Ajker Patrika

বিদেশনির্ভর চিকিৎসা

সম্পাদকীয়
Thumbnail image

আমাদের দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা ও বিদেশমুখিতা নিয়ে আজকের পত্রিকায় ২২ ডিসেম্বর, রোববার একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত ‘চিকিৎসাসেবায় বিদেশমুখিতা: আমাদের উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে ২১ ডিসেম্বর। সেই আলোচনায় স্পষ্ট হয়েছে দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার রুগ্‌ণতার স্বরূপটি।

আমরা অনেক ক্ষেত্রে অগ্রসর হলেও চিকিৎসাব্যবস্থায় আশানুরূপ এগোতে পারিনি। এই অগ্রসর না হওয়ার অন্যতম কারণ হলো, রাষ্ট্র এটা নিয়ে কখনোই যুগোপযুগী পরিকল্পনা গ্রহণ করেনি। রাষ্ট্রের অবহেলার কারণেই খাতটির এত রুগ্‌ণ দশা।

চিকিৎসা জনগণের মৌলিক অধিকার হলেও বরাবরই এ দেশের মানুষ তা থেকে একপ্রকার বঞ্চিত থেকেছে। কত অসহায় হলে একজন রোগী সরকারি হাসপাতালে যেতে বাধ্য হন, যেখানে যথাযথ চিকিৎসাসেবার আয়োজন নেই!

এখানে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার যে নেই, তা বলা যাবে না। কিন্তু তাঁরা অনেক ক্ষেত্রে রোগীর সঠিক রোগ নির্ণয় করতে পারেন না। অনেকের অভিজ্ঞতায় এমনও জানা যায়, দেশের ডাক্তার কোনো এক রোগীর জটিল রোগের কথা বলেছেন, কিন্তু সেই রোগীই বিদেশে গিয়ে তাঁর দেহে কোনো জটিল রোগের হদিস পাননি। এর কারণ কি রোগ নির্ণয়ের যন্ত্রের ত্রুটি, নাকি চিকিৎসক ও হাসপাতালের

মিলিত কারসাজি যেন রোগীর কাছ থেকে দুই পয়সা বেশি কামানো যায়!

সরকারি হাসপাতালে টাকা ছাড়া সেবা মেলে না, ঘুষ ছাড়া সিট মেলে না এবং অপারেশনের সিরিয়াল পাওয়া যায় না, ব্যয়বহুল চিকিৎসা সরঞ্জাম থাকলেও তা যথাযথভাবে ব্যবহার করা হয় না—এসব অভিযোগ তো রয়েছেই।

সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার অব্যবস্থাপনার কারণে বাধ্য হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে শুধু টাকাওয়ালারা যেতে পারেন। সরকারি হাসপাতালের রুগ্‌ণ দশার সুযোগ নিয়ে ব্যাঙের ছাতার মতো দেশে বেসরকারি হাসপাতাল গড়ে উঠেছে। সরকারিভাবে মনিটরিং না হওয়ায় সেখানে সামান্য রোগের কারণে মৃত্যু হওয়ার মতো অভিযোগও নানা সময় উঠেছে। এমনকি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না নিয়ে দেদার চলছে অনেক বেসরকারি হাসপাতাল।

চিকিৎসা হলো সেবার বিষয়, কোনো পণ্য নয়। কিন্তু এ দেশে এখন তা যেন পণ্যে পরিণত হয়েছে। নানা কারণে প্রতিবছর এ দেশের অসংখ্য মানুষ দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে যান। এখানে চিকিৎসাব্যবস্থা যদি ভালো হতো, রোগীরা নিশ্চয়ই বিদেশে গিয়ে ডাক্তারদের পকেট ভরতেন না, দেশের টাকা দেশেই থাকত। সেই টাকা আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে যোগ হতো।

যেসব কারণে আমাদের দেশের জনগণ চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে বাধ্য হন, সেগুলো এখন আর অজানা নেই। দ্রুত এসব সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার যেমন রাষ্ট্রের বিভিন্ন সেক্টর সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, তেমনি স্বাস্থ্য খাতের সংস্কারের উদ্যোগও গ্রহণ করবে—এমনটাই আমরা প্রত্যাশা করি। এটা নিয়ে যেন আর সময়ক্ষেপণ না হয়। চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়া বন্ধ না হলে দেশের ভাবমূর্তিরই ক্ষতি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত