Ajker Patrika

দ্রুত বিচার চাই

সম্পাদকীয়
Thumbnail image

১৯ ডিসেম্বর রাতে রাজধানীর পূর্বাচলের ৩০০ ফুট সড়কে এক মাতাল চালকের গাড়ির ধাক্কায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী মুহতাসিম মাসুদ নিহত হন। আহত হন মেহেদী হাসান খান ও অমিত সাহা নামের বুয়েটের সিএসই বিভাগের আরও দুই শিক্ষার্থী। মেহেদী রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে এবং অমিত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এ ঘটনায় নিহত মাসুদের বাবা সড়ক পরিবহন আইনে রূপগঞ্জ থানায় মামলা করেছেন। তাতে মুবিন আল মামুন, পীরেরবাগের রিজওয়ানুল করিমের ছেলে মিরাজুল করিম ও উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের বাহাউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে আসিফ চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

দুর্ঘটনাটির বিষয়ে আজকের পত্রিকায় ২১ ও ২২ ডিসেম্বর দুটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছেন। পুলিশ হত্যা মামলা নিচ্ছে না অভিযোগ করে শিক্ষার্থীরা পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছেন। সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে তাঁরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবি হলো—যেকোনো মূল্যে এই হত্যাকাণ্ডের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা; আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার বিবাদীপক্ষের বহন করা; নিহত মাসুদের পরিবারকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে বিবাদীপক্ষকে বাধ্য করা; তদন্ত কার্যক্রমে বাধাদানের চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া এবং সড়ক দুর্ঘটনার কারণে আর কারও প্রাণ যেন না যায়, সড়কে নিরাপত্তা যেন নিশ্চিত হয়, সে ব্যাপারে যথোপযুক্ত ভূমিকা রাখা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মাসুদ, অমিত, মেহেদীদের বহনকারী মোটরসাইকেলকে চাপা দেওয়া প্রাইভেট কারটি চালাচ্ছিলেন মুবিন আল মামুন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন মিরাজুল করিম ও আসিফ চৌধুরী। মুবিন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল মামুনের ছেলে। শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালে চালকের বাবাকেও সেখানে দেখেন। পরে তাঁরা প্রাইভেট কারে অ্যালকোহল ও মাদকজাতীয় নেশাদ্রব্য দেখেন।

বুয়েটের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহ আল মামুন এবং চালকের পরিবারের লোকজন বিভিন্নভাবে তাঁদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন। অভিযুক্ত ব্যক্তির মা নানাভাবে শিক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণ দেবেন বলে জানান।

বুয়েট শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবি আমাদের বর্তমান সড়কের দুরবস্থা এবং আইনের দুর্বলতাগুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। সুষ্ঠু তদন্ত, সর্বোচ্চ শাস্তি এবং সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা শুধু আন্দোলনের দাবি নয়, এটি নাগরিক অধিকার।

বাংলাদেশের সমাজে বিত্তবান ও প্রভাবশালী পরিবারের একাংশের তরুণদের মধ্যে দায়িত্বহীনতার বীজ ছড়িয়ে পড়ছে। প্রভাবশালী হওয়া মানে আইন লঙ্ঘনের অনুমোদন নয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, অনেক পরিবার তাদের সন্তানদের শৃঙ্খলায় রাখতে ব্যর্থ।

সড়কে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় একজন শিক্ষার্থীর নিহত হওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম তা নয়। এর আগেও এমন অকালমৃত্যুর অনেক ঘটনা ঘটেছে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বড় আন্দোলনও আমরা একাধিকবার দেখেছি।

মুহতাসিম মাসুদের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার দ্রুত শেষ করা জরুরি। এটা শুধু একটি দুর্ঘটনার বিচার নয়; তা হতে পারে সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার সূচনা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত