মোহাম্মদ আবদুল মজিদ
ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসার সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জাতীয় অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম (১৯১১-১৯৮৯) অবহিত ছিলেন। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি একটি অন্যতম উপায় হতে পারে। এমতাবস্থায় স্বাস্থ্যের নীতিনির্ধারক, সমাজপতি ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিসহ সমাজের সর্বস্তরের জনসাধারণের মধ্যে সামাজিক ও জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে ডায়াবেটিস সম্বন্ধে সচেতনতা সৃষ্টি একান্ত আবশ্যক বলে বুঝতে পেরেছিলেন তিনি।
১৯৫৫ সালের শেষ দিকের কথা। ডা. ইব্রাহিমের চোখে পড়ে নামকরা একটি মেডিকেল জার্নাল। সেই জার্নালে ডায়াবেটিসের ওপর একটি আর্টিকেল দেখতে পান তিনি । এতে তিনি দেখলেন বিলেতে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন রয়েছে। তাতে তিনি বেশ উদ্বুদ্ধ হলেন। এভাবে তিনি যখন দেখলেন উন্নত বিশ্বে ডায়াবেটিসের জন্য রয়েছে সমিতি, বিশেষ ব্যবস্থায় এসব সমিতি ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসা করে। তখন থেকে তিনি নিজের চেম্বারে বিশেষভাবে ডায়াবেটিস রোগী দেখা আরম্ভ করেন। এসব রোগীর মধ্যে অনেকেই ছিলেন উচ্চ শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গ। তাঁদের ডা. ইব্রাহিম ডায়াবেটিক সমিতি প্রতিষ্ঠা এবং ডায়াবেটিস রোগীদের পুনর্বাসনের জন্য কিছু করার কথা মাঝেমধ্যে বলতেন তিনি।
১৯৫৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে ডা. ইব্রাহিম তাঁর সেগুনবাগিচার বাসায় দেশের কিছু বরেণ্য ব্যক্তিত্ব, চিকিৎসক, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা ও সমাজসেবকদের নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানান। উদ্দেশ্য, ডায়াবেটিক সমিতি প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বয়ান। ডাক্তার ইব্রাহিম নিমন্ত্রিতদের জানালেন যে, যেদিন ডায়াবেটিস হবে সেদিনই বুঝতে হবে যে ওই লোকটা অন্ধ হয়ে যাবে কিংবা প্যারালাইসিস হয়ে যেতে পারে বা তার হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। কিন্তু যদি যথারীতি চিকিৎসা ও পরিচর্যার ভেতরে একে রাখা যায়, তাহলে আজীবন সে সুস্থ থাকবে। রোগীর হয়তো ৩০-৪০ বছর বয়স, কিন্তু ডায়াবেটিসে ১০ বছরের মধ্যেই তার সবকিছু অকেজো হয়ে যেতে পারে। কিন্তু যথারীতি চিকিৎসা ও পরিচর্যা করলে এবং নিয়ম মেনে চললে সে ষাট বছর পর্যন্ত সুস্থ থাকবে এবং প্রায় স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবে। উপস্থিত সমাজদরদিদের সেদিন ডা. ইব্রাহিম তাঁর নিজস্ব আবেগের সঙ্গে আরও জানিয়েছিলেন যে, যদি একটি ডায়াবেটিক সমিতি গঠন করা যায়, তাহলে এই সমিতির মাধ্যমে যত রোগীর চিকিৎসা হবে, তা তিনি নিজেই করবেন একেবারেই বিনে পয়সায়। তা ছাড়া এই চিকিৎসার জন্য যেসব যন্ত্রপাতির প্রয়োজন, তার কিছু কিছু, যা ডাক্তার ইব্রাহিমের নিজস্ব রয়েছে, তা-ও তিনি এই প্রকল্পের কাছে দিয়ে দেবেন। সেই রাতেই বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ডায়াবেটিক সমিতি গঠিত হয়। পরদিন ১ মার্চ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সমিতি প্রতিষ্ঠার খবর ছাপা হয়েছিল।
আজ ৬৭ বছরে পা দিল বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি। সমিতি সর্বার্থেই একটি বিশাল সম্মিলিত (করপোরেট) স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্যসেবায় অনন্য মডেলে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশে, দরিদ্র মানুষের জন্য উপযোগী একটি স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজটা খুব সহজ নয়। কিন্তু সমিতি সরকারের সহায়তায় এবং সমাজকর্মী ও বিভিন্ন পেশাজীবীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে আজ স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে সরকারের পর সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে এটি। সমিতির পরিধি অনেক সম্প্রসারিত হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবার পরিধি যেমন বেড়েছে, তেমনি সমিতির কার্যপরিধি বিস্তৃত হয়েছে স্বাস্থ্য জনশক্তি সৃষ্টির ক্ষেত্রেও। সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান হয়েও এই সমিতি বাংলাদেশে চিকিৎসাসেবায় পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করে এসেছে। সমিতির প্রতিষ্ঠাতা জাতীয় অধ্যাপক মোহাম্মদ ইব্রাহিমের যোগ্য নেতৃত্বেই দায়িত্ব অর্পণ করে যেতে পেরেছিলেন, যাঁরা সফলতার সঙ্গে তাঁদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সম্পাদন করে যাচ্ছেন। সমিতিতে যাঁরা এত দিন নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাঁরা তা করে চলেছেন স্বপ্রণোদিত হয়ে, সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি বিশ্বের অপরাপর ডায়াবেটিক সমিতিসমূহের মতো নয়। এর বড় ব্যতিক্রম হচ্ছে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি একই সঙ্গে ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ গবেষণায় এবং ডায়াবেটিক সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রমের পাশাপাশি ক্লিনিক্যাল চিকিৎসা প্রদান করে আসছে। এই বিশেষ ব্যতিক্রমের কারণে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি বিশ্বে একটি অনন্য ও অন্যতম বৈশিষ্ট্যময় সমিতি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ২০০৬ সালে সমিতির প্রস্তাবে, বাংলাদেশ সরকারের উত্থাপনে জাতিসংঘ ১৪ নভেম্বরকে বিশ্ব ডায়াবেটিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ২০১৫ সালে সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ কে আজাদ খান ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিক ফেডারেশন থেকে গ্লোবাল অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছেন। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির স্বপ্নদ্রষ্টা ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম এবং বর্তমান সভাপতি ড. এ কে আজাদ খান দুজনই চিকিৎসা ও শিক্ষার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ পদবি জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে সম্মাননা লাভ করেছেন। তাঁরা দুজনই সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় খেতাব ‘স্বাধীনতা পদক’-এ ভূষিত হয়েছেন। এটি বিরল এবং বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির জন্য অনন্য স্বীকৃতি।
সমিতির প্রথম বছরে রোগীর সংখ্যা ছিল ৩৯। ১৯৮৫ সালের অক্টোবর মাসে শাহবাগে স্থানান্তরিত সমিতির কেন্দ্রীয় গবেষণা ইনস্টিটিউট ‘বারডেমে’ কেন্দ্রীয়ভাবে নিবন্ধিত রোগীর সংখ্যা এসে দাঁড়ায় ৪৮ হাজারে। ২০২১ সালের শেষে শুধু বারডেমেই ৭ লাখ ৬ হাজার ৫১৫ জন এবং দেশের ৬৩টি জেলা, ১৪টি উপজেলা এবং ৩টি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্পে (ইব্রাহিম কার্ডিয়াক, এনএইচএন এবং বিআইএইচএস) রেজিস্টার্ড সর্বমোট ৫৬ লাখ ২৬ হাজার ৬৮৮ রোগীর নিয়মিত চিকিৎসা চলছে।
স্বাধীনতার পর পাকিস্তান মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের আর্থিক প্রকল্প দুটি অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এর অধীনে যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী ছিলেন, তাঁদের বেতন দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। অন্যদিকে পদ্ধতিগত জটিলতার কারণে এই সময়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকেও কোনোরূপ আর্থিক সহায়তা পাওয়া সম্ভব ছিল না। ডা. ইব্রাহিমকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে এসেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সরকার। মরহুম তাজউদ্দিন আহমেদের সরাসরি হস্তক্ষেপে বাংলাদেশের প্রথম দিকে ডায়াবেটিক সমিতি আসন্ন বিপর্যয় থেকে শুধু রক্ষাই পায়নি, তিনি একে পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সরাসরি সহায়তাও করেছিলেন। এমনি অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর সরকার সমিতিকে সাড়ে তিন লাখ টাকা প্রকল্প আকারে অনুদান হিসেবে দিয়েছিলেন। ডা. ইব্রাহিম ম্যানিলা যাচ্ছিলেন একটি কনফারেন্সে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য। যাওয়ার পূর্বে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে বঙ্গভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। বঙ্গবন্ধু ডা. ইব্রাহিমকে নিশ্চয়তা দিয়ে বলেছিলেন, ‘আপনাকে আরও উন্নত জায়গা দেওয়া হবে, আপনি আপনার প্রকল্প নিয়ে এগিয়ে যান।’
১৯৭৬ সালে ডা. ইব্রাহিম জায়গা পেয়েছিলেন, তৎকালীন সরকার বর্তমান শাহবাগে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির জন্য যে জায়গা বরাদ্দ করেন, তার ওপর দাঁড়িয়ে আছে বর্তমানের সুরম্য বারডেম কমপ্লেক্স । ১৯৭৬ সালে ডা. ইব্রাহিম বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডায়াবেটিস অ্যান্ড রিহেবিলিটেশনের নাম বাদ দিয়ে এই প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করেন বারডেম (বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ, রিহেবিলিটেশন ইন ডায়াবেটিস এন্ডোক্রিন অ্যান্ড মেটাবলিক ডিসঅর্ডাস)। ১৯৫৬ সালে টিনশেডে যার যাত্রা শুরু হয়েছিল, বর্তমানে সেটা শত বাধার বিন্ধ্যাচল পাড়ি দিয়ে ১৫ তলার এক আকাশচুম্বী ভবন হয়ে জাতীয় অধ্যাপক মরহুম ডা. ইব্রাহিমের মহিমা কীর্তন করে চলেছে।
লেখক: ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ। সরকারের সাবেক সচিব, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির ন্যাশনাল কাউন্সিলের সদস্য।
ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসার সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জাতীয় অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম (১৯১১-১৯৮৯) অবহিত ছিলেন। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি একটি অন্যতম উপায় হতে পারে। এমতাবস্থায় স্বাস্থ্যের নীতিনির্ধারক, সমাজপতি ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিসহ সমাজের সর্বস্তরের জনসাধারণের মধ্যে সামাজিক ও জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে ডায়াবেটিস সম্বন্ধে সচেতনতা সৃষ্টি একান্ত আবশ্যক বলে বুঝতে পেরেছিলেন তিনি।
১৯৫৫ সালের শেষ দিকের কথা। ডা. ইব্রাহিমের চোখে পড়ে নামকরা একটি মেডিকেল জার্নাল। সেই জার্নালে ডায়াবেটিসের ওপর একটি আর্টিকেল দেখতে পান তিনি । এতে তিনি দেখলেন বিলেতে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন রয়েছে। তাতে তিনি বেশ উদ্বুদ্ধ হলেন। এভাবে তিনি যখন দেখলেন উন্নত বিশ্বে ডায়াবেটিসের জন্য রয়েছে সমিতি, বিশেষ ব্যবস্থায় এসব সমিতি ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসা করে। তখন থেকে তিনি নিজের চেম্বারে বিশেষভাবে ডায়াবেটিস রোগী দেখা আরম্ভ করেন। এসব রোগীর মধ্যে অনেকেই ছিলেন উচ্চ শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গ। তাঁদের ডা. ইব্রাহিম ডায়াবেটিক সমিতি প্রতিষ্ঠা এবং ডায়াবেটিস রোগীদের পুনর্বাসনের জন্য কিছু করার কথা মাঝেমধ্যে বলতেন তিনি।
১৯৫৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে ডা. ইব্রাহিম তাঁর সেগুনবাগিচার বাসায় দেশের কিছু বরেণ্য ব্যক্তিত্ব, চিকিৎসক, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা ও সমাজসেবকদের নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানান। উদ্দেশ্য, ডায়াবেটিক সমিতি প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বয়ান। ডাক্তার ইব্রাহিম নিমন্ত্রিতদের জানালেন যে, যেদিন ডায়াবেটিস হবে সেদিনই বুঝতে হবে যে ওই লোকটা অন্ধ হয়ে যাবে কিংবা প্যারালাইসিস হয়ে যেতে পারে বা তার হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। কিন্তু যদি যথারীতি চিকিৎসা ও পরিচর্যার ভেতরে একে রাখা যায়, তাহলে আজীবন সে সুস্থ থাকবে। রোগীর হয়তো ৩০-৪০ বছর বয়স, কিন্তু ডায়াবেটিসে ১০ বছরের মধ্যেই তার সবকিছু অকেজো হয়ে যেতে পারে। কিন্তু যথারীতি চিকিৎসা ও পরিচর্যা করলে এবং নিয়ম মেনে চললে সে ষাট বছর পর্যন্ত সুস্থ থাকবে এবং প্রায় স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবে। উপস্থিত সমাজদরদিদের সেদিন ডা. ইব্রাহিম তাঁর নিজস্ব আবেগের সঙ্গে আরও জানিয়েছিলেন যে, যদি একটি ডায়াবেটিক সমিতি গঠন করা যায়, তাহলে এই সমিতির মাধ্যমে যত রোগীর চিকিৎসা হবে, তা তিনি নিজেই করবেন একেবারেই বিনে পয়সায়। তা ছাড়া এই চিকিৎসার জন্য যেসব যন্ত্রপাতির প্রয়োজন, তার কিছু কিছু, যা ডাক্তার ইব্রাহিমের নিজস্ব রয়েছে, তা-ও তিনি এই প্রকল্পের কাছে দিয়ে দেবেন। সেই রাতেই বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ডায়াবেটিক সমিতি গঠিত হয়। পরদিন ১ মার্চ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সমিতি প্রতিষ্ঠার খবর ছাপা হয়েছিল।
আজ ৬৭ বছরে পা দিল বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি। সমিতি সর্বার্থেই একটি বিশাল সম্মিলিত (করপোরেট) স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্যসেবায় অনন্য মডেলে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশে, দরিদ্র মানুষের জন্য উপযোগী একটি স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজটা খুব সহজ নয়। কিন্তু সমিতি সরকারের সহায়তায় এবং সমাজকর্মী ও বিভিন্ন পেশাজীবীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে আজ স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে সরকারের পর সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে এটি। সমিতির পরিধি অনেক সম্প্রসারিত হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবার পরিধি যেমন বেড়েছে, তেমনি সমিতির কার্যপরিধি বিস্তৃত হয়েছে স্বাস্থ্য জনশক্তি সৃষ্টির ক্ষেত্রেও। সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান হয়েও এই সমিতি বাংলাদেশে চিকিৎসাসেবায় পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করে এসেছে। সমিতির প্রতিষ্ঠাতা জাতীয় অধ্যাপক মোহাম্মদ ইব্রাহিমের যোগ্য নেতৃত্বেই দায়িত্ব অর্পণ করে যেতে পেরেছিলেন, যাঁরা সফলতার সঙ্গে তাঁদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সম্পাদন করে যাচ্ছেন। সমিতিতে যাঁরা এত দিন নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাঁরা তা করে চলেছেন স্বপ্রণোদিত হয়ে, সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি বিশ্বের অপরাপর ডায়াবেটিক সমিতিসমূহের মতো নয়। এর বড় ব্যতিক্রম হচ্ছে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি একই সঙ্গে ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ গবেষণায় এবং ডায়াবেটিক সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রমের পাশাপাশি ক্লিনিক্যাল চিকিৎসা প্রদান করে আসছে। এই বিশেষ ব্যতিক্রমের কারণে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি বিশ্বে একটি অনন্য ও অন্যতম বৈশিষ্ট্যময় সমিতি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ২০০৬ সালে সমিতির প্রস্তাবে, বাংলাদেশ সরকারের উত্থাপনে জাতিসংঘ ১৪ নভেম্বরকে বিশ্ব ডায়াবেটিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ২০১৫ সালে সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ কে আজাদ খান ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিক ফেডারেশন থেকে গ্লোবাল অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছেন। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির স্বপ্নদ্রষ্টা ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম এবং বর্তমান সভাপতি ড. এ কে আজাদ খান দুজনই চিকিৎসা ও শিক্ষার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ পদবি জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে সম্মাননা লাভ করেছেন। তাঁরা দুজনই সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় খেতাব ‘স্বাধীনতা পদক’-এ ভূষিত হয়েছেন। এটি বিরল এবং বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির জন্য অনন্য স্বীকৃতি।
সমিতির প্রথম বছরে রোগীর সংখ্যা ছিল ৩৯। ১৯৮৫ সালের অক্টোবর মাসে শাহবাগে স্থানান্তরিত সমিতির কেন্দ্রীয় গবেষণা ইনস্টিটিউট ‘বারডেমে’ কেন্দ্রীয়ভাবে নিবন্ধিত রোগীর সংখ্যা এসে দাঁড়ায় ৪৮ হাজারে। ২০২১ সালের শেষে শুধু বারডেমেই ৭ লাখ ৬ হাজার ৫১৫ জন এবং দেশের ৬৩টি জেলা, ১৪টি উপজেলা এবং ৩টি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্পে (ইব্রাহিম কার্ডিয়াক, এনএইচএন এবং বিআইএইচএস) রেজিস্টার্ড সর্বমোট ৫৬ লাখ ২৬ হাজার ৬৮৮ রোগীর নিয়মিত চিকিৎসা চলছে।
স্বাধীনতার পর পাকিস্তান মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের আর্থিক প্রকল্প দুটি অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এর অধীনে যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী ছিলেন, তাঁদের বেতন দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। অন্যদিকে পদ্ধতিগত জটিলতার কারণে এই সময়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকেও কোনোরূপ আর্থিক সহায়তা পাওয়া সম্ভব ছিল না। ডা. ইব্রাহিমকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে এসেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সরকার। মরহুম তাজউদ্দিন আহমেদের সরাসরি হস্তক্ষেপে বাংলাদেশের প্রথম দিকে ডায়াবেটিক সমিতি আসন্ন বিপর্যয় থেকে শুধু রক্ষাই পায়নি, তিনি একে পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সরাসরি সহায়তাও করেছিলেন। এমনি অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর সরকার সমিতিকে সাড়ে তিন লাখ টাকা প্রকল্প আকারে অনুদান হিসেবে দিয়েছিলেন। ডা. ইব্রাহিম ম্যানিলা যাচ্ছিলেন একটি কনফারেন্সে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য। যাওয়ার পূর্বে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে বঙ্গভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। বঙ্গবন্ধু ডা. ইব্রাহিমকে নিশ্চয়তা দিয়ে বলেছিলেন, ‘আপনাকে আরও উন্নত জায়গা দেওয়া হবে, আপনি আপনার প্রকল্প নিয়ে এগিয়ে যান।’
১৯৭৬ সালে ডা. ইব্রাহিম জায়গা পেয়েছিলেন, তৎকালীন সরকার বর্তমান শাহবাগে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির জন্য যে জায়গা বরাদ্দ করেন, তার ওপর দাঁড়িয়ে আছে বর্তমানের সুরম্য বারডেম কমপ্লেক্স । ১৯৭৬ সালে ডা. ইব্রাহিম বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডায়াবেটিস অ্যান্ড রিহেবিলিটেশনের নাম বাদ দিয়ে এই প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করেন বারডেম (বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ, রিহেবিলিটেশন ইন ডায়াবেটিস এন্ডোক্রিন অ্যান্ড মেটাবলিক ডিসঅর্ডাস)। ১৯৫৬ সালে টিনশেডে যার যাত্রা শুরু হয়েছিল, বর্তমানে সেটা শত বাধার বিন্ধ্যাচল পাড়ি দিয়ে ১৫ তলার এক আকাশচুম্বী ভবন হয়ে জাতীয় অধ্যাপক মরহুম ডা. ইব্রাহিমের মহিমা কীর্তন করে চলেছে।
লেখক: ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ। সরকারের সাবেক সচিব, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির ন্যাশনাল কাউন্সিলের সদস্য।
মুঘল বাদশাহ আওরঙ্গজেব ১৭০০ খ্রিষ্টাব্দে মুর্শিদকুলি খাঁকে সুবা বাংলার দেওয়ান করেছিলেন। নতুন দেওয়ান দেখলেন, বাংলার জমিদারেরা ঠিকভাবে খাজনা পরিশোধ করেন না। কী করে কর আদায় করা যায়, তা ভাবতে লাগলেন তিনি। প্রশাসনিক প্রধান ছিলেন বাংলার সুবাদার বাদশাহের দৌহিত্র আজিমুশ্শান। তবে রাজস্ব আদায়ে সর্বেসর্বা ছিলেন
৭ ঘণ্টা আগেশিল্পভিত্তিক অর্থনীতি রচনা করতে গিয়ে আমরা নষ্ট করে চলেছি মাটির উর্বরতা শক্তি, নদীপ্রবাহ ও পানি, পরিবেশ ও প্রতিবেশ। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা সংস্থার এক হিসাব অনুযায়ী, ১৯৭৭ সালে দেশে কৃষিজমি ছিল মোট জমির প্রায় ৮৫ শতাংশ। কিন্তু ২০১০ সালে তা নেমে হয় ৭৫ শতাংশে। আর এ ১৫ বছরে তা নিশ্চয়ই আরও অনেকখানি কমে এসেছে।
৭ ঘণ্টা আগেআমি যখন সিডনি আসি, তখন বাংলা ভাষাভাষী মানুষ বিশেষত বাংলাদেশি জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। একসময় যে আমাদের একটি বা একাধিক বইমেলার প্রয়োজন পড়তে পারে, সেটা দূরদর্শী ব্যতীত কারও মাথায় আসেনি। কিন্তু বাংলা, বাঙালি মানেই বিদ্রোহ আর দ্রোহের ভেতর দিয়ে নতুন কোনো ইতিহাস রচনা। সে ইতিহাস যে শুধু দেশের মাটিতে
৭ ঘণ্টা আগেগত বছরের জুলাইয়ের পর থেকেই ছাত্রসমাজকে দেখছি বিভিন্ন অসংগতির বিরুদ্ধে সোচ্চার। পৃথিবীর সব দেশেই ছাত্র বা তরুণসমাজ কোনো অন্যায়-অবিচার বা বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়, এটাই স্বাভাবিক। কোটা সংস্কারের দাবি ছিল যৌক্তিক। এই যৌক্তিক দাবির পক্ষে জুলাই মাসে দেশের ছাত্রসমাজ যে আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল, সেই আন্দো
৭ ঘণ্টা আগে