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।
কাজেই এবারও গাজা অবরোধ করে প্রতিশোধের তৃষ্ণা মেটানো ছাড়া ইসরায়েলিদের লক্ষ্য পূরণ হবে না। এমনকি গাজাকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য যদি তারা কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে তার পরেও। যেমনটা একজন ইসরায়েলি রাজনীতিবিদ বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ কখনোই বন্ধ করা যাবে না। এক দিকে বন্ধ করলে অন্য দিক থেকে আসবে। গণহত্যা ইসরায়েলিদের নিরাপদ করতে পারবে না বা ৭ অক্টোবরের মতো আরও হামলাকে ঠেকাতে পারবে না।
সহিংসতা শেষ করার একমাত্র বিকল্প পথ হচ্ছে দখলদারদের নিজেদের দখলের অবসান ঘটানো। যেমনটা শ্বেতাঙ্গরা দক্ষিণ আফ্রিকায় এবং ব্রিটিশরা উত্তর আয়ারল্যান্ডে মেনে নিয়েছিল।
ইসরায়েলের ক্ষেত্রে আইনের শাসনের কথিত প্রভু যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলো জেনেভা কনভেনশন, রোম স্ট্যাটুর মতো আন্তর্জাতিক নিয়মকানুন বেছে বেছে বিশ্বাস করে। মানবাধিকার বিষয়ে জাতিসংঘে পাস হওয়া ৪৫ নম্বর প্রস্তাব ইসরায়েল মানে না। আবার নিরাপত্তা পরিষদে ইসরায়েলকে নিয়ে কড়া কোনো প্রস্তাব নিলে তাতে ভেটো দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
ইসরায়েলের প্রতি পশ্চিমারা সমর্থনের নামে যে ভণ্ডামি করে তাতে প্রকৃতপক্ষে আন্তর্জাতিক আইনকেই ক্ষুণ্ন করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সিনিয়র জি সেভেন কূটনীতিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমসে ‘রাশ বাই ওয়েস্ট টু ব্যাক ইসরায়েল ইরোডস ডেভেলপিং কান্ট্রিজ সাপোর্ট ফর ইউক্রেন’ শীর্ষক একটি নিবন্ধে লিখেছেন: ‘আমরা নিশ্চিতভাবেই গ্লোবাল সাউথের যুদ্ধে হেরে গেছি।...নিয়মের কথা ভুলে যান, বিশ্বব্যবস্থার কথা ভুলে যান। তারা আর কখনো আমাদের কথা শুনবে না।’
(অনলাইন ম্যাগাজিন কাউন্টারপাঞ্চে প্রকাশিত ইংরেজি লেখাটি বাংলায় অনূদিত ও সংক্ষেপিত। লেখক এ লেখাটি উৎসর্গ করেছেন সাংবাদিক ইসাম আবদাল্লার স্মৃতির উদ্দেশ্যে। ১৩ অক্টোবর দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলি গোলার আঘাতে ইসাম নিহত হন।)
ইসরায়েল ও তার সমর্থকেরা হামাসকে ধ্বংস করতে এবং ‘মানব পশুদের’, অর্থাৎ ফিলিস্তিনিদের হত্যা করতে চাইছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফিলিস্তিনিদের এ নামেই অভিহিত করেছেন। কিন্তু তাঁদের গণহত্যার এ কৌশল কাজ করবে না। এমনকি ইসরায়েল যদি হামাসের নেতৃত্বকে ধ্বংস করতে পারেও, তবে অন্য একটি দল সে জায়গা নিয়ে নেবে।
যেকোনো কারণেই হোক, বিশ্বের গণমাধ্যমগুলোতে যে বিষয়টি খুব কম উল্লেখ করা হয়েছে তা হলো, ৭ অক্টোবরের হামলায় হামাসের পাশাপাশি অন্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলো, যেমন আল আকসা মার্টায়ার্স ব্রিগেড, কমিউনিস্ট ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন, প্যালেস্টিনিয়ান ইসলামিক জিহাদ, প্যালেস্টিনিয়ান মুজাহিদিন মুভমেন্ট ও দ্য পপুলার রেজিস্ট্যান্স কমিটিও জড়িত ছিল।
ইসরায়েলিরা গাজা উপত্যকায় যতই আঘাত করুক না কেন, তারা তাদের দখলদারির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ নিশ্চিহ্ন করতে পারবে না।
কেননা তারা প্রতিরোধের আগুন জ্বালাতে সাহায্য করছে। কয়েক দশক ধরে তারা এটা করেছে। এই ধারা অব্যাহত রাখলে ইসরায়েল কোনোভাবেই এ অঞ্চলের জনগণের কাছে জনপ্রিয় হতে পারবে না।
২০০৬ সালের জুলাইয়ে লেবাননের হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধের সময়, আমি লেবানিজ বন্ধুদের সঙ্গে দাহিয়েহতে (বৈরুতের সংখ্যাগরিষ্ঠ শিয়া দক্ষিণ শহরতলি) কানা গণহত্যার খবর দেখছিলাম। আমার বন্ধু তার সাত বছর বয়সী ভাতিজার দিকে ইশারা করে জিজ্ঞেস করল যে এটা দেখে ওর ইসরায়েল সম্পর্কে কী ধারণা হচ্ছে। আমি বললাম, ‘ভালো কিছু না।’
একই দৃশ্য আজ গাজায়। মধ্যপ্রাচ্যের পাশাপাশি গোটা বিশ্ব দেখছে গাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে পুরুষ, নারী ও শিশুদের মৃতদেহ বের করে আনা হচ্ছে। ১৭ বছর আগে আমি যে ছেলেটির সঙ্গে টিভিতে গণহত্যার খবর দেখেছিলাম, তার বয়স এখন ২৩ বছর এবং আমার জানামতে সে প্রতিরোধের সঙ্গে জড়িত নয়, কিন্তু সে এখনো ইসরায়েলকে পছন্দ করে না।
ফিলিস্তিন ও প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর এমন অবিশ্বাস্য রকমের সহিংসতা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে দেখে চলেছে। বর্ণবৈষম্য এবং দখলদারির অবসান না হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের সহিংসতার চক্র বন্ধ হবে না। যেমন নেলসন ম্যান্ডেলা লিখেছেন, ‘যদি অত্যাচারী সহিংসতা করে, তবে নিপীড়িতদের সহিংসভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’
ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলের কথা শোনার জন্য সম্ভাব্য সব রকমের চেষ্টা করেছে, তবুও তারা বিরামহীন সহিংসতার মুখোমুখি হয়েছে ও হচ্ছে। ২০১৮ সালের মার্চ মাসে ফিলিস্তিনিরা তাদের পৈতৃক বাড়িতে ‘ফিরে যাওয়ার অধিকার’ দাবি করে সীমান্তের বেড়ায় এসে প্রতিবাদ করেছিল। বছরব্যাপী এ প্রতিবাদ বিক্ষোভের সময় গুপ্তঘাতকের হামলায় ২৬৬ জনের মৃত্যু হয়। আহত হয় ৩০ হাজার মানুষ।
দখলদারদের অধীনে কোনো ফিলিস্তিনি নিরাপদ নয়। জাতিসংঘের হিসাবে, ২০১৫ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ইসরায়েলি হামলায় শুধু ৮ হাজার ৭০০-এর বেশি শিশু নিহত হয়েছে। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছিল, ‘পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি শিশুদের জন্য ১৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী বছর ছিল ২০২২।’ এখন মনে হচ্ছে ২০২৩ শিশু নিহতের দিক দিয়ে ২০২২ সালকে ছাড়িয়ে যাবে। সেই প্রতিবেদন আগস্ট মাসে প্রকাশিত হয়। তখন থেকে গাজা অবরোধের সময় দেড় হাজারের বেশি শিশু নিহত হয়েছে।
এত সহিংসতা সত্ত্বেও অত্যাচারীরা ফিলিস্তিনি জনগণের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে দমাতে পারেনি। এটা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কোনো বহির্জাগতিক বিষয় নয়। তাদের প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান ১৯৮২ সালে কলম্বিয়া থেকে মহাকাশযান উৎক্ষেপণের সময় তা আফগানিস্তানের মানুষকে উৎসর্গ করেছিলেন। বলেছিলেন, দখলদারির বিরুদ্ধে সংগ্রাম মানুষের স্বাধীনতার সর্বোচ্চ আকাঙ্ক্ষাকে মূর্ত করে তোলে।
এখনো ইসরায়েলি, আমেরিকান এবং তাদের ইউরোপীয় মিত্ররা মনে করে যে ব্যাপক বোমাবর্ষণ এবং হয়রানি, অবরোধ বা নিষেধাজ্ঞা আরোপের মতো পদক্ষেপ কোনো না কোনোভাবে কাজ করবে। ইসরায়েলিরা ১৯৪৮ সাল থেকে গাজার বিরুদ্ধে এই কৌশল প্রয়োগের চেষ্টা করে আসছে এবং ২০০৬, ২০০৮, ২০০৯, ২০১০, ২০১১, ২০১৪, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২১ সালেও চেষ্টা করেছে। এটি স্পষ্টতই কোনো কাজ করেনি। তবে এ কারণে ফিলিস্তিনিদের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে। তাদের সীমাহীন কষ্ট পোহাতে হয়েছে।
৯৮২ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ইসরায়েলিরা দক্ষিণ লেবানন দখল করার চেষ্টা করেছিল। তারা সেটা না পারলেও তাদের পায়ের মধ্যে লেজ রেখে চলে গিয়েছিল, যেমনটি যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে ১৮ বছর করেছে। মনে রাখতে হবে, সবচেয়ে অত্যাধুনিক অস্ত্রে বলীয়ান বাহিনীও প্রতিরোধকে ধ্বংস করতে পারে না। কারণ তারা প্রতিরোধকারীদের ‘হৃদয় ও মন’ জয় করতে পারে না।
শ্বেতাঙ্গ দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী শাসন এবং আফ্রিকা ও এশিয়ার অন্যত্র ঔপনিবেশিক শাসকেরা তা বুঝতে পেরেছেন। স্থিতাবস্থা বজায় রাখা যাবে না যদি না সেখানকার ভূমিপুত্রদের সম্পূর্ণ বা বড় অংশকে ধ্বংস করা না হয়। যেমনটি আদতে ঘটেছে আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় (এখনো আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে একটি কণ্ঠস্বর হিসেবে অস্বীকার করে)।
মার্কিন নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক যুদ্ধে ৪৫ লাখ মানুষ মারা গেছে। লাখো কোটি ডলার খরচ হয়েছে। এর ফলে যে ধ্বংস ও বিপর্যয় হয়েছে, তা সারা বিশ্বকে একটি কম নিরাপদ স্থানে পরিণত করে। যদিও এটাই ছিল প্রত্যাশিত এবং পরিষ্কার।
লেবাননের প্রয়াত শিয়া মুসলিম নেতা গ্র্যান্ড আয়াতুল্লাহ মোহাম্মদ হুসেইন ফাদলাল্লাহ ইরাক আক্রমণের ঠিক পরে ২০০৪ সালে আমাকে বলেছিলেন, ‘যত দিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি একই থাকবে এবং ফিলিস্তিন সমস্যা অমীমাংসিত থাকবে, ততক্ষণ মার্কিন “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ” চলবে।’
২০০৬ সালে ইসরায়েলিরা লেবাননে বোমা ফেলতে চেয়েছিল, যাতে দেশটি ‘অন্ধকার যুগে ফিরে যায়’। তারা চেয়েছিল হিজবুল্লাহকে নিশ্চিহ্ন করতে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সমর্থন সত্ত্বেও তারা এটা করতে পারেনি; বরং হিজবুল্লাহ আরও শক্তিশালী হয়ে উঠে এসেছে। দক্ষিণ লেবানন এবং বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলিতে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল ইসরায়েল। আল মানার টেলিভিশন ভবনসহ বহু ভবন গুঁড়িয়ে দিয়েছিল। সেগুলো আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।
কাজেই এবারও গাজা অবরোধ করে প্রতিশোধের তৃষ্ণা মেটানো ছাড়া ইসরায়েলিদের লক্ষ্য পূরণ হবে না। এমনকি গাজাকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য যদি তারা কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে তার পরেও। যেমনটা একজন ইসরায়েলি রাজনীতিবিদ বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ কখনোই বন্ধ করা যাবে না। এক দিকে বন্ধ করলে অন্য দিক থেকে আসবে। গণহত্যা ইসরায়েলিদের নিরাপদ করতে পারবে না বা ৭ অক্টোবরের মতো আরও হামলাকে ঠেকাতে পারবে না।
সহিংসতা শেষ করার একমাত্র বিকল্প পথ হচ্ছে দখলদারদের নিজেদের দখলের অবসান ঘটানো। যেমনটা শ্বেতাঙ্গরা দক্ষিণ আফ্রিকায় এবং ব্রিটিশরা উত্তর আয়ারল্যান্ডে মেনে নিয়েছিল।
ইসরায়েলের ক্ষেত্রে আইনের শাসনের কথিত প্রভু যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলো জেনেভা কনভেনশন, রোম স্ট্যাটুর মতো আন্তর্জাতিক নিয়মকানুন বেছে বেছে বিশ্বাস করে। মানবাধিকার বিষয়ে জাতিসংঘে পাস হওয়া ৪৫ নম্বর প্রস্তাব ইসরায়েল মানে না। আবার নিরাপত্তা পরিষদে ইসরায়েলকে নিয়ে কড়া কোনো প্রস্তাব নিলে তাতে ভেটো দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
ইসরায়েলের প্রতি পশ্চিমারা সমর্থনের নামে যে ভণ্ডামি করে তাতে প্রকৃতপক্ষে আন্তর্জাতিক আইনকেই ক্ষুণ্ন করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সিনিয়র জি সেভেন কূটনীতিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমসে ‘রাশ বাই ওয়েস্ট টু ব্যাক ইসরায়েল ইরোডস ডেভেলপিং কান্ট্রিজ সাপোর্ট ফর ইউক্রেন’ শীর্ষক একটি নিবন্ধে লিখেছেন: ‘আমরা নিশ্চিতভাবেই গ্লোবাল সাউথের যুদ্ধে হেরে গেছি।...নিয়মের কথা ভুলে যান, বিশ্বব্যবস্থার কথা ভুলে যান। তারা আর কখনো আমাদের কথা শুনবে না।’
(অনলাইন ম্যাগাজিন কাউন্টারপাঞ্চে প্রকাশিত ইংরেজি লেখাটি বাংলায় অনূদিত ও সংক্ষেপিত। লেখক এ লেখাটি উৎসর্গ করেছেন সাংবাদিক ইসাম আবদাল্লার স্মৃতির উদ্দেশ্যে। ১৩ অক্টোবর দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলি গোলার আঘাতে ইসাম নিহত হন।)
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের গণহত্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) যে তদন্ত করেছে, ২৭ জানুয়ারি সে তদন্তের ৫৫ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এইচআরডব্লিউর একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে...
৫ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশের রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক ইতিহাসে ফেব্রুয়ারি একটি অনন্য মাস। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি আমাদের জন্য যে পথ রচনা করে দিয়েছে, সেই পথই দেশকে পৌঁছে দিয়েছে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায়। প্রকৃতপক্ষে এ দেশের আপামর ছাত্র-শ্রমিক-জনতা রাজপথে বুকের রক্ত ঢেলে সেই পথকে করেছে মসৃণ...
৫ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি একধরনের সামাজিক ও রাজনৈতিক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যেখানে নারীদের খেলাধুলায় অংশগ্রহণ ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে নানা বাধা দেখা যাচ্ছে। এসব ঘটনা শুধু বিচ্ছিন্ন কিছু প্রতিবন্ধকতা নয়; বরং বৃহত্তর সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রতিফলন।
৫ ঘণ্টা আগেআজ থেকে বাংলা একাডেমি আয়োজিত বইমেলা শুরু হচ্ছে। মাসব্যাপী এই আয়োজন প্রাণের মেলায় পরিণত হোক, সেই কামনা করি। তবে আজ বইমেলা নিয়ে নয়, বাংলা একাডেমি পুরস্কার নিয়ে যে নাটক অভিনীত হলো, তা নিয়েই কিছু কথা বলা সংগত হবে।
৫ ঘণ্টা আগে