Ajker Patrika

উত্তর কে দেবে

সম্পাদকীয়
উত্তর কে দেবে

৫ আগস্ট দিনটিতে কত ঘটনাই না ঘটল। ঘোষিত হলো জুলাই ঘোষণাপত্র, প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে জানালেন ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা হচ্ছে, এনসিপি দলের পাঁচ গুরুত্বপূর্ণ নেতা এই দিনটিতেই মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের উৎসবে যোগ না দিয়ে ‘অবকাশ কাটাতে’ চলে গেলেন কক্সবাজারের ইনানী বিচে, টিএসসির মতো জায়গায় ইসলামী ছাত্রশিবিরের আয়োজনে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ছবি ঝুলতে দেখা গেল, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী এই অপরাধীদের সেখানে দেওয়া হয়েছে নায়কোচিত সম্মান। বিশ্ববিদ্যালয়ের বামপন্থী ছাত্রসংগঠন ও সাধারণ ছাত্রদের প্রতিবাদের মুখে সেই ছবিগুলো সরিয়ে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

আমরা আমাদের আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখব অল্প কয়েকটি বিষয়ের ওপর।

এনসিপির পাঁচ নেতা তাঁদের অবকাশের জন্য ঠিক ৫ আগস্টকেই বেছে নিয়েছিলেন কেন, তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে দেখা করার জন্য তাঁরা কক্সবাজারের বিলাসবহুল হোটেলটিতে গেছেন, এ রকম গুঞ্জনই মূলত ভেসে বেড়িয়েছে আকাশে-বাতাসে। বিএনপির স্থানীয় নেতারা হোটেলের সামনে সমাবেশও করেছেন।

প্রশ্ন হলো, গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির দিনে একটি আলোচিত রাজনৈতিক দলের আলোচিত নেতারা কিছু সময়ের জন্য ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত কেন চলে যাবেন, সেটা বোঝা কঠিন। অবকাশ যাপনের জন্য এই দিনটিকেই বেছে নিতে হলো? এটি রাজনৈতিক অদূরদর্শিতার পরিচায়ক কি না, সেটা তাঁদের ভেবে দেখতে বলব।

পাশাপাশি টিএসসির ঘটনাটি জাতির জন্য বেদনাদায়ক। ১৯৭১ সালের ইতিহাস যাঁরা জানেন, তাঁরা কোনোকালেই জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্রসংগঠন ছাত্র সংঘের (এখনকার ছাত্রশিবির) ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডকে ভুলতে পারবেন না। একাত্তরের মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য সুনির্দিষ্টভাবে যাঁদের নাম উচ্চারণ করা যায়, তাঁদের ছবি প্রদর্শন করার ব্যবস্থা নেওয়া হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির মতো জায়গায়—এটা খুবই বিস্ময়কর ব্যাপার। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ যে কালরাতে নেমে এসেছিল অপারেশন সার্চলাইটের সময়, তার অন্যতম শিকার ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, পিলখানা, ঠাটারিবাজার, লক্ষ্মীবাজারসহ যেসব জায়গায় এই রক্তপাত ঘটিয়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, তার স্মৃতি এই জাতির সম্মিলিত ইতিহাস-অভিজ্ঞতা থেকে মুছে ফেলা যাবে না। একমাত্র গোয়েবলসীয় মিথ্যা দিয়েই তা প্রতিষ্ঠিত করা যাবে। কিন্তু যে ইতিহাস লেখা হয়েছে রক্তের অক্ষরে, সে ইতিহাসের প্রতিটি ছত্র তো রয়েও গেছে তথ্য-উপাত্তের মধ্যে। তাই ইতিহাস বিকৃত করে ঘৃণিত মানবতাবিরোধী অপরাধীদের নায়ক বানানোর চেষ্টা বিফলে যেতে বাধ্য। বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে এমন বার্তা আসা উচিত, যেন একাত্তরকে কলুষিত করে কোনো কার্যক্রম না নেওয়া হয়।

দুটি আলাদা ধরনের ঘটনাকে একই জায়গায় উপস্থাপন করা হলো এই কথা ভেবে যে, আদৌ কি কোনো সংস্কার যুগোপযোগী হতে পারে, যদি ভাবনার ক্ষেত্রটিতে বিচক্ষণতা না থাকে? এনসিপি নেতারা কেন ৫ আগস্টের গুরুত্ব উপলব্ধি করলেন না, ছাত্রশিবির কেন এই দিনটিতে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধীদের বীর হিসেবে দেখাতে চাইল? উত্তর কে দেবে?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত