Ajker Patrika

ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তা

সম্পাদকীয়
ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তা

হিন্দু সম্প্রদায়ের বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা এবার সারা দেশে আনন্দ আয়োজনে সম্পন্ন হতে পারেনি। কুমিল্লার একটি পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন অবমাননার গুজব ছড়িয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পূজামণ্ডপ ও মন্দিরে হামলা, প্রতিমা ভাঙচুর, হিন্দুদের বাসাবাড়ি এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আক্রমণের ঘটনায় ভয় ও আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো তাৎক্ষণিক উদ্যোগ নিতে শৈথিল্য দেখিয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন। যাঁরা ঘটনার সত্যতা যাচাই না করে অতি আবেগের বশে শোনা কথা বিশ্বাস করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ চালানো হয়েছে। অসাম্প্রদায়িক শক্তির দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এবার অনেকগুলো জায়গায় হামলা চালিয়ে আমাদের সম্প্রীতির ঐতিহ্যে কালি মেখে দিয়েছে।

কয়েক বছর ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের বিষয়টি যেন নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। তবে এবার ঘটনার বিস্তৃতি বেড়েছে। আগের ঘটনাগুলোর অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় না আনার জন্যই এবার মাত্রা বেড়েছে বলে অনেকে মনে করছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুমিল্লার ঘটনার পরই তাঁর কড়া মনোভাবের কথাটি প্রকাশ করেছেন। অপরাধী যে-ই হোক, তার বিচারের কথা বলেছেন। বিলম্বে হলেও আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশ ও মিছিল করেছে। অন্য সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও মাঠে নেমেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নিজের ধর্ম পালনের অধিকার যেমন সবার আছে, তেমনি অন্যের ধর্মকে কেউ হেয় করতে পারে না। নিজের ধর্মকে সম্মান করার সঙ্গে সঙ্গে অন্যের ধর্মকেও সম্মান করতে হয়। অন্যের ধর্মকে যদি হেয় করা হয়, তাহলে নিজের ধর্মকেই অসম্মান করা হয়।

ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করে কেউ যাতে সমাজে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, সেদিকে সবারই সতর্ক দৃষ্টি থাকা প্রয়োজন। কেউ যাতে আইন নিজের হাতে তুলে না নেয় সে বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করা প্রয়োজন।

যারা বিভিন্ন স্থানে অরাজকতা সৃষ্টি করেছে, তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। কুমিল্লার ঘটনার জন্য অভিযুক্ত ইকবাল হোসেন গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁর পেছনে কে বা কারা আছে, তা বের করে সবাইকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হলে মামুষের মধ্যে আস্থা ফিরে আসবে। হামলাকারীরা ধরা পড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের কেউ কেউ স্বস্তি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে এটাও বলেছেন যে, যারা ধরা পড়ছে তাদের পরিবারের লোকজন যে আবার আমাদের ওপর হামলা চালাবে না, তার নিশ্চয়তা কী?

 ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকা মানুষদের মনে শুধু মুখের কথায় ভরসা তৈরি হবে না। অন্য সব অসাম্প্রদায়িক-সামাজিক শক্তির সহায়তা নিয়ে আর কোনো অঘটন ঘটবে না, এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে সরকারকেই। শুধু ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি মেরামতেই মনের ক্ষত দূর হবে না। আস্থা ফিরিয়ে আনাটাই জরুরি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত