Ajker Patrika

চাঁদাবাজ মামলাবাজ

সম্পাদকীয়
চাঁদাবাজ মামলাবাজ

রাজনীতি মানুষের অধিকার রক্ষার হাতিয়ার, আর আইন-আদালত মানুষের নিরাপত্তার শেষ আশ্রয়স্থল। কিন্তু যখন এ দুই ব্যবস্থারই অপব্যবহার হয়—কখনো রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে, কখনো আইনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য—তখন তা শুধু ব্যক্তি বা গোষ্ঠী নয়, পুরো সমাজ ও রাষ্ট্রকেই বিপন্ন করে তোলে।

বাংলাদেশ কি এখন সেই বিপন্ন অবস্থার দিকেই যাচ্ছে? প্রশ্নটি মনে এল আজকের পত্রিকায় ১০ মে ‘চাঁদা না পেলেই মামলা দেন তিনি’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরটি পড়ে। রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানায় একটি মামলায় ২৭১ জনকে একযোগে আসামি করা হয়। ওই মামলার ১৬৫ নম্বর আসামি গাজীপুর বিএনপির নেতা মুরাদ হোসেন বকুল অভিযোগ করেছেন, তাঁকে মামলায় জড়ানো হয়েছে চাঁদা না দেওয়ার কারণে। মুরাদের ভাষ্য, গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক ওরফে জি এস স্বপন তাঁর কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছিলেন। না দেওয়ায় তাঁকে রাজনৈতিক পরিচয়ের অপব্যবহার করে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।

শুধু মুরাদ নন, একই ধরনের অভিযোগ করেছেন গাজীপুরের আরও কয়েকজন। টঙ্গীর ঠিকাদার কবির হোসেন জানিয়েছেন, জিয়াউল তাঁর কাছে নতুন আইফোন দাবি করেন। না দেওয়ায় তাঁকেও মামলায় জড়ানো হয়। ব্যবসায়ী হামিদ মোল্লার অভিযোগ আরও ভয়ংকর—তাঁর সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া ১১ বছরের ছেলেকে ১৯ বছর বয়সী ছাত্রলীগ সদস্য বানিয়ে মামলায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে! এমন নির্দয় ঘটনা কেবল বিচারহীনতার সংস্কৃতিতেই সম্ভব।

জিয়াউল একসময় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী মহলের ঘনিষ্ঠ পরিচয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চাঁদা তুলতেন। এখন একই কাজ করছেন বিএনপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে। একসময় পুলিশ প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এই ব্যক্তি এখন ছাত্র আন্দোলনের আশ্রয়ে ‘নতুন ব্যবসা’ শুরু করেছেন। দলবদল, মুখোশ বদল, কিন্তু চরিত্র একই।

মামলার প্রকৃত বাদী বা ভুক্তভোগী নারী শিলা আক্তার নিজেও মামলার আসামিদের অধিকাংশকে চেনেন না। ‘স্বপন ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেন’—শিলা আক্তারের এই জবাবেই স্পষ্ট, কে প্রকৃত মালিক এই মামলার। যিনি মামলার মাধ্যমে বিচার চেয়েছেন, তিনি নিজেই জানেন না কারা অভিযুক্ত। প্রহসন আর কাকে বলে!

এসব ঘটনা আমাদের দেশের দীর্ঘদিনের বিচারহীনতার একটি করুণ প্রতিচ্ছবি। যখন দুর্নীতি বা ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না, বরং অপরাধী বারবার রং বদলে নতুন প্রভাবশালী মহলের ছায়ায় আশ্রয় নেয়, তখন সাধারণ মানুষ আইনের প্রতি আস্থা হারায়; তখন আইনের চোখ বন্ধ হয়ে যায় না শুধু, সমাজের বিবেকও ঘুমিয়ে পড়ে।

আমরা মনে করি, এই মামলাগুলোর প্রতিটি গভীরভাবে তদন্ত হওয়া দরকার। বাদীর অবস্থান, আসামিদের তালিকা, মামলার প্রেক্ষাপট—সবকিছু খতিয়ে দেখতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকেও এ ধরনের অপব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নিতে হবে। দলীয় পরিচয়ের আড়ালে অপরাধী যেন আশ্রয় না পায়, তা নিশ্চিত করতে না পারলে দলের ভাবমূর্তিই প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কী লিখেছিলেন মাহফুজ আলম, ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ডিলিট করলেন কেন

প্রশাসনিক আদেশে জামায়াত নিষিদ্ধ ভুল, আ.লীগের কার্যক্রম বন্ধ সঠিক: বিএনপি

এবার ‘পাকিস্তানপন্থার’ বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলেন আসিফ মাহমুদ

সমাবেশে দলীয় স্লোগান ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনে বাধা দেওয়া প্রসঙ্গে এনসিপির বিবৃতি

পাকিস্তানে হামলায় ভারত কি ‘ব্রহ্মস’ ছুড়েছিল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত