Ajker Patrika

উত্তপ্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সম্পাদকীয়
উত্তপ্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবারও উত্তপ্ত। হলগুলোতে ছাত্রদলের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে শুক্রবার রাতে শিক্ষার্থীরা হল থেকে বেরিয়ে এসে বিক্ষোভ করেছেন। একপর্যায়ে উপাচার্য বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সামনে দলগুলোতে ছাত্ররাজনীতি থাকবে না বলে ঘোষণা দিলেও পরিস্থিতি শান্ত হয়নি।

যে শিক্ষাঙ্গন একসময় বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম, ভাষা আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের দিকনির্দেশনা দিয়েছে, সেটিই আজ ক্ষমতার লড়াই, প্রভাব বিস্তার ও

ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষার ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, ছাত্ররাজনীতি কি বর্তমান কাঠামোয় চালিয়ে যাওয়া সম্ভব, নাকি এর আমূল সংস্কার প্রয়োজন?

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ছাত্র আন্দোলনের অবদান অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ—সব ক্ষেত্রেই ছাত্রসমাজ ছিল অগ্রণী। কিন্তু একই সঙ্গে সত্তরের দশকের পর থেকেই দলীয় রাজনীতির ছায়ায় ছাত্রসংগঠনগুলো ক্রমেই স্বাধীন চিন্তার জায়গা হারিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতি আজ মূলত জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলোর ‘যুব শাখা’য় পরিণত হয়েছে, যেখানে প্রাধান্য পাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থ। শিক্ষার্থীদের নিজস্ব চাহিদা ও অধিকার হারিয়ে যাচ্ছে সংঘর্ষ ও পৃষ্ঠপোষকতার রাজনীতির ভিড়ে।

বর্তমানে হলে হলে যে কমিটি গঠনের বিরোধ দেখা দিচ্ছে, তার মূলে আছে এই দলীয় প্রভাব ও দখলদারির সংস্কৃতি। প্রতিপক্ষকে সরিয়ে দিয়ে হলের রুম বণ্টন, ভর্তি-ইচ্ছুকদের ওপর নিয়ন্ত্রণ, মেস বা ক্যানটিনে প্রভাব—এ সবই দলীয় রাজনীতির অনিবার্য ফল। এতে একদিকে শিক্ষার পরিবেশ ভেঙে পড়ছে, অন্যদিকে ক্যাম্পাসে সহিংসতার ঝুঁকি স্থায়ী রূপ পাচ্ছে।

এই প্রেক্ষাপটে একটি মৌলিক সংস্কারের প্রয়োজন স্পষ্ট। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি দীর্ঘদিন ধরেই উঠছে। কিন্তু ইতিহাস বলে, নিছক ‘নিষেধাজ্ঞা’ টেকসই সমাধান নয়। কারণ, এতে নেতৃত্বের বিকাশ এবং শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক চর্চার সুযোগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিকল্প পথ হতে পারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এবং প্রতিটি হল ও অনুষদে ছাত্র সংসদের নিয়মিত নির্বাচন। তবে তা হতে হবে দলীয় রাজনীতির ছাতার বাইরে। অর্থাৎ, কোনো জাতীয় রাজনৈতিক দলের আনুষ্ঠানিক শাখা বা কমিটি ক্যাম্পাসে থাকতে পারবে না, কিন্তু শিক্ষার্থীরা নিজেদের একাডেমিক, সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া ও কল্যাণমূলক বিষয় নিয়ে সংগঠিত হতে পারবে।

এমন কাঠামো একদিকে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব গড়ার মঞ্চ তৈরি করবে, অন্যদিকে ক্যাম্পাসে দখলদারি ও সহিংসতার সংস্কৃতি কমাবে। এর জন্য প্রয়োজন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক সমাজ ও সরকারের যৌথ রাজনৈতিক সদিচ্ছা। সবচেয়ে জরুরি হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বাধীন ও নিরপেক্ষ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, যাতে ক্যাম্পাস আর কোনো রাজনৈতিক দলের শক্তি প্রদর্শনের মঞ্চে পরিণত না হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের জাতীয় ইতিহাসের গর্বের প্রতীক। সেই বিশ্ববিদ্যালয় যদি বারবার ক্ষমতাকেন্দ্রিক দ্বন্দ্বে জর্জরিত হয়, তাহলে শিক্ষার মান, সৃজনশীলতা ও স্বাধীন চিন্তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সময় এসেছে দলীয় রাজনীতির শৃঙ্খল থেকে ছাত্রসমাজকে মুক্ত করে একটি সুস্থ, মুক্ত ও সৃজনশীল ছাত্ররাজনীতির ভিত্তি গড়ে তোলার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালার সঙ্গে শত্রুতা মুহাম্মদ ইউনূসের, আমি ‘কোল্যাটারাল ড্যামেজ’: টিউলিপ সিদ্দিক

এনসিপি নেতার বাড়িতে কাফনের কাপড়, চিরকুটে লেখা—‘প্রস্তুত হ রাজাকার’

৪০ পুলিশ কর্মকর্তার পদক প্রত্যাহার, অর্থ ফেরতের নির্দেশ

গণশুনানিতে দুদক চেয়ারম্যানের প্রতি ক্ষোভ দেখালেন মৎস্যচাষি

‘কাল দেখা হইবে, ভালো থাকিস’—ছেলেকে বলেছিলেন গণপিটুনিতে নিহত প্রদীপ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত